
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে শনিবার বিকেলে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। গতকাল নিলেন আরও ২টি। রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ারের জুটি দাঁড়িয়ে গেলে একমাত্র ভরসা হয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বোলিং অপশন হিসেবে সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম এবং দুই পেসার খালেদ আহমেদ ও তাসকিন আহমেদ ছিলেন; কিন্তু সমর্থকদের চাওয়া মিরাজ বোলিংয়ে আসুক। যেন মিরাজের হাতে জাদু আছে। তার হাতেই বাংলাদেশ ম্যাচটি জিততে পারে। গত দুই বছরে তিনি যেকোনো সংস্করণে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন। দলের যেকোনো বিশেষ প্রয়োজনে এগিয়ে আসছেন মিরাজ। আর তার ব্যাট বা বলে ক্রান্তিলগ্নও পার করছে দল। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের জন্য আলো হয়ে জ্বলেছেন মিরাজ।
২০২১-এ টেস্টে দারুণ পারফরম শুরু করেন লিটন দাশ। এর রহস্য জানতে চাওয়া হলে বলেছিলেন বয়সে বড় হচ্ছেন, অভিজ্ঞ হচ্ছেন তাই দায়িত্বও বাড়ছে। লিটনের সেই কথাটা মিরাজের জন্যও খাটে। গত বছর উইন্ডিজের সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে জয়ের প্রান্তে নিয়ে যান। এ বছর ভারতের সঙ্গে পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। টেস্ট সেঞ্চুরিতে দল না জিতলেও ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে দল ঠিকই জিতেছে। আবার ভারতের সঙ্গে এই টেস্টে ৫ উইকেট নিয়েও জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের শুরুটা মিরাজের জন্য অভাবনীয় ছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ ম্যাচের সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে থ্রি লায়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় এনে দেন। তবে এই ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা অনেক তরুণের ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে না। যেমন প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পারছিলেন না লিটন-সৌম্য সরকার। সৌম্য দুই ফরম্যাট থেকে হারিয়ে গেলেও লিটন চাপ-প্রতাশার চ্যালেঞ্জ জিতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন তিন ফরম্যাটে। ঠিক তেমনি মিরাজও। টেস্ট ও ওয়ানডে দলে থাকলেও টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু নিজের দৃঢ়চেতা মনোবলে আবার দলের অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। সাকিব-তামিমদের পর বাংলাদেশ যে পরবর্তী প্রজন্মের খোঁজে ছিল লিটন-মিরাজ সেই অভাবটা পূরণ করে দিচ্ছেন।
মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে লিটনের চোখেই মিরাজের মূল্যায়নটা ছিল এমন, ‘মিরাজ আগে থেকেও ভালো ব্যাট করে। ভালো বল তো করেই। সে আমার আগে টেস্ট সেঞ্চুরি করেছে। আমি সবসময়ই ওকে ভালো বলি। মিরাজ আগের চেয়ে অনেক কিছু উন্নতি করছে। আমিও যেমন। অনেক দিন ধরে খেলতে থাকলেও অনেক কিছু নিজে থেকেই শেখা যায়। সেটা মিরাজ ও আমি দুজনই পেরেছি।’
মিরাজের উন্নতিটা এ বছরই বেশি স্পষ্ট। সাকিবের পর দেশের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে উঠে আসছেন। ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১২৩ ম্যাচে ২১১৪ রান ও ২৩৩ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। এ বছর ২৯ ম্যাচে করেছেন ৬৩৭ রান ও নিয়েছেন ৫৯ উইকেট। ৮ টেস্টে ১৮৫ রান, ৩১ উইকেট; ১৫ ওয়ানডেতে ৩৩০ রান ও ২৪ উইকেট আর ৬ টি-টোয়েন্টিতে ১২২ রান ও ৪ উইকেট। রানের দিক থেকে এটাই মিরাজের সেরা বছর, অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেও। এবারের ৫৯ উইকেটের চেয়ে এর আগে মাত্র একবারই বেশি (৬১) উইকেট পেয়েছিলেন মিরাজ, ২০১৮ সালে। সাকিব নিজেও চাইছেন মিরাজের এমন ভালো ফর্ম বরাবরই থাকুক। কাল ম্যাচ শেষে জানান, ‘মিরাজ সবসময়ই ভালো করে। আমি চাইব সে যেন এমন ভালো পারফরমটা ধরে রাখতে পারে। তাহলে বাংলাদেশের জন্যও ভালো।’
মিরাজের প্রতি অধিনায়ক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের এই আস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি, বরং বেশ কতগুলো পরিস্থিতিতে তার সাহসী মনোভাবই তাকে চিনিয়েছে নতুন করে। গত জুনে চার বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছিলেন মিরাজ। এরপর দলের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনে খেলছেন সাহসিকতার সঙ্গে। ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার জাতীয় দলে নিয়মিত ৭-৮ পজিশনে খেলেন। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য মেকশিফট ওপেনার বানিয়ে দেওয়া হয় তাকে এবং দলের এই সিদ্ধান্তেও দারুণ মানিয়ে গেছেন। টি-টোয়েন্টিতে তার ৪৬ রানের সেরা ইনিংসটিও এসেছে ওপেনার হিসেবেই। এই সেদিন ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আট নম্বরে নেমে করলেন প্রথম সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচেও তার ওপর ভরসার প্রতিদান দিয়েছিলেন অপরাজিত ৩৮ রান করে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নতুন ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন মিরাজ। সত্যিকার অর্থেই জ্বলেছেন আলো হয়ে, সামনেও জ্বলবেন।
ভারতের বিপক্ষে কাছে গিয়েও হেরে যাওয়ার গল্পগুলো এক মলাটে আনলে নির্ঘাত আরেকটা ‘গল্পগুচ্ছ’ই হয়ে যাবে! একই অভিজ্ঞতা বারবার হওয়াতে সাকিব আল হাসান খুব সম্ভবত এখন আর এমন ‘কাছে এসেও হেরে যাওয়ার গল্প’গুলোতে বিষাগ্রস্ত হন না, বরং দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়া প্রেমিকের মতো বলেন, ‘কাছে গিয়ে জিততে না পারার আফসোস আছে। তবে এটাও ভালো যে, অন্তত আমরা কাছে যেতে পারছি এখন।’ অবশ্য কাছে তো ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টেও গিয়েছিল বাংলাদেশ, টেস্ট ক্রিকেটের শৈশবে। ২২ বছরের টগবগে যৌবনেও কেন কাছে যাওয়াতেই আত্মতৃপ্তি, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল পরে।
চতুর্থ দিনের সকালে খেলা শুরুর আগেও ম্যাচের পাল্লাটা সমান সমানই ছিল। জয়ের জন্য বাংলাদেশের চাই ৬ উইকেট, ভারতের চাই ১০০ রান। সকালের আধ ঘণ্টাতেই ম্যাচ বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকিয়ে দিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৪৫ থেকে ৭৪ রানে পৌঁছতেই নেই ৩ উইকেট, মাত্র ৯ রানেই ডেঞ্জারম্যান ঋষভ পান্তকে মিরাজ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন ড্রেসিংরুমে। ৩ উইকেট হাতে জয়ের জন্য ভারতের চাই ৭১ রান। এখান থেকেও ম্যাচ জিততে না পারার আক্ষেপ আছে সাকিবের, তবে প্রতিপক্ষকেও কৃতিত্ব দিতে কার্পণ্য করেননি, ‘আক্ষেপ নেই আমার ওরকম কোনো। আমার মনে হয়, আমরা পুরো টেস্ট ম্যাচই ভালো লড়াই করেছি এবং এই মানসিকতাই সামনের টেস্টগুলোতে থাকবে বলে আশা করি আমি। তাহলেই আমি মনে করি, ফল আমাদের পক্ষে আসবে। একটু তো হতাশাজনক। কারণ এগুলোই হয়তো (ক্যাচ হাতছাড়া) অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ওদের হয়তো প্রথম ইনিংসে রান ৩১৪ না হয়ে ২৫০ হতে পারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও অবশ্যই সুযোগ ছিল। এসব ক্রিকেটের অংশ, তবে হতাশাজনক যে অন্য দলগুলো এসব মিস করে না, আমরা যেগুলো করি।’ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ক্যাচটা শর্ট লেগে মমিনুল হক ধরতে পারেননি। এমন অনেকগুলো বাজে ফিল্ডিংয়ের উদাহরণই দেখা গেছে সিরিজ জুড়ে। সাকিব মানছেন, খারাপ ফিল্ডিং চাপ বাড়ায় বোলারদের ওপর, ‘আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা ভালো ফিল্ডিং করেছি। বেশ ভালো করেছি। ওয়ানডে সিরিজেও (ভারতের বিপক্ষে) ভালো করেছি। টেস্ট ম্যাচে আমরা ওইভাবে ভালো করতে পারিনি। হতে পারে মনোযোগের ঘাটতি, কে জানে, হতে পারে ফিটনেসের ঘাটতি বা অন্য কিছুও হতে পারে। তবে এসব খুঁজে বের করতে হবে যে, কীভাবে আমরা আরও বড় সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি এবং ভুলগুলো না করি। আমি নিশ্চিত, অন্য কোনো দলই এত সুযোগ দিত না, যতটা সুযোগ আমরা দিই।’ সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন সাকিব।
শেষ পর্যন্ত এই ক্যাচ ফেলা, স্টাম্পিং মিসএসবই ব্যবধান গড়ে দেয় বলে জানালেন সাকিব। অবশ্য এই কথাগুলোও অতীতে অনেকবারই বলেছেন, ‘খুবই নিয়মিত জিনিসগুলো আমরা মিস করে ফেলি, যেটা অন্য দেশগুলো করে না। এই জায়গায় উন্নতি করতে পারলে অন্য জায়গাগুলোতে আমাদের খুব বেশি পার্থক্য নেই স্কিলের জায়গায় ব্যাটিং ও বোলিংয়ের দিক থেকে। কারণ আমরা রান খুব কম করছি না। এই জিনিসগুলোই (ক্যাচ মিস) আমাদের জন্য পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। আমাদের বোলারদের হয়তো ১৩-১৪টা সুযোগ তৈরি করতে হয় ১০ উইকেট নিতে, অন্যদের ক্ষেত্রে যেটা হয়তো অনেক সময় ৯টা সুযোগ তৈরি করলেই ১০টা হয়ে যায়।’ এই যে মনোসংযোগের ঘাটতি, দক্ষতার অভাব, সবকিছুর পেছনে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামোতেই ফিরে গেলেন সাকিব, যা টেস্ট সাফল্যের মৌলিক সূত্র, ‘প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আমাদের আরও বেশি খেলাতে হবে, যদি আমরা টেস্ট ক্রিকেটে সিরিয়াসলি উন্নতি করতে চাই। একজন ক্রিকেটারের ৫-৭-১০ ম্যাচের যে অভিজ্ঞতা, আর ৫০-৬০-৭০ ম্যাচ খেলার যে অভিজ্ঞতা, এটা অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়। আমি নিশ্চিত, ভারতের যে ক্রিকেটাররা আসছে, ওদের প্রায় সবার একশর ওপরে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা আছে। যেখানে আমিই হয়তো এতদিন ধরে আছি... হয়তো আমি অনেক দিন ঘরোয়া খেলি না, তবে অন্য যারা খেলে, একটা মৌসুমে কয়টা ম্যাচ খেলে? ৬টা থেকে ৮টা হয়তো। যদি এরকম খেলে, ১০ বছরে হবে ৮০টা ম্যাচ। আমরা যদি ৮০টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ কোনোভাবে ৫ বছরে খেলতে পারি, আমার কাছে মনে হয় অনেক ভালো টেস্ট ক্রিকেটার বের হবে।’
আরও একটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্র পূরণ করল বাংলাদেশ, যদিও অবস্থান বদলায়নি। শেষেই শেষ করা বাংলাদেশকে নিয়ে আগামী চক্রে বড় স্বপ্নই দেখাচ্ছেন সাকিব, ‘২০২৩ সালে আমাদের তিনটা বা পাঁচটা টেস্ট ম্যাচ আছে এফটিপিতে, যেটা আমি জানি। আমি মনে করি তিনটি সিরিজই আমাদের জেতা উচিত, যে ধরনের দলের সঙ্গে আমরা খেলব। অবশ্যই জেতা উচিত। টেস্ট দলটাও অনেক সেটেল্ড, ১১ জনের ভেতর ৯ জনের নাম তো আপনারাই বলে দিতে পারবেন।’ মিরপুরে বোলিং করার কথাই ছিল না সাকিবের, করেছেন এবং দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন ৬ উইকেট। সাকিব মনে করেন আরেকটু ভালো বোলিং করতে পারতেন যদি ফিটনেস সর্বোচ্চ অবস্থায় থাকত, ‘আমার মনে হয়, আমি আরও ভালো বল করতে পারি। ধারাবাহিকভাবে আরও ভালো জায়গায় বল করতে পারতাম। যেটা হয়তো একটু আমার জন্য হতাশাজনক। আমার যে সামর্থ্য ও মান, আমি মনে করি যে আরও ভালো জায়গায় বল করতে পারতাম।’
হারের পর এসব আক্ষেপ হতাশা আর সংশোধনমূলক অনেক কথাই অবশ্য বলা হয়, যেমনটা বলে আসা হচ্ছে গত এক দশক ধরেই। তবে তা কার্যকর হয় সামান্যই। বরং দিন দশেক পর শুরু হতে যাওয়া বিপিএলেই চোখ ক্রিকেটের কর্তাব্যক্তিদের। এসব গল্প তোলা থাকবে আবার কোনো টেস্ট সিরিজ হারের পর শোনাবার জন্য।
এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং টুর্নামেন্ট স্টেজ-৩ আসরে স্বর্ণপদক জেতা হলো না হাকিম আহমেদ রুবেলের। গতকাল রিকার্ভ পুরুষ এককের ফাইনালে বাংলাদেশের এই আরচার ৬-৪ সেটে হেরেছেন কাজাখস্তানের আব্দুলিন ইলফাতের কাছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় শেষ হওয়া এই আসরে বাংলাদেশ একটি রুপা ও তিনটি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে।
গতকাল রিকার্ভ পুরুষ এককের ফাইনালে প্রথম সিরিজে হারার পর দ্বিতীয় সেটে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন রুবেল। তবে তৃতীয় সিরিজ হেরে এবং পরের দুই সিরিজে ড্র করে ম্যাচটা ৬-৪ সেটে কাজাখস্তানের প্রতিযোগীর কাছে হারতে হয়। গতকাল রিকার্ভ পুরুষ দলগত ইভেন্টেও কিছুই জেতা হয়নি রুবেল, সাগর ইসলাম ও মিশাদ প্রধানের। তারা কাজাখস্তানের কাছে হেরেছে ৬-২ সেটে। এছাড়া রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে রুবেল ও ফামিদা সুলতানা নিশা জুটি ব্রোঞ্জপদক নির্ধারণী ম্যাচে উজবেকিস্তানের জুটির কাছে হেরেছে ৫-৩ সেটে। এর আগে কম্পাউন্ডের তিনটি ইভেন্টে বাংলাদেশ তিনটি ব্রোঞ্জপদক জিতেছিল। আরচারি দলের আজ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
২০২২ সালটা ক্রিকেটে শাসন করেছে ইংল্যান্ড। ওয়ানডেতে করেছে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের নতুন রেকর্ড। প্রথম দল হিসেবে টেস্টে এক দিনে ৫০০ রানও করেছে। অথচ বছরের শুরুটা খারাপভাবেই হয়েছিল ইংল্যান্ডের। নিজেদের ইতিহাসে অন্যতম মর্যাদার লড়াই অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ায় নাস্তানাবুদ হতে হয়। ৫ ম্যাচের অ্যাশেজে ৪-০তে হেরে লজ্জার শেষ ছিল না ইংল্যান্ডের। তবে সেই অস্ট্রেলিয়াতেই নিজেদের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে মাথা উঁচু করে ফিরেছে তারা। সেই সঙ্গে বছরটা আরও ভালোভাবে শেষ হওয়ার কারণ পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয়। ২০০৫-এর পর প্রথমবার দেশটিতে সফরে গিয়ে ৩-০তে সিরিজ জিতেছে বেন স্টোকসের দল। পাকিস্তানকে তাদের মাঠে প্রথমবার টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে তারা। টানা দুই গৌরবে বছরের শুরুটা হতাশার হলেও শেষটা আনন্দের করেছে ইংল্যান্ড। এ ছাড়া ক্রিকেটে অন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ছিল শ্রীলঙ্কার চরম ক্রান্তিলগ্নে তাদের দেশে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। আর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের সেরা দলের বিপক্ষেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথম জয় পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
এ বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে ছোট ফরম্যাটে নিজেদের উঠে আসার সেরা পুরস্কারটা পেল ইংল্যান্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রুপ পর্বে বিদায়ের পর আমূল বদল আসে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে। সাদা পোশাকের সঙ্গে হিসাব করে রঙিন পোশাকেও গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেয় ইংলিশরা। সেই থেকে দলটির উঠে আসা। ২০১৯ বিশ্বকাপে এক উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ নিজেদের ঘরে তোলে ক্রিকেটের জনকরা। সেই আসরে নাটকীয় ও চরম রোমাঞ্চকর ফাইনালের মতোই রোমাঞ্চ ছড়িয়ে এগিয়েছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে স্পষ্ট ফেভারিট হয়েই শুরু করে ইংলিশরা। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের সঙ্গে সহজ জয়ে শুরু করলেও পরের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ৫ রানে হেরে যায় ইংল্যান্ড।
ওই হার ও অন্যান্য ম্যাচ বৃষ্টিতে প- হওয়ায় বিপদে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ রানের জয়ও তাদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করছিল না। শেষে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচটি হয়ে ওঠে অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল। ওই ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে মাত্র ২ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে জেতে জস বাটলারের দল। এরপর অবশ্য ইংল্যান্ডকে আর আটকে রাখা যায়নি। সেমিফাইনাল নিশ্চিতের পর বাকি দুই ম্যাচে এশিয়ার দুই জায়ান্টকে পাত্তাই দেননি বাটলাররা। সবচেয়ে দাপুটে জয় ছিল সেমিফাইনালে। ভারতকে ১০ উইকেটের এমন হার ইংল্যান্ড উপহার দেবে তা সম্ভবত বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারাও ভাবেননি। ওই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান করেছিল ভারত। জবাবে অ্যালেক্স হেলস ও জস বাটলারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে একদম উড়ে যায় ভারত। বাটলার ৪৯ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৮০ আর হেলস ৪৭ বলে ৪ চার ও ৭ ছক্কায় ৪৭ বলে করেন ৮৬ রান। এর পারফরম্যান্সের পর ফাইনালটা বেশ সহজ ছিল ইংল্যান্ডের জন্য। পাকিস্তানের করা ৮ উইকেটে ১৩৭ রান ৫ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় তারা।
বিশ্বকাপ জয়ের সাফল্যের ধারা মেনে হাসি আসে টেস্টেও। ২০০৫ সালের পর পাকিস্তানে ঐতিহাসিক সিরিজ খেলতে গিয়ে অভাবনীয় সাফল্য বেন স্টোকসের দলের। মুলতান ও রাওয়ালপিন্ডিতে জয়ের পর করাচি টেস্টের জয়টি ছিল বেশ গুরুত্বের। রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করে। প্রথম দিনই তারা তুলেছিল ৪ উইকেটে ৫০৬ রান। টেস্ট ইতিহাসে এক দিনে সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ড এটি। করাচিতে সবশেষ ৪৫ টেস্ট ও ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম হারে পাকিস্তান। এ মাঠে সবশেষ ২০০০ সালে পাকিস্তানকে টেস্টে হারিয়েছিল ইংলিশরা। এরপর ২০০৭ এ করাচিতে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেসব পেছনে পড়ে যায় পাকিস্তানে প্রথমবার কোনো সফরকারী দলের ৩-০ ব্যবধানের জয়ে। তাই বছরের শুরুতে ২৪ বছর পর ঐতিহাসিক সিরিজ খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়াকে হারানো গেলেও ১৭ বছর পর আসা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাফল্য পায়নি পাকিস্তান।
ইংল্যান্ড ২০২২ এ যে টেস্ট সাফল্য পেয়েছে তার পেছনে বড় ভূমিকা কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের। সাবেক নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান ম্যাককালাম দায়িত্ব নেওয়ার পর টেস্টে নিয়মিত আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা শুরু করে ইংলিশরা। সেই আগ্রাসী ক্রিকেটের ছদ্ম নাম ‘ব্যাজবল’ ক্রিকেট। ওয়ানডেতেও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছে ইংল্যান্ড। এ বছরই ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নতুন করে গড়ে তারা। ১৭ জুন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে করে ৪ উইকেটে ৪৯৮ রান। নিজেদের গড়া ২০১৮ সালের রেকর্ড নতুন করে লেখে ইংল্যান্ড। ২০১৮তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তুলেছিল ৬ উইকেটে ৪৮১ রান। ক্রিকেটে অপর সেরা ঘটনা ছিল গত জুন-জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার শ্রীলঙ্কা সফর। নাজুক অর্থনীতির কারণে ওই সময়ের দিকে শ্রীলঙ্কান অবস্থা ছিল করুণ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ পরিচালনা করার মতো অর্থও তাদের ছিল না। এই কঠিন সময়ে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়াকে হৃদয় নিংড়ানো ধন্যবাদ ও ভালোবাসা দেয় শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া ছোট দলের মধ্যে জিম্বাবুয়ের জন্য স্মরণীয় বছর ২০২২। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর প্রথমবার আইসিসি টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। এর চেয়েও আনন্দের বিষয় অস্ট্রেলিয়াতে স্মরণীয় ওয়ানডে জয়। টাউনসভিলের ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে রায়ান বার্লের ১০ রানে ৫ উইকেটে ১৪১ রানে আটকে দেয় জিম্বাবুয়ে। জবাবে নিজেরা ৭ উইকেটে ১৪২ রান তোলে। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে দ্বিতীয় জয় পায় জিম্বাবুয়ানরা।
ইউরোপিয়ান শীর্ষ ফুটবল লিগগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল)। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও আজ মাঠে ফিরছে ইপিএল। একমাস ফুটবল বিশ্বকাপে বুঁদ ছিল মানুষ। বিশ্বকাপ বিরতির পর ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে ইপিএলই সবার আগে মাঠে ফিরছে। ঐতিহ্য মেনে বক্সিং ডে তে আছে খেলা।
ব্রেন্টফোর্ড ও টটেনহামের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে লিগ। একই দিনে আছে আরও ছয়টি ম্যাচ। লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ তো এরই মধ্যে বাকি দলগুলোকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন। আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতা চান পয়েন্ট ব্যবধান ধরে রেখে লিগ শিরোপা জিততে।
বিশ্বকাপ বিরতির আগে নতুন কোচ উনাই এমিরির অধীনে শুরুটা দারুণ করেছে ভিলা। জিতেছে টানা দুই ম্যাচ। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইবে দলটি। বর্তমানে ১২ নম্বরে আছে ভিলা। অবনমন অঞ্চলে থাকা দলের চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে। লিভারপুল আগেই নেমেছে মাঠে, ইংলিশ লিগ কাপে। শেষ ষোলোতে তারা হেরেছে ম্যানসিটির কাছে। লিগে ছয়ে থাকা লিভারপুলের জয় প্রয়োজন শীর্ষ চারের ওপর চাপ বজার রাখতে। বিশ্বকাপে গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ খেলেন অ্যাস্টনভিলাতে। তবে আজ লিভারপুলের বিপক্ষে খেলবেন না তিনি। ফিলিপ কুতিনহো এই ম্যাচেও শুরুর একাদশে মাঠে নামবেন না। লিভারপুল দলেও ফেরেননি ফ্রান্সের ইব্রাহিম কোনাতে। তবে ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক খেলতে পারেন এই ম্যাচে। নিজেদের মাঠ এমিরেটসে আর্সেনাল খেলবে ওয়েস্টহাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে। প্রিমিয়ার লিগে ১৪ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্টে শীর্ষে আছে মিকেল আর্তেতার দল। চলতি মৌসুমে লিগে আর্সেনালের হয়ে ৫ গোল ও ৬ অ্যাসিস্ট করেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। তবে আজ তাকে পাচ্ছে না আর্সেনাল। বিশ্বকাপের সময় হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েন জেসুস।
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন। ওই পেনাল্টিতে গোল করতে পারলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। কেইন পেনাল্টি মিস করলেও তার ওপর আস্থা হারাননি ক্লাব কোচ আন্তনিও কন্তে। বলেন, ‘কেইনকে নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কারণ আমরা বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারকে নিয়ে কথা বলছি।’ আজ টটেনহাম খেলবে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে।
বঙ্গবন্ধু ৪৬তম জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সাতটি নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। এই আসরে ডাবলস জিতেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে প্রথম দিনে ১০০ মিটারে সেরা হওয়ার পর কাল ২০০ মিটারেও সোনা জিতেছেন। মেয়েদের ২০০ মিটারে সোনা জিতেছেন সেনাবাহিনীর সুমাইয়া দেওয়ান। শেষ দিনে দুটি নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। ১০ হাজার মিটার ম্যারাথনে রেকর্ড গড়েছেন সেনাবাহিনীর পাপিয়া আক্তার। মহিলা ত্রিপল জাম্পে ১২.৩৮ মিটার লাফিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন সেনাবাহিনীর সনিয়া আক্তার।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।