
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে টানা তৃতীয় জয় পেল বসুন্ধরা কিংস। গতকাল কিংস ২-০ গোলে হারিয়েছে রহমতগঞ্জকে। ম্যাচের প্রথমার্ধে বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ডরিয়েলটন এগিয়ে দেন দলকে। বিরতির পর আরেক ব্রাজিলিয়ান রবিনহো ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। দিনের অন্য ম্যাচে মোহামেডান পিছিয়ে থেকে ২-২ গোলে ড্র করেছে চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে।
আসরটি দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই হয়ত স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। ২০২০-এ সেখানেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ইতিহাসটা লিখেছিল অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। আকবর আলির দলের হাত ধরে প্রথমবার আইসিসি বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার নারী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হচ্ছে। এই আসরে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরাও। এই তরুণীদের স্বপ্ন ভালো কিছু করা। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন তো আছেই, তবে তা মুখে বলতে চাইছেন না দলের অধিনায়ক দিশা বিশ্বাস। বরং আকবর আলিদের বিশ্বজয় অনুপ্রেরণায় নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম নারী যুব বিশ্বকাপে পা রাখতে চাইছেন তারা।
আজ বিশ্বকাপের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন নারীরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে নিজেরা ক্যাম্প করবেন। সেখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা আছে। এরপর আইসিসির অধীনে আরও দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন দিশারা। নিজেদের প্রস্তুতিতে আকবর আলিদের অর্জন সব সময়ই সামনে রাখছে নারী যুব দল। দেশ ছাড়ার আগে শেষ সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক দিশা জানান, ‘ভাইয়ারা (আকবর আলির দল) যেখান থেকে সফল হয়ে এসেছেন। আমাদেরও ওরকম পরিকল্পনা আছে যে ওনারা যদি কিছু করতে পারেন তো আমরাও পারব। আমরা খুবই পজিটিভ মনোভাব নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছি। তবে এখনই বিশাল কিছুর ব্যাপারে বলা সম্ভব না। ওখানে কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার বিষয় থাকে, ভাগ্যেরও একটা ব্যাপার থাকে। তবে এটা ঠিক, ভালো একটা কিছু করতে পারব এটুকু বলতে পারি।’
জাতীয় দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড সফর করে আসা এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানালেন যুব বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ তৈরি। এর কারণ দলের ভারসাম্য। সম্ভবত প্রথমবার কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলে বাঁহাতি স্পিনার থাকছেন না। এই অপূর্ণতা বাকিদের দিয়ে কাটাতে চান দিশা, ‘আমার দলের শক্তির জায়গাটা সব। মানে প্রতিটা বিভাগকে আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দেখছি। কাউকে আলাদা করে কিছু বলার নেই। আমরা দল হয়ে একসঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হবে। তবে একটু আলাদা করে যদি বলতে হয় আমাদের দলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেমন কন্ডিশন সেখানে পেস বোলিং অলরাউন্ডার বেশি কাজে দেবে। ওদিক থেকে আমাদের একটা অপূর্ণতা পূরণ হয়েছে, মানে দলে তো বাঁহাতি স্পিনার নেই সেই অপূর্ণতাটা। আমার এটুকু বিশ্বাস আছে বাঁহাতি স্পিনার না থাকা কোনো কমতি না; আমি বিশ্বাস করি আমাদের যা আছে তা দিয়ে আমরা ভালো করতে পারব।’
১৪ জানুয়ারি শুরু টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ মাঠে নামবে প্রথম দিনই। এ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই। এরপর ১৬ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা ও ১৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের। এর আগে আইসিসির অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের সঙ্গে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন দিশারা। মূল আসরে বাংলাদেশ প্রথম পর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য রাখছে নিজেদের দিনে ভালো খেলার মন্ত্র দিয়ে। অধিনায়ক বলেন, ‘মাঠে যারা ভালো করবে তারা ভালো দল। আমি ছোট বা অন্য দল বড় এমন কিছু না। এখানে অস্ট্রেলিয়া আছে, ওরা নামে ভালো বা খেলেও ভালো। কিন্তু আমার দল নিয়ে আমি বলতে পারি আমরা যদি মাঠে ভালো খেলি তবে অস্ট্রেলিয়া কেন যেকোনো দলকেই হারাতে পারব।’
বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি (বিএসপিএ) প্রদত্ত সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক ফুটবলার কাজী মো. সালাউদ্দিন। গতকাল শনিবার বাফুফের কার্যনির্বাহী সভায় এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ফেডারেশন। বাফুফের পক্ষ থেকে এই পুরস্কারকে প্রহসনমূলক বলে দাবি করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে ৬০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএসপিএ। হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে সংগঠনটি সম্মাননা জানায় বাংলাদেশের সেরা ১০ ক্রীড়াবিদকে। সালাউদ্দিন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন, শীর্ষ তিনজনকে যখন মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় তখন মঞ্চেও উঠেছেন। পুরস্কার গ্রহণ করেছেন উপস্থিত অতিথিদের হাত থেকে। পুরস্কারপ্রাপ্তির আগে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমি আমার সবশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছি ৩৪ বছর আগে। আমি একজন ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়াবিদসুলভ মানসিকতা নিয়েই আমি যে ফলই আসুক মেনে নেব।’ বিএসপিএ’র চোখে বাংলাদেশের সেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সালাউদ্দিন হয়েছেন দ্বিতীয়। তৃতীয় হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু নিয়াজ মোরশেদ।
পুরস্কার গ্রহণ করে পরদিন বাফুফেতে বৈঠক ডেকে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন সালাউদ্দিন। বাফুফের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘সভায় গত ৩০-১২-২২ তারিখে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকায় বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) কর্র্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড়, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত, শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের পরপর চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত সম্মানিত সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনকে প্রদত্ত দ্বিতীয় সেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।’
শুক্রবার অনুষ্ঠানেই মঞ্চ থেকে নেমে বেরিয়ে যান সালাউদ্দিন, তাকে পাওয়া যায়নি শীর্ষ ক্রীড়াবিদদের এক ফ্রেমে ধারণ করার গ্রুপ ছবিতেও।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে শীতকালীন দলবদল। সৌদি আরবের লিগের দলবদলও আজ থেকে। ভাবছেন তো হঠাৎ সৌদি লিগের দলবদলের কথা কেন বলা হচ্ছে। ইউরোপিয়ান ফুটবল ছেড়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো এশিয়ার ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
রোনালদোর পারিশ্রমিক এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে গণমাধ্যমে খবর প্রতি বছর সাড়ে ৭ কোটি ডলার বেতন পাবেন সিআরসেভেন। অর্থের অঙ্কটা সত্যি হলে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলার হবেন তিনি।
তবে বেতনের সঙ্গে বোনাস, বিজ্ঞাপন সব কিছু মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে আল নাসর থেকে রোনালদোর আয়টা বছরে ২০০ মিলিয়ন ডলার। এমনটি হলে রোনালদোর মাসিক আয় হবে ১৬.৬ মিলিয়ন, প্রতিদিনের আয় ৫ লাখ ৪৮ হাজার, প্রতি ঘণ্টায় ২২ হাজার ৮৩৩ ডলার। এটি মিনিটে হিসাব করলে আয় প্রতি মিনিটে ৩৮০ ডলার আর প্রতি সেকেন্ডে ৬.৩৪ ডলার।
শুক্রবার আল নাসরের দেওয়া বিবৃতিতে রোনালদো বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ফুটবলে যা জিততে চেয়েছি, তার সবকিছু জিততে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এশিয়ায় নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার সঠিক সময় মনে করছি এখনই। একটি ভিন্ন দেশে নতুন ফুটবল লিগের অভিজ্ঞতা নিতে আমি রোমাঞ্চিত। সৌদি আরবের পুরুষ ও নারী ফুটবলের উন্নয়নে আল নাসরের যে লক্ষ্য, সেটা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক।’
২০০২ সালে স্পোর্তিং সিপিতে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করা রোনালদো শেষ দেড় বছর ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। বিশ্বকাপ শুরুর আগমুহূর্তে ক্লাবটির কোচ, শীর্ষ কর্মকর্তা ও মালিকপক্ষ নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য করেন। তাতে রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ম্যানইউ। রোনালদো সব মিলিয়ে ইউরোপের ৪টি ক্লাবে কাটিয়েছেন ২০ বছর। ৫ বার জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৭ বার লিগ শিরোপা। ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জিতেছেন ৫টি।
রোনালদোর নতুন ক্লাব আল নাসর সৌদি আরবের প্রো (শীর্ষ) লিগে খেলে। সৌদির ইতিহাসে আল-হিলালের পর দ্বিতীয় সেরা সাফল্য আল নাসরের। ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট মুসালি আল মুয়াম্মার বলেন, ‘এটি ইতিহাস তৈরির চেয়েও বড় কিছু। (রোনালদোর সঙ্গে) এই চুক্তি শুধু আমাদের ক্লাবকেই নয়, আমাদের লিগ, আমাদের দেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।’
সৌদি আরব ২০৩০ বিশ্বকাপের আয়োজক হতে চায়। ধারণা করা হচ্ছে সৌদিকে এ বিষয়েও সহায়তা করবেন রোনালদো। সেই সময় সৌদির শুভেচ্ছাদূত হবেন।
এ তো গেল রোনালদোর কথা। এর আগে শীতকালীন দলবদলের সময় দেখা গেছে অনেক এমন খেলোয়াড়কে দলবদল করতে যাদের থাকার কথা ছিল আগের ক্লাবেই। গেল ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে বিশ্বকাপ। তাই এবার ইউরোপের শীতকালীন দলবদলে থাকছে বাড়তি আগ্রহ।
বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স করা কোডি গাকপোকে এরই মধ্যে দলে ভিড়িয়েছে লিভারপুল। নেদারল্যান্ডসের হয়ে ৫ ম্যাচে ৩ গোল করেন গাকপো। পিএসভি আইন্দোভান থেকে অলরেডদের ডেরায় ভিড়েছেন গাকপো। তবে গাকপোকে কত অর্থের বিনিময়ে ভিড়িয়েছে লিভারপুল তা এখনো প্রকাশ করেনি। গণমাধ্যমে খবর দলবদলের ফি হতে পারে ৫০ মিলিয়ন ইউরো।
বিশ্বকাপে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা এনজো ফার্নান্দেজকে দলে ভেড়াতে চাইছে বেশ কয়েকটি বড় ক্লাব। তাদের মধ্যে এগিয়ে চেলসি। ফার্নান্দেজ বর্তমানে খেলেন পর্তুগালের ক্লাব বেনফিকাতে। দুপক্ষের মিলে গেলে জানুয়ারিতেই ফার্নান্দেজকে দেখা যাবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। ইউরোপীয় গণমাধ্যমে খবর চুক্তির খুব কাছাকাছি আছে দুই ক্লাব। ফার্নান্দেজকে দলে ভেড়াতে চেলসির খরচ হতে পারে ১২০ মিলিয়ন ইউরো। চলতি মৌসুমেই রিভার প্লেট ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন বেনফিকাতে। গত জুলাইয়ে তাকে প্রায় ২০ মিলিয়ন ইউরোর কম ট্রান্সফার ফিতে দলে ভেড়ায় বেনফিকা। ব্রাইটনে খেলা আর্জেন্টাইন ম্যাক আলিস্টারকে দলে ভেড়াতে চায় জুভেন্তাস। তবে ব্রাইটন বিশ্বকাপজয়ী এ খেলোয়াড়কে ছাড়তে রাজি নয় বলেই খবর। ম্যানচেস্টার সিটির নজরে আছে কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগালের হয়ে খেলা ফুলব্যাক রাফায়েল গুরেইরো।
রোনালদো দল ছাড়ার পর গাকপোর দিকে নজর দিয়েছিল ম্যানইউও। তবে গাকপো লিভারপুলে ভেড়ায় রেড ডেভিলরা এই দলবদলে রোনালদোর জায়গায় কাকে আনে তা হবে দেখার বিষয়। রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি জানিয়েছেন, জানুয়ারির দলবদলে নতুন কোনো খেলোয়াড় কেনার ইচ্ছে নেই তার। এবারের ইউরোপিয়ান শীতকালীন দলবদলে মূলত চোখ থাকবে বিশ্বকাপে খেলা তারকাদের ওপরই।
গত বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ফুটবল দলের র্যাংকিং ছিল ১৮৬। পুরো বছরে মাত্র আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। তাতে জয় আসে মাত্র একটি। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ওই জয় বাদে মঙ্গোলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে দুটি ড্র ছিল বাংলাদেশের। এর বাইরে পাঁচ ম্যাচেই হার জোটে। তাই বছর শেষে র্যাংকিংটা ১৯২-এ নেমেছে। এই র্যাংকিং নিয়ে ২০২৩ সাল শুরু করছে বাংলাদেশের ফুটবল। আগের বছরের চেয়ে এবার কিছু ম্যাচ বেশি খেলার সুযোগ থাকছে। ওই ম্যাচগুলোতে নিজেদের প্রমাণের শেষ সুযোগ পাবেন জামাল ভূঁইয়ারা। এ বছর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভালো কিছু না আনলে হয়ত জাতীয় দলের সুযোগটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাদের জন্য। সাফ ফুটবল, বিশ্বকাপ বাছাই এবং ফিফা উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ (যদি বাফুফে আয়োজন করতে সক্ষম হয়) দিয়ে এ বছর নিজেদের র্যাংকিংটা এগিয়ে নিতে চাইবে বাংলাদেশ।
ফুটবলে গত বছরের দুঃখটা এবার কমিয়ে আনার সুযোগ এনে দিচ্ছে সাফ ফুটবল। অবশ্য যদি ফুটবলাররা তা কমাতে পারেন! পরিচিত টুর্নামেন্ট বলে এই আসরে সব সময়ই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রত্যাশা থাকে বাংলাদেশের। কিন্তু ২০০৩-এর পর তা কখনই বাস্তব হয়নি। গত আসরে মালদ্বীপে আরও বাজে অবস্থা ছিল ফুটবল দলের। জাতীয় দলের জন্য নির্দিষ্ট কোচই ছিলেন না সেবার। বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজনের অধীনে খেলতে হয়। ওই আসরে পাঁচ দলের মধ্যে একটি জয় ও ড্রতে চতুর্থ হয়। এবার আসরটি হতে যাচ্ছে বছরের মাঝামাঝি। ভারত ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে দিন-তারিখ নিয়ে ঝামেলা মেটায় তা বাকি ফেডারেশনকে জানানো হবে। এরপর সম্ভাব্য জুনে ভেন্যু ও দিন ঠিক করা হবে বলে দেশ রূপান্তরকে জানান সাফ সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক হেলাল, ‘সাফের সূচি নিয়ে ভারত ফেডারেশনের সঙ্গে একটু দ্বিমত হচ্ছিল। তবে আমরা ওদের কাছ থেকে সম্ভাব্য তারিখ পেয়েছি। এবার তা অন্য ফেডারেশনগুলোকে জানানো হবে। সবার মতের ভিত্তিতে দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। আমরা সম্ভাব্য মাস হিসেবে জুনকে ধরে রেখেছি। আর স্বাগতিক দেশও পরেই জানানো হবে।’
সাফ ফুটবলের বছর সব সময়ই বাংলাদেশের জন্য আশার বছর হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিবারই সেই আশা গুড়েবালি হয় হতাশায়। এবার জামাল ভূঁইয়াদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে। তাদের যে কোনো কোচই নেই। এই ডিসেম্বর পর্যন্ত হাভিয়ের কাবরেরাকে মাত্র ১১ মাসের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। দলকে বুঝতেই ওই সময় পার। এবার নতুন কোচের সন্ধান করতে হবে বাফুফেকে। তবে অবশ্যই সাফ ফুটবলের কয়েক মাস হাতে রেখে নতুন কোচ খোঁজা চাই। এক-দুই মাস আগে কাউকে দায়িত্ব দিলে এবারের সাফেও আগের ভাগ্য বরণ করতে হবে।
জাতীয় দলের পরের ব্যস্ততা বছরের শেষদিকে। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শুরুর দিন ঠিক করেছে ফিফা। ১২ ও ১৭ অক্টোবর যথাক্রমে বাছাইপর্বের প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ড হবে। এই রাউন্ডেই আছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ এখনো ঠিক হয়নি। এই দুই রাউন্ডে জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ডে নভেম্বর ও ২০২৪ সালের মার্চ ও জুনে ব্যস্ত থাকবে বাংলাদেশ দল। এশিয়ান কাপে এ বছর বাংলাদেশ দলের কোনো ব্যস্ততা নেই। বয়সভিত্তিকে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ব্যস্ততা আছে। চীনে এক বছর পিছিয়ে যাওয়া এশিয়ান গেমস এ বছর সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা আছে। সব ঠিক থাকলে সেখানে ফুটবল ইভেন্টে খেলবে যুব দল। এছাড়া ২০২৪ অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বেও খেলবে বাংলাদেশ যুবারা।
ঘরোয়া ফুটবল ব্যস্ত থাকবে জুলাই পর্যন্ত। লিগের পাশাপাশি এ বছর নতুন নিয়মে বিদেশি লিগের নকল করে একসঙ্গে লিগ, ফেডারেশন কাপ আয়োজন করছে বাফুফে। ফুটবলারদের খেলার মাঝে যথেষ্ট বিশ্রাম দিতে লিগ রাখা হয়েছে সপ্তাহে এক রাউন্ড করে। এছাড়া সপ্তাহের মাঝামাঝি হবে কাপের ম্যাচ। ক্লাব পর্যায়ে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার অপেক্ষায় বসুন্ধরা কিংস। এ বছর আগস্টে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে খেলবে তারা। এই রাউন্ড ও প্লে অফ পর্ব পার করে কিংস এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপে পা রাখলে গত মৌসুমে লিগে দ্বিতীয় দল হিসেবে এএফসি কাপে খেলবে আবাহনী। না হলে এএফসি কাপে নেমে যাবে কিংস।
ছেলেদের মতো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে না নারীদের। ফেব্রুয়ারিতে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ হবে ঢাকায়। ভারত, নেপাল ও ভুটানও থাকছে এই আসরে। একই মাসে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ বাছাইপর্ব ফেব্রুয়ারিতে। এপ্রিলে অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ। এএফসি কোয়ালিফিকেশন, ফিফা ফ্রেন্ডলি, অলিম্পিক কোয়ালিফিকেশনও আছে নারীদের।
শুরু হয়ে গেল ২০২৩, শুরু হয়ে গেল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ক্ষণগণনাও। টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপ পরপর দুই বছর হয়েছে দুটো, নতুন বছরে আছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এত বিশ্বকাপের ভিড়েও ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বকাপের আবেদনটাই আলাদা, অন্তত বাংলাদেশের কাছে। কারণ, এই সংস্করণেই বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল আর বিশ্বকাপটা ভারতের মাটিতে হওয়াতে প্রত্যাশাও বেশি।
নতুন বছরের শুরুতেই মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর। মাঝে বিপিএলের বেশ কিছু আসরে মাত্র এক মৌসুমের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্ব বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আসছে আসর থেকে বিসিবি স্বত্ব বিক্রি করেছে তিন মৌসুমের জন্য, অর্থাৎ অন্তত তিন মৌসুম একই নামে খেলতে দেখা যাবে দলগুলোকে যা অতীতের বেশ কিছু আসরে দেখা যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিমিয়ার লিগ, আমিরাতের টি-২০ লিগসহ বেশ কিছু আসরই চলবে বিপিএলের সমান্তরালে, তাই শুরুতে মানসম্মত খেলোয়াড় প্রাপ্তি নিয়ে আশংকা জাগলেও পরবর্তীতে পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ পিছিয়ে যাওয়াতে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, মোহাম্মদ রিজওয়ানসহ অনেক নামি খেলোয়াড়ই মাঠ মাতাবেন বিপিএলে।
বিপিএলের ফাইনাল মাঠে গড়াবার দিন কয়েক পরই বাংলাদেশে চলে আসবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টি খেলতে ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসছে ইংল্যান্ড, তিনটি ওয়ানডেই সুপার লিগের অংশ। যদিও এখন আর ওয়ানডে সুপার লিগ, যা ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বও নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই দুই দলের, কারণ পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থাকা ইংল্যান্ড আর পাঁচে থাকা বাংলাদেশের বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত। তবুও ইংল্যান্ড মানেই বাড়তি উত্তেজনা আর পুরনো হিসাব! বাংলাদেশের কাছে ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়ানডে হেরে গিয়েই বদলে যায় ইংল্যান্ড, ২০১৯ বিশ্বকাপে জেতে শিরোপা। অন্যদিকে ২০১৪ সালের পর বাংলাদেশ ঘরের মাঠে একটাই ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে, সেটা ইংল্যান্ডের কাছেই। সাকিব আল হাসান গত শুক্রবার ক্রীড়াসাংবাদিকদের একটি অনুষ্ঠানে দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘এবার ইংল্যান্ডকে হারানো সম্ভব। আমরা যেভাবে খেলছি তাতে ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে হারানো খুবই সম্ভব, টি-টোয়েন্টি দলটাও দাঁড়িয়ে গেছে। একটা লেগস্পিনার হলে খুব ভালো হতো। তবে মিরপুরে অত দরকার পড়ে না, চট্টগ্রামে দরকার।’
মার্চের ১৪ তারিখে শেষ হবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ, এরপর ক্রিকেটাররা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। আইরিশদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খেলবে একটি টেস্ট এবং তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। এখানেই শেষ নয় আইরিশদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ যেখানে তারা খেলবে ৩ ওয়ানডে ও ৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
জুন-জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে আসবে আফগানিস্তান। কাবুলিওয়ালাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলবে ২টি টেস্ট, ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। আগস্ট মাসে আইসিসির সূচিতে কোনো খেলা নেই বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের বছরে যে ফরম্যাটের বিশ্বকাপ সেই ফরম্যাটের এশিয়া কাপ হওয়ার রেওয়াজে ২০১৮ সালের পর আবারও ওয়ানডে সংস্করণে এশিয়া কাপ হতে পারে সেপ্টেম্বরে। তবে এবারের এশিয়া কাপের স্বত্ব পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের হাতে, পিসিবি নিজের দেশে এশিয়া কাপ আয়োজনে আগ্রহী আর ভারত পাকিস্তানে যেতে রাজি নয়। এই নিয়ে একটি জটিলতায় এশিয়া কাপের ভাগ্য।
অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ২০১৯ সালের মতো এবারও হবে ১০ দলের বিশ্বকাপ, অর্থাৎ সবার সঙ্গে সবার খেলা গ্রুপ পর্বে। বাংলাদেশ অন্তত ৯টি ম্যাচ খেলবে গ্রুপ পর্বে। এরপর এগিয়ে যেতে পারলে ম্যাচসংখ্যা বাড়বে। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশে এসে তিনটি ওয়ানডে খেলবে নিউজিল্যান্ড, বিশ্বকাপের পর খেলবে দুটো টেস্ট। বছরের শেষভাগে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ, খেলবে ৩ ওয়ানডে ও ৩ টি-টোয়েন্টি।
বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নতুন বছরে বাংলাদেশের টেস্ট সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী, ‘২০২৩ সালে আমাদের তিনটা বা পাঁচটা টেস্ট ম্যাচ আছে এফটিপিতে, যেটা আমি জানি। আমি মনে করি তিনটি সিরিজই আমাদের জেতা উচিত, যে ধরনের দলের সঙ্গে আমরা খেলব। অবশ্যই জেতা উচিত’ ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষে বলেছিলেন তিনি।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।