
ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আদলে বাংলাদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০১১ সালে; নানান ধাপ পেরিয়ে ৬ দলের আসর মাঠে গড়ায় ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি মৌসুম দেখেছে বিপিএল; এই ৮ মৌসুমে ম্যাচ গড়াপেটা, পারিশ্রমিক বকেয়াসহ উঠেছে নানান বিতর্ক। আসরে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা, ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্ব সবকিছুই বদলেছে বছরে বছরে। তাই পরিকল্পনা গ্রহণের এক যুগ পরেও বিপিএল পড়ে আছে সেই তিমিরেই।
বিসিবির একাডেমি মাঠটা আদতে একফালি উঠান। বছরের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকেই সেখানে ক্রিকেটারদের মেলা। একপাশে ফরচুন বরিশাল অনুশীলনে, অন্যপাশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। তাদের পর আসে সিলেট স্ট্রাইকার্স আর খুলনা টাইগার্স। এভাবেই এক মাঠে পালা করে অনুশীলন। এর ফাঁকেই ক্রিকেটারদের একে অন্যের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, কুশল বিনিময় আর কথাবার্তা। গোপনীয়তার কোনো বালাই নেই, নেই কৌশল লুকিয়ে রাখার রাখঢাক। অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেটারদের গায়েই ওঠেনি নতুন দলের জার্সি। সাব্বির রহমানের গায়ে ছিল বিসিএলে নর্থ জোনের জার্সি; এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, মাহমুদউল্লাহদের পরনে জাতীয় দলের অনুশীলন জার্সি। অনেক দলের এখনো প্রস্তুত হয়নি টিম বাস। খেলোয়াড়দের অনেকেই যারা ঢাকার বাসিন্দা তারা এসেছেন নিজস্ব গাড়ি বা মোটরসাইকেলে, অনেক দলই বিয়ের বরযাত্রীর মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে এসেছে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে।
দলগুলোর বিদেশি খেলোয়াড়দের কেউ আসেননি অনুশীলনে, আসবেন কী করে; তারা তো দলের সঙ্গে যোগই দেননি! দেশের তারকা ক্রিকেটাররাও গরহাজির। সাকিব আল হাসান আসেননি ফরচুন বরিশালের অনুশীলনে, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ব্যস্ত নিজ নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এসেছেন, বেশ ঘামও ঝরিয়েছেন। তামিম ইকবাল কুঁচকির চোটে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ খেলেননি, ট্র্যাকস্যুট পরে অনুশীলনে ঘোরাঘুরি করলেও ব্যাট হাতে নেটে যেতে দেখা যায়নি। অবশ্য বেশ কয়েক মৌসুম আগেই সাকিব আল হাসান সাংবাদিকদের হাসতে হাসতেই বলেছিলেন, ‘বিপিএল সবাইকে ফিট করে দেয়।’
বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের ভাষায় আইপিএলের পরেই বিপিএল। কিন্তু ১০ম মৌসুমে এসেও আসর শুরুর দিন চারেক আগে অনুশীলনে ঢিলেঢালা ভাব, সব দলের জার্সিও প্রস্তুত না হওয়া, খেলোয়াড়দের না আসা... মনে করিয়ে দেয় প্রথম দিককার সময়টাকে। বিপিএলে আম্পায়ারিং সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ, এবারেও নকআউট পর্বের আগে নেই ডিআরএস। একই সমান্তরালে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগ ও আরব আমিরাতের লিগ থাকাতে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়েরও ঘাটতি। বিপিএলে তাই পল ভ্যান মিকারেন, কলিন অ্যাকারম্যান, কার্টিস ক্যাম্ফার, ম্যাক্স ও’দাউদদের মতো আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর খেলোয়াড়দের নিয়েও টানাটানি।
বিপিএলের প্রথম আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। দেশ রূপান্তর তার কাছে জানতে চেয়েছিল, বিপিএলের যে রূপরেখা বা ভবিষ্যৎ চিত্রকল্প তারা দেখেছিলেন, সেখান থেকে বর্তমানে বিপিএল এর কতটা কাছাকাছি? উত্তরে বলেন, ‘আমাদের যে ভবিষ্যৎ রূপকল্প ছিল, তার সঙ্গে এই বিপিএলের অনেক তফাত। আমরা বিপিএলকে কাক্সিক্ষত জায়গায় নিয়ে যেতে পারিনি। বিপিএলকে এখন আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাছাকাছি মানের আসর বলা যায় না, বিপিএল এখন ঢাকা লিগের মানের একটা আসরে পরিণত হয়েছে।’ বারবার বদলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি, দাঁড়ায়নি কোনো ব্র্যান্ড ভ্যালু। কোন ক্রিকেটার কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির এমনকি কোন বিভাগের দলের কী নাম সেটাও পাঁড় ক্রিকেট সমর্থকরা চট করে বলতে পারবেন না। আলমগীর মনে করেন, বিপিএলের এই বড় হতে না পারা পেছনে দায় আছে বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি দুই তরফেই ‘বিসিবি শুরুতে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক হিসেবে কাউকে আনতে পারেনি। ফলে পারিশ্রমিক বকেয়াসহ নানান ইস্যুতে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। পরে বসুন্ধরা বেক্সিমকোর মতো বড় বড় কপোরেটরা এসেছে, তারা তো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বছর বছর টাকা লগ্নি করে দেখেছে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। তাই অনেকে সরে গেছে। কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলের যে বৈশিষ্ট্যগুলো সেগুলো এখানে প্রয়োগ করা যায়নি। আর বিসিবি ভয় পেয়েছে বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোকে, যারা ক্রিকেটে এলে তাদের উত্তাপ সহ্য করাটা হবে কঠিন।’
গেম অন নামের এক ভূইফোঁড় প্রতিষ্ঠানকে স্বত্ব দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বিপিএলের পথচলা। এরপর পাতানো ম্যাচ, পারিশ্রমিক বকেয়া কা-ে প্রথম দুই আসরের পর বোর্ডের চুক্তি বাতিল হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে। এক মৌসুম পর বিপিএল মাঠে ফিরলেও একটি বিশেষ দলকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে সূচি, নিয়মসহ সবই চলে। অবশেষে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস থেকে রংপুর রাইডার্সে যাওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংকটের শেষ হয় বিসিবির ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার মধ্য দিয়ে। এরপর এক বছর মেয়াদি স্বত্ব বিক্রির নীতি আর আসরে বিসিবির নিজেদেরই দল মালিক বনে যাওয়ার অদ্ভুতুড়ে কা-ের পর এবার থেকে তিন মৌসুমের স্বত্ব বিক্রি শুরু বিসিবির। তাতেও শেষ বেলায় এক মালিক পক্ষের পিঠটান এবং রাতারাতি ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক বদল।
পুরনো সব বৈশিষ্ট্যকে অক্ষত রেখেই শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএলের ৯ম আসর। অগোছাল, পরিকল্পনাহীন আয়োজন এবং মানহীন সব বুড়িয়ে যাওয়া বিদেশিদের সঙ্গে ফুরিয়ে যাওয়া দেশীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে শ্লথ গতির টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। অথচ এই নিয়েই কর্তাব্যক্তিদের গর্বের যেন শেষ নেই!
বিশ্বকাপ বিরতির পর পিএসজির দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল রবিবার। ছুটিতে থাকায় এ ম্যাচে খেলতে পারেননি লিওনেল মেসি। লাল কার্ডের খড়গে পড়ে খেলা হয়নি নেইমারেরও। জ্বলে উঠতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপ্পেও। সব মিলিয়ে মেসি-নেইমারবিহীন পিএসজিও জিততে পারেনি। লেঁসের মাঠে ১-৩ গোলে হেরে ফিরেছে ক্রিস্তফ গালতিয়েরের দল। মৌসুমে প্রথম পরাজয়ের পর দ্বিতীয় স্থানের লেঁসের সঙ্গে শিরোপা লড়াইটা জমে উঠল পিএসজির। ১৭ রাউন্ড শেষে মাত্র ৪ পয়েন্ট দূরে লেঁস।
গালতিয়ের বলেছেন, খেলা দেখে চেনা যাচ্ছিল না পিএসজিকে। ‘লেঁসের জয় প্রাপ্য ছিল। খেলা দেখে আমি পিএসজিকে চিনতে পারিনি। কিলিয়ান (এমবাপ্পে) কঠোর পরিশ্রম করেছে। আজ লিও (মেসি) ও নেইমার ছিল না, তবে এটি কোনো অজুহাত নয়।’ তবে লেঁসের আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ফাকুন্দো মেদিনা মনে করেন পিএসজি বিশ্বসেরা মেসির অভাব অনুভব করেছেন, ‘নিঃসন্দেহে তারা বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের অভাব বোধ করেছে, নেইমারের অভাবও। তবে আমাদের সামনে যে খেলোয়াড়ই থাকুক না কেন, আমরা স্রেফ নিজেদের শক্তিমত্তা নিয়ে ভাবি এবং সে অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি।’
প্রয়াত পেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই লেঁস এগিয়ে যায় পোলিশ মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্কোস্কির গোলে। তিন মিনিট পরই সমতায় ফেরে পিএসজি হুগো একিতিকের গোলে। এটাই যে শেষ পর্যন্ত প্যারিসিয়ানদের একমাত্র গোল হয়ে থাকবে কে জানত! কারণ ১৬ মিনিটে এমবাপ্পের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান লেঁসের কঙ্গোর গোলকিপার সাম্বা। একিতিকের ফিরতি শট পাশর্^জালে লাগে। ২৮ মিনিটে একটি কাউন্টার অ্যাটাক থেকে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। একটি কাউন্টার অ্যাটাক থেকে সেকো ফোফানার ডি বক্সে বাড়ানো বল পান বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড লোইস ওপেন্দা। ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার মার্কিনহোসকে এড়িয়ে ছুটে আসা দোন্নারুমার শরীরের নিচ দিয়ে বল জালে জড়ান ওপেন্দা। তার বাড়ানো বলেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্কোরলাইন ৩-১ করেন ক্লদ-মরিস। ৫৪ ও ৬৩ মিনিটে এমবাপ্পের গোলের চেষ্টা লেঁস গোলকিপার রুখে দিলে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় পিএসজিকে। এর আগে তারা সবশেষ লিগ ম্যাচ হেরেছিল ৯ মাসেরও বেশি সময় আগে। গত লিগে মোনাকোর কাছে হারার সময়ও ১২ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষে ছিল পিএসজি এবং শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতেছিল। এবার তাদের সঙ্গে লেঁসের ব্যবধান মাত্র ৪। ফ্রেঞ্চ লিগে ১৭ ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জন। এর আগে ১৯৬৯-৬০ মৌসুমে নিমস দ্বিতীয় স্থানে ছিল ৪১ পয়েন্ট নিয়ে।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাবের সুনাম ধুলোয় লুটিয়েছিল। ক্যাসিনোর ভয়াল থাবায় স্পোর্টস ক্লাবটি পরিণত হয়েছিল জুয়াড়িদের আখড়ায়। ২০১৯ সালে আইন-শৃঙ্খ্লা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়ংমেন্সসহ ছয়টি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর অস্তিত্ব পেয়ে সিলগালা করে দেয়। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে ক্লাবগুলো। তবে ফকিরেরপুলের প্রাচীনতম ক্লাবটির ওপর থেকে পুরোপুরি সরেনি ক্যাসিনোর কালো ছায়া।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর অভিযোগে চার মাস জেল খাটা সাবেক সহ-সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সেলিম প্রমোশন পেয়ে হয়েছেন গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান। গত ২৯ ডিসেম্বর হয়েছে নতুন কমিটি। ৯২ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মাখনও একই অভিযোগে জেল খেটেছেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রাখা হয়েছে ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা মোস্তাফিজুর রহমান মাইনুকে।
মতিঝিলের একটা বড় অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো স্পোর্টস ক্লাব। এই অঞ্চলেই একটা সময় এসে পড়ে ক্যাসিনোর কালো থাবা। ক্লাবঘরগুলো রাতারাতি বদলে হয় যায় চকমকে ক্যাসিনোয়। লাল-নীল বাতির রোশনাইয়ের মাঝে উড়ত লাখ লাখ কালো টাকা। শত শত সাধারণ মানুষ এই ফাঁদে পা দিয়ে হয়েছে সর্বস্বান্ত। ধীরে ধীরে অনেকগুলো ক্লাব মাঠের খেলা ভুলে এই অবৈধ ব্যবসার তীর্থক্ষেত্রে রূপ নেয়। বাদ যায়নি মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবও। বাধ্য হয়েই ২০১৯ সালে ক্লাবপাড়ায় অভিযান চালায় র্যাব। ছয়টি ক্লাবে ক্যাসিনোর অস্তিত্ব পেয়ে সিলগালা করে দেয় এবং গ্রেপ্তার করা হয় জড়িত অনেক ক্লাব কর্মকর্তাকে। ইয়ংমেন্স ছিল এর অন্যতম। সে সময় অনেকের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সেলিম ও মাখন।
ক্লাবটি এখনো সিলগালা থাকলেও গত মাসে হঠাৎ করেই নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসে। বিশাল যে কমিটি হয়েছে, অভিযোগ আছে তাতে স্থানীয় ফকিরেরপুলের মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। এই ক্লাবটির সর্বশেষ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক। তিনিই নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বিতর্কিত কমিটি প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আসলে এই কমিটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেছেন বিশাল কমিটিতে তাদের জায়গা হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেরা মিলে কমিটি গঠন করেছে। আমি দেখতে চাইলেও দেখায়নি। তাই আমার মনও ভালো নেই। এখন বয়স হয়েছে। আগের বয়স থাকলে হয়তো আমি পাল্টা কমিটি গঠন করতাম এলাকার মানুষ নিয়ে। এখন বয়স হয়েছে, তাই চুপ থাকছি।’
হাজী মোহাম্মদ সেলিম আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন দেশ রূপান্তরের কাছে, ‘আমি নিজে কখনই ক্লাবের ক্যাসিনোতে প্রবেশ করিনি। অভিযানের দিন আমি ক্লাব অফিসে অবস্থান করছিলাম। অনেকের সঙ্গে আমাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে মিথ্যে মামলার আসামি করা হয়। চার মাস জেল খাটার পর অবশ্য আমি এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাই। মামলাটা যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।’ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও নবগঠিত কমিটি তাকে দেখানো হয়নি দাবি করেছেন সেলিম, ‘নতুন কমিটি হয়েছে আমাকে না জানিয়ে। সভাপতি (মাখন) ও সাধারণ সম্পাদক (মাইনু) এই কমিটি করেছে। তাদের বলেছিলাম পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেখাতে। কিন্তু এখনো দেখায়নি। বহিরাগতদের নিয়ে কমিটি করার অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। তবে এমন কিছু হলে, বিতর্কিত লোকজন কমিটিতে থাকলে অবশ্যই তাদের বের করে ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া ক্লাবটির সুনাম ফিরিয়ে আনতে, আয় বাড়াতে সচেষ্ট থাকব। কারণ এখন ভাড়া থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা দলের খরচের এক-চতুর্থাংশও ওঠানো সম্ভব হয় না।’ ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি মনজুর হোসেন মালুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ক্লাবপাড়ায় এখন আর ক্যাসিনো ঘরগুলো থেকে লাল-নীল আলো বের হয় না। তবে ক্যাসিনোর কালো ছায়া যে পুরোপুরি সরে যায়নি, তারই প্রমাণ ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব।
বয়সভিত্তিক দলে মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন অলরাউন্ডার। ২০১৬ সালে, বাংলাদেশ সফরে আসা ইংল্যান্ড দলের জন্য তাকেই গোপন অস্ত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন জাতীয় দলের সে সময়কার কোচ চন্দিকা হাতুরুসিংহে। অভিষেকেই বাজিমাত মিরাজের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিরাজ হয়েছেন পরিণত, হাতুরুসিংহেও বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে পেশাগত জীবনে ব্যস্ত হয়েছেন অন্য অনেক জায়গায়। ২০২৩ সালে আবার হয়তো একই তাঁবুতে চলে আসতে পারেন দুজনে। রাসেল ডমিঙ্গোর বিদায়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের জায়গাটা ফাঁকা, সেখানেই শোনা যাচ্ছে হাতুরুসিংহের প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জন।
বিশ্বকাপের বছরে নিজের প্রস্তুতিটা বিপিএল দিয়েই শুরু করতে চান ২০২২ সালটা দারুণ কাটানো মিরাজ। কাল মিরপুরের একাডেমি মাঠে ফরচুন বরিশালের অনুশীলন পর্ব শেষে এই অলরাউন্ডার সাংবাদিকদের জানান, ‘২০২৩-এ আমাদের সামনে বড় ইভেন্ট আছে, সেটা বিশ্বকাপ। অবশ্যই বিশ্বকাপকে ঘিরে আমাদের সব পরিকল্পনা করা হবে। আমি নিজেকে ওভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করব যে, কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়। বিশ্বকাপের আগে আমাদের অনেক ম্যাচ আছে, সিরিজ আছে। আমরা যদি এখন থেকেই প্রস্তুতি নেই তো ভালো হবে। যে ধারাবাহিকতা নিয়ে আমরা খেলে এসেছি তা যদি ধরে রাখতে পারি করতে পারি তাহলে দলের জন্য অবশ্যই ভালো হবে।’ বিশ্বকাপ প্রস্তুতি প্রসঙ্গেই চলে আসে কোচের প্রসঙ্গ। মার্চে আসতে পারেন নতুন কোচ। অক্টোবর-নভেম্বরে বিশ্বকাপ, মানে কোচের কাজ করার সময় মাস ছয়েক। তাই বিসিবি খুব সম্ভবত হাঁটছে চেনা কাউকেই কোচের দায়িত্বে বসাতে, যাতে খেলোয়াড়দের জানতে আর বাংলাদেশ দলের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়টা কম লাগে। সব মিলিয়ে হাতুরুসিংহের নাম আসছে জোরেশোরেই, মিরাজও বললেন তিনিও খুশি হবেন অভিষেকের সময়কার কোচকে ফিরে পেলে, ‘এটা তো টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয় কে আসবে না আসবে। যেহেতু ওর (হাতুরুসিংহে) সময়ে আমার অভিষেক হয়েছিল... তবে শেষ পর্যন্ত আমাকে কিন্তু পারফর্ম করতেই হবে। আমি যদি পারফর্ম করতে না পারি তাহলে কিন্তু খেলতে পারব না যে কোচই আসুক না কেন। পছন্দ করুক না করুক সেটা ব্যাপার না। কোচ খেলোয়াড়কে পছন্দ করে যখন কেউ পারফর্ম করে। এখানে পারফর্ম করা গুরুত্বপূর্ণ যে কোচই আসুক না কেন। পারফর্ম করলে খেলতে পারব লং টার্ম, যা আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।’
হাতুরুসিংহের ব্যাপারে কিছু খেলোয়াড়ের আপত্তি ছিল, বিশেষ করে তার কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে। মাহমুদউল্লাহকে শততম টেস্টের আগে দেশে ফেরত পাঠানো, মাশরাফী বিন মোর্ত্তুজাকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেওয়াসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্তই অনেককে করেছে অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে মিরাজ, সৌম্য সরকারসহ অনেককে সুযোগ দিয়েছেন বেশ কজনকে ডিঙ্গিয়ে। সবগুলো কৌশলই যে খেটেছে এমনটা বলা যাবে না; কারণ দিনশেষে হাতুরুসিংহেও তো মানুষ! তবে মিরাজ যে হাতুরুসিংহে ফিরলে খুশি হবেন এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, কারণ মাত্রই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা মিরাজকে টেস্ট খেলোয়াড় বানিয়ে দিয়েছিলেন তো এই শ্রীলঙ্কানই। সুযোগ পেয়েই তো বাজিমাত মিরাজের।
২০২২-এর মতো ২০২৩ সালেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিটি করলেন নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ে। তার ১২২ রানের ইনিংসে ভর করে প্রথম দিন শেষে নিউজিল্যান্ড করেছে ৬ উইকেটে ৩০৯ রান।
প্রথম টেস্টে ব্যাটিংলাইনে আগে পরের টম ল্যাথাম কেন উইলিয়ামসন সেঞ্চুরি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের। মাত্র ৮ রানের জন্য মিস করেছিলেন ডেভন কনওয়ে। সেই করাচিতে দ্বিতীয় টেস্টের শুরুর দিনই সেঞ্চুরি করে ফেললেন এই বাঁহাতি। আগের টেস্টেও ল্যাথাম-কনওয়ে ওপেনিংয়ে ১৮৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। গতকালও এই জুটি ভাঙতে ঘাম ঝরল পাকিস্তানি বোলারদের। তিন টেস্ট পর দলে ফেরা নাসিম শাহ ৭১ রান করা ল্যাথামকে যখন এলবিডব্লিউ আউট করেন, ততক্ষণে ওপেনিং জুটিতে রান উঠেছে ১৩৪। দ্বিতীয় উইকেটে উইলিয়ামসনকে নিয়ে আরও ১০০ রান যোগ করেন কনওয়ে। এর মাঝেই ১৫৬ বলে চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত কনওয়ে। ১৯১ বলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ১২২ রান করা কনওয়েকে ফেরান আগা সালমান। নাসিম শাহ দ্রুতই ফেরান আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান উইলিয়ামসনকে। তিনি এবার করেছেন ৩৬। সালমান দ্রুতই আবার আঘাত হানলে ২৪০/৩ থেকে ২৭৯/৬-এ পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড। তবে দিনের শেষ ঘণ্টায় আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি টম ব্লান্ডেল ও ইস সোধি। ব্লান্ডেল ৩০ ও সোধি ১১ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামবেন।
‘বুকে হাত রেখে, বিজয়ের বেশে ছুঁয়ে দেব আসমান’ সেøাগান নিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) আয়োজনে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস। গতকাল প্রথম দিনে দেশের ১১টি জেলায় গেমসের উদ্বোধন হয়। প্রথম পর্বে আন্তঃউপজেলা পর্যায়ের এই খেলা চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৪৯৫ উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদ ৪২৯টি সোনার পদকের জন্য লড়বেন। প্রথম দিন জয়পুরহাট, চাঁদপুর, নরসিংদী, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় শুরু হয়েছে। আজ আরও ৮ জেলায় গেমসের খেলা শুরু হবে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।