
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাবের সুনাম ধুলোয় লুটিয়েছিল। ক্যাসিনোর ভয়াল থাবায় স্পোর্টস ক্লাবটি পরিণত হয়েছিল জুয়াড়িদের আখড়ায়। ২০১৯ সালে আইন-শৃঙ্খ্লা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়ংমেন্সসহ ছয়টি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর অস্তিত্ব পেয়ে সিলগালা করে দেয়। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে ক্লাবগুলো। তবে ফকিরেরপুলের প্রাচীনতম ক্লাবটির ওপর থেকে পুরোপুরি সরেনি ক্যাসিনোর কালো ছায়া।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর অভিযোগে চার মাস জেল খাটা সাবেক সহ-সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সেলিম প্রমোশন পেয়ে হয়েছেন গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান। গত ২৯ ডিসেম্বর হয়েছে নতুন কমিটি। ৯২ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মাখনও একই অভিযোগে জেল খেটেছেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রাখা হয়েছে ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা মোস্তাফিজুর রহমান মাইনুকে।
মতিঝিলের একটা বড় অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো স্পোর্টস ক্লাব। এই অঞ্চলেই একটা সময় এসে পড়ে ক্যাসিনোর কালো থাবা। ক্লাবঘরগুলো রাতারাতি বদলে হয় যায় চকমকে ক্যাসিনোয়। লাল-নীল বাতির রোশনাইয়ের মাঝে উড়ত লাখ লাখ কালো টাকা। শত শত সাধারণ মানুষ এই ফাঁদে পা দিয়ে হয়েছে সর্বস্বান্ত। ধীরে ধীরে অনেকগুলো ক্লাব মাঠের খেলা ভুলে এই অবৈধ ব্যবসার তীর্থক্ষেত্রে রূপ নেয়। বাদ যায়নি মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবও। বাধ্য হয়েই ২০১৯ সালে ক্লাবপাড়ায় অভিযান চালায় র্যাব। ছয়টি ক্লাবে ক্যাসিনোর অস্তিত্ব পেয়ে সিলগালা করে দেয় এবং গ্রেপ্তার করা হয় জড়িত অনেক ক্লাব কর্মকর্তাকে। ইয়ংমেন্স ছিল এর অন্যতম। সে সময় অনেকের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সেলিম ও মাখন।
ক্লাবটি এখনো সিলগালা থাকলেও গত মাসে হঠাৎ করেই নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসে। বিশাল যে কমিটি হয়েছে, অভিযোগ আছে তাতে স্থানীয় ফকিরেরপুলের মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। এই ক্লাবটির সর্বশেষ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক। তিনিই নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বিতর্কিত কমিটি প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আসলে এই কমিটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেছেন বিশাল কমিটিতে তাদের জায়গা হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেরা মিলে কমিটি গঠন করেছে। আমি দেখতে চাইলেও দেখায়নি। তাই আমার মনও ভালো নেই। এখন বয়স হয়েছে। আগের বয়স থাকলে হয়তো আমি পাল্টা কমিটি গঠন করতাম এলাকার মানুষ নিয়ে। এখন বয়স হয়েছে, তাই চুপ থাকছি।’
হাজী মোহাম্মদ সেলিম আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন দেশ রূপান্তরের কাছে, ‘আমি নিজে কখনই ক্লাবের ক্যাসিনোতে প্রবেশ করিনি। অভিযানের দিন আমি ক্লাব অফিসে অবস্থান করছিলাম। অনেকের সঙ্গে আমাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে মিথ্যে মামলার আসামি করা হয়। চার মাস জেল খাটার পর অবশ্য আমি এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাই। মামলাটা যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।’ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও নবগঠিত কমিটি তাকে দেখানো হয়নি দাবি করেছেন সেলিম, ‘নতুন কমিটি হয়েছে আমাকে না জানিয়ে। সভাপতি (মাখন) ও সাধারণ সম্পাদক (মাইনু) এই কমিটি করেছে। তাদের বলেছিলাম পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেখাতে। কিন্তু এখনো দেখায়নি। বহিরাগতদের নিয়ে কমিটি করার অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। তবে এমন কিছু হলে, বিতর্কিত লোকজন কমিটিতে থাকলে অবশ্যই তাদের বের করে ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া ক্লাবটির সুনাম ফিরিয়ে আনতে, আয় বাড়াতে সচেষ্ট থাকব। কারণ এখন ভাড়া থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা দলের খরচের এক-চতুর্থাংশও ওঠানো সম্ভব হয় না।’ ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি মনজুর হোসেন মালুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ক্লাবপাড়ায় এখন আর ক্যাসিনো ঘরগুলো থেকে লাল-নীল আলো বের হয় না। তবে ক্যাসিনোর কালো ছায়া যে পুরোপুরি সরে যায়নি, তারই প্রমাণ ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব।
ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আদলে বাংলাদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০১১ সালে; নানান ধাপ পেরিয়ে ৬ দলের আসর মাঠে গড়ায় ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি মৌসুম দেখেছে বিপিএল; এই ৮ মৌসুমে ম্যাচ গড়াপেটা, পারিশ্রমিক বকেয়াসহ উঠেছে নানান বিতর্ক। আসরে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা, ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্ব সবকিছুই বদলেছে বছরে বছরে। তাই পরিকল্পনা গ্রহণের এক যুগ পরেও বিপিএল পড়ে আছে সেই তিমিরেই।
বিসিবির একাডেমি মাঠটা আদতে একফালি উঠান। বছরের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকেই সেখানে ক্রিকেটারদের মেলা। একপাশে ফরচুন বরিশাল অনুশীলনে, অন্যপাশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। তাদের পর আসে সিলেট স্ট্রাইকার্স আর খুলনা টাইগার্স। এভাবেই এক মাঠে পালা করে অনুশীলন। এর ফাঁকেই ক্রিকেটারদের একে অন্যের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, কুশল বিনিময় আর কথাবার্তা। গোপনীয়তার কোনো বালাই নেই, নেই কৌশল লুকিয়ে রাখার রাখঢাক। অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেটারদের গায়েই ওঠেনি নতুন দলের জার্সি। সাব্বির রহমানের গায়ে ছিল বিসিএলে নর্থ জোনের জার্সি; এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, মাহমুদউল্লাহদের পরনে জাতীয় দলের অনুশীলন জার্সি। অনেক দলের এখনো প্রস্তুত হয়নি টিম বাস। খেলোয়াড়দের অনেকেই যারা ঢাকার বাসিন্দা তারা এসেছেন নিজস্ব গাড়ি বা মোটরসাইকেলে, অনেক দলই বিয়ের বরযাত্রীর মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে এসেছে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে।
দলগুলোর বিদেশি খেলোয়াড়দের কেউ আসেননি অনুশীলনে, আসবেন কী করে; তারা তো দলের সঙ্গে যোগই দেননি! দেশের তারকা ক্রিকেটাররাও গরহাজির। সাকিব আল হাসান আসেননি ফরচুন বরিশালের অনুশীলনে, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ব্যস্ত নিজ নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এসেছেন, বেশ ঘামও ঝরিয়েছেন। তামিম ইকবাল কুঁচকির চোটে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ খেলেননি, ট্র্যাকস্যুট পরে অনুশীলনে ঘোরাঘুরি করলেও ব্যাট হাতে নেটে যেতে দেখা যায়নি। অবশ্য বেশ কয়েক মৌসুম আগেই সাকিব আল হাসান সাংবাদিকদের হাসতে হাসতেই বলেছিলেন, ‘বিপিএল সবাইকে ফিট করে দেয়।’
বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের ভাষায় আইপিএলের পরেই বিপিএল। কিন্তু ১০ম মৌসুমে এসেও আসর শুরুর দিন চারেক আগে অনুশীলনে ঢিলেঢালা ভাব, সব দলের জার্সিও প্রস্তুত না হওয়া, খেলোয়াড়দের না আসা... মনে করিয়ে দেয় প্রথম দিককার সময়টাকে। বিপিএলে আম্পায়ারিং সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ, এবারেও নকআউট পর্বের আগে নেই ডিআরএস। একই সমান্তরালে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগ ও আরব আমিরাতের লিগ থাকাতে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়েরও ঘাটতি। বিপিএলে তাই পল ভ্যান মিকারেন, কলিন অ্যাকারম্যান, কার্টিস ক্যাম্ফার, ম্যাক্স ও’দাউদদের মতো আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর খেলোয়াড়দের নিয়েও টানাটানি।
বিপিএলের প্রথম আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। দেশ রূপান্তর তার কাছে জানতে চেয়েছিল, বিপিএলের যে রূপরেখা বা ভবিষ্যৎ চিত্রকল্প তারা দেখেছিলেন, সেখান থেকে বর্তমানে বিপিএল এর কতটা কাছাকাছি? উত্তরে বলেন, ‘আমাদের যে ভবিষ্যৎ রূপকল্প ছিল, তার সঙ্গে এই বিপিএলের অনেক তফাত। আমরা বিপিএলকে কাক্সিক্ষত জায়গায় নিয়ে যেতে পারিনি। বিপিএলকে এখন আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাছাকাছি মানের আসর বলা যায় না, বিপিএল এখন ঢাকা লিগের মানের একটা আসরে পরিণত হয়েছে।’ বারবার বদলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি, দাঁড়ায়নি কোনো ব্র্যান্ড ভ্যালু। কোন ক্রিকেটার কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির এমনকি কোন বিভাগের দলের কী নাম সেটাও পাঁড় ক্রিকেট সমর্থকরা চট করে বলতে পারবেন না। আলমগীর মনে করেন, বিপিএলের এই বড় হতে না পারা পেছনে দায় আছে বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি দুই তরফেই ‘বিসিবি শুরুতে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক হিসেবে কাউকে আনতে পারেনি। ফলে পারিশ্রমিক বকেয়াসহ নানান ইস্যুতে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। পরে বসুন্ধরা বেক্সিমকোর মতো বড় বড় কপোরেটরা এসেছে, তারা তো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বছর বছর টাকা লগ্নি করে দেখেছে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। তাই অনেকে সরে গেছে। কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলের যে বৈশিষ্ট্যগুলো সেগুলো এখানে প্রয়োগ করা যায়নি। আর বিসিবি ভয় পেয়েছে বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোকে, যারা ক্রিকেটে এলে তাদের উত্তাপ সহ্য করাটা হবে কঠিন।’
গেম অন নামের এক ভূইফোঁড় প্রতিষ্ঠানকে স্বত্ব দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বিপিএলের পথচলা। এরপর পাতানো ম্যাচ, পারিশ্রমিক বকেয়া কা-ে প্রথম দুই আসরের পর বোর্ডের চুক্তি বাতিল হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে। এক মৌসুম পর বিপিএল মাঠে ফিরলেও একটি বিশেষ দলকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে সূচি, নিয়মসহ সবই চলে। অবশেষে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস থেকে রংপুর রাইডার্সে যাওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংকটের শেষ হয় বিসিবির ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার মধ্য দিয়ে। এরপর এক বছর মেয়াদি স্বত্ব বিক্রির নীতি আর আসরে বিসিবির নিজেদেরই দল মালিক বনে যাওয়ার অদ্ভুতুড়ে কা-ের পর এবার থেকে তিন মৌসুমের স্বত্ব বিক্রি শুরু বিসিবির। তাতেও শেষ বেলায় এক মালিক পক্ষের পিঠটান এবং রাতারাতি ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক বদল।
পুরনো সব বৈশিষ্ট্যকে অক্ষত রেখেই শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএলের ৯ম আসর। অগোছাল, পরিকল্পনাহীন আয়োজন এবং মানহীন সব বুড়িয়ে যাওয়া বিদেশিদের সঙ্গে ফুরিয়ে যাওয়া দেশীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে শ্লথ গতির টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। অথচ এই নিয়েই কর্তাব্যক্তিদের গর্বের যেন শেষ নেই!
বিশ্বকাপ বিরতির পর পিএসজির দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল রবিবার। ছুটিতে থাকায় এ ম্যাচে খেলতে পারেননি লিওনেল মেসি। লাল কার্ডের খড়গে পড়ে খেলা হয়নি নেইমারেরও। জ্বলে উঠতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপ্পেও। সব মিলিয়ে মেসি-নেইমারবিহীন পিএসজিও জিততে পারেনি। লেঁসের মাঠে ১-৩ গোলে হেরে ফিরেছে ক্রিস্তফ গালতিয়েরের দল। মৌসুমে প্রথম পরাজয়ের পর দ্বিতীয় স্থানের লেঁসের সঙ্গে শিরোপা লড়াইটা জমে উঠল পিএসজির। ১৭ রাউন্ড শেষে মাত্র ৪ পয়েন্ট দূরে লেঁস।
গালতিয়ের বলেছেন, খেলা দেখে চেনা যাচ্ছিল না পিএসজিকে। ‘লেঁসের জয় প্রাপ্য ছিল। খেলা দেখে আমি পিএসজিকে চিনতে পারিনি। কিলিয়ান (এমবাপ্পে) কঠোর পরিশ্রম করেছে। আজ লিও (মেসি) ও নেইমার ছিল না, তবে এটি কোনো অজুহাত নয়।’ তবে লেঁসের আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ফাকুন্দো মেদিনা মনে করেন পিএসজি বিশ্বসেরা মেসির অভাব অনুভব করেছেন, ‘নিঃসন্দেহে তারা বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের অভাব বোধ করেছে, নেইমারের অভাবও। তবে আমাদের সামনে যে খেলোয়াড়ই থাকুক না কেন, আমরা স্রেফ নিজেদের শক্তিমত্তা নিয়ে ভাবি এবং সে অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি।’
প্রয়াত পেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই লেঁস এগিয়ে যায় পোলিশ মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্কোস্কির গোলে। তিন মিনিট পরই সমতায় ফেরে পিএসজি হুগো একিতিকের গোলে। এটাই যে শেষ পর্যন্ত প্যারিসিয়ানদের একমাত্র গোল হয়ে থাকবে কে জানত! কারণ ১৬ মিনিটে এমবাপ্পের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান লেঁসের কঙ্গোর গোলকিপার সাম্বা। একিতিকের ফিরতি শট পাশর্^জালে লাগে। ২৮ মিনিটে একটি কাউন্টার অ্যাটাক থেকে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। একটি কাউন্টার অ্যাটাক থেকে সেকো ফোফানার ডি বক্সে বাড়ানো বল পান বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড লোইস ওপেন্দা। ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার মার্কিনহোসকে এড়িয়ে ছুটে আসা দোন্নারুমার শরীরের নিচ দিয়ে বল জালে জড়ান ওপেন্দা। তার বাড়ানো বলেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্কোরলাইন ৩-১ করেন ক্লদ-মরিস। ৫৪ ও ৬৩ মিনিটে এমবাপ্পের গোলের চেষ্টা লেঁস গোলকিপার রুখে দিলে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় পিএসজিকে। এর আগে তারা সবশেষ লিগ ম্যাচ হেরেছিল ৯ মাসেরও বেশি সময় আগে। গত লিগে মোনাকোর কাছে হারার সময়ও ১২ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষে ছিল পিএসজি এবং শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতেছিল। এবার তাদের সঙ্গে লেঁসের ব্যবধান মাত্র ৪। ফ্রেঞ্চ লিগে ১৭ ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জন। এর আগে ১৯৬৯-৬০ মৌসুমে নিমস দ্বিতীয় স্থানে ছিল ৪১ পয়েন্ট নিয়ে।
বয়সভিত্তিক দলে মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন অলরাউন্ডার। ২০১৬ সালে, বাংলাদেশ সফরে আসা ইংল্যান্ড দলের জন্য তাকেই গোপন অস্ত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন জাতীয় দলের সে সময়কার কোচ চন্দিকা হাতুরুসিংহে। অভিষেকেই বাজিমাত মিরাজের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিরাজ হয়েছেন পরিণত, হাতুরুসিংহেও বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে পেশাগত জীবনে ব্যস্ত হয়েছেন অন্য অনেক জায়গায়। ২০২৩ সালে আবার হয়তো একই তাঁবুতে চলে আসতে পারেন দুজনে। রাসেল ডমিঙ্গোর বিদায়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের জায়গাটা ফাঁকা, সেখানেই শোনা যাচ্ছে হাতুরুসিংহের প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জন।
বিশ্বকাপের বছরে নিজের প্রস্তুতিটা বিপিএল দিয়েই শুরু করতে চান ২০২২ সালটা দারুণ কাটানো মিরাজ। কাল মিরপুরের একাডেমি মাঠে ফরচুন বরিশালের অনুশীলন পর্ব শেষে এই অলরাউন্ডার সাংবাদিকদের জানান, ‘২০২৩-এ আমাদের সামনে বড় ইভেন্ট আছে, সেটা বিশ্বকাপ। অবশ্যই বিশ্বকাপকে ঘিরে আমাদের সব পরিকল্পনা করা হবে। আমি নিজেকে ওভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করব যে, কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়। বিশ্বকাপের আগে আমাদের অনেক ম্যাচ আছে, সিরিজ আছে। আমরা যদি এখন থেকেই প্রস্তুতি নেই তো ভালো হবে। যে ধারাবাহিকতা নিয়ে আমরা খেলে এসেছি তা যদি ধরে রাখতে পারি করতে পারি তাহলে দলের জন্য অবশ্যই ভালো হবে।’ বিশ্বকাপ প্রস্তুতি প্রসঙ্গেই চলে আসে কোচের প্রসঙ্গ। মার্চে আসতে পারেন নতুন কোচ। অক্টোবর-নভেম্বরে বিশ্বকাপ, মানে কোচের কাজ করার সময় মাস ছয়েক। তাই বিসিবি খুব সম্ভবত হাঁটছে চেনা কাউকেই কোচের দায়িত্বে বসাতে, যাতে খেলোয়াড়দের জানতে আর বাংলাদেশ দলের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়টা কম লাগে। সব মিলিয়ে হাতুরুসিংহের নাম আসছে জোরেশোরেই, মিরাজও বললেন তিনিও খুশি হবেন অভিষেকের সময়কার কোচকে ফিরে পেলে, ‘এটা তো টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয় কে আসবে না আসবে। যেহেতু ওর (হাতুরুসিংহে) সময়ে আমার অভিষেক হয়েছিল... তবে শেষ পর্যন্ত আমাকে কিন্তু পারফর্ম করতেই হবে। আমি যদি পারফর্ম করতে না পারি তাহলে কিন্তু খেলতে পারব না যে কোচই আসুক না কেন। পছন্দ করুক না করুক সেটা ব্যাপার না। কোচ খেলোয়াড়কে পছন্দ করে যখন কেউ পারফর্ম করে। এখানে পারফর্ম করা গুরুত্বপূর্ণ যে কোচই আসুক না কেন। পারফর্ম করলে খেলতে পারব লং টার্ম, যা আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।’
হাতুরুসিংহের ব্যাপারে কিছু খেলোয়াড়ের আপত্তি ছিল, বিশেষ করে তার কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে। মাহমুদউল্লাহকে শততম টেস্টের আগে দেশে ফেরত পাঠানো, মাশরাফী বিন মোর্ত্তুজাকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেওয়াসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্তই অনেককে করেছে অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে মিরাজ, সৌম্য সরকারসহ অনেককে সুযোগ দিয়েছেন বেশ কজনকে ডিঙ্গিয়ে। সবগুলো কৌশলই যে খেটেছে এমনটা বলা যাবে না; কারণ দিনশেষে হাতুরুসিংহেও তো মানুষ! তবে মিরাজ যে হাতুরুসিংহে ফিরলে খুশি হবেন এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, কারণ মাত্রই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা মিরাজকে টেস্ট খেলোয়াড় বানিয়ে দিয়েছিলেন তো এই শ্রীলঙ্কানই। সুযোগ পেয়েই তো বাজিমাত মিরাজের।
২০২২-এর মতো ২০২৩ সালেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিটি করলেন নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ে। তার ১২২ রানের ইনিংসে ভর করে প্রথম দিন শেষে নিউজিল্যান্ড করেছে ৬ উইকেটে ৩০৯ রান।
প্রথম টেস্টে ব্যাটিংলাইনে আগে পরের টম ল্যাথাম কেন উইলিয়ামসন সেঞ্চুরি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের। মাত্র ৮ রানের জন্য মিস করেছিলেন ডেভন কনওয়ে। সেই করাচিতে দ্বিতীয় টেস্টের শুরুর দিনই সেঞ্চুরি করে ফেললেন এই বাঁহাতি। আগের টেস্টেও ল্যাথাম-কনওয়ে ওপেনিংয়ে ১৮৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। গতকালও এই জুটি ভাঙতে ঘাম ঝরল পাকিস্তানি বোলারদের। তিন টেস্ট পর দলে ফেরা নাসিম শাহ ৭১ রান করা ল্যাথামকে যখন এলবিডব্লিউ আউট করেন, ততক্ষণে ওপেনিং জুটিতে রান উঠেছে ১৩৪। দ্বিতীয় উইকেটে উইলিয়ামসনকে নিয়ে আরও ১০০ রান যোগ করেন কনওয়ে। এর মাঝেই ১৫৬ বলে চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত কনওয়ে। ১৯১ বলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ১২২ রান করা কনওয়েকে ফেরান আগা সালমান। নাসিম শাহ দ্রুতই ফেরান আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান উইলিয়ামসনকে। তিনি এবার করেছেন ৩৬। সালমান দ্রুতই আবার আঘাত হানলে ২৪০/৩ থেকে ২৭৯/৬-এ পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড। তবে দিনের শেষ ঘণ্টায় আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি টম ব্লান্ডেল ও ইস সোধি। ব্লান্ডেল ৩০ ও সোধি ১১ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামবেন।
‘বুকে হাত রেখে, বিজয়ের বেশে ছুঁয়ে দেব আসমান’ সেøাগান নিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) আয়োজনে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস। গতকাল প্রথম দিনে দেশের ১১টি জেলায় গেমসের উদ্বোধন হয়। প্রথম পর্বে আন্তঃউপজেলা পর্যায়ের এই খেলা চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৪৯৫ উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদ ৪২৯টি সোনার পদকের জন্য লড়বেন। প্রথম দিন জয়পুরহাট, চাঁদপুর, নরসিংদী, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় শুরু হয়েছে। আজ আরও ৮ জেলায় গেমসের খেলা শুরু হবে।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।