
বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনাকে ঢাকায় আনার উদ্যোগের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ২০১১ সালের পর আবারও বাংলাদেশ সফরে আসতে আপত্তি নেই লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার। কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে, সেগুলো মিলে গেলে আগামী জুন-জুলাইয়ে ফিফা উইন্ডোতে ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলবে গত ডিসেম্বর ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা। মেসি ও আর্জেন্টিনাপ্রেমীদের জন্য এটা অনেক বড় সুসংবাদ। তবে মেসিদের আনার উদ্যোগ নেওয়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্য কি সত্যিই এটা হবে অনেক বড় সাফল্য? ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়াকে ঢাকায় খেলিয়ে বেশ বাহবা পেয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তবে সেটা করতে গিয়ে বাফুফের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন বিশাল ঋণের বোঝা। যা এক যুগেও পরিশোধ করতে পারেননি। অতীতের ঋণের বোঝা নিয়ে আবারও মেসির দলকে আনার বিলাসী স্বপ্ন দেখছেন সালাউদ্দিন।
আর্জেন্টাইন ফুটবল সংস্থার কাছে জাতীয় দলকে ঢাকায় খেলানোর আগ্রহের কথা জানিয়েছিল বাফুফে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও মেসিকে নিয়ে আকাশছোঁয়া উন্মাদনার ব্যাপারটা খুব জানা আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার। এ কারণেই বাফুফের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে আর্জেন্টিনা। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্জেন্টিনার ঢাকা সফর যে পুরোপুরি চূড়ান্ত সেটা বলব না। তবে তাদের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। কিছু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন নিয়ে আলোচনা চলছে। সেগুলো মিলে গেলে আর্জেন্টিনা দল ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলতে আসবে।’ মেসিদের প্রতিপক্ষ প্রসঙ্গে সোহাগ বলেন, ‘প্রতিপক্ষের ব্যাপারে আর্জেন্টিনার পক্ষ থেকে খুব বেশি শর্ত নেই। তারা কিছু দলের নাম দেবে। আমরাও কিছু প্রতিপক্ষের কথা ভাবছি। তবে মানসম্পন্ন প্রতিপক্ষই থাকবে মেসিদের।’
২০১১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ আয়োজন করতে গিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের কাছ থেকে ৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল বাফুফে। সেই ঋণ তো পরিশোধ হয়ইনি, বরং এক যুগ পরেও সেটা একই অঙ্ক রয়ে গেছে। বাফুফে এ সময় কেবল সুদের অঙ্ক গুনেছে। ঋণ বকেয়া থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সোহাগ বলেন, ‘সেটা এখনো আছে। আমরা প্রতি বছর অডিট রিপোর্টে ঋণের বিষয়টি উল্লেখ করি। তবে এটা নানাভাবে আমরা এডজাস্ট করছি। দেখে থাকবেন আমাদের বিভিন্ন আয়োজনে আইএফআইসি ব্যাংকের বিলবোর্ড থাকে। এভাবেই একটা সময় বকেয়াটা পরিশোধ হয়ে যাবে।’
২০১১ সালে মেসিরা যখন প্রথম ঢাকায় এসেছিলেন, বিশ্ব র্যাংকিংয়ে তখন বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬০-এর নিচে। এক যুগ পর এবার মেসিরা আসছেন বিশ্বসেরার তকমা নিয়ে। অথচ বাংলাদেশ এই এক যুগে র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে ১৯২তম স্থানে। অর্থাৎ মেসিদের ম্যাচ এদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আনন্দ দিলেও, আক্ষরিক অর্থে ফুটবলের উন্নতিতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। দেশের ফুটবলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে মেসিদের জন্য নিজেদের মাঠকে কমিউনিটি সেন্টারে রূপ দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক এ নিয়েও উঠে গেছে প্রশ্ন। তবে অনেক নেতিবাচক কারণে নিয়মিত শিরোনাম হওয়া বাফুফে প্রায় একশ কোটি টাকা খরচে মেসিদের ম্যাচ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়ে চাইছে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। আগের ঋণই যারা শোধ দিতে পারছে না, তারা কীসের জোরে আবারও বাফুফেকে পাহাড় সমান চাপের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে, তা এখনো অজানা। সরকার এক্ষেত্রে অর্থ সহায়তা দেবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই ম্যাচের প্রস্তাবিত ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে ম্যাচ আয়োজন উপযোগী করে তোলার প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
প্রথমে গোল করলেন। এরপর সতীর্থদের দিয়ে করালেন আরও দুই গোল। এর মাঝে আবার পেনাল্টিও মিস করলেন। ভীষণ সপ্রতিভ রবসন রবিনহোর এত এত কীর্তির ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে তার দল বসুন্ধরা কিংস। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে গতকাল ফেডারেশন কাপের গ্রুপ ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র বড় পরীক্ষাই নিয়েছিল কিংসের। সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচটা অবশ্য ৪-৩ গোলে জিতেছে লিগে দারুণ ছন্দে থাকা কিংস।
ফেডারেশন কাপে এটি কিংসের টানা দ্বিতীয় জয়। যা তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে দিয়েছে। লিগের মাঝপথে ফেডারেশন কাপ। তাই শুরু থেকেই কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজন ফেডারেশন কাপের শুরুর ম্যাচগুলোকে নিয়েছেন সাইডবেঞ্চের শক্তি পরখের মঞ্চ হিসেবে। গতকালও লিগে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়াদের দিয়ে স্প্যানিশ কোচ সাজিয়েছিলেন একাদশ। ফলে শুরু থেকেই সহজাত আক্রমণাত্মক ফুটবল ছিল অনুপস্থিত। আক্রমণগুলো দানা বাঁধেনি সেভাবে। মুক্তিযোদ্ধা শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক রণকৌশল সাজিয়েছিল। তাই শুরুটা হয়েছে ঢিমেতালে। ১২ মিনিটে সুমন রেজার প্রচেষ্টা অনেকটা বেরিয়ে এসে ক্লিয়ার করেন মুক্তিযোদ্ধার গোলকিপার মনিরুল ইসলাম। চার মিনিট পর অবশ্য অসামান্য শৈলীতে পয়সা উসুল করা গোল করেন ব্রাজিলিয়ান রবিনহো। উজবেক মিডফিল্ডার আসরর গফুরভের আড়াআড়ি পাস ধরে গুণে গুণে চার ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে কোনাকুনি শটে দূরের পোস্টে বল জড়ান কিংস অধিনায়ক। ৩৬ মিনিটের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গফুরভ। প্রায় মাঝমাঠ থেকে রবিনহোর বাড়ানো বল ধরতে মার্কার রাসেদুল ইসলামকে পেছনে ফেলেন উজবেক মিডফিল্ডার। এরপর বাঁ-পায়ের প্লেসিংয়ে মনিরুলকে পরাস্ত করেন। এর ২ মিনিট পর অবশ্য গোলকিপার হামিদুর রহমানের ভুলে গোল হজম করতে হয় কিংসকে। সোমা ওতানির লম্বা ক্রস বিপন্মুক্ত করতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন কিংসের পার্টটাইম কিপার। তবে তার নাগাল পাননি। সুযোগ বুঝে মোহাম্মদ রোমান পাস বাড়িয়ে দেন এমানুয়েল ইকেচুকেকে। ফাঁকা পোস্টে বল রাখতে ভুল করেননি এই স্ট্রাইকার। বিরতি থেকে ফিরে ৪৯ মিনিটে সুমন রেজাকে দিয়ে গোল করান রবিনহো। বাঁ দিক থেকে এই ব্রাজিলিয়ানের ফ্রি-কিকে হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন জাতীয় দলের স্ট্রাইকার। ৫২ মিনিটে কিংসকে এগিয়ে নেওয়ার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন রবিহনো। বক্সের ভেতরে ফাউলের শিকার হয়ে পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছিলেন কিংসের আক্রমণভাগের প্রাণভ্রমরা। আগে ৩ গোল হজম করায় মুক্তিযোদ্ধার মালয়েশিয়ান কোচ রাজা ইশা গোলকিপার মনিরুল ইসলামকে তুলে শ্রাবণকে নামান। তবে রবিনহোর স্পটকিক পোস্টে আঘাত করে ফিরে আসে। ৬২ মিনিটে সুমন রেজার জায়গায় মাঠে আসেন লিগে আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক ডরিয়েলটন গোমেজ। নেমেই শ্রাবণের পরীক্ষা নেন ব্রাজিলিয়ান মার্কসম্যান। তার শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন তরুণ কিপার। তবে ৮৩ মিনিটে টুটুল হোসেন বাদশার লম্বা পাস ধরে অফসাইট ট্র্যাপ ভেঙে ঠিকই গোল করেছেন ছন্দে থাকা ডরিয়েলটন।
৪-১ গোলের লিডের পর মনে হচ্ছিল কিংস সহজেই ম্যাচটা জিতবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সেটা হতে দেয়নি। ৮৭ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পায়ের শটে ব্যবধান কমান বুরুন্ডির ফরোয়ার্ড সোলেইমানি লেন্ড্রি। পরের মিনিটে বক্সে আবু বকর ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় মুক্তিযোদ্ধা। তা থেকে এমানুয়েলের গোলে মুক্তিযোদ্ধার ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা জেগেছিল। তবে শেষ দিকে আর গোল করতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা। ফলে টানা দ্বিতীয় হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে দলটিকে।
মুন্সীগঞ্জে গ্রুপের অন্য ম্যাচে ফর্টিস একাডেমি ও চট্টগ্রাম আবাহনী গোলশূন্য ড্র করেছে। ২ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেরা আটের পথে আছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
৪২ বলে ৭০ রানের ইনিংসে ছিল ৪ ছক্কা ও ৭ চার। বছর জুড়ে রান করে যাওয়া লিটন বিপিএলের শুরু থেকে ফর্মের খোঁজে ছিলেন। গত দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৩২ ও ৪০-এর পর প্রস্ফুটিত হলেন পুরোদমে
ছয় মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক গ্রোয়েন ইনজুরির কারণে খেলেননি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজে। চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেই। খুলনা টাইগারসের হয়ে চতুর্থ ম্যাচে এসে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম। তার ৪৭ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করেই রংপুর রাইডার্সকে ৯ উইকেটে হারিয়ে এবারের আসরে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে খুলনা।
তামিমের ব্যাটে সবশেষ পঞ্চাশ রানের ইনিংস দেখা গিয়েছিল ২০২২-এর ৭ আগস্ট, হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। খেলেছিলেন ৪৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস। জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ওয়ানডে খেলার পর জাতীয় লিগে দুটো চার দিনের ম্যাচ খেলেছেন তামিম, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) দুটো ম্যাচ খেলেছেন আর খুলনার হয়ে বিপিএলে খেলেছেন ৩ ম্যাচ। সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ১০ ইনিংস তামিমের সর্বোচ্চ রান ছিল ৪০। করেছিলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে। মাসছয়েক ধরেই ব্যাটিংয়ে খুব একটা ভালো করছিলেন না তামিম, কাল নিজের শহর চট্টগ্রামে রংপুরের বিপক্ষে ৬০ রানের ইনিংসে দেখা গেল পুরানো তামিমের ঝলক। শেখ মাহেদী ও মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে দুটো ছক্কা মেরেছেন, চারটে চারের দুটো আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের এক ওভারে আর বাকি দুটো মেরেছেন হারিস রউফ ও নাওয়াজের বলে।
ওয়াহাব রিয়াজের দারুণ বোলিংয়ে আগে ব্যাট করা রংপুর গুটিয়ে যায় মাত্র ২৯ রানে। রংপুরের নিয়মিত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান এই ম্যাচে খেলেননি চোটের জন্য, তার বদলে অধিনায়কত্ব করেন শোয়েব মালিক। মেহেদির ৩৮ ও পারভেজ হোসেন ইমনের ২৫ রানের বাইরে রংপুরের ইনিংসে বলার মতো কোনো পারফরম্যান্সই নেই, মাত্র ১৪ রানে ৪ উইকেট ওয়াহাব রিয়াজের।
১৩০ রানের অল্প পুঁজিতে খুলনাকে বেঁধে রাখতে পারেনি রংপুর। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম আর মুনিম শাহরিয়ার (২১ বলে ২১) মিলেই তুলে ফেলেন ৪১ রান, মুনিম আউট হলেও মাহমুদুল হাসান জয়ের ৪২ বলে ৩৮ রানের ইনিংসের সঙ্গে বিপিএলে তামিমের ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি মিলিয়ে ১৮.২ ওভারে ৯ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় খুলনা টাইগারস। এবারের বিপিএলে চতুর্থ ম্যাচে এসে হারের বৃত্ত ভাঙল খুলনা, অন্যদিকে ৪ ম্যাচে সমান দুটো করে জিতেছে আর হেরেছে রংপুর।
যার যত পেশি তার পেস তত বেশি। সাধারণের এই ধারণা এবার বদলে যাওয়ার পালা। ভালো পেসার হতে হলে পেশি নয় চাই পায়ের শক্তি। সোমবার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ কথা বোঝাতে চেয়েছেন কিংবদন্তির ক্যারিবীয় পেসার স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস। এক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে বর্তমানের অন্যতম গতি তারকা হারিস রাউফ বললেন, শক্তি বাড়াতে সঙ্গে খাওয়াও হতে হবে বেছে। খেতে হবে ডিম, যা প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস।
পেসারদের শক্তিটা আসে পা থেকে। পায়ের জোরে রানআপ সঠিক না হলে শরীরের শক্তিটা হাতে জড়ো করা সম্ভব নয়। তখন আর পেসারদের বলে পেস থাকে না, হয়ে যায় মিডিয়াম পেস বোলিং। তাই পায়ের সহনশীল ক্ষমতা বাড়াতে দৌড়াতে হবে বেশি। বেশি দৌড়ে পায়ে শক্তি সঞ্চারের অভ্যাস হবে। পাশাপাশি পেশিবহুল শরীর পেসারদের শরীরের উপরের অংশ ভারী করে ফেলে। তখন পায়ের ওপর চাপ পড়ে আর পেসাররা লম্বা সময় বল করার শক্তি হারান। কিংবদন্তি পেসার অ্যামব্রোস-ই যেমন, আশি-নব্বইয়ের দশকে ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির এই বোলার লিকলিকে শরীর নিয়েও কী পেসটাই না করতেন। ঠিক তেমনি কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান পেসাররা, ডেনিস লিলি, রিচার্ড হ্যাডলি, গ্লেন ম্যাকগ্রা-ব্রেট লি, শোয়েব আকতার বা জেমস অ্যান্ডারসন সবার শরীরে বডি বিল্ডার ভাবটা নেই। তাদের দেখলে মনেই হতো না তারা জিমে খুব বেশি সময় ব্যয় করেন। অথচ যুগ বদলের সঙ্গে এখন ধারণাও পাল্টেছে ক্রিকেটারদের। এসময়ে ফিটনেস ধরে রাখতে ক্রিকেটাররা বেশি সময় ব্যয় করেন জিম করে। অনুশীলনের বাইরে নিজেও জিমে সময় কাটান একান্তে।
এই চিন্তার বিপরীত স্যার অ্যামব্রোস। জিম করাকে তিনি অনুৎসাহিত করেননি। তবে পেসারদের জন্য জিমের চেয়েও ভিন্ন দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে জানান। টেস্টে ৪০৫ ও ওয়ানডেতে ২২৫ উইকেটের মালিক বলেন, ‘আমি খেয়াল করেছি, অনেক খেলোয়াড় জিমে প্রচুর সময় দেয়। আমার তাতে একটা অভিযোগ আছে। জিমে যাও। নিজেকে শক্তিশালী কর। কিন্তু বডি বিল্ডার হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ফাস্ট বোলার হিসেবে তোমাকে সাবলীল এবং নমনীয় থাকতে হবে। ওয়েট ট্রেনিংয়ে তুমি কেবল নিজেকে শক্তিশালী করতে পার। প্রচুর দৌড়াতে হবে, মাঠে অনেক বোলিং করতে হবে। আমি বলছি না যে তোমাকে জিমে যেতে হবে না। কিন্তু ওখানে গিয়ে তোমাকে শক্তিশালী হতে হবে। সবসময় মনে রাখবে, প্রচুর দৌড়াতে হবে ও বোলিং করতে হবে।’
পায়ের শক্তি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই সাবেক ক্যারিবিয়ান তাসকিনকে পরামর্শ দিলেন, ‘অনেককে দেখেছি জিমে যাচ্ছে, বডি বানাচ্ছে কিন্তু ৪ ওভার বোলিং করার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেসারদের জন্য পা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কাঁধ কখনো ক্লান্ত হবে না। তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে যাও, তাহলে এক সপ্তাহও বোলিং করতে পারবে না। সে জন্য দুই পায়ের শক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমার পা যতটা শক্তিশালী হবে তত তুমি শক্তিশালী হবে। ১০০ মিটার তুমি ১০ সেকেন্ডে শেষ করবে সেটা তোমার কাজ নয়। তোমাকে যেটা করতে হবে প্রচুর দৌড়াতে হবে। শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। পায়ের শক্তি বাড়াতে হবে। যেন দুই পা তোমার শরীরের ওজন বয়ে বেড়াতে পারে। নিয়মিত বিরতিতে তোমাকে দৌড়াতে হবে ও প্রচুর বোলিং করতে হবে। এটা কখনো ভুলবে না।’
তাসকিন দৌড়ানোর ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। করোনার সময় নিজে মোহাম্মদপুরে এক হাউজিংয়ের বালুতে দৌড়ে পায়ের শক্তি বাড়িয়েছেন। এর বাইরেও নিজের ফিটনেস ঠিক রাখতে খুব পরিশ্রম করেন। প্রিয় বড় ভাই মাশরাফীর মাধ্যমেই অ্যামব্রোসের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ পেলেন। যা তার ফিটনেসের খেয়ালে বাড়তি মনোযোগ তৈরি করবে। একই সঙ্গে পরদিনে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলতে আসা পেসার হারিস রউফের বক্তব্যেও চোখ রাখতে পারেন তাসকিন। পাকিস্তান পেসারের গতি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারও। কালও চট্টগ্রামের উইকেটে ১৪৫ ছাড়ানো গতি তুলেছেন। এর পেছনের রহস্য কিছুটা উন্মুক্ত করলেন ম্যাচ শেষে। সংবাদ সম্মেলনে রউফ জানান শরীরে প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে ডিম খান তিনি, ‘আসলে পেস জিনিসটা সহজাত। এর সঙ্গে আপনি কেমন অনুশীলন করেন, আপনার খাদ্যাভ্যাস কেমন। খেলার পর রিকভারি কেমন করতে পারেন। হোটেলে ফিরে কতটুকু ঘুমাচ্ছেন (ক্লান্তি দূর করার জন্য), কেমন খাবার খাচ্ছেন এগুলো নির্ভর করে। আবারও বললাম, এটা আসলে যেকোনো পেসারের সহজাত। এটা নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস, সঠিক মাত্রায় পরিশ্রমের ওপর। আমি ডিম খাই, মানে প্রোটিন বেশি রাখি ডায়েটে। এটা পেসারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা পেসারের শক্তি বাড়ানোর জন্য কাজে লাগে।’
রউফের শেষ কথাটাই গুরুত্বপূর্ণ। পেস বোলিংটা সহজাত, যা পাকিস্তান-উইন্ডিজ পেসারদের মাঝে অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। বাংলাদেশের পেসাররা আগে ১৩০ এর ঘরেই বল করতেন। এখন তাসকিন-এবাদতরা ১৪০ ছাড়ানো গতি তুলছেন। এই গতি ধরে রাখতে যে পরিশ্রম ও প্রক্রিয়া দরকার অ্যামব্রোস-হারিসদের কাছ পরামর্শ সেইদিকে তাসকিনদের এগিয়ে দিতে পারে।
মেসি সর্বকালের সেরা। ম্যারাডোনাও গ্রেট, তবে মেসির সঙ্গে আমার বিশেষ একটা বন্ধন আছে।’ এক সাক্ষাৎকারে দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার কথা বলা হলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি এমনটাই বলেছেন।
কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির অর্জনের খাতায় আর কিছুই বাকি নেই বলা যায়! মেসির জীবনের সেরা প্রাপ্তির পেছনে অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন স্কালোনি। স্পেনের রেডিও ‘কাদেনা কোপ’-এ সাক্ষাৎকারে স্কালোনির কাছে জানতে চাওয়া হয় মেসিকে কোচিং করানো কঠিন কিনা। উত্তরে একসময় মেসির সঙ্গে খেলা ৪৪ বছর বয়সী স্কালোনি বলেন, ‘জানি না কোনো কোচ এটা বলেছেন কি না যে, মেসিকে কোচিং করানো কঠিন। তাকে অনুশীলন করানো কঠিন কিছু নয়। কৌশলগত জায়গা থেকে, তাকে ঠিক করার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু সময়ে, চাপের মধ্যে, আক্রমণে কিছু ধরনের ক্ষেত্রে এটা ব্যাখ্যা করা হয়, যে কীভাবে চাই।’ মেসির খেলার ধরনের প্রশংসা করেছেন স্কালোনি। ‘আমি এটা নিশ্চিত করতে পারি যে, প্রেস (চাপ বিস্তার) করে খেলার ক্ষেত্রে, বল কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সে ১ নম্বর। সে অন্য যে কারও চেয়ে ভালোভাবে বল কেড়ে নিতে পারে।’
বিশ্বকাপ জয়ের পর আর ফাইনাল ম্যাচটি পরে দেখেননি স্কালোনি। কারণ ফাইনালটি তার মাথায় গেঁথে আছে। ‘আমি ফাইনালটি পরে আর দেখিনি। আমার মাথায় এটি গেঁথে আছে। ৯০ মিনিটে খেলাটা শেষ করতে পারিনি তা নিয়ে কিছুটা দুঃখ আছে।’ স্কালোনির খেলোয়াড় জীবনে বেশিরভাগ সময় কেটেছে স্পেনে। স্পেনের লা করুনা, রেসিং সান্তেনদার, মায়োর্কাতে খেলেছেন। ভবিষ্যতে স্পেনের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেলে কী করবেন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এটা আমার দ্বিতীয় বাড়ি। আমি এই দেশের অংশ ভাবি নিজেকে। কেন স্পেন জাতীয় দলের কোচ হতে চাইব না? আমি মনে করি, কোনো স্প্যানিশ কোচই স্পেনের জন্য উপযুক্ত।’
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।