
ছয় মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক গ্রোয়েন ইনজুরির কারণে খেলেননি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজে। চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেই। খুলনা টাইগারসের হয়ে চতুর্থ ম্যাচে এসে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম। তার ৪৭ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করেই রংপুর রাইডার্সকে ৯ উইকেটে হারিয়ে এবারের আসরে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে খুলনা।
তামিমের ব্যাটে সবশেষ পঞ্চাশ রানের ইনিংস দেখা গিয়েছিল ২০২২-এর ৭ আগস্ট, হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। খেলেছিলেন ৪৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস। জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ওয়ানডে খেলার পর জাতীয় লিগে দুটো চার দিনের ম্যাচ খেলেছেন তামিম, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) দুটো ম্যাচ খেলেছেন আর খুলনার হয়ে বিপিএলে খেলেছেন ৩ ম্যাচ। সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ১০ ইনিংস তামিমের সর্বোচ্চ রান ছিল ৪০। করেছিলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে। মাসছয়েক ধরেই ব্যাটিংয়ে খুব একটা ভালো করছিলেন না তামিম, কাল নিজের শহর চট্টগ্রামে রংপুরের বিপক্ষে ৬০ রানের ইনিংসে দেখা গেল পুরানো তামিমের ঝলক। শেখ মাহেদী ও মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে দুটো ছক্কা মেরেছেন, চারটে চারের দুটো আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের এক ওভারে আর বাকি দুটো মেরেছেন হারিস রউফ ও নাওয়াজের বলে।
ওয়াহাব রিয়াজের দারুণ বোলিংয়ে আগে ব্যাট করা রংপুর গুটিয়ে যায় মাত্র ২৯ রানে। রংপুরের নিয়মিত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান এই ম্যাচে খেলেননি চোটের জন্য, তার বদলে অধিনায়কত্ব করেন শোয়েব মালিক। মেহেদির ৩৮ ও পারভেজ হোসেন ইমনের ২৫ রানের বাইরে রংপুরের ইনিংসে বলার মতো কোনো পারফরম্যান্সই নেই, মাত্র ১৪ রানে ৪ উইকেট ওয়াহাব রিয়াজের।
১৩০ রানের অল্প পুঁজিতে খুলনাকে বেঁধে রাখতে পারেনি রংপুর। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম আর মুনিম শাহরিয়ার (২১ বলে ২১) মিলেই তুলে ফেলেন ৪১ রান, মুনিম আউট হলেও মাহমুদুল হাসান জয়ের ৪২ বলে ৩৮ রানের ইনিংসের সঙ্গে বিপিএলে তামিমের ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি মিলিয়ে ১৮.২ ওভারে ৯ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় খুলনা টাইগারস। এবারের বিপিএলে চতুর্থ ম্যাচে এসে হারের বৃত্ত ভাঙল খুলনা, অন্যদিকে ৪ ম্যাচে সমান দুটো করে জিতেছে আর হেরেছে রংপুর।
প্রথমে গোল করলেন। এরপর সতীর্থদের দিয়ে করালেন আরও দুই গোল। এর মাঝে আবার পেনাল্টিও মিস করলেন। ভীষণ সপ্রতিভ রবসন রবিনহোর এত এত কীর্তির ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে তার দল বসুন্ধরা কিংস। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে গতকাল ফেডারেশন কাপের গ্রুপ ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র বড় পরীক্ষাই নিয়েছিল কিংসের। সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচটা অবশ্য ৪-৩ গোলে জিতেছে লিগে দারুণ ছন্দে থাকা কিংস।
ফেডারেশন কাপে এটি কিংসের টানা দ্বিতীয় জয়। যা তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে দিয়েছে। লিগের মাঝপথে ফেডারেশন কাপ। তাই শুরু থেকেই কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজন ফেডারেশন কাপের শুরুর ম্যাচগুলোকে নিয়েছেন সাইডবেঞ্চের শক্তি পরখের মঞ্চ হিসেবে। গতকালও লিগে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়াদের দিয়ে স্প্যানিশ কোচ সাজিয়েছিলেন একাদশ। ফলে শুরু থেকেই সহজাত আক্রমণাত্মক ফুটবল ছিল অনুপস্থিত। আক্রমণগুলো দানা বাঁধেনি সেভাবে। মুক্তিযোদ্ধা শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক রণকৌশল সাজিয়েছিল। তাই শুরুটা হয়েছে ঢিমেতালে। ১২ মিনিটে সুমন রেজার প্রচেষ্টা অনেকটা বেরিয়ে এসে ক্লিয়ার করেন মুক্তিযোদ্ধার গোলকিপার মনিরুল ইসলাম। চার মিনিট পর অবশ্য অসামান্য শৈলীতে পয়সা উসুল করা গোল করেন ব্রাজিলিয়ান রবিনহো। উজবেক মিডফিল্ডার আসরর গফুরভের আড়াআড়ি পাস ধরে গুণে গুণে চার ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে কোনাকুনি শটে দূরের পোস্টে বল জড়ান কিংস অধিনায়ক। ৩৬ মিনিটের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গফুরভ। প্রায় মাঝমাঠ থেকে রবিনহোর বাড়ানো বল ধরতে মার্কার রাসেদুল ইসলামকে পেছনে ফেলেন উজবেক মিডফিল্ডার। এরপর বাঁ-পায়ের প্লেসিংয়ে মনিরুলকে পরাস্ত করেন। এর ২ মিনিট পর অবশ্য গোলকিপার হামিদুর রহমানের ভুলে গোল হজম করতে হয় কিংসকে। সোমা ওতানির লম্বা ক্রস বিপন্মুক্ত করতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন কিংসের পার্টটাইম কিপার। তবে তার নাগাল পাননি। সুযোগ বুঝে মোহাম্মদ রোমান পাস বাড়িয়ে দেন এমানুয়েল ইকেচুকেকে। ফাঁকা পোস্টে বল রাখতে ভুল করেননি এই স্ট্রাইকার। বিরতি থেকে ফিরে ৪৯ মিনিটে সুমন রেজাকে দিয়ে গোল করান রবিনহো। বাঁ দিক থেকে এই ব্রাজিলিয়ানের ফ্রি-কিকে হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন জাতীয় দলের স্ট্রাইকার। ৫২ মিনিটে কিংসকে এগিয়ে নেওয়ার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন রবিহনো। বক্সের ভেতরে ফাউলের শিকার হয়ে পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছিলেন কিংসের আক্রমণভাগের প্রাণভ্রমরা। আগে ৩ গোল হজম করায় মুক্তিযোদ্ধার মালয়েশিয়ান কোচ রাজা ইশা গোলকিপার মনিরুল ইসলামকে তুলে শ্রাবণকে নামান। তবে রবিনহোর স্পটকিক পোস্টে আঘাত করে ফিরে আসে। ৬২ মিনিটে সুমন রেজার জায়গায় মাঠে আসেন লিগে আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক ডরিয়েলটন গোমেজ। নেমেই শ্রাবণের পরীক্ষা নেন ব্রাজিলিয়ান মার্কসম্যান। তার শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন তরুণ কিপার। তবে ৮৩ মিনিটে টুটুল হোসেন বাদশার লম্বা পাস ধরে অফসাইট ট্র্যাপ ভেঙে ঠিকই গোল করেছেন ছন্দে থাকা ডরিয়েলটন।
৪-১ গোলের লিডের পর মনে হচ্ছিল কিংস সহজেই ম্যাচটা জিতবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সেটা হতে দেয়নি। ৮৭ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পায়ের শটে ব্যবধান কমান বুরুন্ডির ফরোয়ার্ড সোলেইমানি লেন্ড্রি। পরের মিনিটে বক্সে আবু বকর ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় মুক্তিযোদ্ধা। তা থেকে এমানুয়েলের গোলে মুক্তিযোদ্ধার ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা জেগেছিল। তবে শেষ দিকে আর গোল করতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা। ফলে টানা দ্বিতীয় হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে দলটিকে।
মুন্সীগঞ্জে গ্রুপের অন্য ম্যাচে ফর্টিস একাডেমি ও চট্টগ্রাম আবাহনী গোলশূন্য ড্র করেছে। ২ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেরা আটের পথে আছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনাকে ঢাকায় আনার উদ্যোগের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ২০১১ সালের পর আবারও বাংলাদেশ সফরে আসতে আপত্তি নেই লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার। কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে, সেগুলো মিলে গেলে আগামী জুন-জুলাইয়ে ফিফা উইন্ডোতে ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলবে গত ডিসেম্বর ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা। মেসি ও আর্জেন্টিনাপ্রেমীদের জন্য এটা অনেক বড় সুসংবাদ। তবে মেসিদের আনার উদ্যোগ নেওয়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্য কি সত্যিই এটা হবে অনেক বড় সাফল্য? ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়াকে ঢাকায় খেলিয়ে বেশ বাহবা পেয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তবে সেটা করতে গিয়ে বাফুফের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন বিশাল ঋণের বোঝা। যা এক যুগেও পরিশোধ করতে পারেননি। অতীতের ঋণের বোঝা নিয়ে আবারও মেসির দলকে আনার বিলাসী স্বপ্ন দেখছেন সালাউদ্দিন।
আর্জেন্টাইন ফুটবল সংস্থার কাছে জাতীয় দলকে ঢাকায় খেলানোর আগ্রহের কথা জানিয়েছিল বাফুফে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও মেসিকে নিয়ে আকাশছোঁয়া উন্মাদনার ব্যাপারটা খুব জানা আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার। এ কারণেই বাফুফের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে আর্জেন্টিনা। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্জেন্টিনার ঢাকা সফর যে পুরোপুরি চূড়ান্ত সেটা বলব না। তবে তাদের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। কিছু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন নিয়ে আলোচনা চলছে। সেগুলো মিলে গেলে আর্জেন্টিনা দল ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলতে আসবে।’ মেসিদের প্রতিপক্ষ প্রসঙ্গে সোহাগ বলেন, ‘প্রতিপক্ষের ব্যাপারে আর্জেন্টিনার পক্ষ থেকে খুব বেশি শর্ত নেই। তারা কিছু দলের নাম দেবে। আমরাও কিছু প্রতিপক্ষের কথা ভাবছি। তবে মানসম্পন্ন প্রতিপক্ষই থাকবে মেসিদের।’
২০১১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ আয়োজন করতে গিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের কাছ থেকে ৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল বাফুফে। সেই ঋণ তো পরিশোধ হয়ইনি, বরং এক যুগ পরেও সেটা একই অঙ্ক রয়ে গেছে। বাফুফে এ সময় কেবল সুদের অঙ্ক গুনেছে। ঋণ বকেয়া থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সোহাগ বলেন, ‘সেটা এখনো আছে। আমরা প্রতি বছর অডিট রিপোর্টে ঋণের বিষয়টি উল্লেখ করি। তবে এটা নানাভাবে আমরা এডজাস্ট করছি। দেখে থাকবেন আমাদের বিভিন্ন আয়োজনে আইএফআইসি ব্যাংকের বিলবোর্ড থাকে। এভাবেই একটা সময় বকেয়াটা পরিশোধ হয়ে যাবে।’
২০১১ সালে মেসিরা যখন প্রথম ঢাকায় এসেছিলেন, বিশ্ব র্যাংকিংয়ে তখন বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬০-এর নিচে। এক যুগ পর এবার মেসিরা আসছেন বিশ্বসেরার তকমা নিয়ে। অথচ বাংলাদেশ এই এক যুগে র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে ১৯২তম স্থানে। অর্থাৎ মেসিদের ম্যাচ এদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আনন্দ দিলেও, আক্ষরিক অর্থে ফুটবলের উন্নতিতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। দেশের ফুটবলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে মেসিদের জন্য নিজেদের মাঠকে কমিউনিটি সেন্টারে রূপ দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক এ নিয়েও উঠে গেছে প্রশ্ন। তবে অনেক নেতিবাচক কারণে নিয়মিত শিরোনাম হওয়া বাফুফে প্রায় একশ কোটি টাকা খরচে মেসিদের ম্যাচ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়ে চাইছে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। আগের ঋণই যারা শোধ দিতে পারছে না, তারা কীসের জোরে আবারও বাফুফেকে পাহাড় সমান চাপের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে, তা এখনো অজানা। সরকার এক্ষেত্রে অর্থ সহায়তা দেবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই ম্যাচের প্রস্তাবিত ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে ম্যাচ আয়োজন উপযোগী করে তোলার প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
৪২ বলে ৭০ রানের ইনিংসে ছিল ৪ ছক্কা ও ৭ চার। বছর জুড়ে রান করে যাওয়া লিটন বিপিএলের শুরু থেকে ফর্মের খোঁজে ছিলেন। গত দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৩২ ও ৪০-এর পর প্রস্ফুটিত হলেন পুরোদমে
যার যত পেশি তার পেস তত বেশি। সাধারণের এই ধারণা এবার বদলে যাওয়ার পালা। ভালো পেসার হতে হলে পেশি নয় চাই পায়ের শক্তি। সোমবার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ কথা বোঝাতে চেয়েছেন কিংবদন্তির ক্যারিবীয় পেসার স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস। এক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে বর্তমানের অন্যতম গতি তারকা হারিস রাউফ বললেন, শক্তি বাড়াতে সঙ্গে খাওয়াও হতে হবে বেছে। খেতে হবে ডিম, যা প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস।
পেসারদের শক্তিটা আসে পা থেকে। পায়ের জোরে রানআপ সঠিক না হলে শরীরের শক্তিটা হাতে জড়ো করা সম্ভব নয়। তখন আর পেসারদের বলে পেস থাকে না, হয়ে যায় মিডিয়াম পেস বোলিং। তাই পায়ের সহনশীল ক্ষমতা বাড়াতে দৌড়াতে হবে বেশি। বেশি দৌড়ে পায়ে শক্তি সঞ্চারের অভ্যাস হবে। পাশাপাশি পেশিবহুল শরীর পেসারদের শরীরের উপরের অংশ ভারী করে ফেলে। তখন পায়ের ওপর চাপ পড়ে আর পেসাররা লম্বা সময় বল করার শক্তি হারান। কিংবদন্তি পেসার অ্যামব্রোস-ই যেমন, আশি-নব্বইয়ের দশকে ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির এই বোলার লিকলিকে শরীর নিয়েও কী পেসটাই না করতেন। ঠিক তেমনি কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান পেসাররা, ডেনিস লিলি, রিচার্ড হ্যাডলি, গ্লেন ম্যাকগ্রা-ব্রেট লি, শোয়েব আকতার বা জেমস অ্যান্ডারসন সবার শরীরে বডি বিল্ডার ভাবটা নেই। তাদের দেখলে মনেই হতো না তারা জিমে খুব বেশি সময় ব্যয় করেন। অথচ যুগ বদলের সঙ্গে এখন ধারণাও পাল্টেছে ক্রিকেটারদের। এসময়ে ফিটনেস ধরে রাখতে ক্রিকেটাররা বেশি সময় ব্যয় করেন জিম করে। অনুশীলনের বাইরে নিজেও জিমে সময় কাটান একান্তে।
এই চিন্তার বিপরীত স্যার অ্যামব্রোস। জিম করাকে তিনি অনুৎসাহিত করেননি। তবে পেসারদের জন্য জিমের চেয়েও ভিন্ন দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে জানান। টেস্টে ৪০৫ ও ওয়ানডেতে ২২৫ উইকেটের মালিক বলেন, ‘আমি খেয়াল করেছি, অনেক খেলোয়াড় জিমে প্রচুর সময় দেয়। আমার তাতে একটা অভিযোগ আছে। জিমে যাও। নিজেকে শক্তিশালী কর। কিন্তু বডি বিল্ডার হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ফাস্ট বোলার হিসেবে তোমাকে সাবলীল এবং নমনীয় থাকতে হবে। ওয়েট ট্রেনিংয়ে তুমি কেবল নিজেকে শক্তিশালী করতে পার। প্রচুর দৌড়াতে হবে, মাঠে অনেক বোলিং করতে হবে। আমি বলছি না যে তোমাকে জিমে যেতে হবে না। কিন্তু ওখানে গিয়ে তোমাকে শক্তিশালী হতে হবে। সবসময় মনে রাখবে, প্রচুর দৌড়াতে হবে ও বোলিং করতে হবে।’
পায়ের শক্তি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই সাবেক ক্যারিবিয়ান তাসকিনকে পরামর্শ দিলেন, ‘অনেককে দেখেছি জিমে যাচ্ছে, বডি বানাচ্ছে কিন্তু ৪ ওভার বোলিং করার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেসারদের জন্য পা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কাঁধ কখনো ক্লান্ত হবে না। তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে যাও, তাহলে এক সপ্তাহও বোলিং করতে পারবে না। সে জন্য দুই পায়ের শক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমার পা যতটা শক্তিশালী হবে তত তুমি শক্তিশালী হবে। ১০০ মিটার তুমি ১০ সেকেন্ডে শেষ করবে সেটা তোমার কাজ নয়। তোমাকে যেটা করতে হবে প্রচুর দৌড়াতে হবে। শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। পায়ের শক্তি বাড়াতে হবে। যেন দুই পা তোমার শরীরের ওজন বয়ে বেড়াতে পারে। নিয়মিত বিরতিতে তোমাকে দৌড়াতে হবে ও প্রচুর বোলিং করতে হবে। এটা কখনো ভুলবে না।’
তাসকিন দৌড়ানোর ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। করোনার সময় নিজে মোহাম্মদপুরে এক হাউজিংয়ের বালুতে দৌড়ে পায়ের শক্তি বাড়িয়েছেন। এর বাইরেও নিজের ফিটনেস ঠিক রাখতে খুব পরিশ্রম করেন। প্রিয় বড় ভাই মাশরাফীর মাধ্যমেই অ্যামব্রোসের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ পেলেন। যা তার ফিটনেসের খেয়ালে বাড়তি মনোযোগ তৈরি করবে। একই সঙ্গে পরদিনে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলতে আসা পেসার হারিস রউফের বক্তব্যেও চোখ রাখতে পারেন তাসকিন। পাকিস্তান পেসারের গতি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারও। কালও চট্টগ্রামের উইকেটে ১৪৫ ছাড়ানো গতি তুলেছেন। এর পেছনের রহস্য কিছুটা উন্মুক্ত করলেন ম্যাচ শেষে। সংবাদ সম্মেলনে রউফ জানান শরীরে প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে ডিম খান তিনি, ‘আসলে পেস জিনিসটা সহজাত। এর সঙ্গে আপনি কেমন অনুশীলন করেন, আপনার খাদ্যাভ্যাস কেমন। খেলার পর রিকভারি কেমন করতে পারেন। হোটেলে ফিরে কতটুকু ঘুমাচ্ছেন (ক্লান্তি দূর করার জন্য), কেমন খাবার খাচ্ছেন এগুলো নির্ভর করে। আবারও বললাম, এটা আসলে যেকোনো পেসারের সহজাত। এটা নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস, সঠিক মাত্রায় পরিশ্রমের ওপর। আমি ডিম খাই, মানে প্রোটিন বেশি রাখি ডায়েটে। এটা পেসারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা পেসারের শক্তি বাড়ানোর জন্য কাজে লাগে।’
রউফের শেষ কথাটাই গুরুত্বপূর্ণ। পেস বোলিংটা সহজাত, যা পাকিস্তান-উইন্ডিজ পেসারদের মাঝে অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। বাংলাদেশের পেসাররা আগে ১৩০ এর ঘরেই বল করতেন। এখন তাসকিন-এবাদতরা ১৪০ ছাড়ানো গতি তুলছেন। এই গতি ধরে রাখতে যে পরিশ্রম ও প্রক্রিয়া দরকার অ্যামব্রোস-হারিসদের কাছ পরামর্শ সেইদিকে তাসকিনদের এগিয়ে দিতে পারে।
মেসি সর্বকালের সেরা। ম্যারাডোনাও গ্রেট, তবে মেসির সঙ্গে আমার বিশেষ একটা বন্ধন আছে।’ এক সাক্ষাৎকারে দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার কথা বলা হলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি এমনটাই বলেছেন।
কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির অর্জনের খাতায় আর কিছুই বাকি নেই বলা যায়! মেসির জীবনের সেরা প্রাপ্তির পেছনে অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন স্কালোনি। স্পেনের রেডিও ‘কাদেনা কোপ’-এ সাক্ষাৎকারে স্কালোনির কাছে জানতে চাওয়া হয় মেসিকে কোচিং করানো কঠিন কিনা। উত্তরে একসময় মেসির সঙ্গে খেলা ৪৪ বছর বয়সী স্কালোনি বলেন, ‘জানি না কোনো কোচ এটা বলেছেন কি না যে, মেসিকে কোচিং করানো কঠিন। তাকে অনুশীলন করানো কঠিন কিছু নয়। কৌশলগত জায়গা থেকে, তাকে ঠিক করার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু সময়ে, চাপের মধ্যে, আক্রমণে কিছু ধরনের ক্ষেত্রে এটা ব্যাখ্যা করা হয়, যে কীভাবে চাই।’ মেসির খেলার ধরনের প্রশংসা করেছেন স্কালোনি। ‘আমি এটা নিশ্চিত করতে পারি যে, প্রেস (চাপ বিস্তার) করে খেলার ক্ষেত্রে, বল কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সে ১ নম্বর। সে অন্য যে কারও চেয়ে ভালোভাবে বল কেড়ে নিতে পারে।’
বিশ্বকাপ জয়ের পর আর ফাইনাল ম্যাচটি পরে দেখেননি স্কালোনি। কারণ ফাইনালটি তার মাথায় গেঁথে আছে। ‘আমি ফাইনালটি পরে আর দেখিনি। আমার মাথায় এটি গেঁথে আছে। ৯০ মিনিটে খেলাটা শেষ করতে পারিনি তা নিয়ে কিছুটা দুঃখ আছে।’ স্কালোনির খেলোয়াড় জীবনে বেশিরভাগ সময় কেটেছে স্পেনে। স্পেনের লা করুনা, রেসিং সান্তেনদার, মায়োর্কাতে খেলেছেন। ভবিষ্যতে স্পেনের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেলে কী করবেন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এটা আমার দ্বিতীয় বাড়ি। আমি এই দেশের অংশ ভাবি নিজেকে। কেন স্পেন জাতীয় দলের কোচ হতে চাইব না? আমি মনে করি, কোনো স্প্যানিশ কোচই স্পেনের জন্য উপযুক্ত।’
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।