
২০১০ যুব বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সহঅধিনায়ক ৯ বছর পর প্রোটিয়া টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার খুব কাছে ছিলেন। কিন্তু বেছে নেন কাউন্টি ক্রিকেট। এরপর মায়ের দেশ নেদারল্যান্ডসের জার্সি গায়ে এগিয়ে চলেছেন কলিন অকারম্যান। এবার সিলেট স্ট্রাইকার্সে প্রথম বিপিএলের আমেজ গায়ে মাখছেন। দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন নিজের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক
এই প্রথম আপনি উপমহাদেশে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলছেন। প্রথম হিসেবে কেমন উপভোগ করছেন?
অকারম্যান : অবশ্যই ভালো। দল হিসেবে যদি বলি প্রথম ৬ ম্যাচ দারুণ কাটানো। একটি জয়ী দলের অংশ হওয়াটা সত্যিই আত্মবিশ্বাস ও ভালোলাগা বাড়িয়ে দেয়। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহজ হয়। আর ম্যাচের হিসাবে আমি হয়তো খুব বেশি সুযোগ পাইনি এখানকার উইকেটকে বুঝতে। পাশাপাশি এখানে নেট অনুশীলনও খুব বেশি সময় ধরে করা যায় না। তবু এর মধ্যেও নিজেকে প্রস্তুত রাখছি যেন পরের ম্যাচে সুযোগ পেলে তৈরি হয়ে মাঠে নামতে পারি।
টি-টোয়েন্টিতে আপনার পুরো ক্যারিয়ারটাই তো ইংল্যান্ডে। টি-২০ ব্লাস্ট বা ভাইটালিটি ব্লাস্ট টুর্নামেন্ট খেলেছেন। ওই আসরগুলোর সঙ্গে বিপিএলের পার্থক্য কেমন দেখছেন?
অকারম্যান : অনেক পার্থক্য। সেখানে ভালো উইকেটে খেলতে পারি আমরা। যেমন আমাদের লেস্টারের মাঠ গ্রেস রোডের কথা যদি ধরি সেখানে প্রতি ম্যাচে স্কোর হয় ১৭০-১৮০। কিন্তু এখানে প্রতি ম্যাচে স্কোর ১৪০-১৪৫, তো এমন উইকেটে ব্যাটারদের মানিয়ে খেলতে হয়। সময় নিতে হয় কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত হতে। এছাড়া ইংল্যান্ড এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টির সেরা দল। ওদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মানটাও তাই একটু ভালো বলতেই হবে। তবে এখানে আমি বেশ ভালো দলের সঙ্গে আছি। মাশরাফী-মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ দুজনকে নিয়ে আমাদের দলটাও বেশ ভালো করছে।
বিপিএলে আপনার দুটি ইনিংস ভুলে যাওয়ার মতো। আসলে কী হয়েছিল? আপনি কি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি?
অকারম্যান : তেমনটা না। প্রথম ম্যাচে বলটা এক্সট্রা বাউন্স হয়েছিল। আমার গ্লাভসে লেগে কিপারের কাছে চলে যায়। এক্সট্রা বাউন্স হলে বিশ্বের যে কোনো ব্যাটারের জন্যই খেলতে সমস্যা হয়। আর ওই ম্যাচটা ছিল মিরপুরে। আমি শুনেছি মিরপুরের উইকেটের ব্যাপারে। তোমরাও জানো সেটা যে এখানে আগে থেকে চিন্তা করে কিছুই করা যায় না। তবে হ্যাঁ, দ্বিতীয় ম্যাচে রানআউট নিয়ে আমি নিশ্চয়ই হতাশ। আমার ক্যারিয়ারে এমন শিশুসুলভ ভুল আমি কখনই করিনি। ক্রিকেটে অনেক সময় বোকার কা- ঘটে, আমি সেদিন ওই কাজ করেছি। দুর্ভাগ্য আমার।
আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যদি তাকাই ক্যারিয়ার বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকায়। ঠিক কোন চ্যালেঞ্জের কথা ভেবে আপনি কাউন্টি ক্রিকেটে নাম লেখালেন?
অকারম্যান : ইংল্যান্ডে আমি নিজেকে ভালো ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। শুধু ছোট ফরম্যাটে না, বড় ফরম্যাটেও, তিন ফরম্যাটেই। ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলা কঠিন না। সেখানে সব ধরনের কন্ডিশনে খেলার সুযোগ হয়। বিভিন্ন কন্ডিশনে তোমাকে অনেক ক্রিকেট খেলতে হবে। এপ্রিলে মেঘলা আবহাওয়ায় বল সিম করবে, ওই সময় রান করা শিখতে হয়। জুলাইতে আবার ফ্লাট উইকেটে রান করা সহজ হয়। ইংল্যান্ডে তাই তুমি কেমন ক্রিকেটার সেই পরীক্ষাটা দেওয়া যায়। আমি বিশ্বাস করি ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর আমি নিজের খেলা ও নিজেকে ক্রিকেটার হিসেবে আরও ভালো বুঝতে পেরেছি।
নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা এমন টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা কেন কাউন্টিকে বেছে নেয়। দেশের হয়ে খেললে তো বড় পর্যায়ে তারা আরও খেলার সুযোগ পায়?
আকারম্যান : এখানে অনেক বিষয় থাকে। এর মধ্যে একটা কাউন্টি অনেক বড় প্লাটফর্ম। সেখানে খেলার সুযোগটা বেশি পাওয়া যায়। দেখছেন অনেক বয়স্ক ক্রিকেটারও সেখানে খেলে। কাউন্টির ঐতিহ্যে এবং খেলার পরিমাণের দিকে তাকালে অবশ্যই যে কেউ সেখানে খেলতে চাইবে। কিন্তু একটা দেশে মানে নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায় আপনি নির্দিষ্ট কিছু ক্লাবে নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টেই খেলতে পারবেন। সেখানে প্রতিযোগিতা বেশি থাকে জাতীয় দলের জন্য। অবশ্যই যে কোনো ক্রিকেটার প্রতিযোগিতায় নামতে চাইবে, কিন্তু এটা একটা দিক এবং আপনি ক্রিকেটার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার দীর্ঘ করবেন সেটা একটা দিক। ২০১৭ সালের দিকে আমি লেস্টারশায়ারের প্রস্তাব পেয়ে ইংল্যান্ডে যাই। ওই সময়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু সেখানে আমি আমার পরিবারকে (সহধর্মিণী) পাই। সেখানে নিজের ক্যারিয়ারকে অন্যভাবে আবিষ্কার করেছি। এখন বলব ওই সিদ্ধান্তটা আমার জন্য সঠিক ছিল।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আপনার ৪১ রানে আপনার জন্মস্থান দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। এই অনভূতিটা কেমন ছিল আপনার জন্য?
অকারম্যান : আমি মিথ্যা বলব না, সত্যিই অদ্ভুত লাগছিল (হাসি)। এটা ক্রিকেট, মানে যেখানে ভিন্ন দুটো আন্তর্জাতিক দল মাঠে মুখোমুখি হয়। কিন্তু আমার জন্য ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে গেল। মানে এই যে রাবাদা, এনগিডি বা নরকিয়া ওদের তো আমি চিনি। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বা ২০১৮-১৯ এর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে ওদের বিপক্ষে বা পক্ষে অনেক খেলেছি। আমি সত্যি আনন্দিত যে নিজের দলকে জেতাতে পেরেছি। তবে এক কথায় যদি বলি ওদের বিপক্ষে আবার খেলে সুযোগটা সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পেরেছি।
একজন ক্রিকেটার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারকে কোথায় দেখতে চান?
অকারম্যান: অবশ্যই আমি যতদিন সম্ভব কাউন্টি খেলে যেতে চাই। আমার দল লেস্টারের হয়ে আরও শিরোপা জিততে চাই। আর আন্তর্জাতিকে নেদারল্যান্ডসের হয়ে বড় টুর্নামেন্টে বড় দলের বিপক্ষে ভালো করা আমরা লক্ষ্য। বড় দলের সঙ্গে ভালো করলে আমি নিজেকে অনেক ভালো অবস্থানে নিতে পারব। যেমন এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আমার জীবনের সেরা টুর্নামেন্ট। আমরা গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতে সেরা চার দলের মধ্যে ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি ২০২৪-এ উইন্ডিজেও আমরা এর ধারাবহিকতা রাখব। এছাড়া বেশি বেশি টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলাও আমার লক্ষ্য। এতে আমি নিজেকে আরও ভালো ভাবে বুঝতে পারব, ভালো ক্রিকেটার হিসেবে পরিণত করতে পারব।
চট্টগ্রাম পর্বের পর অনেকটাই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে দলগুলোর অবস্থান এবং শক্তিমত্তার। ৭ দলের ভেতর ৫টা দলেরই হয়ে গেছে ৬টি করে ম্যাচ, অর্থাৎ গ্রুপ পর্বের অর্ধেক পথ তারা পাড়ি দিয়েছে এরই মধ্যে। দুটো দল খেলেছে ৫টি করে ম্যাচ, রংপুর রাইডার্স আর খুলনা টাইগার্স। তারকাসমৃদ্ধ হলেও দুটো দলই এখনো জ্বলে উঠতে ব্যর্থ। চট্টগ্রাম পর্ব শেষে, সিলেট পর্ব শুরুর আগে ঢাকায় আজ ও কাল চারটি ম্যাচ। এই চার ম্যাচের ফলেই স্পষ্ট হবে কারা থাকছে শীর্ষে ওঠার লড়াইতে আর কাদের লড়াইটা টিকে থাকার।
আজ মিরপুরে দুপুর দেড়টার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আর রংপুর রাইডার্স। পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকেই অবস্থান দুদলের। পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটের বিচারে পাঁচে রংপুর, ছয়ে চট্টগ্রাম। তবে রংপুর খেলেছেন ৫ ম্যাচ আর চট্টগ্রাম খেলেছে ৬ ম্যাচ। তারকাবহুল দল গড়েও কাক্সিক্ষত সাফল্য পাচ্ছে না রংপুর। শুরুতে তারা খেলিয়েছিল সিকান্দার রাজা ও বেনি হাওয়েলকে। দুজনই চলে যান আরব আমিরাতে, ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি খেলতে। পাকিস্তানের শোয়েব মালিক ছিলেন শুরু থেকেই, তার সঙ্গে যোগ দেন মোহাম্মদ নাওয়াজ, হারিস রউফ, সাইম আইয়ুবরা। কিন্তু তাদের নিয়েও রংপুর পারছে না আসর রঙিন করতে, চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে নুরুল হাসান সোহানের দল। যদিও শেষ দুই ম্যাচে চোটের কারণে খেলেননি সোহান, নেতৃত্বে এসেছেন শোয়েব মালিক। আজ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে জিততে না পারলে রংপুরের জন্য শেষ চারের সমীকরণটা হয়ে উঠবে বেশ কঠিন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নিজেদের ডেরায় ৪ ম্যাচ খেলে জিতেছে ২ ম্যাচ। খুলনার কাছে হেরে পয়েন্ট খোয়ানোটা চট্টগ্রাম আর শেষ চারের ভেতর দেয়াল তুলে দিতে পারে।
আজ রাতের ম্যাচটা ঢাকা ডমিনেটরস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। আসরে এখন পর্যন্ত ঢাকার পারফরম্যান্সই সবচেয়ে হতাশাজনক, ৬ ম্যাচ খেলে তারা জিতেছে মাত্র ১ ম্যাচে। অন্যদিকে টানা তিন ম্যাচ হারের পর টানা তিন ম্যাচ জিতে জয়ের ধারায় ফিরেছে কুমিল্লা। তাদের বিদেশি রিক্রুটদের বেশিরভাগই চলে এসেছেন, সবশেষ যোগ দিয়েছেন পাকিস্তানের স্পিডস্টার নাসিম শাহ। সব মিলিয়ে কুমিল্লা শুরুর ঝাঁকুনি কাটিয়ে এখন এগিয়ে যাচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে। গেলবারের চ্যাম্পিয়নদের শুরুতে ছন্দটা পেতে সময় লাগলেও এখন ব্যাটে লিটন দাস, মোহাম্মদ রিজওয়ানরা ভালো করছেন, বোলিংয়ের শক্তি বাড়াতে এসে গেছেন নাসিমও। কাল দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন বিসিবি একাডেমির মাঠে।
মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল ফরচুন বরিশাল ও সিলেট স্ট্রাইকার্স। সিলেট টানা ৫ ম্যাচ জিতে সবশেষ ম্যাচে হেরেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে। আর ফরচুন বরিশাল প্রথম ম্যাচটা সিলেটের কাছে হারের পর জিতেছে টানা পাঁচ ম্যাচ। ইফতিখার আহমেদ এবং সাকিব আল হাসান আছেন দারুণ ছন্দে, অন্যদিকে তৌহিদ হৃদয়ের চোটের পর সিলেটের ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। ৬ ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের কোনো হাফসেঞ্চুরি নেই, মিডল অর্ডারে তার ব্যাটিংটা দলকে ভালো একটা সংগ্রহ দিতে পারছে না। ইমাদ ওয়াসিম ও থিসারা পেরেরা ভালো পারফরম করছেন ব্যাটে বলে, সেই সঙ্গে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বে ৫ ম্যাচে জিতে শীর্ষে সিলেট। যদিও বরিশালের পয়েন্টও সমান তবে রান রেটে সিলেট সামান্য এগিয়ে। এই ম্যাচটা যে দল জিতবে, তারাই যাবে শীর্ষ স্থানে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচটা ঢাকা ডমিনেটরস আর খুলনা টাইগার্সের। ঢাকা সমীকরণ থেকে বলা যায় ছিটকেই গেছে, খুলনাও অনেকটা সেই পথেই। ৫ ম্যাচে খুলনার মাত্র ২ জয়, তবে ঢাকার বিপক্ষে অন্তত খেলোয়াড়দের মান ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের মাপকাঠিতে খুলনাই থাকবে এগিয়ে। আজ জিতলে খানিকটা স্বস্তি নিয়ে সিলেট যেতে পারবে খুলনা আর তাতে ক্ষীণ হয়ে আসবে ঢাকা ডমিনেটরসের শেষ চারের সম্ভাবনাও। উইন্ডিজের শেই হোপ খেলতে এসেছে তাদের হয়ে।
সাফ জয়ের পর থেকেই বদলে গেছে তাদের জগৎটা। একসময়ের দূর আকাশের তারা এখন যেন হাতছোঁয়া দূরত্বে। স্বপ্নগুলোও ধরা দিতে শুরু করেছে একে একে। শুধু ফুটবল খেলেই যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, পাল্টে দেওয়া যায় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, এই বিশ্বাসগুলো চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে হৃদয়ে। স্বপ্নের বিস্তারটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সীমা। ঠিক এমনই একটা স্বপ্নপূরণের পথে সিরাত জাহান স্বপ্না। বাংলাদেশ স্ট্রাইকার প্রস্তাব পেয়েছেন ভারতীয় পেশাদার লিগে খেলার। সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলে সেই ছোটবেলা থেকে বিদেশি লিগে খেলার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যেতে পারে রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই ফুটবলারের।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের বিদেশের লিগে খেলার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। সবার আগে নারী ফুটবলারদের সামনে বদ্ধ দুয়ারটা খুলে দিয়েছিলেন জাতীয় দলের তারকা ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। চুটিয়ে খেলছেন ভারত, মালদ্বীপ লিগে। তার দেখাদেখি বিদেশে খেলার স্বপ্নপূরণ হয়েছে কৃষ্ণা রানী সরকার ও বাংলাদেশ বংশোদ্ভুত জাপানিজ ফুটবলার মাতসুসিমা সুমাইয়া। সাবিনার সঙ্গী হয়ে কৃষ্ণা খেলেছেন ভারতীয় পেশাদার লিগ। আর সুমাইয়া খেলেছেন মালদ্বীপ লিগে। এবার স্বপ্নার পালা সেই তালিকায় নাম লেখানোর। সাফে চার গোল করে নজরকাড়া স্বপ্নাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে উড়িষ্যা এফসি। সম্প্রতি রাজ্য লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দলটি যোগ্যতা অর্জন করে পেশাদার লিগ আইডব্লিউএলে। প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বপ্না বলেন, ‘তিন দিনের ছুটিতে বাড়িতে থাকা অবস্থায় প্রস্তাবটা আসে। ছোটন (কোচ গোলাম রব্বানি) স্যারকে জানালে তিনি পল (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) স্যারকে জানান। এখন তারাই আমার হয়ে ক্লাবটির সঙ্গে যোগাযোগ চালাচ্ছেন।’ এপ্রিলে জাতীয় দল খেলবে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক বাছাই পর্ব। ৯ জানুয়ারি থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেই আসরের প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় দলের মেয়েরা। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দলের খেলাকেই স্বপ্নাকে দিতে হবে গুরুত্ব। তাই এপ্রিলেই শুরু হতে যাওয়া ভারতীয় লিগে শুরু থেকে স্বপ্নার খেলা হবে কীনা তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। স্বপ্না বলেন, ‘ক্লাবকে বাফুফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অলিম্পিক বাছাইয়ের আগে আমাকে ছাড়া হবে না। যতটুকু জানি ক্লাব তাতে রাজি হয়েছে।’
বিদেশি লিগে খেলার স্বপ্নটা অবশ্য স্বপ্নার আগেই পূরণ হতে পারত। করোনাকালে কলকাতার একটি ক্লাব তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। মহামারীর কারণে সুযোগটা হাতছাড়া হয়। এবার সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিয়ে দেশের সুনাম বাড়াতে চান স্বপ্না, ‘প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে বিদেশি লিগে খেলার। সাবিনা আপুরা যখন যান খেলতে, আমারও ইচ্ছা হতো খেলার। সেই স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে বলে খুব ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমার খেলাটা তাদের (ক্লাবের) পছন্দ হয়েছে বলেই আমার ওপর আস্থা রেখেছে। সেটার প্রতিদান দেওয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।’
২০১১ সালে বঙ্গমাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আগে স্বপ্না ছিলেন লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চল পালিচরার নিম্নবৃত্ত পরিবারের অতি সাধারণ এক মেয়ে। পড়তেন পালিচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বালক ও বালিক প্রাথমিক স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে নিজ স্কুলের হয়ে সেবার অংশ নিয়েই যেন পেয়ে যান রুপার কাঠির দেখা। সেবার তাদের স্কুল চূড়ান্ত পর্বে রানার্স-আপ হয়। আর স্বপ্নারা চলে আসেন বাফুফের রাডারে। ২০১৩ সালে প্ল্যান-বাংলাদেশের উদ্যোগে এক মাসের ক্যাম্প করার পর রাজশাহী অঞ্চলে চূড়ান্ত বাছাইয়ে নির্বাচিত হয়ে চলে আসেন বাফুফের ক্যাম্পে। ২০১৬ সালে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব দিয়ে শুরু। সে বছরই সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় এসএ গেমসে। সে বছর শিলিগুড়িতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে করেন পাঁচ গোল। বাংলাদেশ হয় রানার্স-আপ। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্বপ্নাকে। ধীরে ধীরে বদলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। তার উপার্জনেই পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা, ‘২০১১ সালের আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম অতি সাধারণ একজন। ফুটবলকে যে এ দেশের মেয়েরা পেশা হিসেবে নিতে পারে, সেটা জানাই ছিল না। যত দিন গিয়েছে ফুটবলই আমার সকল ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছে। এই ফুটবলেই স্বস্তি ফিরেছে আমার পরিবারে।’
সিনিয়র দলের হয়ে এখন পর্যন্ত করেছেন ১১ গোল। ২০১৬ সাফে মালদ্বীপের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকও করেছিলেন দ্রুতগতির এই স্ট্রাইকার। গত বছর সাফে ভারতের বিপক্ষে ছিল জোড়া গোল। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে চোট নিয়ে খেলেও ছিলেন সপ্রতিভ। যা স্বপ্নার সামনে খুলে দিয়েছেন স্বপ্নপূরণের দুয়ার।।
মোহাম্মদ রিজওয়ান, পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে বাবর আজমের সঙ্গে মিলে ইনিংসের সূচনায় নামেন। বিপিএলে খেলতে এসেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে। রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ে টি-টোয়েন্টির মারকুটে ভাবটা নেই, আছে অলস সৌন্দর্য। কাল কুমিল্লার হয়ে অনুশীলনে নামার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, টি-টোয়েন্টিতে ধীরে ব্যাটিংয়েরও দরকার আছে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রিজওয়ানের স্ট্রাইক-রেট ১২৬.৬২, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ১২৫.১৯। বোঝাই যাচ্ছে জার্সি বদল হলেও খেলার দর্শনে বদল আনেন না রিজওয়ান। বরং মনে করেন এটাই তার যোগ্যতা, ‘কখনো কখনো মনে হতে পারে এটা (ধীরে ব্যাটিং) বিব্রতকর, কিন্তু আমার দলের কোচ, খেলোয়াড়, অধিনায়ক সবাই আমার কাছে এটাই চায় এবং তারা এই ব্যাটিংয়েই খুশি। পাকিস্তান দলেও একই অবস্থা। কেউ যদি আমার এই পারফরম্যান্স দেখেই আমাকে খেলতে ডেকে আনে এবং আমার বেশ চাহিদা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এই ব্যাটিংয়েরও চাহিদা আছে।’
রিজওয়ান মানেন যে, এটা কখনো কখনো বিব্রতকর তবে এতে তিনি অন্তত বিব্রত হচ্ছেন না, ‘এটা অনেক সময় বিব্রতকর, কারণ টি-টোয়েন্টিতে সবাই ছয় দেখতে চায়, ৩৫-৪০ বলে ৭০ রানের ইনিংস দেখতে চায়। তবে আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলকে কীভাবে জেতানো যায় আর কী করলে দলকে জয়ের রাস্তায় রাখা যায়।’
সবশেষ ম্যাচেই কুমিল্লার হয়ে ঢাকা ডমিনেটরসের বিপক্ষে করেছেন ৫৫* রান, যদিও খেলেছেন ৪৭ বল। অন্যদিকে খুশদিল শাহ ২৪ বলে ৬৪ রান না করলে হয়তো রিজওয়ানের ইনিংসটা দলের বোঝাই হয়ে যেত, তবে রিজওয়ান মনে করেন এরকম ইনিংসের গুরুত্বও অনেক, ‘টি-টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষ উইকেট তুলে নিয়ে ছন্দ পাওয়ার চেষ্টা করে যাবে, আর ধীরে ব্যাটিং করে উইকেট না দিয়ে সেই ছন্দটা নষ্ট করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। দল যখন চাইবে গতি বাড়াতে হবে। এটাই হচ্ছে আমার মন্ত্র আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমি সফল হয়েছি।’
বাবরের পর লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তনে নামাটাও দারুণ একটা সুযোগ হিসেবে দেখছেন রিজওয়ান, ‘সবাই জানে লিটন বাংলাদেশের সুপারস্টার। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সে ভালো খেলছে আর এখন তো দারুণ ছন্দে আছে। আমি আর লিটন একে অন্যের সঙ্গে মাঠে ভালোই যোগাযোগ করি, অল্প সময়েই আমাদের মধ্যে ভালো একটা বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে।’
২০২২ সাল দারুণ কেটেছে ইগা সোয়াতেকের। ২০২০-এ জয়ী ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা পুনরুদ্ধারের পর জিতেছিলেন ইউএস ওপেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এসেছিলেন অন্যতম ফেভারিট হিসেবে। গতবার সেমিফাইনালে বিদায় নিলেও এবার নাম্বার ওয়ান হয়ে অস্ট্রেলিয়া ওপেন খেলতে নেমেছিলেন শিরোপার আশা নিয়ে। তবে সেটি আর হলো না। গতবার ২৭তম বাছাইয়ের কাছে শেষ চারে হেরেছিলেন। এবার চতুর্থ রাউন্ডেই হেরে গেলেন ২২তম বাছাই কাজাখস্তানের ইয়েলেনা রিবাকিনার কাছে।
সরাসরি সেটে (৬-৪, ৬-৪) হারার পেছনে প্রত্যাশার চাপ সামলাতে না পারার কথা বলেছেন সোয়াতেক, ‘নিশ্চিত করেই দুটি সপ্তাহ আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। আমি হয়তো একটু বেশিই প্রত্যাশা করে ফেলেছিলাম। চাপ অনুভব করেছিলাম। মনে হয়েছে যে, আমি শুধু জয়ই চেয়েছি, হারার কথা ভাবতেও পারিনি।’ গতবার উইম্বলডনে তৃতীয় রাউন্ডেই হেরে যান সোয়াতেক। আর সেমিতে সিমোনা হালেপ, ফাইনালে ওনস জাবুরকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন ২৩ বছর বয়সী রিবাকিনা।
ফ্রেঞ্চ কাপে ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। আজ তারা খেলবে ফ্রান্সের ষষ্ঠ বিভাগের দল পেস দে ক্যাসেলের বিপক্ষে। এ ম্যাচের জন্য প্যারিসের দলটি গতকাল তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করে। স্কোয়াডে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে থাকলেও নেই লিওনেল মেসি। পরে জানানো হয়, কোনো ইনজুরি নয় বিশ্রামে রাখা হয়েছে মেসিকে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।