
ফ্রেঞ্চ কাপে ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। আজ তারা খেলবে ফ্রান্সের ষষ্ঠ বিভাগের দল পেস দে ক্যাসেলের বিপক্ষে। এ ম্যাচের জন্য প্যারিসের দলটি গতকাল তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করে। স্কোয়াডে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে থাকলেও নেই লিওনেল মেসি। পরে জানানো হয়, কোনো ইনজুরি নয় বিশ্রামে রাখা হয়েছে মেসিকে।
চট্টগ্রাম পর্বের পর অনেকটাই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে দলগুলোর অবস্থান এবং শক্তিমত্তার। ৭ দলের ভেতর ৫টা দলেরই হয়ে গেছে ৬টি করে ম্যাচ, অর্থাৎ গ্রুপ পর্বের অর্ধেক পথ তারা পাড়ি দিয়েছে এরই মধ্যে। দুটো দল খেলেছে ৫টি করে ম্যাচ, রংপুর রাইডার্স আর খুলনা টাইগার্স। তারকাসমৃদ্ধ হলেও দুটো দলই এখনো জ্বলে উঠতে ব্যর্থ। চট্টগ্রাম পর্ব শেষে, সিলেট পর্ব শুরুর আগে ঢাকায় আজ ও কাল চারটি ম্যাচ। এই চার ম্যাচের ফলেই স্পষ্ট হবে কারা থাকছে শীর্ষে ওঠার লড়াইতে আর কাদের লড়াইটা টিকে থাকার।
আজ মিরপুরে দুপুর দেড়টার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আর রংপুর রাইডার্স। পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকেই অবস্থান দুদলের। পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটের বিচারে পাঁচে রংপুর, ছয়ে চট্টগ্রাম। তবে রংপুর খেলেছেন ৫ ম্যাচ আর চট্টগ্রাম খেলেছে ৬ ম্যাচ। তারকাবহুল দল গড়েও কাক্সিক্ষত সাফল্য পাচ্ছে না রংপুর। শুরুতে তারা খেলিয়েছিল সিকান্দার রাজা ও বেনি হাওয়েলকে। দুজনই চলে যান আরব আমিরাতে, ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি খেলতে। পাকিস্তানের শোয়েব মালিক ছিলেন শুরু থেকেই, তার সঙ্গে যোগ দেন মোহাম্মদ নাওয়াজ, হারিস রউফ, সাইম আইয়ুবরা। কিন্তু তাদের নিয়েও রংপুর পারছে না আসর রঙিন করতে, চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে নুরুল হাসান সোহানের দল। যদিও শেষ দুই ম্যাচে চোটের কারণে খেলেননি সোহান, নেতৃত্বে এসেছেন শোয়েব মালিক। আজ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে জিততে না পারলে রংপুরের জন্য শেষ চারের সমীকরণটা হয়ে উঠবে বেশ কঠিন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নিজেদের ডেরায় ৪ ম্যাচ খেলে জিতেছে ২ ম্যাচ। খুলনার কাছে হেরে পয়েন্ট খোয়ানোটা চট্টগ্রাম আর শেষ চারের ভেতর দেয়াল তুলে দিতে পারে।
আজ রাতের ম্যাচটা ঢাকা ডমিনেটরস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। আসরে এখন পর্যন্ত ঢাকার পারফরম্যান্সই সবচেয়ে হতাশাজনক, ৬ ম্যাচ খেলে তারা জিতেছে মাত্র ১ ম্যাচে। অন্যদিকে টানা তিন ম্যাচ হারের পর টানা তিন ম্যাচ জিতে জয়ের ধারায় ফিরেছে কুমিল্লা। তাদের বিদেশি রিক্রুটদের বেশিরভাগই চলে এসেছেন, সবশেষ যোগ দিয়েছেন পাকিস্তানের স্পিডস্টার নাসিম শাহ। সব মিলিয়ে কুমিল্লা শুরুর ঝাঁকুনি কাটিয়ে এখন এগিয়ে যাচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে। গেলবারের চ্যাম্পিয়নদের শুরুতে ছন্দটা পেতে সময় লাগলেও এখন ব্যাটে লিটন দাস, মোহাম্মদ রিজওয়ানরা ভালো করছেন, বোলিংয়ের শক্তি বাড়াতে এসে গেছেন নাসিমও। কাল দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন বিসিবি একাডেমির মাঠে।
মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল ফরচুন বরিশাল ও সিলেট স্ট্রাইকার্স। সিলেট টানা ৫ ম্যাচ জিতে সবশেষ ম্যাচে হেরেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে। আর ফরচুন বরিশাল প্রথম ম্যাচটা সিলেটের কাছে হারের পর জিতেছে টানা পাঁচ ম্যাচ। ইফতিখার আহমেদ এবং সাকিব আল হাসান আছেন দারুণ ছন্দে, অন্যদিকে তৌহিদ হৃদয়ের চোটের পর সিলেটের ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। ৬ ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের কোনো হাফসেঞ্চুরি নেই, মিডল অর্ডারে তার ব্যাটিংটা দলকে ভালো একটা সংগ্রহ দিতে পারছে না। ইমাদ ওয়াসিম ও থিসারা পেরেরা ভালো পারফরম করছেন ব্যাটে বলে, সেই সঙ্গে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বে ৫ ম্যাচে জিতে শীর্ষে সিলেট। যদিও বরিশালের পয়েন্টও সমান তবে রান রেটে সিলেট সামান্য এগিয়ে। এই ম্যাচটা যে দল জিতবে, তারাই যাবে শীর্ষ স্থানে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচটা ঢাকা ডমিনেটরস আর খুলনা টাইগার্সের। ঢাকা সমীকরণ থেকে বলা যায় ছিটকেই গেছে, খুলনাও অনেকটা সেই পথেই। ৫ ম্যাচে খুলনার মাত্র ২ জয়, তবে ঢাকার বিপক্ষে অন্তত খেলোয়াড়দের মান ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের মাপকাঠিতে খুলনাই থাকবে এগিয়ে। আজ জিতলে খানিকটা স্বস্তি নিয়ে সিলেট যেতে পারবে খুলনা আর তাতে ক্ষীণ হয়ে আসবে ঢাকা ডমিনেটরসের শেষ চারের সম্ভাবনাও। উইন্ডিজের শেই হোপ খেলতে এসেছে তাদের হয়ে।
সাফ জয়ের পর থেকেই বদলে গেছে তাদের জগৎটা। একসময়ের দূর আকাশের তারা এখন যেন হাতছোঁয়া দূরত্বে। স্বপ্নগুলোও ধরা দিতে শুরু করেছে একে একে। শুধু ফুটবল খেলেই যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, পাল্টে দেওয়া যায় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, এই বিশ্বাসগুলো চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে হৃদয়ে। স্বপ্নের বিস্তারটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সীমা। ঠিক এমনই একটা স্বপ্নপূরণের পথে সিরাত জাহান স্বপ্না। বাংলাদেশ স্ট্রাইকার প্রস্তাব পেয়েছেন ভারতীয় পেশাদার লিগে খেলার। সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলে সেই ছোটবেলা থেকে বিদেশি লিগে খেলার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যেতে পারে রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই ফুটবলারের।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের বিদেশের লিগে খেলার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। সবার আগে নারী ফুটবলারদের সামনে বদ্ধ দুয়ারটা খুলে দিয়েছিলেন জাতীয় দলের তারকা ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। চুটিয়ে খেলছেন ভারত, মালদ্বীপ লিগে। তার দেখাদেখি বিদেশে খেলার স্বপ্নপূরণ হয়েছে কৃষ্ণা রানী সরকার ও বাংলাদেশ বংশোদ্ভুত জাপানিজ ফুটবলার মাতসুসিমা সুমাইয়া। সাবিনার সঙ্গী হয়ে কৃষ্ণা খেলেছেন ভারতীয় পেশাদার লিগ। আর সুমাইয়া খেলেছেন মালদ্বীপ লিগে। এবার স্বপ্নার পালা সেই তালিকায় নাম লেখানোর। সাফে চার গোল করে নজরকাড়া স্বপ্নাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে উড়িষ্যা এফসি। সম্প্রতি রাজ্য লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দলটি যোগ্যতা অর্জন করে পেশাদার লিগ আইডব্লিউএলে। প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বপ্না বলেন, ‘তিন দিনের ছুটিতে বাড়িতে থাকা অবস্থায় প্রস্তাবটা আসে। ছোটন (কোচ গোলাম রব্বানি) স্যারকে জানালে তিনি পল (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) স্যারকে জানান। এখন তারাই আমার হয়ে ক্লাবটির সঙ্গে যোগাযোগ চালাচ্ছেন।’ এপ্রিলে জাতীয় দল খেলবে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক বাছাই পর্ব। ৯ জানুয়ারি থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেই আসরের প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় দলের মেয়েরা। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দলের খেলাকেই স্বপ্নাকে দিতে হবে গুরুত্ব। তাই এপ্রিলেই শুরু হতে যাওয়া ভারতীয় লিগে শুরু থেকে স্বপ্নার খেলা হবে কীনা তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। স্বপ্না বলেন, ‘ক্লাবকে বাফুফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অলিম্পিক বাছাইয়ের আগে আমাকে ছাড়া হবে না। যতটুকু জানি ক্লাব তাতে রাজি হয়েছে।’
বিদেশি লিগে খেলার স্বপ্নটা অবশ্য স্বপ্নার আগেই পূরণ হতে পারত। করোনাকালে কলকাতার একটি ক্লাব তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। মহামারীর কারণে সুযোগটা হাতছাড়া হয়। এবার সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিয়ে দেশের সুনাম বাড়াতে চান স্বপ্না, ‘প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে বিদেশি লিগে খেলার। সাবিনা আপুরা যখন যান খেলতে, আমারও ইচ্ছা হতো খেলার। সেই স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে বলে খুব ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমার খেলাটা তাদের (ক্লাবের) পছন্দ হয়েছে বলেই আমার ওপর আস্থা রেখেছে। সেটার প্রতিদান দেওয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।’
২০১১ সালে বঙ্গমাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আগে স্বপ্না ছিলেন লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চল পালিচরার নিম্নবৃত্ত পরিবারের অতি সাধারণ এক মেয়ে। পড়তেন পালিচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বালক ও বালিক প্রাথমিক স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে নিজ স্কুলের হয়ে সেবার অংশ নিয়েই যেন পেয়ে যান রুপার কাঠির দেখা। সেবার তাদের স্কুল চূড়ান্ত পর্বে রানার্স-আপ হয়। আর স্বপ্নারা চলে আসেন বাফুফের রাডারে। ২০১৩ সালে প্ল্যান-বাংলাদেশের উদ্যোগে এক মাসের ক্যাম্প করার পর রাজশাহী অঞ্চলে চূড়ান্ত বাছাইয়ে নির্বাচিত হয়ে চলে আসেন বাফুফের ক্যাম্পে। ২০১৬ সালে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব দিয়ে শুরু। সে বছরই সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় এসএ গেমসে। সে বছর শিলিগুড়িতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে করেন পাঁচ গোল। বাংলাদেশ হয় রানার্স-আপ। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্বপ্নাকে। ধীরে ধীরে বদলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। তার উপার্জনেই পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা, ‘২০১১ সালের আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম অতি সাধারণ একজন। ফুটবলকে যে এ দেশের মেয়েরা পেশা হিসেবে নিতে পারে, সেটা জানাই ছিল না। যত দিন গিয়েছে ফুটবলই আমার সকল ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছে। এই ফুটবলেই স্বস্তি ফিরেছে আমার পরিবারে।’
সিনিয়র দলের হয়ে এখন পর্যন্ত করেছেন ১১ গোল। ২০১৬ সাফে মালদ্বীপের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকও করেছিলেন দ্রুতগতির এই স্ট্রাইকার। গত বছর সাফে ভারতের বিপক্ষে ছিল জোড়া গোল। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে চোট নিয়ে খেলেও ছিলেন সপ্রতিভ। যা স্বপ্নার সামনে খুলে দিয়েছেন স্বপ্নপূরণের দুয়ার।।
২০১০ যুব বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সহঅধিনায়ক ৯ বছর পর প্রোটিয়া টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার খুব কাছে ছিলেন। কিন্তু বেছে নেন কাউন্টি ক্রিকেট। এরপর মায়ের দেশ নেদারল্যান্ডসের জার্সি গায়ে এগিয়ে চলেছেন কলিন অকারম্যান। এবার সিলেট স্ট্রাইকার্সে প্রথম বিপিএলের আমেজ গায়ে মাখছেন। দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন নিজের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক
এই প্রথম আপনি উপমহাদেশে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলছেন। প্রথম হিসেবে কেমন উপভোগ করছেন?
অকারম্যান : অবশ্যই ভালো। দল হিসেবে যদি বলি প্রথম ৬ ম্যাচ দারুণ কাটানো। একটি জয়ী দলের অংশ হওয়াটা সত্যিই আত্মবিশ্বাস ও ভালোলাগা বাড়িয়ে দেয়। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহজ হয়। আর ম্যাচের হিসাবে আমি হয়তো খুব বেশি সুযোগ পাইনি এখানকার উইকেটকে বুঝতে। পাশাপাশি এখানে নেট অনুশীলনও খুব বেশি সময় ধরে করা যায় না। তবু এর মধ্যেও নিজেকে প্রস্তুত রাখছি যেন পরের ম্যাচে সুযোগ পেলে তৈরি হয়ে মাঠে নামতে পারি।
টি-টোয়েন্টিতে আপনার পুরো ক্যারিয়ারটাই তো ইংল্যান্ডে। টি-২০ ব্লাস্ট বা ভাইটালিটি ব্লাস্ট টুর্নামেন্ট খেলেছেন। ওই আসরগুলোর সঙ্গে বিপিএলের পার্থক্য কেমন দেখছেন?
অকারম্যান : অনেক পার্থক্য। সেখানে ভালো উইকেটে খেলতে পারি আমরা। যেমন আমাদের লেস্টারের মাঠ গ্রেস রোডের কথা যদি ধরি সেখানে প্রতি ম্যাচে স্কোর হয় ১৭০-১৮০। কিন্তু এখানে প্রতি ম্যাচে স্কোর ১৪০-১৪৫, তো এমন উইকেটে ব্যাটারদের মানিয়ে খেলতে হয়। সময় নিতে হয় কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত হতে। এছাড়া ইংল্যান্ড এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টির সেরা দল। ওদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মানটাও তাই একটু ভালো বলতেই হবে। তবে এখানে আমি বেশ ভালো দলের সঙ্গে আছি। মাশরাফী-মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ দুজনকে নিয়ে আমাদের দলটাও বেশ ভালো করছে।
বিপিএলে আপনার দুটি ইনিংস ভুলে যাওয়ার মতো। আসলে কী হয়েছিল? আপনি কি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি?
অকারম্যান : তেমনটা না। প্রথম ম্যাচে বলটা এক্সট্রা বাউন্স হয়েছিল। আমার গ্লাভসে লেগে কিপারের কাছে চলে যায়। এক্সট্রা বাউন্স হলে বিশ্বের যে কোনো ব্যাটারের জন্যই খেলতে সমস্যা হয়। আর ওই ম্যাচটা ছিল মিরপুরে। আমি শুনেছি মিরপুরের উইকেটের ব্যাপারে। তোমরাও জানো সেটা যে এখানে আগে থেকে চিন্তা করে কিছুই করা যায় না। তবে হ্যাঁ, দ্বিতীয় ম্যাচে রানআউট নিয়ে আমি নিশ্চয়ই হতাশ। আমার ক্যারিয়ারে এমন শিশুসুলভ ভুল আমি কখনই করিনি। ক্রিকেটে অনেক সময় বোকার কা- ঘটে, আমি সেদিন ওই কাজ করেছি। দুর্ভাগ্য আমার।
আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যদি তাকাই ক্যারিয়ার বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকায়। ঠিক কোন চ্যালেঞ্জের কথা ভেবে আপনি কাউন্টি ক্রিকেটে নাম লেখালেন?
অকারম্যান : ইংল্যান্ডে আমি নিজেকে ভালো ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। শুধু ছোট ফরম্যাটে না, বড় ফরম্যাটেও, তিন ফরম্যাটেই। ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলা কঠিন না। সেখানে সব ধরনের কন্ডিশনে খেলার সুযোগ হয়। বিভিন্ন কন্ডিশনে তোমাকে অনেক ক্রিকেট খেলতে হবে। এপ্রিলে মেঘলা আবহাওয়ায় বল সিম করবে, ওই সময় রান করা শিখতে হয়। জুলাইতে আবার ফ্লাট উইকেটে রান করা সহজ হয়। ইংল্যান্ডে তাই তুমি কেমন ক্রিকেটার সেই পরীক্ষাটা দেওয়া যায়। আমি বিশ্বাস করি ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর আমি নিজের খেলা ও নিজেকে ক্রিকেটার হিসেবে আরও ভালো বুঝতে পেরেছি।
নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা এমন টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা কেন কাউন্টিকে বেছে নেয়। দেশের হয়ে খেললে তো বড় পর্যায়ে তারা আরও খেলার সুযোগ পায়?
আকারম্যান : এখানে অনেক বিষয় থাকে। এর মধ্যে একটা কাউন্টি অনেক বড় প্লাটফর্ম। সেখানে খেলার সুযোগটা বেশি পাওয়া যায়। দেখছেন অনেক বয়স্ক ক্রিকেটারও সেখানে খেলে। কাউন্টির ঐতিহ্যে এবং খেলার পরিমাণের দিকে তাকালে অবশ্যই যে কেউ সেখানে খেলতে চাইবে। কিন্তু একটা দেশে মানে নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায় আপনি নির্দিষ্ট কিছু ক্লাবে নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টেই খেলতে পারবেন। সেখানে প্রতিযোগিতা বেশি থাকে জাতীয় দলের জন্য। অবশ্যই যে কোনো ক্রিকেটার প্রতিযোগিতায় নামতে চাইবে, কিন্তু এটা একটা দিক এবং আপনি ক্রিকেটার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার দীর্ঘ করবেন সেটা একটা দিক। ২০১৭ সালের দিকে আমি লেস্টারশায়ারের প্রস্তাব পেয়ে ইংল্যান্ডে যাই। ওই সময়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু সেখানে আমি আমার পরিবারকে (সহধর্মিণী) পাই। সেখানে নিজের ক্যারিয়ারকে অন্যভাবে আবিষ্কার করেছি। এখন বলব ওই সিদ্ধান্তটা আমার জন্য সঠিক ছিল।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আপনার ৪১ রানে আপনার জন্মস্থান দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। এই অনভূতিটা কেমন ছিল আপনার জন্য?
অকারম্যান : আমি মিথ্যা বলব না, সত্যিই অদ্ভুত লাগছিল (হাসি)। এটা ক্রিকেট, মানে যেখানে ভিন্ন দুটো আন্তর্জাতিক দল মাঠে মুখোমুখি হয়। কিন্তু আমার জন্য ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে গেল। মানে এই যে রাবাদা, এনগিডি বা নরকিয়া ওদের তো আমি চিনি। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বা ২০১৮-১৯ এর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে ওদের বিপক্ষে বা পক্ষে অনেক খেলেছি। আমি সত্যি আনন্দিত যে নিজের দলকে জেতাতে পেরেছি। তবে এক কথায় যদি বলি ওদের বিপক্ষে আবার খেলে সুযোগটা সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পেরেছি।
একজন ক্রিকেটার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারকে কোথায় দেখতে চান?
অকারম্যান: অবশ্যই আমি যতদিন সম্ভব কাউন্টি খেলে যেতে চাই। আমার দল লেস্টারের হয়ে আরও শিরোপা জিততে চাই। আর আন্তর্জাতিকে নেদারল্যান্ডসের হয়ে বড় টুর্নামেন্টে বড় দলের বিপক্ষে ভালো করা আমরা লক্ষ্য। বড় দলের সঙ্গে ভালো করলে আমি নিজেকে অনেক ভালো অবস্থানে নিতে পারব। যেমন এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আমার জীবনের সেরা টুর্নামেন্ট। আমরা গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতে সেরা চার দলের মধ্যে ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি ২০২৪-এ উইন্ডিজেও আমরা এর ধারাবহিকতা রাখব। এছাড়া বেশি বেশি টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলাও আমার লক্ষ্য। এতে আমি নিজেকে আরও ভালো ভাবে বুঝতে পারব, ভালো ক্রিকেটার হিসেবে পরিণত করতে পারব।
মোহাম্মদ রিজওয়ান, পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে বাবর আজমের সঙ্গে মিলে ইনিংসের সূচনায় নামেন। বিপিএলে খেলতে এসেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে। রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ে টি-টোয়েন্টির মারকুটে ভাবটা নেই, আছে অলস সৌন্দর্য। কাল কুমিল্লার হয়ে অনুশীলনে নামার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, টি-টোয়েন্টিতে ধীরে ব্যাটিংয়েরও দরকার আছে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রিজওয়ানের স্ট্রাইক-রেট ১২৬.৬২, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ১২৫.১৯। বোঝাই যাচ্ছে জার্সি বদল হলেও খেলার দর্শনে বদল আনেন না রিজওয়ান। বরং মনে করেন এটাই তার যোগ্যতা, ‘কখনো কখনো মনে হতে পারে এটা (ধীরে ব্যাটিং) বিব্রতকর, কিন্তু আমার দলের কোচ, খেলোয়াড়, অধিনায়ক সবাই আমার কাছে এটাই চায় এবং তারা এই ব্যাটিংয়েই খুশি। পাকিস্তান দলেও একই অবস্থা। কেউ যদি আমার এই পারফরম্যান্স দেখেই আমাকে খেলতে ডেকে আনে এবং আমার বেশ চাহিদা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এই ব্যাটিংয়েরও চাহিদা আছে।’
রিজওয়ান মানেন যে, এটা কখনো কখনো বিব্রতকর তবে এতে তিনি অন্তত বিব্রত হচ্ছেন না, ‘এটা অনেক সময় বিব্রতকর, কারণ টি-টোয়েন্টিতে সবাই ছয় দেখতে চায়, ৩৫-৪০ বলে ৭০ রানের ইনিংস দেখতে চায়। তবে আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলকে কীভাবে জেতানো যায় আর কী করলে দলকে জয়ের রাস্তায় রাখা যায়।’
সবশেষ ম্যাচেই কুমিল্লার হয়ে ঢাকা ডমিনেটরসের বিপক্ষে করেছেন ৫৫* রান, যদিও খেলেছেন ৪৭ বল। অন্যদিকে খুশদিল শাহ ২৪ বলে ৬৪ রান না করলে হয়তো রিজওয়ানের ইনিংসটা দলের বোঝাই হয়ে যেত, তবে রিজওয়ান মনে করেন এরকম ইনিংসের গুরুত্বও অনেক, ‘টি-টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষ উইকেট তুলে নিয়ে ছন্দ পাওয়ার চেষ্টা করে যাবে, আর ধীরে ব্যাটিং করে উইকেট না দিয়ে সেই ছন্দটা নষ্ট করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। দল যখন চাইবে গতি বাড়াতে হবে। এটাই হচ্ছে আমার মন্ত্র আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমি সফল হয়েছি।’
বাবরের পর লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তনে নামাটাও দারুণ একটা সুযোগ হিসেবে দেখছেন রিজওয়ান, ‘সবাই জানে লিটন বাংলাদেশের সুপারস্টার। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সে ভালো খেলছে আর এখন তো দারুণ ছন্দে আছে। আমি আর লিটন একে অন্যের সঙ্গে মাঠে ভালোই যোগাযোগ করি, অল্প সময়েই আমাদের মধ্যে ভালো একটা বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে।’
২০২২ সাল দারুণ কেটেছে ইগা সোয়াতেকের। ২০২০-এ জয়ী ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা পুনরুদ্ধারের পর জিতেছিলেন ইউএস ওপেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এসেছিলেন অন্যতম ফেভারিট হিসেবে। গতবার সেমিফাইনালে বিদায় নিলেও এবার নাম্বার ওয়ান হয়ে অস্ট্রেলিয়া ওপেন খেলতে নেমেছিলেন শিরোপার আশা নিয়ে। তবে সেটি আর হলো না। গতবার ২৭তম বাছাইয়ের কাছে শেষ চারে হেরেছিলেন। এবার চতুর্থ রাউন্ডেই হেরে গেলেন ২২তম বাছাই কাজাখস্তানের ইয়েলেনা রিবাকিনার কাছে।
সরাসরি সেটে (৬-৪, ৬-৪) হারার পেছনে প্রত্যাশার চাপ সামলাতে না পারার কথা বলেছেন সোয়াতেক, ‘নিশ্চিত করেই দুটি সপ্তাহ আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। আমি হয়তো একটু বেশিই প্রত্যাশা করে ফেলেছিলাম। চাপ অনুভব করেছিলাম। মনে হয়েছে যে, আমি শুধু জয়ই চেয়েছি, হারার কথা ভাবতেও পারিনি।’ গতবার উইম্বলডনে তৃতীয় রাউন্ডেই হেরে যান সোয়াতেক। আর সেমিতে সিমোনা হালেপ, ফাইনালে ওনস জাবুরকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন ২৩ বছর বয়সী রিবাকিনা।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।