
চার দিন পিছিয়েছে ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশে আগমনের তারিখ। পূর্বঘোষিত সূচিতে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে বাংলাদেশে পা রাখার কথা ছিল ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। তবে পরিবর্তিত সূচিতে ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়রা ২৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশে আসবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস। সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের তিনটি ম্যাচ ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে ইংল্যান্ড।
বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকা ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের অনেকেই খেলছেন এসএ টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। এই আসরের ফাইনাল ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে। এসব কারণেই জস বাটলার-মইন আলিদের বাংলাদেশে আসা পেছাতে পারে বলে জানিয়েছেন নাফীস, ‘ইংল্যান্ড দল আসবে ২৪ তারিখে। ওদের অনেকেরই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কমিটমেন্টসহ অনেক ধরনের ব্যক্তিগত কমিটমেন্টও আছে। তাই ওরা আসাটা পিছিয়ে দিয়েছে।’ আগের সূচিতে ২৪ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের, পরিবর্তিত সূচিতে থাকছে না প্রস্তুতি ম্যাচ, ‘ওরা প্রস্তুতি ম্যাচ দুটো খেলছে না। সরাসরি অফিশিয়াল ম্যাচগুলোই খেলবে। অর্থাৎ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের সূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।’ বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ইংল্যান্ড দল তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা থেকে এই সফরটাকে শুধু অফিশিয়াল ম্যাচের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। এখন সেভাবেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
এই সফরটি হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে, পরে সেটা পিছিয়ে দেওয়া হয় ২০২৩ সালের মার্চে। এবার এখন পর্যন্ত সিরিজ পেছানোর কোনো ঘোষণা না এলেও পিছিয়েছে আগমনের তারিখ। সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে ইংল্যান্ড আছে চতুর্থ অবস্থানে আর বাংলাদেশ আছে ষষ্ঠ অবস্থানে। স্বাগতিক ভারতসহ শীর্ষে থাকা আট দল সরাসরি খেলবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
১ মার্চ ঢাকায় শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হবে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। ১৪ মার্চ শেষ টি-টোয়েন্টি।
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভাগ্যবদলে বড় ভূমিকা কাসেমিরোর। তবে মাঠে নিজের ভূমিকার কারণেই কখনো তিনি পার্শ্বনায়ক, কখনো আড়ালের নায়ক। সেই তিনি এবার জোড়া গোলে দলের জয়ের মূলনায়ক। শনিবার চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে ব্রাজিলিয়ানের অসাধারণ পারফরম্যান্সে রিডিংকে ৩-১ গোলে হারায় ম্যানইউ। অধিনায়ক হ্যারি ম্যাগুইয়ার বলছেন, কাসেমিরো একাই বদলে দিয়েছেন গোটা দলের খেলা।
এমনিতে কাসেমিরোর মূল কাজ গোল বানিয়ে দেওয়া কিংবা গোল করার ক্ষেত্র তৈরি করা, প্রতিপক্ষের গোলের সম্ভাবনা ধ্বংস করা। তবে এই ম্যাচে তিনি করেন দারুণ দুটি গোল। আরেকটি গোল করেন তার ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ ফ্রেদ।
এ দিন শুরু থেকে বেশকিছু আক্রমণ করেও গোল পেতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয় ইউনাইটেডকে। প্রথমার্ধে অবশ্য একবার জালে বল প্রবেশ করাতে পেরেছিলেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। কিন্তু অফসাইডের কারণে তা বাতিল করে দেয় ভিএআর। ইউনাইটেডের প্রথম ফুটবলার হিসেবে তাই টানা ১০ ম্যাচে গোলের কীর্তি তার আর গড়া হয়নি। ৫৪তম মিনিটে স্বদেশি আন্তোনির দুর্দান্ত পাস থেকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন কাসেমিরো। মিনিট চারেক পরই ২৫ মিটারের বেশি দূর থেকে সরাসরি শটে তিনি ব্যবধান করেন দ্বিগুণ। পরে ফ্রেদ চোখ ধাঁধানো ব্যাক হিলে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন আরও।
চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ইউনাইটেডে কাসেমিরোর দলবদলে সমালোচনা কম হয়নি। ক্যারিয়ারের এই পর্যায় প্রথমবারের মতো ইংলিশ ফুটবলে এসে তিনি কেমন করবেন, এই সংশয়ও ছিল তুমুল। তবে নতুন ক্লাবে, নতুন পরিবেশে দ্রুতই মানিয়ে নেন তিনি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে রিয়ালের মতো এখানেও হয়ে ওঠেন দলের প্রাণভোমরা। রিডিংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের পর সেটিই তুলে ধরলেন ম্যাগুইয়ার। ‘তাকে যে কারণে ক্লাবে আনা হয়েছে, সেটিই করে চলেছেন তিনি। অসাধারণ এক ফুটবলার। শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলার না হলে তো এত এত ট্রফি তিনি জিততে পারতেন না! গোটা দলের খেলা তিনি উন্নত করে দিয়েছেন, দলের পারফরম্যান্স ও মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাকে পাওয়া আমাদের জন্য দারুণ।’
কোচ এরিক টেন হাগ প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা জানি, সে কতটা গ্রেট ফুটবলার। রিয়ালে হয়তো খুব বেশি গোল সে করতে পারেনি (দলে ভূমিকার জন্য), আমরা জানি তার সামর্থ্য কতটা। আমি জানি, সে এটা (গোল করা) উপভোগ করে।’
কাউরো মিতোমার যোগ করা সময়ের গোলে এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। গতকাল ব্রাইটন ২-১ গোলে হারায় লিভারপুলকে।
জয়ের পর কোর্টে নিজেকে ধরে রেখেছিলেন নোভাক জকোভিচ। তবে গ্যালারিতে কোচ গোরান ইভানিসেভিচ ও মা দিয়ান জকোভিচের কাছে গিয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। অঝোরে কেঁদেছেন। এরপর কোর্টে নেমে প্লেয়ার বেঞ্চে বসেও তোয়ালেতে মুখ ঢেকে কেঁদেছেন জকোভিচ। মাত্রই গ্রিসের স্টেফানোস সিতসিপাসকে ৬-৩, ৭-৬ (৭-৪), ৭-৬ (৭-৫) সেটে হারিয়ে ২২তম গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেছেন। বিশ্ব র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছেন। সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ী রাফায়েল নাদালের রেকর্ডকে ছুঁয়েছেন। এত আনন্দের খবরে কাঁদার প্রশ্নই আসে না। তবুও জকোভিচ কাঁদলেন।
জকোভিচের কাঁদার কারণ অবশ্যই আছে। এই শিরোপা তার হয়ে অনেক কিছুর জবাব দিয়েছে। এই তো গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতেই পারেননি করোনার টিকা না নেওয়ায়। এই টুর্নামেন্টেই বাবা ডিজান জকোভিচ ভøাদিমির পুতিনের ছবিযুক্ত পতাকা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে এসে সমালোচিত হলেন। সেই সমালোচনার রেশ জকোভিচের গায়েও লেগেছে। এ ছাড়া লাইন জাজের দিকে বল ছুড়ে মারা তার হাসিখুশি জকোভিচের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তবে জকোভিচ এমন নয়। যে কারণে তাকে ‘জোকার’ বলা হয়। প্রতি জয়ের পর কোর্টে কিছু মজার কা- না করলে যার হয় না। তার ক্যারিয়ারটা গত কিছু টুর্নামেন্ট কেমন প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। সেসব সমালোচনার জবাব দশমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে দিলেন জকোভিচ।
জকোর জন্য এই টুর্নামেন্ট জেতার পথে বড় বাধা ছিল না কেউ। নাদাল ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের রেকর্ড বাড়ানোর সুযোগ বেড়ে যায় তার। ফাইনালটাও তাই প্রায় অনায়াসে জিতেছেন এই সার্বিয়ান। সিতসিপাসের বিপক্ষে মুখোমুখি দেখায় ১০-২ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা জকোকে আগেই শিরোপার সুবাস পাইয়ে দেয়। ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয় গ্র্যান্ডস্ল্যাম খেলা সিতসিপাস ৩৩ বারের অভিজ্ঞতার সামনে শুরুতে দাঁড়াতেই পারেনি। মাত্র ৩৬ মিনিটে প্রথম সেট হারের পর পরের দুই সেটে কিছুটা লড়াই করেছেন। অবশ্য জকোর থেকে সেট কেড়ে নিতে পারেননি। পরের দুই সেটেকেই টাইব্রেকে নিয়েছেন সিতসিপাস। এটাই তার সাফল্য। ম্যাচ শেষে সিতসিপাসকে হতাশ না হয়ে ভবিষ্যতে আরও সুযোগ কাজে লাগানোর শুভ কামনাও জানিয়েছেন জকোভিচ।
নিজের জন্য এই ফাইনালকে একটু বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন এই সার্বিয়ান। তাই জয়ের আনন্দে কেঁদেছেনও খুব। ম্যাচ শেষে নিজেই বলেছেন, ‘আমার জীবনের সেরা জয়’। গত বছর করোনার টিকা না নেওয়ায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে পারেননি। তাই দশম শিরোপাও জিততে পারেননি এখানে। গত বছর শুধু উইম্বলডন জিতেছেন জকোভিচ। এ বছর আবার মেলবোর্নে ফিরেছেন রাজার মতো মুকুট পরেই। বুকের ডান পাশে শিরোপা সংখ্যা ২২ লেখা জ্যাকেট পরে জকোভিচ বলেন, ‘গত বছর এখানে খেলতে পারিনি, এ বছর ফিরে আসা এবং নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং একটা টুর্নামেন্ট ছিল। মেলবোর্নে যারা আমাকে আবার স্বাভাবিক হতে সাহায্য করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। একমাত্র আমার পরিবার ও দলই জানে গত ৫-৬ সপ্তাহ আমি কীসের ভেতর দিয়ে গিয়েছি। এজন্যই আমি বলছি পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা আমার জীবনের সেরা জয়।’
২০১৮ সালে শেষবার গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেছিলেন রজার ফেদেরার। সেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর টেনিসের রাজ্যে শুধুই দুজন। নাদাল ও জকোভিচ এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন পর্যন্ত ১৯ টুর্নামেন্টের ১৬টিই ভাগাভাগি করেছেন। নাদালকে ছুঁতে এই সময়ে বেশি জিতেছেন জকোভিচই। ১৬টির মধ্যে ১০টি। তাই ফেদেরারের শেষ গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের পর নাদাল নিজের ১৭তম শিরোপা জেতেন। তা পরের স্ল্যামে উইম্বলডনে জকোভিচ ১৩তম শিরোপা জেতেন। এরপর নাদালের পিছু ছুটছিলেন কিছুটা দূরত্ব রেখে। ২০২১-এর বছরের ইউএস ওপেন বাদে বাকি তিন শিরোপা জিতে নাদালকে ছুঁয়ে ফেলেন জকোভিচ। গত বছর আবারও ২ শিরোপার দূরত্ব বাড়লেও উইম্বলডন ও এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে ২২ শিরোপায় নাদালের পাশে দাঁড়ালেন জকোভিচ।
গত কয়েক বছরের এই প্রতিযোগিতাকে নিজের জীবনের সেরা অংশও বলেছেন জকোভিচ। জানালেন এজন্যই তিনি টেনিস খেলেন, ‘টেনিস আমার জন্য সেরা শিক্ষার জায়গা। আমি অনেকগুলো কারণে পেশাদার টেনিস খেলি। এর মধ্যে একটি ব্যক্তিগত। তা হলো আমি প্রতি ম্যাচে নিজের জন্য নতুন কিছু শিখতে পারি। নিজের ভয়কে জয় করতে লড়াই করি। এরপর অবশ্যই কিছু পেশাদার অর্জন ও লক্ষ্য এবং আশা তো আছেই। আমি টেনিসে আরও অনেক ইতিহাস গড়তে চাই। নিজেকে সেরা হিসেবে দেখতে চাই।’
র্যাংকিংয়ে জকোভিচ সেরা হয়েছেন। তবে তা নতুন কিছু নয়। নতুন যেটা তা হলো নাদালের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৩৫ বছর বয়সে টেনিসকে আরও কিছু দেওয়ার আছে তার। আগামী বছরগুলোতে ঠিক নাদালকে ছড়িয়ে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের সংখ্যাটা এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন জকোভিচ যা অন্যদের জন্য হবে অনতিক্রম্য। তখন অবশ্যই ইতিহাসের সেরা হয়ে থাকার ইচ্ছেটা সত্যি হয়ে থাকবে তার।
গত সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর দেশের নারী ফুটবলারদের নিয়ে প্রত্যাশাটা আকাশ ছুঁয়েছে। এবার তাই মেয়েদের ঘরের মাঠে বিজয়ী রূপে দেখার পালা। ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বসতে যাচ্ছে সাফ নারী অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ। চার দলের এই আসরে শিরোপায় চোখ স্বাগতিক বাংলাদেশের। তবে বরাবরেই মতো এবারও সাফল্যের পথে বড় বাধা ভারত।
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এর আগে দু’বার সাফ পর্যায়ের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-১৯ আসরে শিরোপা জয়ের পর এবার অনূর্ধ্ব-২০-এ নিজেদের প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ। সিঙ্গেল লিগ পদ্ধতিতে চারদল বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান একে অপরের মোকাবিলা করবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ ২ দলের মধ্য ৯ ফেব্রুয়ারি হবে ফাইনাল। আসরের সবক’টি ম্যাচই হবে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে।
এই আসরকে সামনে রেখে গতকাল ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। দল ঘোষণার সময় ছোটন এই আসরে নিজের শিষ্যদের ফাইনালে দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছেন, ‘আমরা এই টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা ফাইনাল খেলতে চাই।’
ভারত যে দলটি নিয়ে খেলতে আসবে, সেই দলে রয়েছে গত বছর সে দেশেই অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলা বেশ ক’জন ফুটবলার। তাতে একদমই ভড়কে যাচ্ছেন না ছোটন, ‘আমরা এর আগে অ-১৮ পর্যায়ে ভারতকে হারিয়েছি। সেই দলের অনেকেই অ-১৭ বিশ্বকাপ খেলেছে। এই দলেও অনেকে হয়তো খেলবে। সুতরাং ভারতকে হারানো আমাদের জন্য অসম্ভব কিছু নয়।’ মাস দেড়েক আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল ঢাকায়। সেই আসরে ফাইনালে গিয়েও নেপাল বাধা টপকানো হয়নি বাংলাদেশের। এবার সেরকম কিছু হোক, চান না ছোটন। বরং গত সেপ্টেম্বরে সিনিয়র সাফে গড়া ইতিহাস থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে চান বর্ষীয়ান এই কোচ। ছোটনের সেরা ২৩-এ নতুন মুখ দু’জন- আফরোজা খাতুন ও আইরিন খাতুন। যারা প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। আর সিনিয়র দল থেকে এই দলে সুযোগ পেয়েছেন চারজন- রুপনা চাকমা, ইতি রানী, সাথী বিশ্বাস, শাহসুন্নাহার জুনিয়র, স্বপ্না রানী ও সোহাগি কিসকু। ছোটন বলেন, ‘সাফের শিরোপা জয়ের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা বেড়ে গেছে, সেটা মেয়েরা জানে। নেপাল ও ভারত শক্তিশালী দল। তবে আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে ভালো ফুটবল খেলার।’
বিশ্বকাপ জয়ী লিওনেল মেসি আজকের অবস্থানে উঠে আসার আগে ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন আর্জেন্টিনার হয়ে। তার আগে-পরে আরও পাঁচবার যুব বিশ্বশিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা, যা সর্বাধিক সাফল্য কোনো দেশের। একবার রানার্সআপও হয়েছে আলবিলেসেলেস্তেরা। সেই আর্জেন্টিনা আসন্ন বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারল না, যা ২০১৩ সালের পর প্রথম। বিশ্বকাপ জয়ের এক মাস পর যুব দলের জন্য লজ্জা পেতে হলো আর্জেন্টিনাকে।
দক্ষিণ আমেরিকা অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনা হেরে গেছে কলম্বিয়ার কাছে। অথচ এই ম্যাচটি জিতলেই আর্জেন্টিনা যোগ্যতা অর্জন করতে পারত। গ্রুপ ‘এ’তে ছিল আর্জেন্টিনা। এই গ্রুপ থেকে যোগ্যতা অর্জন করেছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও প্যারাগুয়ে। এই তিন দেশের কাছেই হেরেছে আর্জেন্টিনা। শুধু জয় পায় পেরুর বিপক্ষে। অপর গ্রুপ থেকে যোগ্যতা অর্জন করেছে উরুগুয়ে।
আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনায় মেসির সাবেক সতীর্থ হাভিয়ের মাসচেরানো আর্জেন্টিনা যুব দলের কোচ। ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে সরে যেতে চেয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘ব্যর্থতার সব দায় আমার। ওদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারিনি। মনে হয় না আমার এই কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। আপাতত আর্জেন্টিনায় ফিরে শান্তিতে কিছু দিন কাটাতে চাই।’ ২৩তম যুব বিশ্বকাপ ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত হবে ২০ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত। আয়োজক ছাড়া বাকি ২৩ দল আসবে বাছাইপর্ব পেরিয়ে।
পহেলা ফেব্রুয়ারিতে বয়স ৪১ হবে শোয়েব মালিকের। বিশ্বজুড়ে সেরা পর্যায়ের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে যাওয়া সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার তিনি। তাই খেলার সংখ্যাটাও ৫০০ ছুঁতে চলেছে। বিপিএলে আর দুটি ম্যাচ খেললে কায়রন পোলার্ডের (৬১৪) পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এত ম্যাচ হবে মালিকের। অথচ কাল বললেন এখনো নিজেকে ২৫ বছর বয়সী মনে করেন এই পাকিস্তান তারকা।
নিজের ফিটনেস নিয়ে বেশ সচেতন মালিক। তেমনি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়েও। দীর্ঘ সময় ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলেছেন। ২০১৫ সাল থেকে বিপিএলেও নিয়মিত মালিক। সেই দেখা থেকেই এখনো বাংলাদেশের উন্নতির সুযোগ দেখছেন মালিক, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিচিত আছে এখন বিশ্বের সব জায়গায়। তারাও তো এখন বিশ্বের নানা জায়গায় লিগগুলোতে সুযোগ পাচ্ছে। নিজেদের কন্ডিশনে বাংলাদেশের সাফল্যের হার তো দুর্দান্ত। একটা জায়গায় তাদের এখনো উন্নতির জায়গা আছে, তা হলো দেশের বাইরের পারফরম্যান্সে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎটা অবশ্য সামনেও দেখতে পারবেন মালিক। কারণ, সহসাই অবসরের কোনো ইচ্ছে দেখাননি সবচেয়ে বয়সী এই সেরা পর্যায়ের ক্রিকেটার। বরং ২৫ বছর বয়সের মালিক আভাস দিলেন আবারও পাকিস্তান দলে ফিরতে চান, ‘বিশ্বাস করুন, যদিও আমার বয়স দলে সবচেয়ে বেশি, তবে আমার ফিটনেস আপনি তুলনা করতে পারেন ২৫ বছর বয়সী কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে। মাঠে আসা উপভোগ করা ও ভালো করার ক্ষুধা যতদিন আছে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাব। এই কারণেই অবসরের কথা চিন্তাও করছি না আমি। যদি সম্ভব হয়, আমি অবসর নিতে চাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে কিংবা পরিপূর্ণ ক্রিকেট খেলে। যেখানেই সুযোগ মেলে, আমি যাই এবং খেলি।’
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।