
লিওনেল মেসি গত ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে উঁচিয়ে ধরেছেন বিশ্বকাপ ট্রফি। বিশ্বকাপ জয়ের পর এক মাসেরও বেশি সময় পর আর্জেন্টাইন অধিনায়ক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দেশটির রেডিও চ্যানেল ‘উরবানা প্লে’-তে। সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ জয়ের পর কেমন লেগেছে, বিশ্বকাপে কঠিন সময় ছিল কোনটি, ডাচ কোচ ফন ডাইকের সামনে উদযাপনসহ নানা বিষয় নিয়ে। এ সময় ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেও স্মরণ করেন মেসি। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ প্রসঙ্গে
আগেও এটা নিয়ে কথা বলেছি। মনে হয় ২০১৪ সালের আগে। বলেছিলাম, সৃষ্টিকর্তা আমাকে বিশ্বকাপ উপহার দেবেন। এরপর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা জিতলাম। তারপর (বিশ্বকাপ জয়) মুহূর্তটার দেখা পেলাম। আমি জানতাম তিনি আমাকে এটা উপহার দেবেন। এটা কীভাবে টের পেয়েছি, বুঝিয়ে বলতে পারব না। জীবনে যা অর্জন করেছি, তার জন্য প্রতিদিনই তাকে ধন্যবাদ জানাই। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতাম না। যা কিছু অর্জন করেছি, সে জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন সময়
সৌদি আরবের সঙ্গে হারটা সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল। তবে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল সবচেয়ে কঠিন। ফলাফল পক্ষে এলেও ওই ম্যাচটা আমরা সবচেয়ে বাজে খেলেছি। তবে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এই দলটা না পেলে ম্যাচটা বের করে আনা কঠিন হতো।
ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে
ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত থেকে বিশ্বকাপ ট্রফিটা পেলে খুশি হতাম। তিনি আর্জেন্টিনার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখে যেতেন, জাতীয় দল নিয়ে তার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ট্রফিটা তার হাত থেকে নিতে পারলে দারুণ একটা ছবি হতো! ডিয়েগো ছাড়াও ওপর থেকে আরও যারা আমাদের ভালোবাসে, তাদের ভালোবাসা আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।
ফন গাল এর সামনে উদযাপন এবং ভেহর্স্ট প্রসঙ্গে
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ফন গাল কী বলেছিলেন তা আমার সতীর্থরা জানিয়েছেন। সেই ঘটনাটি (গোল উদযাপন) সেই কারণে আসলে ঘটে গেছে। আমি আসলে ওই ছবিটা মনে রাখতে চাই না, কিন্তু সেটা সহজাতভাবেই চলে এসেছিল। যা আমি করেছি, তা কোনোভাবেই নিজে থেকে পছন্দ করি না। আমি মিক্সড জোনে ছিলাম এবং ম্যাচ মাত্রই শেষ হয়েছিল। এমন ম্যাচে চিন্তায় ছিলাম পরে অনেক নার্ভাস ছিলাম ওই সময়। তাই এমনটি হয়ে গিয়েছিল।
টাইব্রেকারে মন্তিয়েলের শেষ শট
তখন কেমন লেগেছে, তা বোঝানো কঠিন। অনেক কিছুই মাথায় আসছিল। জয়টা বিশ্বাস হচ্ছিল না। সবাই বলছিল, সবকিছু শেষ হয়েছে। আর আমি ভাবছিলাম, শেষ পর্যন্ত একদম শেষ দিকে এসে জাতীয় দলের হয়ে সবকিছু জিততে পারলাম! কখনো কল্পনা করিনি সবকিছু এভাবে হবে।
বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু দেওয়া বিষয়ে
ট্রফিটা (মঞ্চে) রাখা ছিল। যা করতে ইচ্ছা হচ্ছিল, তা পারছিলাম না। ট্রফিটা যেন আমাকে ডাকছিল ‘এসো, আমাকে নিয়ে যাও। এখন তুমি আমাকে ছুঁতে পারো।’ তাই যাওয়ার সময় ট্রফিটায় চুমু খাই, ইচ্ছে করছিল।
বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাত যেভাবে কেটেছে
বিশ্বকাপজুড়ে যা করেছি, সেটাই। আন্তোনিলার সঙ্গে গল্প করেছি। তবে খেলা নিয়ে তেমন কথা বলিনি। প্রতিটি ম্যাচের আগে যা করতাম, সেটাই মেনেছি। নতুন কিছু নয়, একই কাজ করেছি। ঘুমটা ভালো হয়েছিল। বিশ্বকাপজুড়েই ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম।
রোজারিওতে উৎসব
বিশ্বকাপ জিতে সেখানে ফিরতে পারার অনুভূতিটা খুব সুন্দর ছিল। আমি মাত্র এক-দুই ঘণ্টা ঘুমাতে পারি। ভোর ৫-৬ টার মধ্যেই লোকজন বুয়েন্স আইয়ার্সে অবিলিস্কে ভিড় জমাতে শুরু করে। বুঝতে পেরেছিলাম উদ্যাপনটা পাগলাটে হবে। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিল, তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে
বিশ্বকাপ জয়ের পর এত এত মেসেজ এসেছে যে, কিছুদিনের জন্য আমার ইন্সটাগ্রাম ব্লক করে দিয়েছিল।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেসি ছোটবেলার (বার্সার) মেসিকে যা বলবেন
আমি বলব, অসাধারণ কিছু অপেক্ষা করছে। এমন কিছু, যা সে ভাবতেও পারেনি। তোমার চলার পথটা সুন্দর হবে, কঠিন সময় আসবে, যা তাকে অতিক্রম করতে হবে। স্বপ্ন দেখায় কখনো হাল ছেড় না। কারণ, শেষ পর্যন্ত সে নিজের প্রাপ্য পুরস্কারটি পাবে এবং সবকিছু ভালোভাবে শেষ হবে, যেন একটা সিনেমা।
রানের খেলা ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য এক দিন কাটল কাল। দুই দলের চার ব্যাটারের লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও খুলনা টাইগার্স ম্যাচ হয়ে উঠল দারুণ উপভোগ্য। রান উৎসবের ম্যাচে বিপিএলের ইতিহাসে সেরা রান তাড়ার রেকর্ড হলো তাতে। এই গৌরব নিয়ে খুলনাকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারাল কুমিল্লা। দলটির উইন্ডিজ ব্যাটার জনসন চার্লসের বিধ্বংসী সেঞ্চুরির কাছে ম্লান খুলনার তামিম ইকবাল ও শেই হোপের নব্বই ছাড়ানো ইনিংস। তাদের ব্যাটে ২ উইকেটে ২১০ করেছিল খুলনা। অথচ ১১ ছক্কা ও ৫ চারে মাত্র ৫৬ বলে অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংসে চার্লস কুমিল্লাকে অনায়াসে জয় এনে দেন, সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এ জয়ে ৬ জয়ে সমান ১২ পয়েন্ট নিয়ে বরিশালের পাশে বসলেও রান রেটে তৃতীয় কুমিল্লা।
কাল দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে স্পিন নির্ভর সিলেটের পিচ হয়ে গেল ব্যাটিং নির্ভর। তাই দুই দলের চার ব্যাটারের ব্যাটে চার-ছক্কার বৃষ্টি। তাদের বিধ্বংসী ইনিংস মিলে হলো বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ম্যাচ। এই ম্যাচে খুলনা ও কুমিল্লার দুই ইনিংস মিলিয়ে হলো ৪২৩ রান। এর আগে ২০১৯ সালে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ম্যাচে বিপিএলের সর্বোচ্চ ৪৬০ রান হয়েছিল। ম্যাচে প্রথম রানের উৎসবে মাতেন খুলনার দুই ব্যাটার। তামিম ইকবাল বিপিএলে নিজের
তৃতীয় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিরে যান ৪ ছক্কা ও ১১ চারে ৬১ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে। এদিকে শেই হোপও সেঞ্চুরির সুযোগ করে ৭ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৫ বলে ৯১ করে অপরাজিত থাকেন। ১৩ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর তামিম-হোপের জুটি দাঁড়ায় ১৮৪ রানের। বিপিএল ইতিহাসে যা চতুর্থ সেরা জুটি। অথচ এত অর্জন কুমিল্লা টপকে যায় জনসন চার্লসের ব্যাটে। তার সঙ্গে ১২২ রানের জুটিতে বিধ্বংসী ইনিংস ছিল মোহাম্মদ রিজওয়ানেরও। মাত্র ৩৯ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩ রান করেন পাকিস্তান ওপেনার। দুজনের বিশ্বংসী জুটিতে বিপিএলের সেরা রান তাড়ার রেকর্ড হয়।
প্রথম ম্যাচে তালিকার শীর্ষ দুই দলের একটি হওয়ার চ্যালেঞ্জে কাল ধাক্কা খেল ফরচুন বরিশাল। সাকিবদের হাতে আরও ৫ ম্যাচ আছে। এর মধ্যে দুটি জিতলেও শীর্ষ দুই নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবুও ঢাকার সঙ্গে বিগ বাজেটের দল বরিশালের হারটা যেন মানায় না। সাকিবের বিপিএল পারফরম্যান্স পড়ে যাওয়ার সঙ্গে দলটির ছন্দও যেন হারাল। আসরে এতদিন দারুণ ছন্দে ছিলেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। তবে সিলেটে গিয়ে ব্যাটে আর রান পাচ্ছেন না। আগের ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে তার ২ রান সত্ত্বেও দল জিতেছিল কিন্তু কাল রক্ষা হলো না, সাকিব করলেন ৫ আর দল হারল ঠিক ৫ উইকেটে।
আগে ব্যাট করে বরিশালের সাধারণ সংগ্রহ সত্ত্বেও ঢাকাকে সরাসরি বিজয়ী বলা যাচ্ছিল না ইনিংস বিরতিতে। গত চার ম্যাচে ১০৪, ১০৮ ও ১৪৭ করা ঢাকা বরিশালের সঙ্গে ১৫৭ ছুঁতে পারবে তো! চ্যালেঞ্জটা সহজ করে দেন ঢাকার দুই ওপেনার। ওপেনিংয়ে বদল এনে এ ম্যাচে দারুণ সফল হয়েছে দলটি। সৌম্য সরকারের সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুন আসরে এই প্রথম শুরুতে নামেন। আর ১০ ম্যাচে প্রথমবার ফিফটিও পেলেন। দুজনের ৭.৪ ওভারে ৭৪ রানের জুটি ঢাকাকে জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে দেয়। সৌম্য ২২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৭ রান করেন। মিঠুন এতদিন রান-ই পাচ্ছিলেন না। অথচ কাল প্রথম ১৮ বলে ১৮ রানের পর হাত খুলে মেরেছেন মিঠুন। তাই ৩ ছক্কা ও ৬ চারে ৩৬ বলে ৫৪ রান তার ব্যাটে। দলের জয়ে ভূমিকা রাখায় ম্যাচ সেরাও হয়েছেন।
বরিশালের ইনিংস মিডলঅর্ডার ব্যর্থ হওয়ায় উড়তে পারেনি। দলটির হয়ে নিয়মিত রান করা সাকিব ও ইফতিখার রান না পাওয়ায় বাকিরা অভাব মেটাতে ব্যর্থ। ওপেনিংয়ে এনামুল হক বিজয় ৩৫ বলে ৪২ আর নিচের দিকে মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৯ করেন। তবে করিম জানাত ৫ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৭ রানের ক্যামিও না খেললে বরিশালের স্কোর আরও কম হতো।
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত মিরপুর টেস্টে এক দর্শক মাঠে ঢুকে সাকিব আল হাসানের দিকে ছুট দেন। এক মাসের মধ্যে আরও দুবার ঘটল এমন ঘটনা। বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে ঢাকা-সিলেট ম্যাচে এক ভক্ত মাঠে ঢুকে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে জড়িয়ে ধরেন। সিলেটে কাল বরিশাল-ঢাকা ম্যাচের মধ্যে সাকিবকে জড়িয়ে ধরেন পাগলাটে এক দর্শক। ছবিও তোলেন। ক্রিকেটারদের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসার প্রতিফলন হলেও এতে আছে ভয়। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয় কান্ডগুলোতে।
চন্দিকা হাথুরুসিংহেই ফিরছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের পদে। এই শ্রীল ঙ্ক ান বিসিবি’র চাকরি ছেড়ে নিজ দেশের জাতীয় দলের কোচের চাকরিতে গিয়েছিলেন উচ্চ বেতনে। কিš ‘শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সে ঙ্গ তার বিচ্ছেদটা হয়েছে তি ক্ত, দেনা-পাওনা নিয়ে মামলা গড়িয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে। এরপর নিউ সাউথ ওয়েলসে দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ করে বাংলাদেশে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন হাথুরুসিংহে। তার আগমনবার্তায় সাকিব আল হাসান বলেছেন ‘নো কমেন্টস’। বিসিবি কর্তারা খুশি হলেও ক্রিকেটাররা যে খুব একটা স্বস্তিতে নেই সেটা সাকিবের কথাতেই স্পষ্ট।
আটঘাট বেঁধেই বাংলাদেশে আসছেন হাথুরুসিংহে, সেটা স্পষ্ট। কারণ এরই মধ্যে বিসিবি প্রথমবারের মতো হেড অব প্রোগ্রাম পদে কাউকে নিয়োগ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড মুর নিয়োগ পেয়েছেন এই পদে, যে পদের কাজ মূলত হাই পারফরম্যান্স ও বাংলাদেশ টাইগারস, এই দুই কর্মসূচি থেকে যেন জাতীয় দল সরাসরি উপকৃত হতে পারে সেটা দেখভাল করা। ক্রিকেট এনএসডাব্লিউতেই দীর্ঘকাল জেনারেল ম্যানেজার ক্রিকেট পারফরম্যান্স ও হেড কোচ ডেভেলপমেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন সাবেক এই উইকেটরক্ষক। ধারণা করা হচ্ছে হাথুরুসিংহের পরামর্শেই বিসিবি নিয়োগ দিয়েছে মুরকে। এই অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশে চলে এসেছেন, আজ সকালে বিসিবিতে তার উপস্থিত হওয়ার কথা।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের পরবর্তী সূচি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে ৩ টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। ইংল্যান্ড দল আসবে ২৪ ফেব্রুয়ারি, নাজমুলের কথা অনুযায়ী বলা যায় সাদা বলের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা বাংলাদেশে পা রাখার দিন পাঁচেক আগেই দেশে চলে আসবেন হাথুরুসিংহে, সিলেটে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হোসেনের কথায় মিলেছে তেমনই আভাস, ‘ফেব্রুয়ারির ১৮-২০ তারিখের ভেতরই নতুন কোচ এসে পড়বেন।’
ইংল্যান্ডের সবশেষ বাংলাদেশ সফরের সময় কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহেই, ৩ ওয়ানডের সিরিজটা হয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং ১-১ সমতার পর শেষ ওয়ানডে ৪ উইকেটে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। টেস্ট সিরিজেও প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের জয় ২২ রানে আর দ্বিতীয় টেস্টে ১০৮ রানে জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ।
২০১৪ থেকে ২০১৭, এই তিন বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহে। এই সময় বাংলাদেশে দেশের মাটিতে টেস্টে হারায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে। ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে আর আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে। তবে এমন সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচনাও ছিল তাকে ঘিরে। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেওয়া, শততম টেস্টের আগে মাহমুদউল্লাহকে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরত পাঠাতে চাওয়াসহ মুমিনুল হককে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্তগুলো তাকে অপ্রিয় করে তুলেছিল ড্রেসিং রুমে।
কাল ঢাকার বিপক্ষে বিপিএলের ম্যাচ শেষে বরিশালের হয়ে খেলা সাকিব আল হাসানের কাছে হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় অধ্যায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সাকিব বলেছেন ‘নো কমেন্টস’।
দুই বছরের জন্য হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তি বিসিবির, প্রথম বছরেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ। আছে ওয়ানডের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপও।
হাথুরুসিংহের পর দায়িত্ব নেওয়া স্টিভ রোডসের চাকরি যাওয়ার প্রধান কারণ তিনি ‘ভালো মানুষ’। ২০১৯ বিশ্বকাপের সময় খেলোয়াড়দের বেশি বেশি ছুটি দিয়েছিলেন, এমন অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে যদিও এই এখতিয়ার ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের। রাসেল ডমিঙ্গোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ড্রেসিংরুমে কর্র্তৃত্ব না থাকার, সেই সঙ্গে পারফরম্যান্সের পতন। যদিও দেশে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় ও দেশে ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারানোর কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন ডমিঙ্গো। তবে ডমিঙ্গো মূলত বোর্ড কর্তাদের বিরাগভাজন হয়েছেন বিতর্কিত সাক্ষাৎকার দিয়ে।
বাংলাদেশে দ্বিতীয় অধ্যায়ে হাথুরুসিংহে হয়তো অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিখেই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়, দল নির্বাচনে থাকবে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেই সঙ্গে দলের শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের বেলায় কঠোর অবস্থান নেবেন হাথুরুসিংহে। তাতে করে হয়তো বাংলাদেশের কোনো কোনো সিনিয়র ক্রিকেটারকে দলে জায়গা হারাতে হতে পারে, নাও খেলা হতে পারে বিশ্বকাপ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে ২৩-২২ পয়েন্টে টেকনো মিডিয়াকে হারিয়ে প্রথম কর্পোরেট নারী কাবাডা লিগ শিরোপা জিতেছে ঢাকা টুয়েলভ।
জাতীয় কাবাডি স্টেডিয়ামে ফাইনালের শুরুতে অবশ্য একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করতে দেখা যায় ঢাকা টুয়েলভকে। প্রথম সাত মিনিটে ১০-১ পয়েন্টে এগিয়ে যায় তারা। তবে বাকিটা সময় দারুণভাবে ফিরে আসে টেকনো মিডিয়া। তাতে প্রথমার্ধে দুদলের ব্যবধান দুইয়ে নেমে আসে। বিরতি শেষে ম্যাচের ভাগ্য দুলেছে দুদিকেই। জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক স্মৃতি আক্তার ও কচি রানী ম-লের নৈপুণ্যে ২৯ মিনিট পর্যন্ত খেলায় ছিল ২২-২২ সমতা। ম্যাচের ১১ সেকেন্ড বাকি থাকতে টেকনো মিডিয়ার সোমা রেইড দিয়ে ফেরার পথে পারসু করেন ঢাকা টুয়েলভের অধিনায়ক রেখা আক্তার। অসাধারণ নৈপুণ্যে জয়সূচক এক পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের কোর্টে ফিরলে শুরু হয়ে যায় বিজয়োৎসব। ফাইনাল শেষে রেখা বলেন, ‘ম্যাচের শেষ দিকে আমরা মনোযোগ ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমাদের মধ্যে কিছুটা হতাশাও কাজ করছিল। তবে আল্লাহ সহায় ছিল বলে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতে শেষ রেইড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
ফেডারেশন কাপে গ্রুপ সেরা হতে মোহামেডানের প্রয়োজন ছিল এক পয়েন্ট। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে শেখ জামালের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে সেই প্রয়োজনটা মিটিয়েছে সাদা-কালোরা। আর ড্র করেও গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে শেখ জামাল। দিনের অপর ম্যাচে রহমতগঞ্জ ২-১ গোলে তলানির আজমপুর এফসি উত্তরাকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্স-আপ হয়েছে।
২৮ মিনিটে অসাধারণ গোলে মোহামেডানকে লিড এনে দেন আরিফ হোসেন। বাঁ-দিকে আক্রমণে উঠে মার্কারকে পরাস্ত করে বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে কাছের পোস্টে বল জমা দেন এই তরুণ ফরোয়ার্ড। শেখ জামাল কিপার রাসেল মাহমুদ লিটনও কাছে পোস্টে অবস্থা নিয়েও পারেননি আরিফকে রুখতে। পিছিয়ে পড়ে খোলসমুক্ত হয়ে খেলতে দেখা যায় শেখ জামালের আক্রমণভাগকে। ৪৪ মিনিটে ফল পায় দলটি। বক্সের বাইরে বল বুক দিয়ে নামিয়ে তিন ডিফেন্ডারের সামনে থেকে জোরালো শটে বল জালে জমা দেন স্টুয়ার্ট কর্নেলিয়াস। ৭১ মিনিটে আসিফের বুদ্ধিদীপ্ত গোলে ফের এগিয়ে যায় মোহামেডান। বল ক্লিয়ার করতে পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে এসেছিলেন জামাল কিপার লিটন। তবে তার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যান আসিফ। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠান আসিফ। ৭৬ মিনিটে কিপার সুজনের ভুলে গোল হজম করতে হয় মোহামেডানকে। সোলাইমান সিল্লাহ দুর্বল শট আয়ত্তের মধ্যে থাকলেও রুখতে পারেননি সুজন। বল জালে জড়ালে নিশ্চিত হয় জামালের কোয়ার্টার ফাইনাল।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।