
ফেডারেশন কাপে গ্রুপ সেরা হতে মোহামেডানের প্রয়োজন ছিল এক পয়েন্ট। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে শেখ জামালের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে সেই প্রয়োজনটা মিটিয়েছে সাদা-কালোরা। আর ড্র করেও গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে শেখ জামাল। দিনের অপর ম্যাচে রহমতগঞ্জ ২-১ গোলে তলানির আজমপুর এফসি উত্তরাকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্স-আপ হয়েছে।
২৮ মিনিটে অসাধারণ গোলে মোহামেডানকে লিড এনে দেন আরিফ হোসেন। বাঁ-দিকে আক্রমণে উঠে মার্কারকে পরাস্ত করে বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে কাছের পোস্টে বল জমা দেন এই তরুণ ফরোয়ার্ড। শেখ জামাল কিপার রাসেল মাহমুদ লিটনও কাছে পোস্টে অবস্থা নিয়েও পারেননি আরিফকে রুখতে। পিছিয়ে পড়ে খোলসমুক্ত হয়ে খেলতে দেখা যায় শেখ জামালের আক্রমণভাগকে। ৪৪ মিনিটে ফল পায় দলটি। বক্সের বাইরে বল বুক দিয়ে নামিয়ে তিন ডিফেন্ডারের সামনে থেকে জোরালো শটে বল জালে জমা দেন স্টুয়ার্ট কর্নেলিয়াস। ৭১ মিনিটে আসিফের বুদ্ধিদীপ্ত গোলে ফের এগিয়ে যায় মোহামেডান। বল ক্লিয়ার করতে পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে এসেছিলেন জামাল কিপার লিটন। তবে তার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যান আসিফ। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠান আসিফ। ৭৬ মিনিটে কিপার সুজনের ভুলে গোল হজম করতে হয় মোহামেডানকে। সোলাইমান সিল্লাহ দুর্বল শট আয়ত্তের মধ্যে থাকলেও রুখতে পারেননি সুজন। বল জালে জড়ালে নিশ্চিত হয় জামালের কোয়ার্টার ফাইনাল।
রানের খেলা ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য এক দিন কাটল কাল। দুই দলের চার ব্যাটারের লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও খুলনা টাইগার্স ম্যাচ হয়ে উঠল দারুণ উপভোগ্য। রান উৎসবের ম্যাচে বিপিএলের ইতিহাসে সেরা রান তাড়ার রেকর্ড হলো তাতে। এই গৌরব নিয়ে খুলনাকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারাল কুমিল্লা। দলটির উইন্ডিজ ব্যাটার জনসন চার্লসের বিধ্বংসী সেঞ্চুরির কাছে ম্লান খুলনার তামিম ইকবাল ও শেই হোপের নব্বই ছাড়ানো ইনিংস। তাদের ব্যাটে ২ উইকেটে ২১০ করেছিল খুলনা। অথচ ১১ ছক্কা ও ৫ চারে মাত্র ৫৬ বলে অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংসে চার্লস কুমিল্লাকে অনায়াসে জয় এনে দেন, সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এ জয়ে ৬ জয়ে সমান ১২ পয়েন্ট নিয়ে বরিশালের পাশে বসলেও রান রেটে তৃতীয় কুমিল্লা।
কাল দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে স্পিন নির্ভর সিলেটের পিচ হয়ে গেল ব্যাটিং নির্ভর। তাই দুই দলের চার ব্যাটারের ব্যাটে চার-ছক্কার বৃষ্টি। তাদের বিধ্বংসী ইনিংস মিলে হলো বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ম্যাচ। এই ম্যাচে খুলনা ও কুমিল্লার দুই ইনিংস মিলিয়ে হলো ৪২৩ রান। এর আগে ২০১৯ সালে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ম্যাচে বিপিএলের সর্বোচ্চ ৪৬০ রান হয়েছিল। ম্যাচে প্রথম রানের উৎসবে মাতেন খুলনার দুই ব্যাটার। তামিম ইকবাল বিপিএলে নিজের
তৃতীয় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিরে যান ৪ ছক্কা ও ১১ চারে ৬১ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে। এদিকে শেই হোপও সেঞ্চুরির সুযোগ করে ৭ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৫ বলে ৯১ করে অপরাজিত থাকেন। ১৩ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর তামিম-হোপের জুটি দাঁড়ায় ১৮৪ রানের। বিপিএল ইতিহাসে যা চতুর্থ সেরা জুটি। অথচ এত অর্জন কুমিল্লা টপকে যায় জনসন চার্লসের ব্যাটে। তার সঙ্গে ১২২ রানের জুটিতে বিধ্বংসী ইনিংস ছিল মোহাম্মদ রিজওয়ানেরও। মাত্র ৩৯ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩ রান করেন পাকিস্তান ওপেনার। দুজনের বিশ্বংসী জুটিতে বিপিএলের সেরা রান তাড়ার রেকর্ড হয়।
প্রথম ম্যাচে তালিকার শীর্ষ দুই দলের একটি হওয়ার চ্যালেঞ্জে কাল ধাক্কা খেল ফরচুন বরিশাল। সাকিবদের হাতে আরও ৫ ম্যাচ আছে। এর মধ্যে দুটি জিতলেও শীর্ষ দুই নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবুও ঢাকার সঙ্গে বিগ বাজেটের দল বরিশালের হারটা যেন মানায় না। সাকিবের বিপিএল পারফরম্যান্স পড়ে যাওয়ার সঙ্গে দলটির ছন্দও যেন হারাল। আসরে এতদিন দারুণ ছন্দে ছিলেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। তবে সিলেটে গিয়ে ব্যাটে আর রান পাচ্ছেন না। আগের ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে তার ২ রান সত্ত্বেও দল জিতেছিল কিন্তু কাল রক্ষা হলো না, সাকিব করলেন ৫ আর দল হারল ঠিক ৫ উইকেটে।
আগে ব্যাট করে বরিশালের সাধারণ সংগ্রহ সত্ত্বেও ঢাকাকে সরাসরি বিজয়ী বলা যাচ্ছিল না ইনিংস বিরতিতে। গত চার ম্যাচে ১০৪, ১০৮ ও ১৪৭ করা ঢাকা বরিশালের সঙ্গে ১৫৭ ছুঁতে পারবে তো! চ্যালেঞ্জটা সহজ করে দেন ঢাকার দুই ওপেনার। ওপেনিংয়ে বদল এনে এ ম্যাচে দারুণ সফল হয়েছে দলটি। সৌম্য সরকারের সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুন আসরে এই প্রথম শুরুতে নামেন। আর ১০ ম্যাচে প্রথমবার ফিফটিও পেলেন। দুজনের ৭.৪ ওভারে ৭৪ রানের জুটি ঢাকাকে জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে দেয়। সৌম্য ২২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৭ রান করেন। মিঠুন এতদিন রান-ই পাচ্ছিলেন না। অথচ কাল প্রথম ১৮ বলে ১৮ রানের পর হাত খুলে মেরেছেন মিঠুন। তাই ৩ ছক্কা ও ৬ চারে ৩৬ বলে ৫৪ রান তার ব্যাটে। দলের জয়ে ভূমিকা রাখায় ম্যাচ সেরাও হয়েছেন।
বরিশালের ইনিংস মিডলঅর্ডার ব্যর্থ হওয়ায় উড়তে পারেনি। দলটির হয়ে নিয়মিত রান করা সাকিব ও ইফতিখার রান না পাওয়ায় বাকিরা অভাব মেটাতে ব্যর্থ। ওপেনিংয়ে এনামুল হক বিজয় ৩৫ বলে ৪২ আর নিচের দিকে মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৯ করেন। তবে করিম জানাত ৫ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৭ রানের ক্যামিও না খেললে বরিশালের স্কোর আরও কম হতো।
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত মিরপুর টেস্টে এক দর্শক মাঠে ঢুকে সাকিব আল হাসানের দিকে ছুট দেন। এক মাসের মধ্যে আরও দুবার ঘটল এমন ঘটনা। বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে ঢাকা-সিলেট ম্যাচে এক ভক্ত মাঠে ঢুকে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে জড়িয়ে ধরেন। সিলেটে কাল বরিশাল-ঢাকা ম্যাচের মধ্যে সাকিবকে জড়িয়ে ধরেন পাগলাটে এক দর্শক। ছবিও তোলেন। ক্রিকেটারদের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসার প্রতিফলন হলেও এতে আছে ভয়। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয় কান্ডগুলোতে।
চন্দিকা হাথুরুসিংহেই ফিরছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের পদে। এই শ্রীল ঙ্ক ান বিসিবি’র চাকরি ছেড়ে নিজ দেশের জাতীয় দলের কোচের চাকরিতে গিয়েছিলেন উচ্চ বেতনে। কিš ‘শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সে ঙ্গ তার বিচ্ছেদটা হয়েছে তি ক্ত, দেনা-পাওনা নিয়ে মামলা গড়িয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে। এরপর নিউ সাউথ ওয়েলসে দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ করে বাংলাদেশে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন হাথুরুসিংহে। তার আগমনবার্তায় সাকিব আল হাসান বলেছেন ‘নো কমেন্টস’। বিসিবি কর্তারা খুশি হলেও ক্রিকেটাররা যে খুব একটা স্বস্তিতে নেই সেটা সাকিবের কথাতেই স্পষ্ট।
আটঘাট বেঁধেই বাংলাদেশে আসছেন হাথুরুসিংহে, সেটা স্পষ্ট। কারণ এরই মধ্যে বিসিবি প্রথমবারের মতো হেড অব প্রোগ্রাম পদে কাউকে নিয়োগ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড মুর নিয়োগ পেয়েছেন এই পদে, যে পদের কাজ মূলত হাই পারফরম্যান্স ও বাংলাদেশ টাইগারস, এই দুই কর্মসূচি থেকে যেন জাতীয় দল সরাসরি উপকৃত হতে পারে সেটা দেখভাল করা। ক্রিকেট এনএসডাব্লিউতেই দীর্ঘকাল জেনারেল ম্যানেজার ক্রিকেট পারফরম্যান্স ও হেড কোচ ডেভেলপমেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন সাবেক এই উইকেটরক্ষক। ধারণা করা হচ্ছে হাথুরুসিংহের পরামর্শেই বিসিবি নিয়োগ দিয়েছে মুরকে। এই অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশে চলে এসেছেন, আজ সকালে বিসিবিতে তার উপস্থিত হওয়ার কথা।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের পরবর্তী সূচি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে ৩ টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। ইংল্যান্ড দল আসবে ২৪ ফেব্রুয়ারি, নাজমুলের কথা অনুযায়ী বলা যায় সাদা বলের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা বাংলাদেশে পা রাখার দিন পাঁচেক আগেই দেশে চলে আসবেন হাথুরুসিংহে, সিলেটে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হোসেনের কথায় মিলেছে তেমনই আভাস, ‘ফেব্রুয়ারির ১৮-২০ তারিখের ভেতরই নতুন কোচ এসে পড়বেন।’
ইংল্যান্ডের সবশেষ বাংলাদেশ সফরের সময় কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহেই, ৩ ওয়ানডের সিরিজটা হয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং ১-১ সমতার পর শেষ ওয়ানডে ৪ উইকেটে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। টেস্ট সিরিজেও প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের জয় ২২ রানে আর দ্বিতীয় টেস্টে ১০৮ রানে জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ।
২০১৪ থেকে ২০১৭, এই তিন বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহে। এই সময় বাংলাদেশে দেশের মাটিতে টেস্টে হারায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে। ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে আর আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে। তবে এমন সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচনাও ছিল তাকে ঘিরে। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেওয়া, শততম টেস্টের আগে মাহমুদউল্লাহকে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরত পাঠাতে চাওয়াসহ মুমিনুল হককে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্তগুলো তাকে অপ্রিয় করে তুলেছিল ড্রেসিং রুমে।
কাল ঢাকার বিপক্ষে বিপিএলের ম্যাচ শেষে বরিশালের হয়ে খেলা সাকিব আল হাসানের কাছে হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় অধ্যায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সাকিব বলেছেন ‘নো কমেন্টস’।
দুই বছরের জন্য হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তি বিসিবির, প্রথম বছরেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ। আছে ওয়ানডের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপও।
হাথুরুসিংহের পর দায়িত্ব নেওয়া স্টিভ রোডসের চাকরি যাওয়ার প্রধান কারণ তিনি ‘ভালো মানুষ’। ২০১৯ বিশ্বকাপের সময় খেলোয়াড়দের বেশি বেশি ছুটি দিয়েছিলেন, এমন অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে যদিও এই এখতিয়ার ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের। রাসেল ডমিঙ্গোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ড্রেসিংরুমে কর্র্তৃত্ব না থাকার, সেই সঙ্গে পারফরম্যান্সের পতন। যদিও দেশে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় ও দেশে ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারানোর কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন ডমিঙ্গো। তবে ডমিঙ্গো মূলত বোর্ড কর্তাদের বিরাগভাজন হয়েছেন বিতর্কিত সাক্ষাৎকার দিয়ে।
বাংলাদেশে দ্বিতীয় অধ্যায়ে হাথুরুসিংহে হয়তো অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিখেই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়, দল নির্বাচনে থাকবে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেই সঙ্গে দলের শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের বেলায় কঠোর অবস্থান নেবেন হাথুরুসিংহে। তাতে করে হয়তো বাংলাদেশের কোনো কোনো সিনিয়র ক্রিকেটারকে দলে জায়গা হারাতে হতে পারে, নাও খেলা হতে পারে বিশ্বকাপ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে ২৩-২২ পয়েন্টে টেকনো মিডিয়াকে হারিয়ে প্রথম কর্পোরেট নারী কাবাডা লিগ শিরোপা জিতেছে ঢাকা টুয়েলভ।
জাতীয় কাবাডি স্টেডিয়ামে ফাইনালের শুরুতে অবশ্য একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করতে দেখা যায় ঢাকা টুয়েলভকে। প্রথম সাত মিনিটে ১০-১ পয়েন্টে এগিয়ে যায় তারা। তবে বাকিটা সময় দারুণভাবে ফিরে আসে টেকনো মিডিয়া। তাতে প্রথমার্ধে দুদলের ব্যবধান দুইয়ে নেমে আসে। বিরতি শেষে ম্যাচের ভাগ্য দুলেছে দুদিকেই। জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক স্মৃতি আক্তার ও কচি রানী ম-লের নৈপুণ্যে ২৯ মিনিট পর্যন্ত খেলায় ছিল ২২-২২ সমতা। ম্যাচের ১১ সেকেন্ড বাকি থাকতে টেকনো মিডিয়ার সোমা রেইড দিয়ে ফেরার পথে পারসু করেন ঢাকা টুয়েলভের অধিনায়ক রেখা আক্তার। অসাধারণ নৈপুণ্যে জয়সূচক এক পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের কোর্টে ফিরলে শুরু হয়ে যায় বিজয়োৎসব। ফাইনাল শেষে রেখা বলেন, ‘ম্যাচের শেষ দিকে আমরা মনোযোগ ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমাদের মধ্যে কিছুটা হতাশাও কাজ করছিল। তবে আল্লাহ সহায় ছিল বলে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতে শেষ রেইড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
লিওনেল মেসি গত ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে উঁচিয়ে ধরেছেন বিশ্বকাপ ট্রফি। বিশ্বকাপ জয়ের পর এক মাসেরও বেশি সময় পর আর্জেন্টাইন অধিনায়ক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দেশটির রেডিও চ্যানেল ‘উরবানা প্লে’-তে। সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ জয়ের পর কেমন লেগেছে, বিশ্বকাপে কঠিন সময় ছিল কোনটি, ডাচ কোচ ফন ডাইকের সামনে উদযাপনসহ নানা বিষয় নিয়ে। এ সময় ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেও স্মরণ করেন মেসি। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ প্রসঙ্গে
আগেও এটা নিয়ে কথা বলেছি। মনে হয় ২০১৪ সালের আগে। বলেছিলাম, সৃষ্টিকর্তা আমাকে বিশ্বকাপ উপহার দেবেন। এরপর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা জিতলাম। তারপর (বিশ্বকাপ জয়) মুহূর্তটার দেখা পেলাম। আমি জানতাম তিনি আমাকে এটা উপহার দেবেন। এটা কীভাবে টের পেয়েছি, বুঝিয়ে বলতে পারব না। জীবনে যা অর্জন করেছি, তার জন্য প্রতিদিনই তাকে ধন্যবাদ জানাই। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতাম না। যা কিছু অর্জন করেছি, সে জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন সময়
সৌদি আরবের সঙ্গে হারটা সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল। তবে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল সবচেয়ে কঠিন। ফলাফল পক্ষে এলেও ওই ম্যাচটা আমরা সবচেয়ে বাজে খেলেছি। তবে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এই দলটা না পেলে ম্যাচটা বের করে আনা কঠিন হতো।
ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে
ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত থেকে বিশ্বকাপ ট্রফিটা পেলে খুশি হতাম। তিনি আর্জেন্টিনার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখে যেতেন, জাতীয় দল নিয়ে তার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ট্রফিটা তার হাত থেকে নিতে পারলে দারুণ একটা ছবি হতো! ডিয়েগো ছাড়াও ওপর থেকে আরও যারা আমাদের ভালোবাসে, তাদের ভালোবাসা আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।
ফন গাল এর সামনে উদযাপন এবং ভেহর্স্ট প্রসঙ্গে
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ফন গাল কী বলেছিলেন তা আমার সতীর্থরা জানিয়েছেন। সেই ঘটনাটি (গোল উদযাপন) সেই কারণে আসলে ঘটে গেছে। আমি আসলে ওই ছবিটা মনে রাখতে চাই না, কিন্তু সেটা সহজাতভাবেই চলে এসেছিল। যা আমি করেছি, তা কোনোভাবেই নিজে থেকে পছন্দ করি না। আমি মিক্সড জোনে ছিলাম এবং ম্যাচ মাত্রই শেষ হয়েছিল। এমন ম্যাচে চিন্তায় ছিলাম পরে অনেক নার্ভাস ছিলাম ওই সময়। তাই এমনটি হয়ে গিয়েছিল।
টাইব্রেকারে মন্তিয়েলের শেষ শট
তখন কেমন লেগেছে, তা বোঝানো কঠিন। অনেক কিছুই মাথায় আসছিল। জয়টা বিশ্বাস হচ্ছিল না। সবাই বলছিল, সবকিছু শেষ হয়েছে। আর আমি ভাবছিলাম, শেষ পর্যন্ত একদম শেষ দিকে এসে জাতীয় দলের হয়ে সবকিছু জিততে পারলাম! কখনো কল্পনা করিনি সবকিছু এভাবে হবে।
বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু দেওয়া বিষয়ে
ট্রফিটা (মঞ্চে) রাখা ছিল। যা করতে ইচ্ছা হচ্ছিল, তা পারছিলাম না। ট্রফিটা যেন আমাকে ডাকছিল ‘এসো, আমাকে নিয়ে যাও। এখন তুমি আমাকে ছুঁতে পারো।’ তাই যাওয়ার সময় ট্রফিটায় চুমু খাই, ইচ্ছে করছিল।
বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাত যেভাবে কেটেছে
বিশ্বকাপজুড়ে যা করেছি, সেটাই। আন্তোনিলার সঙ্গে গল্প করেছি। তবে খেলা নিয়ে তেমন কথা বলিনি। প্রতিটি ম্যাচের আগে যা করতাম, সেটাই মেনেছি। নতুন কিছু নয়, একই কাজ করেছি। ঘুমটা ভালো হয়েছিল। বিশ্বকাপজুড়েই ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম।
রোজারিওতে উৎসব
বিশ্বকাপ জিতে সেখানে ফিরতে পারার অনুভূতিটা খুব সুন্দর ছিল। আমি মাত্র এক-দুই ঘণ্টা ঘুমাতে পারি। ভোর ৫-৬ টার মধ্যেই লোকজন বুয়েন্স আইয়ার্সে অবিলিস্কে ভিড় জমাতে শুরু করে। বুঝতে পেরেছিলাম উদ্যাপনটা পাগলাটে হবে। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিল, তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে
বিশ্বকাপ জয়ের পর এত এত মেসেজ এসেছে যে, কিছুদিনের জন্য আমার ইন্সটাগ্রাম ব্লক করে দিয়েছিল।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেসি ছোটবেলার (বার্সার) মেসিকে যা বলবেন
আমি বলব, অসাধারণ কিছু অপেক্ষা করছে। এমন কিছু, যা সে ভাবতেও পারেনি। তোমার চলার পথটা সুন্দর হবে, কঠিন সময় আসবে, যা তাকে অতিক্রম করতে হবে। স্বপ্ন দেখায় কখনো হাল ছেড় না। কারণ, শেষ পর্যন্ত সে নিজের প্রাপ্য পুরস্কারটি পাবে এবং সবকিছু ভালোভাবে শেষ হবে, যেন একটা সিনেমা।
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।