
আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো হবে মে মাসে, ইংল্যান্ডের এসেক্স কাউন্টি ভেন্যু চেমসফোর্ডে। নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক জালাল ইউনুস। মে মাসে বৃষ্টিবহুল আবহাওয়ার কারণে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড সিরিজটি আয়োজন করতে চাইছিল ইংল্যান্ডে। কারণ বাংলাদেশকে ৩-০তে হারাতে পারলে আয়ারল্যান্ডের সরাসরি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা সম্ভব। আর ঘরের মাঠে বৃষ্টিতে কোনো ম্যাচ যাতে প- না হয়, তা নিশ্চিতেই ম্যাচগুলো ইংল্যান্ডে আয়োজনের ভাবনা আয়ারল্যান্ডের। বিসিবিও সায় দিয়েছে এতে, তাই চেমসফোর্ডে ৯, ১২ ও ১৪ মে হবে ওয়ানডেগুলো। ৭ তারিখে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে বাংলাদেশ। করোনার কারণে সিরিজটা আগে খেলা সম্ভব হয়নি।
পরপর তিনটি বাংলাদেশ-নেপাল ফাইনাল। একটায় বাংলাদেশের জয়। আরেকবার নেপালের। তৃতীয় ফাইনালের মঞ্চটা হবে কার? এই প্রশ্নের জবাব মিলবে আজ। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে এই দুই দেশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে সাবিনা-কৃষ্ণারা। সেই হারের প্রতিশোধ দুমাস পর ঢাকায় নিয়েছে নেপালের অনূর্ধ্ব-১৫ মেয়েরা। তিন দলের আসরে সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট পেয়ে প্রথমবারের মতো সাফের কোনো আসরের শিরোপা জিতে নেয় নেপাল। সাম্প্রতিককালে মুখোমুখি লড়াইয়ে আজ তাই এগিয়ে যাওয়ার হাতছানি দুদলের সামনেই।
সাফের বয়সভিত্তিক আসরগুলোতে প্রথম থেকেই আধিপত্য দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে শুরু। এ পর্যন্ত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বয়স শ্রেণিতে মোট সাতটি আসর আয়োজন করেছে। যার তিনটিতে বাংলাদেশের মেয়েরা শিরোপা জিতে নেয়। বাকি চারবার রানার্স-আপ। ২০১৮ সালে নেপালকে অনূর্ধ্ব-১৮ আসরের ফাইনালে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যানেও আজ দুদলের এগিয়ে যাওয়ার দিন। বড় কোনো অঘটন না ঘটলে সাত পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে থেকে ফাইনালে আসা বাংলাদেশের সম্ভাবনাই আজ বেশি। লিগপর্বে নেপালকে স্বাগতিকরা হারিয়েছিল ৩-১ ব্যবধানে। তবে আজ নেপালকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। দলটি আসরের অন্যতম ফেভারিট ভারতকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে উঠে এসেছে ফাইনালে। তাই তো ছোটনের কথায় নেপালের প্রতি সমীহ স্পষ্ট, ‘ফাইনাল খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও রোমাঞ্চকর ম্যাচ হবে। আশা করি, দর্শকরা উপভোগ করতে পারবে। অবশ্যই নেপাল ভালো দল। গতকাল (মঙ্গলবার) ভারতের বিপক্ষে ওরা জিতেছে। ভারত খুবই শক্তিশালী দল। আমি মনে করি, আগামীকাল (আজ) খুবই ভালো ম্যাচ হবে। ভিন্ন একটি ম্যাচ হবে। নেপাল আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবে।’
আসর শুরুর আগে ফাইনাল খেলার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন ছোটন। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এবার রাতটা নিজেদের করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটা স্বাভাবিক ফুটবল খেলে উতরে যাওয়ার প্রত্যাশা ছোটনের, ‘আমাদের যে লক্ষ্য ছিল মেয়েরা সেটা পূরণ করেছে। আমরা শীর্ষ দল হিসেবে ফাইনালে উঠেছি। আরেকটা ম্যাচ বাকি আছে। যেহেতু ফাইনালে উঠেছি, আমাদের লক্ষ্য বিগত দিনে মেয়েরা কমলাপুরে যে ফুটবল উপহার দিয়েছে, সেটা অব্যাহত রাখবে এবং আমরা ফাইনাল জয়ের জন্যই মাঠে নামব।’ গত বছর ভারতের জামশেদপুরের অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ আসরে নেপালকে গ্রুপপর্বে দুবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। ছোটনের চাওয়া ধারাটা বজায় থাকুক আজও, ‘নেপালের সঙ্গে আমরা খেলেছি। ওদের খেলাও দেখেছি। ওদের শক্তি-সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছি। আমরা আমাদের স্বাভাবিক আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলব।’
ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকে সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শামসুন্নাহার। খেলা চলাবস্থায় একটা সময় ভুটানের খেলোয়াড়রা তাকে এসে অনুরোধ করেছিল আর বেশি গোল না করার। সে কথা কাল সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার দশা তার, ‘একটা সময় ভুটানের বেশ ক’জন ফুটবলার আমার কাছে এসে বলে পানি খাও, আর গোল দিয়ো না (হাসি)। অনেকে বলেছে তোমার খেলার ফ্যান হয়ে গেলাম। আবার খেলা শেষে সবাই আমাকে ঘিরে ছবিও তুলেছিল।’ আজকের ফাইনাল নিয়ে এই ফরোয়ার্ড প্রত্যয়ী কণ্ঠে বলেন, ‘ফাইনালের লক্ষ্য পূরণের পর চেষ্টা থাকবে ঘরের মাঠে ট্রফি রেখে দেওয়ার। প্রথম ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই খেলব। খেলার মধ্যে আসা সুযোগগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’ চার গোলে আসরের সেরা গোলদাতা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ শামসুন্নাহারের সামনে। তবে এ নিয়ে একদমই ভাবছেন না অধিনায়ক, ‘দল সবার আগে। আমি চেষ্টা করব দল যেন জয় পায়। গোলের সুযোগ আমার বেলায় যদি ৫০ শতাংশ থাকে, আর অন্যের যদি ৭০ শতাংশ থাকে, তাহলে আমি তাকে দিয়েই গোল করানোর চেষ্টা করব। কারণ এখানে দলের ফল আগে।’
ভারতের বিপক্ষে জয়টাই বদলে দিয়েছে নেপালের মানসিকতা। শিরোপা জয়টা তাই তাদের কাছে অসম্ভব স্বপ্ন নয়। কোচ ইয়াম প্রসাদ গুরং বাংলাদেশকে খেলা দিয়েই চমকে দেওয়ার কথাও বলেছেন, ‘আশা করি আমরা প্রতিশোধ নিতে পারব এবং আমরা জিতব। মাঠ, দর্শক এবং অন্যান্য দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। আমরা ভিন্ন কৌশলে খেলব। সবকিছু বদলাবে। আমরা বাংলাদেশের দুর্বল দিক জানি এবং তাদের সেই দুর্বল দিক আমাদের জন্য সুবিধার।’ ভারতের বিপক্ষে প্রথমে পিছিয়ে পড়ে ৩-১ গোলে জিতেছিল নেপাল। সেই ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য ছিল অধিনায়ক প্রীতি রায়ের। নেপাল সিনিয়র দলের এই সদস্য বলেন, ‘ফাইনালে উঠতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি বিশ্বাস করি আমরা ট্রফি পাওয়ার যোগ্য।’
আজ সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচেই বোঝা যাবে রাতটা হবে কার।
আর মাত্র একটা ম্যাচ জিতলেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে খেলবে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ২০১২ সালে মাঠে গড়ায় বিপিএল, এবারে চলছে নবম আসর। সিলেট বিভাগের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি এখন পর্যন্ত ফাইনালে খেলতে পারেনি, সেরা সাফল্য ২০১৩ সালে সিলেট রয়্যালসের কোয়ালিফায়ার খেলা। কাল খুলনা টাইগার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ১২ ম্যাচে ৯ জয়ে পাওয়া ১৮ পয়েন্টে সিলেট সবার ওপরে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পক্ষে পয়েন্টে সিলেটকে ছুঁয়ে ফেলা এবং রান রেটে ছাড়িয়ে যাওয়াটা গাণিতিকভাবে সম্ভব, তাতে সিলেট নামবে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে। তাতেও অবশ্য সিলেটের প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলাটা আটকাবে না।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার হাত ধরে যেন পুনর্জীবন পেয়েছে বিপিএলের গত কয়েক আসরে ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে ওঠা সিলেট দল। সিক্সার্স, থান্ডার্স, সানরাইজার্স, সুপার স্টারস...কত নামেই তো বিপিএলে আবির্ভূত হয়েছে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশের দলটি। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেটের কৃতী সন্তান আবুল মাল আব্দুল মুহিতের স্নেহদৃষ্টিও ছিল একটা সময়। তবুও মাঠের পারফরম্যান্স ছিল তলানিতে। এবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফিউচার স্পোর্টস গ্রুপের মালিকানা আর মাশরাফীর যোগ্য নেতৃত্বে সিলেট শীর্ষ দল হিসেবেই সবার আগে নিশ্চিত করে প্লে-অফ পর্ব। আগের ম্যাচটা রংপুর রাইডার্সের কাছে হেরে যাওয়াতে প্রথম কোয়ালিফায়ারে জায়গাটা নিশ্চিত করার জন্য খুলনার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচে অধিনায়কের ভূমিকায় ফেরেন মাশরাফী, যদিও চোটের শঙ্কা থাকায় বোলিং করেননি। দল ৬ উইকেটে জেতায় ব্যাট করতে নামারও প্রয়োজন পড়েনি। টসটা করতে গিয়ে অবশ্য হেরেছেন মাশরাফী।
খুলনার তামিম ইকবাল নেই, প্রায় তিন সপ্তাহ পর একাদশে ফিরেছিলেন মুনিম শাহরিয়ার। সবশেষ ম্যাচে ছিল শূন্য, ফেরার দিনে করেছেন ৩। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি একবার জাকির হাসানের কল্যাণে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েও আউট হয়েছেন মাত্র ৭ রান করে। অধিনায়ক শেই হোপ করেন ৯ রান। খুলনার খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেই ছিল অনিচ্ছার ছাপ, কারণ এরপর আরও একটা ম্যাচ থাকলেও কোনো আশাই যে নেই তাদের। মাহমুদুল হাসান জয়ের ৪১ আর নাহিদুল ইসলামের ২২ রানে ৮ উইকেটে ১১৩ রান করতে পারে খুলনা। আগের ম্যাচে মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমের বোলিংটা না থাকায় ১৭০ রানের বেশি করেও রংপুরের কাছে হেরেছিল সিলেট। এই ম্যাচে পাকিস্তানের দুজন ফিরে এসেছেন, তবে এই ম্যাচের পরই আবার বিদায় নেবেন পিএসএল খেলতে। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ১ উইকেট আমিরের আর ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে জোড়া শিকার ইমাদের
সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় এক আর দুইয়ে তৌহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। হারের বৃত্তে পাক খাওয়া তলানির দল খুলনার বিপক্ষে দুজনেই ব্যর্থ। হৃদয় ৫ ও শান্ত ৩ রানেই আউট। সুযোগটা লুফে নিয়েছেন সিলেটের ছেলে জাকির হাসান। টেস্ট অভিষেকে শতরান করা জাকিরের এটা আসরে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি, দুটোই খুলনার বিপক্ষে।
তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে নিহতদের স্মৃতিতে ১ মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ম্যাচ। যেখানে খুলনার ব্যাটিংটাও ছিল ভূমিকম্পের মতোই থরহরি কম্প। রান তাড়ায় সিলেট শুরুতে কাঁপলেও জাকিরের হাফসেঞ্চুরি আর মুশফিকের ৩৯ রানে জয়ের পথেই ছিল সিলেট। শেষে রায়ান বার্ল এর ১২* রান গুলবদিন নাইবের ২* রানে ১৭.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১১৪ রান করে জয়ের দেখা পায় সিলেট।
২০১৩ মৌসুমের এক দশক পর সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি প্লে-অফে। সেবার মাশরাফীর ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কাছে প্রথম কোয়ালিফায়ার (সেমিফাইনাল) ৪ রানে হেরে যায় মুশফিকের সিলেট। এরপর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চিটাগং কিংসের কাছে হেরে ফাইনালে খেলা হয়নি সিলেটের। এবার অবশ্য সিলেটে জোট বেঁধেছেন মাশরাফী আর মুশফিক। বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক বিপিএলেও অধিনায়ক হিসেবে সফলতম। অন্যদিকে মুশফিক সাতবারের চেষ্টায় একবার ফাইনালে খেলেছেন, তবে জিততে পারেননি।
আর মাত্র একটা ম্যাচ জিতলেই ফাইনালে সিলেট, প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারলেও সুযোগ আছে দ্বিতীয়টায় জিতে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার। প্রথম ফাইনাল হাতছানি দিয়ে ডাকছে সিলেটকে, সেই সঙ্গে পঞ্চম বিপিএল শিরোপাও ডাকছে মাশরাফীকে।
অস্ট্রেলিয়ানরা সাধারণত এমন অভ্যাসে অভ্যস্ত না। টেস্ট ম্যাচের আগেরদিনই একাদশ ঘোষণা করে তৈরি থাকে তারা। ওদিকে ভারতও এক-দুটো জায়গা বাদে ইদানীং টেস্ট একাদশ প্রায় ঠিক-ই রাখে। কিন্তু বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি মাঠে গড়ানোর আগে দুই দল একাদশ নিয়ে দারুণ লুকোচুরিতে ব্যস্ত। অস্ট্রেলিয়া এখনো তিনটি জায়গা নিয়ে সংশয়ে। ভারত আরও বেশি, একাদশে পাঁচটি জায়গায় ক্রিকেটার নিশ্চিত হয়নি তাদের। দল নিয়ে তো লুকোচুরি হচ্ছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রথম টেস্টের ভেন্যু নাগপুরের পিচ। দুই দিন আগে থেকেই পিচটিকে চিরাচরিত ভারত হোম সিরিজের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার প্রকাশ করা কিছু ছবিতে পিচটিতে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পানি কম-বেশি দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। সব মিলিয়ে এমন লুকোচুরির লড়াই সঙ্গে করে শুরু হচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রের সবচেয়ে আগ্রহের সিরিজটি। এ সিরিজেই নির্ধারিত হয়ে যাবে লন্ডনের ওভারে ৭-১১ জুনের টেস্ট ফাইনালের প্রতিপক্ষ! ১৩৬ পয়েন্ট ও ৭৫.৫৬ শতাংশ পয়েন্টে শীর্ষে থেকে ৪ টেস্টের সিরিজ খেলতে নামছে অস্ট্রেলিয়া। ভারত ৫৮.৯৩ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে তাদের পরেই।
নাগপুর পিচে বাঁহাতি ব্যাটারদের জন্য বল ড্রপের জায়গাটাতে শুকনো রাখা হয়েছে। ডানহাতি বোলারদের বুটের খোঁচায় এই জায়গাটা নষ্ট হলে বাঁহাতি ব্যাটারদের অপরপ্রান্ত থেকে বোলিং সামলানো কঠিন হবে। কামিন্স অবশ্য এসব বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন, ‘অ্যাওয়েতে খেলার এটা একটা চ্যালেঞ্জ। স্বাগতিক দল সবসময়ই জিততে চাইবে এটা স্বাভাবিক। আমরা যেমন পেস ও বাউন্সি উইকেট তৈরি করি। যে দলই ভারতে আসে... তারা জানে এখানের পিচগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।’ এই চিন্তা বাদ দিয়ে ম্যাচকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানালেন অজি অধিনায়ক। তাই একাদশের কথা উঠতে কৌশলগত কারণে তা আগেই প্রকাশ করেননি, ‘আমি একাদশ টসের আগে বলছি না। তবে এটা নিশ্চিত ক্যামেরুন গ্রিন খেলবে না। দুর্ভাগ্যবশত জশ হ্যাজেলউড ও মিচেল মার্শের মতো ওকেও পাচ্ছি না।’ একাদশ সাজাতে একটু কৌশল নিতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। ভারতের চিন্তা রোহিত শর্মার সঙ্গে অপর ওপেনার নিয়ে। পাঁচ নম্বরে শ্রেয়ার আইয়ারের জায়গায় কে থাকবেন। ঋষভ পান্থের অনুপস্থিতিতে কিপিং কে করবেন। এছাড়া রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে অপর স্পিনার কে ও মোহাম্মদ সামির সঙ্গে অপর পেসার কে হবেন এসব নিয়ে ভাবনায় ভারত। এদিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি চিন্তায় স্বাগতিকরা। তাই পিচ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেননি ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘আপনাদের উচিত পিচ নিয়ে না ভেবে সামনের ৫ দিনে যে ক্রিকেট হবে তাতে নজর দেওয়া। দুই দলের ২২জনই এখানে সেরা ক্রিকেটার। জিততে হলে দুই দলকেই সেরা খেলাটা দিতে হবে। এটাই শেষ কথা। যখন বল বেশি স্পিন করে তখন একজন ব্যাটারকে কী করতে হয় তা সব দল জানে। যারা সফল হবে তারাই জিতবে।’
১৯৩০ সালে ইতিহাসের প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল উরুগুয়ে। একশো বছর পর ২০৩০ সালেও বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চায় তারা। তবে এককভাবে নয়। প্রতিবেশী আর্জেন্টিনা, চিলি, প্যারাগুয়েকে নিয়ে যৌথভাবে আয়োজনের স্বত্ব পেতে প্রার্থিতা জানিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) এক অনুষ্ঠানে চার দেশের ফুটবল কর্মকর্তা ও লাতিন আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশনের (কনমেবল) প্রেসিডেন্ট আলজান্দ্রো ডমিনগুয়েজের উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আলেহান্দ্রো ডমিনগুয়েজ বলেন, ঐতিহাসিক কারণেই তাদের স্বত্ব পাওয়া উচিত, ‘২০৩০ সালের বিশ্বকাপ স্রেফ আরেকটি বিশ্বকাপ নয়, এটা ১০০ বছর পূর্তির একটা উদযাপনও। আমরা মনে করি ফিফা এই স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাবে। প্রথম বিশ্বকাপে সেই ঐতিহাসিক যাত্রা উদযাপন করবে।’ এদিকে ফুটবলের জনপ্রিয়তার কারণে স্বত্ব পাওয়ার আশা আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়ার, ‘দক্ষিণ আমেরিকানের স্বপ্ন এটা। কেবল প্রথম বিশ্বকাপের শতবর্ষ পূর্তির জন্যই নয়, ফুটবল নিয়ে আমাদের অঞ্চলের আবেগের কারণে এটা পাওয়া দরকার।’ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এই চার দেশ এই প্রার্থিতা জানিয়ে একটি ট্যাগলাইনও জুড়ে দিয়েছে, ‘যেখানে ফুটবলের জন্ম হয়েছিল।’ বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেতে তাদের লড়াই করতে হবে স্পেন-পর্তুগাল ও মরক্কো-সৌদি আরবের বিপক্ষে।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ হয়েছে। ১৯৩০-এ উরুগুয়ের পর চিলি ১৯৬২ সালে, আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ সালে এবং ব্রাজিল ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করে।
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর ভারতের সঙ্গেও হার জুটেছে নিগার সুলতানাদের। ভারতের করা ৫ উইকেটে ১৮৩ রানের জবাবে ১৩১ রান করে ৫২ রানে হারে বাংলাদেশ। মূলত রিচা ঘোষের কাছেই হেরেছে বাংলাদেশ। এই ব্যাটার ৯টি বিশাল ছক্কা ও ৩ চারে মাত্র ৫৬ বলে ৯১ রানে অপরাজিত ছিলেন। সঙ্গে জেমিমাহ রদ্রিগেজও ২৭ বলে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশের ইনিংসে ঝড়ো ব্যাটিং করতে পারেনি কেউই। ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ৩২ বলে ৩২ ও অধিনায়ক নিগার ৩৬ বলে ৪০ রান করেন।
এর আগে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে ৬ উইকেটে হেরেছিল নারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া মাত্র ১০১ রানের লক্ষ্য ৪ ওভার হারে রেখে টপকে যায় পাকিস্তান।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।