
ঢাকার মাঠের দল কী হবে সেটা ঠিক হবে আরব আমিরাতে! এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চলছে এই অবস্থাই। বিদেশি খেলোয়াড়দের আসা-না আসা নির্ভর করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টির ওপর। ওদিকে আমিরাতে যে দল বাদ পড়ছে, এদিকে ঢাকায় সেই দলের বিদেশি খেলোয়াড়দের চাহিদা বাড়ছে। এই আসা যাওয়ার মিছিলে দুরবস্থা কোচদের। নিজের দলের একাদশ, কৌশল ও পরিকল্পনা, প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ কোনো কিছুরই থাকছে না ঠিকঠিকানা।
বিশ্বের নানা প্রান্তে একই সঙ্গে একাধিক লিগ চলছে বলে এবারের বিপিএলে বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন উন্মুক্ত রেখেছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। সেই সুযোগে একেকটা দল যেন হয়ে উঠেছে ‘লোকাল বাস’। কোন বিদেশি কখন আসছেন, কখন যাচ্ছেন কোনো কিছুই ঠিক নেই। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের পাকিস্তান সুপার লিগ খেলতে ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই দেশে ফেরার কথা থাকলেও কেউ কেউ দেশে ফিরে আবার এক ম্যাচের জন্য খেলতে চলে এসেছেন। মোহাম্মদ আমির, ইমাদ ওয়াসিম, ইফতিখার আহমেদরা দল ছেড়ে দেশে গিয়ে পৌঁছানোর আগেই তাদের ফিরে আসার খবর চাউর হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্লে-অফে ওঠা চার দলের বিদেশি খেলোয়াড় তালিকাতেও আমূল পরিবর্তন, একেবারে খোলনলচে পালটে যাওয়ার দশা। ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান সুপার লিগ আর ঠিক তার আগের দিন দুবাইতে ফাইনাল হবে আইএল টি-২০-এর। তাই পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের জায়গায় আসছেন আইএল টি-২০ এর ফাইনালে উঠতে না পারা দলের খেলোয়াড়রা। রংপুর রাইডার্সের কোচ সোহেল ইসলাম সেটাই বললেন ম্যাচ শেষে, ‘প্রথম থেকে যেটা আলোচনা হচ্ছে, কে আসবে আর কে আসতে পারবে না, সেটা আইএলটি-২০ এর ওপর নির্ভর করছে। আসলে এটা নির্ভর করবে আজকের ম্যাচে কে জিতবে সেটার ওপর। সেখানে যারা এভেইলেবল হবে, তাদেরই আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’ রংপুরের মোহাম্মদ নাওয়াজ, শোয়েব মালিক, হারিস রউফরা ফিরে গেছেন পাকিস্তানে। আইএল টি-২০ খেলে আসা ইংলিশ ক্রিকেটার টম কোহলার-ক্যাডমোরও চলে যাবেন পিএসএল খেলতে। ক্রিকেটারদের এই আসা যাওয়ার মিছিল কাজটা কঠিন করে দিয়েছেন কোচদের জন্য, জানালেন সোহেল, ‘আমার কাছে মনে হয় এটাই বিপিএলের কোচদের জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এত বেশি অদলবদল হওয়ার কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদেশি নেই। যে জায়গার প্লেয়ারকে চাচ্ছি তাকে পাচ্ছি না। যে জায়গাগুলো আমাদের ফিলাপ করা প্রয়োজন, সেখানে আমরা ওভারসিজ প্লেয়ার নেওয়ার চেষ্টা করি। এটা খুবই ডিফিকাল্ট হয়ে যায়, দেখা যায় দুটো বিদেশি প্লেয়ার চেইঞ্জ হলে গোটা টিমের কম্বিনেশনটাই বদলে যাচ্ছে, এটা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ।’ খেলোয়াড়ের অদলবদলে নিজেদের দল সাজানোটা যেমন হয়ে উঠেছে কঠিন, তেমনি প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিশ্লেষণ করাটাও হয়ে উঠেছে কঠিন; কারণ কে কখন যে খেলতে আসছে সেটা কেউই যে জানে না! সোহেলই বললেন, ‘এটা আসলেই খুব ডিফিকাল্ট। আমরা ভিডিও অ্যানালিস্ট রাখি, আমরা সেগুলো দেখি এবং তা দেখেই আমরা গেমপ্লেন সাজাই। তো এটা আসলেই কঠিন হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জিং হয়, আমরা একটা বিদেশিকে মাথায় রেখে প্ল্যান সাজাই কিন্তু মাঠে এসে দেখি একাদশে সে নেই। মাঠে আসার আগে পাওয়ার প্লেতে একভাবে খেলব বলে পরিকল্পনা সাজাই, কিন্তু মাঠে এসে সেটা বদলে ফেলতে হচ্ছে। তবে এটা নিয়েই আমাদের চলতে হবে। সব দলেই এই চ্যালেঞ্জ থাকছে’, শুক্রবার ম্যাচশেষে জানিয়েছেন রংপুরের কোচ।
এতে করে যে কোচদের শুধু নয়, সমস্যা হচ্ছে খেলোয়াড়দেরও। টম কোহলার-ক্যাডমোর দুবাইতে সপ্তাহ তিনেক কাটানোর পর বাংলাদেশে এসে দুটো ম্যাচ খেলেছেন, তাতে করেছেন ২০ এবং ১ রান। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর রংপুর দলও তাকে ছেঁটে ফেলতে পারলেই বাঁচে! কারণ আরও অনেকেই যে আসার অপেক্ষায়। সোহেল অবশ্য ক্রিকেটারের খুব একটা দোষ দেখছেন না, ‘(আগের রাতে এসে পরের দিন খেলতে নামা) অবশ্যই কঠিন। কারণ আমাদের গুরবাজ আগের রাতে এসেই পরের দিন খেলতে নেমেছে। আসলেই তাদের জন্য কষ্টসাধ্য, কারণ ভেতরের যে প্রস্তুতি সেটা তারা করে ওঠার আগেই নেমে যেতে হচ্ছে মাঠে। তাই তাদের জন্য সেরাটা ডেলিভার করা কঠিন হয়ে ওঠে।
আজ দক্ষিণ আফ্রিকার টি-২০ লিগের ফাইনাল। ওই লিগে খেলা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের দল হয়েছে পঞ্চম, তাই আগেভাগেই ছুটি পাওয়াতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার, খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। ইংলিশ পেসার রিস টপলিরও খেলার কথা বরিশালের হয়ে। এসএ ২০ খেলে শারজায় দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে একটা ম্যাচ খেলেছেন টপলি। সেই ম্যাচে এমআই এমিরেটসের কাছে হার তার দলকে ছিটকে দিয়েছে আসর থেকে, তাই টপলিও চলে আসতে পারছেন বাংলাদেশে। ইংল্যান্ড দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের আগে বিপিএলে খেলার অভিজ্ঞতাটা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে তাকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা মোহাম্মদ রিজওয়ানও বলে গেলেন, ‘আমার জায়গায় কে আসবে আমি জানি না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, কোনো বড় নাম খুঁজতে না যাওয়া। যে জায়গাটাতে যে পারবে তাকেই দলে নেওয়া।’
যে দল নিয়ে আসর শুরু করেছিল প্লে-অফের চার ফ্র্যাঞ্চাইজি, এখন সেই দলের চেহারায় অনেক বদল। নতুন সব বিদেশি মুখ চার দলেই। সবই সরাসরি সই করানো, তাই কত টাকায় এই খেলোয়াড়দের সই করানো হয়েছে সেসব জানারও সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে বদলে গেছে দলগুলোর শক্তিমত্তার সমীকরণও, ১২টা করে লিগ ম্যাচ খেলার পর তাই দল সাজাতে হচ্ছে প্রায় নতুন করেই। যেটা ঠিক হচ্ছে আরব আমিরাতের লিগের খেলার ফলের ওপর।
প্রথম দিনই ব্যাকফুটে থেকে শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় দিন ম্যাচে ফেরার যে আশা ছিল সফরকারীদের, তা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন স্বাগতিক ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অধিনায়ক হিসেবে এ সিরিজটা নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ রোহিতের জন্য। এমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরিটা (১২০ রান) করে ফেললেন। তার ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ৩২১ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ভারত। দ্বিতীয় দিনে যতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, সেটা অভিষিক্ত টড মারফির ৫ উইকেটের কল্যাণে। তবে অক্ষর প্যাটেল ও রবীন্দ্র জাদেজার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচে ফেরার আশা এখন সুতোয় ঝুলছে অস্ট্রেলিয়ার। এর মধ্যেই নাগপুরের স্পিননির্ভর উইকেটে প্রথম ইনিংসেই ভারত এগিয়ে গেছে ১৪৪ রানে।
২৪০ রানে ভারতের সপ্তম উইকেট পড়েছিল। শ্রীকর ভরতকে ফিরিয়ে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন মারফি। তখন মাত্র ৬৩ রানের লিড ছিল ভারতের। তবে অষ্টম উইকেটে পুরো ৩১ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে ৮১ রানের জুটি গড়েন প্যাটেল ও জাদেজা। ১৭০ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত আছেন জাদেজা। আর অক্ষর প্যাটেলের নামের পাশে ১০২ বলে ৫২। জাদেজা এ নিয়ে ষষ্ঠবার এক টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট ও হাফ সেঞ্চুরি করলেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণভাবে ম্যাচে রেখেছিলেন মারফি। ক্যারিয়ারের মাত্র অষ্টম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামা মারফি বিরাট কোহলিকে ১২ রানে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারের ক্যাচে পরিণত করেন। আর চেতেশ্বর পূজারা মাত্র সাত রাতে বোল্যান্ডের তালুবন্দি হন মারফির বলে। সেরা দুই ব্যাটারকে তোলার পর অশ্বিন ও ভরতকেও সাজঘরে ফেরান। আগের দিন নিয়েছিলেন লোকেশ রাহুলের উইকেট। মাত্র ২২ বছরে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন মারফি। ২১ বছরে ৫ উইকেট নিয়ে এই রেকর্ড দখলে রেখেছেন ডেনিস লিলি। তবে মারফির কীর্তি মøান হয়েছে রোহিত শর্মার ব্যাটে। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক ও খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়লেন তিনি।
সৌদি প্রো-লিগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোলের খাতা খুলেছিলেন আগের ম্যাচে। তবে সেটি ছিল পেনাল্টি থেকে। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, মরুতে এসেও সিআরসেভেন জ্বলে উঠতে পারবেন না, গোলের জন্য ধুঁকতে হবে। সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করলেন এক ম্যাচেই। বৃহস্পতিবার মক্কায় আল-নাসর ৪-০ গোলে হারিয়েছে আল-ওয়েহদাকে। যার চার গোলই করেছেন পর্তুগিজ তারকা।
ম্যাচের শুরুতে রোনালদো বেশ কয়েকবার বলে নিয়ন্ত্রণ হারান। তবে ২১ মিনিটে করেন প্রথম গোলটি। এই গোলে রোনালদো অনন্য এক মাইলফলকে পৌঁছান, ৫০০তম লিগ গোলের চূড়া স্পর্শ করেন। রোনালদো তার দ্বিতীয় গোলটি পান ৪০ মিনিটে। ৫৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ক্যারিয়ারের ৬১তম হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। বয়স যত বেড়েছে তিন সংখ্যার এই ম্যাজিকাল ফিগারটা আরও আপন করে নিয়েছেন পাঁচবারের ব্যালন-ডি-অর জয়ী ফরোয়ার্ড। বয়স ৩০ হওয়ার আগে তার ছিল ৩০টি হ্যাটট্রিক। ৩০-এর পর বর্তমান ৩৮ এই আট বছরে করেছেন আরও ৩১টি। ৬১ মিনিটে দলের ও নিজের চতুর্থ গোলটি করে আল-ওয়েহদার মাঠে আল-নাসরের সমর্থকদের দারুণ এক উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেন রোনালদো।
সৌদি আরবে দারুণভাবে জ্বলে ওঠার রাতে নিজেদের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট টুইট করতে ভুলেননি পর্তুগাল অধিনায়ক, ‘চার গোল এবং ৫০০তম লিগ গোলে পৌঁছাতে পারার অনুভূতি অনন্য। এটা দলের দারুণ এক জয়।’ এ নিয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এগারোবারের মতো এক ম্যাচে চার বা তার বেশি গোল করলেন রোনালদো। এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরো বাছাইয়ে লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে চার গোল করেছিলেন তিনি। ক্লাবের ম্যাচে এর আগে সবশেষ চার গোল করেছিলেন ২০১৮ সালের রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিরোনার বিপক্ষে লা লিগায়।
পাঁচটি ভিন্ন লিগে খেলে রোনালদোর লিগ গোলসংখ্যা এখন ৫০৩টি। তার মধ্যে ১০৩টি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, রিয়ালের হয়ে লা লিগায় ৩১১টি, সিরি’আ-তে জুভেন্তাসের হয়ে ৮১, পর্তুগিজ লিগে স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে ৩টি এবং সৌদি প্রো লিগে নাসরের হয়ে ৫টি।
রোনালদোর এনে দেওয়া পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে আল-নাসর। ১৬ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৩৭। এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান পয়েন্টে দুইয়ে আল-শাবাব।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। বাংলাদেশ অধিনায়ক দেশকে শিরোপা এনে দেওয়ার পাশাপাশি আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সর্বোচ্চ পাঁচ গোলের সুবাদে। একান্ত সাক্ষাৎকারে চ্যাম্পিয়ন এই ফুটবলারের ভেতরটাই তুলে এনেছেন দেশ রূপান্তরের তোফায়েল আহমেদ
নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন। বৃহস্পতিবার রাতটা তো ছিল শুধুই আপনাদের। উৎসব কেমন হলো?
শামসুন্নাহার : মাঠ থেকে বাফুফে ভবনে (মেয়েদের আবাসিক ক্যাম্প) আসার পর সিনিয়র ও জুনিয়র খেলোয়াড়রা মিলে একসঙ্গে অনেক মজা করেছি। এরপর বিশ্রাম নিয়েছে সবাই। আমার অবশ্য রাতেই একটি টিভি প্রোগ্রামে যেতে হয়েছিল। সেভাবে বিশ্রাম নেওয়া হয়নি। সকাল থেকেও একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে।
এমনিতে তো এসব ক্ষেত্রে অনেক রাত পর্যন্ত পার্টি চলে। আপনাদের বেলায় তেমন কিছু হয়নি?
শামসুন্নাহার : আসলে সবাই অনেক ক্লান্ত ছিল। সবাই তাই তারাতাড়িই ঘুমিয়ে গেছে। আজ (কাল) তো শুক্রবার। সবাই ফোন পেয়েছে। তাই পরিবারের সঙ্গে ব্যস্ত সবাই। ফোন জমা দেওয়ার পর হয়তো আড্ডা দেব একসঙ্গে।
তার মানে আসল উৎসব এখনো হয়নি। কী পরিকল্পনা করছেন?
শামসুন্নাহার : তেমন কিছু না। উৎসব যা করার মাঠেই করেছি। এগুলো নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। সামনের মাসে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাই রয়েছে। এখন ওই দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।
পুরো আসরকে মূল্যায়ন করতে বললে কী বলবেন?
শামসুন্নাহার : এই দলটা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে অনুশীলনে রয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে আমি এ নিয়ে তিনটি টুর্নামেন্ট খেললাম একই দল নিয়ে। আগের দু’বারই আমরা রানার্স-আপ হই। ২০১৯ সালে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে টাইব্রেকারে হেরে যাই। গত বছর জামশেদপুরে অনূর্ধ্ব-১৮ সালে শেষ ম্যাচ জেতার পরও গোল ব্যবধানে শিরোপা জিততে পারিনি। অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগে আমাদের এই দলটার অনেকেরই এটা ছিল শেষ আসর। অভিযান শুরুর আগে ভেবেছি, এটাই শেষ সুযোগ। তা ছাড়া দেশের মাটিতে খেলা। সবার আশা ছিল শিরোপাটা যেন ঘরেই রাখতে পারি। অনেকেই অনেক কথা বলেছিল যে আমরা পারব না। তবে আমাদের মধ্যে জেদ ছিল যে, অবশ্যই আমরা পারব। দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছি। সবার দোয়ায় এই শিরোপাটা পেয়েছি।
আগের দুবার হয়নি। তাই কি একটু চাপে ছিলেন?
শামসুন্নাহার : সত্যি বলতে, এটা নিয়ে আমরা ভাবিনি। আমরা শুধু একটা জিনিসই ভেবেছি, জেতার জন্য মাঠে নামব। লিগপর্বে তিনটি ম্যাচ আমরা ভালোভাবেই পেরিয়েছিলাম। ফাইনালে সর্বোচ্চটা দেব, দেশের মানুষের সম্মান রক্ষা করব। ঘরের ট্রফি ঘরে রাখব। এই লক্ষ্যই ছিল।
পাঁচ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। টুর্নামেন্টের সেরাও হলেন। নিশ্চয় এই টুর্নামেন্টটা অনেক দিন মনে গেঁথে থাকবে?
শামসুন্নাহার : দেখুন, প্রথমত আমি আমার দলের জন্য খেলেছি। চেয়েছি আমার দল জিতুক। যাকে দিয়ে গোল করানো দরকার তাকে দিয়ে গোল করানো হয়েছে। আমি যে সুযোগগুলো পেয়েছি, সেগুলো কাজে লাগিয়েছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে। আমি চেষ্টা করেছি যেন দলটাকে এগিয়ে নিতে পারি। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল, এখন মনে হয়ে দায়িত্বটা আমি পালন করতে পেরেছি।
এটাই কি আপনার স্মরণীয় আসর হয়ে থাকবে?
শামসুন্নাহার : স্মরণীর তালিকায় তো অবশ্যই থাকবে। বিশেষ করে আমি যেহেতু অধিনায়ক। তবে এটাকে আমি দ্বিতীয় স্থানে রাখব। প্রথমে থাকবে সিনিয়র সাফ, গত বছর নেপালে যেটা জিতলাম। কারণ আমাদের সিনিয়র দল প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছিল না। ওই আসরে আমি নিজে খেলেছি, ফাইনালে গোলও করেছি। তাই ওটাকে আমি সবার ওপরে রাখব।
সিনিয়র দল থেকে আপনাদের প্রতি কী বার্তা ছিল?
শামসুন্নাহার : সিনিয়ররা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। গ্যালারিতেও থাকতেন তারা। খেলার আগের দিন সিনিয়ররা ডাইনিংয়ে আমাদের ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা যে ম্যাচগুলো খেলেছি, সেগুলোর ভুল-ত্রুটি নিয়ে বলেছেন। দেশের মাটিতে খেলা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটা যেন কাজে লাগানোর চেষ্টা করিএসব বলে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
এই দলে আপনি এবং রুপনা চাকমা সবচেয়ে সিনিয়র। অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা দুজনের। এই জায়গাটায় নিশ্চয়ই বাড়তি দায়িত্ব ছিল?
শামসুন্নাহার : হ্যাঁ, অবশ্যই সিনিয়র হিসেবে আমাদের আলাদা দায়িত্ব ছিল এই দলকে পরিচালিত করার। নিজের জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করেছি। আগেও দু’বার যেহেতু দুটি বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়কত্ব করেছি। সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা, সবাইকে খেলানো এই চেষ্টাটা আমার ছিল।
একটু বলবেন, কীভাবে সামলাতেন দলকে?
শামসুন্নাহার : ড্রেসিংরুমে আমরা সবাই একতাবদ্ধ ছিলাম। সবাই হাতে হাত রেখে ভালো খেলার শপথ নিতাম। স্যাররা তখন বলেতেন, ‘চোখ বন্ধ কর, জোরে জোরে নিশ্বাঃস নাও। আর দেশের মানুষের কথা ভাব। মা-বাবার কথা ভাব। ১৮ কোটি মানুষের কথা ভাব।’ আমরা চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাঃস নিয়েছি আর ভেবেছি। এটা হচ্ছে ড্রেসিং রুমের কথা। আর ফাইনালে নামার আগে মাঠে আমি শুধু একটা কথাই বলেছি, আমরা মাঠে নামতে যাচ্ছি শুধুই জেতার জন্য। আগে দুটি টুর্নামেন্টন জিততে পারিনি। জিতেই কাঁদতে চেয়েছিলাম এবার। হেরে কান্নায় ভেঙে পড়তে চাইনি। স্রষ্টা আমাদের সেই আশা পূরণ করেছেন।
আরেকটু যদি বড় পরিসরের কথা বলি, সিনিয়র জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়?
শামসুন্নাহার : আমার চেয়ে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় আছেন। আমি আমার খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। সেটাই করতে চাই। আর আশার কথা যদি বলেন, সেটা তো সবারই থাকে। তবে আপাতত বর্তমান নিয়েই বেশ আছি। এভাবেই থাকতে চাই।
আপনার চোখে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অবস্থান এখন কোথায়?
শামসুন্নাহার : এটা আপনারা সবাই দেখছেন। একটার পর একটা সাফল্য আসছে নারী ফুটবলে। এখন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল। পরবর্তী লক্ষ্য থাকবে এশিয়ার মধ্যে যেন একটা অবস্থান গড়ে তুলতে পারি। স্বপ্ন থাকবে দক্ষিণ এশিয়া ছাপিয়ে এশিয়ার সেরা হওয়া।
খেলোয়াড় হিসেবে কতটা তৃপ্ত?
শামসুন্নাহার : আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। জাতীয় দলে খেলা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আমি সেটা খেলছি। যখন ফুটবল বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই লক্ষ্য ছিল জাতীয় দলে খেলার। সেই জায়গা থেকে এখন যেহেতু সুযোগ পাচ্ছি, সেটা কাজে লাগাচ্ছি।
এ পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কার?
শামসুন্নাহার : অনেকই আছেন। আমার স্যাররা ছিলেন, ভাইয়ারা ছিলেন। তবে পরিবার থেকে আসলে শুরুতে তেমন সমর্থন পাইনি। খেলতে দিতে চাইতেন না তারা। ছোট থাকতে বেশি কিছু বলত না। যখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলাম তখন বাধা দিত। বলত খেলাধুলা ভালো না। এখন অবশ্য খুব একটা সমস্যা হয় না।
ফুটবল শুরুর সময় মাকে হারিয়েছেন। আজ তাকে কতটা মিস করেন?
শামসুন্নাহার : ২০১৪ সালে আমার মা মারা যান। আমি তখন পর্যন্ত বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে খেলেছি। আমরা একবার চ্যাম্পিয়ন হলাম, এটা মা দেখে যেতে পেরেছেন। আসলে ভালো-খারাপ সবকিছু মিলিয়েই মাকে খুব মিস করি। আগে ছোট ছিলাম, বেশি বুঝতাম না। এখন বড় হচ্ছি, খারাপ লাগাটা বাড়ছে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ড্র আর হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল মোহামেডান। অবশেষে সুলেমান দিয়াবাতের হ্যাটট্রিকে স্বরূপে ফিরল তারা। ছয় ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গতকাল এএফসি উত্তরাকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে সাদা-কালোরা। মালির ফরোয়ার্ড দিয়াবাতের জ্বলে ওঠার দিনে অন্য তিন গোল করেছেন দানিয়েল ফেবলেস, আরিফ হোসেন ও সাজ্জাদ হোসেন। একই দিনে রাজশাহীতে শেখ রাসেল ১-০ গোলে হারায় ফর্টিস এফসিকে। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিনে উঠে এসেছে শেখ রাসেল।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে লিগ শুরু করা মোহামেডান ছয় ম্যাচ পর জিতল। ম্যাচের ২১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে নেন দিয়াবাতে। ৩৫ মিনিটে দারুণ ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিয়াবাতে। ৬৩ মিনিটে দিয়াবাতের অ্যাসিস্টে ফেবলেস গোল করেন। ৭০ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন দিয়াবাতে। ৮০ মিনিটে আরিফ হোসেন ম্যাচের চতুর্থ গোলটি করেন। সাত মিনিট পর সাজ্জাদ হোসেন গোল করলে স্কোরলাইন ৬-০ হয়। ৮ ম্যাচে ৯ পয়েন্টে টেবিলের ছয়ে আছে মোহামেডান।
রাজশাহীতে ফর্টিসের বিপক্ষে ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিকে চার্লস দিদিয়েরের শট জালে জড়ায়। শেষ পর্যন্ত ওই গোল ধরে রাখে শেখ রাসেল।
প্রথম তিন ম্যাচে টানা হেরেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যা দলটির জন্য বেশ লজ্জার। তবে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ৯ জয়ে সেই হতাশা দূর করেছে দলটি। একসঙ্গে এত ম্যাচ জেতা বিপিএলের টানা জয়ের রেকর্ডও। এই সাফল্য ধারায় ছুটে কাল প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা। রংপুর রাইডার্সকে ৭০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অপর ধারাবাহিক দল সিলেট স্ট্রাইকার্সকে পেয়েছেন ইমরুল কায়েসরা। কাল স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৭৭ রান তোলে কুমিল্লা। জবাবে রংপুর ৩ ওভার বাকি থাকতে মাত্র ১০৭ রানেই গুটিয়ে যায়। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে প্লে অফ নিশ্চিত করা ফরচুন বরিশালকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। আগে ব্যাট করে বরিশাল ৮ উইকেটে ১৬৯ রান করে জবাবে খুলনা তিন বল বাকি থাকতে জেতে।
গত আসরের দুই ফাইনালিস্টের ম্যাচ অবশ্য এতটা একপেশে হওয়ার ছিল না। কুমিল্লা যেমন টানা ৮ ম্যাচ জিতে এ লড়াইয়ে নেমেছিল তেমনি রংপুরও টানা ৬ ম্যাচ জিতেছিল। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই দলের পার্থক্য হয়ে গেল বিশাল। আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৫ ওভারে ৪৩ রানের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও লিটন দাশ। রিজওয়ান ২১ বলে ২৪ রান করে ফিরলেও ইনজুরি ফেরত লিটন দারুণ খেললেন ৩টি করে ছক্কা ও চারে ৩৩ বলে ৪৭ রান করে। নিচের দিকে জাকের আলি ২৩ বলে ৩ ছক্কায় ৩৪ ও খুশদীল শাহ মাত্র ২০ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন। জবাবে রংপুরের হয়ে একমাত্র রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২২ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৯ রান ছাড়া বাকিরা সবাই ফিরেছেন অল্প রানে। কুমিল্লার মোস্তাফিজের ৩ এবং সুনিল নারিন ও তানভির ইসলামের ২টি করে উইকেটে লড়াইও করতে পারেনি রংপুর।
মৌলভীবাজারে 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিক বান্ধব চা শিল্প' প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (০৪ জুন) শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন এবং 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালুকৃত 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান করা হয়। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন (০১) একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান- ভাড়াউড়া চা বাগান (০২) সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান- মধুপুর চা বাগান (০৩) শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক- আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি. (০৪) শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী- মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়) (০৫) শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান- জেরিন চা বাগান (০৬) বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লি. (০৭) দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (০৮) শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক)- উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও চা বোর্ডের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বাগানের মালিক ও চা শ্রমিকরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে মেয়ে (১৭) ও তার মাকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রবিবার (০৪ জুন) ভোরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর গত শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর শিবগঞ্জের পৌর এলাকার মাগুরার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ও আটককৃতরা হলেন প্রেমিক শিবগঞ্জ পৌর পিঠালিতলা মহল্লার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তার বন্ধু ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান (২৪) এবং ভ্যানচালক পিঠালিতলা মহল্লার মো. মেহেরুল (৩০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর ওই এলাকার (পৌর মর্দনা গ্রামের পাশে) একটি মাঠের পাশের পাটক্ষেতে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ফেলে যায় অভিযুক্ত মেয়ের প্রেমিক সেলিম এবং তার বন্ধু হাসান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের তল্লাশিতে রবিবার (৪ জুন) ভোরে ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ে। এরপর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে আটক হয় সেলিম ও হাসান।
এদিকে মা ও মেয়েকে রিকশাভ্যানে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে আটক হয় মেহেরুল। এ ঘটনায় মেয়ের মা গত রবিবার সকালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক সেলিম ও তার সহযোগী হাসান দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালত সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিদর্শক সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, রং নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণী ও সেলিম রেজার। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে মেয়েকে দেখা ও বিয়ের কথা বলে মা-মেয়েকে শিবগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে সে। পরে ভ্যানচালকের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে ওই মাঠের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় সেলিম। সেখানে মা ও মেয়েকে সেলিম ও হাসান ধর্ষণের পর ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ের বাবা একই দিন রাতেই ঘটনাটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পরে ভুক্তভোগী মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রবিবার ভোরে ওই মাঠ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পরে একই দিন ভোরেই অভিযান চালিয়ে সেলিম, হাসান ও মেহেরুলকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ আসামিদের আদালতে পাঠায়। মা ও মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।