
প্রথম দিনই ব্যাকফুটে থেকে শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় দিন ম্যাচে ফেরার যে আশা ছিল সফরকারীদের, তা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন স্বাগতিক ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অধিনায়ক হিসেবে এ সিরিজটা নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ রোহিতের জন্য। এমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরিটা (১২০ রান) করে ফেললেন। তার ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ৩২১ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ভারত। দ্বিতীয় দিনে যতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, সেটা অভিষিক্ত টড মারফির ৫ উইকেটের কল্যাণে। তবে অক্ষর প্যাটেল ও রবীন্দ্র জাদেজার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচে ফেরার আশা এখন সুতোয় ঝুলছে অস্ট্রেলিয়ার। এর মধ্যেই নাগপুরের স্পিননির্ভর উইকেটে প্রথম ইনিংসেই ভারত এগিয়ে গেছে ১৪৪ রানে।
২৪০ রানে ভারতের সপ্তম উইকেট পড়েছিল। শ্রীকর ভরতকে ফিরিয়ে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন মারফি। তখন মাত্র ৬৩ রানের লিড ছিল ভারতের। তবে অষ্টম উইকেটে পুরো ৩১ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে ৮১ রানের জুটি গড়েন প্যাটেল ও জাদেজা। ১৭০ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত আছেন জাদেজা। আর অক্ষর প্যাটেলের নামের পাশে ১০২ বলে ৫২। জাদেজা এ নিয়ে ষষ্ঠবার এক টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট ও হাফ সেঞ্চুরি করলেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণভাবে ম্যাচে রেখেছিলেন মারফি। ক্যারিয়ারের মাত্র অষ্টম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামা মারফি বিরাট কোহলিকে ১২ রানে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারের ক্যাচে পরিণত করেন। আর চেতেশ্বর পূজারা মাত্র সাত রাতে বোল্যান্ডের তালুবন্দি হন মারফির বলে। সেরা দুই ব্যাটারকে তোলার পর অশ্বিন ও ভরতকেও সাজঘরে ফেরান। আগের দিন নিয়েছিলেন লোকেশ রাহুলের উইকেট। মাত্র ২২ বছরে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন মারফি। ২১ বছরে ৫ উইকেট নিয়ে এই রেকর্ড দখলে রেখেছেন ডেনিস লিলি। তবে মারফির কীর্তি মøান হয়েছে রোহিত শর্মার ব্যাটে। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক ও খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়লেন তিনি।
ঢাকার মাঠের দল কী হবে সেটা ঠিক হবে আরব আমিরাতে! এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চলছে এই অবস্থাই। বিদেশি খেলোয়াড়দের আসা-না আসা নির্ভর করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টির ওপর। ওদিকে আমিরাতে যে দল বাদ পড়ছে, এদিকে ঢাকায় সেই দলের বিদেশি খেলোয়াড়দের চাহিদা বাড়ছে। এই আসা যাওয়ার মিছিলে দুরবস্থা কোচদের। নিজের দলের একাদশ, কৌশল ও পরিকল্পনা, প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ কোনো কিছুরই থাকছে না ঠিকঠিকানা।
বিশ্বের নানা প্রান্তে একই সঙ্গে একাধিক লিগ চলছে বলে এবারের বিপিএলে বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন উন্মুক্ত রেখেছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। সেই সুযোগে একেকটা দল যেন হয়ে উঠেছে ‘লোকাল বাস’। কোন বিদেশি কখন আসছেন, কখন যাচ্ছেন কোনো কিছুই ঠিক নেই। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের পাকিস্তান সুপার লিগ খেলতে ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই দেশে ফেরার কথা থাকলেও কেউ কেউ দেশে ফিরে আবার এক ম্যাচের জন্য খেলতে চলে এসেছেন। মোহাম্মদ আমির, ইমাদ ওয়াসিম, ইফতিখার আহমেদরা দল ছেড়ে দেশে গিয়ে পৌঁছানোর আগেই তাদের ফিরে আসার খবর চাউর হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্লে-অফে ওঠা চার দলের বিদেশি খেলোয়াড় তালিকাতেও আমূল পরিবর্তন, একেবারে খোলনলচে পালটে যাওয়ার দশা। ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান সুপার লিগ আর ঠিক তার আগের দিন দুবাইতে ফাইনাল হবে আইএল টি-২০-এর। তাই পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের জায়গায় আসছেন আইএল টি-২০ এর ফাইনালে উঠতে না পারা দলের খেলোয়াড়রা। রংপুর রাইডার্সের কোচ সোহেল ইসলাম সেটাই বললেন ম্যাচ শেষে, ‘প্রথম থেকে যেটা আলোচনা হচ্ছে, কে আসবে আর কে আসতে পারবে না, সেটা আইএলটি-২০ এর ওপর নির্ভর করছে। আসলে এটা নির্ভর করবে আজকের ম্যাচে কে জিতবে সেটার ওপর। সেখানে যারা এভেইলেবল হবে, তাদেরই আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’ রংপুরের মোহাম্মদ নাওয়াজ, শোয়েব মালিক, হারিস রউফরা ফিরে গেছেন পাকিস্তানে। আইএল টি-২০ খেলে আসা ইংলিশ ক্রিকেটার টম কোহলার-ক্যাডমোরও চলে যাবেন পিএসএল খেলতে। ক্রিকেটারদের এই আসা যাওয়ার মিছিল কাজটা কঠিন করে দিয়েছেন কোচদের জন্য, জানালেন সোহেল, ‘আমার কাছে মনে হয় এটাই বিপিএলের কোচদের জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এত বেশি অদলবদল হওয়ার কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদেশি নেই। যে জায়গার প্লেয়ারকে চাচ্ছি তাকে পাচ্ছি না। যে জায়গাগুলো আমাদের ফিলাপ করা প্রয়োজন, সেখানে আমরা ওভারসিজ প্লেয়ার নেওয়ার চেষ্টা করি। এটা খুবই ডিফিকাল্ট হয়ে যায়, দেখা যায় দুটো বিদেশি প্লেয়ার চেইঞ্জ হলে গোটা টিমের কম্বিনেশনটাই বদলে যাচ্ছে, এটা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ।’ খেলোয়াড়ের অদলবদলে নিজেদের দল সাজানোটা যেমন হয়ে উঠেছে কঠিন, তেমনি প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিশ্লেষণ করাটাও হয়ে উঠেছে কঠিন; কারণ কে কখন যে খেলতে আসছে সেটা কেউই যে জানে না! সোহেলই বললেন, ‘এটা আসলেই খুব ডিফিকাল্ট। আমরা ভিডিও অ্যানালিস্ট রাখি, আমরা সেগুলো দেখি এবং তা দেখেই আমরা গেমপ্লেন সাজাই। তো এটা আসলেই কঠিন হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জিং হয়, আমরা একটা বিদেশিকে মাথায় রেখে প্ল্যান সাজাই কিন্তু মাঠে এসে দেখি একাদশে সে নেই। মাঠে আসার আগে পাওয়ার প্লেতে একভাবে খেলব বলে পরিকল্পনা সাজাই, কিন্তু মাঠে এসে সেটা বদলে ফেলতে হচ্ছে। তবে এটা নিয়েই আমাদের চলতে হবে। সব দলেই এই চ্যালেঞ্জ থাকছে’, শুক্রবার ম্যাচশেষে জানিয়েছেন রংপুরের কোচ।
এতে করে যে কোচদের শুধু নয়, সমস্যা হচ্ছে খেলোয়াড়দেরও। টম কোহলার-ক্যাডমোর দুবাইতে সপ্তাহ তিনেক কাটানোর পর বাংলাদেশে এসে দুটো ম্যাচ খেলেছেন, তাতে করেছেন ২০ এবং ১ রান। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর রংপুর দলও তাকে ছেঁটে ফেলতে পারলেই বাঁচে! কারণ আরও অনেকেই যে আসার অপেক্ষায়। সোহেল অবশ্য ক্রিকেটারের খুব একটা দোষ দেখছেন না, ‘(আগের রাতে এসে পরের দিন খেলতে নামা) অবশ্যই কঠিন। কারণ আমাদের গুরবাজ আগের রাতে এসেই পরের দিন খেলতে নেমেছে। আসলেই তাদের জন্য কষ্টসাধ্য, কারণ ভেতরের যে প্রস্তুতি সেটা তারা করে ওঠার আগেই নেমে যেতে হচ্ছে মাঠে। তাই তাদের জন্য সেরাটা ডেলিভার করা কঠিন হয়ে ওঠে।
আজ দক্ষিণ আফ্রিকার টি-২০ লিগের ফাইনাল। ওই লিগে খেলা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের দল হয়েছে পঞ্চম, তাই আগেভাগেই ছুটি পাওয়াতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার, খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। ইংলিশ পেসার রিস টপলিরও খেলার কথা বরিশালের হয়ে। এসএ ২০ খেলে শারজায় দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে একটা ম্যাচ খেলেছেন টপলি। সেই ম্যাচে এমআই এমিরেটসের কাছে হার তার দলকে ছিটকে দিয়েছে আসর থেকে, তাই টপলিও চলে আসতে পারছেন বাংলাদেশে। ইংল্যান্ড দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের আগে বিপিএলে খেলার অভিজ্ঞতাটা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে তাকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা মোহাম্মদ রিজওয়ানও বলে গেলেন, ‘আমার জায়গায় কে আসবে আমি জানি না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, কোনো বড় নাম খুঁজতে না যাওয়া। যে জায়গাটাতে যে পারবে তাকেই দলে নেওয়া।’
যে দল নিয়ে আসর শুরু করেছিল প্লে-অফের চার ফ্র্যাঞ্চাইজি, এখন সেই দলের চেহারায় অনেক বদল। নতুন সব বিদেশি মুখ চার দলেই। সবই সরাসরি সই করানো, তাই কত টাকায় এই খেলোয়াড়দের সই করানো হয়েছে সেসব জানারও সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে বদলে গেছে দলগুলোর শক্তিমত্তার সমীকরণও, ১২টা করে লিগ ম্যাচ খেলার পর তাই দল সাজাতে হচ্ছে প্রায় নতুন করেই। যেটা ঠিক হচ্ছে আরব আমিরাতের লিগের খেলার ফলের ওপর।
সৌদি প্রো-লিগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোলের খাতা খুলেছিলেন আগের ম্যাচে। তবে সেটি ছিল পেনাল্টি থেকে। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, মরুতে এসেও সিআরসেভেন জ্বলে উঠতে পারবেন না, গোলের জন্য ধুঁকতে হবে। সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করলেন এক ম্যাচেই। বৃহস্পতিবার মক্কায় আল-নাসর ৪-০ গোলে হারিয়েছে আল-ওয়েহদাকে। যার চার গোলই করেছেন পর্তুগিজ তারকা।
ম্যাচের শুরুতে রোনালদো বেশ কয়েকবার বলে নিয়ন্ত্রণ হারান। তবে ২১ মিনিটে করেন প্রথম গোলটি। এই গোলে রোনালদো অনন্য এক মাইলফলকে পৌঁছান, ৫০০তম লিগ গোলের চূড়া স্পর্শ করেন। রোনালদো তার দ্বিতীয় গোলটি পান ৪০ মিনিটে। ৫৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ক্যারিয়ারের ৬১তম হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। বয়স যত বেড়েছে তিন সংখ্যার এই ম্যাজিকাল ফিগারটা আরও আপন করে নিয়েছেন পাঁচবারের ব্যালন-ডি-অর জয়ী ফরোয়ার্ড। বয়স ৩০ হওয়ার আগে তার ছিল ৩০টি হ্যাটট্রিক। ৩০-এর পর বর্তমান ৩৮ এই আট বছরে করেছেন আরও ৩১টি। ৬১ মিনিটে দলের ও নিজের চতুর্থ গোলটি করে আল-ওয়েহদার মাঠে আল-নাসরের সমর্থকদের দারুণ এক উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেন রোনালদো।
সৌদি আরবে দারুণভাবে জ্বলে ওঠার রাতে নিজেদের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট টুইট করতে ভুলেননি পর্তুগাল অধিনায়ক, ‘চার গোল এবং ৫০০তম লিগ গোলে পৌঁছাতে পারার অনুভূতি অনন্য। এটা দলের দারুণ এক জয়।’ এ নিয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এগারোবারের মতো এক ম্যাচে চার বা তার বেশি গোল করলেন রোনালদো। এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরো বাছাইয়ে লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে চার গোল করেছিলেন তিনি। ক্লাবের ম্যাচে এর আগে সবশেষ চার গোল করেছিলেন ২০১৮ সালের রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিরোনার বিপক্ষে লা লিগায়।
পাঁচটি ভিন্ন লিগে খেলে রোনালদোর লিগ গোলসংখ্যা এখন ৫০৩টি। তার মধ্যে ১০৩টি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, রিয়ালের হয়ে লা লিগায় ৩১১টি, সিরি’আ-তে জুভেন্তাসের হয়ে ৮১, পর্তুগিজ লিগে স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে ৩টি এবং সৌদি প্রো লিগে নাসরের হয়ে ৫টি।
রোনালদোর এনে দেওয়া পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে আল-নাসর। ১৬ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৩৭। এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান পয়েন্টে দুইয়ে আল-শাবাব।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। বাংলাদেশ অধিনায়ক দেশকে শিরোপা এনে দেওয়ার পাশাপাশি আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সর্বোচ্চ পাঁচ গোলের সুবাদে। একান্ত সাক্ষাৎকারে চ্যাম্পিয়ন এই ফুটবলারের ভেতরটাই তুলে এনেছেন দেশ রূপান্তরের তোফায়েল আহমেদ
নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন। বৃহস্পতিবার রাতটা তো ছিল শুধুই আপনাদের। উৎসব কেমন হলো?
শামসুন্নাহার : মাঠ থেকে বাফুফে ভবনে (মেয়েদের আবাসিক ক্যাম্প) আসার পর সিনিয়র ও জুনিয়র খেলোয়াড়রা মিলে একসঙ্গে অনেক মজা করেছি। এরপর বিশ্রাম নিয়েছে সবাই। আমার অবশ্য রাতেই একটি টিভি প্রোগ্রামে যেতে হয়েছিল। সেভাবে বিশ্রাম নেওয়া হয়নি। সকাল থেকেও একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে।
এমনিতে তো এসব ক্ষেত্রে অনেক রাত পর্যন্ত পার্টি চলে। আপনাদের বেলায় তেমন কিছু হয়নি?
শামসুন্নাহার : আসলে সবাই অনেক ক্লান্ত ছিল। সবাই তাই তারাতাড়িই ঘুমিয়ে গেছে। আজ (কাল) তো শুক্রবার। সবাই ফোন পেয়েছে। তাই পরিবারের সঙ্গে ব্যস্ত সবাই। ফোন জমা দেওয়ার পর হয়তো আড্ডা দেব একসঙ্গে।
তার মানে আসল উৎসব এখনো হয়নি। কী পরিকল্পনা করছেন?
শামসুন্নাহার : তেমন কিছু না। উৎসব যা করার মাঠেই করেছি। এগুলো নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। সামনের মাসে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাই রয়েছে। এখন ওই দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।
পুরো আসরকে মূল্যায়ন করতে বললে কী বলবেন?
শামসুন্নাহার : এই দলটা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে অনুশীলনে রয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে আমি এ নিয়ে তিনটি টুর্নামেন্ট খেললাম একই দল নিয়ে। আগের দু’বারই আমরা রানার্স-আপ হই। ২০১৯ সালে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে টাইব্রেকারে হেরে যাই। গত বছর জামশেদপুরে অনূর্ধ্ব-১৮ সালে শেষ ম্যাচ জেতার পরও গোল ব্যবধানে শিরোপা জিততে পারিনি। অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগে আমাদের এই দলটার অনেকেরই এটা ছিল শেষ আসর। অভিযান শুরুর আগে ভেবেছি, এটাই শেষ সুযোগ। তা ছাড়া দেশের মাটিতে খেলা। সবার আশা ছিল শিরোপাটা যেন ঘরেই রাখতে পারি। অনেকেই অনেক কথা বলেছিল যে আমরা পারব না। তবে আমাদের মধ্যে জেদ ছিল যে, অবশ্যই আমরা পারব। দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছি। সবার দোয়ায় এই শিরোপাটা পেয়েছি।
আগের দুবার হয়নি। তাই কি একটু চাপে ছিলেন?
শামসুন্নাহার : সত্যি বলতে, এটা নিয়ে আমরা ভাবিনি। আমরা শুধু একটা জিনিসই ভেবেছি, জেতার জন্য মাঠে নামব। লিগপর্বে তিনটি ম্যাচ আমরা ভালোভাবেই পেরিয়েছিলাম। ফাইনালে সর্বোচ্চটা দেব, দেশের মানুষের সম্মান রক্ষা করব। ঘরের ট্রফি ঘরে রাখব। এই লক্ষ্যই ছিল।
পাঁচ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। টুর্নামেন্টের সেরাও হলেন। নিশ্চয় এই টুর্নামেন্টটা অনেক দিন মনে গেঁথে থাকবে?
শামসুন্নাহার : দেখুন, প্রথমত আমি আমার দলের জন্য খেলেছি। চেয়েছি আমার দল জিতুক। যাকে দিয়ে গোল করানো দরকার তাকে দিয়ে গোল করানো হয়েছে। আমি যে সুযোগগুলো পেয়েছি, সেগুলো কাজে লাগিয়েছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে। আমি চেষ্টা করেছি যেন দলটাকে এগিয়ে নিতে পারি। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল, এখন মনে হয়ে দায়িত্বটা আমি পালন করতে পেরেছি।
এটাই কি আপনার স্মরণীয় আসর হয়ে থাকবে?
শামসুন্নাহার : স্মরণীর তালিকায় তো অবশ্যই থাকবে। বিশেষ করে আমি যেহেতু অধিনায়ক। তবে এটাকে আমি দ্বিতীয় স্থানে রাখব। প্রথমে থাকবে সিনিয়র সাফ, গত বছর নেপালে যেটা জিতলাম। কারণ আমাদের সিনিয়র দল প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছিল না। ওই আসরে আমি নিজে খেলেছি, ফাইনালে গোলও করেছি। তাই ওটাকে আমি সবার ওপরে রাখব।
সিনিয়র দল থেকে আপনাদের প্রতি কী বার্তা ছিল?
শামসুন্নাহার : সিনিয়ররা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। গ্যালারিতেও থাকতেন তারা। খেলার আগের দিন সিনিয়ররা ডাইনিংয়ে আমাদের ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা যে ম্যাচগুলো খেলেছি, সেগুলোর ভুল-ত্রুটি নিয়ে বলেছেন। দেশের মাটিতে খেলা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটা যেন কাজে লাগানোর চেষ্টা করিএসব বলে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
এই দলে আপনি এবং রুপনা চাকমা সবচেয়ে সিনিয়র। অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা দুজনের। এই জায়গাটায় নিশ্চয়ই বাড়তি দায়িত্ব ছিল?
শামসুন্নাহার : হ্যাঁ, অবশ্যই সিনিয়র হিসেবে আমাদের আলাদা দায়িত্ব ছিল এই দলকে পরিচালিত করার। নিজের জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করেছি। আগেও দু’বার যেহেতু দুটি বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়কত্ব করেছি। সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা, সবাইকে খেলানো এই চেষ্টাটা আমার ছিল।
একটু বলবেন, কীভাবে সামলাতেন দলকে?
শামসুন্নাহার : ড্রেসিংরুমে আমরা সবাই একতাবদ্ধ ছিলাম। সবাই হাতে হাত রেখে ভালো খেলার শপথ নিতাম। স্যাররা তখন বলেতেন, ‘চোখ বন্ধ কর, জোরে জোরে নিশ্বাঃস নাও। আর দেশের মানুষের কথা ভাব। মা-বাবার কথা ভাব। ১৮ কোটি মানুষের কথা ভাব।’ আমরা চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাঃস নিয়েছি আর ভেবেছি। এটা হচ্ছে ড্রেসিং রুমের কথা। আর ফাইনালে নামার আগে মাঠে আমি শুধু একটা কথাই বলেছি, আমরা মাঠে নামতে যাচ্ছি শুধুই জেতার জন্য। আগে দুটি টুর্নামেন্টন জিততে পারিনি। জিতেই কাঁদতে চেয়েছিলাম এবার। হেরে কান্নায় ভেঙে পড়তে চাইনি। স্রষ্টা আমাদের সেই আশা পূরণ করেছেন।
আরেকটু যদি বড় পরিসরের কথা বলি, সিনিয়র জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়?
শামসুন্নাহার : আমার চেয়ে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় আছেন। আমি আমার খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। সেটাই করতে চাই। আর আশার কথা যদি বলেন, সেটা তো সবারই থাকে। তবে আপাতত বর্তমান নিয়েই বেশ আছি। এভাবেই থাকতে চাই।
আপনার চোখে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অবস্থান এখন কোথায়?
শামসুন্নাহার : এটা আপনারা সবাই দেখছেন। একটার পর একটা সাফল্য আসছে নারী ফুটবলে। এখন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল। পরবর্তী লক্ষ্য থাকবে এশিয়ার মধ্যে যেন একটা অবস্থান গড়ে তুলতে পারি। স্বপ্ন থাকবে দক্ষিণ এশিয়া ছাপিয়ে এশিয়ার সেরা হওয়া।
খেলোয়াড় হিসেবে কতটা তৃপ্ত?
শামসুন্নাহার : আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। জাতীয় দলে খেলা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আমি সেটা খেলছি। যখন ফুটবল বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই লক্ষ্য ছিল জাতীয় দলে খেলার। সেই জায়গা থেকে এখন যেহেতু সুযোগ পাচ্ছি, সেটা কাজে লাগাচ্ছি।
এ পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কার?
শামসুন্নাহার : অনেকই আছেন। আমার স্যাররা ছিলেন, ভাইয়ারা ছিলেন। তবে পরিবার থেকে আসলে শুরুতে তেমন সমর্থন পাইনি। খেলতে দিতে চাইতেন না তারা। ছোট থাকতে বেশি কিছু বলত না। যখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলাম তখন বাধা দিত। বলত খেলাধুলা ভালো না। এখন অবশ্য খুব একটা সমস্যা হয় না।
ফুটবল শুরুর সময় মাকে হারিয়েছেন। আজ তাকে কতটা মিস করেন?
শামসুন্নাহার : ২০১৪ সালে আমার মা মারা যান। আমি তখন পর্যন্ত বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে খেলেছি। আমরা একবার চ্যাম্পিয়ন হলাম, এটা মা দেখে যেতে পেরেছেন। আসলে ভালো-খারাপ সবকিছু মিলিয়েই মাকে খুব মিস করি। আগে ছোট ছিলাম, বেশি বুঝতাম না। এখন বড় হচ্ছি, খারাপ লাগাটা বাড়ছে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ড্র আর হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল মোহামেডান। অবশেষে সুলেমান দিয়াবাতের হ্যাটট্রিকে স্বরূপে ফিরল তারা। ছয় ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গতকাল এএফসি উত্তরাকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে সাদা-কালোরা। মালির ফরোয়ার্ড দিয়াবাতের জ্বলে ওঠার দিনে অন্য তিন গোল করেছেন দানিয়েল ফেবলেস, আরিফ হোসেন ও সাজ্জাদ হোসেন। একই দিনে রাজশাহীতে শেখ রাসেল ১-০ গোলে হারায় ফর্টিস এফসিকে। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিনে উঠে এসেছে শেখ রাসেল।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে লিগ শুরু করা মোহামেডান ছয় ম্যাচ পর জিতল। ম্যাচের ২১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে নেন দিয়াবাতে। ৩৫ মিনিটে দারুণ ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিয়াবাতে। ৬৩ মিনিটে দিয়াবাতের অ্যাসিস্টে ফেবলেস গোল করেন। ৭০ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন দিয়াবাতে। ৮০ মিনিটে আরিফ হোসেন ম্যাচের চতুর্থ গোলটি করেন। সাত মিনিট পর সাজ্জাদ হোসেন গোল করলে স্কোরলাইন ৬-০ হয়। ৮ ম্যাচে ৯ পয়েন্টে টেবিলের ছয়ে আছে মোহামেডান।
রাজশাহীতে ফর্টিসের বিপক্ষে ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিকে চার্লস দিদিয়েরের শট জালে জড়ায়। শেষ পর্যন্ত ওই গোল ধরে রাখে শেখ রাসেল।
প্রথম তিন ম্যাচে টানা হেরেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যা দলটির জন্য বেশ লজ্জার। তবে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ৯ জয়ে সেই হতাশা দূর করেছে দলটি। একসঙ্গে এত ম্যাচ জেতা বিপিএলের টানা জয়ের রেকর্ডও। এই সাফল্য ধারায় ছুটে কাল প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা। রংপুর রাইডার্সকে ৭০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অপর ধারাবাহিক দল সিলেট স্ট্রাইকার্সকে পেয়েছেন ইমরুল কায়েসরা। কাল স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৭৭ রান তোলে কুমিল্লা। জবাবে রংপুর ৩ ওভার বাকি থাকতে মাত্র ১০৭ রানেই গুটিয়ে যায়। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে প্লে অফ নিশ্চিত করা ফরচুন বরিশালকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। আগে ব্যাট করে বরিশাল ৮ উইকেটে ১৬৯ রান করে জবাবে খুলনা তিন বল বাকি থাকতে জেতে।
গত আসরের দুই ফাইনালিস্টের ম্যাচ অবশ্য এতটা একপেশে হওয়ার ছিল না। কুমিল্লা যেমন টানা ৮ ম্যাচ জিতে এ লড়াইয়ে নেমেছিল তেমনি রংপুরও টানা ৬ ম্যাচ জিতেছিল। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই দলের পার্থক্য হয়ে গেল বিশাল। আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৫ ওভারে ৪৩ রানের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও লিটন দাশ। রিজওয়ান ২১ বলে ২৪ রান করে ফিরলেও ইনজুরি ফেরত লিটন দারুণ খেললেন ৩টি করে ছক্কা ও চারে ৩৩ বলে ৪৭ রান করে। নিচের দিকে জাকের আলি ২৩ বলে ৩ ছক্কায় ৩৪ ও খুশদীল শাহ মাত্র ২০ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন। জবাবে রংপুরের হয়ে একমাত্র রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২২ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৯ রান ছাড়া বাকিরা সবাই ফিরেছেন অল্প রানে। কুমিল্লার মোস্তাফিজের ৩ এবং সুনিল নারিন ও তানভির ইসলামের ২টি করে উইকেটে লড়াইও করতে পারেনি রংপুর।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।