
প্রথম তিন ম্যাচে টানা হেরেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যা দলটির জন্য বেশ লজ্জার। তবে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ৯ জয়ে সেই হতাশা দূর করেছে দলটি। একসঙ্গে এত ম্যাচ জেতা বিপিএলের টানা জয়ের রেকর্ডও। এই সাফল্য ধারায় ছুটে কাল প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা। রংপুর রাইডার্সকে ৭০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অপর ধারাবাহিক দল সিলেট স্ট্রাইকার্সকে পেয়েছেন ইমরুল কায়েসরা। কাল স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৭৭ রান তোলে কুমিল্লা। জবাবে রংপুর ৩ ওভার বাকি থাকতে মাত্র ১০৭ রানেই গুটিয়ে যায়। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে প্লে অফ নিশ্চিত করা ফরচুন বরিশালকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। আগে ব্যাট করে বরিশাল ৮ উইকেটে ১৬৯ রান করে জবাবে খুলনা তিন বল বাকি থাকতে জেতে।
গত আসরের দুই ফাইনালিস্টের ম্যাচ অবশ্য এতটা একপেশে হওয়ার ছিল না। কুমিল্লা যেমন টানা ৮ ম্যাচ জিতে এ লড়াইয়ে নেমেছিল তেমনি রংপুরও টানা ৬ ম্যাচ জিতেছিল। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই দলের পার্থক্য হয়ে গেল বিশাল। আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৫ ওভারে ৪৩ রানের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও লিটন দাশ। রিজওয়ান ২১ বলে ২৪ রান করে ফিরলেও ইনজুরি ফেরত লিটন দারুণ খেললেন ৩টি করে ছক্কা ও চারে ৩৩ বলে ৪৭ রান করে। নিচের দিকে জাকের আলি ২৩ বলে ৩ ছক্কায় ৩৪ ও খুশদীল শাহ মাত্র ২০ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন। জবাবে রংপুরের হয়ে একমাত্র রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২২ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৯ রান ছাড়া বাকিরা সবাই ফিরেছেন অল্প রানে। কুমিল্লার মোস্তাফিজের ৩ এবং সুনিল নারিন ও তানভির ইসলামের ২টি করে উইকেটে লড়াইও করতে পারেনি রংপুর।
ঢাকার মাঠের দল কী হবে সেটা ঠিক হবে আরব আমিরাতে! এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চলছে এই অবস্থাই। বিদেশি খেলোয়াড়দের আসা-না আসা নির্ভর করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টির ওপর। ওদিকে আমিরাতে যে দল বাদ পড়ছে, এদিকে ঢাকায় সেই দলের বিদেশি খেলোয়াড়দের চাহিদা বাড়ছে। এই আসা যাওয়ার মিছিলে দুরবস্থা কোচদের। নিজের দলের একাদশ, কৌশল ও পরিকল্পনা, প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ কোনো কিছুরই থাকছে না ঠিকঠিকানা।
বিশ্বের নানা প্রান্তে একই সঙ্গে একাধিক লিগ চলছে বলে এবারের বিপিএলে বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন উন্মুক্ত রেখেছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। সেই সুযোগে একেকটা দল যেন হয়ে উঠেছে ‘লোকাল বাস’। কোন বিদেশি কখন আসছেন, কখন যাচ্ছেন কোনো কিছুই ঠিক নেই। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের পাকিস্তান সুপার লিগ খেলতে ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই দেশে ফেরার কথা থাকলেও কেউ কেউ দেশে ফিরে আবার এক ম্যাচের জন্য খেলতে চলে এসেছেন। মোহাম্মদ আমির, ইমাদ ওয়াসিম, ইফতিখার আহমেদরা দল ছেড়ে দেশে গিয়ে পৌঁছানোর আগেই তাদের ফিরে আসার খবর চাউর হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্লে-অফে ওঠা চার দলের বিদেশি খেলোয়াড় তালিকাতেও আমূল পরিবর্তন, একেবারে খোলনলচে পালটে যাওয়ার দশা। ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান সুপার লিগ আর ঠিক তার আগের দিন দুবাইতে ফাইনাল হবে আইএল টি-২০-এর। তাই পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের জায়গায় আসছেন আইএল টি-২০ এর ফাইনালে উঠতে না পারা দলের খেলোয়াড়রা। রংপুর রাইডার্সের কোচ সোহেল ইসলাম সেটাই বললেন ম্যাচ শেষে, ‘প্রথম থেকে যেটা আলোচনা হচ্ছে, কে আসবে আর কে আসতে পারবে না, সেটা আইএলটি-২০ এর ওপর নির্ভর করছে। আসলে এটা নির্ভর করবে আজকের ম্যাচে কে জিতবে সেটার ওপর। সেখানে যারা এভেইলেবল হবে, তাদেরই আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’ রংপুরের মোহাম্মদ নাওয়াজ, শোয়েব মালিক, হারিস রউফরা ফিরে গেছেন পাকিস্তানে। আইএল টি-২০ খেলে আসা ইংলিশ ক্রিকেটার টম কোহলার-ক্যাডমোরও চলে যাবেন পিএসএল খেলতে। ক্রিকেটারদের এই আসা যাওয়ার মিছিল কাজটা কঠিন করে দিয়েছেন কোচদের জন্য, জানালেন সোহেল, ‘আমার কাছে মনে হয় এটাই বিপিএলের কোচদের জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এত বেশি অদলবদল হওয়ার কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদেশি নেই। যে জায়গার প্লেয়ারকে চাচ্ছি তাকে পাচ্ছি না। যে জায়গাগুলো আমাদের ফিলাপ করা প্রয়োজন, সেখানে আমরা ওভারসিজ প্লেয়ার নেওয়ার চেষ্টা করি। এটা খুবই ডিফিকাল্ট হয়ে যায়, দেখা যায় দুটো বিদেশি প্লেয়ার চেইঞ্জ হলে গোটা টিমের কম্বিনেশনটাই বদলে যাচ্ছে, এটা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ।’ খেলোয়াড়ের অদলবদলে নিজেদের দল সাজানোটা যেমন হয়ে উঠেছে কঠিন, তেমনি প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিশ্লেষণ করাটাও হয়ে উঠেছে কঠিন; কারণ কে কখন যে খেলতে আসছে সেটা কেউই যে জানে না! সোহেলই বললেন, ‘এটা আসলেই খুব ডিফিকাল্ট। আমরা ভিডিও অ্যানালিস্ট রাখি, আমরা সেগুলো দেখি এবং তা দেখেই আমরা গেমপ্লেন সাজাই। তো এটা আসলেই কঠিন হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জিং হয়, আমরা একটা বিদেশিকে মাথায় রেখে প্ল্যান সাজাই কিন্তু মাঠে এসে দেখি একাদশে সে নেই। মাঠে আসার আগে পাওয়ার প্লেতে একভাবে খেলব বলে পরিকল্পনা সাজাই, কিন্তু মাঠে এসে সেটা বদলে ফেলতে হচ্ছে। তবে এটা নিয়েই আমাদের চলতে হবে। সব দলেই এই চ্যালেঞ্জ থাকছে’, শুক্রবার ম্যাচশেষে জানিয়েছেন রংপুরের কোচ।
এতে করে যে কোচদের শুধু নয়, সমস্যা হচ্ছে খেলোয়াড়দেরও। টম কোহলার-ক্যাডমোর দুবাইতে সপ্তাহ তিনেক কাটানোর পর বাংলাদেশে এসে দুটো ম্যাচ খেলেছেন, তাতে করেছেন ২০ এবং ১ রান। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর রংপুর দলও তাকে ছেঁটে ফেলতে পারলেই বাঁচে! কারণ আরও অনেকেই যে আসার অপেক্ষায়। সোহেল অবশ্য ক্রিকেটারের খুব একটা দোষ দেখছেন না, ‘(আগের রাতে এসে পরের দিন খেলতে নামা) অবশ্যই কঠিন। কারণ আমাদের গুরবাজ আগের রাতে এসেই পরের দিন খেলতে নেমেছে। আসলেই তাদের জন্য কষ্টসাধ্য, কারণ ভেতরের যে প্রস্তুতি সেটা তারা করে ওঠার আগেই নেমে যেতে হচ্ছে মাঠে। তাই তাদের জন্য সেরাটা ডেলিভার করা কঠিন হয়ে ওঠে।
আজ দক্ষিণ আফ্রিকার টি-২০ লিগের ফাইনাল। ওই লিগে খেলা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের দল হয়েছে পঞ্চম, তাই আগেভাগেই ছুটি পাওয়াতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার, খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। ইংলিশ পেসার রিস টপলিরও খেলার কথা বরিশালের হয়ে। এসএ ২০ খেলে শারজায় দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে একটা ম্যাচ খেলেছেন টপলি। সেই ম্যাচে এমআই এমিরেটসের কাছে হার তার দলকে ছিটকে দিয়েছে আসর থেকে, তাই টপলিও চলে আসতে পারছেন বাংলাদেশে। ইংল্যান্ড দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের আগে বিপিএলে খেলার অভিজ্ঞতাটা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে তাকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা মোহাম্মদ রিজওয়ানও বলে গেলেন, ‘আমার জায়গায় কে আসবে আমি জানি না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, কোনো বড় নাম খুঁজতে না যাওয়া। যে জায়গাটাতে যে পারবে তাকেই দলে নেওয়া।’
যে দল নিয়ে আসর শুরু করেছিল প্লে-অফের চার ফ্র্যাঞ্চাইজি, এখন সেই দলের চেহারায় অনেক বদল। নতুন সব বিদেশি মুখ চার দলেই। সবই সরাসরি সই করানো, তাই কত টাকায় এই খেলোয়াড়দের সই করানো হয়েছে সেসব জানারও সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে বদলে গেছে দলগুলোর শক্তিমত্তার সমীকরণও, ১২টা করে লিগ ম্যাচ খেলার পর তাই দল সাজাতে হচ্ছে প্রায় নতুন করেই। যেটা ঠিক হচ্ছে আরব আমিরাতের লিগের খেলার ফলের ওপর।
প্রথম দিনই ব্যাকফুটে থেকে শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় দিন ম্যাচে ফেরার যে আশা ছিল সফরকারীদের, তা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন স্বাগতিক ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অধিনায়ক হিসেবে এ সিরিজটা নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ রোহিতের জন্য। এমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরিটা (১২০ রান) করে ফেললেন। তার ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ৩২১ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ভারত। দ্বিতীয় দিনে যতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, সেটা অভিষিক্ত টড মারফির ৫ উইকেটের কল্যাণে। তবে অক্ষর প্যাটেল ও রবীন্দ্র জাদেজার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচে ফেরার আশা এখন সুতোয় ঝুলছে অস্ট্রেলিয়ার। এর মধ্যেই নাগপুরের স্পিননির্ভর উইকেটে প্রথম ইনিংসেই ভারত এগিয়ে গেছে ১৪৪ রানে।
২৪০ রানে ভারতের সপ্তম উইকেট পড়েছিল। শ্রীকর ভরতকে ফিরিয়ে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন মারফি। তখন মাত্র ৬৩ রানের লিড ছিল ভারতের। তবে অষ্টম উইকেটে পুরো ৩১ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে ৮১ রানের জুটি গড়েন প্যাটেল ও জাদেজা। ১৭০ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত আছেন জাদেজা। আর অক্ষর প্যাটেলের নামের পাশে ১০২ বলে ৫২। জাদেজা এ নিয়ে ষষ্ঠবার এক টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট ও হাফ সেঞ্চুরি করলেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণভাবে ম্যাচে রেখেছিলেন মারফি। ক্যারিয়ারের মাত্র অষ্টম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামা মারফি বিরাট কোহলিকে ১২ রানে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারের ক্যাচে পরিণত করেন। আর চেতেশ্বর পূজারা মাত্র সাত রাতে বোল্যান্ডের তালুবন্দি হন মারফির বলে। সেরা দুই ব্যাটারকে তোলার পর অশ্বিন ও ভরতকেও সাজঘরে ফেরান। আগের দিন নিয়েছিলেন লোকেশ রাহুলের উইকেট। মাত্র ২২ বছরে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন মারফি। ২১ বছরে ৫ উইকেট নিয়ে এই রেকর্ড দখলে রেখেছেন ডেনিস লিলি। তবে মারফির কীর্তি মøান হয়েছে রোহিত শর্মার ব্যাটে। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক ও খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়লেন তিনি।
সৌদি প্রো-লিগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোলের খাতা খুলেছিলেন আগের ম্যাচে। তবে সেটি ছিল পেনাল্টি থেকে। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, মরুতে এসেও সিআরসেভেন জ্বলে উঠতে পারবেন না, গোলের জন্য ধুঁকতে হবে। সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করলেন এক ম্যাচেই। বৃহস্পতিবার মক্কায় আল-নাসর ৪-০ গোলে হারিয়েছে আল-ওয়েহদাকে। যার চার গোলই করেছেন পর্তুগিজ তারকা।
ম্যাচের শুরুতে রোনালদো বেশ কয়েকবার বলে নিয়ন্ত্রণ হারান। তবে ২১ মিনিটে করেন প্রথম গোলটি। এই গোলে রোনালদো অনন্য এক মাইলফলকে পৌঁছান, ৫০০তম লিগ গোলের চূড়া স্পর্শ করেন। রোনালদো তার দ্বিতীয় গোলটি পান ৪০ মিনিটে। ৫৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ক্যারিয়ারের ৬১তম হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। বয়স যত বেড়েছে তিন সংখ্যার এই ম্যাজিকাল ফিগারটা আরও আপন করে নিয়েছেন পাঁচবারের ব্যালন-ডি-অর জয়ী ফরোয়ার্ড। বয়স ৩০ হওয়ার আগে তার ছিল ৩০টি হ্যাটট্রিক। ৩০-এর পর বর্তমান ৩৮ এই আট বছরে করেছেন আরও ৩১টি। ৬১ মিনিটে দলের ও নিজের চতুর্থ গোলটি করে আল-ওয়েহদার মাঠে আল-নাসরের সমর্থকদের দারুণ এক উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেন রোনালদো।
সৌদি আরবে দারুণভাবে জ্বলে ওঠার রাতে নিজেদের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট টুইট করতে ভুলেননি পর্তুগাল অধিনায়ক, ‘চার গোল এবং ৫০০তম লিগ গোলে পৌঁছাতে পারার অনুভূতি অনন্য। এটা দলের দারুণ এক জয়।’ এ নিয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এগারোবারের মতো এক ম্যাচে চার বা তার বেশি গোল করলেন রোনালদো। এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরো বাছাইয়ে লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে চার গোল করেছিলেন তিনি। ক্লাবের ম্যাচে এর আগে সবশেষ চার গোল করেছিলেন ২০১৮ সালের রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিরোনার বিপক্ষে লা লিগায়।
পাঁচটি ভিন্ন লিগে খেলে রোনালদোর লিগ গোলসংখ্যা এখন ৫০৩টি। তার মধ্যে ১০৩টি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, রিয়ালের হয়ে লা লিগায় ৩১১টি, সিরি’আ-তে জুভেন্তাসের হয়ে ৮১, পর্তুগিজ লিগে স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে ৩টি এবং সৌদি প্রো লিগে নাসরের হয়ে ৫টি।
রোনালদোর এনে দেওয়া পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে আল-নাসর। ১৬ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৩৭। এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান পয়েন্টে দুইয়ে আল-শাবাব।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। বাংলাদেশ অধিনায়ক দেশকে শিরোপা এনে দেওয়ার পাশাপাশি আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সর্বোচ্চ পাঁচ গোলের সুবাদে। একান্ত সাক্ষাৎকারে চ্যাম্পিয়ন এই ফুটবলারের ভেতরটাই তুলে এনেছেন দেশ রূপান্তরের তোফায়েল আহমেদ
নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন। বৃহস্পতিবার রাতটা তো ছিল শুধুই আপনাদের। উৎসব কেমন হলো?
শামসুন্নাহার : মাঠ থেকে বাফুফে ভবনে (মেয়েদের আবাসিক ক্যাম্প) আসার পর সিনিয়র ও জুনিয়র খেলোয়াড়রা মিলে একসঙ্গে অনেক মজা করেছি। এরপর বিশ্রাম নিয়েছে সবাই। আমার অবশ্য রাতেই একটি টিভি প্রোগ্রামে যেতে হয়েছিল। সেভাবে বিশ্রাম নেওয়া হয়নি। সকাল থেকেও একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে।
এমনিতে তো এসব ক্ষেত্রে অনেক রাত পর্যন্ত পার্টি চলে। আপনাদের বেলায় তেমন কিছু হয়নি?
শামসুন্নাহার : আসলে সবাই অনেক ক্লান্ত ছিল। সবাই তাই তারাতাড়িই ঘুমিয়ে গেছে। আজ (কাল) তো শুক্রবার। সবাই ফোন পেয়েছে। তাই পরিবারের সঙ্গে ব্যস্ত সবাই। ফোন জমা দেওয়ার পর হয়তো আড্ডা দেব একসঙ্গে।
তার মানে আসল উৎসব এখনো হয়নি। কী পরিকল্পনা করছেন?
শামসুন্নাহার : তেমন কিছু না। উৎসব যা করার মাঠেই করেছি। এগুলো নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। সামনের মাসে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাই রয়েছে। এখন ওই দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।
পুরো আসরকে মূল্যায়ন করতে বললে কী বলবেন?
শামসুন্নাহার : এই দলটা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে অনুশীলনে রয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে আমি এ নিয়ে তিনটি টুর্নামেন্ট খেললাম একই দল নিয়ে। আগের দু’বারই আমরা রানার্স-আপ হই। ২০১৯ সালে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে টাইব্রেকারে হেরে যাই। গত বছর জামশেদপুরে অনূর্ধ্ব-১৮ সালে শেষ ম্যাচ জেতার পরও গোল ব্যবধানে শিরোপা জিততে পারিনি। অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগে আমাদের এই দলটার অনেকেরই এটা ছিল শেষ আসর। অভিযান শুরুর আগে ভেবেছি, এটাই শেষ সুযোগ। তা ছাড়া দেশের মাটিতে খেলা। সবার আশা ছিল শিরোপাটা যেন ঘরেই রাখতে পারি। অনেকেই অনেক কথা বলেছিল যে আমরা পারব না। তবে আমাদের মধ্যে জেদ ছিল যে, অবশ্যই আমরা পারব। দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছি। সবার দোয়ায় এই শিরোপাটা পেয়েছি।
আগের দুবার হয়নি। তাই কি একটু চাপে ছিলেন?
শামসুন্নাহার : সত্যি বলতে, এটা নিয়ে আমরা ভাবিনি। আমরা শুধু একটা জিনিসই ভেবেছি, জেতার জন্য মাঠে নামব। লিগপর্বে তিনটি ম্যাচ আমরা ভালোভাবেই পেরিয়েছিলাম। ফাইনালে সর্বোচ্চটা দেব, দেশের মানুষের সম্মান রক্ষা করব। ঘরের ট্রফি ঘরে রাখব। এই লক্ষ্যই ছিল।
পাঁচ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। টুর্নামেন্টের সেরাও হলেন। নিশ্চয় এই টুর্নামেন্টটা অনেক দিন মনে গেঁথে থাকবে?
শামসুন্নাহার : দেখুন, প্রথমত আমি আমার দলের জন্য খেলেছি। চেয়েছি আমার দল জিতুক। যাকে দিয়ে গোল করানো দরকার তাকে দিয়ে গোল করানো হয়েছে। আমি যে সুযোগগুলো পেয়েছি, সেগুলো কাজে লাগিয়েছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে। আমি চেষ্টা করেছি যেন দলটাকে এগিয়ে নিতে পারি। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল, এখন মনে হয়ে দায়িত্বটা আমি পালন করতে পেরেছি।
এটাই কি আপনার স্মরণীয় আসর হয়ে থাকবে?
শামসুন্নাহার : স্মরণীর তালিকায় তো অবশ্যই থাকবে। বিশেষ করে আমি যেহেতু অধিনায়ক। তবে এটাকে আমি দ্বিতীয় স্থানে রাখব। প্রথমে থাকবে সিনিয়র সাফ, গত বছর নেপালে যেটা জিতলাম। কারণ আমাদের সিনিয়র দল প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছিল না। ওই আসরে আমি নিজে খেলেছি, ফাইনালে গোলও করেছি। তাই ওটাকে আমি সবার ওপরে রাখব।
সিনিয়র দল থেকে আপনাদের প্রতি কী বার্তা ছিল?
শামসুন্নাহার : সিনিয়ররা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। গ্যালারিতেও থাকতেন তারা। খেলার আগের দিন সিনিয়ররা ডাইনিংয়ে আমাদের ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা যে ম্যাচগুলো খেলেছি, সেগুলোর ভুল-ত্রুটি নিয়ে বলেছেন। দেশের মাটিতে খেলা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটা যেন কাজে লাগানোর চেষ্টা করিএসব বলে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
এই দলে আপনি এবং রুপনা চাকমা সবচেয়ে সিনিয়র। অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা দুজনের। এই জায়গাটায় নিশ্চয়ই বাড়তি দায়িত্ব ছিল?
শামসুন্নাহার : হ্যাঁ, অবশ্যই সিনিয়র হিসেবে আমাদের আলাদা দায়িত্ব ছিল এই দলকে পরিচালিত করার। নিজের জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করেছি। আগেও দু’বার যেহেতু দুটি বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়কত্ব করেছি। সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা, সবাইকে খেলানো এই চেষ্টাটা আমার ছিল।
একটু বলবেন, কীভাবে সামলাতেন দলকে?
শামসুন্নাহার : ড্রেসিংরুমে আমরা সবাই একতাবদ্ধ ছিলাম। সবাই হাতে হাত রেখে ভালো খেলার শপথ নিতাম। স্যাররা তখন বলেতেন, ‘চোখ বন্ধ কর, জোরে জোরে নিশ্বাঃস নাও। আর দেশের মানুষের কথা ভাব। মা-বাবার কথা ভাব। ১৮ কোটি মানুষের কথা ভাব।’ আমরা চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাঃস নিয়েছি আর ভেবেছি। এটা হচ্ছে ড্রেসিং রুমের কথা। আর ফাইনালে নামার আগে মাঠে আমি শুধু একটা কথাই বলেছি, আমরা মাঠে নামতে যাচ্ছি শুধুই জেতার জন্য। আগে দুটি টুর্নামেন্টন জিততে পারিনি। জিতেই কাঁদতে চেয়েছিলাম এবার। হেরে কান্নায় ভেঙে পড়তে চাইনি। স্রষ্টা আমাদের সেই আশা পূরণ করেছেন।
আরেকটু যদি বড় পরিসরের কথা বলি, সিনিয়র জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়?
শামসুন্নাহার : আমার চেয়ে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় আছেন। আমি আমার খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। সেটাই করতে চাই। আর আশার কথা যদি বলেন, সেটা তো সবারই থাকে। তবে আপাতত বর্তমান নিয়েই বেশ আছি। এভাবেই থাকতে চাই।
আপনার চোখে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অবস্থান এখন কোথায়?
শামসুন্নাহার : এটা আপনারা সবাই দেখছেন। একটার পর একটা সাফল্য আসছে নারী ফুটবলে। এখন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল। পরবর্তী লক্ষ্য থাকবে এশিয়ার মধ্যে যেন একটা অবস্থান গড়ে তুলতে পারি। স্বপ্ন থাকবে দক্ষিণ এশিয়া ছাপিয়ে এশিয়ার সেরা হওয়া।
খেলোয়াড় হিসেবে কতটা তৃপ্ত?
শামসুন্নাহার : আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। জাতীয় দলে খেলা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আমি সেটা খেলছি। যখন ফুটবল বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই লক্ষ্য ছিল জাতীয় দলে খেলার। সেই জায়গা থেকে এখন যেহেতু সুযোগ পাচ্ছি, সেটা কাজে লাগাচ্ছি।
এ পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কার?
শামসুন্নাহার : অনেকই আছেন। আমার স্যাররা ছিলেন, ভাইয়ারা ছিলেন। তবে পরিবার থেকে আসলে শুরুতে তেমন সমর্থন পাইনি। খেলতে দিতে চাইতেন না তারা। ছোট থাকতে বেশি কিছু বলত না। যখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলাম তখন বাধা দিত। বলত খেলাধুলা ভালো না। এখন অবশ্য খুব একটা সমস্যা হয় না।
ফুটবল শুরুর সময় মাকে হারিয়েছেন। আজ তাকে কতটা মিস করেন?
শামসুন্নাহার : ২০১৪ সালে আমার মা মারা যান। আমি তখন পর্যন্ত বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে খেলেছি। আমরা একবার চ্যাম্পিয়ন হলাম, এটা মা দেখে যেতে পেরেছেন। আসলে ভালো-খারাপ সবকিছু মিলিয়েই মাকে খুব মিস করি। আগে ছোট ছিলাম, বেশি বুঝতাম না। এখন বড় হচ্ছি, খারাপ লাগাটা বাড়ছে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ড্র আর হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল মোহামেডান। অবশেষে সুলেমান দিয়াবাতের হ্যাটট্রিকে স্বরূপে ফিরল তারা। ছয় ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গতকাল এএফসি উত্তরাকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে সাদা-কালোরা। মালির ফরোয়ার্ড দিয়াবাতের জ্বলে ওঠার দিনে অন্য তিন গোল করেছেন দানিয়েল ফেবলেস, আরিফ হোসেন ও সাজ্জাদ হোসেন। একই দিনে রাজশাহীতে শেখ রাসেল ১-০ গোলে হারায় ফর্টিস এফসিকে। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিনে উঠে এসেছে শেখ রাসেল।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে লিগ শুরু করা মোহামেডান ছয় ম্যাচ পর জিতল। ম্যাচের ২১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে নেন দিয়াবাতে। ৩৫ মিনিটে দারুণ ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিয়াবাতে। ৬৩ মিনিটে দিয়াবাতের অ্যাসিস্টে ফেবলেস গোল করেন। ৭০ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন দিয়াবাতে। ৮০ মিনিটে আরিফ হোসেন ম্যাচের চতুর্থ গোলটি করেন। সাত মিনিট পর সাজ্জাদ হোসেন গোল করলে স্কোরলাইন ৬-০ হয়। ৮ ম্যাচে ৯ পয়েন্টে টেবিলের ছয়ে আছে মোহামেডান।
রাজশাহীতে ফর্টিসের বিপক্ষে ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিকে চার্লস দিদিয়েরের শট জালে জড়ায়। শেষ পর্যন্ত ওই গোল ধরে রাখে শেখ রাসেল।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কো-স্পোর্টস যতটা না তাদের কর্মগুণে সমাদৃত, তার চেয়ে বেশি আলোচিত নানা নেতিবাচক কারণে। একটা সময় কে-স্পোর্টস ও এর প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিমে আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বড় বড় সব চুক্তিও সে সময় হয়েছিল দুই পক্ষের। তবে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গ করে বিসিবির গুড বুক থেকে কাটা গেছে তাদের নাম।
বিসিবিতে সুবিধা করে উঠতে না পেরে গেল কয়েক বছর ফাহাদ করিম সওয়ার হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনে। বাফুফের এই আলোচিত সভাপতি একটা সময় বড় গলায় ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, বিসিবির বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো সস্তা আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
অথচ ফাহাদের পাল্লায় পড়ে সেই সালাউদ্দিনই নিজের বলা কথা ভুলে গেছেন। তৎপর হয়েছেন নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে। যদিও এমন আয়োজনের জন্য কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না কে-স্পোর্টসের। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত না করেই আসর মাঠে গড়ানোর তারিখ ঘোষণা করা এবং অনুমিতভাবেই ঘোষিত তারিখে খেলা শুরু করতে না পারা।
কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের দহরম মহরম বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সেটা কখনো কখনো ফুটবলের স্বার্থ ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তিস্বার্থে। সাফল্যপ্রসবা নারী ফুটবলে বেশি আগ্রহ সালাউদ্দিনের। ক্রীড়া-বেনিয়া ফাহাদও সালাউদ্দিনের নারী ফুটবলের প্রতি বাড়তি অনুরাগটা ধরে ফেলে ২০১৯ সালে বাফুফেতে প্রবেশ করেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
এর পরের বছর টিভি সম্প্রচারস্বত্ব পাইয়ে দিতে বাফুফের সঙ্গে তিন বছরের বড় অঙ্কের চুক্তি করে কে-স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে ফি-বছর আড়াই কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা কে-স্পোর্টসের। সেই অর্থ বুঝে না পেয়ে সম্প্রতি ফাহাদ করিমকে চিঠি দেয় বাফুফে।
বিষয়টি সমাধান না হলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে চুক্তি না করার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। তবে এই চিঠি দেওয়া যে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, তা সালাউদ্দিন-ফাহাদ করিমের হাবভাবেই বোঝা যায়। চুক্তির বিষয়টাকে এক পাশে রেখে আসলে তাদের বড় দুর্ভাবনা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
পাঁচ তারকা হোটেলে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নামীদামি নায়ক-নায়িকা-মডেল ভাড়া করে এনে ফাহাদ করিম এর মধ্যেই আসরের লোগো, ট্রফি ও বল উন্মোচন করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ১ মে হওয়ার কথা ছিল আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটস। সেদিন ড্রাফটসের জায়গায় হয়েছে ট্রফি ও বল উন্মোচন অনুষ্ঠান। কে-স্পোর্টস যে ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত করতে পারেনি, প্লেয়ার ড্রাফটসটা হবেই বা কাদের নিয়ে?
এই অবস্থা এখনো চলমান। ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। সেই তারিখও ভেস্তে গেছে। আসলে অনিয়ম-জালিয়াতির আখড়ায় রূপ নেওয়া বাফুফের প্রতি আস্থা হারিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেচে কেউই চায় না ফাহাদ-সালাউদ্দিনের দেওয়া টোপ গিলতে। এমনকি ফুটবলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুরুতে এ আসরটি ছয় দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দলসংখ্যা নামিয়ে আনা হয় চারে। জানা গেছে, বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বারবার গিয়েও খেলতে রাজি করাতে পারেননি ফাহাদ। অথচ তারপরও এই ফাহাদে সালাউদ্দিনের আস্থা টলেনি।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সভা করেন। বৈঠক শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় ফাহাদ করিম যা বলেছিলেন, তাতে পরিষ্কার নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
দেশ রূপান্তরকে ফাহাদ বলেছেন, ‘দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। বড় কোনো অগ্রগতি হলে আমি সবাইকে ডেকে জানাব।’
গত সোমবার বাফুফের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন নতুন করে লিগ শুরুর তারিখ ঘোষণা করেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওমেন্স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ১০ জুন থেকে শুরু হবে। ১২ দিনে হবে ১৩ টি ম্যাচ। এটা এখন বলা দরকার যে, ফিফা উইন্ডোতে লিগ করছি। যেন বিদেশি খেলোয়াড় আসতে পারে। না হলে আসতে পারবে না।’
নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে আদৌ নির্ধারিত তারিখে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
গত বছর নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মাঠে ফেরার দিন গুনছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সাফ জয়ের পর সালাউদ্দিন শুনিয়েছিলেন গালভরা বুলি। সাবিনাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করবেন। অথচ লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া আর খেলারই সুযোগ আসেনি। অথচ অর্থ সংকটের খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বাফুফে মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠায়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
ফিফা উইন্ডোতেও বাফুফে পারেনি দলের জন্য প্রতিপক্ষ জোগাতে। পাঁচ তারকা হোটেলের চোখ ঝলসানো মায়াবী আলো আর সুরের মূর্ছনায় ফাহাদ করিম আয়োজন করেছিলেন লোগো, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়ে সাবিনারাও দেখেছিলেন বাড়তি কিছু উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন। তবে বাফুফের অদূরদর্শী সভাপতি অপ্রস্তুত এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যেন সাবিনাদের স্বপ্নটাকেই আরেকবার গলাটিপে ধরতে চাইছেন।
এক লোক হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) কে প্রশ্ন করল, নামাজের সময় কাতারের কোন পাশে দাঁড়ানো উত্তম? প্রথম কাতারের ডান পাশে না কি বাম পাশে? তখন সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, প্রথমে দেখো খাবারের জন্য রুটির যে টুকরোটা নিয়েছে তা হালাল না কি হারাম? তুমি কাতারের যেখানেই নামাজ আদায় করো তা তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তুমি নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করো, তুমি নামাজ কোথায় আদায় করবে? অথচ তুমি এমন একটি কাজে লিপ্ত যা তোমাকে নামাজ কবুল হওয়া থেকে বিরত রাখে!
একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমরা কি জানো প্রকৃত দরিদ্র কে? তারা বললেন, দরিদ্র তো সে যার কোনো দিনার-দেরহাম নেই (অর্থকড়ি নেই)। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র সে, কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাতের সওয়াব নিয়ে আসবে; কিন্তু সে একে গালি দিয়েছে, ওকে প্রহার করেছে, অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণ করেছে, তখন এই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, ওই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, অতঃপর যখন তার সওয়াব শেষ হয়ে যাবে তখন অন্য পাওনাদাররা তাদের অপরাধগুলো এই লোককে দিয়ে দেবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর সুফিয়ান সাওরি (রহ.) লোকটিকে বলেন, তুমি প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করলে তাতে কী লাভ; যদি তুমি মানুষের হক নষ্ট করো, অন্যের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো? সুতরাং তুমি হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো।
নবী কারিম (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না এবং তিনি মুমিন বান্দাদের তাই আদেশ করেছেন যা তিনি নবী-রাসুলদের আদেশ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুলরা, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎ কাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।’ সুরা মুমিনুন : ৫১
এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা পবিত্র খাবারকে নেক আমলের পূর্বে এনেছেন। অর্থাৎ নামাজ আদায়, দিনের বেলা রোজাপালন, রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি ও কোরআন তেলাওয়াতের পূর্বে হালাল খাবারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা এখানে রাসুলদের উদ্দেশ করে বলেছেন, হে রাসুলরা! তোমরা হালাল খাবার গ্রহণ করো। এরপর তিনি বলেছেন এবং সৎ আমল করো। অর্থাৎ নেক আমলের পূর্বে হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, যাতে হারাম খাবার গ্রহণের কারণে নেক আমলগুলো নষ্ট না হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা পবিত্র বস্তু গ্রহণ করো এবং সৎ আমল করো।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত ধূলোমলিন চুল ও চেহারাওয়ালা এক লোকের উপমা দিয়ে বলেছেন, সে আসমানের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! তিনি বলেন, অথচ তার খানাপিনা হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম, সে যা ভক্ষণ করে তা হারাম, তাহলে তার দোয়া কবুল হবে কীভাবে?
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, হালাল খাবার মানুষের মেধা, ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। সুতরাং এ প্রশ্ন করা অবান্তর, আমাদের দোয়া কবুল করা হয় না। দোয়া কবুল না হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ না করা। বস্তুত সমস্যা দোয়ার মধ্যে নয়, সমস্যা আমার-আপনার মধ্যে। আপনি খাবারকে পবিত্র রাখুন, দেখবেন আপনার দোয়াগুলো কবুল হচ্ছে।
একজন হারাম কজে লিপ্ত, অন্যায়ভাবে মানুষের হক ভক্ষণকারী, শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেন না, বাড়ির অসহায় কাজের মেয়েটির প্রাপ্য ভাতা প্রদান করেন না, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না আর সেই আপনিই আবার অভিযোগ করেন আমার দোয়া কবুল হয় না?
একটু ভাবুন, চিন্তা করুন। সর্বদা পবিত্র খাবার খাওয়ার, পবিত্র পোশাক পরিধানের চেষ্টা করুন। দয়াময় আল্লাহ আপনাকে বঞ্চিত করবেন না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।