
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের শিরোপা জিতেছে সানরাইজার্স ইস্টার্ন কেপ। গতকাল জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ফাইনালে প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে তারা। টস জিতে প্রিটোরিয়াকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠান সানরাইজার্স অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। দারুণ স্পিনে প্রিটোরিয়াকে ১৩৫ রানে আটকে দেন বাঁহাতি স্পিনার ভ্যান ডার মারউই। ৩১ রানে ৪ উইকেট নেন নেদারল্যান্ডসের এই স্পিনার। দুটি করে উইকেট নেন মাগালা ও বার্টম্যান। ওপেনার রসিংটনের ৩০ বলে ৫৭ রান, মার্করামের ২৬, আর হারম্যানের ২২ রানে ২২ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছায় সানরাইজার্স। ৩৬৬ রান ও ১১ উইকেট নিয়ে মার্করাম হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা। ম্যাচসেরা হন মারউই। আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোই এই আসরের দলগুলোর মালিকানা কিনেছিল।
দুই দলেই তারার মেলা। প্লে-অফ নিশ্চিত করার পর রংপুর রাইডার্স সই করিয়েছে একঝাঁক বিদেশিকে। মুজিব-উর-রহমান, দাশুন শানাকা, ডুয়াইন ব্রাভো আর নিকোলাস পুরান একাদশে। তাই আসরে রংপুরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের জায়গা হয় না একাদশে! অন্যদিকে ফরচুন বরিশালও উড়িয়ে এনেছে আন্দ্রে ফ্লেচার আর ভানুকা রাজাপাকসেকে, আগের ম্যাচ থেকে তারা পেয়েছে ডুয়াইন প্রিটোরিয়াসকে। সঙ্গে করিম জানাত তো আছেনই। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ তো আছেনই। এত এত ভিনদেশি আর দেশি তারকার ভিড়ে হিসাবের বাইরে থাকা শামীম হোসেনই হয়ে গেলেন রংপুরের তুরুপের তাস। ফরচুন বরিশালের ৩ উইকেটে করা ১৭০ রান তাড়া করে ৩ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে ‘এলিমিনেটর’ ম্যাচটা জিতেছে রংপুর রাইডার্স। কাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তাদের প্রতিপক্ষ সিলেট স্ট্রাইকার্স/কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
টস জিতে বোলিং নেন রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। বরিশালের হয়ে ইনিংসের সূচনায় মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে আন্দ্রে ফ্লেচার। দুবাইতে আইএল টি-২০’র ম্যাচ খেলার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের ভেতর বিপিএলে মাঠে নামলেন এই ক্যারিবিয়ান, তবে প্রত্যাশার তুলনায় তার কাছ থেকে বরিশালের প্রাপ্তি সামান্যই। ১৬ বলে করেছেন ১২ রান, একটা মাত্র চার তাতে। ফ্লেচার আউট হওয়ার পর তিনে সাকিব নিজে না এসে পাঠালেন মাহমুদউল্লাহকে। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যান, দলের অধিনায়ক নিজে না এসে কেন মাহমুদউল্লাহকে পাঠালেন সেই ব্যখ্যা অবশ্য ম্যাচ শেষে দিয়েছেন কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তবে ততক্ষণে বিপিএল শেষ বরিশালের।
মাহমুদউল্লাহ খারাপ করেননি, ১৩. ৩ ওভারে শানাকার বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেছেন ২১ বলে ৩৪। মিরাজের ইনিংসটা শেষ হয়েছে ৪৮ বলে ৬৯ রানে। জানাত ২৫ বলে ৩৩* আর রাজাপাকসে ১০ বলে ১৭* রান করেন, বরিশালের রান ২০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১৭০। অথচ ১২ ওভার শেষে ১০১/১ ছিল বরিশাল, সেখান থেকে ১৯০-২০০ রান হতে পারত অনায়াসে। রংপুরের বোলাররা খুব যে ভালো বল করেছেন তাও নয়, বরং আত্মতৃপ্তিতে ভুগেই হয়তো রান তোলার গতিটা বাড়াননি বরিশালের ব্যাটসম্যানরা। সাকিব ড্রেসিংরুমেই বসে থাকলেন, আগের ম্যাচে ২৯ বলে ৪৮ রান করা প্রিটোরিয়াসও ব্যাটিং পেলেন না। তাই রানটাও সেই অনুপাতে বাড়ল না।
রান তাড়ায় শুরুতেই নাইম হাসানকে আউট করে মেডেন উইকেট সাকিবের। প্রথম ৩ ওভার শেষে রংপুরের রান ১ উইকেটে ৮। সেখান থেকেই রনি তালুকদার আর শামিমের ‘কাউন্টার অ্যাটাক’। প্রিটোরিয়াসের করা ম্যাচের চতুর্থ ওভারে ১৭ রান নেন দুজনে। সাকিবের করা তৃতীয় ওভারে ১৫, চেঞ্জে আসা মিরাজের ওভার থেকে ১৫। পাওয়ার প্লে শেষে রংপুর ১ উইকেটে ৫৫ রান। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে রনি ২৯ রানে আউট হলেও শামীম রান রেটটা পড়তে দেননি। সোহান (১৮), নিকোলাস পুরান (৫) থিতু হতে না পারলেও শানাকা এসে হাল ধরেন। আরেক ভিনদেশি ব্রাভোও ব্যর্থ, তবে শেষ করলেন শেখ মাহেদী হাসান। যদিও তাতে ভাগ্যের ছোঁয়া। উইকেটের পেছন দিয়ে পাওয়া দুটো বাউন্ডারি, খালেদের নো বল এসবই জিতিয়ে দিয়েছে রংপুরকে।
৫১ বলে ৭১ রানের ইনিংস (৫৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ) খেলে ম্যাচসেরা শামীম। অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর বেশ তড়িঘড়ি করেই তাকে টি-টোয়েন্টির জাতীয় দলে নেওয়া হয়। ভালো করতে না পেরে বাদও পড়েন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে ওঠা শামীম মনে করেন সাত-আটে নেমে রান করাটা কঠিন, তিনে প্রমোশন পাওয়াতেই তার ব্যাটে রান। অন্যদিকে বরিশালের কোচ ফাহিম মনে করেন, কাজে লাগেনি মাহমুদউল্লাহ-করিমদের আগে পাঠানোর জুয়াটা।
লা লিগায় হোঁচটের পর হোঁচট। শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে আপাতত অনেকটাই পেছনে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ক্লাব বিশ্বকাপে তারা ঠিকই নিজেদের মেলে ধরল স্বরূপে। রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করে জিতে নিল আরও একটি ট্রফি। এই শিরোপাই এখন মৌসুমের বাকি সময়টায় দলকে প্রেরণা জোগাবে, বিশ্বাস কোচ কার্লো আনচেলত্তির।
শনিবার মরক্কোর রাবাতের ফাইনালে সৌদি ক্লাব আল হিলালকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে আরও একবার ক্লাব বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় রিয়াল মাদ্রিদ। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে জোড়া গোল করেন ভিনিসিউস জুনিয়র ও ফেদে ভালভার্দে, একটি গোল করেন করিম বেনজেমা। ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালের পঞ্চম শিরোপা এটি। আর ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ বিচেনায় নিলে রিয়ালের এটি অষ্টম শিরোপা।
আনচেলত্তি কোচ হিসেবে তিনবার ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে স্পর্শ করলেন পেপ গুয়ার্দিওলার রেকর্ড। রিয়ালকে দ্বিতীয়বার এই মর্যাদাপূর্ণ ট্রফি এনে দেওয়ায় ইতালিয়ান কোচ উচ্ছ্বসিত দলের সাফল্যে। ‘আমরা খুবই খুশি। অষ্টমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আমরা দারুণ খেলেছি, বিশেষ করে আক্রমণভাগে ছিলাম দুর্দান্ত। ভিনিসিউস, বেনজেমা, ভালভেরদে... সবাই খুব ভালো করছে। তাদের স্কিল ও মান দেখাতে পেরেছে তারা। সব মিলিয়ে দারুণ ছিল।’ তিনি বলেন, ‘মৌসুমের বাকি সব কিছুর জন্য আমাদের প্রেরণা হতে পারে এই শিরোপা। সামনের সময়টা নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, সব টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত আমরা লড়ে যাব।’ ২১ ফেব্রুয়ারি লিভারপুলের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ।
এ যেন অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন ইমরানুর রহমান। শনিবার সন্ধ্যায় দেশের অ্যাথলেটিকসের ইতিহাসে সেরা সাফল্যে দেশকে উপহার দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি এই স্প্রিন্টার। এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে এশিয়ান বড় বড় স্প্রিন্টারদের পেছনে ফেলে স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছেন তিনি। জন্ম-বেড়ে ওঠা লন্ডনে হলেও শেকড়ের টানে ২০২১ সালে দেশে এসে অংশ নেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রথমবারের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে চমকে দেন সবাইকে। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক আসরে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। এবার স্বপ্নটা আরও বড় করে দেখতে ও দেখাতে শুরু করেছেন। তবে বড় স্বপ্ন ছুঁতে চাই বড় সমর্থন। আর এখানেই প্রশ্ন, দেশ কি পারবে সম্ভাবনাময় এই স্প্রিন্টারকে লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে?
ইমরানুর যে কিছু একটা করে দেখাবেন তা গত বছর কমনওয়েলথ গেমস ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসেই বুঝিয়েছিলেন। সেটাই কাজাখস্তানে করে দেখলেন। এবার আরও বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠার চ্যালেঞ্জ। তার আগে অবশ্য এমন সাফল্যে ভিজছেন অসংখ্য মানুষের অভিনন্দন বৃষ্টিতে। যে তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীও। তবে কেবল অভিনন্দনে যে ভবিষ্যতের পথটা মসৃণ হবে না, সেটা সবার জানা। ইমরানুরকে কেবলমাত্র খেলায় মনোযোগ দিতে ছাড়তে হবে যুক্তরাজ্যে ব্যাংকের আকর্ষণীয় চাকরি। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেই সহজ নয়। সে সিদ্ধান্ত তখনই নিতে পারবেন, যখন দেশ তাকে নেবে আর্থিক নিরাপত্তা। ইমরানুর বলেন, ‘সামনে আরও ভালো কিছু করতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে সোনা জেতানোর লক্ষ্য। এছাড়া এশিয়ান গেমসেও ভালো করতে চাই। আর অলিম্পিকের মতো বড় প্রতিযোগিতায় ভালো করার বড় স্বপ্ন তো আছেই। তবে কাজটা মোটেই সহজ নয়। আরও ভালো করতে হলে হাই পারফরম্যান্স ট্রেনিং লাগবে। ২৪ ঘণ্টাই আমাকে অ্যাথলেটিকস নিয়ে থাকতে হবে। সেটা বড্ড কঠিন।’
মূলত যুক্তরাজ্যে চাকরি করেন বলেই পুরোটা সময় অ্যাথলেটিকসে দিতে পারছেন না ইমরানুর। তাই এক্ষেত্রে তিনি চান সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সমর্থন, ‘এখন চাকরি করে জিম ও অনুশীলন করতে হয়। অবসর তো একদমই পাই না। লন্ডনে আমার কোচ আছে। তার অধীনে অনুশীলন করতে হচ্ছে। এর পেছনেও অনেক খরচা করতে হয়। তবে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি দেখছে। আশা করছি একটা সমাধান হবে। হাই পারফরমেন্স ট্রেনিং না হলে সামনের দিকে পদক জেতা কঠিন হবে। এই যেমন শ্রীলঙ্কার অ্যাথলেট আবেকুন ইতালিতে দীর্ঘমেয়াদে অনুশীলনে রয়েছে। এমন কিছু হলে আমার পক্ষেও আরও ভালো করা সম্ভব।’
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টুও চাইছেন ইমরানুরের স্বপ্ন এগিয়ে নিতে বিশেষ সহায়তা দেওয়ার। সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তার বিকল্প দেখছেন না তিনি, ‘আসলে অ্যালথেটিকসে আমাদের সম্ভাবনার জায়গা অনেক। ইমরানুর যেটা করেছে সেটা একেবারে ওর নিজস্ব চেষ্টায়। তবে সামনে বড় মঞ্চে ভালো করতে হলে ওকে আরও বেশি করে খেলায় মনোযোগী হতে হবে। ওকে যদি আমরা একটা আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারি, তবে ও অবশ্যই আরও ভালো করবে।’ দেশে এনে ইমরানুরকে সংবর্ধনার পরিকল্পনা করছে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। কাজাখস্তান থেকে আজ তাকে নিয়ে ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা আছে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদকের। আসলে হয়তো ফেডারেশনের নতুন সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও নিয়ে যাওয়ার একটা চেষ্টা করা হবে। ইমরানুরসহ সম্ভাবনাময় অ্যাথলেটদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য একটা আর্থিক সহায়তা চাওয়ার কথা জানিয়েছেন মন্টু। বড় স্বপ্ন ছুঁতে বড় জায়গা থেকে পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্পও যে নেই। আর সেটা নিশ্চিত করা গেলে ইমরানুরকে দিয়ে এশিয়ান গেমসের পদকের স্বপ্নও দেখতে পারে বাংলাদেশ।
এলিমিনেটর যেমন উত্তেজনার হলো, তেমনি প্রথম কোয়ালিফায়ার রোমাঞ্চ ছড়াল না। একেবারে একপেশে লড়াইয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এ নিয়ে বিপিএলে চতুর্থ ও টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠল তারা। লিগ পর্বে টানা ৯ জয়ের রেকর্ড গড়ে ইমরুল কায়েসের দল প্লে অফ নিশ্চিত করে। সেই রেকর্ডকে আরও এক ম্যাচ বাড়িয়ে এবার সরাসরি ফাইনালে পা রেখেছে কুমিল্লা। এদিকে পুরো আসর ভালো করে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পা পিছলে পড়ল সিলেট। তাদের দেওয়া মাত্র ১২৫ রানের লক্ষ্য ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান করে টপকেছে কুমিল্লা। অবশ্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সিলেটের সুযোগ আরও একটি আছে।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে সিলেট পথ হারায় শুরুতেই। নিজেদের ভুল ও দুর্ভাগ্যজনক আউটে সিলেটের সেরা দুই ব্যাটার ফিরেছেন দ্রুত। মাত্র ৩ ওভারের ভেতর ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে সিলেট। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে ব্যাটিং অর্ডার বদলে নিজেকে পাঁচে তুলে আনেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ৫৬ রানের জুটি গড়ে শুরুর বিপদ কাটাতে পেরেছেন মাশরাফী। ২টি করে চার ও ছক্কায় ১৭ বলে ২৬ রান করে থেমেছেন মাশরাফী। জুটি ভাঙার পর মাত্র ৬ রানের মাথায় ২৯ বলে ৩৮ করা শান্ত ফেরেন তানভীর ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে। পরে কেবল মুশফিকুর রহিম ২২ বলে ২৯ রান করে দলের রান কোনো রকমে ১০০ পার করান।
কুমিল্লার ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো না হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছেন সুনিল নারাইন। মাত্র ১৮ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৯ রান করে কুমিল্লার রান তাড়া সহজ করে দেন। পরের দিকে মোসাদ্দেক হোসেন ২৭ বলে ২৭ ও মঈন আলি মাত্র ১৩ বলে ২১ রান করেন। তাদের ৩৪ রানের জুটিও যথেষ্ট ছিল না। শেষে ম্যাচ কঠিন হয়ে উঠছিল তাদের জন্য। তবে আন্দ্রে রাসেল ১০ বলে ২ ছক্কায় ১৫ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ফাইনালে তোলেন।
ম্যাচ শেষে মাশরাফী হারের কারণ দেখছেন ব্যাটিংয়ে, ‘অবশ্যই ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে। এটা তো দেখাই যাচ্ছে। আমরা যে চারটা ম্যাচে হারলাম, সেসব জায়গায় খুব দ্রুত উইকেট হারিয়েছি। বোলিং সব সময়ই ভালো ছিল, যেমনটা আজও। তাই এটা ঠিক জায়গাতেই আছে, কিন্তু ব্যাটিংটা বাজে ছিল।’ এদিকে টানা ফাইনালে ওঠার কৃতিত্বটা কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল দিচ্ছেন বোলারদের, ‘অবশ্যই দারুণ জয় আমাদের জন্য। নারাইন ও মোসাদ্দেক ভালো ব্যাটিং করেছে। অবশ্যই এটা দারুণ ব্যাপার যে টানা জিতেই আমরা ফাইনালে এসেছি। আমরা ফাইনালে সিলেটকেই চাই কারণ ওরা আমাদের বোলিং সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে, একটু হলেও চাপে থাকবে। আর আমরাও স্বচ্ছন্দে ফাইনাল খেলতে পারব।’
চ্যাম্পিয়নস লিগে মঙ্গলবার রাতে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ম্যাচ পিএসজির। শেষ ষোলোর প্রথম লেগের ম্যাচের আগে কোনোকিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না প্যারিসের দলটির। ফ্রেঞ্চ কাপে মার্শেইয়ের কাছে হারের পর লিগ ম্যাচে মোনাকোর বিপক্ষেও হারে পিএসজি। কোচ গালতিয়ে জানালেন, চিন্তিত তিনি। দলের মধ্যে লড়াকু মানসিকতার অভাব দেখছেন।
শনিবার লিগ ওয়ানে প্রথমার্ধেই তিন গোল খেয়ে ১-৩-এ হেরে যায় পিএসজি। শেষ সাত ম্যাচে তৃতীয় হারের পর গালতিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখন যে খেলোয়াড়রা আছে তাদের নিয়েই করতে হবে যা করার। লড়াকু মানসিকতার অভাব ছিল। আর এটিই দলের বর্তমান অবস্থা। শুনতে অদ্ভুত হলেও এটিই সত্যি। পিএসজির কোচ হিসেবে আমার মুখে এমন কথা অদ্ভুত শোনালেও, এটিই বাস্তবতা।’ চোটের কারণে মেসি-এমবাপ্পে খেলবেন না নিশ্চিত ছিল। তার ওপর শনিবার দিনভর পেটের সমস্যায় ভুগেছেন দলের অনেকেই। এ জন্য আশরাফ হাকিমি ও সার্জিও রামোসকে শুরু থেকেই খেলাতে পারেননি গালতিয়ে। আর এর মধ্যেই গোল তিনটি খেয়ে যায় দল। রামোস দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে, আর হাকিমি খেলেন ৬৫ মিনিট থেকে।
এমন অবস্থায় দুদিন পর বায়ার্নের সঙ্গে বড় ম্যাচ পিএসজির, যা নিয়ে চিন্তিত গালতিয়ের বলেন, ‘(বায়ার্ন ম্যাচ নিয়ে) আমি চিন্তিত। আমি চিন্তিত না হলেই বরং সেটা বিশেষ কিছু হতো। আমাদের ব্যস্ত সূচি এবং স্কোয়াড কিছুটা দুর্বল (ইনজুরির কারণে)। সমর্থকদের ক্ষোভ বুঝতে পারছি। তবে এই কঠিন সময়ে আমাদের একত্র থাকতে হবে।’ মোনাকো ম্যাচে হারের পর কিমপেম্বে মাইক ব্যবহার করে পিএসজি সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চান।
পিএসজি আছে হারের বৃত্তে। আর বায়ার্ন মিউনিখ বুন্দেসলিগায় ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে। বুন্দেসলিগায় ৩-০ গোলে হারিয়েছে বচুমকে। তবু দলের পারফরম্যান্সে খুশি নন কোচ নাগেলসমান। বলছেন, এভাবে খেললে পিএসজিকে হারানো যাবে না। ‘আমাদের প্যারিসের সঙ্গে ভালো খেলতে হবে। এমনকি (কিলিয়ান) এমবাপ্পে না খেললেও। কারণ তারা বিশ্বমানের দল। মঙ্গলবারও যদি আমরা এভাবে খেলি, তাহলে জয়ের জন্য তা যথেষ্ট হবে না।’ ২০১৯-২০ ফাইনালে বায়ার্নের কাছে হারা পিএসজি পরের সেমিফাইনালে ম্যানসিটির কাছে, আর গতবার শেষ ষোলোতে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে যায়।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।