
সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তারা সবসময় বলেন, তাদের লক্ষ্য ফিফা র্যাংকিংয়ে উত্তরণ। সেটা করতে এখন থেকে প্রতিটি ফিফা উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও শোনা যায় তাদের কথায়। সেই কথা রাখতে আগামী মাসে ফিফা উইন্ডোতে বাফুফে আয়োজন করতে যাচ্ছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। যেখানে স্বাগতিক বাংলাদেশ খেলবে ব্রুনেই ও সেশেলসের সঙ্গে। এই টুর্নামেন্টে নেই কোনো ফাইনাল। তিন দল একে অপরের মুখোমুখি হবে। লিগপর্ব শেষে শীর্ষ দলকে দেওয়া হবে শিরোপা। ফিফা র্যাংকিংয়ের তলানি অঞ্চলে থাকা তিন দলের এই আসর। দু’ম্যাচ জিতে যদি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নও হয়, তাতে র্যাংকিংয়ের অবস্থানে খুব বেশি উন্নতির সুযোগ নেই তাদের সামনে। সস্তা সাফল্য মেলার সুযোগ আছে, তাতে এমন আয়োজনের সার্থকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
মার্চে বাফুফের এই আয়োজনটি হবে সিলেটে। আসরে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে ফিফা র্যাংকিং অনুযায়ী ফেভারিট দল ব্রুনেই। তাদের অবস্থান ১৯০তম। এরপর বাংলাদেশ আছে ১৯২তম স্থানে। আর সবার শেষে ১৯৯তম স্থানে সেশেলস।
২০ থেকে ২৮ মার্চ হবে এই টুর্নামেন্টের খেলা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এখনো প্রস্তুত নয় বলেই বাফুফে খেলা নিয়ে যাচ্ছে সিলেটে। অথচ ক’দিন আগেই বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন জানিয়ে ছিলেন, আন্তর্জাতিক আসর আয়োজনে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ছাড়া কোনো বিকল্প নেই তার হাতে। এই মাঠটির কৃত্রিম টার্ফে খেলা অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ এ মাঠেই আগামী মাসে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করবে বাফুফে। সিলেটকে বিকল্প ভেন্যুর করার কথা বলা হলেও এক সপ্তাহ আগে সালাউদ্দিন সাফ জানিয়েছিলেন ঢাকার বাইরের কোনো মাঠ আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য উপযুক্ত নয়। হুট করেই ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল সিলেট জেলা স্টেডিয়াম?
গতকাল বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটির এক অনলাইন সভা হয় বাফুফে সভাপতির উপস্থিতিতে। সভা শেষে বাফুফের সহ-সভাপতি ও ন্যাশনাল টিমস কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ জানান, ‘মার্চে ফিফা উইন্ডোতে আমরা তিনজাতি টুর্নামেন্ট আয়োজন করছি। ব্রুনেই ও সেশেলস এসে খেলতে রাজি হয়েছে। খেলা হবে সিলেটে। এর মধ্যেই ফিফার কাছে অনুমোদনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম লেগ শেষে ৩ মার্চ থেকে ইংলিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে শুরু হবে আবাসিক ক্যাম্প।
নিজেদের সবশেষ দুই ম্যাচে হেরেছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই। আজ তাদের আরও বড় পরীক্ষা। পার্ক দ্য প্রিন্সেসে চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর প্রথম লেগে আজ মেসি-নেইমাররা মুখোমুখি হবে প্রতিযোগিতার তৃতীয় সফল দল বায়ার্ন মিউনিখের।
ঘরের মাঠে সবশেষ দেখায় ২০২০-২১ এর কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বায়ার্নের কাছে ১-০ তে হেরেছিল পিএসজি। তবে বায়ার্নের মাঠে তারা জিতেছিল ৩-২ এ। তাতে দুই লেগ মিলে ৩-৩ সমতা থাকলেও অ্যাওয়ে গোলে জিতে পরের পর্বে গিয়েছিল পিএসজি। এবার অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নেই। তাই প্রতি লেগে জয় পাওয়া এবং গোলে এগিয়ে থাকাটা জরুরি।
পিএসজির দুশ্চিন্তা দুটি। এক তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম, দুই কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ আরও অনেকের ইনজুরি। গেল ১ ফেব্রুয়ারি এমবাপ্পে বাম উরুর ইনজুরিতে পড়ার পর জানা গিয়েছিল তার সেরে উঠতে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। ১২ দিন পর গতকাল দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে দেখা গেছে তাকে। ২২ জনের স্কোয়াডে রাখা হয়েছে এমবাপ্পেকে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি খেলেন কিনা সেটি দেখার বিষয়। বায়ার্ন মিউনিখের কোচ নাগেলসমান অবশ্য এমবাপ্পের ইনজুরির খবর শোনার পরই বলেছিলেন, এমবাপ্পে দলে আছেন ভেবেই ছক সাজাবেন। সে সময় বলেন, ‘আমার মনে হয় না সে খেলতে পারবে না। ধরে নিচ্ছি সে খেলবে।’
পিএসজি সবশেষ লিগ ম্যাচে হেরেছে মোনাকোর কাছে। সেই ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে ছিলেন না মেসি। তবে এই ম্যাচে মেসি খেলবেন তা মোনাকো ম্যাচের পরও জানিয়েছেন পিএসজি কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ে। পেটের পীড়ায় পড়া সার্জিও রামোস, আশরাফ হাকিমি সেদিন খেলেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। শেষ পর্যন্ত পিএসজি তাদের সেরা একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে নাকি তা হবে দেখার বিষয়। মুখোমুখি লড়াইয়ে ৬-৫ এ এগিয়ে থাকলে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটি জিতেছে বায়ার্ন, দুটি পিএসজি। বায়ার্ন মিউনিখ শেষ ষোলোর অ্যাওয়ে ম্যাচ হারেনি গেল এক দশকে (জয় ৬টি, ড্র ৪টি)।
এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় হয়েছে পিএসজি। এইচ গ্রুপে সমান ১৪ পয়েন্ট ছিল পিএসজি ও বেনফিকার। তবে বেনফিকার অ্যাওয়ে গোল বেশি হওয়ায় তারা গ্রুপসেরা হয়। আর বায়ার্ন মিউনিখ সি গ্রুপ থেকে সব ম্যাচ জিতে গ্রুপসেরা হয়। বাভারিয়ানদের গ্রুপে ছিল ইন্তার মিলান, বার্সেলোনার মতো ক্লাব। ২০১৯-২০ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে বায়ার্নের কাছেই হেরেছিল পিএসজি। এরপর পিএসজি ২০২০-২১ মৌসুমের কোয়ার্টারে বায়ার্নকে তাদের মাঠেই হারিয়েছিল। তাই এ ম্যাচে প্রতিশোধের কোনো বিষয় বলতে গেলে নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশোধ নেওয়া তো হতেই পারে! লিওনেল মেসি এখন পিএসজিতে। তিনি হয়তো ভুলে যাননি বার্সায়
থাকতে ২০১৯-২০ এর কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্নের কাছে দলের ৮-২ গোলে হারের কথা। এরপর বায়ার্নের সঙ্গে বার্সার দেখা হলেও মেসি ছিলেন না কাতালান ক্লাবটিতে। ২০২১-২২ এ মেসি চলে আসেন পিএসজিতে। তাই এবার পিএসজির হয়ে বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে চাইবেন মেসি।
ব্যক্তিগত একটা লড়াইও হচ্ছে মেসির এ ম্যাচে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের ম্যাচে পুরোটা সময় ফ্রান্সের উপামেকানো আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বজয়ীকে। ১২০ মিনিটে ৩-৩ সমতা ছিল সে ফাইনাল। আজ আবার মেসির বিপক্ষে খেলার বিষয় নিয়ে ফরাসি ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘মেসি বিশেষ একজন খেলোয়াড়। তবে সে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলুক বা পিএসজির হয়ে, আমাদের শুধু তার জন্য প্রস্তুতি নিলে চলবে না। প্যারিস (পিএসজি) দারুণ এক দল যাদের আরও স্ট্রাইকার আছে।’
ইনজুরি সমস্যা আছে বায়ার্ন মিউনিখ শিবিরেও। লুকাস হার্নান্দেজ, সাদিও মানে ইনজুরির কারণে এখনো দলের বাইরে। তবে জসুয়া কিমিখ ফিরতে পারেন। বায়ার্নের গোলবারের নিচে থাকবেন ইয়ান সমের। জানুয়ারির দলবদলে তিনি বায়ার্নে যোগ দেন মানুয়েল নয়্যার ইনজুরিতে পড়ায়।
বায়ার্ন সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচ ড্রয়ের পর শেষ তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে। সবশেষ বচুমের বিপক্ষে বুন্দেসলিগাতে তারা জয় পায় ৩-০ তে। তবু ওই ম্যাচ শেষে বায়ার্ন কোচ বলেছিলেন, দলের খেলায় তিনি সন্তুষ্ট নন। এমন খেললে পিএসজিকে হারানো যাবে না।
আজ রাতেই অপর ম্যাচে এসি মিলানের মাঠে খেলবে টটেনহাম। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে মিলান ‘ই’ গ্রপ থেকে রানার্সআপ হয়। টটেনহাম হয় ‘ডি’ গ্রুপ সেরা। মিলান সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অষ্টম ম্যাচে এসে জয় পায় গেল শুক্রবার। সিরি আ’তে তারা আছে পাঁচ নম্বরে। আর টটেনহাম সবশেষ লিগ ম্যাচে লেস্টার সিটির কাছে হেরেছে ৪-১ গোলে। ইপিএলে তারাও আছে পাঁচ নম্বরে। চ্যাম্পিয়নস লিগে সবশেষ ২০১১-তে মিলানের মাঠে গিয়ে ১-০ তে জিতেছিল টটেনহাম। টটেনহামের মাঠে ফিরতি লেগ হয়েছিল গোলশূন্য ড্র। সবশেষ ২০১৮-তে ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপে টটেনহাম হারিয়েছিল মিলানকে।
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় একটিই। ঘরের মাঠে ২০১৪ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল। পরের দুটি আসরেও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিল। হারল এবারও। রবিবার কেপটাউনে এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই হেরেছে জ্যোতিরা। ১২৭ রান তাড়া করে ১০ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা লঙ্কানরা। একদিন পরই বাংলাদেশ আজ খেলবে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।
রবিবার কেপটাউনে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ, তবে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দিতে পারেননি সতীর্থরা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই মুর্শিদা আউট হয়ে যান কোনো রান না করেই। শামীমা সুলতানা (২০) ও সোবহানা মোশতারি (২৯), দুজনেই শুরুটা পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। একই অভিযোগ জ্যোতির দিকেও। ৩৪ বল খেলে ২৮ রান করে আউট হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এই তিন জন বাদে দুই অঙ্কের ঘরে রান করেছেন কেবল লতা ম-ল (১১)।
অল্প পুঁজিতেই লড়াইটা জমিয়ে দিয়েছিলেন মারুফা আক্তার। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে পেলেই যার ব্যাট চওড়া হয়ে যায়, সেই চামারি আতাপাত্তুকে মাত্র ১৫ রানে আউট করে দেন এই মিডিয়াম পেসার। নিজের পরের ওভারে পর পর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে দেন মারুফা, ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তখন কাঁপছে। কিন্তু অন্যপ্রান্ত থেকে আলগা বোলিং আর মাঠে বাজে ফিল্ডিংয়ের খেসারত দিয়ে মারুফার আগুনে বোলিংয়ে জল ঢেলেছেন সতীর্থরা। এরপর আর উইকেটই হারায়নি সিংহলের মেয়েরা, ১৮.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৯ রান তুলে তারা পেয়েছে জয়ের দেখা।
ম্যাচের পর জ্যোতি বললেন, ১৫/২০ রান কম হয়ে গেছে, ‘পাওয়ার প্লের সময় আমাদের ব্যাটিং দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু ৬ ওভারের পর আমরা কোনো বাউন্ডারি পাইনি। এরই মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা পরের ম্যাচগুলোতে পাওয়ার প্লের এই ব্যাটিংটা করে যেতে চাই। বাউন্ডারি মারা নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের।’
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে একবারই খেলেছে বাংলাদেশ। ২০২০ আসরের গ্রুপ ম্যাচে ১৯০ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১০৩ রান করতে পেরেছিল পিংকি-জ্যোতিরা।
গত সপ্তাহে টটেনহামের কাছে হেরে এলোমেলো ম্যানচেস্টার সিটি আবারও ফিরেছে জয়ের ধারায়। রবিবার ইপিএলে রদ্রি, গুনদুয়ান, রিয়াদ মাহরেজের গোলে অ্যাস্টন ভিলাকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শীর্ষের আর্সেনালের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়েছে। এক ম্যাচ বেশি খেলে গানার্সদের চেয়ে ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে সিটিজেনরা।
এমনিতেই সিটির সময়টা ভালো যাচ্ছে না। আর্থিক অনিয়মের জন্য ১০০টি অভিযোগ উঠেছে ক্লাবের বিপক্ষে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠিন শাস্তিই অপেক্ষা করছে। তবে ভিলার বিপক্ষে ডি ব্রুইনা-গুনদুয়ান-আলভারেজদের আধিপত্য দেখে মনেই হয়নি যে ক্লাবের বিরুদ্ধে কঠিন সব অভিযোগ তাদের ওপর কোনো প্রভাব রেখেছে।
ইতিহাদে খেলা শুরুর ৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় সিটি। মাহরেজের কর্নার থেকে ভিলার বক্সে জটলার মধ্যে বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন রদ্রি। ৩৯ মিনিটে ডি ব্রুইনার লম্বা পাস ভিলার ডিফেন্ডার কালাম চেম্বার্স হেড করে ফেরাতে গিয়ে ভুল করে বসেন। আর্লিং হালান্ড ডান দিকে বল ধরে গুনদুয়ানকে দিলে, তা থেকে গোল করেন জার্মান ফরোয়ার্ড। ৪৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সিটি পায় তৃতীয় গোল। বক্সের মধ্যে জ্যাক গ্রিলিশকে ফাউল করেন রামসে। পেনাল্টি থেকে ভিলার বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমি মার্তিনেজকে কোনো সুযোগই দেননি মাহরেজ। ৬১ মিনিটে ওলি ওয়াটকিনস ব্যবধান ১-৩ নামিয়ে আনলেও সিটির ১৫তম জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। কাল আর্সেনালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে সিটি। সে ম্যাচের ফল এবারের প্রিমিয়ার লিগে শিরোপার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে অনেকটাই। এদিকে, পেদ্রির একমাত্র গোলে ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে লা লিগায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বার্সেলোনা। এক পয়েন্ট কম খেলা রিয়ালের চেয়ে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে গেলেও শিরোপা জয়ে এই ব্যবধানকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না কোচ জাভি। বলেছেন পথটা অনেক লম্বা, ‘১১ পয়েন্ট (রিয়ালের জন্য) অনতিক্রম্য দূরত্ব নয়। মনে রাখতে হবে, এখনো আমাদের ১৭টি ম্যাচ বাকি।’ তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে থাকায় সন্তুষ্টিও আছে বার্সা কোচের। ‘আমি খুশি। এ ধরনের অনুকূল ফলের ধারাবাহিকতা বিশেষ ব্যাপার। বোঝা যাচ্ছে, আমরা একটা শক্তিশালী দল হতে পেরেছি। পরিশ্রম করছি, মনোযোগী আছি।’ ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে জয়টি ছিল চলতি লিগে বার্সার ১-০ ব্যবধানের সপ্তম জয়। এর আগে ১৯৮৬-৮৭, ১৯৯৫-৯৬, ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে এমন ব্যবধানে ৭টি ম্যাচ জিতেছিল বার্সেলোনা।
বার্সেলোনার পরের ম্যাচ বুধবার রাতে ইউরোপা লিগে, প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
এবার বিপিএলে সবার আগে প্লে-অফ পর্ব নিশ্চিত করা দলটি ছিল স্ট্রাইকার্স। আর সবশেষ উঠেছিল রংপুর। লিগের ১২ ম্যাচের ৯টিতেই জয়ী সিলেট দুই দেখাতেই হেরেছিল রংপুরের কাছে। সেই রংপুরই আজ প্রথমবারের মতো সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির ফাইনালে খেলার স্বপ্নের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার হাত ধরেই ২০১৭ সালে শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল রংপুর। সেই মাশরাফী এবার সিলেটের কা-ারি। গ্রুপ পর্বটা ভালোভাবেই পার করে সবার আগে দলকে প্লে-অফে তুলেছেন ‘ম্যাশ’, কিন্তু শেষ চারে এসে যে খেলার অঙ্ক পালটে গেছে বিপিএলের অদ্ভুতুড়ে নিয়মে! রীতিমতো পাড়ার খ্যাপের টুর্নামেন্টের মতো যখন তখন বিদেশি খেলোয়াড় আসছেন আর যাচ্ছেন বিপিএলে। সিলেটের বোলিংয়ের বড় শক্তি মোহাম্মদ আমির আর ইমাদ ওয়াসিম চলে গেছেন গ্রুপ পর্ব শেষে। যাদের নতুন করে নিয়েছে সিলেট, সেই ইসুরু উদানা-জর্জ লিন্ডেরা তেমন কিছু করতে পারেননি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে প্লে-অফে। কুমিল্লায় বিদেশি খেলোয়াড়ের তারার হাট, রংপুরেও তাই। আসরে নিজেদের সেরা বোলার আজমতউল্লাহ ওমারজাইকেও তারা বসিয়ে রেখেছিল এলিমিনেটর ম্যাচে, কারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সুপারস্টারদের একজন ডুয়াইন ব্র্যাভো যে এসে গেছেন তাদের দলে! ব্র্যাভো, নিকোলাস পুরান, মুজিব-উর-রহমান আর দাশুন শানাকাকে নিয়ে রংপুর দারুণ শক্তিশালী। সঙ্গে শেখ মেহেদি হাসান, রনি তালুকদার, শামীম হোসেন, রাকিবুল হাসানসহ তরুণ সব স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দলের নেতৃত্বে নুরুল হাসান সোহান।
অন্যদিকে সিলেট সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতায়। মাশরাফী, মুশফিকুর রহিম ও রুবেল হোসেন; মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তিনজন মিলে কমপক্ষে শ’খানেক ম্যাচ খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে রায়ান বার্ল, লিন্ডে, উদানার কার্যকারিতার মিশেলই হতে পারে স্ট্রাইকার্সের স্ট্রাইকিং ফোর্স।
প্রথম কোয়ালিফায়ার ও এলিমিনেটর, দুটো ম্যাচে চার দলের ক্রিকেটারদের ভেতর ভালো করেছেন কিন্তু দেশীয় ক্রিকেটাররাই। ম্যাচসেরা কুমিল্লার বাঁহাতি স্পিনার তানভীর আর রংপুরের শামীম হোসেন। এই পরিসংখ্যান অন্তত সিলেটকে আশাবাদী করে তুলতে পারে কারণ বিদেশির পাল্লায় রংপুরই যে এগিয়ে। অন্যদিকে সিলেটের তৌহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্তÑ এই দুই ব্যাটসম্যানই তাদের দিয়েছে লড়াইয়ের পুঁজি। সঙ্গে কখনো জাকির হাসান, কখনো মুশফিক। কুমিল্লার বিপক্ষে ব্যাটিংটা ভালো হয়নি সিলেটের, তবে অল্প পুঁজি নিয়েও কুমিল্লার বিপক্ষে লড়াইটা জমিয়ে তুলেছিল স্ট্রাইকার্স। একই সূত্রে হয়তো হারানো যাবে না রংপুরকে কারণ এই মিরপুরেই ১৭০ রানের লক্ষ্য দিয়েও রংপুরকে থামাতে পারেনি সিলেট।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের সহকারী কোচ সৈয়দ রাসেল জানিয়েছেন, লিগ পর্বে দুই দেখাতেই হারলেও আজ নতুন ম্যাচে সেই হিসাব চলবে না, ‘টি-টোয়েন্টিতে নির্দিষ্ট দিনে যে দল ভালো খেলবে তারাই জিতবে। আগে কী হয়েছে সেটা আমরা চিন্তা করছি না। তবে এটা স্বাভাবিক যে ওরা যেহেতু (এলিমিনেটর) জিতে এসেছে আর আমাদের সঙ্গে আগে দুটো ম্যাচে জিতেছে। অবশ্যই ওরা অনেক আত্মবিশ্বাসী থাকবে।’
কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংটাও খারাপ হয়েছে। মুশফিক ক্যাচ, স্টাম্পিং দুইই মিস করেছেন। মাশরাফী বোলিং করেছেন মাত্র ১ ওভার। রুবেল অবশ্য ৩ উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে শান্ত মোটামুটি রান করলেও রান পাননি তৌহিদ হৃদয় আর জাকির। কোচ রাজিন সালেহও ম্যাচশেষে বলেছেন যে সবাই খারাপ খেলেছে। সেদিন তিনি বলেছিলেন ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা, একই কথা রাসেলেরও। সেই সঙ্গে জানালেন, আমির ও ইমাদের চলে যাওয়ার ঘাটতিটা পূরণ না হওয়ার কথা, ‘ওরা যাওয়ায় ঘাটতিটা তো রয়েই গেছে। আমাদের দলীয় সমন্বয়টা খুব ভালো ছিল। সেখান থেকে একটা আঘাত বলা যায়।’
মুশফিক আর মাশরাফীর বিপিএল ভাগ্য পুরো বিপ্রতীপ। বিপিএলের ফাইনাল খেলতে সাত আসর লেগে গিয়েছিল মুশফিকের, শিরোপা জেতা হয়নি একবারও। সিলেট রয়্যালসের হয়ে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দল হিসেবে প্লে-অফে ওঠার পর দুই ম্যাচ হেরে ফাইনালে খেলা হয়নি মুশফিকের। অন্যদিকে মাশরাফী বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক। শিরোপা জিতেছেন ৪ বার, তিনটা আলাদা দলের হয়ে। রংপুরের একমাত্র শিরোপা জয়ও এসেছিল মাশরাফীর হাত ধরে। মুশফিকের বিপিএল ফাইনালের আক্ষেপ আর মাশরাফীর সৌভাগ্য, কোনটা কাজে লাগে রংপুরের বিপক্ষে সেটাই এখন দেখার।
বিপিএলে ম্যাচ চলাকালীন ড্রেসিংরুমে ধূমপানের ঘটনায় শাস্তি পেলেন খুলনা টাইগার্সের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী কাজের জন্য ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে তাকে। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে দুটি ডিমেরিট পয়েন্ট। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সুজন একই সঙ্গে বিসিবির পরিচালকও। জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টরের দায়িত্বও তার কাঁধে।
ঘটনা গত শুক্রবারের। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হয়েছিল খুলনা। ম্যাচটা ৬ উইকেটে জিতে নেয় দলটি। দলটার জয় নিশ্চিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ওই ঘটনা ঘটে। ২০তম ওভারে ব্যাট করছিলেন মাহমুদুল হাসান জয় ও হাবিবুর রহমান সোহান এমন সময় খানিক সময়ের জন্য খুলনার ড্রেসিংরুমের দৃশ্য দেখাচ্ছিল টিভি ক্যামেরা। আর সেখানেই দেখা যায় ধূমপান করছেন সুজন। খেলা চলাকালে ক্রিকেট মাঠে যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এদিকে, রবিবার রংপুর রাইডার্সের শেখ মেহেদী হাসান, নিকোলাস পুরান ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মোসাদ্দেক হোসেনকে জরিমানার কথা জানিয়েছে বিসিবি। মেহেদীর ঘটনাটা বরিশালকে এলিমিনেটরে বিদায় করে দেওয়া ম্যাচে। তার ব্যাটিংয়ে রংপুরের জয় নিশ্চিতের পর ছুটতে ছুটতে হেলমেট খুলে তা ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন। এই অপরাধে ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানার সঙ্গে ১টি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে তাকে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।