
গত সপ্তাহে টটেনহামের কাছে হেরে এলোমেলো ম্যানচেস্টার সিটি আবারও ফিরেছে জয়ের ধারায়। রবিবার ইপিএলে রদ্রি, গুনদুয়ান, রিয়াদ মাহরেজের গোলে অ্যাস্টন ভিলাকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শীর্ষের আর্সেনালের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়েছে। এক ম্যাচ বেশি খেলে গানার্সদের চেয়ে ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে সিটিজেনরা।
এমনিতেই সিটির সময়টা ভালো যাচ্ছে না। আর্থিক অনিয়মের জন্য ১০০টি অভিযোগ উঠেছে ক্লাবের বিপক্ষে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠিন শাস্তিই অপেক্ষা করছে। তবে ভিলার বিপক্ষে ডি ব্রুইনা-গুনদুয়ান-আলভারেজদের আধিপত্য দেখে মনেই হয়নি যে ক্লাবের বিরুদ্ধে কঠিন সব অভিযোগ তাদের ওপর কোনো প্রভাব রেখেছে।
ইতিহাদে খেলা শুরুর ৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় সিটি। মাহরেজের কর্নার থেকে ভিলার বক্সে জটলার মধ্যে বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন রদ্রি। ৩৯ মিনিটে ডি ব্রুইনার লম্বা পাস ভিলার ডিফেন্ডার কালাম চেম্বার্স হেড করে ফেরাতে গিয়ে ভুল করে বসেন। আর্লিং হালান্ড ডান দিকে বল ধরে গুনদুয়ানকে দিলে, তা থেকে গোল করেন জার্মান ফরোয়ার্ড। ৪৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সিটি পায় তৃতীয় গোল। বক্সের মধ্যে জ্যাক গ্রিলিশকে ফাউল করেন রামসে। পেনাল্টি থেকে ভিলার বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমি মার্তিনেজকে কোনো সুযোগই দেননি মাহরেজ। ৬১ মিনিটে ওলি ওয়াটকিনস ব্যবধান ১-৩ নামিয়ে আনলেও সিটির ১৫তম জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। কাল আর্সেনালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে সিটি। সে ম্যাচের ফল এবারের প্রিমিয়ার লিগে শিরোপার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে অনেকটাই। এদিকে, পেদ্রির একমাত্র গোলে ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে লা লিগায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বার্সেলোনা। এক পয়েন্ট কম খেলা রিয়ালের চেয়ে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে গেলেও শিরোপা জয়ে এই ব্যবধানকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না কোচ জাভি। বলেছেন পথটা অনেক লম্বা, ‘১১ পয়েন্ট (রিয়ালের জন্য) অনতিক্রম্য দূরত্ব নয়। মনে রাখতে হবে, এখনো আমাদের ১৭টি ম্যাচ বাকি।’ তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে থাকায় সন্তুষ্টিও আছে বার্সা কোচের। ‘আমি খুশি। এ ধরনের অনুকূল ফলের ধারাবাহিকতা বিশেষ ব্যাপার। বোঝা যাচ্ছে, আমরা একটা শক্তিশালী দল হতে পেরেছি। পরিশ্রম করছি, মনোযোগী আছি।’ ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে জয়টি ছিল চলতি লিগে বার্সার ১-০ ব্যবধানের সপ্তম জয়। এর আগে ১৯৮৬-৮৭, ১৯৯৫-৯৬, ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে এমন ব্যবধানে ৭টি ম্যাচ জিতেছিল বার্সেলোনা।
বার্সেলোনার পরের ম্যাচ বুধবার রাতে ইউরোপা লিগে, প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
নিজেদের সবশেষ দুই ম্যাচে হেরেছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই। আজ তাদের আরও বড় পরীক্ষা। পার্ক দ্য প্রিন্সেসে চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর প্রথম লেগে আজ মেসি-নেইমাররা মুখোমুখি হবে প্রতিযোগিতার তৃতীয় সফল দল বায়ার্ন মিউনিখের।
ঘরের মাঠে সবশেষ দেখায় ২০২০-২১ এর কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বায়ার্নের কাছে ১-০ তে হেরেছিল পিএসজি। তবে বায়ার্নের মাঠে তারা জিতেছিল ৩-২ এ। তাতে দুই লেগ মিলে ৩-৩ সমতা থাকলেও অ্যাওয়ে গোলে জিতে পরের পর্বে গিয়েছিল পিএসজি। এবার অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নেই। তাই প্রতি লেগে জয় পাওয়া এবং গোলে এগিয়ে থাকাটা জরুরি।
পিএসজির দুশ্চিন্তা দুটি। এক তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম, দুই কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ আরও অনেকের ইনজুরি। গেল ১ ফেব্রুয়ারি এমবাপ্পে বাম উরুর ইনজুরিতে পড়ার পর জানা গিয়েছিল তার সেরে উঠতে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। ১২ দিন পর গতকাল দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে দেখা গেছে তাকে। ২২ জনের স্কোয়াডে রাখা হয়েছে এমবাপ্পেকে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি খেলেন কিনা সেটি দেখার বিষয়। বায়ার্ন মিউনিখের কোচ নাগেলসমান অবশ্য এমবাপ্পের ইনজুরির খবর শোনার পরই বলেছিলেন, এমবাপ্পে দলে আছেন ভেবেই ছক সাজাবেন। সে সময় বলেন, ‘আমার মনে হয় না সে খেলতে পারবে না। ধরে নিচ্ছি সে খেলবে।’
পিএসজি সবশেষ লিগ ম্যাচে হেরেছে মোনাকোর কাছে। সেই ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে ছিলেন না মেসি। তবে এই ম্যাচে মেসি খেলবেন তা মোনাকো ম্যাচের পরও জানিয়েছেন পিএসজি কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ে। পেটের পীড়ায় পড়া সার্জিও রামোস, আশরাফ হাকিমি সেদিন খেলেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। শেষ পর্যন্ত পিএসজি তাদের সেরা একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে নাকি তা হবে দেখার বিষয়। মুখোমুখি লড়াইয়ে ৬-৫ এ এগিয়ে থাকলে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটি জিতেছে বায়ার্ন, দুটি পিএসজি। বায়ার্ন মিউনিখ শেষ ষোলোর অ্যাওয়ে ম্যাচ হারেনি গেল এক দশকে (জয় ৬টি, ড্র ৪টি)।
এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় হয়েছে পিএসজি। এইচ গ্রুপে সমান ১৪ পয়েন্ট ছিল পিএসজি ও বেনফিকার। তবে বেনফিকার অ্যাওয়ে গোল বেশি হওয়ায় তারা গ্রুপসেরা হয়। আর বায়ার্ন মিউনিখ সি গ্রুপ থেকে সব ম্যাচ জিতে গ্রুপসেরা হয়। বাভারিয়ানদের গ্রুপে ছিল ইন্তার মিলান, বার্সেলোনার মতো ক্লাব। ২০১৯-২০ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে বায়ার্নের কাছেই হেরেছিল পিএসজি। এরপর পিএসজি ২০২০-২১ মৌসুমের কোয়ার্টারে বায়ার্নকে তাদের মাঠেই হারিয়েছিল। তাই এ ম্যাচে প্রতিশোধের কোনো বিষয় বলতে গেলে নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশোধ নেওয়া তো হতেই পারে! লিওনেল মেসি এখন পিএসজিতে। তিনি হয়তো ভুলে যাননি বার্সায়
থাকতে ২০১৯-২০ এর কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্নের কাছে দলের ৮-২ গোলে হারের কথা। এরপর বায়ার্নের সঙ্গে বার্সার দেখা হলেও মেসি ছিলেন না কাতালান ক্লাবটিতে। ২০২১-২২ এ মেসি চলে আসেন পিএসজিতে। তাই এবার পিএসজির হয়ে বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে চাইবেন মেসি।
ব্যক্তিগত একটা লড়াইও হচ্ছে মেসির এ ম্যাচে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের ম্যাচে পুরোটা সময় ফ্রান্সের উপামেকানো আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বজয়ীকে। ১২০ মিনিটে ৩-৩ সমতা ছিল সে ফাইনাল। আজ আবার মেসির বিপক্ষে খেলার বিষয় নিয়ে ফরাসি ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘মেসি বিশেষ একজন খেলোয়াড়। তবে সে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলুক বা পিএসজির হয়ে, আমাদের শুধু তার জন্য প্রস্তুতি নিলে চলবে না। প্যারিস (পিএসজি) দারুণ এক দল যাদের আরও স্ট্রাইকার আছে।’
ইনজুরি সমস্যা আছে বায়ার্ন মিউনিখ শিবিরেও। লুকাস হার্নান্দেজ, সাদিও মানে ইনজুরির কারণে এখনো দলের বাইরে। তবে জসুয়া কিমিখ ফিরতে পারেন। বায়ার্নের গোলবারের নিচে থাকবেন ইয়ান সমের। জানুয়ারির দলবদলে তিনি বায়ার্নে যোগ দেন মানুয়েল নয়্যার ইনজুরিতে পড়ায়।
বায়ার্ন সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচ ড্রয়ের পর শেষ তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে। সবশেষ বচুমের বিপক্ষে বুন্দেসলিগাতে তারা জয় পায় ৩-০ তে। তবু ওই ম্যাচ শেষে বায়ার্ন কোচ বলেছিলেন, দলের খেলায় তিনি সন্তুষ্ট নন। এমন খেললে পিএসজিকে হারানো যাবে না।
আজ রাতেই অপর ম্যাচে এসি মিলানের মাঠে খেলবে টটেনহাম। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে মিলান ‘ই’ গ্রপ থেকে রানার্সআপ হয়। টটেনহাম হয় ‘ডি’ গ্রুপ সেরা। মিলান সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অষ্টম ম্যাচে এসে জয় পায় গেল শুক্রবার। সিরি আ’তে তারা আছে পাঁচ নম্বরে। আর টটেনহাম সবশেষ লিগ ম্যাচে লেস্টার সিটির কাছে হেরেছে ৪-১ গোলে। ইপিএলে তারাও আছে পাঁচ নম্বরে। চ্যাম্পিয়নস লিগে সবশেষ ২০১১-তে মিলানের মাঠে গিয়ে ১-০ তে জিতেছিল টটেনহাম। টটেনহামের মাঠে ফিরতি লেগ হয়েছিল গোলশূন্য ড্র। সবশেষ ২০১৮-তে ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপে টটেনহাম হারিয়েছিল মিলানকে।
সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তারা সবসময় বলেন, তাদের লক্ষ্য ফিফা র্যাংকিংয়ে উত্তরণ। সেটা করতে এখন থেকে প্রতিটি ফিফা উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও শোনা যায় তাদের কথায়। সেই কথা রাখতে আগামী মাসে ফিফা উইন্ডোতে বাফুফে আয়োজন করতে যাচ্ছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। যেখানে স্বাগতিক বাংলাদেশ খেলবে ব্রুনেই ও সেশেলসের সঙ্গে। এই টুর্নামেন্টে নেই কোনো ফাইনাল। তিন দল একে অপরের মুখোমুখি হবে। লিগপর্ব শেষে শীর্ষ দলকে দেওয়া হবে শিরোপা। ফিফা র্যাংকিংয়ের তলানি অঞ্চলে থাকা তিন দলের এই আসর। দু’ম্যাচ জিতে যদি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নও হয়, তাতে র্যাংকিংয়ের অবস্থানে খুব বেশি উন্নতির সুযোগ নেই তাদের সামনে। সস্তা সাফল্য মেলার সুযোগ আছে, তাতে এমন আয়োজনের সার্থকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
মার্চে বাফুফের এই আয়োজনটি হবে সিলেটে। আসরে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে ফিফা র্যাংকিং অনুযায়ী ফেভারিট দল ব্রুনেই। তাদের অবস্থান ১৯০তম। এরপর বাংলাদেশ আছে ১৯২তম স্থানে। আর সবার শেষে ১৯৯তম স্থানে সেশেলস।
২০ থেকে ২৮ মার্চ হবে এই টুর্নামেন্টের খেলা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এখনো প্রস্তুত নয় বলেই বাফুফে খেলা নিয়ে যাচ্ছে সিলেটে। অথচ ক’দিন আগেই বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন জানিয়ে ছিলেন, আন্তর্জাতিক আসর আয়োজনে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ছাড়া কোনো বিকল্প নেই তার হাতে। এই মাঠটির কৃত্রিম টার্ফে খেলা অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ এ মাঠেই আগামী মাসে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করবে বাফুফে। সিলেটকে বিকল্প ভেন্যুর করার কথা বলা হলেও এক সপ্তাহ আগে সালাউদ্দিন সাফ জানিয়েছিলেন ঢাকার বাইরের কোনো মাঠ আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য উপযুক্ত নয়। হুট করেই ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল সিলেট জেলা স্টেডিয়াম?
গতকাল বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটির এক অনলাইন সভা হয় বাফুফে সভাপতির উপস্থিতিতে। সভা শেষে বাফুফের সহ-সভাপতি ও ন্যাশনাল টিমস কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ জানান, ‘মার্চে ফিফা উইন্ডোতে আমরা তিনজাতি টুর্নামেন্ট আয়োজন করছি। ব্রুনেই ও সেশেলস এসে খেলতে রাজি হয়েছে। খেলা হবে সিলেটে। এর মধ্যেই ফিফার কাছে অনুমোদনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম লেগ শেষে ৩ মার্চ থেকে ইংলিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে শুরু হবে আবাসিক ক্যাম্প।
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় একটিই। ঘরের মাঠে ২০১৪ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল। পরের দুটি আসরেও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিল। হারল এবারও। রবিবার কেপটাউনে এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই হেরেছে জ্যোতিরা। ১২৭ রান তাড়া করে ১০ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা লঙ্কানরা। একদিন পরই বাংলাদেশ আজ খেলবে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।
রবিবার কেপটাউনে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ, তবে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দিতে পারেননি সতীর্থরা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই মুর্শিদা আউট হয়ে যান কোনো রান না করেই। শামীমা সুলতানা (২০) ও সোবহানা মোশতারি (২৯), দুজনেই শুরুটা পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। একই অভিযোগ জ্যোতির দিকেও। ৩৪ বল খেলে ২৮ রান করে আউট হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এই তিন জন বাদে দুই অঙ্কের ঘরে রান করেছেন কেবল লতা ম-ল (১১)।
অল্প পুঁজিতেই লড়াইটা জমিয়ে দিয়েছিলেন মারুফা আক্তার। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে পেলেই যার ব্যাট চওড়া হয়ে যায়, সেই চামারি আতাপাত্তুকে মাত্র ১৫ রানে আউট করে দেন এই মিডিয়াম পেসার। নিজের পরের ওভারে পর পর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে দেন মারুফা, ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তখন কাঁপছে। কিন্তু অন্যপ্রান্ত থেকে আলগা বোলিং আর মাঠে বাজে ফিল্ডিংয়ের খেসারত দিয়ে মারুফার আগুনে বোলিংয়ে জল ঢেলেছেন সতীর্থরা। এরপর আর উইকেটই হারায়নি সিংহলের মেয়েরা, ১৮.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৯ রান তুলে তারা পেয়েছে জয়ের দেখা।
ম্যাচের পর জ্যোতি বললেন, ১৫/২০ রান কম হয়ে গেছে, ‘পাওয়ার প্লের সময় আমাদের ব্যাটিং দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু ৬ ওভারের পর আমরা কোনো বাউন্ডারি পাইনি। এরই মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা পরের ম্যাচগুলোতে পাওয়ার প্লের এই ব্যাটিংটা করে যেতে চাই। বাউন্ডারি মারা নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের।’
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে একবারই খেলেছে বাংলাদেশ। ২০২০ আসরের গ্রুপ ম্যাচে ১৯০ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১০৩ রান করতে পেরেছিল পিংকি-জ্যোতিরা।
এবার বিপিএলে সবার আগে প্লে-অফ পর্ব নিশ্চিত করা দলটি ছিল স্ট্রাইকার্স। আর সবশেষ উঠেছিল রংপুর। লিগের ১২ ম্যাচের ৯টিতেই জয়ী সিলেট দুই দেখাতেই হেরেছিল রংপুরের কাছে। সেই রংপুরই আজ প্রথমবারের মতো সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির ফাইনালে খেলার স্বপ্নের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার হাত ধরেই ২০১৭ সালে শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল রংপুর। সেই মাশরাফী এবার সিলেটের কা-ারি। গ্রুপ পর্বটা ভালোভাবেই পার করে সবার আগে দলকে প্লে-অফে তুলেছেন ‘ম্যাশ’, কিন্তু শেষ চারে এসে যে খেলার অঙ্ক পালটে গেছে বিপিএলের অদ্ভুতুড়ে নিয়মে! রীতিমতো পাড়ার খ্যাপের টুর্নামেন্টের মতো যখন তখন বিদেশি খেলোয়াড় আসছেন আর যাচ্ছেন বিপিএলে। সিলেটের বোলিংয়ের বড় শক্তি মোহাম্মদ আমির আর ইমাদ ওয়াসিম চলে গেছেন গ্রুপ পর্ব শেষে। যাদের নতুন করে নিয়েছে সিলেট, সেই ইসুরু উদানা-জর্জ লিন্ডেরা তেমন কিছু করতে পারেননি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে প্লে-অফে। কুমিল্লায় বিদেশি খেলোয়াড়ের তারার হাট, রংপুরেও তাই। আসরে নিজেদের সেরা বোলার আজমতউল্লাহ ওমারজাইকেও তারা বসিয়ে রেখেছিল এলিমিনেটর ম্যাচে, কারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সুপারস্টারদের একজন ডুয়াইন ব্র্যাভো যে এসে গেছেন তাদের দলে! ব্র্যাভো, নিকোলাস পুরান, মুজিব-উর-রহমান আর দাশুন শানাকাকে নিয়ে রংপুর দারুণ শক্তিশালী। সঙ্গে শেখ মেহেদি হাসান, রনি তালুকদার, শামীম হোসেন, রাকিবুল হাসানসহ তরুণ সব স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দলের নেতৃত্বে নুরুল হাসান সোহান।
অন্যদিকে সিলেট সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতায়। মাশরাফী, মুশফিকুর রহিম ও রুবেল হোসেন; মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তিনজন মিলে কমপক্ষে শ’খানেক ম্যাচ খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে রায়ান বার্ল, লিন্ডে, উদানার কার্যকারিতার মিশেলই হতে পারে স্ট্রাইকার্সের স্ট্রাইকিং ফোর্স।
প্রথম কোয়ালিফায়ার ও এলিমিনেটর, দুটো ম্যাচে চার দলের ক্রিকেটারদের ভেতর ভালো করেছেন কিন্তু দেশীয় ক্রিকেটাররাই। ম্যাচসেরা কুমিল্লার বাঁহাতি স্পিনার তানভীর আর রংপুরের শামীম হোসেন। এই পরিসংখ্যান অন্তত সিলেটকে আশাবাদী করে তুলতে পারে কারণ বিদেশির পাল্লায় রংপুরই যে এগিয়ে। অন্যদিকে সিলেটের তৌহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্তÑ এই দুই ব্যাটসম্যানই তাদের দিয়েছে লড়াইয়ের পুঁজি। সঙ্গে কখনো জাকির হাসান, কখনো মুশফিক। কুমিল্লার বিপক্ষে ব্যাটিংটা ভালো হয়নি সিলেটের, তবে অল্প পুঁজি নিয়েও কুমিল্লার বিপক্ষে লড়াইটা জমিয়ে তুলেছিল স্ট্রাইকার্স। একই সূত্রে হয়তো হারানো যাবে না রংপুরকে কারণ এই মিরপুরেই ১৭০ রানের লক্ষ্য দিয়েও রংপুরকে থামাতে পারেনি সিলেট।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের সহকারী কোচ সৈয়দ রাসেল জানিয়েছেন, লিগ পর্বে দুই দেখাতেই হারলেও আজ নতুন ম্যাচে সেই হিসাব চলবে না, ‘টি-টোয়েন্টিতে নির্দিষ্ট দিনে যে দল ভালো খেলবে তারাই জিতবে। আগে কী হয়েছে সেটা আমরা চিন্তা করছি না। তবে এটা স্বাভাবিক যে ওরা যেহেতু (এলিমিনেটর) জিতে এসেছে আর আমাদের সঙ্গে আগে দুটো ম্যাচে জিতেছে। অবশ্যই ওরা অনেক আত্মবিশ্বাসী থাকবে।’
কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংটাও খারাপ হয়েছে। মুশফিক ক্যাচ, স্টাম্পিং দুইই মিস করেছেন। মাশরাফী বোলিং করেছেন মাত্র ১ ওভার। রুবেল অবশ্য ৩ উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে শান্ত মোটামুটি রান করলেও রান পাননি তৌহিদ হৃদয় আর জাকির। কোচ রাজিন সালেহও ম্যাচশেষে বলেছেন যে সবাই খারাপ খেলেছে। সেদিন তিনি বলেছিলেন ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা, একই কথা রাসেলেরও। সেই সঙ্গে জানালেন, আমির ও ইমাদের চলে যাওয়ার ঘাটতিটা পূরণ না হওয়ার কথা, ‘ওরা যাওয়ায় ঘাটতিটা তো রয়েই গেছে। আমাদের দলীয় সমন্বয়টা খুব ভালো ছিল। সেখান থেকে একটা আঘাত বলা যায়।’
মুশফিক আর মাশরাফীর বিপিএল ভাগ্য পুরো বিপ্রতীপ। বিপিএলের ফাইনাল খেলতে সাত আসর লেগে গিয়েছিল মুশফিকের, শিরোপা জেতা হয়নি একবারও। সিলেট রয়্যালসের হয়ে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দল হিসেবে প্লে-অফে ওঠার পর দুই ম্যাচ হেরে ফাইনালে খেলা হয়নি মুশফিকের। অন্যদিকে মাশরাফী বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক। শিরোপা জিতেছেন ৪ বার, তিনটা আলাদা দলের হয়ে। রংপুরের একমাত্র শিরোপা জয়ও এসেছিল মাশরাফীর হাত ধরে। মুশফিকের বিপিএল ফাইনালের আক্ষেপ আর মাশরাফীর সৌভাগ্য, কোনটা কাজে লাগে রংপুরের বিপক্ষে সেটাই এখন দেখার।
বিপিএলে ম্যাচ চলাকালীন ড্রেসিংরুমে ধূমপানের ঘটনায় শাস্তি পেলেন খুলনা টাইগার্সের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী কাজের জন্য ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে তাকে। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে দুটি ডিমেরিট পয়েন্ট। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সুজন একই সঙ্গে বিসিবির পরিচালকও। জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টরের দায়িত্বও তার কাঁধে।
ঘটনা গত শুক্রবারের। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হয়েছিল খুলনা। ম্যাচটা ৬ উইকেটে জিতে নেয় দলটি। দলটার জয় নিশ্চিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ওই ঘটনা ঘটে। ২০তম ওভারে ব্যাট করছিলেন মাহমুদুল হাসান জয় ও হাবিবুর রহমান সোহান এমন সময় খানিক সময়ের জন্য খুলনার ড্রেসিংরুমের দৃশ্য দেখাচ্ছিল টিভি ক্যামেরা। আর সেখানেই দেখা যায় ধূমপান করছেন সুজন। খেলা চলাকালে ক্রিকেট মাঠে যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এদিকে, রবিবার রংপুর রাইডার্সের শেখ মেহেদী হাসান, নিকোলাস পুরান ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মোসাদ্দেক হোসেনকে জরিমানার কথা জানিয়েছে বিসিবি। মেহেদীর ঘটনাটা বরিশালকে এলিমিনেটরে বিদায় করে দেওয়া ম্যাচে। তার ব্যাটিংয়ে রংপুরের জয় নিশ্চিতের পর ছুটতে ছুটতে হেলমেট খুলে তা ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন। এই অপরাধে ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানার সঙ্গে ১টি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে তাকে।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আজ ৯ জুন (শুক্রবার)। ভাগ্যরেখা অনুযায়ী আপনার আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কী বলছে জ্যোতিষশাস্ত্র? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যারা দিনের শুরুতেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে চান তারা একবার পড়ে নিতে পারেন আজকের রাশিফল।
মেষ : ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল
জাতক এ সপ্তাহে শত বছরের পুরনো কেনো বস্তুর সন্ধান লাভ করবেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি, অলংকার বা কোনো অমূল্য ধর্ম গ্রন্থের সন্ধান পেতে পারেন।
বৃষ : ২১ এপ্রিল-২০ মে
জাতকের এ সময়টায় সন্তান, স্ত্রী অথবা বন্ধু-বান্ধবীর কারণে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। মূল্যবান দ্রব্যাদির বিষয়ে একটু সাবধান হোন।
মিথুন : ২১ মে-২০ জুন
আপনার এ সপ্তাহে অর্থ ভাগ্য ভালো। জাতকের মঙ্গল লগ্ন কোনো প্রতিযোগিতামূলক জীবিকায় প্রলুব্ধ করবে। যেমন, নেভি, আর্মি বা বৈমানিক ইত্যাদি।
কর্কট : ২১ জুন-২০ জুলাই
জাতকের হঠাৎ কোনো দলিল-দস্তাবেজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোভ নয়, মালিককে ফিরিয়ে দেওয়াই মানুষের কাজ।
সিংহ : ২১ জুলাই-২০ আগস্ট
মঙ্গল ও রবির অবস্থানগত কারণে সিংহের ক্রোধ জাগ্রত হতে পারে। মেয়েরা রাগ করে বিপথে যাবেন না। অযথা আপনার অমূল্য বাচ্চাদানি বিনষ্ট হবে।
কন্যা : ২১ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর
জাতকের এ সপ্তাহটা শুভ। তবে অযথা প্রশাসনের বিরুদ্ধ কোনো কাজে জড়াবেন না।
তুলা : ২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর
জাতকের গ্রহগণ সৌভাগ্যের দ্বার মেলে ধরবে। সহসা দয়িতার কারণে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।
বৃশ্চিক : ২৩ অক্টোবর-২০ নভেম্বর
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ইন্দ্রিয় তাড়নায় জাতক অবৈধকর্মে লিপ্ত হতে পারেন। অনুঢ়ারা অর্থোপার্জনে আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা লাভ করবেন।
ধনু : ২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর
জাতকের অর্থ ও বন্ধু জুটবে। বিদেশ ভ্রমণ যোগ বিদ্যমান। তবে ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
মকর : ২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি
জাতকের জন্মকু-ুলীতে শনি কেন্দ্রস্থ হওয়ার ফলে, ক্রোধ বিপদ ডেকে আনবে। দুর্ঘটনায় রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব ক্রোধ সম্বরণ করুন।
কুম্ভ : ২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি
জাতক জীবনে প্রতিপত্তি লাভ করবেন। সৃষ্টিশীল কাজে সুনামের যোগ রয়েছে। রাজদ্বারে স্বীকৃতি পাবেন।
মীন : ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ
জাতক অপরিচিত নারী দ্বারা প্রলোভনের শিকার হতে পারেন। নিজেকে যতই স্মার্ট ভাবুন না কেন, পথিনারী বিবর্জিতা, ভ্রমণে নারীসঙ্গ পরিহার করুন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।