
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে যোগ দিতে খানিকটা দেরিই হয়ে যায় কার্টিস ক্যাম্ফারের। ততদিনে প্লে-অফের সমীকরণ থেকে ছিটকে গেছে তার দল। তবে আইরিশ এই অলরাউন্ডার যতটা পারছেন কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশে থাকা এই সময়টা। কারণ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শেষের মাসখানেকের ভেতরই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে আয়ারল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে ডাবল-হ্যাটট্রিক করা ক্যাম্ফার অভিবাসন, বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতিসহ অনেক বিষয়েই আলাপ করেছেন দেশ রূপান্তরের সামীউর রহমানের সঙ্গে।
আপনার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়, খেলেছেন প্রোটিয়াদের অনূর্ধ-১৯ দলেও। কীভাবে আইরিশ পাসপোর্ট পেয়েছেন?
কার্টিস ক্যাম্ফার: আমি আইরিশ পাসপোর্ট পেয়েছি আমার দাদির সূত্রে। আমি আয়ারল্যান্ড দলের প্রধান কোচ ও কয়েকজন ক্লাব কোচের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম, একটা প্রস্তুতি ম্যাচে আইরিশদের বিপক্ষে খেলি এবং ভালোও করি। তখন তারাই আমাকে প্রস্তাব দেন আয়ারল্যান্ডে এসে ক্লাব ক্রিকেট খেলার। এরপর একসময় আমি জাতীয় দলে ডাক পাই।
আয়ারল্যান্ড দল থেকেই অনেকে পরে ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলেছেন, যেমন এউইন মরগান। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে আয়ারল্যান্ডে কেন?
ক্যাম্ফার: আয়ারল্যান্ড উঠতি একটা দল। আমারও বেশ কম বয়সে সুযোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার আর আমি সেই সুযোগটাই নিয়েছি। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ডের জীবনযাত্রাও অনেক ভালো, এই দেশটাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে আর ইউরোপে থিতু হওয়াটাও একটা বড় কারণ। এখানকার জীবনযাপনের ধরন...আর ডাবলিন অসাধারণ একটা শহর। এখানকার ক্রিকেট সংস্কৃতি আর আইরিশ ক্রিকেট যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছে...সবকিছুই খুবই আকর্ষণীয়। দলটাও তৈরি, অনেক খেলোয়াড় উঠে আসছে...জশ লিটল পিএসএলে খেলেছে, অনেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেছে...আমাদের অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি তো বিপিএলেই এসেছে। সবকিছু মিলিয়েই মনে হয়েছে অল্প বয়সে অনেকগুলো সুযোগ আমার সামনে এসেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ক্রিকেটারদের দেশান্তরের উদাহরণ কম নেই। কেভিন পিটারসেন, জেসন রয়, ডেভন কনওয়ে, মার্নাস লাবুশেন...অনেকেই প্রোটিয়া জার্সি গায়ে না তুলে বেছে নিয়েছেন অন্য রং। তাই বলে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের বদলে, আয়ারল্যান্ডের মতো দলে কেন?
কার্টিস ক্যাম্ফার: আমার স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা আর আমি আয়ারল্যান্ডের হয়ে সেটা করছি, এতটুকুতেই আমি খুশি। আমার আসলে অন্য কোনো কিছু নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। আমি আইরিশ ক্রিকেটের জন্য কতটা ভালো করতে পারি সেটাই ভাবছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করলে অন্য অনেক জায়গায় খেলার সুযোগ তৈরি হবে, এই যেমন এবারের বিপিএলে ডাক পেলাম। এখন অনেক টুর্নামেন্ট হচ্ছে, আমি যদি আমার কাজটা ভালোভাবে করতে পারি, তাহলে আমি কোথা থেকে এসেছি সেই প্রশ্ন উঠবে না।
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের খেলাগুলো যে ভেন্যুতে হবে, তার সবকটিতেই আপনার খেলা হয়েছে। এর আগে আয়ারল্যান্ড উলভসের হয়ে খেলতে এসে খেলেছিলেন চট্টগ্রামে, এবার সিলেট ভেন্যুও দেখলেন, মিরপুরে তো খেলছেনই। কী মনে হয়, ভেন্যুগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে একটা বাড়তি সুবিধা পাবেন?
ক্যাম্ফার: ১০০ ভাগ। এই ভেন্যুগুলোতে খেলার অভিজ্ঞতা হওয়াতে আমি বাড়তি একটা সুবিধা পাব। আগেভাগে এসে, কন্ডিশন আর খেলোয়াড়দের দেখে নেওয়া গেল। আমি সত্যিই খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম টেস্টটা খেলার জন্য। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির জন্য বাংলাদেশ খুব শক্ত প্রতিপক্ষ। আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি বিপিএলে বাংলাদেশে এসে। যেমনটা বলছিলেন চট্টগ্রামে খেলা, সেখানের উইকেট নিয়ে ধারনা আছে। সিলেটে খেলা, সেখানের উইকেটটাও জানলাম। আর মিরপুরে খেলে এটাও জানা হলো। আমি বাংলাদেশ সফরের তিন ফরম্যাটের দলেই আছি। আশা করছি টেস্ট একাদশে খেলতে পারব। তখন মিরপুরের উইকেটের অভিজ্ঞতা আমার খুব কাজে দিবে। আমি তো এখানে বোলিং করলাম, আবার ব্যাটিংও করেছি। টেস্টে অবশ্যই টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে থেকে আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে। কিন্তু কাজ তো একই থাকবে। যেমন আন্তর্জজাতিক ক্রিকেটে আপনি বোলার বা ব্যাটার যাই হোন না কেন, নির্দিষ্ট কিছু কাজ তো থাকেই। আশা করছি বিপিএলে সেসব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ সিরিজে কাজে লাগবে। আয়ারল্যান্ডের হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসার সুযোগের দিকে তাকিয়েই মাত্র মাসখানেক আগে বাংলাদেশে খেলার সুযোগটা না বলার কোনো কারণ ছিল না। এখানে আসা, অভিজ্ঞতাটা নেওয়া, বিশ্বের সেরা অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে বা বিপক্ষে খেলা। এখান থেকে যা পাচ্ছি সবই কাজে লাগবে।
আইরিশ জাতীয় দলের কোচ, আপনার সতীর্থ খেলোয়াড় এবং যারা দলের কৌশল নির্ধারণ করেন তারা নিশ্চয়ই আপনার কাছ থেকে খোঁজখবর নিচ্ছেন এখানকার কন্ডিশন সম্পর্কে। বিশেষ করে সিলেট, যেখানে আগে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। সেখানকার উইকেট কন্ডিশন কেমন এসব নিয়ে কথা কি হয়?
ক্যাম্ফার: আমাদের প্রধান কোচের সঙ্গে এর মধ্যেই কথা হয়েছে, আমাদের অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি সেও কথা বলেছে। আমাকে বলেছে যত পারি আমি যেন নোট নিই, গুরুতপূর্ণ তথ্যগুলো লিখে রাখি আর বিপিএল খেলে দেশে ফেরার পর যেন সবার সঙ্গে তথ্যগুলো ভাগাভাগি করি, কারণ আমাদের হাতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ থাকবে বাংলাদেশে আসার আগে। উইকেট খুব ভালো, তবে শিশির একটা বড় ভূমিকা পালন করবে। এখনো জানি না ম্যাচগুলো ডে-নাইট হবে নাকি সব দিনের আলোয় হবে, তবে রাতের বেলায় উইকেট একটু ভেজা ভেজা থাকে। অবশ্যই এই ছোট ছোট তথ্যগুলো কাজে দেবে যখন আয়ারল্যান্ডের হয়ে যখন খেলতে আসব। আর এই চিন্তাটা শুধু আমি না, বালবার্নিও করছে। আপনারা জানেন বালবার্নিও এই বিপিএলে খেলছে। আসলে এসব তো ক্রিকেটার বা ক্রিকেট দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে কোন দলের কোন দেশ সফরে ওই দেশে খেলা কোন ক্রিকেটারের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া হয়।
ইংল্যান্ড বা আয়ারল্যান্ডে সাধারণত বল সুইং করে বেশি, উপমহাদেশের উইকেটে তেমনটা হয় না। এখানে এসে খেলে কী বুঝলেন, আপনার বোলিংয়ে কোন বিষয়গুলো বদল করতে হবে এখানকার উইকেটে সফল হতে গেলে?
ক্যাম্ফার: ইংল্যান্ড বা আয়ারল্যান্ডে বোলিংটা অনেকটাই সিম পজিশনের ওপর নির্ভর করে, সুইং করে বল ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা থাকে। এখানে অনেক বেশি কাটার আর ক্রস সিম ডেলিভারি করতে হয়। বল একটু থেমে থেমে যায়, উইকেটে একটু আঁকড়ে থাকে বল। তাই নিজের বোলিংয়ে একটু বদল আনতে হয়, এটা ক্রিকেটারের জীবনেরই অংশ। এখানে উইকেট অনেক বেশি ফ্ল্যাট, তাই স্টাম্পের যত কাছে বল করা যায় ততই ভালো। রান করতে যেন কষ্ট হয়ে ব্যাটসম্যানের। এসব তো করতেই হয়, কারণ সব ম্যাচ তো আর এক জায়গায় খেলা যায় না।
দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের নিজস্ব টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করেছে, জাতীয়তা বদল না করলে ওখানেও খেলতে পারতেন বিপিএলের জায়গায়। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে না খেলায় কোনো আক্ষেপ আছে?
ক্যাম্ফার: একদমই না। এখন আয়ারল্যান্ডই আমার ঘরবাড়ি। আমি আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলাটাই উপভোগ করছি। আমার পরিবার এখনো দক্ষিণ আফ্রিকাতেই আছে। আশা করছি একদিন আয়ারল্যান্ডের হয়ে ওখানে খেলতে যাব আর আমার পরিবারের লোকজন মাঠে এসে আমার খেলা দেখবে।
আগের তিন প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পথ এতটা মসৃণ ছিল না বসুন্ধরা কিংসের। গতকাল তারা প্রধান প্রতিপক্ষ আবাহনীকে ২-১ গোলে হারিয়ে শতভাগ জয়ের রেকর্ড গড়েছে চলতি লিগের প্রথম পর্বে। ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মিগেল ফিগেইরার জোড়ায় এসেছে গুরুত্বপূর্ণ জয়। এ জয়ে লিগের মাঝপথেই বসুন্ধরা পাচ্ছে টানা চতুর্থ শিরোপার হাতছানি। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক জমজমাট ম্যাচ উপভোগ করেছে কাল। আবাহনীর হোম ভেন্যু হলেও বসুন্ধরার সমর্থক সংখ্যা ছিল বেশি। ম্যাচ শেষে তাদের নিরাশ হতে হয়নি। বরং লিগে প্রথম হারের তেতো স্বাদ পাওয়ার পাশাপাশি আবাহনীর শিরোপা সম্ভাবনাও ধূসর হয়ে গেছে।
চলতি মৌসুমে ১৯তম ম্যাচ জিতল বসুন্ধরা। যে জয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থানটা পাকাপোক্ত করেছে ১০ ম্যাচে ৩০ পয়েন্টে। এক ম্যাচ কম খেলা আবাহনীর ১৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ তারা পিছিয়ে পড়েছে ১২ পয়েন্টে। প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে আবাহনী খেলবে এফসি উত্তরার বিপক্ষে। যারা গতকাল ৩-৩ গোলে রুখে দিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে।
মৌসুমের সবচেয়ে বড় ম্যাচ বলেই দু’দলের ফুটবলারদের মধ্যে ছিল একটা লড়াকু মনোভাব। ভুটান থেকে উড়িয়ে আনা চার রেফারি দিয়ে হাই ভোল্টেজ ম্যাচটি পরিচালনা করিয়েছে বাফুফে। ম্যাচটা মোটামুটি শক্ত হাতেই পরিচালনা করেন ভুটানি রেফারি পেমা সেওয়াং। বার কয়েক হলুদ কার্ডও দেখাতে হয়েছে। ম্যাচের শেষ দিকে উত্তেজনা ছড়ালেও রেফারির হস্তক্ষেপে শেষ হয়েছে ভালোভাবেই। শেষ বাঁশির পর বসুন্ধরার উদযাপনেই বোঝা গেছে কতটা স্বস্তিকর এই জয়।
ডাগআউটে দুই কৌশলী ইউরোপিয়ান কোচ নিজেদের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করেছেন। সব মিলিয়ে আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে ম্যাচটা হয়ে উঠেছিল উপভোগ্য। শুরুটায় কিংস ছিল আগ্রাসী ভূমিকায়। তিন ব্রাজিলিয়ানে গড়া ফরোয়ার্ড লাইন বারবার পরীক্ষা নিচ্ছিল আবাহনীর রক্ষণভাগের। শুরুর দুই তিনটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও ২৬ মিনিটে ঠিকই দারুণ গোলে বসুন্ধরাকে এগিয়ে নেন মিগেল। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে রবিনহো নিখুঁত স্কয়ার পাস বাড়ান মিগেলকে। বক্সের ঠিক বাইরে তাতে বাঁ পায়ের ভলিতে বল জমা করেন পোস্টে। এই গোল হজমের পর যেন জেগে ওঠে আবাহনী। ২৮ মিনিটেই গোল পেতে পারতেন দলটির নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার পিটার নওরাহ। মারাজ হোসেনের চিপ ধরে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেছিলেন তিনি। তবে বসুন্ধরা কিপার আনিসুর রহমান জিকো দারুণ দক্ষতায় কিংসের লিড অক্ষত রাখেন। সমতায় ফেরার এমন সুযোগ নষ্টের পর হাল ছাড়েনি আবাহনী। বিশেষ করে বাঁ দিক দিয়ে বারবারই হানা দিয়ে বসুন্ধরার রক্ষণ বেসামাল করে দেন কোস্টারিকা তারকা দানিয়েল কলিনদ্রেস। ফলটা আসে ৩৬ মিনিটে। পরপর দুটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর কলিনদ্রেসের কর্নারে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রেজাউল করিমের হেডে ম্যাচে ফিরে আবাহনী। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে কলিনদ্রেসের আড়াআড়ি পাসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন এলিটা কিংসলে। নইলে বিরতির আগেই এগিয়ে যেতে পারত আবাহনী।
বিরতির পর অবশ্য খেলায় চলে আসে ধীর গতি।। দু’দল বল নিয়ন্ত্রণ কিংবা আক্রমণের চেষ্টা করেছে। তবে বলার মতো তেমন কোনো আক্রমণ হয়নি। ৬৩ মিনিটে কিংসলে পোস্ট ফাঁকা পেয়েও গোল করতে পারেননি। ৭৪ মিনিটে রবিনহোর শট বক্সের অনেক ওপর দিয়ে যায়, তবে ৭৭ মিনিটে আরেকটি আচমকা গোলে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন মিগেল। আবাহনীর মিডফিল্ডার সোহেল রানা বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন। ডরিয়েলটন আলতো টোকায় বল বাড়ান মিগেলকে। আবাহনীর নড়বড়ে ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে বক্সে ঢুকে আগুয়ান সোহেলের বাঁ দিক দিয়ে বল ঠান্ডা মাথায় দূরের পোস্টে জমা দেন মিগেল। এটি ছিল আবির্ভাবের পর বসুন্ধরার ২০০তম লিগ গোল। মাইলস্টোন গোলেই নিশ্চিত হয় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভীষণ স্বস্তিদায়ী জয়।
গোপালগঞ্জে ওবায়দুর নবাবের গোলে শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল শেখ জামাল। তবে ৩৪, ৪৩ ও ৫৯ মিনিটে সারোয়ার নিপু, মোমুনভ ও রোহিত সরকার উত্তরাকে দেন ৩-১ লিড। শেষ দিকে স্টুয়ার্ট কর্নেলিয়াস জোড়া গোল করে জামালের হার এড়ান ও এক পয়েন্ট নিশ্চিত করেন। ৯ ম্যাচে ১৩ পয়েন্টে জামাল আছে পঞ্চম স্থানে। আর উত্তরা ২ পয়েন্ট নিয়ে আছে তলানিতে।
১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে স্বাভাবিক ব্যস্ততা চোখে পড়ল না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে একটা আয়েশি ভাব। তাতেই সন্দেহ জাগল। এমন তো হওয়ার কথা নয়। ফুটবল রসাতলে যাক, ফুটবলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখলে মনে হবে, তারা অনেক সিরিয়াস। তো হঠাৎ করে কী এমন হয়ে গেল সবার মধ্যেই একটা গা-ছাড়া ভাব! অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল অফিসে নেই প্রশাসনিক প্রধান, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। এ ছাড়া কম্পিটিশনস ম্যানেজার জাবের বিন তাহের আনসারি, মিডিয়া বিভাগের লোক না হয়েও রহস্যময় কারণেই জাতীয় দলের মিডিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে আসা হাসান মাহমুদ ও অর্থ বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা অনুপম সরকারও উপস্থিত নেই বাফুফে ভবনে। উপস্থিত যারা আছেন, তারা কেউই বলতে পারলেন না একসঙ্গে চার কর্মকর্তা অফিসে নেই কেন? তাদের মুঠোফোনে কল করেও বন্ধ পাওয়ায় সন্দেহটা বাড়ল। আরও একটু খোঁজ করতেই জানা গেল সোহাগ বাকি তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে রয়েছেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখের পথে। বুঝতে বাকি রইল না তাদের গন্তব্য ফিফা সদর দপ্তর। এই কর্মকর্তার সঙ্গে একজন আইনজীবীও গিয়েছেন বলে গুঞ্জন আছে। চার অফিশিয়ালের ঢাকা ছাড়ার বিমান টিকিটের একটি কপি এসেছে দেশ রূপান্তরের হাতে। তাতে দেখা গেছে, বুধবার সকালে এমিরেটসের ইকে ৫৮৩ ফ্লাইটযোগে তারা প্রথমে দুবাই গেছেন। এরপর ইকে ০৮৫ ফ্লাইটযোগে গেছেন জুরিখে।
এমন লুকিয়ে কেন তারা জুরিখে? এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাফুফে বস কাজী সালাউদ্দিনের কাছে। উনি যেন কিছুই জানেন না এমন একটা ভাব করলেন। পরে অবশ্য বাফুফের নির্বাহী কমিটির শীর্ষ আরেক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারণটা জানিয়েছেন, ‘তারা চারজনই ব্যক্তিগতভাবে ছুটি নিয়েছেন। এটা বাফুফের কোনো অফিশিয়াল সফর নয়। আসল কারণটা অবশ্য আমার খুব বেশি জানা নেই। শুনেছিলাম, সোহাগসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ এনেছিল ফিফা। সেগুলোর ব্যাপারে হয়তো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ডাকা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে যখন কোনো অভিযোগ তোলা হয়, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার একটা সুযোগ থাকে। সেটাই মনে হয় এরা করতে গেছে। তবে আমি যতটুকু জানি, এটা তাদের ব্যক্তিগত সফর।’
বেশ কিছুদিন ধরেই ফিফা বাফুফেতে তাদের প্রতিনিধি বসিয়ে অডিট প্রতিবেদনগুলো তদন্ত করছে। সেই তদন্ত করতে গিয়ে সোহাগসহ বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে নানা অসংগতি খুঁজে পেয়েছে ফিফা। তাই তাদের দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিস। জানা গেছে, জুরিখের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগের রাতে অনেকটা সময় অফিসে ছিলেন সোহাগ। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত অফিসে থেকে কাগজপত্র গুছিয়েছেন বাকিদের নিয়ে। ফিফার কাছে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়তো সোহাগের এই গোপন সফর। তবে বাফুফের এক সহ-সভাপতি জানিয়েছেন, অনিয়ম যেই করুক, শেষ পর্যন্ত দায়টা এসে পড়ে নির্বাহী কমিটির ওপর। যার ফলে ফুটবল এগিয়ে নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে, ‘আমরা যারা নির্বাচিত হয়ে আসি ফুটবলকে সার্ভ করার জন্য, তারা খুব নিরুপায় হয়ে পড়ি, যখন দেখি কেউ আমাদের বিশ্বাস করছে না। স্পন্সররা বলে, ফুটবলে টাকা দিয়ে লাভ কী, সেগুলো তো সঠিক খাতে খরচ হবে না। ফলে তখন আমাদেরও বিপদে পড়তে হয়। আবার কেউ দোষ করলে তার দায়ও এসে পড়ে আমাদের ওপর। আমরা অনেকেই ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছি’ এখানে। ব্যবসা-পরিবার ছেড়ে ফুটবলে সময় দিচ্ছি। কতদিন এটা করতে পারব, জানি না।’
বছরের শুরুতে এই ফিফার শোকজ নোটিস নিয়ে নাটক হয়েছে অনেক। তখন বাফুফে সভাপতি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানিয়েছেন, তার কিছুই জানা নেই। সাধারণ সম্পাদকসহ চার কর্তার একসঙ্গে জুরিখ সফরের বিষয়টাও অজানা দাবি সভাপতি। তবে বেতনভুক্ত চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সত্যতা পেয়ে গেলে ফিফা নিশ্চয় নিঃশর্ত ক্ষমার পথে হাঁটবে না। যদি একজনেরও শাস্তি হয় আর্থিক অনিয়ম কিংবা নকল বিল-ভাউচার জমা দেওয়ার কারণে, সেই দায়টা কি এড়িয়ে যেতে পারবেন সালাউদ্দিন। তার নাকের ডগায় থেকেই যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তরা এতদিন চাকরি করে যাচ্ছেন মোটা বেতনে।
টানা দুই শিরোপা। এবার সেরা উইকেটশিকারিও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বাঁহাতি স্পিনারের খুশি হওয়ার কারণটা বিশেষ। ম্যাচে ব্যবহৃত একটি স্টাম্প নিজের সংরক্ষণে রেখেছেন, তাতে দলের সব ক্রিকেটারের অটোগ্রাফও আছে। তানভীরের মতো ১৭ উইকেট নিয়ে সেরা শিকারি হাসান মাহমুদও। রংপুর রাইডার্সের এই পেসারের ফাইনালের দিনে এমন উৎসব করার উপায় নেই। তার দল থেমেছিল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। তবে ব্যক্তিগত অর্জনটা অবশ্যই হাসানের মনেও আনন্দের দোলা দিচ্ছে। বোলিংয়ে তারা দুজন আর ব্যাটিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত; এবার বিপিএলে সেরার তালিকায় বিদেশিদের পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে গৌরব এনে দিলেন তারা। ব্যক্তিগত এই অর্জনে ভালো লাগাটা দুজনেরই সমান।
দেশের টুর্নামেন্টে দেশি ক্রিকেটারদের দাপট বরাবরই প্রশংসনীয়। বিপিএল আর সব বারের মতো ছিল না। এবার নতুন দুই আসর দক্ষিণ আফ্রিকা ও আরব আমিরাত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বিপিএলের সময়েই শুরু হয়। তাই বিদেশি ক্রিকেটারদের বিপিএলে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এতে করে দেশিদের পারফরমের সুযোগ বেড়ে যায়। সেই সুযোগ দু’হাতে লুফে নিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ব্যাট-বল মিলে দুই ক্যাটাগরিতে সেরা পাঁচজন করে মোট ১০ জনে মাত্র একজন বিদেশি জায়গা পেয়েছেন।
টানা দুই আসরে সেরা পাঁচে থেকে পারফরম্যান্সের দ্যুতি ছড়ালেন তানভীর। গত আসরে ১২ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন চতুর্থ। ওই আসরে ভালো করা বাকি দেশি বোলাররা এবার পিছিয়ে পড়লেও তানভীর ব্যতিক্রম। টুর্নামেন্টের আগে কোচ সালাহউদ্দিনের সঙ্গে বোলিং নিয়ে কিছু বাড়তি কাজ তার ধারাবাহিক হওয়ার কারণ। সেই সঙ্গে নিজের বোলিংয়ে নতুন কিছুও যুক্ত করছেন তানভীর। ফাইনালে তার একটি ডেলিভারি অর্থডক্স বাঁহাতি স্পিন না হয়ে হলো চায়না ম্যান ধরনের। ওই ডেলিভারি নিয়ে তানভীর বলছিলেন, ‘এটা একটু ইনসুইংয়ের মতো, এটা প্রথম দেখি বরিশাল বিভাগের বাঁহাতি স্পিনার মনির ভাইয়ের কাছ থেকে। ওনার থেকে দেখে চেষ্টা করেছি কিন্তু ঠিকঠাক হচ্ছিল না। পরে নাহিদুল (ইসলাম) ভাইয়ের (রংপুর রাইডার্স) কাছ থেকে গ্রিপটা দেখি। এরপর চেষ্টা করছিলাম কাল ওই বলটা সঠিকভাবেই হলো।’
এমন নতুন অস্ত্র নিয়ে তানভীর তৈরি থাকছেন জাতীয় দলের জন্য। টানা দুই বিপিএলে ভালো করা এ স্পিনার বাস্তবতাটাও জানেন। জাতীয় দলে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে অটোমেটিক চয়েজ হয়ে আছেন সাকিব, তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ। তাদের টপকে সুযোগ পাওয়া কঠিন, তবে প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে স্বপ্ন লালন করে যাচ্ছেন তানভীর, ‘দেখেন সব ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলা। সেই আশা, ইচ্ছা বা স্বপ্ন আমারও আছে। তবে আমি যে জায়গাটাতে আছি সেখানে আগে তাইজুল-নাসুম ভাই আছেন। তারা খুব ভালো পারফরম করছেন। তাই আমার আক্ষেপ হয় না। কারণ জাতীয় দলে না হোক ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম করে ওনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আমিও আছি। অবশ্যই এভাবে এগোতে থাকলে আমারও সুযোগ আসবে।’
হাসান মাহমুদের এই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে নামবেন সামনের ইংল্যান্ড সিরিজে। এবারের বিপিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান সেখানে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সেরা উইকেটটেকার হওয়া তো ভালো অর্জন। ফাইনাল খেলতে পারলে আরও ভালো হতো। আমরা সেরকমই দল ছিলাম। আর ব্যাক্তিগত অর্জন বলতে, এই সিজনে মিরপুরে যে উইকেট ছিল তা অনেকটা বিদেশে যেমন উইকেট আমরা পাই সেরকম। সেখানে আমাদের পেসারদের জন্য ভালো একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ব্যাটারদের আটকানো, কম রান দেওয়া, ডট দেওয়া.... এই বিষয়গুলো আমরা পেসাররা কাজে লাগাতে পেরেছি। ইংল্যান্ড সিরিজে তো ফরম্যাট ভিন্ন, ওয়ানডে। তবে পরিকল্পনা একই থাকবে যেমন রান কম দেওয়া, বেশি ডট দেওয়া এটাই।’ হাসানের আক্ষেপটা ভালো দল গড়েও ফাইনাল জিততে না পারা। তার বিশ্বাস, ফাইনালে রংপুর খেললে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা তো থাকতই সঙ্গে নিজের উইকেটসংখ্যাও বাড়াতে পারতেন।
ইউরোপা লিগের হাইভোল্টেজ ম্যাচ বার্সেলোনা বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এমন ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে হলো চার গোল। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনা ও ম্যানইউ ম্যাচ ২-২ সমতায় শেষ হয়। তাই ইউরোপা লিগে টিকে থাকার ফয়সালা হবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ফিরতি লেগে।
প্রথমার্ধে গোল না হলেও খেলা জমে ওঠে আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণে। মার্কাস রাশফোর্ড ও ভেহর্স্টর শট টের স্টেগার রুখে না দিলে পিছিয়ে পড়তে পারত বার্সেলোনা। সুযোগ বার্সেলোনাও পেয়েছে। তবে রবার্ট লেভানডফস্কি ও জর্ডি আলবা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টানা দুটি বড় হার জুটেছিল বাংলাদেশ নারী দলের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচেও একই ভাগ্য বরণ করতে হলো। এবার নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭১ রানে হেরেছে নারী দল। কিউই তারকা সুজি বেটসের ৬১ বলে ৮১ রানে আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে ১৮৯ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। মাত্র ২০ বলে ৪৪ করে অপরাজিত ছিলেন ম্যাডি গ্রিন। জবাবে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১১৮ রানে থামে। গত ম্যাচে নিগার সুলতানার হাফসেঞ্চুরির মতো লড়াই করতে পারেননি কেউ। মুর্শিদা খাতুন ৩০ ও স্বর্ণা আক্তারের ৩১ দলীয় সর্বোচ্চ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।