
১৭ ফেব্রুয়ারি দেশ রূপান্তরের অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল ‘গোপনে ফিফা সদর দপ্তরে কেন সোহাগ?’ এ নিয়ে সরব হয়ে ওঠে ফুটবল অঙ্গন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কেনাকাটায় অসংগতি, ভুয়া বিল-ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ, ত্রুটিপূর্ণ অডিট রিপোর্ট নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই তদন্তে নেমেছে ফিফা। বেশকিছু অসংগতিও পেয়েছে তারা। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শোকজ পাওয়া সোহাগ ও অর্থ বিভাগের সহকারী অনুপম সরকারকে তলব করে ফিফা। ব্যাখ্যা দেওয়ার সুবিধার্থে বাফুফের আরও দুই নির্বাহী জাবের বিন তাহের আনসারী ও হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করেন সোহাগ। জুরিখে তাদের সঙ্গী হয়েছিলেন এক আইনজীবীও। তবে চার নির্বাহীর এই সফর নিয়ে চরম গোপনীয়তার পথে হাঁটতে গিয়েও পারেনি বাফুফে। তাদের গোপন সফর দেশ রূপান্তরে ফাঁস হয়ে যায়। যদিও তাদের সফরের বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তবে সোহাগরা ফিরে আসার পরের দিন সংবাদ মাধ্যম ডেকে সালাউদ্দিন বুঝিয়ে দিলেন এই সফর সম্পর্কে ভালোই জানা তার। চার নির্বাহীর এটি একান্ত ব্যক্তগত সফর দাবি করলেন প্রথমে, আবার তাদের সঙ্গী হওয়া আইনজীবীর বৃত্তান্তও মুখস্থ বলে দিলেন সালাউদ্দিন নিজেই। অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদককে পাশে বসিয়ে তিনি একবার দাবি করলেন, এটা অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, এর সঙ্গে বাফুফে বা তার কোনো সংযোগ নেই। আবার পরক্ষণেই তাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেন। এরকম দ্বৈত অবস্থানে সালাউদ্দিন আরেকবার প্রশ্নবিদ্ধ হলেন।
সালাউদ্দিনের মধ্যে এখন এক নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিছু হলেই আগ বাড়িয়ে সংবাদমাধ্যমকে ডেকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের একটা চেষ্টা থাকে তার মধ্যে। আবার আস্থাভাজন হওয়ায় বাফুফে সাধারণ সম্পাদকসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহও নেই তার। সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফিফা কেন তাদের ডেকেছে, তা আমার জানা নেই। কখনো জানতেও চাইনি। যেহেতু ফিফা বিষয়টি অতি গোপনীয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, তাই ওরা কেউ বাধ্যও নয় আমাকে কিছু বলার। যেচে জানতে চাইলে দেখা যাবে আমাকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে ফিফার।’ তিনি যোগ করেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত চলছে, তাদের কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অভিযুক্ত প্রমাণিত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমার কিছু করার নেই। আর যে বিষয়গুলো আমার জানাই নেই, সে বিষয়ে আমি কীভাবে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করব।’
অভিযুক্ত সোহাগ ও অনুপমের সঙ্গী হয়ে যাওয়া জাবের ও হাসান মাহমুদ কেন গিয়েছেন? প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সোহাগ, ‘নির্বাহী প্রধান হিসেবে তিনজনের ছুটির অনুমোদন আমি দিয়েছি। আর সভাপতি আমার ছুটির অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা নিজ খরচায় জুরিখে গিয়েছিলাম। যেহেতু কিছু ফাইল তৈরির ক্ষেত্রে অন্যরা যুক্ত ছিল, তাই তারা তাদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়েছে।’ যারা অভিযুক্ত নন, তাদের কী দায় পড়েছে নিজ খরচায় জুরিখ গিয়ে বিপদ ডেকে আনার? এই প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলে ওঠেন, ‘তাদের যাওয়া-আসার খরচা কেউ একজন বহন করেছে।’ সেই কেউ একজন কে? সেটা অবশ্য বলেননি বাফুফের প্রধান।
আলোচনায় উঠে এসেছিল জেমি ডে’র বেতন বকেয়ার ব্যাপারে ফিফার সিদ্ধান্তের বিষয়টিও। ফিফা সাফ জানিয়েছে, জেমির বেতন সুদসহ পরিশোধ না করলে ফিফা ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের একটা অংশ স্থগিত করে দিবে। ফিফা প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির এই সিদ্ধান্ত অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশও করা হয়েছে। অথচ সালাউদ্দিন জানালেন, এরকম কোনো সিদ্ধান্ত তারা জানা নেই। জেমির বেতন সময়মতো পরিশোধ করলে অন্তত সুদের অঙ্কটা দিতে হতো না। সালাউদ্দিন এক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে দায় চাপালেন সরকারের ওপর, ‘আমার কাছে টাকা থাকলে তো তখনই দিয়ে দিতাম। সরকারের কাছে আমরা একটা প্রকল্প জমা দিয়েছিলাম। সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে যাওয়ায় আমাদের আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে।’
ফিফার সন্দেহের তালিকায় থাকা বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া আছেন। হিসাবে অসংগতির মূল দায়টা সালাউদ্দিন চাইলেন আবু হোসেনের ওপর চাপাতে। এই বিতর্কিত নির্বাহীকে আগেই চাকরিচ্যুত করা উচিত ছিল, তবে ফাইন্যান্স কমিটির প্রধান ও বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদীর কারণে সেটা করা যায়নি দাবি করেছেন সালাউদ্দিন, ‘আমি সালামকে বলেছিলাম, তোমাকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে দিলাম, তুমি যাকে ইচ্ছে তাকে চাকরিচ্যুত করতে পার। কিন্তু সে তা করেনি।’ সালাম এই অভিযোগ শুনে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘আমি আমার ছেলেকে আমার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বানিয়েছি। অনেক স্বাধীনতা দিয়েছি, তবে চেক সাইন করার অধিকার দেইনি। তার মানে কী দাঁড়াল? আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে তো আগেই আমি ব্যবস্থা নিতাম। সেটা পারিনি বলে তার ওপর একজন পর্যবেক্ষক বসিয়ে দিয়েছিলাম।’ ফিফায় কী কথা হচ্ছে, না হচ্ছে, সালাউদ্দিন দাবি করেছেন সেটা তাকে জানানো হয় না। তাতেই একটা সন্দেহ দানা বাঁধছে; তবে কি ফিফা সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে! বাফুফে সভাপতিকে বাইরে রেখে হয়তো তার ব্যাপারেই জানার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে সোহাগদের। ফিফার এই নড়েচড়ে বসায় সালাউদ্দিনও কি পারবেন সুরক্ষিত থাকতে?
এমবাপ্পের গোল; পিএসজি ১-০। নেইমারের গোল; পিএসজি ২-০। এমবাপ্পের দ্বিতীয় গোল; পিএসজি ৩-৩।
টানা চতুর্থ পরাজয় এড়াতে এটুকুই অনেক ছিল গতকাল লিলের সঙ্গে ম্যাচে। কিন্তু লিওনেল মেসি কিছু করলেন না তো! এরকম যখন ভাবছে সবাই, তখনই যোগ করার সময়ের পঞ্চম মিনিটে লিলে বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রিকিক পায় পিএসজি। তাকে ফাউল করায় এই ফ্রিকিক। বাঁ-পায়ের শট লিলে গোলকিপারকে বিপর্যস্ত করে বা পোস্ট ঘেঁষে বল আশ্রয় নেয় জালে। পিএসজি ৪-৩। এতই মাহাত্ম্য এই গোলের যে, গুরুগম্ভীর কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের দৌড়ে গিয়ে উদযাপনে যোগ দিলেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে।
লিগে আগের দেখায় লিলের মাঠে পিএসজি জিতেছিল ৭-১ গোলে। সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এমবাপ্পে। গোল পেয়েছিলেন মেসি, নেইমারও। গতকালও ১৭ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে যায় প্যারিসের দলটি। ১১ মিনিটে মাঠের বা প্রান্তে থ্রু পাস পেয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন এমবাপ্পে। দুই ডিফেন্ডারের বাধা পেরিয়ে বল জালে পাঠান এমবাপ্পে। ছয় মিনিট পর ভিতিনহার শট লিলে কিপারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। ফিরতি শটে বল জালে জড়ান নেইমার। তাতে মনে হচ্ছিল এবারও সহজ জয় পাবে পিএসজি। তবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে পাল্টা আক্রমণ চালায় লিলেও। ২৪ মিনিটে হেডে এক গোল শোধ দেন রাইট ব্যাক দিয়অকিতে। তাতে প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-১ এ। ৪৮ মিনিটে নেইমারকে মাঝমাঠে ফাউল করেন বেনজামিন আন্দ্রে। ডান পায়ের গোড়ালির ইনজুরিতে পড়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের বদলি নামেন হুগো একিতিকে। ২০ ম্যাচে ১৩ গোল নেইমারের। ৫৬ মিনিটে কর্নার পায় লিলে। এ সময় বক্সে থাকা থিয়াগো দালোকে ফেলে দেন ভেরাত্তি। ভেরাত্তি দেখেন হলুদ কার্ড এবং পেনাল্টি পায় লিলে। স্পটকিক থেকে স্কোর ২-২ সমতা আনেন জনাথন ডেভিড। আক্রমণ অব্যাহত রাখা লিলে তৃতীয় গোল পেয়ে যায় ৬৯ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে লম্বা করে বাড়ানো থ্রু বল ধরে দৌড়ে বক্সে ঢুকে বল জালে জড়ান জনাথন বাম্বা। ৮০ মিনিটের পর বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক আক্রমণ করে পিএসজি। পুরো ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকা মেসিও জেগে ওঠেন। ৮৭ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে হুয়ান বের্নাটের পাস থেকে গোল করে সমতা ফেরান এমবাপ্পে। চলতি লিগে ২০ ম্যাচে ১৫ গোল হলো এমবাপ্পের।
ইনজুরির কারণে লিগে মোনাকোর বিপক্ষে ম্যাচে ছিলেন না মেসি। ফিরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাঠে নামলেও গোল পাননি। তবে গতকাল লিগে ফিরে গোল পেলেন। লিগে ১৯ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ১১তে।
চান্দিকা হাতুরুসিংহে যখন বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, রঙ্গনা হেরাথের খেলোয়াড়ি জীবন তখন শেষ হয়নি। দ্বিতীয় দফায় যখন হাতুরাসিংহে বাংলাদেশে আসছেন, বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে হেরাথের দায়িত্বকাল কুড়ি মাস হয়ে গেছে। স্বদেশিকে পেয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রাণখুলে সিংহলী ভাষাতেই হয়তো আড্ডা দিতে পারবেন দুজনে। ভাষাগত কিংবা কৌশলগত, হাতুরুসিংহেকে দলের প্রধান কোচ হিসেবে পেয়ে অনেক সুবিধাই হবে হেরাথের নিজের আর বাংলাদেশ দলেরও। কাল মিরপুরে বিসিবি একাডেমি মাঠে স্পিন বোলিং নিয়ে ক্যাম্পের শেষে গণমাধ্যমকে এমনটাই জানালেন তিনি।
আজ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমানে করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশে পা রাখার কথা হাতুরুসিংহের। হেরাথ মুখিয়ে আছে স্বদেশিকে বরণ করতে। ‘চান্দিকা এর আগে বাংলাদেশে কাজ করেছে। ওই সময় বাংলাদেশ ভালো করেছে, সাফল্যও পেয়েছে। আমার ক্ষেত্রে বলব, আমি তার সঙ্গে খেলেছি, তার কোচিংয়েও খেলেছি। তো এদিক থেকে তার ব্যাপারে আমার ফিডব্যাক ইতিবাচক এবং আমি আত্মবিশ্বাসী, বাংলাদেশ ক্রিকেট তার মাধ্যমে উপকৃত হবে’, রবিবার সাংবাদিকদের বলেন হেরাথ। দুজনে একসঙ্গে কাজ করবেন ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে যার প্রথম দুই ওয়ানডের দল এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন নির্বাচকরা। হেরাথ জানিয়েছেন হাথুরুর সঙ্গে দল নিয়ে নয়, কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ‘আসলে দল নির্বাচন নয়, পরিকল্পনা সাজানো নিয়ে কথা হয়েছে।’ নির্বাচকরা দলে নিয়েছেন বামহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে, যাকে বেশিরভাগ সময় লাল বলেই জাতীয় দলে খেলতে দেখা যায়। তাকে দলে নেওয়ার পেছনে হেরাথের যুক্তি, ‘সে উইন্ডিজে ভালো করেছে। আমি তাইজুলের মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভালো করার মতো প্রতিভা দেখতে পাই। উইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ যে ম্যাচটি খেলেছে, তাইজুল সেটায় ভালো বোলিং (২৮ রানে ৫ উইকেট) করেছে। তো আমি তাইজুলকে এমন একজন হিসেবেই দেখি, যে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভালো বোলিং করতে পারে।’
বিপিএলের সব খেলা না দেখলেও কিছু কিছু ম্যাচ দেখেছেন হেরাথ, উঠতি স্পিনার হিসেবে তানভির ইসলামকে ভালোই লেগেছে তার, ‘তানভিরকে দেখে আমি খুবই খুশি। বিপিএলে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছে। এর আগের টুর্নামেন্টগুলোতেও ভালো করেছে। তো এদিক থেকে বলব, এমন স্পিনার পাওয়া পুরো সিস্টেমের জন্যই ভালো। কারণ তাইজুল-নাসুম এমনকি সাকিবেরও কিছু হলে আরও ক্রিকেটার তৈরি থাকবে। তো আমি খুব খুশি যে, তানভিরও এগিয়ে এসেছে। ইংল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা নিয়ে বললেন, ‘যেকোনো দলের বিপক্ষে আমরা জয়ের জন্যই খেলতে নামি। এটিই আল্টিমেট গোল। তবে জেতার আগে প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে, অনুশীলন করতে হবে, পরিকল্পনা সাজাতে হবে যথাযথ। এগুলো যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলতে হবে।’
লম্বা বিপিএলের পর অল্পদিনের বিশ্রাম শেষেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রস্তুতিতে। এবারে প্রথাগত দীর্ঘ অনুশীলন ক্যাম্প হবে না, তবে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে সামনে। ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এসে পড়বে ২৪ তারিখে, তার আগেই হবে প্রস্তুতি ম্যাচ। ১ মার্চ মিরপুরে প্রথম ওয়ানডে।
প্রথম ইনিংসে লড়াইয়ে সমতা। অস্ট্রেলিয়ার ২৬৩ রানের জবাবে ভারত ২৬২। দ্বিতীয় দিনের শেষ ঘণ্টায় ১২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেটে ৬১ রান তুললে মনে হচ্ছিল বড় একটা টার্গেটই দিতে পারবে তারা ভারতকে। তৃতীয় দিনের প্রথম ওভারে ট্রাভিস হেড আউট হয়ে গেলেও ২ উইকেটে ৮৫তে এগিয়েছিল অজিরা। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা ভেলকেত আর ২৮ রানেই শেষ অজিদের সব প্রতিরোধ! এই আট উইকেটের ছটিই জাদেজার। ভারতের সমানে তাই টার্গেট দাঁড়ায় ১১৫, ৪ উইকেট হারিয়েই তা তুলে নিয়ে চার টেস্টের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত। সেই সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পথেও এক ধাপ এগোলো।
স্বাগতিকদের কাউন্টার অ্যাটাক উপহার দিতে দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। ‘সুইপ শট’ করে একের পর এক বাউন্ডারি তুলছিল। ২৭টি সুইপে এসেছে ৭১ রান, তবে ক্রিকেটে এই শট যেমন উর্বরা কেমন আত্মঘাতীও। প্রথম ৬ ওভারে ৩১ রান দেওয়া জাদেজা অস্ট্রেলিয়াকে এই ফাঁদেই ফেলেছেন পরের দিকে। অজিদের সুইপের লোভ দেখিয়েছেন আর তাতে বেশিরভাগ হয়েছে বোল্ড আর কেউ ক্যাচ আউট। আগের দিন অপরাজিত থাকা ট্রভিস হেড ৪৩ ও মার্নাস লাবুশেনের ৩৫ রান ছাড়া কোনো ব্যাটারই দু’অঙ্কের ঘরে রান তুলতে পারেননি। এই কৌশলের কথাই বলেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘আমরা চেয়েছিলাম ওরা যেন বেশি শট খেলে। জানতাম আজ শুরু থেকেই উইকেট ভাঙবে। আর এমন কন্ডিশনে জাদেজা ও আশ্বিন একেবারে মাস্টার।’
রান তাড়ায় রোহিত ৩১, কোহলি ২০ করেন। রিকি পন্টিংয়ের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টেস্টে পুজারা নিয়েছেন জয়সূচক (বাউন্ডারি) রান। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৩১ রানে, শ্রিকার ভারত ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচ তিন দিনে হারায় হতাশ অজি অধিনাযক প্যাট কামিন্স, ‘আমাদের জন্য দুটো ম্যাচই হতাশাজনক। এই ম্যাচটা বেশি। কারণ আমরা এগিয়ে ছিলাম। ভারতে এরকম ব্যর্থতা খুব বেশি হয় না। আমরা সত্যিই বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছি।’
১ মার্চ থেকে ইন্দোরে হবে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। ভারত প্রথম দুই টেস্টের দলকেই রেখেছে বাকি দুই টেস্টের জন্য।
বিপিএল শেষ হওয়ার পর কিছুদিনের বিশ্রাম পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ছুটি কাটিয়ে জাতীয় ক্রিকেটাররা ফ্রেব্রুয়ারির শেষ থেকে মাঠে নামবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততায়। বাকিরা বসে থাকবেন না, তাদের ব্যস্ততা
থাকবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। ফেব্রুয়ারিতেই বিপিএলের পর ডিপিএল শুরুর কথা থাকলেও তা কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে মার্চের ১৫ তারিখ থেকে শুরুর পরিকল্পনা হয়েছে। আর ২-৩ মার্চ থেকে শুরু হবে দলবদল। আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকলেও দলগুলো ইতিমধ্যেই দল গোছানোর কাজ শেষ করেছে সিংহভাগ। বরাবরের মতো মিরপুর ও বিকেএসপি-ই থাকছে ভেন্যুর তালিকায়। তবে ইংল্যান্ড সিরিজের সময় ফতুল্লাকে ব্যবহার করা হবে। রোজার সময় খেলা বলে এবার ম্যাচ শুরুর সময় ৩০ মিনিট পিছিয়ে ৯টা ৩০-এ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ও দলীয় পুরস্কারের প্রাইজমানিও বাড়ানো হয়েছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবার সুপার লিগ হবে ঈদুল ফিতরের পর। প্রথম রাউন্ড ঈদের ঠিক আগেই শেষ হবে এপ্রিলের ১৯-২০ তারিখ। শুরুর ৬-৭ ম্যাচ বাদ দিলে জাতীয় ক্রিকেটাররা লিগের পরের অংশ প্রায় পুরোটাই খেলতে পারবেন। তবে আইপিএলের জন্য বিসিবি থেকে অনুমতি পেলে সাকিব আল হাসান, লিটন দাশ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রিমিয়ার লিগ দলের পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
দল হিসেবে এবার পুরোপুরি পা-বহীন আবাহনী। লিগটি লিস্টে মর্যাদা পাওয়ার পর তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা এবার লিটন দাশ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফউদ্দিনদের ওপরই ভরসা রেখেছে গতবারের মতো। গত আসরের দলে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন নতুন যোগ করেছেন তাসকিন আহমেদ, রিপন ম-ল ও বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানকে। এ ছাড়া বাকি ক্রিকেটাররা আগের মতোই আছেন। বিদেশি ক্যাটাগরিতে ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করছে আবাহনী।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালও গত আসরের দলেই ভরসা রাখছে। তবে দলটির গতবারের অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের এবার মোহামেডানে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার অনুপস্থিতিতে নুরুল হাসান সোহান দলটিকে নেতৃত্ব দেবেন। ইমরুলের সঙ্গে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকাররা খেলবেন মোহামেডানের হয়ে। বিদেশি ক্যাটাগরিতে পাকিস্তানি ইফতিখার আহমেদকে নিয়েছে মোহামেডান। গুঞ্জন উঠেছিল এবার মোহামেডান ছেড়ে সাকিব আবাহনীতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করেছেন আবাহনীর মিডিয়া ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মামুন। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে গতবার খেলা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এবারও একই দলে আছেন। তিনি ছাড়া আর বড় নাম নেই দলটিতে। গতবার মোহামেডানের হয়ে নাম লেখালেও দলটি সুপার লিগে না ওঠায় শেখ জামালের হয়ে খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এবার এই তারকাকে দেখা যেতে পারে তামিম ইকবালের সঙ্গে প্রাইম ব্যাংকে। একই দলে কোচ হিসেবে যোগ দিচ্ছেন দীর্ঘদিন গাজী গ্রুপের হয়ে কোচিং করানো বিপিএল চ্যাম্পিয়ন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
এই আসরে দলগত পুরস্কারের বাইরে টুর্নামেন্ট সেরা, সেরা ব্যাটার-বোলারের জন্য আলাদা দুই লাখ টাকা করে প্রাইজমানি থাকবে। ম্যাচসেরাকে দেওয়া হবে ১০ হাজার টাকা।
সাফল্য এনে দেওয়া নারী ফুটবলারদের কোনো চাওয়াই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে না। বেতন-ভাতা বাড়ানো, খাবারের মান বাড়ানো, ম্যাচ ফি’র মতো দাবিগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন তিনি। আবার একই সময়ে পুরুষ ফুটবলারদের সমালোচনামুখর হয়েছেন সালাউদ্দিন। তার মতে, ফুটবলারদের ফিটনেস ভালো না বলেই জাতীয় দল কাক্সিক্ষত ফল পায় না। এর জন্য ক্লাবগুলোকেও দায়ী করতে ছাড়েননি তিনি।
সম্প্রতি বাফুফে সভাপতি বসেছিলেন সাফজয়ী জাতীয় নারী ফুটবল দলের সঙ্গে। সভাপতির কাছে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি করেছেন সাবিনা খাতুনরা। মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান ফুটবলাররা। সেটা বাড়িয়ে অন্তত ৫০ হাজার টাকা করার অনুরোধ এসেছে তাদের কাছ থেকে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফি, নতুন বুট ক্রয়, ক্যাম্পে খাবারের মান বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। সালাউদ্দিন এসব দাবিকে যৌক্তিক মনে করেন, ‘তারা যা চেয়েছে সেটা অবশ্যই যৌক্তিক। তবে আমাদেরও আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, তাদের দাবি মেটানোর। এ ব্যাপারে আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সহায়তা চাইব।’ মেয়েদের মতো ছেলেরা কেন সফল হচ্ছে না। জানতে চাইলে বেশকিছু কারণের সঙ্গে ছেলেদের ফিটনেসের ঘাটতিকে সামনে নিয়ে এসেছেন বাফুফে সভাপতি, ‘পুরুষ ফুটবলাররা তো মেয়েদের মতো আমাদের জিম্মায় থাকে না। তারা থাকে ক্লাবে। বসুন্ধরা কিংস ছাড়া কোনো ক্লাবেই ফুটবলাররা ফিটনেস নিয়ে সেভাবে কাজ করার সুযোগ পায় না। এটা দিয়ে ঘরোয়া ফুটবলে চলা যায়, জাতীয় দলে গিয়ে আর পারে না। তাই ক্লাবগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর আমার পক্ষে তো সম্ভব নয় মেয়েদের মতো ছেলেদেরও নিজেদের জিম্মায় নিয়ে আসা। ছেলেদের ক্ষেত্রেও সেটা করতে চেয়েছিলাম। সরকারের কাছে একটা প্রকল্পও জমা দিয়েছিলাম। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইলটা আটকে যাওয়ায় আমরা পেছনে পড়ে গিয়েছি।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।