
সাফল্য এনে দেওয়া নারী ফুটবলারদের কোনো চাওয়াই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে না। বেতন-ভাতা বাড়ানো, খাবারের মান বাড়ানো, ম্যাচ ফি’র মতো দাবিগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন তিনি। আবার একই সময়ে পুরুষ ফুটবলারদের সমালোচনামুখর হয়েছেন সালাউদ্দিন। তার মতে, ফুটবলারদের ফিটনেস ভালো না বলেই জাতীয় দল কাক্সিক্ষত ফল পায় না। এর জন্য ক্লাবগুলোকেও দায়ী করতে ছাড়েননি তিনি।
সম্প্রতি বাফুফে সভাপতি বসেছিলেন সাফজয়ী জাতীয় নারী ফুটবল দলের সঙ্গে। সভাপতির কাছে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি করেছেন সাবিনা খাতুনরা। মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান ফুটবলাররা। সেটা বাড়িয়ে অন্তত ৫০ হাজার টাকা করার অনুরোধ এসেছে তাদের কাছ থেকে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফি, নতুন বুট ক্রয়, ক্যাম্পে খাবারের মান বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। সালাউদ্দিন এসব দাবিকে যৌক্তিক মনে করেন, ‘তারা যা চেয়েছে সেটা অবশ্যই যৌক্তিক। তবে আমাদেরও আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, তাদের দাবি মেটানোর। এ ব্যাপারে আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সহায়তা চাইব।’ মেয়েদের মতো ছেলেরা কেন সফল হচ্ছে না। জানতে চাইলে বেশকিছু কারণের সঙ্গে ছেলেদের ফিটনেসের ঘাটতিকে সামনে নিয়ে এসেছেন বাফুফে সভাপতি, ‘পুরুষ ফুটবলাররা তো মেয়েদের মতো আমাদের জিম্মায় থাকে না। তারা থাকে ক্লাবে। বসুন্ধরা কিংস ছাড়া কোনো ক্লাবেই ফুটবলাররা ফিটনেস নিয়ে সেভাবে কাজ করার সুযোগ পায় না। এটা দিয়ে ঘরোয়া ফুটবলে চলা যায়, জাতীয় দলে গিয়ে আর পারে না। তাই ক্লাবগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর আমার পক্ষে তো সম্ভব নয় মেয়েদের মতো ছেলেদেরও নিজেদের জিম্মায় নিয়ে আসা। ছেলেদের ক্ষেত্রেও সেটা করতে চেয়েছিলাম। সরকারের কাছে একটা প্রকল্পও জমা দিয়েছিলাম। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইলটা আটকে যাওয়ায় আমরা পেছনে পড়ে গিয়েছি।’
১৭ ফেব্রুয়ারি দেশ রূপান্তরের অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল ‘গোপনে ফিফা সদর দপ্তরে কেন সোহাগ?’ এ নিয়ে সরব হয়ে ওঠে ফুটবল অঙ্গন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কেনাকাটায় অসংগতি, ভুয়া বিল-ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ, ত্রুটিপূর্ণ অডিট রিপোর্ট নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই তদন্তে নেমেছে ফিফা। বেশকিছু অসংগতিও পেয়েছে তারা। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শোকজ পাওয়া সোহাগ ও অর্থ বিভাগের সহকারী অনুপম সরকারকে তলব করে ফিফা। ব্যাখ্যা দেওয়ার সুবিধার্থে বাফুফের আরও দুই নির্বাহী জাবের বিন তাহের আনসারী ও হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করেন সোহাগ। জুরিখে তাদের সঙ্গী হয়েছিলেন এক আইনজীবীও। তবে চার নির্বাহীর এই সফর নিয়ে চরম গোপনীয়তার পথে হাঁটতে গিয়েও পারেনি বাফুফে। তাদের গোপন সফর দেশ রূপান্তরে ফাঁস হয়ে যায়। যদিও তাদের সফরের বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তবে সোহাগরা ফিরে আসার পরের দিন সংবাদ মাধ্যম ডেকে সালাউদ্দিন বুঝিয়ে দিলেন এই সফর সম্পর্কে ভালোই জানা তার। চার নির্বাহীর এটি একান্ত ব্যক্তগত সফর দাবি করলেন প্রথমে, আবার তাদের সঙ্গী হওয়া আইনজীবীর বৃত্তান্তও মুখস্থ বলে দিলেন সালাউদ্দিন নিজেই। অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদককে পাশে বসিয়ে তিনি একবার দাবি করলেন, এটা অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, এর সঙ্গে বাফুফে বা তার কোনো সংযোগ নেই। আবার পরক্ষণেই তাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেন। এরকম দ্বৈত অবস্থানে সালাউদ্দিন আরেকবার প্রশ্নবিদ্ধ হলেন।
সালাউদ্দিনের মধ্যে এখন এক নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিছু হলেই আগ বাড়িয়ে সংবাদমাধ্যমকে ডেকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের একটা চেষ্টা থাকে তার মধ্যে। আবার আস্থাভাজন হওয়ায় বাফুফে সাধারণ সম্পাদকসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহও নেই তার। সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফিফা কেন তাদের ডেকেছে, তা আমার জানা নেই। কখনো জানতেও চাইনি। যেহেতু ফিফা বিষয়টি অতি গোপনীয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, তাই ওরা কেউ বাধ্যও নয় আমাকে কিছু বলার। যেচে জানতে চাইলে দেখা যাবে আমাকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে ফিফার।’ তিনি যোগ করেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত চলছে, তাদের কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অভিযুক্ত প্রমাণিত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমার কিছু করার নেই। আর যে বিষয়গুলো আমার জানাই নেই, সে বিষয়ে আমি কীভাবে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করব।’
অভিযুক্ত সোহাগ ও অনুপমের সঙ্গী হয়ে যাওয়া জাবের ও হাসান মাহমুদ কেন গিয়েছেন? প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সোহাগ, ‘নির্বাহী প্রধান হিসেবে তিনজনের ছুটির অনুমোদন আমি দিয়েছি। আর সভাপতি আমার ছুটির অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা নিজ খরচায় জুরিখে গিয়েছিলাম। যেহেতু কিছু ফাইল তৈরির ক্ষেত্রে অন্যরা যুক্ত ছিল, তাই তারা তাদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়েছে।’ যারা অভিযুক্ত নন, তাদের কী দায় পড়েছে নিজ খরচায় জুরিখ গিয়ে বিপদ ডেকে আনার? এই প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলে ওঠেন, ‘তাদের যাওয়া-আসার খরচা কেউ একজন বহন করেছে।’ সেই কেউ একজন কে? সেটা অবশ্য বলেননি বাফুফের প্রধান।
আলোচনায় উঠে এসেছিল জেমি ডে’র বেতন বকেয়ার ব্যাপারে ফিফার সিদ্ধান্তের বিষয়টিও। ফিফা সাফ জানিয়েছে, জেমির বেতন সুদসহ পরিশোধ না করলে ফিফা ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের একটা অংশ স্থগিত করে দিবে। ফিফা প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির এই সিদ্ধান্ত অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশও করা হয়েছে। অথচ সালাউদ্দিন জানালেন, এরকম কোনো সিদ্ধান্ত তারা জানা নেই। জেমির বেতন সময়মতো পরিশোধ করলে অন্তত সুদের অঙ্কটা দিতে হতো না। সালাউদ্দিন এক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে দায় চাপালেন সরকারের ওপর, ‘আমার কাছে টাকা থাকলে তো তখনই দিয়ে দিতাম। সরকারের কাছে আমরা একটা প্রকল্প জমা দিয়েছিলাম। সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে যাওয়ায় আমাদের আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে।’
ফিফার সন্দেহের তালিকায় থাকা বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া আছেন। হিসাবে অসংগতির মূল দায়টা সালাউদ্দিন চাইলেন আবু হোসেনের ওপর চাপাতে। এই বিতর্কিত নির্বাহীকে আগেই চাকরিচ্যুত করা উচিত ছিল, তবে ফাইন্যান্স কমিটির প্রধান ও বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদীর কারণে সেটা করা যায়নি দাবি করেছেন সালাউদ্দিন, ‘আমি সালামকে বলেছিলাম, তোমাকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে দিলাম, তুমি যাকে ইচ্ছে তাকে চাকরিচ্যুত করতে পার। কিন্তু সে তা করেনি।’ সালাম এই অভিযোগ শুনে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘আমি আমার ছেলেকে আমার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বানিয়েছি। অনেক স্বাধীনতা দিয়েছি, তবে চেক সাইন করার অধিকার দেইনি। তার মানে কী দাঁড়াল? আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে তো আগেই আমি ব্যবস্থা নিতাম। সেটা পারিনি বলে তার ওপর একজন পর্যবেক্ষক বসিয়ে দিয়েছিলাম।’ ফিফায় কী কথা হচ্ছে, না হচ্ছে, সালাউদ্দিন দাবি করেছেন সেটা তাকে জানানো হয় না। তাতেই একটা সন্দেহ দানা বাঁধছে; তবে কি ফিফা সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে! বাফুফে সভাপতিকে বাইরে রেখে হয়তো তার ব্যাপারেই জানার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে সোহাগদের। ফিফার এই নড়েচড়ে বসায় সালাউদ্দিনও কি পারবেন সুরক্ষিত থাকতে?
এমবাপ্পের গোল; পিএসজি ১-০। নেইমারের গোল; পিএসজি ২-০। এমবাপ্পের দ্বিতীয় গোল; পিএসজি ৩-৩।
টানা চতুর্থ পরাজয় এড়াতে এটুকুই অনেক ছিল গতকাল লিলের সঙ্গে ম্যাচে। কিন্তু লিওনেল মেসি কিছু করলেন না তো! এরকম যখন ভাবছে সবাই, তখনই যোগ করার সময়ের পঞ্চম মিনিটে লিলে বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রিকিক পায় পিএসজি। তাকে ফাউল করায় এই ফ্রিকিক। বাঁ-পায়ের শট লিলে গোলকিপারকে বিপর্যস্ত করে বা পোস্ট ঘেঁষে বল আশ্রয় নেয় জালে। পিএসজি ৪-৩। এতই মাহাত্ম্য এই গোলের যে, গুরুগম্ভীর কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের দৌড়ে গিয়ে উদযাপনে যোগ দিলেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে।
লিগে আগের দেখায় লিলের মাঠে পিএসজি জিতেছিল ৭-১ গোলে। সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এমবাপ্পে। গোল পেয়েছিলেন মেসি, নেইমারও। গতকালও ১৭ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে যায় প্যারিসের দলটি। ১১ মিনিটে মাঠের বা প্রান্তে থ্রু পাস পেয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন এমবাপ্পে। দুই ডিফেন্ডারের বাধা পেরিয়ে বল জালে পাঠান এমবাপ্পে। ছয় মিনিট পর ভিতিনহার শট লিলে কিপারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। ফিরতি শটে বল জালে জড়ান নেইমার। তাতে মনে হচ্ছিল এবারও সহজ জয় পাবে পিএসজি। তবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে পাল্টা আক্রমণ চালায় লিলেও। ২৪ মিনিটে হেডে এক গোল শোধ দেন রাইট ব্যাক দিয়অকিতে। তাতে প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-১ এ। ৪৮ মিনিটে নেইমারকে মাঝমাঠে ফাউল করেন বেনজামিন আন্দ্রে। ডান পায়ের গোড়ালির ইনজুরিতে পড়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের বদলি নামেন হুগো একিতিকে। ২০ ম্যাচে ১৩ গোল নেইমারের। ৫৬ মিনিটে কর্নার পায় লিলে। এ সময় বক্সে থাকা থিয়াগো দালোকে ফেলে দেন ভেরাত্তি। ভেরাত্তি দেখেন হলুদ কার্ড এবং পেনাল্টি পায় লিলে। স্পটকিক থেকে স্কোর ২-২ সমতা আনেন জনাথন ডেভিড। আক্রমণ অব্যাহত রাখা লিলে তৃতীয় গোল পেয়ে যায় ৬৯ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে লম্বা করে বাড়ানো থ্রু বল ধরে দৌড়ে বক্সে ঢুকে বল জালে জড়ান জনাথন বাম্বা। ৮০ মিনিটের পর বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক আক্রমণ করে পিএসজি। পুরো ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকা মেসিও জেগে ওঠেন। ৮৭ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে হুয়ান বের্নাটের পাস থেকে গোল করে সমতা ফেরান এমবাপ্পে। চলতি লিগে ২০ ম্যাচে ১৫ গোল হলো এমবাপ্পের।
ইনজুরির কারণে লিগে মোনাকোর বিপক্ষে ম্যাচে ছিলেন না মেসি। ফিরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাঠে নামলেও গোল পাননি। তবে গতকাল লিগে ফিরে গোল পেলেন। লিগে ১৯ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ১১তে।
চান্দিকা হাতুরুসিংহে যখন বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, রঙ্গনা হেরাথের খেলোয়াড়ি জীবন তখন শেষ হয়নি। দ্বিতীয় দফায় যখন হাতুরাসিংহে বাংলাদেশে আসছেন, বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে হেরাথের দায়িত্বকাল কুড়ি মাস হয়ে গেছে। স্বদেশিকে পেয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রাণখুলে সিংহলী ভাষাতেই হয়তো আড্ডা দিতে পারবেন দুজনে। ভাষাগত কিংবা কৌশলগত, হাতুরুসিংহেকে দলের প্রধান কোচ হিসেবে পেয়ে অনেক সুবিধাই হবে হেরাথের নিজের আর বাংলাদেশ দলেরও। কাল মিরপুরে বিসিবি একাডেমি মাঠে স্পিন বোলিং নিয়ে ক্যাম্পের শেষে গণমাধ্যমকে এমনটাই জানালেন তিনি।
আজ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমানে করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশে পা রাখার কথা হাতুরুসিংহের। হেরাথ মুখিয়ে আছে স্বদেশিকে বরণ করতে। ‘চান্দিকা এর আগে বাংলাদেশে কাজ করেছে। ওই সময় বাংলাদেশ ভালো করেছে, সাফল্যও পেয়েছে। আমার ক্ষেত্রে বলব, আমি তার সঙ্গে খেলেছি, তার কোচিংয়েও খেলেছি। তো এদিক থেকে তার ব্যাপারে আমার ফিডব্যাক ইতিবাচক এবং আমি আত্মবিশ্বাসী, বাংলাদেশ ক্রিকেট তার মাধ্যমে উপকৃত হবে’, রবিবার সাংবাদিকদের বলেন হেরাথ। দুজনে একসঙ্গে কাজ করবেন ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে যার প্রথম দুই ওয়ানডের দল এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন নির্বাচকরা। হেরাথ জানিয়েছেন হাথুরুর সঙ্গে দল নিয়ে নয়, কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ‘আসলে দল নির্বাচন নয়, পরিকল্পনা সাজানো নিয়ে কথা হয়েছে।’ নির্বাচকরা দলে নিয়েছেন বামহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে, যাকে বেশিরভাগ সময় লাল বলেই জাতীয় দলে খেলতে দেখা যায়। তাকে দলে নেওয়ার পেছনে হেরাথের যুক্তি, ‘সে উইন্ডিজে ভালো করেছে। আমি তাইজুলের মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভালো করার মতো প্রতিভা দেখতে পাই। উইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ যে ম্যাচটি খেলেছে, তাইজুল সেটায় ভালো বোলিং (২৮ রানে ৫ উইকেট) করেছে। তো আমি তাইজুলকে এমন একজন হিসেবেই দেখি, যে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভালো বোলিং করতে পারে।’
বিপিএলের সব খেলা না দেখলেও কিছু কিছু ম্যাচ দেখেছেন হেরাথ, উঠতি স্পিনার হিসেবে তানভির ইসলামকে ভালোই লেগেছে তার, ‘তানভিরকে দেখে আমি খুবই খুশি। বিপিএলে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছে। এর আগের টুর্নামেন্টগুলোতেও ভালো করেছে। তো এদিক থেকে বলব, এমন স্পিনার পাওয়া পুরো সিস্টেমের জন্যই ভালো। কারণ তাইজুল-নাসুম এমনকি সাকিবেরও কিছু হলে আরও ক্রিকেটার তৈরি থাকবে। তো আমি খুব খুশি যে, তানভিরও এগিয়ে এসেছে। ইংল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা নিয়ে বললেন, ‘যেকোনো দলের বিপক্ষে আমরা জয়ের জন্যই খেলতে নামি। এটিই আল্টিমেট গোল। তবে জেতার আগে প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে, অনুশীলন করতে হবে, পরিকল্পনা সাজাতে হবে যথাযথ। এগুলো যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলতে হবে।’
লম্বা বিপিএলের পর অল্পদিনের বিশ্রাম শেষেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রস্তুতিতে। এবারে প্রথাগত দীর্ঘ অনুশীলন ক্যাম্প হবে না, তবে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে সামনে। ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এসে পড়বে ২৪ তারিখে, তার আগেই হবে প্রস্তুতি ম্যাচ। ১ মার্চ মিরপুরে প্রথম ওয়ানডে।
প্রথম ইনিংসে লড়াইয়ে সমতা। অস্ট্রেলিয়ার ২৬৩ রানের জবাবে ভারত ২৬২। দ্বিতীয় দিনের শেষ ঘণ্টায় ১২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেটে ৬১ রান তুললে মনে হচ্ছিল বড় একটা টার্গেটই দিতে পারবে তারা ভারতকে। তৃতীয় দিনের প্রথম ওভারে ট্রাভিস হেড আউট হয়ে গেলেও ২ উইকেটে ৮৫তে এগিয়েছিল অজিরা। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা ভেলকেত আর ২৮ রানেই শেষ অজিদের সব প্রতিরোধ! এই আট উইকেটের ছটিই জাদেজার। ভারতের সমানে তাই টার্গেট দাঁড়ায় ১১৫, ৪ উইকেট হারিয়েই তা তুলে নিয়ে চার টেস্টের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত। সেই সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পথেও এক ধাপ এগোলো।
স্বাগতিকদের কাউন্টার অ্যাটাক উপহার দিতে দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। ‘সুইপ শট’ করে একের পর এক বাউন্ডারি তুলছিল। ২৭টি সুইপে এসেছে ৭১ রান, তবে ক্রিকেটে এই শট যেমন উর্বরা কেমন আত্মঘাতীও। প্রথম ৬ ওভারে ৩১ রান দেওয়া জাদেজা অস্ট্রেলিয়াকে এই ফাঁদেই ফেলেছেন পরের দিকে। অজিদের সুইপের লোভ দেখিয়েছেন আর তাতে বেশিরভাগ হয়েছে বোল্ড আর কেউ ক্যাচ আউট। আগের দিন অপরাজিত থাকা ট্রভিস হেড ৪৩ ও মার্নাস লাবুশেনের ৩৫ রান ছাড়া কোনো ব্যাটারই দু’অঙ্কের ঘরে রান তুলতে পারেননি। এই কৌশলের কথাই বলেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘আমরা চেয়েছিলাম ওরা যেন বেশি শট খেলে। জানতাম আজ শুরু থেকেই উইকেট ভাঙবে। আর এমন কন্ডিশনে জাদেজা ও আশ্বিন একেবারে মাস্টার।’
রান তাড়ায় রোহিত ৩১, কোহলি ২০ করেন। রিকি পন্টিংয়ের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টেস্টে পুজারা নিয়েছেন জয়সূচক (বাউন্ডারি) রান। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৩১ রানে, শ্রিকার ভারত ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচ তিন দিনে হারায় হতাশ অজি অধিনাযক প্যাট কামিন্স, ‘আমাদের জন্য দুটো ম্যাচই হতাশাজনক। এই ম্যাচটা বেশি। কারণ আমরা এগিয়ে ছিলাম। ভারতে এরকম ব্যর্থতা খুব বেশি হয় না। আমরা সত্যিই বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছি।’
১ মার্চ থেকে ইন্দোরে হবে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। ভারত প্রথম দুই টেস্টের দলকেই রেখেছে বাকি দুই টেস্টের জন্য।
বিপিএল শেষ হওয়ার পর কিছুদিনের বিশ্রাম পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ছুটি কাটিয়ে জাতীয় ক্রিকেটাররা ফ্রেব্রুয়ারির শেষ থেকে মাঠে নামবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততায়। বাকিরা বসে থাকবেন না, তাদের ব্যস্ততা
থাকবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। ফেব্রুয়ারিতেই বিপিএলের পর ডিপিএল শুরুর কথা থাকলেও তা কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে মার্চের ১৫ তারিখ থেকে শুরুর পরিকল্পনা হয়েছে। আর ২-৩ মার্চ থেকে শুরু হবে দলবদল। আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকলেও দলগুলো ইতিমধ্যেই দল গোছানোর কাজ শেষ করেছে সিংহভাগ। বরাবরের মতো মিরপুর ও বিকেএসপি-ই থাকছে ভেন্যুর তালিকায়। তবে ইংল্যান্ড সিরিজের সময় ফতুল্লাকে ব্যবহার করা হবে। রোজার সময় খেলা বলে এবার ম্যাচ শুরুর সময় ৩০ মিনিট পিছিয়ে ৯টা ৩০-এ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ও দলীয় পুরস্কারের প্রাইজমানিও বাড়ানো হয়েছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবার সুপার লিগ হবে ঈদুল ফিতরের পর। প্রথম রাউন্ড ঈদের ঠিক আগেই শেষ হবে এপ্রিলের ১৯-২০ তারিখ। শুরুর ৬-৭ ম্যাচ বাদ দিলে জাতীয় ক্রিকেটাররা লিগের পরের অংশ প্রায় পুরোটাই খেলতে পারবেন। তবে আইপিএলের জন্য বিসিবি থেকে অনুমতি পেলে সাকিব আল হাসান, লিটন দাশ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রিমিয়ার লিগ দলের পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
দল হিসেবে এবার পুরোপুরি পা-বহীন আবাহনী। লিগটি লিস্টে মর্যাদা পাওয়ার পর তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা এবার লিটন দাশ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফউদ্দিনদের ওপরই ভরসা রেখেছে গতবারের মতো। গত আসরের দলে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন নতুন যোগ করেছেন তাসকিন আহমেদ, রিপন ম-ল ও বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানকে। এ ছাড়া বাকি ক্রিকেটাররা আগের মতোই আছেন। বিদেশি ক্যাটাগরিতে ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করছে আবাহনী।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালও গত আসরের দলেই ভরসা রাখছে। তবে দলটির গতবারের অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের এবার মোহামেডানে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার অনুপস্থিতিতে নুরুল হাসান সোহান দলটিকে নেতৃত্ব দেবেন। ইমরুলের সঙ্গে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকাররা খেলবেন মোহামেডানের হয়ে। বিদেশি ক্যাটাগরিতে পাকিস্তানি ইফতিখার আহমেদকে নিয়েছে মোহামেডান। গুঞ্জন উঠেছিল এবার মোহামেডান ছেড়ে সাকিব আবাহনীতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করেছেন আবাহনীর মিডিয়া ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মামুন। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে গতবার খেলা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এবারও একই দলে আছেন। তিনি ছাড়া আর বড় নাম নেই দলটিতে। গতবার মোহামেডানের হয়ে নাম লেখালেও দলটি সুপার লিগে না ওঠায় শেখ জামালের হয়ে খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এবার এই তারকাকে দেখা যেতে পারে তামিম ইকবালের সঙ্গে প্রাইম ব্যাংকে। একই দলে কোচ হিসেবে যোগ দিচ্ছেন দীর্ঘদিন গাজী গ্রুপের হয়ে কোচিং করানো বিপিএল চ্যাম্পিয়ন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
এই আসরে দলগত পুরস্কারের বাইরে টুর্নামেন্ট সেরা, সেরা ব্যাটার-বোলারের জন্য আলাদা দুই লাখ টাকা করে প্রাইজমানি থাকবে। ম্যাচসেরাকে দেওয়া হবে ১০ হাজার টাকা।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।