
বইমেলায় গল্প উপন্যাস কবিতার বইয়ের পাশাপাশি খেলাধুলার ওপরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে যা ক্রীড়ামোদী পাঠকের মন ভরাবে। বাংলা এবং ইংরেজি, দুই ভাষাতেই এসেছে বেশ কিছু বই। খেলাধুলার ইতিহাস, ক্রীড়া সাংবাদিকতা, জীবনী...ইত্যাদি ঘরানার বইগুলোর মূল অনুষঙ্গ খেলার মানুষ বা খেলার ভুবন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ক্রিকেটার আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েলকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ ‘ক্রীড়াঙ্গন থেকে রণাঙ্গণ’। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিভাবান ক্রিকেটার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী (জুয়েল) বীরবিক্রম আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন সেই সময়ের প্রথম শ্রেণির একজন ক্রিকেটার এবং পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে দুর্ধর্ষ কিছু অপারেশন করেন। মিরপুরের শেরে-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একটি গ্যালারি তার নামে। জুয়েলের স্মৃতিচারণ করেছেন পরিবারের সদস্য ও সতীর্থরা, তারই সংকলন এই বই। প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। মেলায় পাওয়া যাবে ঐতিহ্য-এর স্টলে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রথম নারী পরিচালক মনোয়ারা আনিস খান। তিনি লিখেছেন ‘মেয়েরাও পারে’ বইটি। বেরিয়েছে ‘বাংলানামা’ থেকে।
আজাদ মজুমদার বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। দীর্ঘদিনের ক্রীড়া সাংবাদিকতা জীবনে পেয়েছেন বিএসপিএ বর্ষসেরা ক্রীড়া সাংবাদিকসহ অনেক পুরস্কার। বর্তমানে ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ এইজ-এর যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। ২৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে প্রেসবক্সের ভেতরের অভিজ্ঞতা, সাংবাদিককের স্নায়ুর চাপের মুহূর্তগুলো, কখনো মানবিক ভুল, কখনো অজ্ঞতা নিয়ে আজাদ মজুমদারের ‘ইনসাইড দ্য প্রেসবক্স’ বইটি। প্রকাশক বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি (বিএসপিএ), পাওয়া যাবে ঐতিহ্য’র স্টলে।
বাংলাদেশে ইএসপিএনক্রিকইনফোর প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম। বছর দশেক ধরেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হার, জিত, বিতর্ক, সাফল্য অনেক কিছু নিয়েই লিখছেন ওয়েবসাইটে। নির্বাচিত কিছু লেখার সংকলন ‘অন টাইগার’স ট্রেইল’। বইটি প্রকাশ করেছে মাইটিপ্রেস, পাওয়া যাবে স্টুডেন্ট ওয়েজ, ২৬ নম্বর প্যাভিলিয়নে।
মেলার শেষভাগে আলোর মুখ দেখেছে জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক, চ্যানেল ২৪-এর ক্রীড়া সম্পাদক দিলু খন্দকারের ফুটবল স্মৃতিচারণমূলক বই ‘ফুটবলের মেহমান।’ বইটি পাওয়া যাবে অয়ন প্রকাশনীর স্টলে। এছাড়া সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের ‘মাঠ-গ্যালারি-স্টেডিয়াম’, ক্রীড়াজগত সম্পাদক দুলাল মাহমুদের ‘বিস্মৃত ১০১ ক্রীড়াবিদের বৃত্তান্ত’ প্রকাশিত হয়েছে।
দলবদলের বাজারে তাদের দাম চড়া। বলতে গেলে আকাশছোঁয়া। অথচ কাজের বেলায় লবডঙ্কা। তাদের প্রধান কাজ গোল করা এবং করানো। এর কোনোটাই ঠিকঠাক পারেন না তারা। তাই নামেই তারা ফরোয়ার্ড। ঘরোয়া ফুটবলে আসলে তাদের প্রয়োজনীয়তা সীমাবদ্ধ কেবল একাদশে স্থানীয় কোটা পূরণে। বলা হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলারদের কথা। চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তাদের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। বিশেষ করে ফরোয়ার্ডদের। ভিনদেশিদের চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা নেই বলে বেশিরভাগের সময় কাটে সাইড বেঞ্চে। আর যারা সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের মধ্যেও নেই ভালো করার তাড়না। এসব কিছুর প্রভাব পড়ছে জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে। নিভে থাকা তারাদের নিয়ে তাই যত সংশয় কোচ হাভিয়ের কাবরেরার।
চলুন জেনে নিই গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর নেপালের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ স্কোয়াডের স্বীকৃত ফরোয়ার্ডদের ঘরোয়া লিগের হাল-হকিকত। প্রিমিয়ার লিগের প্রথমপর্ব শেষ হতে চলল। অর্থাৎ একেকটি দল ৯ থেকে ১০ ম্যাচ খেলে ফেলেছে। জাতীয় দলের ছয় ফরোয়ার্ডের তিনজন মিলে করেছেন চার গোল। বসুন্ধরা কিংসে নিয়মিতই খেলছেন রাইট উইঙ্গার রাকিব হোসেন। গত বছর জাতীয় দলের একমাত্র জয়ের নায়কের পা থেকে সর্বোচ্চ এসেছে ২ গোল। এছাড়া বসুন্ধরার মতিন মিয়া ও মোহামেডানের সাজ্জাদ হোসেন করেছেন ১ গোল করে। গত বছর জাতীয় দলের হয়ে পরপর দুই ম্যাচে গোল করা শেখ রাসেলের রাইট উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিম এই লিগে এখনো গোল পাননি। তার সঙ্গে গোল না করার তালিকায় আছেন বসুন্ধরার স্ট্রাইকার সুমন রেজা ও আবাহনীর ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।
আধুনিক ফুটবলে গোলের দায়িত্ব কেবল ফরোয়ার্ডদের নয়। যে কোনো পজিশন থেকেই গোল করার দায়িত্ব নিতে হয় সবাইকে। তাই যদি হয়, তবে দেখি মিডফিল্ডে খেলা জাতীয় দলের ফুটবলারদের কী অবস্থা। নেপালের বিপক্ষে স্কোয়াডের মিডফিল্ডে ছিলেন অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া, সোহেল রানা, আতিকুর রহমান ফাহাদ, মাসুক মিয়া জনি, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস ও বিপলু আহমেদ। চলতি লিগের এদের কেউই একটি বারের জন্যও প্রতিপক্ষের গোল মুখ খুলতে পারেননি। মিডফিল্ডারের প্রধান দায়িত্ব গোল বানিয়ে দেওয়া। সেটাও যে তারা খুব ভালো করতে পারছেন তাও নয়। নেপালের বিপক্ষে খেলা ২৩ সদস্যের স্কোয়াডের দুই ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাত (বসুন্ধরা) ও রিয়াদুল হাসানের (আবাহনী) লিগে রয়েছে একটি করে গোল। তার মানে দাঁড়ায় সর্বশেষ ২৩ সদস্যের জাতীয় দলের ফুটবলাররা চলতি প্রিমিয়ার লিগে সম্মিলিতভাবে করেছেন মোটে ছয়টি গোল! তাই শঙ্কা জাগছে, আগামী মাসে সিলেটে র্যাংকিংয়ের তলানির তিন দল নিয়ে হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে বড়সড় ভরাডুবি না ঘটে যায় বাংলাদেশের! ব্রুনেই, সিশেলস প্রতিপক্ষ হিসেবে আহামরি শক্তিধর নয়। তবে তাদের হারাতে হলে তো গোল করতে হবে। সেই কাজটা করবে কারা?
এবার দেখা যাক জাতীয় দলের বাইরে থাকা স্থানীয়দের পারফরম্যান্স। এখানে সবার আগে যার নামটা আসছে তাকে নিয়ে রহস্য রেখে দিয়েছে খোদ বাফুফেই। এলিটা কিংসলে নাগরিকত্ব বদলে বাংলাদেশি হয়েছেন দু’বছর হয়ে গেল। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে তার বাধা নেই। বসুন্ধরা থেকে আবাহনীতে এসে এলিটা করেছেন সাত ম্যাচে চার গোল। এছাড়া দুই গোল করে আছে শেখ জামালের কৌশিক বড়–য়া, মোহামেডানের আরিফ হোসেন, পুলিশের রবিউল হাসান, আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবন ও ফর্টিসের সাখাওয়াৎ হোসেন রনির। এলিটার বিষয়টি জানতে চাইলে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘ফিফার শর্তপূরণে যা যা দরকার ছিল তার সব কিছুই আমরা করে রেখেছি। তবে ফিফা এসব ক্ষেত্রে কখনই শতভাগ অনাপত্তিপত্র দেয় না। এখানেই সমস্যা। ধরুন তাকে আমরা খেলিয়ে দিলাম। এরপর প্রতিপক্ষ দল যদি কোনো আপত্তি তুলে, তখন সেটা প্রমাণ দিতে না পারলে বড় শাস্তির মুখে পড়তে হবে।’
জানা গেছে ৫০ জনের একটা প্রাথমিক তালিকা ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন কাবরেরা। যেখানে তাদেরই সুযোগ হয়েছে যারা নিজ নিজ দলের হয়ে নিয়মিত খেলছেন এবং বিদেশিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছুটা পারফরম্যান্স করেছেন। কাবরেরার প্রাথমিক তালিকায় এমন কিছু নাম আছে, যারা অতীতে কখনো জাতীয় দলে খেলেননি। আর নতুনদের জায়গা ছাড়তে হবে এমন কয়েকজনকে যারা হয় নিয়মিত খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না, নয় পেয়েও কাজে লাগাতে পারছেন না।
লিগের খেলাগুলো বিভিন্ন মাঠে ঘুরে ঘুরে দেখছেন স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। দেখছেন আর দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কাদের নিয়ে শুরু করবেন নতুন পথচলা? প্রথম বছরে কোচের আমলনামা ভালো নয়। তার অধীনে গত বছর বাংলাদেশ আট ম্যাচে পাঁচটা হেরেছে, দুটি ড্র করেছে আর জয় মাত্র একটিতে। মাঠে বসেই কাবরেরার শেষ স্কোয়াডের ফুটবলারদের ঘুমিয়ে থাকা দেখেছেন। বিশেষ করে স্বীকৃত ফরোয়ার্ডরা একেবারেই ফর্মে নেই। জাতীয় দলের বাইরের দু-চারজনও যে খুব ভালো কিছু করে ফেলেছে তাও নয়। তো সমাধানটা পাবেন কোত্থেকে? কাবরেরা অবশ্য আশাবাদী মানুষ। বিরুদ্ধ স্রোতে ভেসেও তিনি খুঁজে পেতে চান ভালো কিছুর সন্ধান।
লিগের প্রথমপর্ব, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপের পারফরম্যান্স প্রায় বেশিরভাগই মাঠে বসে দেখেছেন কোচ। সেই পর্যবেক্ষণ থেকে জানালেন একটা নতুন বাছাই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন, ‘সবক’টি ম্যাচ আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। একটা সুনির্দিষ্ট বাছাই পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের ভাবনার সঙ্গে যারা মানিয়ে নিতে পারবে, তারাই দলে থাকবে। অনেকেই আছে যারা জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে তৈরি।’ ফরোয়ার্ডদের পায়ে গোল নেই এটা বাংলাদেশের পুরনো ব্যামো। এর থেকে মুক্তি পেতে কাবরেরার চাওয়া গোলের দায়িত্বটা নিক দলের সবাই, ‘আমি বিশ্বাস করি গোল করার দায়িত্বটা দলের প্রত্যেকের। কেবলমাত্র স্ট্রাইকারদের নয়। আমাদের অনেক ভালোমানের উইঙ্গার ও মিডফিল্ডার আছে যারা গোল করা ও করানোর দক্ষতা রাখে। সেট পিস থেকে গোল করার সক্ষমতাও আমাদের আছে। আমরা যদি ট্রেনিংয়ে আমাদের কাজগুলো ঠিকঠাক করতে পারি, খেলার একটা মডেল গড়ে তুলতে পারি, গোল আসবেই।’
আগামী মাসে সিলেটে ব্রুনেই ও সিশেলসকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলবে বাংলাদেশ। কাবরেরা নতুন অনেককেই পরখ করে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘লিগে অনেক ভালোমানের তরুণ ও প্রতিভাবান ফুটবলার দেখেছি। যারা বেশিরভাগ ম্যাচেই খেলেছে এবং খুব ভালো পারফরম্যান্স করেছে। আমরা তাদেরই নেব, যারা বিশ্বাস করে জাতীয় দলকে কিছু দিতে পারব।’ বোঝাই যাচ্ছে কোচের রাডারে আছেন নিয়মিত খেলা ফুটবলাররা। সেক্ষেত্রে কপাল পুড়তে পারে অনেক নামি ফুটবলারের। যারা খেলার চেয়ে সাইড বেঞ্চেই বেশি কাটিয়েছেন।
সাদা টি-শার্ট, টুপি ও জুতো, ধূসর প্যান্ট, হাতে কালো ঘড়ি ও চোখে সানগ্লাস; এক দেখায় মনে হবে মিরপুরের ক্রিকেট মাঠে কোনো গলফারের আগমন। কাল হোম অব ক্রিকেটে চন্দিকা হাথুরুসিংহের ফেরাটা হলো এই বেশে। আজ তার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন; আগামীকাল থেকে দায়িত্ব শুরু। মিরপুরের চেনা আঙিনায় হাথুরুর উপস্থিতিটা হয়ে উঠল পুনর্মিলনী। তামিম ইকবাল-তাসকিন আহমেদ-এবাদত হোসেনরা সবাই হাসিমুখে হাত মেলালেন কোচের সঙ্গে। নতুন যারা তৌহিদ হৃদয়-মাহমুদুল হাসান-ইয়াসির রাব্বিরাও দেখলেন ‘হেডমাস্টার’
হাথুরুকে। কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাও এগিয়ে এলেন হাত বাড়িয়ে। একটু পর কালো পাঞ্জাবি পরা বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদকে দেখা গেল মাঠে গিয়ে হাথুরুর সঙ্গে আলিঙ্গন করতে। কাজ শুরু হয়নি। তাই চেনা কড়া মাস্টার রূপে দেখা যায়নি তাকে। স্মিত হাসিটা সারাক্ষণ লেগে ছিল ঠোঁটের কোণে। এভাবেই মিরপুরে প্রত্যাবর্তনের প্রথম দিনটা কাটল। ৬ বছর পর কোচ হাথুরুসিংহের ফেরায় হাসিটা ছড়িয়ে পড়েছিল সবার মুখে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে সোমবার রাতে ঢাকায় এসেছেন হাথুরু। কাল সকাল সাড়ে ৯টায় উপস্থিত হন মিরপুরে। চেনা ডেরায় একদম পুরনো কোচের মতোই নেমে এলেন। খোশ মেজাজে থাকা হাথুরু এরপর মিরপুরের উইকেট দেখলেন গামিনিকে নিয়ে। পরে ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ আগের মতোই আছে কি না তাও দেখলেন। এর মধ্যে নিজের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন ক্রিকেটারদের। তবে কী সেই পরিকল্পনা বাড়ি ফেরার পথে নুরুল হাসান সোহান খোলাসা করেননি, ‘সবার সঙ্গে সে কথা বলেছে। সবাই-ই তো তার পরিচিত, সবার সম্পর্কেই সে জানে। ওর সঙ্গে দলের সবার সম্পর্ক বেশ ভালো। খুবই ফ্রেন্ডলি। আশা করব সবসময় এভাবেই থাকবে। একটা দল তখনই জেতে, যখন দলের পরিবেশ ভালো থাকে। ও সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর জানিয়েছে ওর একটা পরিকল্পনা আছে। সে কোনো কিছু করার অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখে। সেসব নিয়েই কথা হয়েছে।’
মার্চে হতে যাওয়া ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডের দলে নেই সোহান। তবুও দলের অংশ হিসেবে কাল মাঠে ছিলেন। হাথুরুর প্রথমপর্বে তরুণ ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন সোহান। এখন তিনি টি-টোয়েন্টি দলের অপরিহার্য ও অভিজ্ঞ সদস্য। নেতৃত্বও দিয়েছেন একাধিকবার। এদিকে হাথুরুও আগেরবারের চেয়ে পরিণত বলে জানালেন সোহান। দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আরও ভালো কিছুর আশা করছেন, ‘হাথুরুর অধীনে এবার আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তার প্রথমবারে আমাদের অনেকেই নতুন ছিল, এতদিনে তারা পরিণত হয়েছে। তাদের দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে। হাথুরুও অনেক কিছু নতুন নিয়ে আসবেন। সেদিক থেকে অবশ্যই ভালো কিছু হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেমন পরিবর্তন হয়েছে তেমনি হাথুরুসিংহের মধ্যেও হয়েছে। সেগুলো সে খুব ভালো মতোই জানে। পরিকল্পনার দিক থেকে সে খুব ভালো তা আমরা সবাই জানি। সে আগে থেকেই কোনো না কোনো কিছু চিন্তা করে এসেছে। মানে হোমওয়ার্ক করে এসেছে।’
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন প্রতিষ্ঠিত দল। এই একটি ফরম্যাটে বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতেও নিয়মিত জেতে। ঘরের মাঠে তো প্রতি সিরিজে ফেভারিট হয়েই নামে। তাই হাথুরুর দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশকে আরও সামনে দেখছেন সোহান।
গত চার সিরিজে দুই কোচের অধীনে খেলেছে বাংলাদেশ। ভিন্ন কোচের মানসিকতার সঙ্গে বারবার মানিয়ে নেওয়া তাই ক্রিকেটারদের জন্য চ্যালেঞ্জের। সোহান ব্যাপারটিকে দেখছেন পেশাদারিত্ব দিয়ে। এখানে ক্রিকেটারদের কিছু করার নেই বলেই তার মত। তবে সামনে আর এমনটি হচ্ছে না। ‘কড়া মাস্টার’ চলে এসেছেন তা কাল মাঠেই বোঝা গেল। অনানুষ্ঠানিক অনুশীলনের দিনেই ঢাকার বাইরে ও বিদেশে থাকা ক্রিকেটার বাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দলের সবাই উপস্থিত। ইনজুরি সমস্যা কাটিয়ে অনুশীলনের প্রথমদিনই মাঠে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দলের বাইরের ক্রিকেটাররাও ছিলেন অনুশীলনে। শুধু তাই নয় ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স, পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ, ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডরমটও ছিলেন। সব মিলিয়ে প্রথম দিনই বেড়ানোর মানসিকতা নিয়ে এসে সবাইকে পেয়ে গেছেন হাথুরু। হাসিমুখে বাক্য বিনিময়ও করেছেন। প্রশ্ন হলো সামনে এই সম্মিলিত হাসিমুখটা থাকবে তো!
চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর প্রথম লেগে আজ মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি। তারা খেলবে জার্মান ক্লাব আরবি লাইপজিগের বিপক্ষে। ম্যাচটি হবে লাইপজিগের মাঠে। তাই ফেভারিট হয়েও কিছুটা চিন্তায় থাকতে হচ্ছে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলাকে। এ দুদলের সবশেষ ম্যাচে লাইপজিগের মাঠে হেরেছিল ম্যানসিটি। নিজেদের মাঠে খেলা বলেই লাইপজিগ ফের দেখাতে পারে চমক। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ২টায়। একই সময়ে সান সিরোয় ইন্তার মিলান আতিথেয়তা দেবে এফসি পোর্তোকে।
সিটির জন্য এ ম্যাচটি প্রতিশোধ নেওয়ারও। লাইপজিগের মাঠ রেড বুল অ্যারেনাতে ২০২১ এ গ্রুপ পর্বের ম্যাচে হেরেছিল সিটি। লাইপজিগ জিতেছিল ২-১ এ। তবে তার আগে ইতিহাদে প্রথম দেখায় ম্যানসিটি ৬-৩ গোলে জিতেছিল। রেড বুল অ্যারেনাতে খেলা দেখেই সিটির জন্য এটি বড় পরীক্ষা। এবার গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে রিয়াল ও শাখতারের কাছে হেরেছিল লাইপজিগ। পরে বাকি চার ম্যাচই জিতে এফ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোতে পা রেখেছে জার্মান দলটি। ঘরের মাঠে হারায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে। সিটির চিন্তাটা আরও এক জায়গায়। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অ্যাওয়েতে শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটি জিততে পারেনি তারা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের সবশেষ ম্যাচে নটিংহামের মাঠে সিটির ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হয়। তাতে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে পড়ে লিগ টেবিলে দুইয়ে নেমে যায় ম্যানসিটি। তবে এই এক ম্যাচ দিয়ে তাদের বিচার করলে ভুল হবে। লাইপজিগ বুন্দেসলিগায় পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে আছে। সব প্রতিযোগিতা মিলে শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে তারা। তবে গেল বছরের ১ অক্টোরবর থেকে এই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৮ ম্যাচ অপরাজিত ছিল লাইপজিগ। চ্যাম্পিয়নস লিগে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো শেষ ষোলোতে ইংলিশ দলের বিপক্ষে খেলবে লাইপজিগ। এর আগে ২০১৯-২০ এ টটেনহামের সঙ্গে জয় এবং ২০২০-২১ এ লিভারপুলের কাছে হেরে বিদায় নেয়।
লাইপজিগের মাঠে খেলা হলেও ফেভারিট হয়েই নামবে ম্যানচেস্টার সিটি। তবে লাইপজিগকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না এদেরসন। বলেন, ‘ভালো কিছু ফুটবলার নিয়ে তারা দারুণ একটি দল। আমরা প্রস্তুত। আশা করি, আমরা ভালো খেলব। তবে ম্যাচটি সহজ হবে না। চ্যাম্পিয়নস লিগে সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই।’
চ্যাম্পিয়নস লিগে জার্মান কোনো দলের বিপক্ষে শেষ ১৭ ম্যাচের একটিতে হেরেছে সিটিজেনরা। আর সেটি ছিল লাইপজিগের বিপক্ষেই।
অপর ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইন্তার মিলান ও পোর্তো। দুটি দলই নিজ নিজ লিগে আছে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে। এ দুটি দল সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৫ সালে, গ্রুপ পর্বে।
সিদ্ধান্ত নিতে হবে লিওনেল মেসি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া দুজনের বয়সই ৩৫। ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে দুজনেই আছেন দোটানায়। কাতার বিশ্বকাপই শেষ বলেছিলেন মেসি। তবে কাতারে শিরোপা আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় পাল্টে দিয়েছে অনেক হিসাব। দলের অনেকেই চান মেসি খেলুক। ডি মারিয়া সম্প্রতি জানিয়েছেন, অত দূরের স্বপ্ন দেখছেন না তিনি। তবে কোপা খেলতে চান। এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। ২০২৬ বিশ্বকাপে মেসি-ডি মারিয়ার খেলা না খেলার সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিলেন তাদের ওপরই।
২০২৬ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে মেক্সিকো, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে। স্কালোনির অধীনেই ওই আসরে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামবে আলবিসেলেস্তেরা। যদিও স্কালোনির সঙ্গে নতুন চুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে এলেও অফিশিয়াল ঘোষণা আসেনি। সোমবার সিরি আ বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্কালোনি। সেখানেই স্কালোনি কথা বলেন ডি মারিয়া-মেসির বিষয়ে। ‘পরের বিশ্বকাপে খেলার বিষয়ে লিওকে (মেসি) সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি তার শরীর ঠিকঠাক সাড়া দেয়, তাহলে আমার দিক থেকে সে থাকবে। মেসিকে নিয়ে যে কথা বলেছি, একই কথা দি মারিয়ার বেলায়ও প্রযোজ্য। যতক্ষণ তার শরীর সইতে পারবে, তাকে সবসময় ডাকা হবে।’ ২০২৬ বিশ্বকাপের সময় মেসি ও ডি মারিয়ার বয়স হবে চল্লিশের কাছাকাছি। ফুটবলের দৃষ্টিকোণ থেকে ওই বয়সে বিশ্বকাপ খেলা অসম্ভব না হলেও খুব কঠিনই বলা যায়।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।