
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সরকারের কাছে চাওয়ার শেষ নেই। তাদের এখন একটাই নীতি ‘চাই আর চাই’। সরকার লক্ষ্মীর ভা-ার উপড়ে দিলেই চলবে ফুটবলের চাকা! ফুটবলকে এগিয়ে নিতে নিজেরা কিছু করবেন না। সরকারকেই নিতে হবে ফুটবলকে জাতে তোলার দায়িত্ব!
ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া ও শক্তিশালী পুরুষ ও মহিলা জাতীয় দল গঠনের লক্ষ্যে বছরব্যাপী নানা আসর আয়োজন, প্রশিক্ষণ ও ফেডারেশনের কাঠামো শক্তিশালী করতে সরকারের কাছে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) দিয়েছিল বাফুফে। দু’বছর আগে সেই চাহিদার অঙ্ক ছিল ৪৫০ কোটি টাকা। সেই ফাইল নড়াচড়া হয়নি বলে নতুন করে ৫৮৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত প্রকল্প জমা দিয়েছে বাফুফে। ফুটবল কর্তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, সেটা না পেলে ফুটবল থমকে যাবে। অথচ ফিফার নির্দেশনা অনুযায়ী ফুটবল ফেডারেশন স্বতন্ত্র সংস্থা। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ অযাচিত গণ্য হয়। তাতে নেমে আসে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। তাই সচরাচর সরকার এ ব্যাপারে থাকে নিশ্চুপ। তাই ফেডারেশনকে এগিয়ে নেওয়ার মূল দায়িত্বটা নিতে হয়। সরকার বড়জোর সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাফুফে অবশ্য এখন আর সরকারকে সহায়ক নয়, চাইছে মূল অর্থের উৎস হিসেবে। সুযোগ পেলেই সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। গতকাল বাফুফের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের কথায়ও একই সুর।
অর্থাভাবে এলিট অ্যাকাডেমি নির্বিঘেœ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। বাড়ানো যাচ্ছে না এর সুযোগ সুবিধা। ফলে এ বছর সাফের দুটি বয়সভিত্তিক আসরের প্রস্তুতি পড়েছে শঙ্কার মুখে। অর্থাভাবে বিদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে বেশি বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানো যাচ্ছে না। তাতে মিলছে না সাফল্য। কাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির এক সভা শেষে মানিকের কথা শুনে ক’দিন আগে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল। বাফুফে প্রধান নারী ফুটবলারদের বেতন, ক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকারের কাছে সহায়তা চাওয়ার কথা বলেছিলেন। সেদিনও ডিপিপির ফাইল মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকার কথা তোলেন সালাউদ্দিন। মানিক ও সোহাগও একই গান ধরেছেন। তাতে নিজেদের দৈন্যই যে বারবার প্রকাশ পাচ্ছে, সেই বোধটাও হারিয়ে গেছে। অর্থ জোগানে বাফুফে যে ব্যর্থ, সেটাও প্রমাণিত হচ্ছে বারবার।
অর্থাভাবে কমলাপুরের গাদাগাদি করে গড়ে তোলা এলিট অ্যাকাডেমির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান মানিক বলেন, ‘টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের আরও উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর। খেলোয়াড়দের বেতন ২০ শতাংশ বাড়িয়েছি। আসলে তো আমরা দিতেই চাই। তবে পাতিলে না থাকলে তো চামচে উঠবে না। আমাদের পাতিল তো খালি। সেজন্য চামচে ওঠে না। অ্যাকাডেমি চালাতে অনেক টাকা লাগে। আমরা অনেক কষ্ট করে এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কতদিন চালাতে পারব, তা নিয়ে সংশয় আছে।’ অর্থ সংকট ঘোচাতে সরকারের সুদৃষ্টির আশা মানিকের, ‘ফান্ডে ঘাটতি বলে আমরা অ্যাকাডেমির দলকে বাইরে খেলাতে পারছি না। আশা করছি মন্ত্রণালয় আমাদের সহায়তা করবে। এছাড়া আমরা যে ডিপিপিটি পাঠিয়েছি, তা বাস্তবায়িত হলে টাকার সমস্যা থাকবে না।’
ফিফা ও এএফসি প্রশাসনিক ব্যয়, কর্মকর্তা ও কোচদের বেতন খাতে বাফুফে ফি বছর একটি বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেয়। এর বাইরে ডেভেলপমেন্ট খাতেও নিয়মিত টাকা আসে ফিফার কাছ থেকে। যার একটি অংশ অবশ্য অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে জাতীয় দলের সাবেক কোচ জেমি ডে’র বকেয়া বেতন সময়মতো পরিশোধ না করায়। এরপর থাকে পঞ্জিকা মেনে ঘরোয়া খেলা পরিচালনা করা ও জাতীয় দলের ব্যয় নির্বাহ। ঘরোয়া ফুটবলকে বলতে গেলে আগ বাড়িয়েই একক পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে নিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বাফুফের নেই কোনো শক্তিশালী মার্কেটিং বিভাগ, যারা স্পন্সরদের ফুটবলমুখী করার দায়িত্ব নেবে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ নিজেদের স্পন্সর জোগানোর দায়িত্বটাকে এড়িয়ে গিয়ে সমস্যার সমাধান দেখছেন সরকারের সহায়তায়, ‘(সাফের দুটি বয়সভিত্তিক আসরকে সামনে রেখে) পলের একটাই দাবি, বিদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে বেশি বেশি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা। যদি টাকা জোগাড় করতে পারি, তবে আমরা বিদেশি দল এনে বা সেখানে গিয়ে খেলব। যদি না পারি, তবে আধাআধি প্রস্তুতি নিয়ে হয়তো (সাফের আসরগুলোতে) গ্রুপপর্বে ভালো করব। সেমিফাইনাল, ফাইনালে পারব না। দিন শেষে তাই টাকাই সব।’ এরপর মানিক ডিপিপি অনুমোদন হতে বিলম্বের জন্য সরকারকেই যেন চাইলেন দায়ী করতে, ‘মন্ত্রণালয় যদি চাইত, তবে আগেই হয়তো ডিপিপিটা পাস হয়ে যেত।’
বাফুফে কর্তারা ফুটবলকে জাতে তোলার দায়িত্ব সরকারকে দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন। সেটা মিললেই যেন ফুটবল বাঁচবে। আসলেই কি তাই? ৫৮৭ কোটি টাকা পেলে যে ঘুণে ধরা বাফুফেতে অনিয়মের মচ্ছব শুরু হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, বিল-ভাউচার জালিয়াতি, অসম্পূর্ণ অডিট রিপোর্ট পেশের অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক সোহাগসহ বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে ফিফার তদন্ত কিন্তু এখনো চলমান!
বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে আপনার পুরো চিন্তা বা প্রক্রিয়া কী ছিল?
হাথুরুসিংহে : আমি চলে গেলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনুসরণ করেছি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম কোনো না কোনোভাবে। সময়ে সময়ে ক্রিকেটার বা বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো। তাই সবসময়ই একটা ইচ্ছা ছিল যে আমি একদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিরব, কিন্তু জানতাম না যে এখনই ফিরব। অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন (বিসিবির) প্রেসিডেন্ট ও কিছু কর্তার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো সামনে ২০২৩ বিশ্বকাপ আছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ফেরাটা সঠিক সময়। তাই বিগ ব্যাশ শেষ হওয়ার পরপরই আমি এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
আগেরবার দায়িত্ব ছাড়ার সময় বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আপনার আর কিছু দেওয়ার নেই বলে চলে যাচ্ছেন। নতুন দায়িত্বে আপনার ভাবনাটা বদলালো কীভাবে?
হাথুরু : আমি আমার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলছি, আমি মনে করি পরের তিন-চার বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। অভিজ্ঞরা দারুণ করেছে, ওদের ঘিরে একটা ক্রিকেট জেনারেশন তৈরি হয়েছে। এখন অনেক তরুণ ক্রিকেটারও আছে। ওদের সঙ্গে নতুন করে কাজ করাটা আমাকে নতুনভাবে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আপনার ওপর বিশ্বকাপে ভালো করার একটা চাপ থাকবে। সেটা কীভাবে দেখছেন?
হাথুরু : কোচরা সবসময়ই চাপে থাকে। দল ভালো করলে কোচরা ভালো, খারাপ করলে কোচকেই প্রশ্ন বেশি করা হয়। এটা স্বাভাবিক। বিশ্বকাপ নিয়ে সবার একটা প্রত্যাশা থাকে, জাতি হিসেবে থাকে, ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও এমনটাই থাকবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে কীভাবে নিজেদের সেরা ফিটনেস ধরে পারফরম করে যেতে পারি। এটা যদি ঠিক থাকে তাহলে বিশ্বকাপে আমরা সেরা খেলাটাই দিতে পারব।
ইংল্যান্ড সিরিজের দল কেমন হয়েছে। নতুন যারা আছে, পেসার-স্পিনারদের নিয়ে কী বলবেন?
হাথুরু : এখনো নতুন পেসার বা স্পিনারদের দেখিনি। ইংল্যান্ড সিরিজে দেখব। ব্যাটাররা জানি ভালো করছে অনেকদিন ধরেই। ভারতের সঙ্গে ভালো করেছে। আমরা চাইব একই ফল ইংল্যান্ড সিরিজেও নিয়ে আসতে। এখন আমি দলের অন্য কোচদের ওপর নির্ভর করছি দল সম্পর্কে ধারণা পেতে।
২০১৭-এর চেয়ে এবার আপনার অধীনে বাংলাদেশ ভালো ফল করতে পারবে?
হাথুরু : আমি যেটা মনে করি এখনো আমরা র্যাংকিংয়ে সেরা চারে নেই যে বলে দেব আমরা বিশ্বকাপে ভালো করব। এটা উচিত হবে না। আমাদের কিছু দিকে ভালো করতে হবে, স্কিল ও ফিটনেস এবং পারফরম্যান্সের সমন্বয় ঘটাতে হবে। এরপর দেখব আমরা কতটুকু অর্জন করতে পারি।
অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সামলাতে আপনার চ্যালেঞ্জটা কেমন হবে?
হাথুরু : আমি ইতিমধ্যেই সব অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের সবার চিন্তার অংশ জুড়ে আছে দল। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সামলাতে আমার প্রথমবারেও কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। আমার মূল চ্যালেঞ্জ হলো সব ক্রিকেটারকে দলনির্ভর করা। তাই সাকিব-তামিম-মুশফিকদের নিয়ে আমার কোনো বাড়তি চ্যালেঞ্জ নেই। ওরা (অভিজ্ঞরা) ১২-১৫ বছর ধরে দলের জন্য যে দায়িত্বটা পালন করে আসছে এখনো তাই করবে। আমার মূল লক্ষ্য হলো দল। এই পুরো সময়টা ওরা নিজের দায়িত্বে সফল হয়েই ক্রিকেটার হিসেবে সফল হয়েছে। তাই যতদিন ওরা জাতীয় দলের জন্য নির্বাচিত হবে ততদিন একই দায়িত্ব থাকবে দলের জন্য পারফরম করা।
দ্বিতীয়বারের দায়িত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
হাথুরু : প্রথমবার জানতাম না আমি কোথায় যাচ্ছি, আমার নিজেকেও অনেকের কাছে প্রমাণ করার ছিল। কিন্তু এবার আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। আমি নিজেও অনেকটা অভিজ্ঞ হয়েছি। বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার আরও একটি কারণ দেখছি বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নের অংশ হতে পারা। আপনারা জানেন ডেভিড মুর আমার আগেই এখানে এসেছে। তাকে নিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের উন্নয়ন করা এবং স্থানীয় কোচদের উন্নতিও আমার লক্ষ্য। আসলে আমি চাই দ্বিতীয়বারের এই অভিযানে শুধু বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ জেতাই আমার মূল লক্ষ্য না, অবশ্যই সেটা আমার এক নম্বর লক্ষ্য থাকবে কিন্তু আমি চাই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কিছু দিতে এবং এই দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু রেখে যেতে।
আপনি গতবার বলেছিলেন দলের প্রতি সাকিবের নিবেদনের অভাব আছে। এখনো কি তাই বলবেন?
হাথুরু : আমার মনে হয় সাকিবের দলের প্রতি নিবেদন কম সে ব্যাপারে প্রশ্ন করেছি কিনা? একদমই না। এটা আমার কাছে একদম নতুন খবর। আমি এমন কিছু কখনই বলেছি বা ভেবেছি বলে মনে হয় না।
আপনি দায়িত্ব ছাড়ার পর বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা খেলার বাইরেও সরব হয়ে উঠেছে। যেমন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মাঠে বা বাইরে কথার লড়াইয়ে নেমেছিল। ব্যাপারগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?
হাথুরু : আমি খুবই উপভোগ করি। প্রথম দায়িত্বকালে আমি ওদের এটাই শিখিয়েছিলাম যে সাহস নিয়ে লড়াই করো। নিদাহাস ট্রফিতে বা এশিয়া কাপে ওরা যেভাবে লড়াই করেছে সেটা আমার ভালো লেগেছে। ভিন্ন ড্রেসিংরুমে বা অন্য কোথাও থাকলেও আমি ওই ঘটনাগুলোতে গর্বিত ছিলাম। তো বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের এই পরিবর্তন আমি উপভোগ করেছি।
আপনার দায়িত্ব ছাড়ার পর আর এখন নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার মাঝের সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কি উন্নতি দেখেছেন?
হাথুরু : বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করেছে। যদিও সেটা লম্বা গ্যাপ দিয়ে, যেমন নিউজিল্যান্ডে মাত্র একটি জয়, পাশাপাশি দেশে কিছু ভালো করেছে। সেদিক থেকে টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাদের সম্ভবত নিজেদের সেরাটা খুঁজতে হবে। কারণ আমাদের অন্য দলের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমাকে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে যে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের শক্তিটা জানা। এবার এসে প্রচুর পেসারের কথা শুনছি। আগেরবার শুধু স্পিনারদের কথা শুনেছিলাম। এখন দেখব নতুন পেসারদের ওরা কেমন।
গতবার আপনি তো হোম কন্ডিশন কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পনা করতেন স্পিন উইকেট করা। তখন বাংলাদেশ বিদেশে কঠিন অবস্থায় পড়ত। এবার আপনার পরিকল্পনা কী থাকবে?
হাথুরু : পৃথিবীর সব দলই হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগায়। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কী করে? ভারত এখন কী করছে সবাই দেখছেন। আমরাও হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগাব না কেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আপনার যদি মিসাইল না থাকে তাহলে কীভাবে যুদ্ধ করবেন? আমাদের গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে তাই না। ওদের হোমে আসতে দিন এরপর আমরা ছোট বন্দুক নিয়েই লড়াই করব। বিদেশে আমাদের যে ক্রিকেটার আছে তাদের নিয়েই সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে। আর বাংলাদেশ বাইরে ভালো করে না কথাটা ঠিক না। নিউজিল্যান্ডে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো করেছে বাংলাদেশ। আপনাকে ক্রিকেটার তৈরি করতে হবে। এবাদত, শান্ত আমার প্রথম কোচিংয়ের প্রথম নিউজিল্যান্ড সিরিজে ডেভেলপমেন্ট ক্রিকেটার হিসেবে ছিল। এখন সে দলের মূল বোলার। তো ক্রিকেটার তৈরি করতে সময় লাগে। ওদের বিভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও সময় লাগে। তো আমি প্রথম প্রশ্নের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। সব কিছুর জন্যই তো সময় লাগে। দেশে যদি আমরা ভালো না করি তাহলে বিদেশে ভালো কীভাবে করব।
‘বয়স কেবলমাত্র একটা সংখ্যা’ বিখ্যাত এই প্রবাদকে প্রতিনিয়তই সত্য করে চলেছেন জেমস অ্যান্ডারসন। আরও একবার তার বেলায় তা সত্যি হলো। ৪০ বছর ২০৭ দিন বয়সে টেস্ট বোলারদের র্যাংকিংয়ে সেরা হয়েছেন ইংলিশ কিংবদন্তি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে এ সাফল্য পেলেন অ্যান্ডারসন।
তার কীর্তিতে ৮৭ বছর পর টেস্ট ক্রিকেট ৪০ বছর ঊর্ধ্ব কোনো বোলারকে সেরা অবস্থানে দেখল ক্রিকেট। সবশেষ অস্ট্রেলিয়ান পেসার ক্লারি গ্রিমেট ১৯৩৬ সালে ৪৪ বছর ২ মাস বয়সে এক নম্বর হয়েছিলেন। এছাড়া ১৯৩৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি স্পিনার বার্ট আয়রনমঙ্গার এক নম্বর হয়েছিলেন ৫০ বছর ১০ মাস বয়সে। সব মিলিয়ে বেশি বয়সে এক নম্বর হওয়ার রেকর্ডে জেমস অ্যান্ডারসন আছেন পাঁচ নম্বরে। ৪০ পেরিয়ে এক নম্বর হওয়া অন্য দুজন ‘টিক’ ফ্রিম্যান (৪১ বছর ২ মাস) ও সিডনি বার্নস (৪০ বছর ৯ মাস)।
অ্যান্ডারসন ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার র্যাংকিং সেরা হলেন। সর্বপ্রথম ছিলেন ২০০৩ সালে আর সবশেষ ২০১৮ সালে।
কিক অফের ১৪ মিনিটের মধ্যে দু গোল করে পুরো অ্যানফিল্ডকে নাচিয়ে তুলেছিলেন ডারউইন নুনেজ ও মোহামেদ সালাহ। সমর্থকরা ভাবতে শুরু করেছিলেন দেড়যুগ পর রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে পারবে লিভারপুল। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। অলরেডদের মুখ পাঁচ গোলের লজ্জায় লাল করেছে অতিথিরা। ভাগ্যিস, ‘অ্যাওয়ে গোল’ নিয়ম নেই এখন আর চ্যাম্পিয়নস লিগে। নইলে এখনই বলা যেত ঘরের মাঠে ২-৫ গোলের হারে শেষ ১৬’র প্রথম লেগ থেকেই বিদায় নিয়েছে লিভারপুল। বিদায় এড়াতে হলে ২১ ফেব্রুয়ারি সান্তিয়াগো বার্নাবুতে রিয়ালকে কমপক্ষে চার গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে। যা এবারের লিভারপুলের কম্ম নয় বলেই মনে হচ্ছে।
জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিউস-বেনজামারা। মিলিতাওও গোল করেছেন। দুর্দান্ত খেলেছেন লুকা মদ্রিচ। তৃপ্ত কোচ কার্লো আনচেলত্তি তাই ইউরোপ সেরা গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়ার ভুলকে মার্জনা করেছেন। কোর্তোয়ার ভুল অবিশ্বাস্য। নুনেজের ব্যাক হিলে কিক অফের ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ডে গোল খেয়ে বসে রিয়াল! চ্যাম্পিয়নস লিগে এত দ্রুত গোল খাওয়ার পর রিয়াল কখনো জিততে পারেনি। এরপরই কোর্তোয়ার সেই ভুল। দানি কারবাহালের ব্যাক পাস পেয়েছিলেন কোর্তোয়া। বল ঠিকঠাক মারতে গিয়ে হাঁটু দিয়ে গুঁতো মেরে বসেন। সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা সালাহ বলের নাগাল পেতেই বাঁ পায়ের শটে গোল করে স্টিভেন জেরার্ডকে পেছনে রেখে ইউরোপে লিভারপুলের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েন।
তবে ৭ মিনিট পরই ভিনি জুনিয়র ব্যবধান করমান বেনজেমার অ্যাসিস্টে। ৩৬ মিনিটে ২-২ করেন ব্রাজিলিয়ান স্কোরলাইন। ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে লিভারপুলের জালে তার চেয়ে বেশি (৫) গোল আর কেউ করতে পারেননি। বিরতির পর লিভারপুল ঠিকমতো গুছিয়ে নেওয়ার আগেই ফ্রি কিক পায় রিয়াল। ৪৭ মিনিটের সেই ফ্রি কিক থেকে মিলিতাও হেডে ব্যবধান বাড়ান। ৫৫ মিনিটে বেনজেমার শট পা বাড়ানো ডিফেন্ডার জো গোমেজের উরুতে লেগে জালে জড়ায়। ৬৭ মিনিটে প্রতি আক্রমণের ফসল তুলে নেন বেনজেমা। এই গোলে একটি রেকর্ডে লিওনেল মেসিকে ছুঁয়েছেন ফরাসি স্ট্রাইকার। তারা দুজন টানা ১৮টি চ্যাম্পিয়নস লিগ আসরে গোল করার কীর্তি গড়েছেন।
দিনের অন্য ম্যাচে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে ওসিমহেন ও ডি লরেঞ্জোর দু গোলে জয় পেয়েছে নাপোলি।
আবারও একঝাঁক প্রতিভাবান অ্যাথলেটের খোঁজে রবিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে শেখ কামাল দ্বিতীয় যুব বাংলাদেশ গেমসের চূড়ান্তপর্ব। আঞ্চলিকপর্বে অংশ নেওয়া প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদের মধ্য থেকে চার হাজার জনকে নিয়ে হবে ৬ দিনব্যাপী চূড়ান্তপর্ব। আর্মি স্টেডিয়ামে চূড়ান্তপর্বের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ডাচ-বাংলা ব্যাংক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গেমসের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
আট বিভাগের চার হাজার ক্রীড়াবিদ ১৯৩টি স্বর্ণপদকের জন্য লড়াই করবেন। এছাড়া রৌপ্যপদক ১৯৩টি ও ব্রোঞ্জ ২৮৭টি। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে ভিডিও চিত্রে যুব গেমস নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তার, সম্প্রতি এশিয়ান ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনাজয়ী ইমরানুর রহমান ও আইএসএসএফ বিশ্বকাপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ফাইনালে উঠে চমক জাগানো শুটার কামরুন্নাহার কলি।
সংবাদ সম্মেলনে বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘২০১৮ সালের গেমসে যারা ভালো করেছেন, তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ক্রীড়াবিদ হিসেবে বিভিন্ন সংস্থা ও বিকেএসপিতে যুক্ত আছেন। প্রথম যুব গেমস থেকে উঠে আসা ক্রীড়াবিদদের অনেকে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে নিজেদের সেরা অ্যাথলেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’ গেমস সম্পর্কে বিওএর সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ বলেন, ‘নিজস্ব তহবিল থেকে আমরা গেমসে প্রাথমিকপর্ব শুরু করেছি। এ পর্বে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটরা অনুশীলনের আওতায় রয়েছেন। এরইমধ্যে তৃণমূলে আমরা একঝাঁক প্রতিভাবান অ্যাথলেটের সন্ধান পেয়েছি।’ এবার চূড়ান্তপর্বের উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠানে কৃচ্ছ্র সাধনের কথা জানান বিওএ কর্তারা।
আজ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে গেমসের মশাল র্যালি শুরু হচ্ছে। সেখান থেকে বিভিন্ন ক্রীড়াবিদ মশাল বহন করে ঢাকায় নিয়ে আসবেন। আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শেখ কামালের প্রতিকৃতি ঘুরে মশাল নেওয়া হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। গেমসের মশাল প্রজ্বালন করবেন স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান ও কারাতেকা মারজান আক্তার প্রিয়া।
২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ নারী দল। সেবারই শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ড নারীদের হারিয়ে স্বপ্নের শুরু পায়। কিন্তু পরের তিন আসরে আর একটিও জয় ছিল না নারী দলের। সেমিফাইনালে খেলার বড় স্বপ্ন নিয়ে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় পঞ্চম আসরে পা রেখেছিলেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। কিন্তু গ্রুপ পর্বে টানা চার হারে শেষ করতে হলো শূন্য হাতে। এখন শূন্যতার দুঃখ ভুলে আবার দেশেই চোখ ফেরাচ্ছে দল। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৪ টি-টোয়েন্টি নারী বিশ্বকাপে ভালো করার প্রত্যয় জানিয়ে এবারের আসরে ইতি টানল বাংলাদেশ।
গত মঙ্গলবার গ্রুপ ১ এর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০ উইকেটে হেরেছেন জ্যোতিরা। ৬ উইকেটে ১১৩ রানের মামুলি সংগ্রহ বিনা উইকেটে ছুঁয়ে ফেলে প্রোটিয়া নারীরা। ১০ উইকেটের এ জয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালও নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপ স্বাগতিকরা। এর আগে গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে টানা ১৭ ম্যাচ জয়হীন থাকায় দলের অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলম বেশ হতাশ। এর মধ্যেও এবার কিছু আশা খুঁজে পেয়েছেন জাহানারা। সঙ্গে জানালেন আগামীবার ঘরের মাঠে ভালো করার প্রত্যয়, ‘এটা আমাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ। প্রতি আসরের দলের গর্বিত সদস্য আমি। এবারের বিশ্বকাপকে তবু আমি ব্যতিক্রম মনে করি। এবার তিনটি ম্যাচ আমরা খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও আজ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। হয়তো ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল না। আশা করি পরের বিশ্বকাপে ভাগ্যকে পাশে পাব। সামনের আসনে ভিন্ন কিছু দেখতে পাবেন। কারণ এবার আমরা এফটিপিতে আরও এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলব। পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা হবে তখন। এবার সেই অভিজ্ঞতা থাকলে ফলটাও ভিন্ন হতে পারত।’
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’