
‘বয়স কেবলমাত্র একটা সংখ্যা’ বিখ্যাত এই প্রবাদকে প্রতিনিয়তই সত্য করে চলেছেন জেমস অ্যান্ডারসন। আরও একবার তার বেলায় তা সত্যি হলো। ৪০ বছর ২০৭ দিন বয়সে টেস্ট বোলারদের র্যাংকিংয়ে সেরা হয়েছেন ইংলিশ কিংবদন্তি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে এ সাফল্য পেলেন অ্যান্ডারসন।
তার কীর্তিতে ৮৭ বছর পর টেস্ট ক্রিকেট ৪০ বছর ঊর্ধ্ব কোনো বোলারকে সেরা অবস্থানে দেখল ক্রিকেট। সবশেষ অস্ট্রেলিয়ান পেসার ক্লারি গ্রিমেট ১৯৩৬ সালে ৪৪ বছর ২ মাস বয়সে এক নম্বর হয়েছিলেন। এছাড়া ১৯৩৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি স্পিনার বার্ট আয়রনমঙ্গার এক নম্বর হয়েছিলেন ৫০ বছর ১০ মাস বয়সে। সব মিলিয়ে বেশি বয়সে এক নম্বর হওয়ার রেকর্ডে জেমস অ্যান্ডারসন আছেন পাঁচ নম্বরে। ৪০ পেরিয়ে এক নম্বর হওয়া অন্য দুজন ‘টিক’ ফ্রিম্যান (৪১ বছর ২ মাস) ও সিডনি বার্নস (৪০ বছর ৯ মাস)।
অ্যান্ডারসন ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার র্যাংকিং সেরা হলেন। সর্বপ্রথম ছিলেন ২০০৩ সালে আর সবশেষ ২০১৮ সালে।
বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে আপনার পুরো চিন্তা বা প্রক্রিয়া কী ছিল?
হাথুরুসিংহে : আমি চলে গেলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনুসরণ করেছি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম কোনো না কোনোভাবে। সময়ে সময়ে ক্রিকেটার বা বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো। তাই সবসময়ই একটা ইচ্ছা ছিল যে আমি একদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিরব, কিন্তু জানতাম না যে এখনই ফিরব। অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন (বিসিবির) প্রেসিডেন্ট ও কিছু কর্তার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো সামনে ২০২৩ বিশ্বকাপ আছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ফেরাটা সঠিক সময়। তাই বিগ ব্যাশ শেষ হওয়ার পরপরই আমি এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
আগেরবার দায়িত্ব ছাড়ার সময় বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আপনার আর কিছু দেওয়ার নেই বলে চলে যাচ্ছেন। নতুন দায়িত্বে আপনার ভাবনাটা বদলালো কীভাবে?
হাথুরু : আমি আমার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলছি, আমি মনে করি পরের তিন-চার বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। অভিজ্ঞরা দারুণ করেছে, ওদের ঘিরে একটা ক্রিকেট জেনারেশন তৈরি হয়েছে। এখন অনেক তরুণ ক্রিকেটারও আছে। ওদের সঙ্গে নতুন করে কাজ করাটা আমাকে নতুনভাবে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আপনার ওপর বিশ্বকাপে ভালো করার একটা চাপ থাকবে। সেটা কীভাবে দেখছেন?
হাথুরু : কোচরা সবসময়ই চাপে থাকে। দল ভালো করলে কোচরা ভালো, খারাপ করলে কোচকেই প্রশ্ন বেশি করা হয়। এটা স্বাভাবিক। বিশ্বকাপ নিয়ে সবার একটা প্রত্যাশা থাকে, জাতি হিসেবে থাকে, ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও এমনটাই থাকবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে কীভাবে নিজেদের সেরা ফিটনেস ধরে পারফরম করে যেতে পারি। এটা যদি ঠিক থাকে তাহলে বিশ্বকাপে আমরা সেরা খেলাটাই দিতে পারব।
ইংল্যান্ড সিরিজের দল কেমন হয়েছে। নতুন যারা আছে, পেসার-স্পিনারদের নিয়ে কী বলবেন?
হাথুরু : এখনো নতুন পেসার বা স্পিনারদের দেখিনি। ইংল্যান্ড সিরিজে দেখব। ব্যাটাররা জানি ভালো করছে অনেকদিন ধরেই। ভারতের সঙ্গে ভালো করেছে। আমরা চাইব একই ফল ইংল্যান্ড সিরিজেও নিয়ে আসতে। এখন আমি দলের অন্য কোচদের ওপর নির্ভর করছি দল সম্পর্কে ধারণা পেতে।
২০১৭-এর চেয়ে এবার আপনার অধীনে বাংলাদেশ ভালো ফল করতে পারবে?
হাথুরু : আমি যেটা মনে করি এখনো আমরা র্যাংকিংয়ে সেরা চারে নেই যে বলে দেব আমরা বিশ্বকাপে ভালো করব। এটা উচিত হবে না। আমাদের কিছু দিকে ভালো করতে হবে, স্কিল ও ফিটনেস এবং পারফরম্যান্সের সমন্বয় ঘটাতে হবে। এরপর দেখব আমরা কতটুকু অর্জন করতে পারি।
অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সামলাতে আপনার চ্যালেঞ্জটা কেমন হবে?
হাথুরু : আমি ইতিমধ্যেই সব অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের সবার চিন্তার অংশ জুড়ে আছে দল। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সামলাতে আমার প্রথমবারেও কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। আমার মূল চ্যালেঞ্জ হলো সব ক্রিকেটারকে দলনির্ভর করা। তাই সাকিব-তামিম-মুশফিকদের নিয়ে আমার কোনো বাড়তি চ্যালেঞ্জ নেই। ওরা (অভিজ্ঞরা) ১২-১৫ বছর ধরে দলের জন্য যে দায়িত্বটা পালন করে আসছে এখনো তাই করবে। আমার মূল লক্ষ্য হলো দল। এই পুরো সময়টা ওরা নিজের দায়িত্বে সফল হয়েই ক্রিকেটার হিসেবে সফল হয়েছে। তাই যতদিন ওরা জাতীয় দলের জন্য নির্বাচিত হবে ততদিন একই দায়িত্ব থাকবে দলের জন্য পারফরম করা।
দ্বিতীয়বারের দায়িত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
হাথুরু : প্রথমবার জানতাম না আমি কোথায় যাচ্ছি, আমার নিজেকেও অনেকের কাছে প্রমাণ করার ছিল। কিন্তু এবার আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। আমি নিজেও অনেকটা অভিজ্ঞ হয়েছি। বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার আরও একটি কারণ দেখছি বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নের অংশ হতে পারা। আপনারা জানেন ডেভিড মুর আমার আগেই এখানে এসেছে। তাকে নিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের উন্নয়ন করা এবং স্থানীয় কোচদের উন্নতিও আমার লক্ষ্য। আসলে আমি চাই দ্বিতীয়বারের এই অভিযানে শুধু বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ জেতাই আমার মূল লক্ষ্য না, অবশ্যই সেটা আমার এক নম্বর লক্ষ্য থাকবে কিন্তু আমি চাই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কিছু দিতে এবং এই দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু রেখে যেতে।
আপনি গতবার বলেছিলেন দলের প্রতি সাকিবের নিবেদনের অভাব আছে। এখনো কি তাই বলবেন?
হাথুরু : আমার মনে হয় সাকিবের দলের প্রতি নিবেদন কম সে ব্যাপারে প্রশ্ন করেছি কিনা? একদমই না। এটা আমার কাছে একদম নতুন খবর। আমি এমন কিছু কখনই বলেছি বা ভেবেছি বলে মনে হয় না।
আপনি দায়িত্ব ছাড়ার পর বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা খেলার বাইরেও সরব হয়ে উঠেছে। যেমন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মাঠে বা বাইরে কথার লড়াইয়ে নেমেছিল। ব্যাপারগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?
হাথুরু : আমি খুবই উপভোগ করি। প্রথম দায়িত্বকালে আমি ওদের এটাই শিখিয়েছিলাম যে সাহস নিয়ে লড়াই করো। নিদাহাস ট্রফিতে বা এশিয়া কাপে ওরা যেভাবে লড়াই করেছে সেটা আমার ভালো লেগেছে। ভিন্ন ড্রেসিংরুমে বা অন্য কোথাও থাকলেও আমি ওই ঘটনাগুলোতে গর্বিত ছিলাম। তো বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের এই পরিবর্তন আমি উপভোগ করেছি।
আপনার দায়িত্ব ছাড়ার পর আর এখন নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার মাঝের সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কি উন্নতি দেখেছেন?
হাথুরু : বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করেছে। যদিও সেটা লম্বা গ্যাপ দিয়ে, যেমন নিউজিল্যান্ডে মাত্র একটি জয়, পাশাপাশি দেশে কিছু ভালো করেছে। সেদিক থেকে টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাদের সম্ভবত নিজেদের সেরাটা খুঁজতে হবে। কারণ আমাদের অন্য দলের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমাকে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে যে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের শক্তিটা জানা। এবার এসে প্রচুর পেসারের কথা শুনছি। আগেরবার শুধু স্পিনারদের কথা শুনেছিলাম। এখন দেখব নতুন পেসারদের ওরা কেমন।
গতবার আপনি তো হোম কন্ডিশন কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পনা করতেন স্পিন উইকেট করা। তখন বাংলাদেশ বিদেশে কঠিন অবস্থায় পড়ত। এবার আপনার পরিকল্পনা কী থাকবে?
হাথুরু : পৃথিবীর সব দলই হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগায়। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কী করে? ভারত এখন কী করছে সবাই দেখছেন। আমরাও হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগাব না কেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আপনার যদি মিসাইল না থাকে তাহলে কীভাবে যুদ্ধ করবেন? আমাদের গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে তাই না। ওদের হোমে আসতে দিন এরপর আমরা ছোট বন্দুক নিয়েই লড়াই করব। বিদেশে আমাদের যে ক্রিকেটার আছে তাদের নিয়েই সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে। আর বাংলাদেশ বাইরে ভালো করে না কথাটা ঠিক না। নিউজিল্যান্ডে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো করেছে বাংলাদেশ। আপনাকে ক্রিকেটার তৈরি করতে হবে। এবাদত, শান্ত আমার প্রথম কোচিংয়ের প্রথম নিউজিল্যান্ড সিরিজে ডেভেলপমেন্ট ক্রিকেটার হিসেবে ছিল। এখন সে দলের মূল বোলার। তো ক্রিকেটার তৈরি করতে সময় লাগে। ওদের বিভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও সময় লাগে। তো আমি প্রথম প্রশ্নের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। সব কিছুর জন্যই তো সময় লাগে। দেশে যদি আমরা ভালো না করি তাহলে বিদেশে ভালো কীভাবে করব।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সরকারের কাছে চাওয়ার শেষ নেই। তাদের এখন একটাই নীতি ‘চাই আর চাই’। সরকার লক্ষ্মীর ভা-ার উপড়ে দিলেই চলবে ফুটবলের চাকা! ফুটবলকে এগিয়ে নিতে নিজেরা কিছু করবেন না। সরকারকেই নিতে হবে ফুটবলকে জাতে তোলার দায়িত্ব!
ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া ও শক্তিশালী পুরুষ ও মহিলা জাতীয় দল গঠনের লক্ষ্যে বছরব্যাপী নানা আসর আয়োজন, প্রশিক্ষণ ও ফেডারেশনের কাঠামো শক্তিশালী করতে সরকারের কাছে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) দিয়েছিল বাফুফে। দু’বছর আগে সেই চাহিদার অঙ্ক ছিল ৪৫০ কোটি টাকা। সেই ফাইল নড়াচড়া হয়নি বলে নতুন করে ৫৮৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত প্রকল্প জমা দিয়েছে বাফুফে। ফুটবল কর্তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, সেটা না পেলে ফুটবল থমকে যাবে। অথচ ফিফার নির্দেশনা অনুযায়ী ফুটবল ফেডারেশন স্বতন্ত্র সংস্থা। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ অযাচিত গণ্য হয়। তাতে নেমে আসে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। তাই সচরাচর সরকার এ ব্যাপারে থাকে নিশ্চুপ। তাই ফেডারেশনকে এগিয়ে নেওয়ার মূল দায়িত্বটা নিতে হয়। সরকার বড়জোর সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাফুফে অবশ্য এখন আর সরকারকে সহায়ক নয়, চাইছে মূল অর্থের উৎস হিসেবে। সুযোগ পেলেই সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। গতকাল বাফুফের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের কথায়ও একই সুর।
অর্থাভাবে এলিট অ্যাকাডেমি নির্বিঘেœ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। বাড়ানো যাচ্ছে না এর সুযোগ সুবিধা। ফলে এ বছর সাফের দুটি বয়সভিত্তিক আসরের প্রস্তুতি পড়েছে শঙ্কার মুখে। অর্থাভাবে বিদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে বেশি বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানো যাচ্ছে না। তাতে মিলছে না সাফল্য। কাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির এক সভা শেষে মানিকের কথা শুনে ক’দিন আগে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল। বাফুফে প্রধান নারী ফুটবলারদের বেতন, ক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকারের কাছে সহায়তা চাওয়ার কথা বলেছিলেন। সেদিনও ডিপিপির ফাইল মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকার কথা তোলেন সালাউদ্দিন। মানিক ও সোহাগও একই গান ধরেছেন। তাতে নিজেদের দৈন্যই যে বারবার প্রকাশ পাচ্ছে, সেই বোধটাও হারিয়ে গেছে। অর্থ জোগানে বাফুফে যে ব্যর্থ, সেটাও প্রমাণিত হচ্ছে বারবার।
অর্থাভাবে কমলাপুরের গাদাগাদি করে গড়ে তোলা এলিট অ্যাকাডেমির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান মানিক বলেন, ‘টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের আরও উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর। খেলোয়াড়দের বেতন ২০ শতাংশ বাড়িয়েছি। আসলে তো আমরা দিতেই চাই। তবে পাতিলে না থাকলে তো চামচে উঠবে না। আমাদের পাতিল তো খালি। সেজন্য চামচে ওঠে না। অ্যাকাডেমি চালাতে অনেক টাকা লাগে। আমরা অনেক কষ্ট করে এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কতদিন চালাতে পারব, তা নিয়ে সংশয় আছে।’ অর্থ সংকট ঘোচাতে সরকারের সুদৃষ্টির আশা মানিকের, ‘ফান্ডে ঘাটতি বলে আমরা অ্যাকাডেমির দলকে বাইরে খেলাতে পারছি না। আশা করছি মন্ত্রণালয় আমাদের সহায়তা করবে। এছাড়া আমরা যে ডিপিপিটি পাঠিয়েছি, তা বাস্তবায়িত হলে টাকার সমস্যা থাকবে না।’
ফিফা ও এএফসি প্রশাসনিক ব্যয়, কর্মকর্তা ও কোচদের বেতন খাতে বাফুফে ফি বছর একটি বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেয়। এর বাইরে ডেভেলপমেন্ট খাতেও নিয়মিত টাকা আসে ফিফার কাছ থেকে। যার একটি অংশ অবশ্য অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে জাতীয় দলের সাবেক কোচ জেমি ডে’র বকেয়া বেতন সময়মতো পরিশোধ না করায়। এরপর থাকে পঞ্জিকা মেনে ঘরোয়া খেলা পরিচালনা করা ও জাতীয় দলের ব্যয় নির্বাহ। ঘরোয়া ফুটবলকে বলতে গেলে আগ বাড়িয়েই একক পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে নিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বাফুফের নেই কোনো শক্তিশালী মার্কেটিং বিভাগ, যারা স্পন্সরদের ফুটবলমুখী করার দায়িত্ব নেবে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ নিজেদের স্পন্সর জোগানোর দায়িত্বটাকে এড়িয়ে গিয়ে সমস্যার সমাধান দেখছেন সরকারের সহায়তায়, ‘(সাফের দুটি বয়সভিত্তিক আসরকে সামনে রেখে) পলের একটাই দাবি, বিদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে বেশি বেশি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা। যদি টাকা জোগাড় করতে পারি, তবে আমরা বিদেশি দল এনে বা সেখানে গিয়ে খেলব। যদি না পারি, তবে আধাআধি প্রস্তুতি নিয়ে হয়তো (সাফের আসরগুলোতে) গ্রুপপর্বে ভালো করব। সেমিফাইনাল, ফাইনালে পারব না। দিন শেষে তাই টাকাই সব।’ এরপর মানিক ডিপিপি অনুমোদন হতে বিলম্বের জন্য সরকারকেই যেন চাইলেন দায়ী করতে, ‘মন্ত্রণালয় যদি চাইত, তবে আগেই হয়তো ডিপিপিটা পাস হয়ে যেত।’
বাফুফে কর্তারা ফুটবলকে জাতে তোলার দায়িত্ব সরকারকে দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন। সেটা মিললেই যেন ফুটবল বাঁচবে। আসলেই কি তাই? ৫৮৭ কোটি টাকা পেলে যে ঘুণে ধরা বাফুফেতে অনিয়মের মচ্ছব শুরু হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, বিল-ভাউচার জালিয়াতি, অসম্পূর্ণ অডিট রিপোর্ট পেশের অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক সোহাগসহ বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে ফিফার তদন্ত কিন্তু এখনো চলমান!
কিক অফের ১৪ মিনিটের মধ্যে দু গোল করে পুরো অ্যানফিল্ডকে নাচিয়ে তুলেছিলেন ডারউইন নুনেজ ও মোহামেদ সালাহ। সমর্থকরা ভাবতে শুরু করেছিলেন দেড়যুগ পর রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে পারবে লিভারপুল। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। অলরেডদের মুখ পাঁচ গোলের লজ্জায় লাল করেছে অতিথিরা। ভাগ্যিস, ‘অ্যাওয়ে গোল’ নিয়ম নেই এখন আর চ্যাম্পিয়নস লিগে। নইলে এখনই বলা যেত ঘরের মাঠে ২-৫ গোলের হারে শেষ ১৬’র প্রথম লেগ থেকেই বিদায় নিয়েছে লিভারপুল। বিদায় এড়াতে হলে ২১ ফেব্রুয়ারি সান্তিয়াগো বার্নাবুতে রিয়ালকে কমপক্ষে চার গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে। যা এবারের লিভারপুলের কম্ম নয় বলেই মনে হচ্ছে।
জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিউস-বেনজামারা। মিলিতাওও গোল করেছেন। দুর্দান্ত খেলেছেন লুকা মদ্রিচ। তৃপ্ত কোচ কার্লো আনচেলত্তি তাই ইউরোপ সেরা গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়ার ভুলকে মার্জনা করেছেন। কোর্তোয়ার ভুল অবিশ্বাস্য। নুনেজের ব্যাক হিলে কিক অফের ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ডে গোল খেয়ে বসে রিয়াল! চ্যাম্পিয়নস লিগে এত দ্রুত গোল খাওয়ার পর রিয়াল কখনো জিততে পারেনি। এরপরই কোর্তোয়ার সেই ভুল। দানি কারবাহালের ব্যাক পাস পেয়েছিলেন কোর্তোয়া। বল ঠিকঠাক মারতে গিয়ে হাঁটু দিয়ে গুঁতো মেরে বসেন। সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা সালাহ বলের নাগাল পেতেই বাঁ পায়ের শটে গোল করে স্টিভেন জেরার্ডকে পেছনে রেখে ইউরোপে লিভারপুলের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েন।
তবে ৭ মিনিট পরই ভিনি জুনিয়র ব্যবধান করমান বেনজেমার অ্যাসিস্টে। ৩৬ মিনিটে ২-২ করেন ব্রাজিলিয়ান স্কোরলাইন। ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে লিভারপুলের জালে তার চেয়ে বেশি (৫) গোল আর কেউ করতে পারেননি। বিরতির পর লিভারপুল ঠিকমতো গুছিয়ে নেওয়ার আগেই ফ্রি কিক পায় রিয়াল। ৪৭ মিনিটের সেই ফ্রি কিক থেকে মিলিতাও হেডে ব্যবধান বাড়ান। ৫৫ মিনিটে বেনজেমার শট পা বাড়ানো ডিফেন্ডার জো গোমেজের উরুতে লেগে জালে জড়ায়। ৬৭ মিনিটে প্রতি আক্রমণের ফসল তুলে নেন বেনজেমা। এই গোলে একটি রেকর্ডে লিওনেল মেসিকে ছুঁয়েছেন ফরাসি স্ট্রাইকার। তারা দুজন টানা ১৮টি চ্যাম্পিয়নস লিগ আসরে গোল করার কীর্তি গড়েছেন।
দিনের অন্য ম্যাচে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে ওসিমহেন ও ডি লরেঞ্জোর দু গোলে জয় পেয়েছে নাপোলি।
আবারও একঝাঁক প্রতিভাবান অ্যাথলেটের খোঁজে রবিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে শেখ কামাল দ্বিতীয় যুব বাংলাদেশ গেমসের চূড়ান্তপর্ব। আঞ্চলিকপর্বে অংশ নেওয়া প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদের মধ্য থেকে চার হাজার জনকে নিয়ে হবে ৬ দিনব্যাপী চূড়ান্তপর্ব। আর্মি স্টেডিয়ামে চূড়ান্তপর্বের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ডাচ-বাংলা ব্যাংক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গেমসের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
আট বিভাগের চার হাজার ক্রীড়াবিদ ১৯৩টি স্বর্ণপদকের জন্য লড়াই করবেন। এছাড়া রৌপ্যপদক ১৯৩টি ও ব্রোঞ্জ ২৮৭টি। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে ভিডিও চিত্রে যুব গেমস নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তার, সম্প্রতি এশিয়ান ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনাজয়ী ইমরানুর রহমান ও আইএসএসএফ বিশ্বকাপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ফাইনালে উঠে চমক জাগানো শুটার কামরুন্নাহার কলি।
সংবাদ সম্মেলনে বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘২০১৮ সালের গেমসে যারা ভালো করেছেন, তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ক্রীড়াবিদ হিসেবে বিভিন্ন সংস্থা ও বিকেএসপিতে যুক্ত আছেন। প্রথম যুব গেমস থেকে উঠে আসা ক্রীড়াবিদদের অনেকে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে নিজেদের সেরা অ্যাথলেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’ গেমস সম্পর্কে বিওএর সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ বলেন, ‘নিজস্ব তহবিল থেকে আমরা গেমসে প্রাথমিকপর্ব শুরু করেছি। এ পর্বে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটরা অনুশীলনের আওতায় রয়েছেন। এরইমধ্যে তৃণমূলে আমরা একঝাঁক প্রতিভাবান অ্যাথলেটের সন্ধান পেয়েছি।’ এবার চূড়ান্তপর্বের উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠানে কৃচ্ছ্র সাধনের কথা জানান বিওএ কর্তারা।
আজ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে গেমসের মশাল র্যালি শুরু হচ্ছে। সেখান থেকে বিভিন্ন ক্রীড়াবিদ মশাল বহন করে ঢাকায় নিয়ে আসবেন। আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শেখ কামালের প্রতিকৃতি ঘুরে মশাল নেওয়া হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। গেমসের মশাল প্রজ্বালন করবেন স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান ও কারাতেকা মারজান আক্তার প্রিয়া।
২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ নারী দল। সেবারই শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ড নারীদের হারিয়ে স্বপ্নের শুরু পায়। কিন্তু পরের তিন আসরে আর একটিও জয় ছিল না নারী দলের। সেমিফাইনালে খেলার বড় স্বপ্ন নিয়ে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় পঞ্চম আসরে পা রেখেছিলেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। কিন্তু গ্রুপ পর্বে টানা চার হারে শেষ করতে হলো শূন্য হাতে। এখন শূন্যতার দুঃখ ভুলে আবার দেশেই চোখ ফেরাচ্ছে দল। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৪ টি-টোয়েন্টি নারী বিশ্বকাপে ভালো করার প্রত্যয় জানিয়ে এবারের আসরে ইতি টানল বাংলাদেশ।
গত মঙ্গলবার গ্রুপ ১ এর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০ উইকেটে হেরেছেন জ্যোতিরা। ৬ উইকেটে ১১৩ রানের মামুলি সংগ্রহ বিনা উইকেটে ছুঁয়ে ফেলে প্রোটিয়া নারীরা। ১০ উইকেটের এ জয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালও নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপ স্বাগতিকরা। এর আগে গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে টানা ১৭ ম্যাচ জয়হীন থাকায় দলের অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলম বেশ হতাশ। এর মধ্যেও এবার কিছু আশা খুঁজে পেয়েছেন জাহানারা। সঙ্গে জানালেন আগামীবার ঘরের মাঠে ভালো করার প্রত্যয়, ‘এটা আমাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ। প্রতি আসরের দলের গর্বিত সদস্য আমি। এবারের বিশ্বকাপকে তবু আমি ব্যতিক্রম মনে করি। এবার তিনটি ম্যাচ আমরা খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও আজ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। হয়তো ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল না। আশা করি পরের বিশ্বকাপে ভাগ্যকে পাশে পাব। সামনের আসনে ভিন্ন কিছু দেখতে পাবেন। কারণ এবার আমরা এফটিপিতে আরও এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলব। পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা হবে তখন। এবার সেই অভিজ্ঞতা থাকলে ফলটাও ভিন্ন হতে পারত।’
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গুচ্ছ ভর্তি। স্বাভাবিকভাবেই তিন বছরে অনেকটাই গুছিয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আরও অনেকটা অগোছালো হয়ে উঠেছে। এমনকি গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর অনেকটা জোর করেই তাদের গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে গুচ্ছ ভর্তি নিয়েই টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোর করে হয়তো এ বছর ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই অনুযায়ীই এগুনো উচিত।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসির ফল প্রায় সাত মাস দেরিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। অথচ এর আগেই তাদের প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছিল ইউজিসি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কারণ দেখিয়ে গুচ্ছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। আমাদের প্রত্যাশা, তারা গুচ্ছে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই গুচ্ছ ভর্তি শুরু করার তাগিদ দিয়েছিলেন। যারা গুচ্ছে এসেছিলেন তাদের এখন দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা। আর গুচ্ছে গত দুই বছর যেসব ত্রুটি ছিল, সেসব ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে। ফলে এ বছর অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে গুচ্ছ ভর্তি।’
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে আলোচনা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সভায় গুচ্ছে থাকার আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই গুচ্ছে থাকতে চান না। প্রয়োজনে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। আর জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যাতে ক্লাস শুরু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত গুচ্ছে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু বা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছে না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পরও যদি গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই অবস্থায় গুচ্ছে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে সে কথা বলেই আমাদের গুচ্ছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় আমরা আমাদের স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। আর গুচ্ছে হাজারো ত্রুটি। এতে দীর্ঘসূত্রতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি সারা বছর ধরে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে গুচ্ছে ভালো ছেলেমেয়েরা আসছে না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ফল না এলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।’
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভায় কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা, ১ জুলাই নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করা, আবেদনের জন্য ন্যূনতম ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার পর শুধু ভর্তি হওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে আসবে এবং বাকি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ইতিমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা আহ্বান করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না।’
জানা যায়, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। এমনকি গত বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
চলতি অর্থবছর বাজেট বাস্তবায়নে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আট মাস পেরোলেও এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারেনি সরকার। উল্টো পরিশোধ করতে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ না পেয়ে ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে। এতে চাপ বাড়ছে ব্যাংকের ওপর। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নানা নীতির কারণে এই খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যদিও সরকারের ঋণের বোঝা থেকে বাঁচাতে এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৫৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার। আর এই খাতের মোট পরিশোধ করেছে ৫৯ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আট মাসে ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে।
ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উল্টোপথে হাঁটছে। সুদের হার হ্রাস ও নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। আর সে কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না সরকার। উল্টো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর এতে বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ।
গত ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ১০৫ কোটি টাকার। তবে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। সুতরাং বিক্রির চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ ৪৪০ কোটি টাকা বেশি। অথচ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতেও নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে এবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েও ফেলেছে। আর পুরোটাই নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে এই টাকার জোগান দেওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপরও চাপ বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, তিনটি কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রথম কারণ হলো এখন মানুষের হাতে টাকা কম। ফলে সংসার চালাতে সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন। দ্বিতীয় হলো পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে আয়কর রিটার্নের সিøপ জমা করতে হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এ ঝামেলায় যেতে চান না। তৃতীয়ত, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে যাদের আগে থেকে বেশি বিনিয়োগ ছিল, তারা মেয়াদপূর্তিতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এ ছাড়া প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা ও এনআইডি শর্তের কারণে সেখানে কম বিনিয়োগ হয়েছে। যদিও সম্প্রতি প্রবাসী বন্ডের বিনিয়োগ সীমা ও এনআইডি শর্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে বেশি ভাঙানো হয়েছে। গত ডিসেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এ ছাড়া নভেম্বরে ৯৭৮ কোটি ৩৯ লাখ, অক্টোবরে ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ ও সেপ্টেম্বরে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা ঋণাত্মক ধারায় ছিল। যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ছিল। এর মধ্যে গত আগস্টে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল আট কোটি টাকা। আর জুলাইয়ে ছিল ৩৯৩ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হতে পারে। যদিও ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকায় সরকারকে অভ্যন্তরীণ ঋণের পুরোটাই জোগান দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৪৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। একই সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের নেওয়া ঋণের প্রায় ৪ হাজার ৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল সরকার। ওই অর্থবছরে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এটি তার আগের তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভক্ত পুণ্যার্থীদের সংখ্যা বেশি থাকে। এ দুইদিন ইফতারের আয়োজনও থাকে বড়। ইফতারের প্রায় আধা ঘণ্টা আগে থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা পুণ্যার্থী ও মুসাফিরদের মধ্যে ইফতার বিতরণের কাজ শুরু করেন। নারী ও পুরুষ ভক্তদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। গতকাল সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ছাতক থেকে আসা মোজাহিদ আলী বলছিলেন, দরগাহে ইফতার করা মানে হলো বাবা শাহজালালের বাড়িতে ইফতার করা। গত ১০ বছর ধরে তিনি একদিনের জন্য হলেও দরগাহে ইফতার করতে আসেন।
জনশ্রুতি আছে সিলেটের শাহজালালের (রহ.) দরগাহে ৭০০ বছর ধরে পবিত্র রমজান মাসজুড়ে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়।
ইফতারের প্রচলন কবে কীভাবে শুরু হয় জানতে চাইলে মাজারের খাদেম সামুন মাহমুদ খান বলছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমি এখানে ইফতারের আয়োজন দেখে আসছি। যা এখনো চলমান।’ তিনি জানান, মাজারের মেহমানখানার নিচতলায় নারী ও ওপরের তলায় পুরুষদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। গড়ে ২৫০-৩০০ জন ইফতারে অংশ নেন। ইফতারের আয়োজনে থাকে খেজুর, শরবত, গরুর মাংস দিয়ে আখনি, ভুনা খিচুড়ি, ছোলা, শাকের বড়া, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপিসহ নানা পদ। এর বাইরে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে রাতে অতিথির সংখ্যা বেশি হলে সাহরিরও আয়োজন করা হয়।
ইফতারের টাকার জোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ এ খাদেম জানান, শাহজালালের (রহ.) মাজারে আগত ভক্তরা ইফতারের জন্য টাকা পাঠান। এর বাইরে যে টাকা লাগে সেটার জোগান আসে মাজারের মোতাওয়াল্লি ফতেহউল্লাহ আল আমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে।
ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বুরহান উদ্দিন নামের এক ভক্ত বলছিলেন, ‘বাবা শাহজালাল রমজান মাসে তার সঙ্গীদের নিয়ে একসঙ্গে বসে ইফতার করতেন। তার ইন্তেকালের পর তার অনুসারীরা একইভাবে ইফতার করতেন। সেই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে মাজার কর্তৃপক্ষ।’ তিন জানান, ইফতার করার জন্য প্রতিদিন নগর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন।
কথা হয় নরসিংদী থেকে আসা স্কুল শিক্ষক সীমা বেগমের সঙ্গে। সন্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগের হজরত শাহজালালের (রহ.) দোয়া নিতে স্বামীসহ আসছেন। ইফতারের আয়োজনে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেটের মানুষ অতিথিপরায়ণ বলে শুনিছি। আজ তার প্রমাণ পেলাম।’
দরগাহ মসজিদের ভেতরে ও বাইরেও ছিল ইফতারের আয়োজন। যদিও এখানে রোজাদারদের ইফতারের ব্যবস্থা মাজার কমিটি করে না। মুসল্লিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেয়ে মুসল্লিরা ইফতার করেন।
আব্দুর রহিম নামে এক মুসল্লি জানান, সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। উপশহরের বাসা থেকে তিনি ইফতার নিয়ে এখানে এসেছেন।
মাজারে থাকা শাহজালাল (রহ.)-এর স্মৃতিফলকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি ১২৭১ সালে ইয়েমেনে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের বিষয়টি তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, পরে তার মামা ও ওস্তাদ সৈয়দ আহমদ কবিরের নির্দেশে ৩৬০ জন সঙ্গীসহ (৩৬০ আউলিয়া) ১৩০৩ সালের দিকে সিলেট এসে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। পরে তিনি সিলেট ও তার আশপাশের এলাকায় এবং তার সঙ্গীরা সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের কাজে ছড়িয়ে পড়েন। ধারণা করা হয়, হজরত শাহজালাল (রহ.) ১৩৪১ সালে মারা যান। তাকে সিলেটের দরগাহ মহল্লা এলাকায় সমাহিত করা হয়। এরপর তার সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মাজার।
হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক পুণ্যার্থী আসেন। তার সমাধিকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে কবরস্থান গড়ে উঠেছে। যেখানে সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার মানুষকে সমাহিত করা হয়। অনেকেই মারা যাওয়ার আগে এখানে কবর দেওয়ার জন্য স্বজনের কাছে অসিয়ত করে যান।
দরগার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই মূল মাজারের সিঁড়ি ঘেঁষে চোখে পড়ে নারীদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। মাজারে আগত নারী ভক্তরা এখানে নফল নামাজ পড়েন এবং ইবাদত বন্দেগি করেন।
মাজারের ডেগ : ডান দিকে চোখে পড়ে কিছু নারী-পুরুষের সমাগম। সামনে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারি ছোট একটা কক্ষে থাকা তিনটি বড় ডেগকে (পাতিল) ঘিরেই এ সমাগম। তারা মানত পূরণে মাজারে যে অর্থ দান করেন তা এসব ডেগে ফেলেন।
মাজারের উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে। যেখানে রয়েছে বড় বড় গজার মাছ। মাজারে আগতরা মাছ দেখেন এবং তাদের খাবার দেন। কথিত আছে শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীদের নিয়ে সিলেটে আসার সময় গজার মাছ নিয়ে আসেন।
শত শত বছর ধরে মাজার প্রাঙ্গণে রয়েছে জালালি কবুতর। ধর্মপ্রাণ সিলেটের মানুষের বিশ্বাস এই কবুতর হারিয়ে যেতে পারে না।
জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, শাহজালালকে (রহ.) নিয়ে দিল্লির নিজামউদ্দীন আউলিয়ার কাছে তার এক শিষ্য কুৎসা রটনা করলে তিনি তাকে দরবার থেকে বিতাড়িত করেন। এরপর শাহজালালকে (রহ.) দেখা করার জন্য খবর পাঠান। তখন শাহজালাল (রহ.) একটি বাক্সে প্রজ্বালিত অঙ্গারের সঙ্গে কিছু তুলা পাঠান, যা ছিল একটি আধ্যাত্মিক নিদর্শন। এরপর তাদের সাক্ষাৎ হয় এবং ফিরে আসার সময় ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ নিজামুদ্দীন আউলিয়া তাকে একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন, যা আজকের জালালি কবুতর বা জালালি কইতর নামে পরিচিত।
দরগাহের পেছনের দিকে রয়েছে একটি কূপ। কথিত আছে এই কূপের পানি হজরত শাহজালাল (রহ.) ব্যবহার করতেন। কূপের মধ্যে সোনালি রঙের কই ও মাগুর মাছ দেখতে পাওয়া যায়, যা অনেকে সোনার মাছ বলেও প্রচার করে।
মাজারে আগতদের একটা বড় অংশ আসেন বিভিন্ন মানত নিয়ে। ভক্তদের বিশ্বাস এখানে এসে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়। মজনু বিবি নামের এক ভক্ত জানান, তিনি প্রায়ই মাজারে আসেন। এখানে এসে বাবার (হজরত শাহজালাল) অসিলায় আল্লাহর দরবারে মনের আশা জানান। এবার এসেছেন একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তার ছোট মেয়ের বিয়ে হয়েছে ৫ বছর, কিন্তু কোনো সন্তান হচ্ছে না। তাই মাজারে এসেছেন।
ইফতার শেষে মাজার থেকে বের হওয়ার সময় নজরে এলো লাল রঙের জামা পরা কিছু লোক। স্থানীয় লোকজন তাদের ফকির হিসেবে জানে। তাদেরই একজন ইব্রাহিম শাহ। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের এ বাসিন্দা বলছিলেন, তিন বিয়ে করেননি। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নেই। মাজারেই থাকেন, যা খাবার জুটে তাই খেয়ে দিন কাটে।
সরকারবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল নিয়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে ঐক্য কতটা থাকবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছে বিএনপি। এর মধ্যে ঘটে যাওয়া দু-একটি ঘটনার কারণে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে থাকা দলটির মধ্যে এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করবে। এ ষড়যন্ত্র ছোট দলগুলো কতটা মোকাবিলা করতে পারবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির শরিক দুটি দল জোট থেকে বেরিয়ে যায়। সম্প্রতি ফরহাদ মজহার ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত) শওকত মাহমুদের আমন্ত্রণে ছোট দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা তাদের ডিনারে অংশ নেওয়ায় এ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল রাজপথে আন্দোলন করছে তাদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে নানা প্রলোভনে অথবা ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে নিতে পারে। ছোট দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সরকারের প্রলোভন কিংবা ভয়ভীতি কীভাবে মোকাবিলা করবে তা নিয়ে আমাদের শঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা সতর্ক থাকব। ছোট দলগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখব। তাদের পাশে থাকব।’
গত ১৬ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস/জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ নামে নাগরিক অধিকারবিষয়ক একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্র্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠন করে সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানায় সংগঠনটির আহ্বায়ক কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, সদস্য সচিব সাংবাদিক শওকত মাহমুদ। সেখানে সংগঠনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ ইনসাফ কায়েম কমিটির পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্র্বর্তী জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। তারা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে এবং তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।’
সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নেতাদের শওকত মাহমুদের আমন্ত্রণে ওই কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএনপি নেতারা অংশ না নিলেও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, লেবার পার্টির চেয়ারপারসন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পার্টিতে অংশ নেন।
এ অনুষ্ঠানের পর শওকত মাহমুদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১২ দলীয় জোটের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শওকত মাহমুদের পার্টিতে অংশ নেওয়ায় ১২ দলীয় জোট থেকে বের করে দেওয়া হয় লেবার পার্টিকে।’
তবে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে ১২ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।’ তারা বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানিয়েছে।
তবে জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শওকত মাহমুদের পার্টিতে অংশ নেওয়ায় বাংলাদেশ লেবার পার্টিকে জোট থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দুটি নেতার জাতীয় ইনসাফ কমিটির অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এম সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইনসাফ কমিটি আমাকেও দাওয়াত দিয়েছিল। আমাকে ফোন করেছিল। কিন্তু আমি যাইনি। সেখানে যাওয়াটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। আমার ধারণা মঞ্চের যে দুজন নেতা গিয়েছেন তারা হয়তো সৌজন্যতার খাতিরে গেছেন। অন্য কোনো উদ্দেশ্য তাদের ছিল না বলে মনে করি।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইনসাফ কমিটির আমন্ত্রণে যারা গেছেন তাদের কারও নাম মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়নি। কিংবা তাদের বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সৌজন্যতার খাতিরে তারা গিয়ে থাকতে পারেন। বিশেষ করে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ সেখানে গেলেও পরে ডিনারে অংশ না নিয়ে চলে গেছেন।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু সেখানে যাইনি। সেখানে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির আলাপ হলে ভালো হতো।’
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের ঘনিষ্ঠ কিংবা স্বতন্ত্র কেউ কোনো অনুষ্ঠান করলে তাতে অংশ নেওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেও বৈঠক করা দরকার। আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে। ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের ইনসাফ কমিটির অনুষ্ঠানের আগে বিএনপি কী চায় বা না চায় সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। জানালে ভালো হতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগপৎ আন্দোলন সংগ্রাম সমন্বয়ে বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় বিএনপি সতর্ক থাকবে সবসময়। পাশাপাশি শরিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হবে। যাতে করে সরকারের দিক থেকে কোনো প্রলোভন কিংবা ভয়ভীতি দেখানো হলে সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলা করা যায়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।