
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শেষ। ডায়াস থেকে রেকর্ডারটা হাতে নিতে নিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে যাওয়া তামিম ইকবালকে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘আপনার প্রিয় ব্যান্ড কি মেটালিকা? কাল রাত থেকে অনেকবারই নাথিং এলস ম্যাটারস গানটা শুনেছেন।’ তামিম উত্তরে হাসলেন। অবশ্য হাসি পাওয়ারই কথা, কারণ সদ্যসমাপ্ত সংবাদ সম্মেলনে যে ৩০ মিনিটে ‘নাথিং এলস ম্যাটারস’ শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করেছেন কমপক্ষে ১৫ বার!
মার্কিন হেভি মেটাল ব্যান্ড মেটালিকার একটি জনপ্রিয় গান ‘নাথিং এলস ম্যাটারস’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলবোর্ড টপচার্টে এই গানটি শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল সপ্তাহের পর সপ্তাহ। অজস্র কনসার্টে অনেক ব্যান্ড সংগীত শিল্পীই এই গান গেয়েছেন। তবে কোনো ক্রিকেট সিরিজের আগে, প্রায় মাস ছয়েক পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা অধিনায়ককে বাক্যবাণ থেকে বাঁচতে এই গানের কথার আশ্রয় নিতে হবে, এমনটা জেমস হেটফিল্ড বোধহয় কখনো ভাবেননি!
একদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত সম্পর্কে ফাটল, দলের ভেতর অন্তঃকোন্দল ও বিভাজন...নানান ইস্যু নিয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গড়গড়িয়ে বলেছেন অনেক কিছু। যা সংবাদমাধ্যমের জন্য নিঃসন্দেহে লোভনীয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ শুরুর আগে খেলোয়াড়দের জন্য হয়তো অস্বস্তির। তামিম কাল সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার আগে আঁচ করতে পেরেছিলেন, মার্ক উড-জোফরা আর্চারদের হাত থেকে ছুটে আসা বাউন্সারগুলোর মতোই টেবিলের ওপাশের মাইক্রোফোন থেকে ধেয়ে আসবে অনেক শব্দবাণ। সোজাসাপ্টাই বললেন, ‘আমি প্রস্তুত ছিলাম, আমি জানতাম এই ধরনের প্রশ্ন আসবে। আমার পক্ষে ‘নো কমেন্টস’ বলে এড়িয়ে যাওয়াটা খুব সহজ ছিল। বলতেই পারতাম প্রশ্নোত্তর পর্বটা সিরিজ নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেই ভালো হয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে সাংবাদিকদের কাছে, বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের কাছে আমার বার্তাটা পৌঁছে দেওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার ভক্ত, সাকিবের ভক্ত, অন্য যে কারও ভক্ত সবার প্রতি আমার বার্তাটা খুব সহজ। তা হচ্ছে মাঠে আমরা কী করছি সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে নাথিং এলস ম্যাটারস (আর কোনো কিছুই কোনো গুরুত্ব বহন করে না)।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই মহারথী, দুই আইকনের এই দ্বন্দ্ব মাঠের খেলায় কতটা প্রভাব ফেলে? তামিম বললেন, মাঠে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনো প্রতিফলনই থাকে না, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে আমি আর সাকিব যখন মাঠে বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে খেলি তখন আমি আমার সেরাটা দিচ্ছি এবং সেও তার সেরাটাই দিচ্ছে। আমি যখন দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি, তখন আমি কোনো পরামর্শ চাইলে সেটা সে আমাকে দিচ্ছে। একইভাবে যখন সে টেস্ট দলের অধিনায়ক, তার কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমি সেটা দিতে তৈরি। এর বাইরে নাথিং এলস ম্যাটারস, নাথিং এলস ম্যাটারস। আমার কাছে মনে হয়, এই ব্যাপারগুলো যদি ঠিক থাকে...আমি একটা সংস্করণের অধিনায়ক আর আমি যখন টেস্ট দলে তার অধিনায়কত্বে খেলি তখন সেও জানে আমি আছি...নাথিং এলস ম্যাটারস।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে বোর্ড প্রধানের এমন বেফাঁস কথাবার্তাতেও কিছু আসে যায় না তামিমের, ‘যতক্ষণ মাঠে সবকিছু ভালো হচ্ছে, ততক্ষণ নাথিং এলস ম্যাটারস মানে নাথিং এলস ম্যাটারস। কে কী বলল, কে কি না বলল, আমাদের সম্পর্ক কেমন, আমরা একসঙ্গে কফি খাই কি না, এগুলো কোনো কিছুই ম্যাটার করে না যতক্ষণ না কেউ মাঠে তার ১০০ ভাগ দিচ্ছে। যদি এইখানে কোনো সমস্যা থাকত তাহলে আমি সমস্যা মনে করতাম। আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে একসঙ্গে খেলছি, সে যখন উইকেট পায় আমরা সবাই সেটা উদযাপন করি।’
প্রায় ত্রিশ মিনিট দৈর্ঘ্যরে সংবাদ সম্মেলন, ঘুরে ফিরে প্রশ্ন একটাই এবং তামিমও সেই বাউন্সারগুলো ডাক করছিলেন একটা শটেই যেটাকে বলা যায় ‘নাথিং এলস ম্যাটার’। রীতিমতো টেস্ট ম্যাচ বাঁচানোর ধৈর্য দেখিয়ে গেছেন তামিম, হাজার প্রলোভনেও একটা বারও সাকিবকে নিয়ে কোনো তির্যক মন্তব্য করেননি। বলা যায় ‘ভাইরাল’ হওয়ার মতো কোনো শিরোনাম দেননি, অনেক সতীর্থের নাম নিলেও সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন ‘সাকিব আল হাসান’ নামটা। সে জায়গায় ‘একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল’, ‘দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য’ এমন সব সর্বনাম ব্যবহার করে গেছেন তামিম।
শনিবার জোফ্রা আর্চার-মার্ক উডরা বোলিং অনুশীলন করতে করতে ইউটু’র ‘উইথ অর উইদাউট ইউ’ গানটাও শুনেছিলেন, রবিবার তামিম বাজিয়ে গেছেন মেটালিকার ‘নাথিং এলস ম্যাটারস’। সাংবাদিকদের বাউন্সার সামলাবার প্রস্তুতি ভালোই নিয়েছেন তামিম, মাসছয়েক পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ইংল্যান্ডের পেসারদের বাউন্সারটা মাঠে সামলাতে পারবেন তো ওয়ানডে অধিনায়ক? মেটালিকা ভক্ত হয়ে থাকলে তামিমের জানার কথা, তাদের ‘আনফরগিভেন’ বলেও একটা গান আছে!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেকোনো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তার সরকার স্মার্ট অ্যাথলেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আমাদের পরবর্তী টার্গেট হলো দেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করা, যা স্মার্ট ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে সাহায্য করবে এবং এভাবে আমরা যেকোনো আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার মান অর্জন করতে পারব।’
গতরাতে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস ২০২৩-এর চূড়ান্ত পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যুব গেমস ক্রীড়া অঙ্গনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং তারকা খেলোয়াড় তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।’ তিনি বলেন, তার সরকার ক্রীড়া অঙ্গনে শ্রেষ্ঠত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তরুরা যুব গেমসে অংশ নিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলায় তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং এভাবে নবীন ও শিশুদের খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হতে অনুপ্রাণিত করবে। যুব গেমসে অংশগ্রহণকারী সবার মঙ্গল কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই খেলাধুলার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। ২০৪১-এর বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তোমরা সবাই অংশগ্রহণ করবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাও বক্তব্য রাখেন।
এর আগে অ্যাথলেটদের শপথবাক্য পাঠ করান ১৪ বারের দ্রততম মানবী স্প্রিন্টার শিরিন আক্তার। মশাল প্রজ¦ালন করেন এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের ৬০ মিটারে স্বর্ণজয়ী ইমরানুর রহমান ও এসএ গেমসের স্বর্ণজয়ী কারাতেকা মারজান আক্তার প্রিয়া।
৬০ হাজার অংশগ্রহণকারী নিয়ে শুরু হওয়া তিন পর্বের যুব গেমসের চূড়ান্ত পর্যায়ে বাস্কেটবল, ফুটবল, হকি, কাবাডি, অ্যাথলেটিকস, সাইকেলিং ও ভারোত্তোলনসহ ২৪টি ডিসিপ্লিনে চার হাজার প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন। ২৪টি ডিসিপ্লিনের ১৯৩টি স্বর্ণ, ১৯৩ রৌপ্য ও ২৮৭ ব্রোঞ্জের জন্য লড়বেন প্রতিযোগীরা।
গতকাল উদ্বোধন হলেও কিছু ইভেন্টের খেলা শুরু হয়েছে আগের দিন। বয়সভিক্তিক পর্যায়ে প্রায়ই সাফল্যের দেখা পাওয়া মনন রেজা নীড় যুব গেমসেও দাবা ডিসিপ্লিনে উদ্বোধনী দিনে জিতলেন সেরার মুকুট। মেয়েদের বিভাগে সেরা হন নুসরাত জাহান আলো।
২০২১ সালের ২১ এপ্রিল, শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল হক। এরপর সেঞ্চুরি তো দূরের কথা ফিফটির দেখাই পাচ্ছিলেন না তিনি। ব্যর্থতার খাদে পড়ে আন্তর্জাতিকে ওই সেঞ্চুরির পর এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছেন ২৩ ইনিংসে ১৫ বার। হারিয়েছেন টেস্ট নেতৃত্বও। সেই মুমিনুলের ব্যাটে ফিরল সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) নর্থ জোনের বিপক্ষে ইস্ট জোনের হয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে সেঞ্চুরিতে অপরাজিত আছেন মুমিনুল। তার ১০৩ রানে নর্থ জোনের করা ৯ উইকেটে ৩৭৮ (ডিক্লে.) রানের পিছু ছুটে ইস্ট জোন ২ উইকেটে ২১৭ রান করেছে। মুমিনুলের দল এখনো পিছিয়ে আছে ১৬১ রানে। দুই সেঞ্চুরির মাঝে মুমিনুল আন্তর্জাতিকে তিনটি ফিফটি ও আন্তর্জাতিকের বাইরে তিনটি ফিফটি করেন।
লিওনেল মেসি, করিম বেনজেমা নাকি কিলিয়ান এমবাপ্পে কে ২০২২’র ফিফা বর্ষসেরা জানা যাবে আজ রাতে। বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় প্যারিসে শুরু অনুষ্ঠানে দেওয়া হবে ফিফা দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ড। ইউরোপীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, বিশ্বকাপ বিজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসির হাতেই এবারের পুরস্কার ওঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
২০২২ বর্ষসেরা পুরস্কারের জন্য গত ৮ আগস্ট ২০২১ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফিফা পুরস্কারের জন্য বিবেচিত সময়টা দারুণ কেটেছে মেসির। বিশ্বকাপে করেছেন ৭ গোল, জিতেছেন গোল্ডেন বল পুরস্কার। পিএসজির হয়ে জেতেন ফ্রেঞ্চ লিগ। এমবাপ্পে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেন। জেতেন গোল্ডেন বুট। মেসির মতো তিনিও জেতেন লিগ শিরোপা। আর বেনজেমা রিয়ালের হয়ে জিতেছিলেন লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। যে পারফরম্যান্সে জেতেন ২০২২ ব্যালন ডি’অর।
মেসি এর আগে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ৭ বার (২০০৯ থেকে ২০১২, ২০১৫, ২০১৯, ২০২১)। ব্যালন ডি’অর আলাদা হয়ে যাওয়ার পর ফিফা দা বেস্ট জিতেছেন তিনি একবার, ২০১৯ সালে। পরের দুবার তিনি যথাক্রমে তৃতীয় ও দ্বিতীয় হন ২০২০ ও ২০২১ সালে।
ফিফা দ্য বেস্টের ভোট চারটি অংশে ভাগ করা। ২৫ শতাংশ ভোট নির্বাচিত দেশের সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের। দলের অধিনায়করা দিয়েছেন ২৫ শতাংশ ভোট। ২৫ শতাংশ ভোট দিয়েছেন জাতীয় দলের হেড কোচরা। বাকি ২৫ শতাংশ ভোটের ফল নেওয়া হয়েছে ভক্তদের থেকে ১২ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আজ নারী বর্ষসেরা, বর্ষসেরা গোলকিপার, বর্ষসেরা কোচসহ আরও কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে।
কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের অধীনে নিস্তার নেই কারও। ১০-১০ ঘণ্টা অনুশীলন করতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। কাল থেকে সেই পুরো দিনের অনুশীলন পর্ব শেষ হয়ে তা আড়াই-তিন ঘণ্টায় নেমেছে। তবুও ওই সময়ে দল সংশ্লিষ্ট একটি লোকও বসে নেই। সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে দাঁড়িয়ে। বার্তা একটাই সবাইকে দলের জন্যই এক হতে হবে। কারোরই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের সুযোগ বাংলাদেশ দলে নেই। কোচের চাহিদার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কাল ইংল্যান্ড সিরিজের সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবালও জানালেন লক্ষ্য একটাই সিরিজ জয়। মানে দলের জয়। এর বাইরে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় উঠে এলেও তা এখনো গৌন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি ওয়ানডে শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময় ৮ ঘণ্টা। গতকালের আগের দুই দিন নির্দিষ্ট আট ঘণ্টা ও আরও দুই ঘণ্টা বেশি অনুশীলন করতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। ম্যাচ অনুশীলনে কোনো ব্যাটার আউট হয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ড্রেসিংরুমের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে গা এলিয়ে বসতে পারেননি। আউট হয়েই যেতে হয়েছে নেট ব্যাটিংয়ে। সেখানে জনপ্রতি প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট করে তাদের নিয়ে কাজ করেছেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। ক্রিকেটারদের মতো কোচদেরও নিস্তার নেই। কাল যেমন প্রথম আনুষ্ঠানিক অনুশীলনে মাঠে তিন স্ট্যাম্প খাটিয়ে তিন সহকারী কোচ লেগে গেলেন ক্রিকেটারদের ফিল্ডিং অনুশীলনের কাজে। এমনিতে ক্রিকেটারদের ফিল্ডিং শেখানোর দায়িত্ব শুধু ফিল্ডিং কোচ ম্যাকডরমটের। কিন্তু কাল ক্রিকেটাররা ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে সিডন্স, ডোনাল্ড ও হেরাথের কাছেও থ্রো-ইন করেছেন। আর ক্যাচিং অনুশীলন করিয়েছেন ম্যাকডরমট। এরপর দলবল মিলে ইনডোরে গিয়েছে পুরো দল ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করতে।
অনুশীলন শুরু থেকে হাথুরু যে বসে ছিলেন তা নয়। দল যখন ফিল্ডিং অনুশীলনে ব্যস্ত হেড কোচ মিরপুরের পিচ কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকে নিয়ে ব্যস্ত। মূল পিচের কাছে দাঁড়িয়ে স্বদেশির সঙ্গে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের আলাপ তাদের। ইংল্যান্ড বধে পিচকে সেরা অবস্থায় পেতে চান কোচ। সেই অবস্থাটা অবশ্যই স্পিনিং উইকেট। কাল অধিনায়ক তামিম ইকবালের কথায়ও তা স্পষ্ট, ‘যখনই বিশেষ কিছু সিরিজ থাকে যেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেমন এ সিরিজটা। বিশ্বের যেকোনো দলই চাইবে জেতার জন্য। এটা ঠিক আমাদের স্পোর্টিং উইকেটে আরও ভালো ক্রিকেট খেলা উচিত। আমি নিশ্চিত ইংল্যান্ডের ধারণা আছে এখানে কী হবে।’ তামিমের সহজ স্বীকারোক্তিতে উইকেটের স্পিন সহায়ক হওয়ার একটাই কারণ, ‘সিরিজ জয় নাম্বার ওয়ান মোটিভ... এছাড়া আর কিছু নেই। অবশ্যই আমরা যখন প্রথম ওয়ানডে খেলব জেতার জন্যই খেলব।’
ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলাটা মিস করেছেন তামিম। ওই সময় গুঞ্জন ওঠে বড় সিরিজে এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস থেকেই ছিলেন না! এমন কিছু বাংলাদেশ ব্যাটারের মোটেও ভালো লাগেনি। ‘১৫ হাজার রান করার পরও এসব শুনতে হলে ভেরি স্যাড...। আমি ১৭ বছর বছরে খেলছি, ৯০ শতাংশ ম্যাচে ছিলাম। ১০% ম্যাচ মিস করেছি...কারণ চোট। তবু এসব শোনা খুব আনফরচুনেট... কোনো ক্রিকেটারই ম্যাচ মিস করতে চায় না। ইংল্যান্ড সিরিজও বড় সিরিজ। তাহলে কেন আমি খেলছি?’
বিসিবি প্রধান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ওয়ানডে দলে তামিমের পছন্দের কারণে আছেন তাইজুল ইসলাম। অধিনায়কের একার পছন্দের কারণে কোনো ক্রিকেটারের দলে থাকা দল নির্বাচনে সুস্থ প্রতিযোগিতা রাখে না। এ নিয়ে সমালোচনা হবেই। কিন্তু এই বাঁহাতি স্পিনারের পাশে দাঁড়িয়ে তামিম জানালেন তার পছন্দেরটা ভিন্ন কারণে, ‘নির্বাচক মিটিংয়ে অনেক আলোচনা হয়, বদ্ধঘরে। ওখান থেকে (খবর) বের হয়ে আসা এটা খুব স্বাস্থ্যকর নয়। তাইজুল শেষ তিন ম্যাচে ৮ উইকেট পেয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে আমি সবসময় পারফরম্যান্সকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি তাইজুল বেশি স্যুট করবে। আমি তামিম একাদশের অধিনায়ক হলে পছন্দ-অপছন্দ আসত... কিন্তু আমি বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন ভেঙে ষষ্ঠবারের মতো নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল অস্ট্রেলিয়া। গতকাল ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ১৯ রানে হারিয়েছে প্রোটিয়া নারীদের। বেথ মুনির অপরাজিত ৭৪ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া নারী দল তুলেছিল ৬ উইকেটে ১৫৬ রান। জবাবে স্বাগতিকদের ইনিংস থামে ৬ উইকেটে ১৩৭ রানে। দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।