
গোলে, অ্যাসিস্টে, নেতৃত্বে আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ এনে দেওয়া পারফরম্যান্সে ফিফার বর্ষসেরা হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন লিওনেল মেসিই। কাতার বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করা কিলিয়ান এমবাপ্পেরও সম্ভাবনাও দেখছিলেন অনেকে। সঙ্গে ছিলেন গত বছরের ব্যালন ডি অর জয়ী করিম বেনজেমাও। তবে দুজনকে পেছনে ফেলে ২০২২ ফিফা দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।
প্যারিসে সোমবার ‘দ্যা বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয় মেসির হাতে। বিশ্বকাপ জয় আরও দুই আর্জেন্টাইনকে বিজয়ী করেছে। লিওনেল স্কালোনি হয়েছেন বর্ষসেরা কোচ। আর এমিলিয়ানো মার্তিনেজ হয়েছেন বর্ষসেরা গোলকিপার। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা পেয়েছে ফিফা বর্ষসেরা ফ্যানের পুরস্কারও।
সব মিলিয়ে ফিফার দেওয়া বর্ষসেরার এটি সপ্তম পুরস্কার মেসির। বিভিন্ন নামে ১৯৯১ থেকে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দিয়ে আসছে ফিফা। ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্যা ইয়ার’ নামের পুরস্কারটি একবার জেতেন মেসি, ২০০৯ সালে। পরের ৬ বছর ‘ফ্রান্স ফুটবল’ ম্যাগাজিনের সঙ্গে মিলে ফিফা দেয় ব্যালন ডি’অর, যে পুরস্কারটি মেসি জেতেন ২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালে। ফ্রান্স ফুটবল বেরিয়ে গিয়ে স্বতন্ত্র পুরস্কার দেয় ব্যালন ডি’অর নামে, যেটা ২০১৯ ও ২০২১-এ জেতেন মেসি। আর ফিফা দ্যা বেস্ট জেতেন ২০১৯ সালে।
২০২১ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিবেচিত সময়ে পিএসজির হয়ে ক্লাব ফুটবলে আহামরি কিছু যদিও করতে পারেননি মেসি। ২০২২-২৩ মৌসুমের শুরু থেকেই অবশ্য সেখানে আলো ছড়াতে শুরু করেন। একের পর এক করতে থাকেন গোল ও অ্যাসিস্ট। তবে পুরুষ ফুটবল জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক, সাংবাদিক এবং ফিফার ওয়েবসাইটে দেওয়া ফুটবলপ্রেমীদের ভোটে ফের ‘ফিফা দ্যা বেস্ট’ হওয়ার পেছনে জাতীয় দলে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, বিশেষ করে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সই মূল ভূমিকা রেখেছে। সবার ভোটের গড়ে ৫২ পয়েন্ট পেয়েছেন মেসি। ৪৪ পয়েন্ট এমবাপ্পে, ৩৪ পয়েন্ট পেয়েছেন বেনজেমা।
এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য মেসি কৃতজ্ঞতা জানান কোচ-সতীর্থদের কাছে, ‘আজ আমি, দিবু (এমিলিয়ানো মার্তিনেজ) এবং লিওনেল স্কালোনি এখানে আছি। আমরা তাদের (সতীর্থদের) প্রতিনিধিত্ব করছি। তাদের ছাড়া আমরা এখানে উপস্থিত থাকতে পারতাম না। যেমনটা আমার কোচ স্কালোনি বলছিলেন। আমার জন্য পাগলাটে একটা বছর ছিল।’ নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা জানিয়ে মেসি বলেন, ‘আমি আমার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি। অবশেষে সেটি (বিশ্বকাপ) ধরা দিয়েছে। এটা আমার ক্যারিয়ারের সুন্দর জিনিসগুলোর একটি। আমার মনে হয়, সব ফুটবলারই এটার স্বপ্ন দেখে। খুব কম মানুষই এটি অর্জন করতে পারে। আমি সৌভাগ্যবান যে, সেটা করে দেখাতে পেরেছি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, আমি পেরেছি।’ ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার না পেলেও ফিফার বর্ষসেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। সেই ট্রফি হাতে ইনস্টাগ্রামে দুটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘ঘরে এলো আরেকটি ট্রফি। অভিনন্দন লিও মেসি, তুমিই সেরা।’
পুরস্কার ঘোষণার আগে ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলেকে স্মরণ করা হয়। স্মরণ করা হয় গেল বছর মারা যাওয়া আরও ফুটবলারদের। ইনফান্তিনো পেলেকে নিয়ে বলেন, ‘পেলেই ফুটবল। পেলে চিরকালীন।’ তিনবার বিশ্বকাপজয়ী পেলের একটি ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়। পেলেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিফার একটি বিশেষ সম্মাননা ট্রফিও তুলে দেওয়া হয় পেলের স্ত্রীর হাতে। বর্ষসেরা গোলের পুরস্কার ‘পুসকাস অ্যাওয়ার্ড’ জেতেন পোল্যান্ডের এক পায়ের ফুটবল খেলোয়াড় মার্চিন ওলেক্সি। পেছনে ফেলেন মার্শেইয়ের দিমিত্রি পায়েত ও ব্রাজিলের রিচার্লিসনকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের দেয়ালচিত্র যদি করা হয়, সেখানে অ্যাডিলেডের সেই সন্ধ্যার ছবিটা থাকবেই। যেখানে জেমস অ্যান্ডারসনকে নিখুঁত ইয়র্কারে বোল্ড করে ছুটছেন রুবেল হোসেন। তার ওই এক ওভারের কীর্তি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য এনে দিয়েছিল। ২০১৫ আসরে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুখস্মৃতি এখনো বাংলাদেশিদের মনে উজ্জ্বল। সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল যিনি এই সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তার মনে। এখনো সেই মুহূর্ত রুবেলকে শিহরিত করে, কীর্তির আনন্দ সাগরে ভাসায়। আজ থেকে শুরু সিরিজে আবার যখন সামনে ইংল্যান্ড তাই ওই সুখস্মৃতি রোমন্থন না করলেই নয়। শুধু ওই একটি ম্যাচ নয়, ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা ২১ ওয়ানডের মধ্যে জ্বলে থাকা চারটি জয়ই ওয়ানডে সিরিজের আগে সাহস দিচ্ছে তামিম ইকবালদের।
২০১৫ বিশ্বকাপে ১৫ রানের ওই জয়ের আগে ২০১১ বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে জয় এসেছিল ২ উইকেটের। এ দুটি জয়ে আইসিসি আসরে ইংল্যান্ডের সঙ্গে শতভাগ জয়ের সাফল্য ছিল বাংলাদেশের। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০১৯ বিশ্বকাপের হারে অজেয় থাকায় যতি পড়ে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম জয়টি আসে ২০১০ সালে ব্রিস্টলে ৫ রানে। আর সবশেষ জয় ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ৩৪ রানে। সেই জয়গুলোর রেশ টেনে এবার ইংল্যান্ডকে সিরিজে হারানো কতটুকু সম্ভব? রুবেল হোসেনের মতে চ্যালেঞ্জটা বেশি হবে ইংল্যান্ডের দলগত শক্তির কারণে, ‘সত্যি বলতে এখন সাদা বলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ইংল্যান্ড। দলের পারফরম্যান্স বা ক্রিকেটারের দিক থেকে যদি বলেন, এটা মেনে নিতে কোনো দ্বিধা থাকবে না কারও। গত কয়েক বছর ধরে ওরা এই দুই ফরম্যাটে খুব ভালো এবং গোছানো ক্রিকেট খেলছে। তাই এবার চ্যালেঞ্জটা খুব বেশি হবে বাংলাদেশ দলের জন্য।’
অথচ ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ইংল্যান্ডের ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেট শেষ ধরেছিল অনেকে। কিন্তু টেস্টে মনোযোগী ছাত্র ওই ব্যথা ভুলে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মনোযোগ দেয়। তার ফল প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ (২০১৯) ও দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় (২০২২)। ইংল্যান্ডের এই পরিবর্তনটা অ্যাডিলেডের ওই ওভারের (হার) কারণেই কিনা এমন প্রশ্নে রুবেল জানান, ‘‘অবশ্যই ওই ম্যাচের পর ওরা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল। এত বড় দল হিসেবে ওরা সেটা প্রত্যাশা করেনি, ভেবেছিল বিশ্বকাপে আরও এগোবে। না পারা অবশ্যই বড় ধাক্কা ছিল তাদের জন্য। এবং ওই হারের পর ওরা ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পুরো বদলে গেছে ইংলিশরা। এবার যে দলটা বাংলাদেশে এসেছে ওরা ‘দি মোস্ট পাওয়ারফুল’।’’
২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে গ্রুপ পর্বের ওই ম্যাচে দুই উইকেট নেওয়া ওভারটিকে রুবেল নিজে কীভাবে দেখেন। অকপটেই জানালেন তার ক্যারিয়ারের অর্জনগুলোর তালিকায় সবার ওপরে ওভারটি, ‘আমার ক্যারিয়ারের যে কয়টা স্মরণীয় পারফরম্যান্স আছে যেগুলো বাংলাদেশের জয়ে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে যেমন নিউজিল্যান্ডকে ২০১০ সালে হোয়াইটওয়াশ করা বা ইংল্যান্ডের সঙ্গে হ্যাটট্রিক ও ছয় উইকেট আছে, সবগুলোর মধ্যে আমি বিশ্বকাপের ওই ওভারটাকেই এগিয়ে রাখব। এটা আমার জন্য সত্যিই বিশেষ। ওই মুহূর্তটা সবসময়ই আমার চোখে উজ্জ্বল। এটা কখনই ভোলার নয়, যখনই মনে পড়ে নিজের কাছে এতটা ভালো লাগে যে সেটা আমার ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।’
ইংল্যান্ডের সঙ্গে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক এবারের সিরিজে দর্শক। জাতীয় দলে ফেরার লড়াইয়ে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে এই অভিজ্ঞ পেসারকে। তবে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবসময়ই ভালো করা রুবেল মনে করেন তিনি হারিয়ে যাননি। সুযোগ পেলে এখনো বড় দলের সঙ্গে ভালো করার সামর্থ্য তার আছে। সামর্থ্যরে কথা যদি আনতেই হয় তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সিরিজে হারানোর শক্তি ও সম্ভাবনা বাংলাদেশের আছে। বাংলাদেশ এখনো অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে ওয়ানডে সিরিজে হারাতে পারেনি। রুবেলের স্মরণীয় পারফরম্যান্সে গড়া জয়ের স্মৃতি নিয়ে এবার তালিকা থেকে ইংল্যান্ডকে সরানোর পালা।
ক্রিকেটের প্রচলিত বিশ্বাসকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। দেশের মাটিতে উইকেটের সুবিধা নেওয়াটা তার কাছে গেরিলা যুদ্ধের মতো। এই শ্রীলঙ্কান যখন বেড়ে উঠছেন তখন তার দেশে চলছিল গৃহযুদ্ধ। সেনাবাহিনী কর্মকর্তা বাবাকে কাছ থেকে দেখেছেন, দেখেছেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। সেখান থেকেই বুঝে গেছেন, জয়-পরাজয়ই আসল আর ইতিহাস বিজয়ীকেই মনে রাখে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ড্রেসিংরুমে বিভাজন, সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালের বাক্যালাপ বন্ধ এসব ইস্যুতে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে হাথুরুসিংহের সোজাসাপটা উত্তর, ‘সতীর্থদের ভালো বন্ধু হওয়ার দরকার নেই।’
বোমাটা ফাটিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। সাকিব আর তামিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ড্রেসিং রুমে বিভাজন এসব নিয়ে বলার জন্য সময়টা সঠিক কি না এমন প্রশ্নে হাথুরুসিংহের পাল্টা প্রশ্ন, ‘সিরিজ শুরুর আগে এমন প্রশ্ন করার জন্য এটাও কি সঠিক সময়? আমি কি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মানুষ?’ শ্রীলঙ্কান কোচ স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন, কারও ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান দেওয়া তার কাজের অংশ নয়। একই সঙ্গে বলেছেন, ‘আমি এমনও ড্রেসিংরুমের অংশ ছিলাম, যেখানে কারও সঙ্গে কারও বনিবনা হতো না। তারপরও তারা যখন মাঠে নামত, একটা দল হিসেবেই খেলত। কেউ যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলবে তখন এটাই প্রত্যাশিত। জাতীয় দলের সবাইকে যে পরস্পরের ভালো বন্ধু হতে হবে, একসঙ্গে নৈশভোজে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যতক্ষণ না পর্যন্ত এইসব মাঠের খেলায় কোনো প্রভাব না ফেলছে, আমি কোনো সমস্যাই দেখছি না’ ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ শুরুর আগের সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন হাথুরুসিংহে।
ড্রেসিংরুমে বিভাজন দেখেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমি এখানে এসেছি মাত্র দিন সাতেক হয়। আমি এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না। ওরা (বাংলাদেশ ক্রিকেট দল) সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে আর আমার কাজ হচ্ছে ওরা কী করছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা। তারা নিশ্চয়ই কোনো না কোনো প্রক্রিয়ায় সফল হচ্ছে। যদি এই প্রক্রিয়াতেই সাফল্য আসে, তাহলে আমি কিছু করব না। খুব সম্ভবত আমি প্রথম দুটো ম্যাচ দেখব, এরপর আমি আমার মতো সব করব।’
‘সিনিয়র ক্রিকেটাররা ভালো না করলে হাথুরুসিংহে তাদের দলে রাখবে না’, সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন নাজমুল। কোচকে গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে আলাপচারিতায় দেখা গেছে লিটন দাশ, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্তদের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, সচেতন ভাবেই দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের পর সম্ভাব্য যারা নেতৃস্থানীয় হয়ে উঠতে পারেন তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন, ‘আমাদের এখন থেকেই পরবর্তী প্রজন্মের ভেতর নেতৃত্বগুণ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শীর্ষ চার সিনিয়র ক্রিকেটার এরই মধ্যে ১৫-১৭ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে ফেলেছে। তারা তো আরও ১০ বছর খেলবে না। আমাদের পরের প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আমি কিন্তু তাদের বেছে নিইনি। ওরাই কিন্তু ওদের আচরণ দিয়ে, ওদের পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গাটা তৈরি করে নিয়েছে। তারাই নিজেদের এই জায়গার জন্য যোগ্য করে তুলেছে। ড্রেসিংরুমে আচরণে, মাঠের পারফরম্যান্সে তারাই পরবর্তী পর্বের নেতৃত্বের দাবিদার।’
সাকিব আল হাসান অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন সোমবার। সাকিবের পরে যোগ দেওয়াটাও সমস্যা হিসেবে দেখছেন না হাথুরুসিংহে, ‘পৃথিবী জুড়ে এখন এভাবেই খেলা হচ্ছে। প্রতিপক্ষ তো মাত্র দুদিন আগে এলো, তাদেরও তো খেলতে হবে। সাকিবের পারিবারিক সমস্যা ছিল, দীর্ঘ একটা বিমানযাত্রার পর সে দলে যোগ দিয়েছে। আমাদের বলেছে যে সে ঠিক আছে। সে অভিজ্ঞ, সে জানে তার শরীরের কী অবস্থা। আমাকে তার বিচারবোধের ওপর আস্থা রাখতে হবে।’
ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, বিভাজন, দলের প্রতি সাকিবের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন... এমন সব বিষয়ে হাথুরুসিংহে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিলেন, এসব খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে তার মোটেও আগ্রহ নেই। পেশাদার কোচ হিসেবে সবকিছুই তিনি দেখেন নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে। তিনি ভালো করেই জানেন, দল যদি শেষ পর্যন্ত ভালো না করে তাহলে সাকিব-তামিম মানিকজোড় হলে বা সাকিব প্রথম দিন থেকেই দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেও কোনো লাভ হবে না।
ফলোঅন করেও ম্যাচ জয়ের ঘটনা এর আগেও আছে তিনবার। ১ রানেও ম্যাচ জয়ের ঘটনা আছে একটি। তবে ফলোঅন করে সেই টেস্ট ১ রানে জয়ের নতুন রোমাঞ্চের জন্ম দিল নিউজিল্যান্ড।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ২৬৭ রানে কিউইদের বিধ্বস্ত করা ইংল্যান্ড ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে গড়েছিল ৪৩৫ রান। কিউইদের ২০৯ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে নিজেরা ব্যাট না করে স্বাগতিকদের আবার ব্যাটিংয়ে পাঠান বেন স্টোকস। ১৪৯ ওপেনিং পার্টনারশিপ, কেন উইলিয়ামসনের ২৬তম সেঞ্চুরি আর টম ব্লান্ডলের ৯০ রানের ওপর ভর করে ৪৮৩ রান তুলে ২৫৮ রানের টার্গেট দেয় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ইদানীংকার যে পারফরম্যান্স, তাতে এই রান মামুলি মনে হলেও এভারেস্টসময় হয়ে দাঁড়ায়।
৪৮/১ রান নিয়ে শেষ দিনের সকালে ব্যাট করতে নেমে ৩২ রান তুলতেই ৮০/৫-এ পরিণত হয় ইংল্যান্ড। তবে জো রুটের সঙ্গী হয়ে অধিনায়ক বেন স্টোকস জয়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। ৩৩ রান করার পর ১১৬তম বলকে তুলে মারতে গিয়ে ওয়াগনারের শিকার হন স্টোকস। কিছুক্ষণের মধ্যে জো রুটকে ৫ রানের জন্য জোড়া সেঞ্চুরি (আগের ইনিংসে ১৫৩) বঞ্চিত করেন ওয়াগনার। জয় থেকে ৭ রান দূরে আউট হন ৩৫ রান করা বেন ফোকস। জিমি অ্যান্ডারসন একটা চার মারলেও জয় থেকে ২ রান দূরে ওয়াগনারের বলে উইকেটকিপার ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিলে ম্যাচ জয় আর সিরিজ ড্রর উল্লাসে মাতে কিউইরা। দেড়শ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১ রানে ম্যাচ জয়ের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। প্রথমটি হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সেবার অ্যাডিলেড টেস্টে ১৮৬ টার্গেটে খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়া কার্টলি অ্যামব্রোসের বোলিং তোপে ১৮৪তে আটকে যায়।
ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্বের এই একটি ম্যাচই বাকি ছিল। সুপার কাপ, জাতীয় দলের ত্রিদেশীয় সিরিজের কারণে ম্যাচটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মে মাসে। সুপার কাপ আয়োজন ভেস্তে যাওয়ায় আবাহনী-শেখ রাসেলের ম্যাচটি এগিয়ে এনে অনুষ্ঠিত হলো গতকাল। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে খেলতে নামা দুটি দলই এই গ্রুপ থেকে আগেই নাম লিখিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। গ্রুপসেরা নির্ধারণী ম্যাচটি হলো রোমাঞ্চকর। প্রথমে আবাহনী ২-০ গোলে এগিয়ে গেল। এরপর শেখ রাসেল দারুণভাবে কেবল ফিরলই না, একসময় ৩-২ করে ফেলল স্কোরলাইন। আবাহনী অবশ্য শেষভাগে সমতায় ফিরে ম্যাচটাকে নিয়ে গেল টাইব্রেকারে। ৫ শটের সেখানেও ৪-৪ সমতা। এরপর সাডেন ডেথে ৫-৪ গোলে জিতে গ্রুপসেরা হয়েছে আবাহনী।
আবাহনী প্রথমে এগিয়ে যায় ১৬ মিনিটে। ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের নিচু ক্রসে আলতো প্লেসিংয়ে গোল করেন মেহেদী হাসান রয়েল। বিরতির পর ব্যবধান বাড়ায় আবাহনী। ৪৯ মিনিটে রয়েলের পাসে গোল করেন এলিটা কিংসলে। এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে পরপর তিন গোল করে শেখ রাসেল। ৬৬ মিনিটে এমফন উদোহর সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে আবাহনী কিপার শহিদুল আলম সোহেলকে পরাস্ত করেন দীপক রায়। ৭৭ মিনিটে চার্লস দিদিয়ের পেনাল্টি থেকে গোল করে রাসেলকে সমতা এনে দেন। আবাহনী কিপার এমফন উদোহকে রাফ ট্যাকল করলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। ৮৪ মিনিটে এমফন উদোহর কাটব্যাকে পা ছুঁইয়ে রাসেলকে এগিয়ে নেন খালেকুজ্জামান। তবে শেষ মুহূর্তে আবাহনীকে ম্যাচে বাঁচিয়ে রাখেন পিটার নোরাহ। দানিয়েল কলিনদ্রেসের কাটব্যাকে শুরুতে হেড এরপর পা ছুঁইয়ে ৩-৩ করেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। তাতে ম্যাচ গড়ায় ভাগ্য পরীক্ষায়। টাইব্রেকারে প্রথম ৫টি শটের মধ্যে দু’দলই চারটি করে গোল করে। সাডেন ডেথে প্রথম শট নিতে এসে ইয়াসিন খান গোল করতে ব্যর্থ হন। আবাহনীর রেজাউল করিম লক্ষ্যভেদ করে জয় নিশ্চিত করেন।
যুব কাবাডি বিশ্বকাপ জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইরানের উর্মিয়ায় গতকাল বাংলাদেশ ৬৯-৪৩ পয়েন্টে হারিয়েছে থাইল্যান্ডকে। প্রথমার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধেও ধরে রাখে দাপট। প্রথমার্ধে যুবারা ৩৪-১৯ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। দুই অর্ধ মিলিয়ে তিনটি লোনা (প্রতিপক্ষকে অলআউট করা) আদায় করে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে একবার দ্বিতীয়ার্ধে দুইবার থাইল্যান্ডকে অলআউট করে যুবারা। ১২ দলের টুর্নামেন্টে ‘সি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ আজ খেলবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে। ২০১৯ সালে এই প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ।
ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে, তারপরও যেন ভাগ্যটা ফেরানো যাচ্ছিল না। পরাশক্তির তকমাটা খসে যায় গেল এক যুগে। লিগ শিরোপা তাদের কাছে শুধুই মরীচিকা। সাদা-কালোদের কাছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও দূর আকাশের তারায় রূপ নিয়েছিল। সেখান থেকে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন ‘ঘরের ছেলে’ সুলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার টানা পাঁচ মৌসুম ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাঝারি মানের মোহামেডানকে। তার জাদুতে গতকাল ফেডারেশন কাপের মহা-ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়েছে সাদা-কালোরা। এই অর্জন এসেছে অনেক অপেক্ষার পর। তাই তো এই শিরোপাকে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দিয়াবাতেও। বিশ্বাস করেন, এই শিরোপা বদলে দেবে মোহামেডানের চিন্তাধারাকে।
টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের হুল্লোড়ের মধ্যে ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে এক কোনায় বসে দেশে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিয়াবাতে। সেই ফাঁকেই সাংবাদিকদের কাছে জানালেন প্রতিক্রিয়া, ‘পেনাল্টি শুটআউটের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভীষণ কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেছেন এই ট্রফিটি জিততে। তাই আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফাইনালে প্রথমবারের মতো চার গোল করলাম। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ দিয়াবাতে বলেন, ‘৯ বছর পর আমি একা নই, সব খেলোয়াড় মিলে মোহামেডানকে একটা শিরোপা এনে দিয়েছি। বিশ্বাস ছিল ম্যাচে ফিরতে পারলে আমরাই শিরোপা জিতব, সেটাই হয়েছে। আমি এই অর্জন মালিতে থাকা আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মাকে উৎসর্গ করছি।’ শিরোপাটা মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আলফাজ আহমেদের জন্যও বিশেষ অর্জন। ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলেছেন এবং জিতেছেন। তবে এই জয়টাকে আলাদা করে রাখছেন তিনি, ‘আজকের খেলাটা অনেক বড় অর্জন। ব্যাকফুটে থেকে ফিরে আসা, ম্যাচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে। দিয়াবাতে আসাধারণ ফুটবল খেলেছে। মুজাফ্ফারভের হাত ভেঙে দিয়েছিল, ওই অবস্থায়ও সে খেলা চালিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের কমিটম্যান্ট ছিল অসাধারণ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি শিরোপা জিতেছি, এবার কোচ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জিতলাম। তাই শিরোপাটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি আলফাজ। শিষ্যদের শিখিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে পাল্টা জবাব দেওয়ার মন্ত্র, ‘প্রথমার্ধের খেলা শেষে শিষ্যদের বলেছি, তোমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলো। তারা সেটাই করেছে।’
চোটে পড়ে মাঠ ছাড়া গোলকিপার সুজন সতীর্থ বিপুকে টাইব্রেকারে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘মাঠ ছাড়ার এক মিনিটের মধ্যে আবাহনী যখন গোল পরিশোধ করল, তখন ভীষণ খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমরা আর পারব না। তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বিপু। আমি তাই অনেক বেশি খুশি।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ যেন ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনাল! সুলেমান দিয়াবাতে যেন কিলিয়েন এমবাপ্পে। না, ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফরাসি যুবরাজ এমবাপ্পের মতো ট্র্যাজিক হিরো হতে হয়নি দিয়াবাতেকে। হয়েছেন বিজয়ী দলের গর্বিত সেনাপতি। দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান ও আবাহনীর মধ্যে ফেডারেশন কাপের ফাইনালটা হয়ে উঠেছিল এক বাঁক বদলের লড়াই। যতবার আবাহনী এগিয়ে গেছে ততবারই দিয়াবাতে জ্বালিয়েছেন মোহামেডানের আশার প্রদীপ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ৩-৩। অতিরিক্ত সময়ে ৪-৪। আবাহনীর চার গোল চার জনের; কিন্তু মোহামেডানের চারটাই দিয়াবাতের। এরপর টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষার শুরুটাও মালির ফরোয়ার্ডের লক্ষ্যভেদে। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য পরীক্ষাটা ৪-২ গোলে জিতে ৯ বছর পর কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পেল মোহামেডান।
ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে ছিল আবাহনীই। তাদের সামনে প্রথমার্ধে বড্ড অগোছালো মনে হয়েছে আলফাজ শিষ্যদের। মারিও লেমস তুণের সব সেরা তীরদের জড়ো করে একাদশ সাজিয়েছিলেন। যার নেতৃত্ব দেন হাফ-ফিট রাফায়েল আগুস্তো। আক্রমণভাগে তার দুপাশে ছিলেন দানিয়েল কলিনদ্রেস ও তরুণ ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। আর ঠিক ওপরে এমেকা ওগবাহ। আকাশির আক্রমণ ঠেকাতে তখন নাজেহাল সাদা-কালোরা। উপর্যুপরি আক্রমণ থেকে আবাহনীকে ১৬ মিনিটে এগিয়ে নেন ফাহিম। কলিনদ্রেসের কাছ থেকে বল পেয়ে এমেকা ওগবাহ ডিফেন্সচেড়া পাস বাড়ান। চলন্ত বলে ফাহিমের বাঁ পায়ের শট মোহামেডান কিপার সুজন হোসেনের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে জড়ায়। মোহামেডান অসহায়ত্বের সুযোগ ৪৩ মিনিটে কাজে লাগান কোস্টারিকার বিশ্বকাপার কলিনদ্রেস। নিজেদের অর্ধ থেকে হৃদয়ের বাড়ানো বল আয়ত্তে নিয়ে মার্কার হাসান মুরাদকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ান এই তারকা।
বিরতি থেকে মাঠে ফিরে অন্যরকম এক মোহামেডান। আলফাজ তিনটি পরিবর্তন করে মাঠে পাঠান জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার ইমন ও আলমগীর রানাকে। তাতেই গতি পায় সাদা-কালোর আক্রমণ। ৫৬ মিনিটে ২-১ করেন দিয়াবাতে। কামরুলের ক্রস হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডিফেন্ডার আলমগীর মোল্লা বল দিয়ে দেন দিয়াবাতের কাছে; দুর্দান্ত সাইডভলিতে বল জালে জড়ায় দিয়াবাতে। চার মিনিট পর সমতাসূচক গোল করেন তিনি। উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভের জোরালো ভলি আবাহনী কিপার রুখলেও বাঁদিকে জাফর পেয়ে দ্রুত ক্রস ফেলেন গোলমুখে। মার্কারদের ছাপিয়ে দারুণ হেডে সোহেলকে পরাস্ত করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন দিয়াবাতে। ৬৫ মিনিটে এমেকা ওগবাহর হেড পোস্টে লেগে ফিরলে হতাশ হতে হয় আবাহনীকে। পরের মিনিটে ডান দিক থেকে ফাহিমের শট সুজন কোনোমতে সেভ করলেও আলতো ট্যাপে গোল করে আবাহনীর লিড পুনরুদ্ধার করেন এমেকা (৩-২)। তবে ৮৩ মিনিটে কামরুলের কর্নারে দিয়াবাতে হ্যাটট্রিক করে মোহামেডানকে আবার ম্যাচে ফেরান।
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে দুটি অসাধারণ সেভ করেন মোহামেডান কিপার সুজন। ৯৬ মিনিটে রহমতের কর্নার ঘুরে ফিরে রাফায়েলের কাছে এলে তাতে দারুণ শট নেন। তবে সুজন ঝাঁপিয়ে তা রুখে দেন। পরের মিনিটে কলিনদ্রেসের কর্নারে আসাদুজ্জামান বাবলুর হেড ফিস্ট করে বিপদমুক্ত করে মোহামেডানকে ম্যাচে রাখেন সুজন। ১০৬ মিনিটে মোহামেডানকে পেনাল্টি উপহার দেন সোহেল। শাহরিয়ার ইমনের ঠেলে দেওয়া বল ধরতে ছুটছিলেন দিয়াবাতে। তার এক টাচে বলটা চলে যাচ্ছিল গোললাইনের বাইরে। তবে সোহেলের পা ধরে টান দিলে পড়ে যান দিয়াবাতে। পেনাল্টি থেকে সোজাসুজি শটে প্রথমবারের মতো মোহামেডানকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে। এই ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে বিধাতা যে ফাইনালের চিত্রনাট্য লিখেছেন অন্যভাবে। ম্যাচের ১১৬ মিনিটে মোহামেডানের তেকাঠীর আস্থা সুজনকে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। মাঠে এসে অপ্রস্তুত আহসান হাবিব বিপুকে পরের মিনিটেই গোল হজম করতে হয়। রয়্যালের কাছ থেকে আড়াআড়ি পাস পেয়ে বক্সের অনেক বাইরে থেকে ডানপায়ের জোরালো শটে গোল করেন এই ডিফেন্ডার। তাতে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টিতে।
ভাগ্য পরীক্ষায় অবশ্য বিপু মোহামেডানের বিজয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন বিপু। শুরুতেই ঠেকিয়ে দেন রাফায়েলের শট। অন্যদিকে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার দুরাতে টানা ৩ গোল করেন। আবাহনীর হয়ে এমেকা ও ইউসেফ গোল করলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-২। এরপর মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমনের শট সোহেল ঠেকিয়ে দিলে আবাহনীর ফেরার আশা জাগে। তবে বিপু কলিনদ্রেসের শট রুখে দিলে উত্তাল হয়ে ওঠে মোহামেডান গ্যালারি। আর কামরুল হাসান ঠিকঠাক লক্ষ্যভেদ করে অনেক চাওয়ার শিরোপা নিশ্চিত করেন মোহামেডানের।
অভিনেত্রী দর্শনা বণিক আবারও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করবেন। যদিও কলকাতার বেশ কিছু ছবিতে পর পর কাজ করেছেন দর্শনা। তবুও শাকিব খানের সঙ্গে দর্শনার নতুন কাজকে ঘিরে শুরু হয়েছিল নানা রকমের জল্পনা। ওপার বাংলার একের পর এক সিনেমায় সই করে চলেছেন দর্শনা। কিছু দিন আগে অভিনেতা আজাদ আদরের সঙ্গে একটি ছবিতে স্বাক্ষর করেছেন নায়িকা। এরপর আবার শাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন অভিনেত্রী।
সম্প্রতি ‘দিদি নম্বর ১’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশের কাজের পরিবেশ, শাকিবের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন দর্শনা। ইদানীং কি টালিগঞ্জের থেকে ওপার বাংলায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন তিনি? দর্শনার স্পষ্ট জবাব, ‘এখানেও অনেক কাজ করছি। টালিগঞ্জের কাজের জন্যই তো বাইরে বিভিন্ন কাজের সুযোগ আসছে। দুই বাংলাই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশে শাকিবের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে অনেক অভিনেতারই। সেখানে পদ্মা পাড়ের প্রথম ছবিতেই নায়ক হিসেবে পেয়েছেন তাকে। শাকিব প্রসঙ্গে দর্শনা বলেন, ‘খুবই ভালো অভিজ্ঞতা। শাকিব ওখানে এক বিশাল নাম। তবে সেটে তেমনটা কখনো মনে হয়নি।’ তবে নতুন কাজের প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে নারাজ অভিনেত্রী। এই মুহূর্তে কলকাতাতেই রয়েছেন। খুব শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন এমনটাই আভাস দিলেন এই নায়িকা।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।