
দেশের ফুটবলের পোস্টার বয় জামাল ভুঁইয়া। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক সম্প্রতি আর্জেন্টিনার একটি ক্লাবে খেলার প্রস্তাব পেয়েছেন। ম্যারাডোনা-মেসির দেশে গিয়ে খেলতে উন্মুখ জামালের আজ সৌদি আরবে যাওয়ার কথা জাতীয় দলের সঙ্গে তিন জাতি আসরের প্রস্তুতি নিতে। এই ফাঁকে আড্ডায় মজেছিলেন দেশ রূপান্তরের সুদীপ্ত আনন্দ’র সঙ্গে। যেখানে এসেছে আর্জেন্টিনা, জাতীয় দলসহ নানা প্রসঙ্গ ম্যারাডোনা-মেসির দেশে গিয়ে খেলার হাতছানি পেয়েছেন। কেমন লাগছে?
জামাল ভুঁইয়া: ওরা (সোল দা মায়ো) আসলে আমার ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। ক্লাবের মালিক, সভাপতি, শীর্ষ কর্তারা এসে আমার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছে। ওদের এখানে দেখেই বুঝতে পেরেছি, ওরা আমাকে কতটা পেতে চায়। ভালো একটা প্রস্তাবও দিয়েছে। আমি সুযোগটা নিতে চাই। এখন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র থেকে রিলিজ লেটার লাগবে। এটা পেয়ে গেলে মায়োর সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে পারব।
আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগ, ঠিক পুরোপুরি পেশাদার লিগ নয়। এটা একটা শৌখিন লিগ দাবি করেছে, সে দেশেরই একজন কোচ। তো সোল দা মায়ো ক্লাবে খেলার জন্য আপনার এত আগ্রহ কেন?
জামাল: দেখুন, আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগ লিগ বিশ্ব র্যাংকিংয়ে সৌদি প্রো-লিগের চেয়ে ছয় ধাপ এগিয়ে। আর্জেন্টাইন তৃতীয় বিভাগ লিগ ৬০তম, আর সৌদি লিগ, যেখানে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো খেলছে সেটা ৬৬তম। সুতরাং সেই লিগ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অযৌক্তিক। তা ছাড়া ক্লাবটি আমাকে যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা বর্তমান শেখ রাসেলের বেতনের অনেক বেশি। তা ছাড়া আমি তো আগেই বলেছি, সেখানে খেললে আমাদের সবার জন্য একটা দরজা উন্মোচিত হবে। তাই আমি সেখানে খেলতে চাই।
আর্জেন্টিনার মতো ফুটবলপাগল দেশে আগে কোনো বাংলাদেশি ফুটবলারের খেলার সুযোগ হয়নি। আপনি সেখান থেকে খেলার প্রস্তাব পেলেন...
জামাল: এটা কেবল আমার নিজের জন্য নয়, বাংলাদেশের অন্য খেলোয়াড়দের জন্যও অনেক বড় একটা সুযোগ। বাংলাদেশ থেকে একজন খেলোয়াড় আর্জেন্টিনায় গিয়ে খেলছে, এটা দেশের ফুটবলের জন্য বড় ব্যাপার হবে।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরোর ঢাকা সফর করে গেলেন। দূতাবাস উদ্বোধন করলেন, বাফুফেতেও গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে আর্জেন্টাইনদের বাংলাদেশের ফুটবলের ব্যাপারে অনেক আগ্রহ। আপনার কী মনে হয়, এতে বাংলাদেশের ফুটবল লাভবান হবে?
জামাল: দেখুন, গত বছর কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনাকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, সেটা ছিল অবিশ্বাস্য। বাংলাদেশও যে একটি ফুটবলপাগল জাতি সেটা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে বিশ্বকাপে। সারা বিশ্ব দেখেছে বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশিদের উন্মাদনা। বাংলাদেশিদের আর্জেন্টিনার প্রতি সমর্থনের বিষয়টা ফলাও করে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণেই এ দেশে তারা দূতাবাস খুলেছে। দুটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও ফুটবলের মাধ্যমে গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার একটা জার্সি বদলের ছবি তো রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে?
জামাল: (হাসি)। জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয় আমার। ফুটবল নিয়ে তিনি অনেক কথাই বলেছেন। তিনি নিজেও একজন ফুটবলার ছিলেন। খেলতেন আক্রমণভাগে। ফুটবলকে পাগলের মতো ভালোবাসেন। উনি আমাকে বলেছেন, যে করেই হোক, বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় তারা। এটা অবশ্যই ইতিবাচক একটা ব্যাপার। আমি মনে করি আর্জেন্টিনার সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করলে আমাদের দেশের ফুটবলেরও উন্নতি হবে।
এ দেশের মানুষ ফুটবল অনেক ভালোবাসে, সেটা বিশ্বকাপ এলেই বোঝা যায়। অথচ তারা দিনের পর দিন নিজেদের জাতীয় দলকে ভালো খেলতে, সাফল্য পেতে দেখছে না। আপনি এক দশক জাতীয় দলে খেলছেন। অধিনায়ক হিসেবে নিশ্চয় এটা কষ্ট দেয়?
জামাল: গেল দশ বছরে অনেক খেলোয়াড়, অনেক কোচ পরিবর্তন হয়েছে। এখন জাতীয় দল একটা শক্ত অবকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়েছে। এখন বাইরের অনেক চাপ নিয়ে আমাদের খেলতে হয়। সমর্থক, বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি আমাদের জিততে, সাফল্য পেতে দেখতে চায়। এটা কিন্তু আমাদের সামগ্রিক ভাবনায় পরিবর্তন এনেছে। সবাই বুঝতে পেরেছে, একটা শক্তিশালী জাতীয় দল কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুনতে হয়তো অনেক বড় কথা শোনাবে। আমরা যদি আরও একটু ভালো করতে পারি, ঠিক ভারত যেটা করে, সেটা করতে পারি, তাহলে হয়তো তাদের মতো আমরাও র্যাংকিংয়ে ১০০’র মধ্যে ঢুকতে পারব।
২০১৩ থেকে ২০২১ চারটা সাফে খেলেছেন। এ বছরও সাফ আছে। নিশ্চয় আগের অপ্রাপ্তিগুলো ঘোচাতে চাইবেন।
জামাল: গত সাফে আমরা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে শেষ মুহূর্তে নেপালের বিপক্ষে একটা গোল রিসিভ করে ফাইনালে যেতে পারিনি। তবে আমরা যে ভালো ফুটবল খেলেছি, সেটা সবাই বলেছে। এমনকি আমি তো মনে করি ২০১৮ সালে ঘরের সাফেও আমরা দারুণ খেলছিলাম। প্রথম দুই ম্যাচও জিতেছিলাম। তারপরও দুর্ভাগ্যের কারণে সেমিতে যেতে পারিনি। এ বছরটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সামনে তিন জাতি আসর, সাফ, বিশ্বকাপ বাছাই, অলিম্পিক বাছাই ছাড়াও ফিফা উইন্ডো আছে। তাই আমরা এ বছর ভালো করতে পারলে হয়তো র্যাংকিংয়ে আমাদের উন্নতি হবে। কেন যেন মনে হয়, এ বছরটা হয়তো আমাদের হবে।
তার মানে কি সাফ জিতে যাবেন?
জামাল: সাফে ভালো করার স্বপ্ন সবার থাকে। আমরাও গেল দুই আসরে দুর্ভাগ্যের কারণে ভালো করতে পারিনি। সামনে তিন জাতি আসর আছে। সেখানে যদি ভালো করতে পারি, আত্মবিশ্বাসটা বাড়বে নিঃসন্দেহে।
জাতীয় দলের স্কোরিংয়ে অনেক সমস্যা আছে। কী কারণে আমরা গোল করতে পারি না?
জামাল: দেখুন, এদেশের ফরোয়ার্ডরা পর্যাপ্ত গেম টাইম পায় না। কারণ ক্লাবগুলো এই পজিশনেই বেশি বেশি বিদেশি নিয়ে আসে। যার ফলে বিদেশিদের সঙ্গে লড়াই করে ফরোয়ার্ডরা মূল একাদশে নিয়মিত হতে পারছে না। এটা অবশ্যই জাতীয় দলকে ভোগায়। স্থানীয় ফুটবলাররা ঘরোয়া লিগ খেলতে না পারলে আত্মবিশ্বাসটা কোথায় পাবে। গোল করতে পারলেই ফরোয়ার্ডরা ধীরে ধীরে ভয়ডরহীন ফুটবল খেলতে পারে। সেটাই তো হয় না। আসলে আমাদের তৃণমূলে বেশি জোর দিতে হবে। যাতে প্রতিটি পজিশনেই ভালোমানের ফুটবলার পাওয়া যায়। যারা বিদেশিদের সঙ্গে লড়াই করে নিয়মিত খেলতে পারবে।
আপনি ডেনমার্কেও খেলেছেন। এখানেও খেলছেন। আসল পার্থক্যটা কী?
জামাল: মূল পার্থক্য ক্লাবগুলোতে। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর নিজস্ব মাঠ নেই। বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী ও শেখ জামাল বাদে কারওই প্র্যাকটিস মাঠ নেই। এটা ফুটবল এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা। ক্লাবগুলোকে আরও বেশি পেশাদার হয়ে ওঠা প্রয়োজন। তারা অনেক টাকা হয়তো খরচ করছে প্রতি বছর, তবে সেটা কি তারা সঠিকভাবে খরচ করছে? বসুন্ধরা কিংস এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তাদের সভাপতি (ইমরুল হাসান) একটা বড় স্বপ্ন, এএফসি কাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে দলটাকে এগিয়ে নিচ্ছে। আসলে দেশের ফুটবলের উন্নতি করতে অন্যদেরও বসুন্ধরার মতো করে ভাবতে হবে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবালের সহজ স্বীকারোক্তি, ‘ইনিংসের শুরুতেই তিন উইকেট হারানো হারের কারণ তবে এর বাইরেও অনেক কারণ আছে।’
প্রতি হারের পর কারণ-এর তালিকা করতে হয় বাংলাদেশকে। ঠিক সেরকম একটি দিন গেল কাল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩২ রানের বড় হারে ঘরের মাঠে টানা সাত সিরিজ জয়ের রথ থামল বাংলাদেশের। এমন দিনে হারের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকছে লম্বা ইনিংস খেলতে না পারার ব্যর্থতা। টানা দুই ম্যাচে ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটার যেমন ইনিংসটাকে শেষ পর্যন্ত টেনেছেন, সেই কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ। তামিম ইকবাল এ বিষয়টিকেই বড় করে দেখছেন, তবে তার কথা যেমন কাজে সেই প্রতিফলন নেই। কাল তামিম নিজেই নিজের ইনিংসটাকে টেনে নিতে পারেননি। পারেননি সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহও। তাই গত ম্যাচে বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে আটকে না রাখার হতাশা চাপা না দিতেই এবার ব্যাটিংয়ে বাজে দিনের শিকার হতে হলো বাংলাদেশকে।
আগের ম্যাচে জেসন রয় মাত্র ৪ রানে ফিরেছিলেন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কী দারুণ খেললেন দ্বিতীয় ম্যাচে! ১৩২ রানের ইনিংস খেলে থেমেছেন ৩৬তম ওভারে। জেসনের মতো ওপেনিংয়ে নেমে তামিমও জমে গিয়েছিলেন উইকেটে। কিন্তু সেই জমে থাকাটা কাজে লাগাতে পারেননি। ২১তম ওভারে বাজে শটে উইকেট বিলিয়েছেন ৬৫ বলে ৩৫ রান করে। তামিম শুরুর ২৫ রান করেছেন ৩৬ বলে আর পরের ১০ রান করতে লেগেছে ২৯ বল। কখনো ইনিংস তৈরি করতে ব্যাটাররা রানের গতি একটু কমান। তবে সেই কমানো পুষিয়ে না দিলে দল বিপদে পড়ে। ঠিক তাই হয়েছে বাংলাদেশের।
তামিম এ ব্যাপারটিই টেনেছেন সংবাদ সম্মেলনে। তবে কথা আর কাজকে গেল দুই ম্যাচে বাঁধা যায়নি এক সুতোয়। তাই ইংল্যান্ডের দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিয়ান আর বাংলাদেশের খাতা শূন্য। তামিম জানালেন, ‘আমি যেটা নিয়ে বেশি চিন্তিত তা হলো আপনি জলদি আউট হতে পারেন এটা ম্যাচের অংশ। তবে যখন ৩০-৪০ করবেন, ইনিংসের শুরু পাবেন, তখন ওটা বড় করা উচিত। যেটা ইংল্যান্ডের ওরা করেছে। এ ম্যাচে একজন ১৩০ করেছে, আগের ম্যাচে একজন ১২০-এর মতো করেছে। আমার মনে হয় এ জিনিসটা আমাদের ঘাটতি আছে। যেকোনো ব্যাটার জলদি আউট হতে পারে কিন্তু ইনিংস শুরু পেলে এটা বড় করতে হয়, যেটা আমরা পারিনি।’
তামিমের মতো সাকিবও সেট হয়ে বাজে শটে ফিরেছেন ৫৮ রান করে। মাহমুদউল্লাহ ৩২ করে ক্যাচ তুলেছেন বড় শট খেলতে গিয়ে। বারবারই বলা হয় স্পোর্টিং উইকেটে খেলার অভ্যাস তৈরি করার কথা। কারণ বিশ্বকাপে তো আর নিজেদের মতো উইকেট বানানো যাবে না। এ সিরিজে ঠিক সেইরকম উইকেট বানিয়ে আসলে নিজেদের সঠিক অবস্থা বুঝছেন তামিমরা। বিশ্বকাপের বছর তাই এসব নতুন চিন্তা দিচ্ছে বাংলাদেশকে। অধিনায়ক বলেন, ‘কাজ করার তো সবসময়ই কিছু না কিছু থাকে। কোন মুহূর্ত থেকে ওরা কোন মুহূর্তে চলে গেছে। একটা সময় মনে হয়েছিল ওদের ২৬০-এ রাখা যাবে। অথচ ওরা ৩২০ ছাড়িয়ে গেল। যখন স্পিনাররা উইকেট থেকে কিছু পাচ্ছে না, তখন পেসারদের রক্ষণাত্মক হতে হবে। এসব নিয়ে কাজ করার আছে। বিশ্বকাপে যদি সেমিফাইনাল বা ফাইনালে খেলতে চান, তাহলে এসব দিকে সফল হতে হবে।’
নেতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি তামিম ইতিবাচক ব্যাপারগুলোই সামনে এনেছেন, ‘আমরা সাত বছর পর দেশে ওয়ানডে সিরিজ হারলাম। এ রেকর্ডটা ধরে রাখা কিন্তু সহজ কিছু না। গতবারও যখন আমরা ছয়টি সিরিজ জেতার পর হেরেছিলাম তখনো ইংল্যান্ডই ছিল। এবারও ইংল্যান্ড। ওরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল, ওদের সঙ্গে জেতা সহজ কাজ না। হতে পারে ওদের হারানোর জন্য আমাদের আরও ভালো দল হতে হবে।’
ভালো দল হওয়ার লক্ষণটা অবশ্য বাংলাদেশ শিবিরে অনুপস্থিত। প্রতিবারই একই হারের কারণ ফিরে আসা হতাশার। এ অবস্থার উন্নতির জন্য তামিমদের কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে।
ধার হারাচ্ছেন মোস্তাফিজুর রহমান। টেস্ট খেলেন না, ওয়ানডেতেও কমছে ধার। উইকেট পাচ্ছেন না, রানও বিলাচ্ছেন দেদার। হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদরা যেভাবে নিজেদের মেলে ধরছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলার বিস্তর অভিজ্ঞতা নিয়েও মোস্তাফিজ সেভাবে পারছেন না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে হয়েছে মিরপুরে, ফিজের প্রিয় ‘বধ্যভূমি’। অথচ এখনো উইকেটের দেখা পাননি বামহাতি পেসার।
২০২২ সালে মোস্তাফিজ খেলেছেন ১৪টি ওয়ানডে, নিয়েছেন ১৪ উইকেট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ৫ উইকেট আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ৪ উইকেট ছিল তার। প্রতিপক্ষ সবল হলেই মোস্তাফিজের ধার কমে যায়। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে তিন ম্যাচে কোনো উইকেট পাননি, দেশে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ২ উইকেট আর ক্যারিবিয়ান সফরে তিন ম্যাচে ৩ উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথম ম্যাচে আট ওভারে ৪২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য, কাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০ ওভারে ৬৩ রান বিলিয়ে প্রাপ্তির খাতাশূন্য।
বিপিএলের শেষদিকে উইকেট পেলেও চেনা মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও ভাটার টান। যদিও অধিনায়ক তামিম ইকবাল সেটা মানতে নারাজ, ‘এটা বলা ঠিক হবে না যে মোস্তাফিজ থেকে সার্ভিস পাচ্ছি কি না। তবে অবশ্যই আমি ওর থেকে আরও ভালো কিছু চাইব। যখন আমি মাত্র দুজন পেসার নিয়ে খেলব তখন একজন উইকেট টেকারকে পাওয়া আমার জন্য খুব সুবিধার হবে। ওর কিন্তু রক্ষণাত্মক স্কিলটা দারুণ। এর সঙ্গে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতাটা যোগ করতে পারে, তাহলে দারুণ হবে।’
মোস্তাফিজের এমন পারফরম্যান্সের পর একাদশে জায়গাটা নিশ্চিত কি না এমন প্রশ্নে তামিমের উত্তর, ‘অটোচয়েস বলে কোনো কথা নেই, আমি অধিনায়ক তবুও আমি অটোচয়েস না। এটা ঠিক আমাদের অনেক বিশ্বাস তার ওপর। কারণ সে আগেও করেছে। আমি আগেও বলেছি ওর রক্ষণাত্মক স্কিলটা দারুণ, শুধু ওর উইকেটটেকিং স্কিলটা বাড়াতে হবে। আমার ওর ওপর অগাধ বিশ্বাস আছে, অবশ্যই সে ফিরবে।’
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের স্যাম কারান প্রায় একাই ধসিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। এ বামহাতি পেসার শুরুতেই ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছেন ব্যাকফুটে, এরপর শেষে মোস্তাফিজকে আউট করে ইতিটাও টেনেছেন বাংলাদেশের ইনিংসের। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে কারান, খেললেন ২২তম ওয়ানডে। আর মোস্তাফিজের ছিল ৮৪তম।
আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস মোস্তাফিজকে নিয়েছিল ২ কোটি রুপিতে আর পাঞ্জাব কিংস এবার কারানকে নিয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি রুপিতে। এতেই দুজনের পার্থক্যটা স্পষ্ট।
বলের দখল, আক্রমণ, পাস ও সুযোগ তৈরি সব জায়গাতেই বার্সেলোনার চেয়ে এগিয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবু শেষ পর্যন্ত কোপা দেল রে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। জয় পেয়েছে বলার চেয়ে জয় প্রধান প্রতিপক্ষের কাছ থেকে উপহার পেয়েছে বললে সঠিক হবে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের ২৬ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করেন রিয়ালের ডিফেন্ডার এদের মিলিতাও। ওই গোলেই হয় ম্যাচের ফয়সালা।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর ইউরোপা লিগের প্লে-অফে ২৩ ফেব্রুয়ারি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে বাদ পড়েছিল বার্সেলোনা। এর তিন দিন পর লা লিগায় দুর্বল আলমেরিয়ার কাছেও হারতে হয়ে কাতালানদের। তবে এল-ক্লাসিকোতে ভাগ্য জোরে ঠিকই জয় পেয়েছে জাভির শিষ্যরা। ঘরের মাঠে শুরু থেকেই বার্সার ওপর চাপ প্রয়োগ করে রিয়াল। ১২ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের সহায়তায় লক্ষ্যভেদ করেছিলেন করিম বেনজেমা। তবে অফসাইডের কারণে গোল হয়নি। ২৬ মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সা। কেসিয়ের নেওয়া শট থিবো কোর্তোয়া পা দিয়ে ঠেকান, তবে ফিরতি বল রিয়াল ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের পায়ে লেগে জালে জড়ায়। রাফিনহা অফসাইডে থাকায় শুরুতে গোল দেননি রেফারি। তবে তার মুভ বলের দিকে না থাকায় ভিএআরে গোল পেয়ে যায় বার্সা। ৪১ মিনিটে সুযোগ এসেছিল রিয়ালের সামনে। তবে টনি ক্রুসের ক্রসে ঠিকঠাক বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি দানি কারভাহাল। বিরতির পরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল রিয়ালের কাছে। তবে কাতালানদের জমাট ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি তারা। উল্টো ৭২ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেতে পারত জাভির দল। কিয়েসার শট গোল মুখে দাঁড়ানো আনসু ফাতির গায়ে লেগে দিক বদলে পোস্টের বাইরে চলে যায়।
ম্যাচের পর জাভি বলেন, ‘যেভাবে ছেলেরা রক্ষণ সামলেছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট। মাদ্রিদের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা আমরা নষ্ট করেছি, সাধারণত তারা অনেক সুযোগ তৈরি করে। ফলাফল আমাদের জন্য ইতিবাচক, এতে আমি খুশি। তবে বল দখলে রাখতে আরও কাজ করতে হবে আমাদের। আমাদের পরিকল্পনা ছিল লম্বা সময় বল পায়ে রাখা ও বল দখলে রেখেই খেলা, যা পারিনি।’ রিয়ালের পায়ে বল ছিল ৬৫ শতাংশ সময়। জাভি জানালেন রিয়ালই তাদের বাধ্য করেছে রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নিতে। দল জিতলেও জাভির কথায় ছিল প্রতিপক্ষের প্রশংসা, ‘প্রতিপক্ষ বাধ্য করেছে এভাবে খেলতে। বল পায়ে ওরা আমাদের ওপর দাপট দেখিয়েছে। হাই প্রেসিংয়ে তাদের হারানোর পথ বের করতে পারিনি আমরা।’
এই জয়ে কোপা দেল রে’র ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল বার্সেলোনা। ৫ এপ্রিল রাতে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, ‘দল ভালো খেলেছে। বার্সেলোনা এমনভাবে খেলেছে যেন তারা খেলতেই চায়নি। দ্বিতীয় লেগেও যদি আমরা এইভাবে খেলি, তাহলে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে।’
কোপা দেল রে ফিরতি লেগের আগে লা লিগায় ১৯ মার্চ দেখা হবে দু’দলের।
জয়ের লক্ষ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ৭৬ রান। আর স্বাগতিক ভারতের ১০ উইকেট। লক্ষ্য ছোট মনে হলেও ইন্দোর টেস্টের প্রথম তিন ইনিংস যা দেখিয়েছে, অজিদের জন্য সেটা মোটেই সহজ ছিল না। ছোট পুঁজি নিয়েও ইন্দোর টেস্টে জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। কারণ ছিল ইন্দোরের উইকেট। প্রথম দুই দিনে এই পিচে পড়েছে ৩০ উইকেট। তবে এবার স্পিন জালে নিজেরাই ফেঁসে গেছে ভারত। গতকাল তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতেছে ৯ উইকেটে। তাতে ঘুচেছে ভারতের মাটিতে টেস্টে অজিদের জয়হীন থাকার ছয় বছরের আক্ষেপ। এই জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালও নিশ্চিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার।
তৃতীয় দিনের শুরুটা দারুণ করেছিল স্বাগতিকরা। স্কোরবোর্ডে রান তোলার আগেই বিদায় নেন ওপেনার উসমান খাজা। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অফ স্টাম্পের একটি বল রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন খাজা। তবে এরপর দুই অস্ট্রেলীয় ব্যাটার ট্রাভিস হেড ও মারনাস লাবুশেন ঠান্ডা মাথায় দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন। হেড ৫৩ বলে ৪৯ আর লাবুশেন ৫৮ বলে ২৮ রান করেন। প্রথম ইনিংসে ভারত ১০৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়াও ১৯৭ আটকে যায়। ভারতের সামনে সুযোগ ছিল অস্ট্রেলিয়াকে চতুর্থ ইনিংসে চ্যালেঞ্জ জানানোর। তবে নাথান লায়নের ৮ উইকেট শিকারে ১৬৩ রানে গুটিয়ে যায় রোহিত শর্মার দল। দুই ইনিংসে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন নাথান লায়ন।
চার ম্যাচ সিরিজে ভারত ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। শেষ টেস্ট জিতে সিরিজ ড্রয়ের সুযোগ আছে অস্ট্রেলিয়ার সামনে।
আর্জেন্টিনায় লিওনেল মেসির জন্মশহর রোজারিও। কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর রোজারিওর বাড়িতে উদযাপনও করেছেন। তবে বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনার স্থানীয় সময় রাত ৩টায় যে ঘটনা ঘটেছে, এরপর মেসি হয়তো রোজারিও যাওয়ার আগে দু’বার ভাববেন। মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর পরিবারের মালিকানাধীন রোজারিওর সুপার মার্কেটে এলোপাতাড়ি গুলি (১৪) ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে মেসিকে হুমকি দিয়ে একটা চিরকুট রেখে দ্রুত চলে যায় তারা। গুলি করার সময় মার্কেট বন্ধ ছিল। বাইরে থেকে দরজায় গুলি করে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায় দুই ব্যক্তি। যাওয়ার আগে রাস্তায় ফেলা চিরকুটে মেসিকে হুমকি দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘মেসি, আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। (রোজারিওর মেয়র) পাবলো ইয়াভকিন নিজেই মাদক চোরাচালানকারী। সে তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।’ ঘটনার তদন্তে নেমেছে আর্জেন্টিনার পুলিশ।
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।