
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দলবদলের প্রথম দিন খুব গোছালোভাবেই এসেছিল অগ্রণী ব্যাংক। আসর শুরুর আগেই ক্রিকেটারদের গায়ে উঠেছে জার্সি, যেটা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোতেও দেখা যায় না। ৬ বছর পর তারা ফিরেছে প্রিমিয়ার লিগে। প্রত্যাবর্তনটাকে চমক হিসেবেই সীমাবদ্ধ না রেখে প্রিমিয়ার লিগে স্থায়ী হওয়াটাই লক্ষ্য ব্যাংক দলটির।
এখনকার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেও অগ্রণী ব্যাংক নতুন নাম। তবে দুই দশক আগের ঢাকা লিগের খবর যারা রাখেন তাদের কাছে অগ্রণী ব্যাংক পুরনো। প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট এ মর্যাদা পাওয়ার আগে আবাহনী, মোহামেডান, বিমান, ভিক্টোরিয়া, মেরিনার ইয়ংস ক্লাবগুলোর সঙ্গে অগ্রণীও প্রতিযোগিতায় ছিল নিয়মিত। সময়ের সঙ্গে তারা হারিয়ে গিয়েছিল বিমান-ভিক্টোরিয়ার মতো। তাদের নামের ওপর পড়েছে ধুলো। সেই ধুলোর আস্তর সরাতে অগ্রণী ব্যাংক এবার প্রিমিয়ার লিগে পা রেখেছে। ঢাকার ক্রিকেটে এখন প্রাইম ব্যাংক যেমন, ঠিক তেমনি পেশাদারিত্ব নিয়ে নিয়মিত হতে চায় দলটি। ফিরিয়ে আনতে চায় ঢাকার ক্রিকেটে তাদের হারানো অতীত।
প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট এ মর্যাদা পাওয়ার পর অগ্রণী ব্যাংক মাত্র একবারই লিগে খেলেছিল ২০১৭ সালে। এর আগে ৮-৯ বছর ধরে দলটি লিগে ছিল না। প্রথম বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবার বেশ জোর প্রস্তুতি নিয়েই নামছে অগ্রণী ব্যাংক। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ যেমন সাদমান ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, আরাফাত সানি, মার্শাল আইয়ুব, ইলিয়াস সানি, নুরুজ্জামান, শরিফুল্লাহ ও আবু হায়দার রনিরা আছেন। তামিম-সাকিব-মুশফিকদের মতো বড় নাম দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হলেও ভারতে রঞ্জি খেলা ভালোমানের বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে সেই অভাব পূরণ করতে চায় ক্লাবটি। অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ক্রিকেটের দিকে আবার নজর দেওয়ায় বেশ ভালো বাজেট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগের জন্য। তাই ভালো ক্রিকেটার নেওয়া গেছে বলে জানান দলটির ম্যানেজার মো. মামুন উর রশিদ, ‘প্রিমিয়ারে একটা নতুন দল উঠলে প্রথম সমস্যাটা হয় ক্রিকেটার নেওয়া। কারণ ক্রিকেটাররা অন্য দলের সঙ্গে সেট থাকে, তারা দল ছেড়ে নতুনটায় আসতে চায় না। আবার নতুন দল কেমন হয় সে ব্যাপারেও একটা দ্বিধা থাকে। আমরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেমেন্টের বিষয়গুলো জানানোর পর তারা আমাদের বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছে। আপনারা দেখেছেন, আমাদের দলে যে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা আছেন তাদের নিয়ে চ্যাম্পিয়ন লড়াই দেওয়ার সামর্থ্য আছে।’
প্রিমিয়ার লিগ থেকে ছিটকে পড়া এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার পেছনে বাজেট মূল সমস্যা বলে জানান মামুন। তবুও যতটুকু পেয়েছেন তা কাজে লাগিয়ে ২০১৭ প্রিমিয়ার লিগে এসেছিল অগ্রণী ব্যাংক। এরপর আবার হারিয়ে যাওয়া। তবে এবার ভিন্নভাবে শুরু করতে চান মামুন। প্রাইম ব্যাংক যেমন পেশাদার ঠিক তেমনি নিজেরাও ঢাকার ক্রিকেটে জায়গা করে নিতে চান, ‘আমাদের ইচ্ছে আছে প্রাইম ব্যাংক যেমন পেশাদার ওই রকম পেশাদারিত্ব এবং নিয়মিত হওয়ার। একটা বিষয় হলো প্রথম বিভাগ আর প্রিমিয়ার লিগের বাজেট আকাশপাতাল পার্থক্য। ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্টের সবাই তো খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু আমরা যদি প্রথম মৌসুমে ভালো করি, এটা অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের চোখে পড়বে। এরপর তারা অনুধাবন করতে পারবে যে, বড় দল গড়তে আরও বাজেট দরকার হয়। তখন তারা আগ্রহী হবে।’
অগ্রণী ব্যাংকের কোচ আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ১৯৯০ সালের আগে ছিলেন দলটির খেলোয়াড়। খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে এক এখানেই কোচ হিসেবে কাটিয়েছেন প্রায় ২৫ বছর। ২০১৭ সালে আশা করার মতো খুব বেশি কিছু না থাকলেও এবার ভালো কিছুর ভরসা পাচ্ছেন আনোয়ার, ‘২০১৭তে ৮-৯ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ফিরেছিল অগ্রণী ব্যাংক। আমাদের এবার যে দল হয়েছে; সেটা নিয়ে আমি সত্যি আত্মবিশ্বাসী যে, ভালো করবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের সব পারফরমাররা যারা গত জাতীয় লিগে সেঞ্চুরি করেছে বা ভালো উইকেট নিয়েছে, তারা এবার এই দলে আছেন। এদিক থেকেই আমি বিশ্বাস করি যে, দলটি আবার প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত হওয়ার সামর্থ্য রাখে।’
এবার অগ্রণী ব্যাংকের দল গোছাতে ক্রিকেটাররাও বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের একজন বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেওয়া ইলিয়াস সানি। বিশেষ করে ঢাকা বিভাগের ক্রিকেটাররা খেলবেন অগ্রণীতে। সানি জানান, অন্য ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ থাকলেও বিশেষ কিছু কারণে অগ্রণী ব্যাংককে বেছে নিয়েছেন, ‘প্রথম ব্যাপারটি হলো এই দলের কোচ। ওনার জন্য এখানে আসা। দ্বিতীয়ত, অর্থসংক্রান্ত একটা ব্যাপার তো আছেই। আমরা অন্য দলগুলো থেকে অগ্রণী ব্যাংক থেকে এবার ভালো প্রস্তাব পেয়েছি। তৃতীয়ত, আমরা যারা এই দলে নাম লিখিয়েছি, সবাই অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে খেলি। একসঙ্গে বলতে ঢাকা মেট্রো বা ঢাকা বিভাগ যাই বলুন, তো আমাদের ইচ্ছে ছিল এক দল হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলব।’
দল নতুন হলেও অগ্রণী ব্যাংকের ক্রিকেটাররা পুরনো। তাই তাদের স্বপ্নটাও বড়। সানির চোখে এবার তাদের প্রথম লক্ষ্য সুপার লিগে খেলা। এরপর সুপার লিগে বড় দলের সঙ্গে দু-তিনটি জয় দিয়ে ৬ দলের মধ্যে সেরা তিনে থাকতে চায় তারা। তাহলেই তো লিগে নিয়মিত হতে পারবে অগ্রণী ব্যাংক।
মিরপুরে তখন দলবদলের আবহ চলছে। মোহাম্মদ আশরাফুল উপস্থিত, সবাই জেনে গেছে ব্রাদার্স ছেড়ে মোহামেডানে যোগ দিয়েছেন তিনি। একই দলের হয়ে সই করতে চলে এসেছেন সাকিব আল হাসানও। সবার আগ্রহ তখন সাকিবকে নিয়েই। এর মধ্যেই কঠিন কথাটা বলে দিলেন আশরাফুল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমই তার শেষ। এরপর আর এই লিগে থাকছেন না। শুধু তাই নয়, পরে বিসিএল খেলে পুরোপুরিভাবে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেবেন। থামবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম পোস্টার বয়ের ২৩ বছরের পথচলা।
আশরাফুল ও সাকিবের মিল আছে বেশ। এ দুজন বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেট তারকা। সাকিবের আগে ছিলেন আশরাফুল। আবার এ দুজনই দেশের ক্রিকেটের কলঙ্কিত কান্ডের সারথি। ফিক্সিং করে এবং প্রস্তাব গোপন করে শাস্তিও পেয়েছেন দুজনে। কাল আবার একসঙ্গেই এসেছেন দলবদলে। তাই দেখা হয়ে গেল অনেক দিন পর। কোনো একটি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে থাকা আশরাফুল তখন কথা বন্ধ করে হাত এগিয়ে দেন সাকিবকে। দুজন হাসিমুখে করমর্দন করে কুশল বিনিময় করলেন। পরে আরও কিছু কথাও হলো। অল্প সময়ে কথা শেষ হওয়ার নয়। বাকিগুলো তোলা থাকল মোহামেডানের ড্রেসিংরুমের জন্য। এবার এ ক্লাবেই খেলবেন দুজনে। প্রিমিয়ার লিগে আশরাফুলের শেষের সঙ্গী হচ্ছেন সাকিব।
সাকিবের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের পরই আশরাফুল জানান, ‘এই খেলাটাকে খুব ভালোবাসি তাই এতদিন খেলেছি। তবে এবারই আমি প্রিমিয়ার লিগ শেষবার খেলছি। যেহেতু শেষবার চেয়েছিলাম বড় কোনো দলের হয়ে খেলে শেষ করি, যেহেতু আমি মোহামেডানের সমর্থক; তাই এই ক্লাবকেই বেছে নিয়েছি। অবশ্যই চেষ্টা তো থাকবে আবার যেন ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়। আমিও ভালোভাবে শেষ করতে পারি। আমি ক্রিকেটে অনেক ভালো সময় শেষ করেছি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে, কয়েকটা জেনারেশনের সঙ্গে খেলেছি। আকরাম ভাইদের থেকে শুরু করে এখন তরুণ যেমন আফিফ-শান্তদের সঙ্গে খেলছি। এটা অবশ্যই আমার একটু আলাদা ভালো লাগা।’
আশরাফুলের বিদায় নিয়ে মোহামেডান এখনো কিছু পরিকল্পনা করে ওঠেনি। আপাতত দল গোছানোর ব্যস্ততাতেই কাটছে ক্লাব কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম টিটুর। সেখানে বড় প্রশ্ন সাকিবকে কত ম্যাচে পাবেন? টিটু জানালেন, ‘সাকিব বিশ্বমানের ক্রিকেটার। যে দলের সঙ্গে থাকা দলের ভেতরে এবং বাইরের পরিবেশকে আত্মবিশ্বাসী করে। সে তো বিভিন্ন খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, এর মধ্যেই আমরা যতটা পারি তাকে পেতে চাই। আশা করছি সুপার লিগে আমরা তাকে পাব।’
সাকিব ছাড়াও মোহামেডান দলে তারকা আছেন আরও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে শিরোপা জেতানো ইমরুল কায়েস শেখ জামাল ছেড়ে এসেছেন, একই ক্লাব ছেড়ে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গাজী গ্রুপ ছেড়ে এসেছেন পেসার খালেদ আহমেদ। আগে থেকেই আছেন সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ। এই দলে বিদেশি হিসেবে আছেন পাকিস্তানি ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ। এ ছাড়া দুই দিনে মোট ১২৩ ক্রিকেটারের দলবদলে বড় নামের মধ্যে এনামুল হক বিজয় প্রাইম ব্যাংক ছেড়ে আর তাসকিন আহমেদ মোহামেডান ছেড়ে যোগ দিয়েছেন আবাহনীতে। তাদের সঙ্গে দলটিতে নতুন যোগ দিয়েছেন রিশাদ হোসেন, রিপন মন্ডল, রাকিবুল হাসান। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালে আবাহনী ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। এ ছাড়া তরুণ পেসার শফিকুল ইসলামও যোগ দিয়েছেন। অপর বড় দল প্রাইম ব্যাংকে শেখ জামাল থেকে যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। এ ছাড়া বড় সংখ্যায় দলবদল করেছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। দলবদলের শেষদিন তারা নিয়েছে নাদিফ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, সঞ্জিত সাহা, রাহাতুল ফেরদৌস, আনিসুল ইসলাম ইমন ও একেএস স্বাধীনকে। এই আসরে নতুন দল ঢাকা লেপার্ডসে খেলবেন রকিবুল হাসান, সোহরাওয়ার্দী শুভ, জুনায়েদ সিদ্দিকি, পিনাক ঘোষ, সালাউদ্দিন শাকিলরা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটো ম্যাচ জিতে সিরিজটা নিজেদের করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। এর মাধ্যমে আইসিসির ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ অবস্থানটা সুসংহত করে নিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ১৩ দলের সুপার লিগ থেকে স্বাগতিক ভারত এবং শীর্ষ ৭ দল সরাসরি খেলবে এই বছরের শেষে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে। ৭ দল এরই মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার, বাকি একটা জায়গার জন্যই লড়াই দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার। সুযোগের অপেক্ষায় আছে আয়ারল্যান্ডও।
৩ মার্চ আইসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সবশেষ পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী, ৭টি দল এরই মধ্যে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দলগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ইংল্যান্ড (১৫৫ পয়েন্ট), নিউজিল্যান্ড (১৫০ পয়েন্ট), ভারত (১৩৯ পয়েন্ট), পাকিস্তান (১৩০ পয়েন্ট), অস্ট্রেলিয়া (১২০ পয়েন্ট), বাংলাদেশ (১২০ পয়েন্ট) ও আফগানিস্তান (১১৫ পয়েন্ট)। এরপরের দলগুলো হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৮৮ পয়েন্ট), দক্ষিণ আফ্রিকা (৭৮ পয়েন্ট), শ্রীলঙ্কা (৭৭ পয়েন্ট), আয়ারল্যান্ড (৬৮ পয়েন্ট), জিম্বাবুয়ে (৪৫ পয়েন্ট) ও নেদারল্যান্ডস (২৫ পয়েন্ট)।
সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার সুযোগ আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের। কভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে দুটো ওয়ানডে ম্যাচ না খেলেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসে ডাচ ক্রিকেট দল। প্রতিটি জয়ের জন্য ১০ পয়েন্ট, তাই দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে সুযোগ আছে ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল নতুন সূচিতে আয়োজিত হতে যাওয়া সিরিজের বাকি ম্যাচ দুটো জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে যাওয়ার। মার্চের ২৫, ২৮ ও ৩১; নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে খেলবে শ্রীলঙ্কা। এই তিন ম্যাচের তিনটিতে জিতলেই শ্রীলঙ্কা সবশেষ দল হিসেবে জায়গা করে নেবে বিশ্বকাপে। দুটো জিতলেও লাভ হবে না যদি দক্ষিণ আফ্রিকা দুটোই জেতে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে, তখন প্রোটিয়াদের পয়েন্ট হবে ৯৮ আর দুটো জিতলে শ্রীলঙ্কা আটকে যাবে ৯৭ পয়েন্টে। তবে এখানে একটা সম্ভাবনার বা আশঙ্কার জায়গা আছে! কোনো দল যদি সেøা-ওভার রেটের জন্য শাস্তি পায়, তাহলে যত ওভার পেছনে ছিল তত পয়েন্ট কর্তন করা হবে সুপার লিগের পয়েন্ট থেকে। তাই প্রোটিয়ারা যদি মাঠে সেøা-ওভার রেটের শাস্তি পায়, তাহলে সম্ভাবনার জানালা খুলবে শ্রীলঙ্কার।
এই একই আশায় আছে আয়ারল্যান্ডও। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড তিনটি হোম ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে। তিন ম্যাচ জিতলে আর ওদিকে কেউ যদি ওভারের হিসাবে গ-গোল করে ফেলে, তাহলে আয়ারল্যান্ড হয়ে যেতে পারে সেই অষ্টম দল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে সুপার লিগে ৮টি সিরিজে ২৪টি ওয়ানডে খেলা হয়ে গেছে। ৯ জয়, ১৫ হার আর ২ পয়েন্ট জরিমানায় তাদের পয়েন্ট এখন ৮৮। ক্যারিবীয়রা আছে ৮ম অবস্থানে। এরপর তাদের ঠিক নিচের তিনটি দল যদি কোনো ম্যাচই না জেতে, তাহলেই আশা আছে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নদের। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকাকে যদি দুই ম্যাচেই হারায় নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড যদি তিন ম্যাচেই হারায় শ্রীলঙ্কাকে আর বাংলাদেশ যদি সব ম্যাচই জেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, তাহলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে।
ভারতসহ শীর্ষ ৭ দল অর্থাৎ মোট ৮ দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। সুপার লিগের বাকি ৫ দল আর ২০১৯-২৩ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ লিগ টু থেকে উন্নীত ৫ দল, এই ১০ দল মিলে জুন-জুলাইতে বাছাইপর্ব খেলবে জিম্বাবুয়েতে। ১০ দলের এই আসরের শীর্ষ দুই দল খেলবে ভারতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে। এভাবেই পূরণ হবে ১০ দলের বিশ্বকাপের বাকি দুই দল।
বিশ্বকাপের পর চলতি মাসেই ফিফা উইন্ডোতে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা প্রীতিম্যাচ খেলবে পানামা ও কুরাকাওয়ের বিপক্ষে। তার জন্য ৩৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা ২৬ জনই আছেন দলে। এদিকে বিশ্বকাপের পর তিতে চলে গেলে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে ব্রাজিলের দায়িত্বে আছেন র্যামন মেনেজেস। মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেন তিনি। ব্রাজিলের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা ১৫ জন নেই এই দলে। নতুন মুখ ৯ জন।
বিশ্বকাপ জয়ের রেশ কাটেনি আলবিসেলেস্তেদের। তাই তো প্রীতিম্যাচের জন্য বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সবাইকে রেখে আরও বাড়তি খেলোয়াড় নিয়ে দল ঘোষণা করা হয়েছে। আর্জেন্টিনা দলে ডাক পেয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা ১৮ বছরের তরুণ উইঙ্গার আলেহান্দ্রো গারনাচো। আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচ খেলবে ২৩ মার্চ পানামার বিপক্ষে। কুরাকাওয়ের সঙ্গে ২৮ মার্চ (সম্ভাব্য)।
ব্রাজিল ২৫ মার্চ মরক্কোর মুখোমুখি হবে। দলে নেইমারের বাদ পড়ার বিষয়টি অবশ্য আলাদা। অ্যাঙ্কেলের চোটে পড়েছেন। ব্রাজিল দলের চিকিৎসক জানিয়েছেন, মরক্কোর বিপক্ষে প্রীতিম্যাচ খেলতে দলে যোগ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ফিটনেসে থাকবেন না নেইমারের। চ্যাম্পিয়নস লিগে আগামী বুধবার বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগেও নেইমারকে পাওয়া যাবে না। এ ছাড়াও ব্রাজিল দলে নেই অ্যালিসন বেকার, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, রাফিনহা, পেদ্রো, ফাবিনহোরা। থিয়াগো সিলভা ও জেসুসও নেই চোটের কারণে।
আতলেতিকো পারানায়েনেসের হয়ে আলো ছড়ানো ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ভিতর রকিকে ডাকা হয়েছে। বার্সেলোনা ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড রকিকে নিতে আগ্রহী। ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে ‘নতুন রোনালদো’ বলা হয় তাকে। নতুন ৯ জনের ৫ জনই ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ দলের। গত মাসে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ দলকে দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতান কোচ মেনেজেস।
ব্রাজিলের ২৩ জনের দল
গোলকিপার: এদেরসন, মাইকায়েল, ওয়েভারটন। ডিফেন্ডার: আর্থুর, এমারসন রয়্যাল, অ্যালেক্স তেয়াস, রেনান লোদি, ইবানেজ, এদের মিলিতাও, মার্কিনহোস ও রবার্তো রেনান। মিডফিল্ডার: আন্দ্রে, আন্দ্রে সান্তোস, কাসেমিরো, জোয়াও গোমেজ, লুকাস পাকেতা ও রাফায়েল ভেগা। ফরোয়ার্ড: অ্যান্টনি, রিচার্লিসন, রদ্রিগো, রনি, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও ভিতর রকি।
আর্জেন্টিনার ৩৫ জনের দল
গোলকিপার: এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, হেরোনিমো রুলি, ফ্রাঙ্কো আরমানি।
ডিফেন্ডার: নাহুয়েল মোলিনা, গঞ্জালো মন্তিয়েল, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, জার্মান পেজেল্লা, নিকোলাস ওতামেন্দি, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ, মার্কোস অ্যাকুনা, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, হুয়ান ফয়েত, লাওতারো ব্লাঙ্কো, নেহুয়ান পেরেজ।
মিডফিল্ডার: রদ্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, জিওভান্নি লো সেলসো, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, গিদো রদ্রিগেজ, আলেহান্দ্রো গোমেজ, এনজো ফার্নান্দেজ, এজেকিয়েল পালাসিওস, থিয়াগো আলমাদা, ম্যাক্সিমো পেরনি, ফাকুন্দো বুয়োনানত্তি, এমিলিয়ানো বুয়েনদিয়া, ভ্যালেন্টাইন কার্বনি।
ফরোয়ার্ড: লিওনেল মেসি, লাউতারো মার্তিনেজ, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, জুলিয়ান আলভারেজ, পাওলো দিবালা, আনহেল কোরেয়া, হোয়াকিন কোরেয়া ও নিকোলাস গঞ্জালেজ, আলেহান্দ্রো গারনাচো।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গতকাল নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির (২-০) জয়ে চাপে পড়েছিল শীর্ষে থাকা আর্সেনাল। ঘণ্টাখানেক পর গানার্সদের সেই চাপ আরও বাড়ে ঘরের মাঠে বোর্নমাউথের সঙ্গে প্রথম মিনিটেই গোল হজম করলে। ৫৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। তবে হাল ছাড়েনি আর্সেনাল। ৭০ মিনিটে সমতায় ফেরার পর শেষ মুহূর্তের গোলে (৩-২) জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্সেনাল। তাতে ম্যানসিটির (৫৮ পয়েন্ট) চেয়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষে থাকল আর্সেনাল।
রেলিগেশন জোনে থাকা বোর্নমাউথ ফিলিপ বিলিংয়ের গোলে এগিয়ে যায়। মাত্র ৯.১১ সেকেন্ডে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম গোলটি করেন তিনি। ৫৭ মিনিটে মার্কোস সেনেসি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। পাঁচ মিনিট পর আর্সেনাল মিডফিল্ডার থমাস পার্টি এক গোল শোধ দেন। ৭০ মিনিটে সমতা আনেন বদলি হিসেবে নামা রাইট ব্যাক বেন হোয়াইট। ম্যাচের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে কর্নার পায় আর্সেনাল। কর্নার থেকে পাওয়া বলে জয়সূচক গোলটি করেন রেইস নেলসন।
তার আগে ইতিহাদে ম্যাচের ১৫ মিনিটে একক নৈপুণ্যে ম্যানসিটিকে এগিয়ে নেন ফিল ফোডেন। রদ্রির পাস পেয়ে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মধ্য দিয়ে ভেতরে ঢুকে আরও দুজনের চ্যালেঞ্জ সামলে ডান পায়ের কোনাকুনি শট নেন। ডিফেন্ডার সভেন বোটমানের পায়ে লেগে দিক পাল্টে বল জালে জড়ায়। সব প্রতিযোগিতা মিলে শেষ তিন ম্যাচে চারটি গোল করলেন ফোডেন। ৬৭ মিনিটে হালান্ডের পাস থেকে গোল করেন বার্নার্দো সিলভা।
গোল না পেলেও এদিন হলুদ কার্ড দেখেন আর্লিং হালান্ড। মিডফিল্ডার জ্যাক গ্রিলিশকে ফাউল করেন নিউক্যাসলের লেফট উইঙ্গার ড্যান বার্ন। সেই ফাউলকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন হালান্ড ও বার্ন। পরে রেফারি দুজনকেই দেখান হলুদ কার্ড।
ইন্দোর টেস্টে ভারত হেরেছে ৯ উইকেটে। দুই দিন, এক সেশনেই শেষ হয় ম্যাচ। ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামের উইকেটকে তিন ডিমেরিট পয়েন্টও দিয়েছে আইসিসি। তবে এ নিয়ে খ্যাপেছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার। এই কিংবদন্তি বলেন, ‘একটা বিষয় জানতে চাই। নভেম্বর (ডিসেম্বর) মাসে ব্রিসবেনে একটা টেস্ট হয়েছিল। সেই টেস্টও দুদিনের মধ্যেই শেষ হয়েছিল। ওই টেস্টের ম্যাচ রেফারি কে ছিলেন, ব্রিসবেনের উইকেটকে কত ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়েছিল? আমার মনে হয়, তিন ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়াটা ঠিক হয়নি।’
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।