
ইন্দোর টেস্টে ভারত হেরেছে ৯ উইকেটে। দুই দিন, এক সেশনেই শেষ হয় ম্যাচ। ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামের উইকেটকে তিন ডিমেরিট পয়েন্টও দিয়েছে আইসিসি। তবে এ নিয়ে খ্যাপেছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার। এই কিংবদন্তি বলেন, ‘একটা বিষয় জানতে চাই। নভেম্বর (ডিসেম্বর) মাসে ব্রিসবেনে একটা টেস্ট হয়েছিল। সেই টেস্টও দুদিনের মধ্যেই শেষ হয়েছিল। ওই টেস্টের ম্যাচ রেফারি কে ছিলেন, ব্রিসবেনের উইকেটকে কত ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়েছিল? আমার মনে হয়, তিন ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়াটা ঠিক হয়নি।’
মিরপুরে তখন দলবদলের আবহ চলছে। মোহাম্মদ আশরাফুল উপস্থিত, সবাই জেনে গেছে ব্রাদার্স ছেড়ে মোহামেডানে যোগ দিয়েছেন তিনি। একই দলের হয়ে সই করতে চলে এসেছেন সাকিব আল হাসানও। সবার আগ্রহ তখন সাকিবকে নিয়েই। এর মধ্যেই কঠিন কথাটা বলে দিলেন আশরাফুল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমই তার শেষ। এরপর আর এই লিগে থাকছেন না। শুধু তাই নয়, পরে বিসিএল খেলে পুরোপুরিভাবে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেবেন। থামবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম পোস্টার বয়ের ২৩ বছরের পথচলা।
আশরাফুল ও সাকিবের মিল আছে বেশ। এ দুজন বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেট তারকা। সাকিবের আগে ছিলেন আশরাফুল। আবার এ দুজনই দেশের ক্রিকেটের কলঙ্কিত কান্ডের সারথি। ফিক্সিং করে এবং প্রস্তাব গোপন করে শাস্তিও পেয়েছেন দুজনে। কাল আবার একসঙ্গেই এসেছেন দলবদলে। তাই দেখা হয়ে গেল অনেক দিন পর। কোনো একটি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে থাকা আশরাফুল তখন কথা বন্ধ করে হাত এগিয়ে দেন সাকিবকে। দুজন হাসিমুখে করমর্দন করে কুশল বিনিময় করলেন। পরে আরও কিছু কথাও হলো। অল্প সময়ে কথা শেষ হওয়ার নয়। বাকিগুলো তোলা থাকল মোহামেডানের ড্রেসিংরুমের জন্য। এবার এ ক্লাবেই খেলবেন দুজনে। প্রিমিয়ার লিগে আশরাফুলের শেষের সঙ্গী হচ্ছেন সাকিব।
সাকিবের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের পরই আশরাফুল জানান, ‘এই খেলাটাকে খুব ভালোবাসি তাই এতদিন খেলেছি। তবে এবারই আমি প্রিমিয়ার লিগ শেষবার খেলছি। যেহেতু শেষবার চেয়েছিলাম বড় কোনো দলের হয়ে খেলে শেষ করি, যেহেতু আমি মোহামেডানের সমর্থক; তাই এই ক্লাবকেই বেছে নিয়েছি। অবশ্যই চেষ্টা তো থাকবে আবার যেন ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়। আমিও ভালোভাবে শেষ করতে পারি। আমি ক্রিকেটে অনেক ভালো সময় শেষ করেছি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে, কয়েকটা জেনারেশনের সঙ্গে খেলেছি। আকরাম ভাইদের থেকে শুরু করে এখন তরুণ যেমন আফিফ-শান্তদের সঙ্গে খেলছি। এটা অবশ্যই আমার একটু আলাদা ভালো লাগা।’
আশরাফুলের বিদায় নিয়ে মোহামেডান এখনো কিছু পরিকল্পনা করে ওঠেনি। আপাতত দল গোছানোর ব্যস্ততাতেই কাটছে ক্লাব কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম টিটুর। সেখানে বড় প্রশ্ন সাকিবকে কত ম্যাচে পাবেন? টিটু জানালেন, ‘সাকিব বিশ্বমানের ক্রিকেটার। যে দলের সঙ্গে থাকা দলের ভেতরে এবং বাইরের পরিবেশকে আত্মবিশ্বাসী করে। সে তো বিভিন্ন খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, এর মধ্যেই আমরা যতটা পারি তাকে পেতে চাই। আশা করছি সুপার লিগে আমরা তাকে পাব।’
সাকিব ছাড়াও মোহামেডান দলে তারকা আছেন আরও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে শিরোপা জেতানো ইমরুল কায়েস শেখ জামাল ছেড়ে এসেছেন, একই ক্লাব ছেড়ে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গাজী গ্রুপ ছেড়ে এসেছেন পেসার খালেদ আহমেদ। আগে থেকেই আছেন সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ। এই দলে বিদেশি হিসেবে আছেন পাকিস্তানি ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ। এ ছাড়া দুই দিনে মোট ১২৩ ক্রিকেটারের দলবদলে বড় নামের মধ্যে এনামুল হক বিজয় প্রাইম ব্যাংক ছেড়ে আর তাসকিন আহমেদ মোহামেডান ছেড়ে যোগ দিয়েছেন আবাহনীতে। তাদের সঙ্গে দলটিতে নতুন যোগ দিয়েছেন রিশাদ হোসেন, রিপন মন্ডল, রাকিবুল হাসান। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালে আবাহনী ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। এ ছাড়া তরুণ পেসার শফিকুল ইসলামও যোগ দিয়েছেন। অপর বড় দল প্রাইম ব্যাংকে শেখ জামাল থেকে যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। এ ছাড়া বড় সংখ্যায় দলবদল করেছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। দলবদলের শেষদিন তারা নিয়েছে নাদিফ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, সঞ্জিত সাহা, রাহাতুল ফেরদৌস, আনিসুল ইসলাম ইমন ও একেএস স্বাধীনকে। এই আসরে নতুন দল ঢাকা লেপার্ডসে খেলবেন রকিবুল হাসান, সোহরাওয়ার্দী শুভ, জুনায়েদ সিদ্দিকি, পিনাক ঘোষ, সালাউদ্দিন শাকিলরা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটো ম্যাচ জিতে সিরিজটা নিজেদের করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। এর মাধ্যমে আইসিসির ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ অবস্থানটা সুসংহত করে নিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ১৩ দলের সুপার লিগ থেকে স্বাগতিক ভারত এবং শীর্ষ ৭ দল সরাসরি খেলবে এই বছরের শেষে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে। ৭ দল এরই মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার, বাকি একটা জায়গার জন্যই লড়াই দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার। সুযোগের অপেক্ষায় আছে আয়ারল্যান্ডও।
৩ মার্চ আইসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সবশেষ পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী, ৭টি দল এরই মধ্যে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দলগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ইংল্যান্ড (১৫৫ পয়েন্ট), নিউজিল্যান্ড (১৫০ পয়েন্ট), ভারত (১৩৯ পয়েন্ট), পাকিস্তান (১৩০ পয়েন্ট), অস্ট্রেলিয়া (১২০ পয়েন্ট), বাংলাদেশ (১২০ পয়েন্ট) ও আফগানিস্তান (১১৫ পয়েন্ট)। এরপরের দলগুলো হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৮৮ পয়েন্ট), দক্ষিণ আফ্রিকা (৭৮ পয়েন্ট), শ্রীলঙ্কা (৭৭ পয়েন্ট), আয়ারল্যান্ড (৬৮ পয়েন্ট), জিম্বাবুয়ে (৪৫ পয়েন্ট) ও নেদারল্যান্ডস (২৫ পয়েন্ট)।
সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার সুযোগ আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের। কভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে দুটো ওয়ানডে ম্যাচ না খেলেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসে ডাচ ক্রিকেট দল। প্রতিটি জয়ের জন্য ১০ পয়েন্ট, তাই দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে সুযোগ আছে ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল নতুন সূচিতে আয়োজিত হতে যাওয়া সিরিজের বাকি ম্যাচ দুটো জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে যাওয়ার। মার্চের ২৫, ২৮ ও ৩১; নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে খেলবে শ্রীলঙ্কা। এই তিন ম্যাচের তিনটিতে জিতলেই শ্রীলঙ্কা সবশেষ দল হিসেবে জায়গা করে নেবে বিশ্বকাপে। দুটো জিতলেও লাভ হবে না যদি দক্ষিণ আফ্রিকা দুটোই জেতে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে, তখন প্রোটিয়াদের পয়েন্ট হবে ৯৮ আর দুটো জিতলে শ্রীলঙ্কা আটকে যাবে ৯৭ পয়েন্টে। তবে এখানে একটা সম্ভাবনার বা আশঙ্কার জায়গা আছে! কোনো দল যদি সেøা-ওভার রেটের জন্য শাস্তি পায়, তাহলে যত ওভার পেছনে ছিল তত পয়েন্ট কর্তন করা হবে সুপার লিগের পয়েন্ট থেকে। তাই প্রোটিয়ারা যদি মাঠে সেøা-ওভার রেটের শাস্তি পায়, তাহলে সম্ভাবনার জানালা খুলবে শ্রীলঙ্কার।
এই একই আশায় আছে আয়ারল্যান্ডও। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড তিনটি হোম ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে। তিন ম্যাচ জিতলে আর ওদিকে কেউ যদি ওভারের হিসাবে গ-গোল করে ফেলে, তাহলে আয়ারল্যান্ড হয়ে যেতে পারে সেই অষ্টম দল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে সুপার লিগে ৮টি সিরিজে ২৪টি ওয়ানডে খেলা হয়ে গেছে। ৯ জয়, ১৫ হার আর ২ পয়েন্ট জরিমানায় তাদের পয়েন্ট এখন ৮৮। ক্যারিবীয়রা আছে ৮ম অবস্থানে। এরপর তাদের ঠিক নিচের তিনটি দল যদি কোনো ম্যাচই না জেতে, তাহলেই আশা আছে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নদের। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকাকে যদি দুই ম্যাচেই হারায় নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড যদি তিন ম্যাচেই হারায় শ্রীলঙ্কাকে আর বাংলাদেশ যদি সব ম্যাচই জেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, তাহলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে।
ভারতসহ শীর্ষ ৭ দল অর্থাৎ মোট ৮ দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। সুপার লিগের বাকি ৫ দল আর ২০১৯-২৩ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ লিগ টু থেকে উন্নীত ৫ দল, এই ১০ দল মিলে জুন-জুলাইতে বাছাইপর্ব খেলবে জিম্বাবুয়েতে। ১০ দলের এই আসরের শীর্ষ দুই দল খেলবে ভারতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে। এভাবেই পূরণ হবে ১০ দলের বিশ্বকাপের বাকি দুই দল।
বিশ্বকাপের পর চলতি মাসেই ফিফা উইন্ডোতে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা প্রীতিম্যাচ খেলবে পানামা ও কুরাকাওয়ের বিপক্ষে। তার জন্য ৩৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা ২৬ জনই আছেন দলে। এদিকে বিশ্বকাপের পর তিতে চলে গেলে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে ব্রাজিলের দায়িত্বে আছেন র্যামন মেনেজেস। মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেন তিনি। ব্রাজিলের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা ১৫ জন নেই এই দলে। নতুন মুখ ৯ জন।
বিশ্বকাপ জয়ের রেশ কাটেনি আলবিসেলেস্তেদের। তাই তো প্রীতিম্যাচের জন্য বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সবাইকে রেখে আরও বাড়তি খেলোয়াড় নিয়ে দল ঘোষণা করা হয়েছে। আর্জেন্টিনা দলে ডাক পেয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা ১৮ বছরের তরুণ উইঙ্গার আলেহান্দ্রো গারনাচো। আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচ খেলবে ২৩ মার্চ পানামার বিপক্ষে। কুরাকাওয়ের সঙ্গে ২৮ মার্চ (সম্ভাব্য)।
ব্রাজিল ২৫ মার্চ মরক্কোর মুখোমুখি হবে। দলে নেইমারের বাদ পড়ার বিষয়টি অবশ্য আলাদা। অ্যাঙ্কেলের চোটে পড়েছেন। ব্রাজিল দলের চিকিৎসক জানিয়েছেন, মরক্কোর বিপক্ষে প্রীতিম্যাচ খেলতে দলে যোগ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ফিটনেসে থাকবেন না নেইমারের। চ্যাম্পিয়নস লিগে আগামী বুধবার বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগেও নেইমারকে পাওয়া যাবে না। এ ছাড়াও ব্রাজিল দলে নেই অ্যালিসন বেকার, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, রাফিনহা, পেদ্রো, ফাবিনহোরা। থিয়াগো সিলভা ও জেসুসও নেই চোটের কারণে।
আতলেতিকো পারানায়েনেসের হয়ে আলো ছড়ানো ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ভিতর রকিকে ডাকা হয়েছে। বার্সেলোনা ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড রকিকে নিতে আগ্রহী। ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে ‘নতুন রোনালদো’ বলা হয় তাকে। নতুন ৯ জনের ৫ জনই ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ দলের। গত মাসে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ দলকে দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতান কোচ মেনেজেস।
ব্রাজিলের ২৩ জনের দল
গোলকিপার: এদেরসন, মাইকায়েল, ওয়েভারটন। ডিফেন্ডার: আর্থুর, এমারসন রয়্যাল, অ্যালেক্স তেয়াস, রেনান লোদি, ইবানেজ, এদের মিলিতাও, মার্কিনহোস ও রবার্তো রেনান। মিডফিল্ডার: আন্দ্রে, আন্দ্রে সান্তোস, কাসেমিরো, জোয়াও গোমেজ, লুকাস পাকেতা ও রাফায়েল ভেগা। ফরোয়ার্ড: অ্যান্টনি, রিচার্লিসন, রদ্রিগো, রনি, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও ভিতর রকি।
আর্জেন্টিনার ৩৫ জনের দল
গোলকিপার: এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, হেরোনিমো রুলি, ফ্রাঙ্কো আরমানি।
ডিফেন্ডার: নাহুয়েল মোলিনা, গঞ্জালো মন্তিয়েল, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, জার্মান পেজেল্লা, নিকোলাস ওতামেন্দি, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ, মার্কোস অ্যাকুনা, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, হুয়ান ফয়েত, লাওতারো ব্লাঙ্কো, নেহুয়ান পেরেজ।
মিডফিল্ডার: রদ্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, জিওভান্নি লো সেলসো, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, গিদো রদ্রিগেজ, আলেহান্দ্রো গোমেজ, এনজো ফার্নান্দেজ, এজেকিয়েল পালাসিওস, থিয়াগো আলমাদা, ম্যাক্সিমো পেরনি, ফাকুন্দো বুয়োনানত্তি, এমিলিয়ানো বুয়েনদিয়া, ভ্যালেন্টাইন কার্বনি।
ফরোয়ার্ড: লিওনেল মেসি, লাউতারো মার্তিনেজ, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, জুলিয়ান আলভারেজ, পাওলো দিবালা, আনহেল কোরেয়া, হোয়াকিন কোরেয়া ও নিকোলাস গঞ্জালেজ, আলেহান্দ্রো গারনাচো।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দলবদলের প্রথম দিন খুব গোছালোভাবেই এসেছিল অগ্রণী ব্যাংক। আসর শুরুর আগেই ক্রিকেটারদের গায়ে উঠেছে জার্সি, যেটা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোতেও দেখা যায় না। ৬ বছর পর তারা ফিরেছে প্রিমিয়ার লিগে। প্রত্যাবর্তনটাকে চমক হিসেবেই সীমাবদ্ধ না রেখে প্রিমিয়ার লিগে স্থায়ী হওয়াটাই লক্ষ্য ব্যাংক দলটির।
এখনকার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেও অগ্রণী ব্যাংক নতুন নাম। তবে দুই দশক আগের ঢাকা লিগের খবর যারা রাখেন তাদের কাছে অগ্রণী ব্যাংক পুরনো। প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট এ মর্যাদা পাওয়ার আগে আবাহনী, মোহামেডান, বিমান, ভিক্টোরিয়া, মেরিনার ইয়ংস ক্লাবগুলোর সঙ্গে অগ্রণীও প্রতিযোগিতায় ছিল নিয়মিত। সময়ের সঙ্গে তারা হারিয়ে গিয়েছিল বিমান-ভিক্টোরিয়ার মতো। তাদের নামের ওপর পড়েছে ধুলো। সেই ধুলোর আস্তর সরাতে অগ্রণী ব্যাংক এবার প্রিমিয়ার লিগে পা রেখেছে। ঢাকার ক্রিকেটে এখন প্রাইম ব্যাংক যেমন, ঠিক তেমনি পেশাদারিত্ব নিয়ে নিয়মিত হতে চায় দলটি। ফিরিয়ে আনতে চায় ঢাকার ক্রিকেটে তাদের হারানো অতীত।
প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট এ মর্যাদা পাওয়ার পর অগ্রণী ব্যাংক মাত্র একবারই লিগে খেলেছিল ২০১৭ সালে। এর আগে ৮-৯ বছর ধরে দলটি লিগে ছিল না। প্রথম বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবার বেশ জোর প্রস্তুতি নিয়েই নামছে অগ্রণী ব্যাংক। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ যেমন সাদমান ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, আরাফাত সানি, মার্শাল আইয়ুব, ইলিয়াস সানি, নুরুজ্জামান, শরিফুল্লাহ ও আবু হায়দার রনিরা আছেন। তামিম-সাকিব-মুশফিকদের মতো বড় নাম দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হলেও ভারতে রঞ্জি খেলা ভালোমানের বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে সেই অভাব পূরণ করতে চায় ক্লাবটি। অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ক্রিকেটের দিকে আবার নজর দেওয়ায় বেশ ভালো বাজেট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগের জন্য। তাই ভালো ক্রিকেটার নেওয়া গেছে বলে জানান দলটির ম্যানেজার মো. মামুন উর রশিদ, ‘প্রিমিয়ারে একটা নতুন দল উঠলে প্রথম সমস্যাটা হয় ক্রিকেটার নেওয়া। কারণ ক্রিকেটাররা অন্য দলের সঙ্গে সেট থাকে, তারা দল ছেড়ে নতুনটায় আসতে চায় না। আবার নতুন দল কেমন হয় সে ব্যাপারেও একটা দ্বিধা থাকে। আমরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেমেন্টের বিষয়গুলো জানানোর পর তারা আমাদের বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছে। আপনারা দেখেছেন, আমাদের দলে যে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা আছেন তাদের নিয়ে চ্যাম্পিয়ন লড়াই দেওয়ার সামর্থ্য আছে।’
প্রিমিয়ার লিগ থেকে ছিটকে পড়া এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার পেছনে বাজেট মূল সমস্যা বলে জানান মামুন। তবুও যতটুকু পেয়েছেন তা কাজে লাগিয়ে ২০১৭ প্রিমিয়ার লিগে এসেছিল অগ্রণী ব্যাংক। এরপর আবার হারিয়ে যাওয়া। তবে এবার ভিন্নভাবে শুরু করতে চান মামুন। প্রাইম ব্যাংক যেমন পেশাদার ঠিক তেমনি নিজেরাও ঢাকার ক্রিকেটে জায়গা করে নিতে চান, ‘আমাদের ইচ্ছে আছে প্রাইম ব্যাংক যেমন পেশাদার ওই রকম পেশাদারিত্ব এবং নিয়মিত হওয়ার। একটা বিষয় হলো প্রথম বিভাগ আর প্রিমিয়ার লিগের বাজেট আকাশপাতাল পার্থক্য। ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্টের সবাই তো খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু আমরা যদি প্রথম মৌসুমে ভালো করি, এটা অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের চোখে পড়বে। এরপর তারা অনুধাবন করতে পারবে যে, বড় দল গড়তে আরও বাজেট দরকার হয়। তখন তারা আগ্রহী হবে।’
অগ্রণী ব্যাংকের কোচ আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ১৯৯০ সালের আগে ছিলেন দলটির খেলোয়াড়। খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে এক এখানেই কোচ হিসেবে কাটিয়েছেন প্রায় ২৫ বছর। ২০১৭ সালে আশা করার মতো খুব বেশি কিছু না থাকলেও এবার ভালো কিছুর ভরসা পাচ্ছেন আনোয়ার, ‘২০১৭তে ৮-৯ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ফিরেছিল অগ্রণী ব্যাংক। আমাদের এবার যে দল হয়েছে; সেটা নিয়ে আমি সত্যি আত্মবিশ্বাসী যে, ভালো করবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের সব পারফরমাররা যারা গত জাতীয় লিগে সেঞ্চুরি করেছে বা ভালো উইকেট নিয়েছে, তারা এবার এই দলে আছেন। এদিক থেকেই আমি বিশ্বাস করি যে, দলটি আবার প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত হওয়ার সামর্থ্য রাখে।’
এবার অগ্রণী ব্যাংকের দল গোছাতে ক্রিকেটাররাও বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের একজন বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেওয়া ইলিয়াস সানি। বিশেষ করে ঢাকা বিভাগের ক্রিকেটাররা খেলবেন অগ্রণীতে। সানি জানান, অন্য ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ থাকলেও বিশেষ কিছু কারণে অগ্রণী ব্যাংককে বেছে নিয়েছেন, ‘প্রথম ব্যাপারটি হলো এই দলের কোচ। ওনার জন্য এখানে আসা। দ্বিতীয়ত, অর্থসংক্রান্ত একটা ব্যাপার তো আছেই। আমরা অন্য দলগুলো থেকে অগ্রণী ব্যাংক থেকে এবার ভালো প্রস্তাব পেয়েছি। তৃতীয়ত, আমরা যারা এই দলে নাম লিখিয়েছি, সবাই অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে খেলি। একসঙ্গে বলতে ঢাকা মেট্রো বা ঢাকা বিভাগ যাই বলুন, তো আমাদের ইচ্ছে ছিল এক দল হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলব।’
দল নতুন হলেও অগ্রণী ব্যাংকের ক্রিকেটাররা পুরনো। তাই তাদের স্বপ্নটাও বড়। সানির চোখে এবার তাদের প্রথম লক্ষ্য সুপার লিগে খেলা। এরপর সুপার লিগে বড় দলের সঙ্গে দু-তিনটি জয় দিয়ে ৬ দলের মধ্যে সেরা তিনে থাকতে চায় তারা। তাহলেই তো লিগে নিয়মিত হতে পারবে অগ্রণী ব্যাংক।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গতকাল নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির (২-০) জয়ে চাপে পড়েছিল শীর্ষে থাকা আর্সেনাল। ঘণ্টাখানেক পর গানার্সদের সেই চাপ আরও বাড়ে ঘরের মাঠে বোর্নমাউথের সঙ্গে প্রথম মিনিটেই গোল হজম করলে। ৫৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। তবে হাল ছাড়েনি আর্সেনাল। ৭০ মিনিটে সমতায় ফেরার পর শেষ মুহূর্তের গোলে (৩-২) জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্সেনাল। তাতে ম্যানসিটির (৫৮ পয়েন্ট) চেয়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষে থাকল আর্সেনাল।
রেলিগেশন জোনে থাকা বোর্নমাউথ ফিলিপ বিলিংয়ের গোলে এগিয়ে যায়। মাত্র ৯.১১ সেকেন্ডে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম গোলটি করেন তিনি। ৫৭ মিনিটে মার্কোস সেনেসি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। পাঁচ মিনিট পর আর্সেনাল মিডফিল্ডার থমাস পার্টি এক গোল শোধ দেন। ৭০ মিনিটে সমতা আনেন বদলি হিসেবে নামা রাইট ব্যাক বেন হোয়াইট। ম্যাচের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে কর্নার পায় আর্সেনাল। কর্নার থেকে পাওয়া বলে জয়সূচক গোলটি করেন রেইস নেলসন।
তার আগে ইতিহাদে ম্যাচের ১৫ মিনিটে একক নৈপুণ্যে ম্যানসিটিকে এগিয়ে নেন ফিল ফোডেন। রদ্রির পাস পেয়ে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মধ্য দিয়ে ভেতরে ঢুকে আরও দুজনের চ্যালেঞ্জ সামলে ডান পায়ের কোনাকুনি শট নেন। ডিফেন্ডার সভেন বোটমানের পায়ে লেগে দিক পাল্টে বল জালে জড়ায়। সব প্রতিযোগিতা মিলে শেষ তিন ম্যাচে চারটি গোল করলেন ফোডেন। ৬৭ মিনিটে হালান্ডের পাস থেকে গোল করেন বার্নার্দো সিলভা।
গোল না পেলেও এদিন হলুদ কার্ড দেখেন আর্লিং হালান্ড। মিডফিল্ডার জ্যাক গ্রিলিশকে ফাউল করেন নিউক্যাসলের লেফট উইঙ্গার ড্যান বার্ন। সেই ফাউলকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন হালান্ড ও বার্ন। পরে রেফারি দুজনকেই দেখান হলুদ কার্ড।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আজ ৯ জুন (শুক্রবার)। ভাগ্যরেখা অনুযায়ী আপনার আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কী বলছে জ্যোতিষশাস্ত্র? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যারা দিনের শুরুতেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে চান তারা একবার পড়ে নিতে পারেন আজকের রাশিফল।
মেষ : ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল
জাতক এ সপ্তাহে শত বছরের পুরনো কেনো বস্তুর সন্ধান লাভ করবেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি, অলংকার বা কোনো অমূল্য ধর্ম গ্রন্থের সন্ধান পেতে পারেন।
বৃষ : ২১ এপ্রিল-২০ মে
জাতকের এ সময়টায় সন্তান, স্ত্রী অথবা বন্ধু-বান্ধবীর কারণে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। মূল্যবান দ্রব্যাদির বিষয়ে একটু সাবধান হোন।
মিথুন : ২১ মে-২০ জুন
আপনার এ সপ্তাহে অর্থ ভাগ্য ভালো। জাতকের মঙ্গল লগ্ন কোনো প্রতিযোগিতামূলক জীবিকায় প্রলুব্ধ করবে। যেমন, নেভি, আর্মি বা বৈমানিক ইত্যাদি।
কর্কট : ২১ জুন-২০ জুলাই
জাতকের হঠাৎ কোনো দলিল-দস্তাবেজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোভ নয়, মালিককে ফিরিয়ে দেওয়াই মানুষের কাজ।
সিংহ : ২১ জুলাই-২০ আগস্ট
মঙ্গল ও রবির অবস্থানগত কারণে সিংহের ক্রোধ জাগ্রত হতে পারে। মেয়েরা রাগ করে বিপথে যাবেন না। অযথা আপনার অমূল্য বাচ্চাদানি বিনষ্ট হবে।
কন্যা : ২১ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর
জাতকের এ সপ্তাহটা শুভ। তবে অযথা প্রশাসনের বিরুদ্ধ কোনো কাজে জড়াবেন না।
তুলা : ২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর
জাতকের গ্রহগণ সৌভাগ্যের দ্বার মেলে ধরবে। সহসা দয়িতার কারণে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।
বৃশ্চিক : ২৩ অক্টোবর-২০ নভেম্বর
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ইন্দ্রিয় তাড়নায় জাতক অবৈধকর্মে লিপ্ত হতে পারেন। অনুঢ়ারা অর্থোপার্জনে আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা লাভ করবেন।
ধনু : ২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর
জাতকের অর্থ ও বন্ধু জুটবে। বিদেশ ভ্রমণ যোগ বিদ্যমান। তবে ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
মকর : ২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি
জাতকের জন্মকু-ুলীতে শনি কেন্দ্রস্থ হওয়ার ফলে, ক্রোধ বিপদ ডেকে আনবে। দুর্ঘটনায় রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব ক্রোধ সম্বরণ করুন।
কুম্ভ : ২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি
জাতক জীবনে প্রতিপত্তি লাভ করবেন। সৃষ্টিশীল কাজে সুনামের যোগ রয়েছে। রাজদ্বারে স্বীকৃতি পাবেন।
মীন : ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ
জাতক অপরিচিত নারী দ্বারা প্রলোভনের শিকার হতে পারেন। নিজেকে যতই স্মার্ট ভাবুন না কেন, পথিনারী বিবর্জিতা, ভ্রমণে নারীসঙ্গ পরিহার করুন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।