
ম্যাচ শেষ... বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে আনন্দে আত্মহারা সবাই। একটু আগে পুরস্কার বিতরণী শেষে ক্রিকেটারদের আনন্দ উল্লাসও শেষ হয়েছে। বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে বোর্ড পরিচালকদের ঘিরে বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের সামনে নানা লোকের ভিড়। ক্রিকেটাররা আনন্দোল্লাস শেষে ড্রেসিংরুমে চলে গেছেন। সবার মাঝে একটা সফল কার্য সম্পাদন ভাব। অথচ এ উদযাপনে মন নেই দুজনের। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। দ্রুত মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমের কালো সোফায় আলোচনায় বসে গেলেন দুজন। একটু পর তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন অন্য নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। আর সবশেষে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সেই আলোচনায় মিলে গেলেন সাকিব আল হাসান। তাদের আলোচনাটা কী নিয়ে তা অবশ্য জানা গেল না। তবে এমন জয়ের দিনেও তৃপ্তির ঢেকুর না তুলে পরের পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, হতে পারে আয়ারল্যান্ড সিরিজ নিয়ে কোনো আলোচনা! আর এটাই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের নতুন রূপ। অর্জনে নয়, এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী। সাকিব নিজেও সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘যদি ২০২৪ বিশ্বকাপে তাকাতে হয় তাহলে অনেক কাজ বাকি। ইংল্যান্ডকে হারানো সেই কাজের শুরু মাত্র।’
ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং; এক সিরিজে সব বিভাগে টিক দেওয়ার কথা ইদানীং খুব শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশ দলে। তা শুধু ওয়ানডে সিরিজগুলোতে। তাই একদিনের ফরম্যাটে সাফল্যটাও বেশি। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এ সঠিক উত্তরে টিক দেওয়ার কথা ভাবতেও পারছিল না বাংলাদেশ। উল্টো এ ফরম্যাটে বাজে পারফরম্যান্স এড়ানোর লক্ষ্যে সঠিক পথের খোঁজে ছিল। গত এশিয়া কাপে টি-টোয়েন্টিতে অনেক কিছুই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করে বাংলাদেশ। সাকিব আরেক দফা নেতৃত্বে ফেরেন ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই। টি-টোয়েন্টির মানসিকতা বদলের কথাটা সেই মেয়াদে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন সাকিব। তখনই সবার কাছে একটু সময় নিয়েছিলেন ফল আনার ব্যাপারে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় দিয়ে সেই লক্ষ্যে একটু এগিয়েছেনও। আর কাল ইংল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ। সাকিব জানালেন সিরিজ শুরুর আগে ভালো খেলার প্রক্রিয়ায় থাকার চেষ্টা কীভাবে তাদের সফলতা এনে দিয়েছে, ‘নাহ, (সিরিজ জয়ের চিন্তা) ওভাবে ছিল না। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে। যেটা আমাদের বিশেষত টি-টোয়েন্টিতে যেখানে ২-৪-১০-১৫-২০ পার্থক্য করে দেয়, ওই জায়গাতে অনেক বড় টিক মার্ক দিয়েছি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে দলের বিপক্ষে এতটা সফল সত্যিই দারুণ।’
দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড... সেরা দুটি দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই সাফল্য নিয়ে বিসিবির সবাই খুব স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ সাফল্য কোনো কাজেই আসেনি। পরে ওই দুটি সিরিজে তৈরি পিচ নিয়ে সমালোচনা হয় অনেক। সাকিবকে ওই সিরিজগুলোর সঙ্গে এবারের সিরিজের পার্থক্য করতে বললে সসম্মানেই এড়িয়ে যান। সামনে আনলেন ভালো ফল আনার প্রক্রিয়ার কথা, ‘আসলে তুলনা করতে চাই না কোনো সিরিজের সঙ্গে কোনো সিরিজ। প্রতিটি ম্যাচ জেতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে খেলে জিতেছি, বিশেষত টি-টোয়েন্টিতে খুব বেশি সময় আমরা এমন সফল হইনি। ওদিক থেকে আমরা সন্তুষ্ট। যেভাবে খেলেছি, যে অ্যাপ্রোচ নিয়ে খেলেছি এটা একটা তৃপ্তির জায়গা ছিল। এটা হয়তো গত এশিয়া কাপ থেকে শুরু হয়েছে। আসলে ফল আসতে একটু সময় লাগে।’
সাকিব এই দলকে দারুণ সফল বলছেন। তিন বিভাগেই এত ভালো পারফর্ম করবে তা ভাবেননি স্বয়ং অধিনায়ক। তার মতে, এটা সফল হয়েছে বিপিএলের খুব কাছাকাছি সিরিজটি হওয়ায়। দলে নতুন সুযোগ পাওয়ারা ফর্মে ছিল, সেই ফর্মটাই তারা টেনে এনেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আর বিশ্বকাপে বড় দলের বিপক্ষে ভালো করা ও দুই জয় সাকিবদের বদলে দিয়েছে বলে জানান। বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি নিয়ে যে সন্দেহ নিজেদের মধ্যে ছিল তা কেটেছে ওই আসরের পারফরম্যান্সে। যে বদলটা সাকিবের সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে তা হলো বোলিং। বললেন, ‘আমাদের বোলিং ইউনিটটা এ সিরিজে ভালো ছিল। আমরা ছয়জন বোলার নিয়ে খেলেছি। এ সাহসটা আগে দেখাতে পারতাম না। আমরা আটজন ব্যাটার নিয়ে খেলতাম। এটা হলে কী হয়... একজন বোলার সবসময় কম হয়। আর টি-টোয়েন্টিতে যেহেতু বোলাররাই ম্যাচ জেতায়। এ সিরিজে আমরা বেশি বোলার নিয়ে সেই সুবিধাটা পেয়েছি। বিশ্বকাপের আগে আমাদের আরও অনেক কিছুই টিউনিং করতে হবে, যদি আমি পরবর্তী বিশ্বকাপের কথা ভাবি, তাহলে বলব আমাদের শুরুটা অনেক ভালো হয়েছে।’ এ ছাড়া সাকিবের চোখে সবচেয়ে সেরা ছিল ফিল্ডিং। অধিনায়ক জানালেন, একটা সময় এই দল এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দলে পরিণত হবে।
দল নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। দল নির্বাচন করে সিরিজের পর এই প্রথম খুব স্বস্তিতে আছেন। যে পজিশনে যে ক্রিকেটার নিয়েছেন সবাই মাঠে পারফর্ম করেছেন। দেশ রূপান্তরকে তাই স্বস্তির কথা জানিয়ে বলেন, ‘এটা সত্যি বলতে তৃপ্তিদায়ক। ইংল্যান্ড কিন্তু খুব কঠিন দল ছিল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। ওদের বিপক্ষে ওরা সবাই একসঙ্গে ভালো করবে। নিজেদের জায়গায় এতটা ভালোভাবে জ¦লে উঠবে এটা চিন্তা করিনি। এতটা আশা করিনি সত্যি বলতে। আমরা যখন দল বাছাই করি, একটু ভাবি যে, ওই ক্রিকেটাররা হয়তো প্রথম ম্যাচেই ভালো করবে না। কিন্তু ওরা এ সিরিজে সব জায়গায় ভালো করেছে। যখন এরকম কিছু হয় তখন বাড়তি ভালোলাগা কাজ করে অবশ্যই।’
প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে বেন ডাকেট শিকার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমানের। গতকাল ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোরার ডাভিড মালানকে আউট করে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এ ফরম্যাটে ১০০ উইকেট পূর্ণ করলেন। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে একটা জায়গায় সাকিবের চেয়ে এগিয়ে মোস্তাফিজ। সাকিবের ১০০ উইকেট পেতে লেগেছিল ৮৪ ম্যাচ, মোস্তাফিজ ল্যান্ডমার্ক ছুঁলেন তিন ম্যাচ কম খেলেই। সাকিবের লেগেছিল ১৪ বছর ২৮৪ দিন। কাটার মাস্টার মাইলফলকটা স্পর্শ করলেন মাত্র আট বছরেই। ২০১৫ সালে এই মিরপুরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মোস্তাফিজের। প্রথম উইকেটটাও সারা জীবন মনে রাখার মতো শহিদ আফ্রিদিকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে শুরু হয়েছিল মোস্তাফিজের। পরে মোহাম্মদ হাফিজকে এলবিডব্লিউ করেন। ৩৩ ম্যাচেই উইকেটের ফিফটি করেছিলেন তিনি। পরের ৫০ উইকেট নিতে লাগল ৪৮ ম্যাচ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পাওয়া মাত্র ষষ্ঠ বোলার মোস্তাফিজ। এ তালিকায় সবার ওপরের নামটা নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদির ১৩৪ উইকেট। ১৩১ উইকেট নিয়ে সাকিব দুই নম্বরে। আফগানিস্তানের রাশিদ খান ১২৬, নিউজিল্যান্ডের ইশ সোধি ১১৪ ও শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা ১০৭ উইকেট নিয়েছেন।
শিরোনাম দেখে আবার ভুল করবেন না। নাহ, ফুটবলের মেসির আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ছেলেখেলা করেনি বাংলাদেশ। যে খেলাটায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার চেয়ে যোজন এগিয়ে, সেই কাবাডিতেই কাল আধিপত্য বিস্তার করে জিতেছে বাংলাদেশ। শহীদ নূর হোসেন জাতীয় ভলিবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিন বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে স্বাগতিক বাংলাদেশ ৭২-২৩ পয়েন্টে হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। পোল্যান্ডকে উড়িয়ে শুরু করা বাংলাদেশকে অসাধারণ জয় এনে দিতে বড় ভূমিকা ছিল মিজানুর রহমানের।
ম্যাচের প্রথম থেকেই আর্জেন্টিনার ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে সাজুরাম গয়াতের শিষ্যরা। প্রথম রেইডেই বোনাস থেকে ১ পয়েন্ট এনে দেন অধিনায়ক তুহিন তরফদার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্বাগতিকদের। একে একে ৮ পয়েন্ট তুলে নেন তারা। খেলা শুরুর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রথম আর্জেন্টিনাকে অলআউট করে গত দুবারের চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমার্ধ শেষে বাংলাদেশ চারবার আর্জেন্টিনাকে অলআউট করে ৪৪-৮ পয়েন্টে এগিয়ে যায়। বিরতির পর আধিপত্য বজায় রেখে খেলতে থাকেন তুহিন তরফদাররা। খেলা শেষ হওয়ার ১২ মিনিট আগেও একটি লোনা পায় বাংলাদেশ। খেলা শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে ষষ্ঠ লোনার মুখ দেখে বাংলাদেশ।
ম্যাচসেরা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আর্জেন্টিনা দলকে অনেক ধন্যবাদ বাংলাদেশে আসার জন্য। দলটা আজকে অনেক ভালো খেলেছে। আমরা সবাই অনেক মন খুলে খেলতে পেরেছি। ফুটবলে আমি মেসির ভক্ত, আর্জেন্টিনার অনুসারী। মনেপ্রাণে এই দেশটিকে অনেক সমর্থন করি। তবে দেশের প্রসঙ্গে এলে তো আর আর্জেন্টিনাকে ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রথমে আমাদের দেশ। দেশকে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর জন্য আমরা যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত আছি।’ এ আসরের সেরা দুটি দল কাবাডি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। মিজানুর বলেন, ‘এ টুর্নামেন্ট মূলত বিশ্বকাপের কোয়ালিফাই করার জন্য। ১২ দলের মধ্যে শীর্ষ দুটি দল কোয়ালিফাই করবে বিশ্বকাপ কাবাডির জন্য। আমরা যেন এ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারি, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’
আর্জেন্টিনার অধিনায়ক রাফায়েল ডি জিউস আকেভেদো করোলেন বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। ফলে ম্যাচে বড় ব্যবধানেই হেরেছি। যোগ্য দল হিসেবেই বাংলাদেশ জিতেছে। তাদের কাতারে আসতে হলে আমরাদের আরও অনেক বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। তবে বাংলাদেশে আসতে পেরে এবং খেলতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। আমাদের দলের সব খেলোয়াড়ই তেমন অভিজ্ঞ নয়। আমি নিজেও কাবাডির পাশাপাশি তায়কোয়ান্দো খেলি। জানি বাংলাদেশের প্রচুর সমর্থক আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলকে সমর্থন করে। আমরা জানি বিশ্বকাপের সময় এ দেশে প্রচুর আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ে। বিষয়টা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আশা করি ফুটবলেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশের ভারতীয় কোচ সাজুরাম গয়াত বলেন, ‘নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলেছে বাংলাদেশ। আর্জেন্টিনার দু-একজন ভালো খেলেছে। তবে আমাদের পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ নেপাল ভালো দল। কাজেই আমাদের সেভাবেই খেলতে হবে।’ আর্জেন্টিনা কোচ ও সে দেশের কাবাডি ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রিকার্দো আলবার্তো আকুনা বড় হারের পরও হতাশ নন, ‘আগেই বলেছিলাম আর্জেন্টিনা দল অনভিজ্ঞ। তাই আমার ছেলেরা তাদের যথাসাধ্য অনুযায়ী খেলেছে। আমাদের লক্ষ্য অন্তত একটি ম্যাচে জয়। সেই লক্ষ্যেই আমরা পরের ম্যাচে খেলব।’
বাংলাদেশ আগামীকাল তৃতীয় ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে যারা গতকাল ইরাকের কাছে হেরেছে। দিনের অপর খেলায় ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়াকে ও থাইল্যান্ড শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ এক পা দিয়েই রেখেছে বলা যায়। তিন গোলে এগিয়ে থেকে আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লিভারপুলের সঙ্গে শেষ ষোলোর ফিরতে লেগ খেলতে নামবে তারা। সবশেষ ৭ ম্যাচে রিয়ালের সঙ্গে জয়ের দেখা নেই যাদের, সেই লিভারপুলের গতবারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আশা করাটা কঠিনই। গত মৌসুমের ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়েই শিরোপা জিতেছিল রিয়াল।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৬ মার্চ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৭-০তে বিধ্বস্ত করেছিল লিভারপুল। তবে পরের ম্যাচেই ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে মাটিতে নামিয়ে আনে বোর্নমাউথ (১-০)। আজ যদি জিতেও লিভারপুলকে কোয়ার্টারে যেতে জিততে হবে চার গোলের ব্যবধানে।
রিয়াল সবশেষ লিগ ম্যাচে এস্পনিওলের সঙ্গে জিতেছে ৩-১-এ। ঘরের মাঠে সবশেষ রিয়াল হেরেছে বার্সেলোনার বিপক্ষে কোপা দেল রের সেমিতে ০-১ গোলে। আরও এক পরিসংখ্যানে স্বস্তি পেতে পারেন লস ব্লাঙ্কোস সমর্থকরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ২৭ বারের হিসাবে প্রতিপক্ষের মাঠে জয় পেলে রিয়াল পরের পর্বে গেছে ২৬ বার। একমাত্র ২০১৮-১৯ আসরের শেষ ষোলোতে এরিক টেন হাগের আয়াক্সের বিপক্ষে অ্যাওয়েতে ২-১ গোলে জয় পেয়েও দ্বিতীয় লেগে হেরেছিল ১-৪ গোলে। আজও যদি কার্লো আনচেলত্তির দল ৪-১-এ হারে লিভারপুলের কাছে, তবে দুই লেগ মিলে ফল হবে সমান ৬-৬ গোল। তখন অতিরিক্ত সময়ে, টাইব্রেকারে গড়াবে খেলা।
তবে রিয়ালকে ৪-০ গোলে হারানোর অতীত আছে লিভারপুলের। ২০০৮-০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে এমন জয় পেয়েছিল অলরেডরা। সেবার প্রথম লেগে রিয়ালের মাঠেও (১-০) জয় পেয়েছিল লিভারপুল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০ বারের দেখায় ৬ বার জিতেছে রিয়াল, লিভারপুলের জয় ৩টি, ড্র ১ ম্যাচ।
আজ রাতে অপর ম্যাচে নাপোলি ২-০ গোলে এগিয়ে ঘরের মাঠে খেলবে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে।
স্মরণীয় ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ হলো মাত্র। দুদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক সিরিজের শুরু হবে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে কালই সিলেটে যাচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এর মধ্যেই ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা আসরও মাঠে গড়াচ্ছে আজ থেকে। লিস্ট ‘এ’ মর্যাদার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সপ্তম আসর শুরু হচ্ছে আজ থেকে। প্রথম দিনই মাঠে নামছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব। মিরপুর স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ নবাগত ঢাকা লিওপার্ডস। ফতুল্লায় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ মুখোমুখি অপর নবাগত অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের। আর বিকেএসপিতে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে লড়বে সিটি ক্লাব। মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই প্রাইম ব্যাংকের জার্সিতে নামছেন তামিম ইকবাল। এই ক্লাবের জার্সিতে নামছেন মুশফিকুর রহিমও।
আন্তর্জাতিক ম্যাচের পরদিনই প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ায় ক্লাবগুলো বিপাকে। বড় অঙ্কে দলে ভেড়ানো জাতীয় দলের তারকাদের চাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ম্যাচের পরদিন বিশ্রামের ব্যাপার থাকে। তবুও ক্লাবের হয়ে খেলাটা বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বিসিবি। কাল বেলা পৌনে ১১টায় বাংলাদেশ ওয়ানডে দল সিলেটে রওনা হবে। এর মাঝে আজকের এক দিনে ক্রিকেটারদের বিশ্রাম বাদ দিয়ে ক্লাবের খেলায় নামাটা কঠিন। তবে আর কেউ না নামলেও নামছেন ওয়ানডে দলের দুই সদস্য তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। দেশ রূপান্তরকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন প্রাইম ব্যাংকের কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। বেশ আক্ষেপের সুরেই বলেন, ‘ওদের রাজি করিয়েই তো কোনো রকমে ১১ জন মিলিয়েছি। আমাদের দলের ৬ ক্রিকেটার নেই। কী যে অবস্থা, কী বলব। মোস্তাফিজকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, ম্যাচের পরদিন সে ক্লান্তির কারণে খেলতে পারবে না। জোরও করতে পারি না। আমাদের শরিফুল ইসলাম, রেজাউর রহমান রাজা, মোস্তাফিজ তিনজন নেই। শুধু রুবেল হোসেন আছে, ওর সঙ্গে অপর পেসার একজনকে ম্যানেজ করেছি। শেখ মাহেদী ইনজুরিতে। এখন কী করব, খেলতে তো হবে।’
২০১৪-১৫ মৌসুমে একবারই শিরোপা জেতা প্রাইম ব্যাংক কোনো রকমে দল গড়লেও প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ একেবারে অনভিজ্ঞ। সিটি ক্লাবে আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলা ক্রিকেটার থাকলেও নামী তারকা নেই একজনও। তাই দ্বিতীয় শিরোপা অভিযান সহজ প্রতিপক্ষ দিয়ে শুরু করবে বড় দল প্রাইম ব্যাংক।
ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ায় আগামীকাল মোহামেডানের হয়ে মাঠে নামছেন মাহমুদউল্লাহ। জাতীয় দলের ব্যস্ততা তার আপাতত নেই।
ইমরুল কায়েসকে ছাড়া চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে খেলবে রকিবুল হাসান-সোহরাওয়ার্দি শুভদের লিওপার্ডসের বিপক্ষে। ২০১৩-১৪ আসরে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর গতবারই এই আসরে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় শেখ জামাল। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ প্রথম ম্যাচে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে না-ও পেতে পারে। দুবাইয়ে ছুটি কাটাচ্ছিলেন তিনি। তার জায়গায় জহুরুল-সাদমানদের বিপক্ষে কে নেতৃত্ব দেবেন তা আজ জানা যাবে।
খেলা ছেড়েছেন তিন বছর। তবুও বোলিংয়ে ধার কমেনি আবদুর রাজ্জাকের। এখন বলে টার্ন করাচ্ছেন, উইকেটও নিচ্ছেন। কাতারে লিজেন্ডস ক্রিকেট লিগে ৪০ বছরেও তাক লাগিয়ে দিলেন বল হাতে। তার নৈপুণ্যে দলও জিতেছে। ক্রিকেট সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবার লিজেন্ডস ক্রিকেট লিগ আয়োজন হচ্ছে কাতারে। সেখানে সোমবার রাতে এশিয়া লায়নসের হয়ে মাঠে নামেন রাজ্জাক। বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচ ১০ ওভারে নামলে ওয়ার্ল্ড জায়ান্টসের বিপক্ষে দুই ওভার বল করেন। তাতে একটি মেডেনসহ ২ উইকেট নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৭৯ উইকেটশিকারি। এক ওভারেই শেন ওয়াটসনকে ৩ রানে ও রিকার্ডো পাওয়েলকে শূন্যতে ফেরান। ম্যাচে লায়নস ৩৫ রানে জিতেছে। আগে ব্যাট করে মিসবাহ উল হকের ১৯ বলে ৪৪ রানে ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৯ রান তোলে এশিয়া। জবাবে ৫ উইকেটে ৬৪ রানে থামে জায়ান্টস। আগের ম্যাচে ভারত মহারাজাসদের সঙ্গে খেললেও বল করার সুযোগ হয়নি রাজ্জাকের।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।