
স্মরণীয় ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ হলো মাত্র। দুদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক সিরিজের শুরু হবে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে কালই সিলেটে যাচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এর মধ্যেই ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা আসরও মাঠে গড়াচ্ছে আজ থেকে। লিস্ট ‘এ’ মর্যাদার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সপ্তম আসর শুরু হচ্ছে আজ থেকে। প্রথম দিনই মাঠে নামছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব। মিরপুর স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ নবাগত ঢাকা লিওপার্ডস। ফতুল্লায় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ মুখোমুখি অপর নবাগত অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের। আর বিকেএসপিতে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে লড়বে সিটি ক্লাব। মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই প্রাইম ব্যাংকের জার্সিতে নামছেন তামিম ইকবাল। এই ক্লাবের জার্সিতে নামছেন মুশফিকুর রহিমও।
আন্তর্জাতিক ম্যাচের পরদিনই প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ায় ক্লাবগুলো বিপাকে। বড় অঙ্কে দলে ভেড়ানো জাতীয় দলের তারকাদের চাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ম্যাচের পরদিন বিশ্রামের ব্যাপার থাকে। তবুও ক্লাবের হয়ে খেলাটা বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বিসিবি। কাল বেলা পৌনে ১১টায় বাংলাদেশ ওয়ানডে দল সিলেটে রওনা হবে। এর মাঝে আজকের এক দিনে ক্রিকেটারদের বিশ্রাম বাদ দিয়ে ক্লাবের খেলায় নামাটা কঠিন। তবে আর কেউ না নামলেও নামছেন ওয়ানডে দলের দুই সদস্য তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। দেশ রূপান্তরকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন প্রাইম ব্যাংকের কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। বেশ আক্ষেপের সুরেই বলেন, ‘ওদের রাজি করিয়েই তো কোনো রকমে ১১ জন মিলিয়েছি। আমাদের দলের ৬ ক্রিকেটার নেই। কী যে অবস্থা, কী বলব। মোস্তাফিজকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, ম্যাচের পরদিন সে ক্লান্তির কারণে খেলতে পারবে না। জোরও করতে পারি না। আমাদের শরিফুল ইসলাম, রেজাউর রহমান রাজা, মোস্তাফিজ তিনজন নেই। শুধু রুবেল হোসেন আছে, ওর সঙ্গে অপর পেসার একজনকে ম্যানেজ করেছি। শেখ মাহেদী ইনজুরিতে। এখন কী করব, খেলতে তো হবে।’
২০১৪-১৫ মৌসুমে একবারই শিরোপা জেতা প্রাইম ব্যাংক কোনো রকমে দল গড়লেও প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ একেবারে অনভিজ্ঞ। সিটি ক্লাবে আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলা ক্রিকেটার থাকলেও নামী তারকা নেই একজনও। তাই দ্বিতীয় শিরোপা অভিযান সহজ প্রতিপক্ষ দিয়ে শুরু করবে বড় দল প্রাইম ব্যাংক।
ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ায় আগামীকাল মোহামেডানের হয়ে মাঠে নামছেন মাহমুদউল্লাহ। জাতীয় দলের ব্যস্ততা তার আপাতত নেই।
ইমরুল কায়েসকে ছাড়া চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে খেলবে রকিবুল হাসান-সোহরাওয়ার্দি শুভদের লিওপার্ডসের বিপক্ষে। ২০১৩-১৪ আসরে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর গতবারই এই আসরে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় শেখ জামাল। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ প্রথম ম্যাচে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে না-ও পেতে পারে। দুবাইয়ে ছুটি কাটাচ্ছিলেন তিনি। তার জায়গায় জহুরুল-সাদমানদের বিপক্ষে কে নেতৃত্ব দেবেন তা আজ জানা যাবে।
ম্যাচ শেষ... বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে আনন্দে আত্মহারা সবাই। একটু আগে পুরস্কার বিতরণী শেষে ক্রিকেটারদের আনন্দ উল্লাসও শেষ হয়েছে। বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে বোর্ড পরিচালকদের ঘিরে বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের সামনে নানা লোকের ভিড়। ক্রিকেটাররা আনন্দোল্লাস শেষে ড্রেসিংরুমে চলে গেছেন। সবার মাঝে একটা সফল কার্য সম্পাদন ভাব। অথচ এ উদযাপনে মন নেই দুজনের। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। দ্রুত মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমের কালো সোফায় আলোচনায় বসে গেলেন দুজন। একটু পর তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন অন্য নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। আর সবশেষে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সেই আলোচনায় মিলে গেলেন সাকিব আল হাসান। তাদের আলোচনাটা কী নিয়ে তা অবশ্য জানা গেল না। তবে এমন জয়ের দিনেও তৃপ্তির ঢেকুর না তুলে পরের পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, হতে পারে আয়ারল্যান্ড সিরিজ নিয়ে কোনো আলোচনা! আর এটাই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের নতুন রূপ। অর্জনে নয়, এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী। সাকিব নিজেও সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘যদি ২০২৪ বিশ্বকাপে তাকাতে হয় তাহলে অনেক কাজ বাকি। ইংল্যান্ডকে হারানো সেই কাজের শুরু মাত্র।’
ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং; এক সিরিজে সব বিভাগে টিক দেওয়ার কথা ইদানীং খুব শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশ দলে। তা শুধু ওয়ানডে সিরিজগুলোতে। তাই একদিনের ফরম্যাটে সাফল্যটাও বেশি। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এ সঠিক উত্তরে টিক দেওয়ার কথা ভাবতেও পারছিল না বাংলাদেশ। উল্টো এ ফরম্যাটে বাজে পারফরম্যান্স এড়ানোর লক্ষ্যে সঠিক পথের খোঁজে ছিল। গত এশিয়া কাপে টি-টোয়েন্টিতে অনেক কিছুই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করে বাংলাদেশ। সাকিব আরেক দফা নেতৃত্বে ফেরেন ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই। টি-টোয়েন্টির মানসিকতা বদলের কথাটা সেই মেয়াদে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন সাকিব। তখনই সবার কাছে একটু সময় নিয়েছিলেন ফল আনার ব্যাপারে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় দিয়ে সেই লক্ষ্যে একটু এগিয়েছেনও। আর কাল ইংল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ। সাকিব জানালেন সিরিজ শুরুর আগে ভালো খেলার প্রক্রিয়ায় থাকার চেষ্টা কীভাবে তাদের সফলতা এনে দিয়েছে, ‘নাহ, (সিরিজ জয়ের চিন্তা) ওভাবে ছিল না। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে। যেটা আমাদের বিশেষত টি-টোয়েন্টিতে যেখানে ২-৪-১০-১৫-২০ পার্থক্য করে দেয়, ওই জায়গাতে অনেক বড় টিক মার্ক দিয়েছি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে দলের বিপক্ষে এতটা সফল সত্যিই দারুণ।’
দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড... সেরা দুটি দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই সাফল্য নিয়ে বিসিবির সবাই খুব স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ সাফল্য কোনো কাজেই আসেনি। পরে ওই দুটি সিরিজে তৈরি পিচ নিয়ে সমালোচনা হয় অনেক। সাকিবকে ওই সিরিজগুলোর সঙ্গে এবারের সিরিজের পার্থক্য করতে বললে সসম্মানেই এড়িয়ে যান। সামনে আনলেন ভালো ফল আনার প্রক্রিয়ার কথা, ‘আসলে তুলনা করতে চাই না কোনো সিরিজের সঙ্গে কোনো সিরিজ। প্রতিটি ম্যাচ জেতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে খেলে জিতেছি, বিশেষত টি-টোয়েন্টিতে খুব বেশি সময় আমরা এমন সফল হইনি। ওদিক থেকে আমরা সন্তুষ্ট। যেভাবে খেলেছি, যে অ্যাপ্রোচ নিয়ে খেলেছি এটা একটা তৃপ্তির জায়গা ছিল। এটা হয়তো গত এশিয়া কাপ থেকে শুরু হয়েছে। আসলে ফল আসতে একটু সময় লাগে।’
সাকিব এই দলকে দারুণ সফল বলছেন। তিন বিভাগেই এত ভালো পারফর্ম করবে তা ভাবেননি স্বয়ং অধিনায়ক। তার মতে, এটা সফল হয়েছে বিপিএলের খুব কাছাকাছি সিরিজটি হওয়ায়। দলে নতুন সুযোগ পাওয়ারা ফর্মে ছিল, সেই ফর্মটাই তারা টেনে এনেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আর বিশ্বকাপে বড় দলের বিপক্ষে ভালো করা ও দুই জয় সাকিবদের বদলে দিয়েছে বলে জানান। বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি নিয়ে যে সন্দেহ নিজেদের মধ্যে ছিল তা কেটেছে ওই আসরের পারফরম্যান্সে। যে বদলটা সাকিবের সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে তা হলো বোলিং। বললেন, ‘আমাদের বোলিং ইউনিটটা এ সিরিজে ভালো ছিল। আমরা ছয়জন বোলার নিয়ে খেলেছি। এ সাহসটা আগে দেখাতে পারতাম না। আমরা আটজন ব্যাটার নিয়ে খেলতাম। এটা হলে কী হয়... একজন বোলার সবসময় কম হয়। আর টি-টোয়েন্টিতে যেহেতু বোলাররাই ম্যাচ জেতায়। এ সিরিজে আমরা বেশি বোলার নিয়ে সেই সুবিধাটা পেয়েছি। বিশ্বকাপের আগে আমাদের আরও অনেক কিছুই টিউনিং করতে হবে, যদি আমি পরবর্তী বিশ্বকাপের কথা ভাবি, তাহলে বলব আমাদের শুরুটা অনেক ভালো হয়েছে।’ এ ছাড়া সাকিবের চোখে সবচেয়ে সেরা ছিল ফিল্ডিং। অধিনায়ক জানালেন, একটা সময় এই দল এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দলে পরিণত হবে।
দল নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। দল নির্বাচন করে সিরিজের পর এই প্রথম খুব স্বস্তিতে আছেন। যে পজিশনে যে ক্রিকেটার নিয়েছেন সবাই মাঠে পারফর্ম করেছেন। দেশ রূপান্তরকে তাই স্বস্তির কথা জানিয়ে বলেন, ‘এটা সত্যি বলতে তৃপ্তিদায়ক। ইংল্যান্ড কিন্তু খুব কঠিন দল ছিল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। ওদের বিপক্ষে ওরা সবাই একসঙ্গে ভালো করবে। নিজেদের জায়গায় এতটা ভালোভাবে জ¦লে উঠবে এটা চিন্তা করিনি। এতটা আশা করিনি সত্যি বলতে। আমরা যখন দল বাছাই করি, একটু ভাবি যে, ওই ক্রিকেটাররা হয়তো প্রথম ম্যাচেই ভালো করবে না। কিন্তু ওরা এ সিরিজে সব জায়গায় ভালো করেছে। যখন এরকম কিছু হয় তখন বাড়তি ভালোলাগা কাজ করে অবশ্যই।’
প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে বেন ডাকেট শিকার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমানের। গতকাল ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোরার ডাভিড মালানকে আউট করে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এ ফরম্যাটে ১০০ উইকেট পূর্ণ করলেন। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে একটা জায়গায় সাকিবের চেয়ে এগিয়ে মোস্তাফিজ। সাকিবের ১০০ উইকেট পেতে লেগেছিল ৮৪ ম্যাচ, মোস্তাফিজ ল্যান্ডমার্ক ছুঁলেন তিন ম্যাচ কম খেলেই। সাকিবের লেগেছিল ১৪ বছর ২৮৪ দিন। কাটার মাস্টার মাইলফলকটা স্পর্শ করলেন মাত্র আট বছরেই। ২০১৫ সালে এই মিরপুরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মোস্তাফিজের। প্রথম উইকেটটাও সারা জীবন মনে রাখার মতো শহিদ আফ্রিদিকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে শুরু হয়েছিল মোস্তাফিজের। পরে মোহাম্মদ হাফিজকে এলবিডব্লিউ করেন। ৩৩ ম্যাচেই উইকেটের ফিফটি করেছিলেন তিনি। পরের ৫০ উইকেট নিতে লাগল ৪৮ ম্যাচ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পাওয়া মাত্র ষষ্ঠ বোলার মোস্তাফিজ। এ তালিকায় সবার ওপরের নামটা নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদির ১৩৪ উইকেট। ১৩১ উইকেট নিয়ে সাকিব দুই নম্বরে। আফগানিস্তানের রাশিদ খান ১২৬, নিউজিল্যান্ডের ইশ সোধি ১১৪ ও শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা ১০৭ উইকেট নিয়েছেন।
শিরোনাম দেখে আবার ভুল করবেন না। নাহ, ফুটবলের মেসির আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ছেলেখেলা করেনি বাংলাদেশ। যে খেলাটায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার চেয়ে যোজন এগিয়ে, সেই কাবাডিতেই কাল আধিপত্য বিস্তার করে জিতেছে বাংলাদেশ। শহীদ নূর হোসেন জাতীয় ভলিবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিন বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে স্বাগতিক বাংলাদেশ ৭২-২৩ পয়েন্টে হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। পোল্যান্ডকে উড়িয়ে শুরু করা বাংলাদেশকে অসাধারণ জয় এনে দিতে বড় ভূমিকা ছিল মিজানুর রহমানের।
ম্যাচের প্রথম থেকেই আর্জেন্টিনার ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে সাজুরাম গয়াতের শিষ্যরা। প্রথম রেইডেই বোনাস থেকে ১ পয়েন্ট এনে দেন অধিনায়ক তুহিন তরফদার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্বাগতিকদের। একে একে ৮ পয়েন্ট তুলে নেন তারা। খেলা শুরুর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রথম আর্জেন্টিনাকে অলআউট করে গত দুবারের চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমার্ধ শেষে বাংলাদেশ চারবার আর্জেন্টিনাকে অলআউট করে ৪৪-৮ পয়েন্টে এগিয়ে যায়। বিরতির পর আধিপত্য বজায় রেখে খেলতে থাকেন তুহিন তরফদাররা। খেলা শেষ হওয়ার ১২ মিনিট আগেও একটি লোনা পায় বাংলাদেশ। খেলা শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে ষষ্ঠ লোনার মুখ দেখে বাংলাদেশ।
ম্যাচসেরা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আর্জেন্টিনা দলকে অনেক ধন্যবাদ বাংলাদেশে আসার জন্য। দলটা আজকে অনেক ভালো খেলেছে। আমরা সবাই অনেক মন খুলে খেলতে পেরেছি। ফুটবলে আমি মেসির ভক্ত, আর্জেন্টিনার অনুসারী। মনেপ্রাণে এই দেশটিকে অনেক সমর্থন করি। তবে দেশের প্রসঙ্গে এলে তো আর আর্জেন্টিনাকে ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রথমে আমাদের দেশ। দেশকে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর জন্য আমরা যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত আছি।’ এ আসরের সেরা দুটি দল কাবাডি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। মিজানুর বলেন, ‘এ টুর্নামেন্ট মূলত বিশ্বকাপের কোয়ালিফাই করার জন্য। ১২ দলের মধ্যে শীর্ষ দুটি দল কোয়ালিফাই করবে বিশ্বকাপ কাবাডির জন্য। আমরা যেন এ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারি, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’
আর্জেন্টিনার অধিনায়ক রাফায়েল ডি জিউস আকেভেদো করোলেন বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। ফলে ম্যাচে বড় ব্যবধানেই হেরেছি। যোগ্য দল হিসেবেই বাংলাদেশ জিতেছে। তাদের কাতারে আসতে হলে আমরাদের আরও অনেক বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। তবে বাংলাদেশে আসতে পেরে এবং খেলতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। আমাদের দলের সব খেলোয়াড়ই তেমন অভিজ্ঞ নয়। আমি নিজেও কাবাডির পাশাপাশি তায়কোয়ান্দো খেলি। জানি বাংলাদেশের প্রচুর সমর্থক আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলকে সমর্থন করে। আমরা জানি বিশ্বকাপের সময় এ দেশে প্রচুর আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ে। বিষয়টা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আশা করি ফুটবলেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশের ভারতীয় কোচ সাজুরাম গয়াত বলেন, ‘নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলেছে বাংলাদেশ। আর্জেন্টিনার দু-একজন ভালো খেলেছে। তবে আমাদের পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ নেপাল ভালো দল। কাজেই আমাদের সেভাবেই খেলতে হবে।’ আর্জেন্টিনা কোচ ও সে দেশের কাবাডি ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রিকার্দো আলবার্তো আকুনা বড় হারের পরও হতাশ নন, ‘আগেই বলেছিলাম আর্জেন্টিনা দল অনভিজ্ঞ। তাই আমার ছেলেরা তাদের যথাসাধ্য অনুযায়ী খেলেছে। আমাদের লক্ষ্য অন্তত একটি ম্যাচে জয়। সেই লক্ষ্যেই আমরা পরের ম্যাচে খেলব।’
বাংলাদেশ আগামীকাল তৃতীয় ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে যারা গতকাল ইরাকের কাছে হেরেছে। দিনের অপর খেলায় ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়াকে ও থাইল্যান্ড শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ এক পা দিয়েই রেখেছে বলা যায়। তিন গোলে এগিয়ে থেকে আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লিভারপুলের সঙ্গে শেষ ষোলোর ফিরতে লেগ খেলতে নামবে তারা। সবশেষ ৭ ম্যাচে রিয়ালের সঙ্গে জয়ের দেখা নেই যাদের, সেই লিভারপুলের গতবারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আশা করাটা কঠিনই। গত মৌসুমের ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়েই শিরোপা জিতেছিল রিয়াল।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৬ মার্চ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৭-০তে বিধ্বস্ত করেছিল লিভারপুল। তবে পরের ম্যাচেই ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে মাটিতে নামিয়ে আনে বোর্নমাউথ (১-০)। আজ যদি জিতেও লিভারপুলকে কোয়ার্টারে যেতে জিততে হবে চার গোলের ব্যবধানে।
রিয়াল সবশেষ লিগ ম্যাচে এস্পনিওলের সঙ্গে জিতেছে ৩-১-এ। ঘরের মাঠে সবশেষ রিয়াল হেরেছে বার্সেলোনার বিপক্ষে কোপা দেল রের সেমিতে ০-১ গোলে। আরও এক পরিসংখ্যানে স্বস্তি পেতে পারেন লস ব্লাঙ্কোস সমর্থকরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ২৭ বারের হিসাবে প্রতিপক্ষের মাঠে জয় পেলে রিয়াল পরের পর্বে গেছে ২৬ বার। একমাত্র ২০১৮-১৯ আসরের শেষ ষোলোতে এরিক টেন হাগের আয়াক্সের বিপক্ষে অ্যাওয়েতে ২-১ গোলে জয় পেয়েও দ্বিতীয় লেগে হেরেছিল ১-৪ গোলে। আজও যদি কার্লো আনচেলত্তির দল ৪-১-এ হারে লিভারপুলের কাছে, তবে দুই লেগ মিলে ফল হবে সমান ৬-৬ গোল। তখন অতিরিক্ত সময়ে, টাইব্রেকারে গড়াবে খেলা।
তবে রিয়ালকে ৪-০ গোলে হারানোর অতীত আছে লিভারপুলের। ২০০৮-০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে এমন জয় পেয়েছিল অলরেডরা। সেবার প্রথম লেগে রিয়ালের মাঠেও (১-০) জয় পেয়েছিল লিভারপুল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০ বারের দেখায় ৬ বার জিতেছে রিয়াল, লিভারপুলের জয় ৩টি, ড্র ১ ম্যাচ।
আজ রাতে অপর ম্যাচে নাপোলি ২-০ গোলে এগিয়ে ঘরের মাঠে খেলবে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে।
খেলা ছেড়েছেন তিন বছর। তবুও বোলিংয়ে ধার কমেনি আবদুর রাজ্জাকের। এখন বলে টার্ন করাচ্ছেন, উইকেটও নিচ্ছেন। কাতারে লিজেন্ডস ক্রিকেট লিগে ৪০ বছরেও তাক লাগিয়ে দিলেন বল হাতে। তার নৈপুণ্যে দলও জিতেছে। ক্রিকেট সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবার লিজেন্ডস ক্রিকেট লিগ আয়োজন হচ্ছে কাতারে। সেখানে সোমবার রাতে এশিয়া লায়নসের হয়ে মাঠে নামেন রাজ্জাক। বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচ ১০ ওভারে নামলে ওয়ার্ল্ড জায়ান্টসের বিপক্ষে দুই ওভার বল করেন। তাতে একটি মেডেনসহ ২ উইকেট নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৭৯ উইকেটশিকারি। এক ওভারেই শেন ওয়াটসনকে ৩ রানে ও রিকার্ডো পাওয়েলকে শূন্যতে ফেরান। ম্যাচে লায়নস ৩৫ রানে জিতেছে। আগে ব্যাট করে মিসবাহ উল হকের ১৯ বলে ৪৪ রানে ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৯ রান তোলে এশিয়া। জবাবে ৫ উইকেটে ৬৪ রানে থামে জায়ান্টস। আগের ম্যাচে ভারত মহারাজাসদের সঙ্গে খেললেও বল করার সুযোগ হয়নি রাজ্জাকের।
ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে, তারপরও যেন ভাগ্যটা ফেরানো যাচ্ছিল না। পরাশক্তির তকমাটা খসে যায় গেল এক যুগে। লিগ শিরোপা তাদের কাছে শুধুই মরীচিকা। সাদা-কালোদের কাছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও দূর আকাশের তারায় রূপ নিয়েছিল। সেখান থেকে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন ‘ঘরের ছেলে’ সুলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার টানা পাঁচ মৌসুম ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাঝারি মানের মোহামেডানকে। তার জাদুতে গতকাল ফেডারেশন কাপের মহা-ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়েছে সাদা-কালোরা। এই অর্জন এসেছে অনেক অপেক্ষার পর। তাই তো এই শিরোপাকে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দিয়াবাতেও। বিশ্বাস করেন, এই শিরোপা বদলে দেবে মোহামেডানের চিন্তাধারাকে।
টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের হুল্লোড়ের মধ্যে ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে এক কোনায় বসে দেশে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিয়াবাতে। সেই ফাঁকেই সাংবাদিকদের কাছে জানালেন প্রতিক্রিয়া, ‘পেনাল্টি শুটআউটের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভীষণ কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেছেন এই ট্রফিটি জিততে। তাই আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফাইনালে প্রথমবারের মতো চার গোল করলাম। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ দিয়াবাতে বলেন, ‘৯ বছর পর আমি একা নই, সব খেলোয়াড় মিলে মোহামেডানকে একটা শিরোপা এনে দিয়েছি। বিশ্বাস ছিল ম্যাচে ফিরতে পারলে আমরাই শিরোপা জিতব, সেটাই হয়েছে। আমি এই অর্জন মালিতে থাকা আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মাকে উৎসর্গ করছি।’ শিরোপাটা মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আলফাজ আহমেদের জন্যও বিশেষ অর্জন। ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলেছেন এবং জিতেছেন। তবে এই জয়টাকে আলাদা করে রাখছেন তিনি, ‘আজকের খেলাটা অনেক বড় অর্জন। ব্যাকফুটে থেকে ফিরে আসা, ম্যাচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে। দিয়াবাতে আসাধারণ ফুটবল খেলেছে। মুজাফ্ফারভের হাত ভেঙে দিয়েছিল, ওই অবস্থায়ও সে খেলা চালিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের কমিটম্যান্ট ছিল অসাধারণ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি শিরোপা জিতেছি, এবার কোচ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জিতলাম। তাই শিরোপাটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি আলফাজ। শিষ্যদের শিখিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে পাল্টা জবাব দেওয়ার মন্ত্র, ‘প্রথমার্ধের খেলা শেষে শিষ্যদের বলেছি, তোমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলো। তারা সেটাই করেছে।’
চোটে পড়ে মাঠ ছাড়া গোলকিপার সুজন সতীর্থ বিপুকে টাইব্রেকারে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘মাঠ ছাড়ার এক মিনিটের মধ্যে আবাহনী যখন গোল পরিশোধ করল, তখন ভীষণ খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমরা আর পারব না। তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বিপু। আমি তাই অনেক বেশি খুশি।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ যেন ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনাল! সুলেমান দিয়াবাতে যেন কিলিয়েন এমবাপ্পে। না, ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফরাসি যুবরাজ এমবাপ্পের মতো ট্র্যাজিক হিরো হতে হয়নি দিয়াবাতেকে। হয়েছেন বিজয়ী দলের গর্বিত সেনাপতি। দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান ও আবাহনীর মধ্যে ফেডারেশন কাপের ফাইনালটা হয়ে উঠেছিল এক বাঁক বদলের লড়াই। যতবার আবাহনী এগিয়ে গেছে ততবারই দিয়াবাতে জ্বালিয়েছেন মোহামেডানের আশার প্রদীপ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ৩-৩। অতিরিক্ত সময়ে ৪-৪। আবাহনীর চার গোল চার জনের; কিন্তু মোহামেডানের চারটাই দিয়াবাতের। এরপর টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষার শুরুটাও মালির ফরোয়ার্ডের লক্ষ্যভেদে। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য পরীক্ষাটা ৪-২ গোলে জিতে ৯ বছর পর কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পেল মোহামেডান।
ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে ছিল আবাহনীই। তাদের সামনে প্রথমার্ধে বড্ড অগোছালো মনে হয়েছে আলফাজ শিষ্যদের। মারিও লেমস তুণের সব সেরা তীরদের জড়ো করে একাদশ সাজিয়েছিলেন। যার নেতৃত্ব দেন হাফ-ফিট রাফায়েল আগুস্তো। আক্রমণভাগে তার দুপাশে ছিলেন দানিয়েল কলিনদ্রেস ও তরুণ ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। আর ঠিক ওপরে এমেকা ওগবাহ। আকাশির আক্রমণ ঠেকাতে তখন নাজেহাল সাদা-কালোরা। উপর্যুপরি আক্রমণ থেকে আবাহনীকে ১৬ মিনিটে এগিয়ে নেন ফাহিম। কলিনদ্রেসের কাছ থেকে বল পেয়ে এমেকা ওগবাহ ডিফেন্সচেড়া পাস বাড়ান। চলন্ত বলে ফাহিমের বাঁ পায়ের শট মোহামেডান কিপার সুজন হোসেনের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে জড়ায়। মোহামেডান অসহায়ত্বের সুযোগ ৪৩ মিনিটে কাজে লাগান কোস্টারিকার বিশ্বকাপার কলিনদ্রেস। নিজেদের অর্ধ থেকে হৃদয়ের বাড়ানো বল আয়ত্তে নিয়ে মার্কার হাসান মুরাদকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ান এই তারকা।
বিরতি থেকে মাঠে ফিরে অন্যরকম এক মোহামেডান। আলফাজ তিনটি পরিবর্তন করে মাঠে পাঠান জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার ইমন ও আলমগীর রানাকে। তাতেই গতি পায় সাদা-কালোর আক্রমণ। ৫৬ মিনিটে ২-১ করেন দিয়াবাতে। কামরুলের ক্রস হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডিফেন্ডার আলমগীর মোল্লা বল দিয়ে দেন দিয়াবাতের কাছে; দুর্দান্ত সাইডভলিতে বল জালে জড়ায় দিয়াবাতে। চার মিনিট পর সমতাসূচক গোল করেন তিনি। উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভের জোরালো ভলি আবাহনী কিপার রুখলেও বাঁদিকে জাফর পেয়ে দ্রুত ক্রস ফেলেন গোলমুখে। মার্কারদের ছাপিয়ে দারুণ হেডে সোহেলকে পরাস্ত করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন দিয়াবাতে। ৬৫ মিনিটে এমেকা ওগবাহর হেড পোস্টে লেগে ফিরলে হতাশ হতে হয় আবাহনীকে। পরের মিনিটে ডান দিক থেকে ফাহিমের শট সুজন কোনোমতে সেভ করলেও আলতো ট্যাপে গোল করে আবাহনীর লিড পুনরুদ্ধার করেন এমেকা (৩-২)। তবে ৮৩ মিনিটে কামরুলের কর্নারে দিয়াবাতে হ্যাটট্রিক করে মোহামেডানকে আবার ম্যাচে ফেরান।
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে দুটি অসাধারণ সেভ করেন মোহামেডান কিপার সুজন। ৯৬ মিনিটে রহমতের কর্নার ঘুরে ফিরে রাফায়েলের কাছে এলে তাতে দারুণ শট নেন। তবে সুজন ঝাঁপিয়ে তা রুখে দেন। পরের মিনিটে কলিনদ্রেসের কর্নারে আসাদুজ্জামান বাবলুর হেড ফিস্ট করে বিপদমুক্ত করে মোহামেডানকে ম্যাচে রাখেন সুজন। ১০৬ মিনিটে মোহামেডানকে পেনাল্টি উপহার দেন সোহেল। শাহরিয়ার ইমনের ঠেলে দেওয়া বল ধরতে ছুটছিলেন দিয়াবাতে। তার এক টাচে বলটা চলে যাচ্ছিল গোললাইনের বাইরে। তবে সোহেলের পা ধরে টান দিলে পড়ে যান দিয়াবাতে। পেনাল্টি থেকে সোজাসুজি শটে প্রথমবারের মতো মোহামেডানকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে। এই ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে বিধাতা যে ফাইনালের চিত্রনাট্য লিখেছেন অন্যভাবে। ম্যাচের ১১৬ মিনিটে মোহামেডানের তেকাঠীর আস্থা সুজনকে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। মাঠে এসে অপ্রস্তুত আহসান হাবিব বিপুকে পরের মিনিটেই গোল হজম করতে হয়। রয়্যালের কাছ থেকে আড়াআড়ি পাস পেয়ে বক্সের অনেক বাইরে থেকে ডানপায়ের জোরালো শটে গোল করেন এই ডিফেন্ডার। তাতে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টিতে।
ভাগ্য পরীক্ষায় অবশ্য বিপু মোহামেডানের বিজয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন বিপু। শুরুতেই ঠেকিয়ে দেন রাফায়েলের শট। অন্যদিকে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার দুরাতে টানা ৩ গোল করেন। আবাহনীর হয়ে এমেকা ও ইউসেফ গোল করলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-২। এরপর মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমনের শট সোহেল ঠেকিয়ে দিলে আবাহনীর ফেরার আশা জাগে। তবে বিপু কলিনদ্রেসের শট রুখে দিলে উত্তাল হয়ে ওঠে মোহামেডান গ্যালারি। আর কামরুল হাসান ঠিকঠাক লক্ষ্যভেদ করে অনেক চাওয়ার শিরোপা নিশ্চিত করেন মোহামেডানের।
অভিনেত্রী দর্শনা বণিক আবারও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করবেন। যদিও কলকাতার বেশ কিছু ছবিতে পর পর কাজ করেছেন দর্শনা। তবুও শাকিব খানের সঙ্গে দর্শনার নতুন কাজকে ঘিরে শুরু হয়েছিল নানা রকমের জল্পনা। ওপার বাংলার একের পর এক সিনেমায় সই করে চলেছেন দর্শনা। কিছু দিন আগে অভিনেতা আজাদ আদরের সঙ্গে একটি ছবিতে স্বাক্ষর করেছেন নায়িকা। এরপর আবার শাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন অভিনেত্রী।
সম্প্রতি ‘দিদি নম্বর ১’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশের কাজের পরিবেশ, শাকিবের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন দর্শনা। ইদানীং কি টালিগঞ্জের থেকে ওপার বাংলায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন তিনি? দর্শনার স্পষ্ট জবাব, ‘এখানেও অনেক কাজ করছি। টালিগঞ্জের কাজের জন্যই তো বাইরে বিভিন্ন কাজের সুযোগ আসছে। দুই বাংলাই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশে শাকিবের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে অনেক অভিনেতারই। সেখানে পদ্মা পাড়ের প্রথম ছবিতেই নায়ক হিসেবে পেয়েছেন তাকে। শাকিব প্রসঙ্গে দর্শনা বলেন, ‘খুবই ভালো অভিজ্ঞতা। শাকিব ওখানে এক বিশাল নাম। তবে সেটে তেমনটা কখনো মনে হয়নি।’ তবে নতুন কাজের প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে নারাজ অভিনেত্রী। এই মুহূর্তে কলকাতাতেই রয়েছেন। খুব শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন এমনটাই আভাস দিলেন এই নায়িকা।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।