
‘হৃদয়ের গল্প...শুরু হলো এই তো’, অ্যান্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় একটি গানের কলির অনুকরণে বলাই যায় কথাটা। তাওহিদ হৃদয়ের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার শুরু হলো কাল। এক বছর আগে খেলা ছেড়ে দিতে চাওয়া ছেলেটাই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়। অথচ শুরুতে ভুয়া এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে খেলাই ছেড়ে দেওয়ার দশা হয়েছিল তার!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসর দিয়ে যেন পুনর্জন্মই হয়েছে তাওহিদ হৃদয়ের। আগের আসরে নিজে খুব একটা ভালো করেননি, ফাইনালে দেখেছেন দলকে ১ রানে হেরে যেতে। তারপরই প্রতিজ্ঞা, বদলে ফেলতে হবে নিজেকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের খেলোয়াড়দের হাই পারফরম্যান্স দলে নেয় বিসিবি। সেখানেই সোহেল ইসলামসহ অন্য কোচদের অধীনে অনেক অনুশীলন করেছেন। ছোটবেলা থেকেই যাকে চেনেন, সেই খালেদ মাহমুদ সুজনও রেখেছেন ভরসার হাত। এবারের বিপিএলে তাই দেখা গেল এক বদলে যাওয়া হৃদয়কে। সাহসী ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলাই যার মন্ত্র। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে দারুণ এক বিপিএল কাটানোর পুরস্কার হিসেবে অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টি দলে। সেখানেও দুটো ম্যাচে ছোট দুটো ইনিংস খেলে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও ঠিক চোখে লাগার মতো কিছু ছিল না। কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংসটায় হৃদয় যেন জানান দিলেন, লম্বা সময় থাকতেই তার আসা।
কাল ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে হৃদয় বলছিলেন, কীভাবে বারবার বাধা এসেছে জীবনে, ‘আসলে সে সময় প্রতারিত হয়ে অনেক ক্ষতিই হয়েছিল আমার। বাসা থেকে খেলা চালিয়ে যেতে দিতে চাচ্ছিল না। বাবা অনেক বাধা দিয়েছে, পড়াশোনা করতে বলত তবে আমি পড়াশোনা করতে চাইতাম না বরং ক্রিকেটটাই খেলতে চাইতাম। ওই সময় আমার মা অনেক পাশে ছিলেন’। ক্রিকেটটা চালিয়ে গেলেন মায়ের প্রশ্রয়ে, একটা সময়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগও হলো। শুরুতে অধিনায়ক ছিলেন, পরে সেটা গেল আকবর আলির কাছে। বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পর দেখলেন একে একে সতীর্থ অনেকেরই সুযোগ হচ্ছে জাতীয় দলে। নিজে বিপিএলে বেশ খারাপ করলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। তখন ভেবেছিলেন খেলাই ছেড়ে দেবেন! পরে ভাবলেন নিজেকে ভাঙতে হবে, গড়তে হবে নতুন করে। নতুন রূপেই ফিরে এলেন বিপিএলে, এরপর সবকিছুই ঘটতে থাকল সিনেমা গল্পের মতোই! বিপিএল পথ তৈরি করে দিল টি-টোয়েন্টি দলে, এরপর আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। তাতে অল্পের জন্য শতরান মিস হলেও আক্ষেপ নেই হৃদয়ের, ‘আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আমি তো আরও আগেই আউট হয়ে যেতে পারতাম। হয়তো এটাই ভাগ্যে ছিল। আমিই অভিষেকে সবচেয়ে বেশি রান করেছি (বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ভেতর) এটা জেনে ভালো লাগছে, তবে আমি আশা করছি সামনে যাদের অভিষেক হবে তারা আরও ভালো করবে।’
এখন আর বাবা-মায়ের কোনো অভিযোগ নেই। অভিষেকের পর বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়াতেই সেটা টের পেয়েছেন হৃদয়, ‘সব বাবা-মায়েরই ছেলে ভালো করলে ভালো লাগবে। তাদেরও লেগেছে। তবে আমার মা ক্রিকেট বোঝে না, শুধু জানে আমি এটা ভালোবাসি।’
ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাই বারবার ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার পরও তাকে ফিরিয়ে এনেছে ২২ গজে। হয়তো এই দিনটার জন্যই।
অনেক রেকর্ডই হলো শনিবারের সিলেটে, শুধু হলো না দুজনের সেঞ্চুরি। কাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান টপকে কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করে ৩৩৮/৮। এই ম্যাচে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ৭০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে অভিষেকেই তৌহিদ হৃদয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভেতর সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন। এত প্রাপ্তির ভিড়েও কাঁটার মতো খচখচ করছে দুটো ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি। ৯৩ রানে আউট হয়েছেন সাকিব, ৯২ রানে হৃদয়। দুজনেই পেতে পারতেন সেঞ্চুরি, এমনকি মুশফিকুর রহিমের ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটাও হতে পারত আরও বড়। প্রায় ৯ মাস পর ওয়ানডেতে তিনশ’র বেশি রান বাংলাদেশের এই তৃপ্তির সঙ্গে মিশে আছে ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির আক্ষেপও।
২০১৯ সালের ১৭ জুন টনটনে উইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। এরপর ওয়ানডেতে তিন অঙ্কের কাছাকাছি এসেছেন বার তিনেক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়নি একবারের জন্যও। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৪০ রান তাড়ায় সাকিব শেষ পর্যন্ত ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে যান, এর কয়েক দিন আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটায় সাকিব আউট হন ৭৫ রান করে। আর কাল দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও সাকিব আউট হয়ে গেলেন ৯৩ রানে। ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে আউট হয়েছেন সাকিব, এর আগে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে ৯৭ রানে আউট হওয়ার। কাল দারুণ ছন্দে ছিলেন সাকিব, হ্যারি ট্যাকটরের এক ওভারে ২২ রানও নেন ৫ বাউন্ডারি আর একটি ডাবলসে। যখন মনে হচ্ছিল শতরানটা স্রেফ সময়ের ব্যাপার তখনই ছন্দপতন। গ্রাহাম হিউমের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করা ইয়র্কার বলটা একটু দ্বিধান্বিত মনেই বোধহয় খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। শেষ সময়ে হঠাৎ ব্যাটের ফেসটা ওপেন করলেন, বল ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক লোরকান টাকারের হাতে। মুহূর্তেই স্তব্ধ গ্যালারি। সাকিব রিভিউও নেননি, নিজেই জানতেন বল লেগেছে ব্যাটে। তাই বিষণœ মনে ধরেছেন ড্রেসিং রুমের পথ। ১০ নম্বর ওয়ানডে শতকটা আর পাওয়া হলো না তার।
কাল ব্যাট করতে যখন নামেন সাকিব, তখন ছিলেন ৭ হাজার রান থেকে ২৪ রান দূরে। ফিরলেন শতরান থেকে ৭ রান দূরে থেকে। মাঝের সময়টা পুরোটাই যেন ‘সাকিব শো’। ব্যাটিংয়ে যেন ফিরিয়ে এনেছিলেন সেই ২০১৯ বিশ্বকাপ। ব্যাটে বাহারি সব শট। ট্রেডমার্ক কাট থেকে শুরু করে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ড্রাইভ, সুইপ সবই খেলেছেন সাকিব। যখন আউট হলেন তখন ইনিংসের প্রায় ১৩ ওভার বাকি। অনায়াসেই সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন। কিন্তু ক্ষণিকের ভুল তাকে থামিয়ে দেয় ৯৩ রানেই।
তৌহিদ হৃদয় কাল বাংলাদেশের ১৪০তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে খেললেন। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের চারজন, কিন্তু ওয়ানডেতে এই কৃতিত্ব নেই কারও। তৌহিদ হৃদয় সেই কীর্তি গড়ার মাত্র ৮ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান। গ্রাহাম হিউমের সেøায়ার ইয়র্কারে বিভ্রান্ত হয়ে যান তৌহিদ, বল তার দু’পায়ের ফাঁক গলে স্টাম্পে আঘাত করে। ৮৪ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটার এমন করুণ পরিণতি নষ্ট করে দিল আরেকটি অমিত সম্ভাবনাও। ওয়ানডে ইতিহাসে অভিষেকে চার নম্বরের পরে নামা কোনো ব্যাটসম্যানের শতরান নেই, কাল পাঁচে ব্যাটিংয়ে নামা হৃদয় সেই সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ৯২ রানে। সাকিব আর হৃদয়ের ৫ম উইকেটে ১৩৫ রানের জুটি এই মাঠেই পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
রেকর্ড হলো অনেকই। হৃদয় হয়ে গেছেন অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা ক্রিকেটার। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ দলীয় রান, সাকিবের ৭ হাজার রানসহ অনেক কিছুই। তবুও দিনশেষে আক্ষেপ হয়ে থাকল দুজনের ইনিংসেরই ‘অপমৃত্য’।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার ভালো উইকেটের দারুণ সদ্ব্যবহার করছেন ব্যাটাররা। দলগুলো বড় রান পাচ্ছে, ব্যাটাররাও তৈরি করছেন ব্যক্তিগত মাইলফলক। কাল তেমনি তিন ম্যাচে তিন ব্যাটার করেছেন সেঞ্চুরি। শেখ জামাল ধানম-ির হয়ে সাইফ হাসান ১১২ বলে ১০৮। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সাব্বির রহমান রুম্মান অপরাজিত ১০৭ বলে ১১০ ও ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাব্বির হোসেন ১১৮ বলে ১২৫। প্রথম দুজনের দল জিতলেও ব্রাদার্সের সাব্বিরের প্রথম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরির খুশি মাটি হয়েছে দল হারায়।
আগের ম্যাচে পায়ে হালকা চোট পাওয়ায় দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেননি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। প্রতিপক্ষ দুর্বল সিটি ক্লাব বলে ঝুঁকি নিতে চাননি। তাকে ছাড়া রূপগঞ্জের জিততে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি। সিটি ক্লাবের করা ২৪৮ রান প্রায় ৮ ওভার ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই সফল তাড়া করেছে (২৫২/৩) রূপগঞ্জ। ফতুল্লায় প্রাইম ব্যাংক ৮ উইকেটে ২৬৮ রান করে ৫৮ রানে জিতেছে বোলারদের কল্যাণে। রেজাউর রহমান রাজার ৪ ও রুবেল হোসেনের ৩ উইকেটে ব্রাদার্স মাত্র ২১০ রানে গুটিয়ে যায়। দিনের সর্বোচ্চ রান হয়েছে বিকেএসপিতে। বড় ব্যবধানের জয়ও পেয়েছে তারা। শেখ জামাল ৫ উইকেটে ৩১৭ রান করে নবাগত অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ২০৩ রানে হারিয়েছে। অগ্রণী মাত্র ১১৪ রানে অলআউট হয়। বিশাল ব্যবধানে জেতায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের রানরেটও বেড়েছে দ্বিগুণ। ২.৯১ রান রেট নিয়ে ৪ পয়েন্টে শীর্ষে তারা। দুইয়ে থাকা রূপগঞ্জ ০.৮৩ রান রেটে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে প্রাইম ব্যাংক।
গত বছর ডিপিএলেই সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাব্বির রহমান। সেটা ছিল আবার ৩ বছর পর পাওয়া। সুপার লিগে ভালো করে ফিরেছিলেন জাতীয় দলেও। কিন্তু পারফরম করে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। দল থেকে ছিটকে গিয়ে এখন ঘরোয়া ক্রিকেটকে আবার আঁকড়ে ধরেতে হচ্ছে সাব্বিরের। ডিপিএলে সেই চেষ্টাটা বেশ ভালোভাবেই করছেন। প্রথম ম্যাচে ৪৯ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছিলেন। কাল মিরপুরে সেঞ্চুরি করেই থামলেন। কোনো ভুল না করা সেঞ্চুরির ইনিংসে বেশ সাবলীল ব্যাটিং করেছেন সাব্বির। ৭৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ইরফান সুক্কুরকে নিয়ে ১৫৭ রানের জুটি গড়েন। টানা দ্বিতীয় ফিফটি করে ইরফান ৭৪ বলে ৭৪ রানে আউট হলেও শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন সাব্বির। সিটির হয়ে তরুণ আবদুল্লাহ আল মামুন সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন।
ব্রাদার্সের বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের নায়ক বোলাররা। মাত্র ৫ ওভারে ৩ উইকেট এনে দিয়েছেন রুবেল। এরপর আর বল করেননি। তরুণ পেসার রাজা ৬.১ ওভারে নিয়েছেন ৩০ রানে ৪ উইকেট। ব্যাটিং উইকেট সর্বস্ব এবারের লিগে এটাই এখন পর্যন্ত হওয়া ৯ ম্যাচে কোনো বোলারের সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া অভিজ্ঞ অলক কাপালি নেন ২ উইকেট। ফতুল্লার সহজ ব্যাটিং উইকেটে তাই ২৬৯ রানের লক্ষ্য পেয়েও তা টপকাতে পারেনি ব্রাদার্স। এক সাব্বির হোসেন বাদে বড় রান করতে পারেননি কোনো ব্যাটার। আনিসুল ইসলাম ইমন ৫৭ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন। মাত্র ৬ লিস্ট এ ম্যাচ খেলা ২৬ বছর বয়সী সাব্বিরের এটা প্রথম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩ উইকেট নেওয়ায় ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৩ রান করেছেন গত যুব বিশ্বকাপ খেলা প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। এছাড়া দিপু ৪৩, আল-আমিন ২০ ও অলক কাপালি ২৮ রান করেন।
দিনের একপেশে ম্যাচে চ্যাম্পিয়নদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি অগ্রণী। শুরুর তিন ব্যাটারের বড় রানে বড় স্কোর পেয়ে যায় শেখ জামাল। সাব্বির রহমানের মতো প্রায় বছর খানেক পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সাইফ হাসানও। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া এই ওপেনার সবশেষ উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার ১০৮ অপর ওপেনার সৈকত আলির ৮৮ বলে ৭৮ ও তিনে নামা ফজলে রাব্বির ৫৭ বলে ৮০ রানে তিনশো ছাড়ানো স্কোর গড়ে শেখ জামাল। জবাবে বিকেএসপির উইকেট পড়তে না পারায় সাইফ হাসান ও পারভেজ রসুলদের স্পিনে কুপোকাত হয় অগ্রণী। তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন মাত্র তিন ব্যাটার।
১ থেকে ৫ জানুয়ারি, ২০২১ এ মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্মরণীয় জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। সেই জয়ের নায়ক ছিলেন ফাস্ট বোলার এবাদত হোসেন দ্বিতীয় ইনিংসে তার ২১-৬-৪৬-৬ বোলিংয়ের জন্য। উইজডেন সাময়িকীর রিভিউয়ের মতো ‘ইএসপিএনক্রিকইনফো অ্যাওয়ার্ডস’ও টেস্টে ২০২২’র সেরা বোলিংয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে এবাদতের ওই বোলিংকে।
এই স্বীকৃতি পাওয়ার দৌড়ে এবাদতের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি। ২০২১’র মার্চে লাহোর টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক স্পেলে ৫৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন কামিন্স, ২১৪/৩ থেকে ২৬৮তেই গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান যে স্পেলে। এর আগের মাসে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে হেনরির ৭/২৩ বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ৯৫ রানে। কিন্তু এবাদতকে তারা ছাপিয়ে যেতে পারেননি। খ্যাতনামা ক্রিকেটার, সাংবাদিকদের ভোটে সেরা হয়েছেন এবাদত। সেই সঙ্গে গত ৭ ডিসেম্বর মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজের ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস পেয়েছে সেরা ওয়ানডে ব্যাটিংয়ের স্বীকৃতি। ওই ইনিংসে ২৭১ রান করে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ সেই ওয়ানডেতে।
ক্রিকইনফোর কিছু তথ্যপঞ্জিও বুঝিয়ে দিয়েছে, এবাদতের সেই স্পেলের গুরুত্ব কতটা। ২০১৩ সাল থেকে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ওই টেস্টের মাঝে ৮ বছরে বাংলাদেশের কোনো ফাস্ট বোলার ৫ উইকেট পাননি। এবাদতের সেই স্পেল দিয়ে খরাটি কাটে। ওই টেস্টের আগে এই সংস্করণে তার বোলিং গড় ছিল ৮১.৫৪। সেই টেস্টের পর বোলিং–গড় নেমে আসে ৫৬.৮৭ তে। সেই টেস্টে বাংলাদেশের সব পেসার মিলে নিয়েছিলেন মোট ১৩ উইকেট। টেস্টে এক ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের এটাই সেরা সাফল্য। সেখানে এবাদতের নিজের অবদান ছিল ৭ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। এবাদতের ওই স্পেলের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিল উইজডেন তার জানুয়ারির রিভিউয়ে : চার ফিফটিতে প্রথম ইনিংসেই ১৩০ রানের লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩তম ওভারে প্রথম বল হাতে নেন এবাদত, টানা ৯ ওভারের প্রথম স্পেলে ২৩ রান দিয়ে ব্রেক থ্রু দেন ডেভন কনওয়েকে আউট করে। ৪৮তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলের জন্য যখন ফেরেন এবাদত, নিউজিল্যান্ড তখন ১১৭/২। এই স্পেলের চতুর্থ ওভারেই তিন বলের মধ্যে উইকেট উপড়ে ফেলেন উইল ইয়াং (৬৯) ও সদ্য খেলতে আসা হেনরি নিকোলসের। নিজের পরের ওভারে টম ব্লান্ডলকে এলবিডব্লিউ করে এবাদত নেন চতুর্থ উইকেট। ৭ ওভারের স্পেলের পর অধিনায়ক বিশ্রাম দেন এবাদতকে। পরের দিনের দ্বিতীয় ওভারের, দ্বিতীয় বলেই রস টেইলরের ১০৪ বলের প্রতিরোধ ভেঙে দেন এবাদত, আবার বোল্ড। প্রথমবার ৫ উইকেট এবাদতের (১৮-৪-৪১-৫)। কিছুক্ষণ পর কাইল জেমিসনকে আউট করে নেন ষষ্ঠ উইকেট। ১৬০/৭ এ পরিণত নিউজিল্যান্ডকে আর ৯ রানের মধ্যে মুড়িয়ে ৪০ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
‘এবাদত হোসেন দ্রুততম বোলার নন, সুইংও খুব বেশি নয়, আর উচ্চতাও ৬ ফুট না। কিন্তু কখনো কখনো এমন হয়, দুর্দান্ত একটি টেস্ট স্পেল করতে এসবের কোনো কিছুরই দরকার পড়ে না। কখনো কখনো জীবনে সব রকম অবিচার সহ্য করার পর পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফল মেলে’ রিভিউয়ে এবাদতের বিশেষত্বের এভাবেই বর্ণনা করেছিল উইজডেন।
লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শীর্ষ আছে বার্সেলোনা। তবে আজ বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে পয়েন্ট ব্যবধান কমানোর সুযোগ পাচ্ছে কার্লো আনচেলত্তির দল। লিগের ফিরতি লেগে আজ ক্যাম্প ন্যুতে ‘এল ক্লাসিকো’।
বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বার্সেলোনা। কাতালান ক্লাবটির বিরুদ্ধে রেফারিদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগের বিষয়ে কয়েকদিন আগে নিজেদের অবস্থান জানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনা ও ক্লাবটির সাবেক দুই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া স্প্যানিশ প্রসিকিউটরদের সঙ্গে যোগ দেবে রিয়ালও। এমন পরিস্থিতিতে আজ লা লিগায় মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি।
অক্টোবরে লা লিগায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হেরেছিল বার্সেলোনা ৩-১ এ। তবে জানুয়ারিতে রিয়াদে স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনাল এবং ২ মার্চ কোপা দেল রে’র প্রথম সেমিফাইনালে রিয়ালের মাঠে জিতেছিল বার্সেলোনা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সা শেষ তিন ম্যাচ জিতেছে মাত্র এক গোলে। রিয়ালও শেষ তিন ম্যাচে অপরাজিত। তাদের সবশেষ হারটি বার্সার বিপক্ষেই কোপা দেল রেতে। তবে একটি তথ্যে স্বস্তি পেতে পারেন রিয়াল সমর্থকরা। লা লিগার লড়াইয়ে ২০১৮ এর অক্টোবরের পর থেকে বার্নাব্যুতে হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল ও বার্সেলোনা এর আগে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ২৫২ বার মুখোমুখি হয়েছে। ১০১টিতে জয় রিয়ালের, ৯৯ জয় বার্সার। ড্র হয় ৫২ ম্যাচ।
ইংল্যান্ড সিরিজের পর দুবাইয়ে খুনের মামলায় পলাতক আসামির স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তার এই ঝটিকা সফর নিয়ে দেশে সমালোচনা হচ্ছে বিস্তর। এ নিয়ে এতদিন সংবাদ মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বিসিবি। কাল ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস মুখ খুললেন। জানালেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজ শেষে সাকিবের এই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। এখন সিরিজ চলাকালীন কিছুই বলবে না বিসিবি।
ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ও আইরিশ সিরিজের মাঝে মাত্র দুদিনের বিরতি ছিল। ছুটি থাকায় এই সময়ে ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত যে কোনো কিছুই করতে পারেন। এখানে বিসিবির বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তাই সাকিবকে কিছু বলতে পারছে না বিসিবি। তবে ভবিষ্যতে এমন চুক্তি বা আমন্ত্রণে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। তবে সেটা সাকিবের সঙ্গে বসে পুরো ঘটনা বিস্তারিত জানান পর সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। জালাল ইউনুস জানান, ‘যে ঘটনা ঘটেছে আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে বসা বা সাকিবের সঙ্গে কথা বলা এসব নিয়ে এখনো কথা হয়নি। সিরিজ শেষে আমরা দেখব যে বিসিবির কোন জায়গাটাতে কী করার আছে। কোথায় কী করতে হবে সাকিব সব জানে। আমাদের একটা ডিসিপ্লিনারি কমিটি আছে। ওরা এটা নিয়ে দেখবে কী করা যায়। এখন সিরিজের মধ্যে এগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাকিব শুধু বিসিবি’র সম্পদ না, দেশের সম্পদ। তার দিকে লুক আফটার করা আমাদের দায়িত্ব।
সাকিবদের আবেদন : ৩১ মার্চ থেকে শুরু আইপিএলের ১৬তম আসর। তার ঠিক পরদিন বাংলাদেশকে নামতে হবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে। টেস্ট দলের সদস্য সাকিব আল হাসান ও লিটন দাশেরও এই ম্যাচে ব্যস্ততা আছে। তবে দুজনই আইপিএল খেলার জন্য বিসিবির কাছে অনাপত্তিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। সাকিব ও লিটন ছাড়াও এবার আইপিএলে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাকে ধরে রেখেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। আর সাকিব ও লিটনের জায়গা হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সে। এক মৌসুম পর সাকিব এবার নিলামে ডাক পেয়েছেন। আর লিটন এই প্রথম। মোস্তাফিজ টেস্ট দলে না থাকায় তার আইপিএলে যাওয়া নিয়ে বাধা নেই। তবে সাকিব ও লিটন অনাপত্তিপত্র পাবেন কি না সে ব্যাপারে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।