
১ থেকে ৫ জানুয়ারি, ২০২১ এ মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্মরণীয় জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। সেই জয়ের নায়ক ছিলেন ফাস্ট বোলার এবাদত হোসেন দ্বিতীয় ইনিংসে তার ২১-৬-৪৬-৬ বোলিংয়ের জন্য। উইজডেন সাময়িকীর রিভিউয়ের মতো ‘ইএসপিএনক্রিকইনফো অ্যাওয়ার্ডস’ও টেস্টে ২০২২’র সেরা বোলিংয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে এবাদতের ওই বোলিংকে।
এই স্বীকৃতি পাওয়ার দৌড়ে এবাদতের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি। ২০২১’র মার্চে লাহোর টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক স্পেলে ৫৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন কামিন্স, ২১৪/৩ থেকে ২৬৮তেই গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান যে স্পেলে। এর আগের মাসে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে হেনরির ৭/২৩ বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ৯৫ রানে। কিন্তু এবাদতকে তারা ছাপিয়ে যেতে পারেননি। খ্যাতনামা ক্রিকেটার, সাংবাদিকদের ভোটে সেরা হয়েছেন এবাদত। সেই সঙ্গে গত ৭ ডিসেম্বর মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজের ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস পেয়েছে সেরা ওয়ানডে ব্যাটিংয়ের স্বীকৃতি। ওই ইনিংসে ২৭১ রান করে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ সেই ওয়ানডেতে।
ক্রিকইনফোর কিছু তথ্যপঞ্জিও বুঝিয়ে দিয়েছে, এবাদতের সেই স্পেলের গুরুত্ব কতটা। ২০১৩ সাল থেকে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ওই টেস্টের মাঝে ৮ বছরে বাংলাদেশের কোনো ফাস্ট বোলার ৫ উইকেট পাননি। এবাদতের সেই স্পেল দিয়ে খরাটি কাটে। ওই টেস্টের আগে এই সংস্করণে তার বোলিং গড় ছিল ৮১.৫৪। সেই টেস্টের পর বোলিং–গড় নেমে আসে ৫৬.৮৭ তে। সেই টেস্টে বাংলাদেশের সব পেসার মিলে নিয়েছিলেন মোট ১৩ উইকেট। টেস্টে এক ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের এটাই সেরা সাফল্য। সেখানে এবাদতের নিজের অবদান ছিল ৭ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। এবাদতের ওই স্পেলের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিল উইজডেন তার জানুয়ারির রিভিউয়ে : চার ফিফটিতে প্রথম ইনিংসেই ১৩০ রানের লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩তম ওভারে প্রথম বল হাতে নেন এবাদত, টানা ৯ ওভারের প্রথম স্পেলে ২৩ রান দিয়ে ব্রেক থ্রু দেন ডেভন কনওয়েকে আউট করে। ৪৮তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলের জন্য যখন ফেরেন এবাদত, নিউজিল্যান্ড তখন ১১৭/২। এই স্পেলের চতুর্থ ওভারেই তিন বলের মধ্যে উইকেট উপড়ে ফেলেন উইল ইয়াং (৬৯) ও সদ্য খেলতে আসা হেনরি নিকোলসের। নিজের পরের ওভারে টম ব্লান্ডলকে এলবিডব্লিউ করে এবাদত নেন চতুর্থ উইকেট। ৭ ওভারের স্পেলের পর অধিনায়ক বিশ্রাম দেন এবাদতকে। পরের দিনের দ্বিতীয় ওভারের, দ্বিতীয় বলেই রস টেইলরের ১০৪ বলের প্রতিরোধ ভেঙে দেন এবাদত, আবার বোল্ড। প্রথমবার ৫ উইকেট এবাদতের (১৮-৪-৪১-৫)। কিছুক্ষণ পর কাইল জেমিসনকে আউট করে নেন ষষ্ঠ উইকেট। ১৬০/৭ এ পরিণত নিউজিল্যান্ডকে আর ৯ রানের মধ্যে মুড়িয়ে ৪০ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
‘এবাদত হোসেন দ্রুততম বোলার নন, সুইংও খুব বেশি নয়, আর উচ্চতাও ৬ ফুট না। কিন্তু কখনো কখনো এমন হয়, দুর্দান্ত একটি টেস্ট স্পেল করতে এসবের কোনো কিছুরই দরকার পড়ে না। কখনো কখনো জীবনে সব রকম অবিচার সহ্য করার পর পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফল মেলে’ রিভিউয়ে এবাদতের বিশেষত্বের এভাবেই বর্ণনা করেছিল উইজডেন।
অনেক রেকর্ডই হলো শনিবারের সিলেটে, শুধু হলো না দুজনের সেঞ্চুরি। কাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান টপকে কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করে ৩৩৮/৮। এই ম্যাচে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ৭০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে অভিষেকেই তৌহিদ হৃদয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভেতর সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন। এত প্রাপ্তির ভিড়েও কাঁটার মতো খচখচ করছে দুটো ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি। ৯৩ রানে আউট হয়েছেন সাকিব, ৯২ রানে হৃদয়। দুজনেই পেতে পারতেন সেঞ্চুরি, এমনকি মুশফিকুর রহিমের ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটাও হতে পারত আরও বড়। প্রায় ৯ মাস পর ওয়ানডেতে তিনশ’র বেশি রান বাংলাদেশের এই তৃপ্তির সঙ্গে মিশে আছে ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির আক্ষেপও।
২০১৯ সালের ১৭ জুন টনটনে উইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। এরপর ওয়ানডেতে তিন অঙ্কের কাছাকাছি এসেছেন বার তিনেক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়নি একবারের জন্যও। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৪০ রান তাড়ায় সাকিব শেষ পর্যন্ত ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে যান, এর কয়েক দিন আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটায় সাকিব আউট হন ৭৫ রান করে। আর কাল দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও সাকিব আউট হয়ে গেলেন ৯৩ রানে। ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে আউট হয়েছেন সাকিব, এর আগে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে ৯৭ রানে আউট হওয়ার। কাল দারুণ ছন্দে ছিলেন সাকিব, হ্যারি ট্যাকটরের এক ওভারে ২২ রানও নেন ৫ বাউন্ডারি আর একটি ডাবলসে। যখন মনে হচ্ছিল শতরানটা স্রেফ সময়ের ব্যাপার তখনই ছন্দপতন। গ্রাহাম হিউমের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করা ইয়র্কার বলটা একটু দ্বিধান্বিত মনেই বোধহয় খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। শেষ সময়ে হঠাৎ ব্যাটের ফেসটা ওপেন করলেন, বল ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক লোরকান টাকারের হাতে। মুহূর্তেই স্তব্ধ গ্যালারি। সাকিব রিভিউও নেননি, নিজেই জানতেন বল লেগেছে ব্যাটে। তাই বিষণœ মনে ধরেছেন ড্রেসিং রুমের পথ। ১০ নম্বর ওয়ানডে শতকটা আর পাওয়া হলো না তার।
কাল ব্যাট করতে যখন নামেন সাকিব, তখন ছিলেন ৭ হাজার রান থেকে ২৪ রান দূরে। ফিরলেন শতরান থেকে ৭ রান দূরে থেকে। মাঝের সময়টা পুরোটাই যেন ‘সাকিব শো’। ব্যাটিংয়ে যেন ফিরিয়ে এনেছিলেন সেই ২০১৯ বিশ্বকাপ। ব্যাটে বাহারি সব শট। ট্রেডমার্ক কাট থেকে শুরু করে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ড্রাইভ, সুইপ সবই খেলেছেন সাকিব। যখন আউট হলেন তখন ইনিংসের প্রায় ১৩ ওভার বাকি। অনায়াসেই সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন। কিন্তু ক্ষণিকের ভুল তাকে থামিয়ে দেয় ৯৩ রানেই।
তৌহিদ হৃদয় কাল বাংলাদেশের ১৪০তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে খেললেন। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের চারজন, কিন্তু ওয়ানডেতে এই কৃতিত্ব নেই কারও। তৌহিদ হৃদয় সেই কীর্তি গড়ার মাত্র ৮ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান। গ্রাহাম হিউমের সেøায়ার ইয়র্কারে বিভ্রান্ত হয়ে যান তৌহিদ, বল তার দু’পায়ের ফাঁক গলে স্টাম্পে আঘাত করে। ৮৪ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটার এমন করুণ পরিণতি নষ্ট করে দিল আরেকটি অমিত সম্ভাবনাও। ওয়ানডে ইতিহাসে অভিষেকে চার নম্বরের পরে নামা কোনো ব্যাটসম্যানের শতরান নেই, কাল পাঁচে ব্যাটিংয়ে নামা হৃদয় সেই সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ৯২ রানে। সাকিব আর হৃদয়ের ৫ম উইকেটে ১৩৫ রানের জুটি এই মাঠেই পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
রেকর্ড হলো অনেকই। হৃদয় হয়ে গেছেন অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা ক্রিকেটার। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ দলীয় রান, সাকিবের ৭ হাজার রানসহ অনেক কিছুই। তবুও দিনশেষে আক্ষেপ হয়ে থাকল দুজনের ইনিংসেরই ‘অপমৃত্য’।
‘হৃদয়ের গল্প...শুরু হলো এই তো’, অ্যান্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় একটি গানের কলির অনুকরণে বলাই যায় কথাটা। তাওহিদ হৃদয়ের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার শুরু হলো কাল। এক বছর আগে খেলা ছেড়ে দিতে চাওয়া ছেলেটাই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়। অথচ শুরুতে ভুয়া এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে খেলাই ছেড়ে দেওয়ার দশা হয়েছিল তার!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসর দিয়ে যেন পুনর্জন্মই হয়েছে তাওহিদ হৃদয়ের। আগের আসরে নিজে খুব একটা ভালো করেননি, ফাইনালে দেখেছেন দলকে ১ রানে হেরে যেতে। তারপরই প্রতিজ্ঞা, বদলে ফেলতে হবে নিজেকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের খেলোয়াড়দের হাই পারফরম্যান্স দলে নেয় বিসিবি। সেখানেই সোহেল ইসলামসহ অন্য কোচদের অধীনে অনেক অনুশীলন করেছেন। ছোটবেলা থেকেই যাকে চেনেন, সেই খালেদ মাহমুদ সুজনও রেখেছেন ভরসার হাত। এবারের বিপিএলে তাই দেখা গেল এক বদলে যাওয়া হৃদয়কে। সাহসী ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলাই যার মন্ত্র। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে দারুণ এক বিপিএল কাটানোর পুরস্কার হিসেবে অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টি দলে। সেখানেও দুটো ম্যাচে ছোট দুটো ইনিংস খেলে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও ঠিক চোখে লাগার মতো কিছু ছিল না। কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংসটায় হৃদয় যেন জানান দিলেন, লম্বা সময় থাকতেই তার আসা।
কাল ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে হৃদয় বলছিলেন, কীভাবে বারবার বাধা এসেছে জীবনে, ‘আসলে সে সময় প্রতারিত হয়ে অনেক ক্ষতিই হয়েছিল আমার। বাসা থেকে খেলা চালিয়ে যেতে দিতে চাচ্ছিল না। বাবা অনেক বাধা দিয়েছে, পড়াশোনা করতে বলত তবে আমি পড়াশোনা করতে চাইতাম না বরং ক্রিকেটটাই খেলতে চাইতাম। ওই সময় আমার মা অনেক পাশে ছিলেন’। ক্রিকেটটা চালিয়ে গেলেন মায়ের প্রশ্রয়ে, একটা সময়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগও হলো। শুরুতে অধিনায়ক ছিলেন, পরে সেটা গেল আকবর আলির কাছে। বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পর দেখলেন একে একে সতীর্থ অনেকেরই সুযোগ হচ্ছে জাতীয় দলে। নিজে বিপিএলে বেশ খারাপ করলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। তখন ভেবেছিলেন খেলাই ছেড়ে দেবেন! পরে ভাবলেন নিজেকে ভাঙতে হবে, গড়তে হবে নতুন করে। নতুন রূপেই ফিরে এলেন বিপিএলে, এরপর সবকিছুই ঘটতে থাকল সিনেমা গল্পের মতোই! বিপিএল পথ তৈরি করে দিল টি-টোয়েন্টি দলে, এরপর আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। তাতে অল্পের জন্য শতরান মিস হলেও আক্ষেপ নেই হৃদয়ের, ‘আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আমি তো আরও আগেই আউট হয়ে যেতে পারতাম। হয়তো এটাই ভাগ্যে ছিল। আমিই অভিষেকে সবচেয়ে বেশি রান করেছি (বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ভেতর) এটা জেনে ভালো লাগছে, তবে আমি আশা করছি সামনে যাদের অভিষেক হবে তারা আরও ভালো করবে।’
এখন আর বাবা-মায়ের কোনো অভিযোগ নেই। অভিষেকের পর বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়াতেই সেটা টের পেয়েছেন হৃদয়, ‘সব বাবা-মায়েরই ছেলে ভালো করলে ভালো লাগবে। তাদেরও লেগেছে। তবে আমার মা ক্রিকেট বোঝে না, শুধু জানে আমি এটা ভালোবাসি।’
ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাই বারবার ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার পরও তাকে ফিরিয়ে এনেছে ২২ গজে। হয়তো এই দিনটার জন্যই।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার ভালো উইকেটের দারুণ সদ্ব্যবহার করছেন ব্যাটাররা। দলগুলো বড় রান পাচ্ছে, ব্যাটাররাও তৈরি করছেন ব্যক্তিগত মাইলফলক। কাল তেমনি তিন ম্যাচে তিন ব্যাটার করেছেন সেঞ্চুরি। শেখ জামাল ধানম-ির হয়ে সাইফ হাসান ১১২ বলে ১০৮। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সাব্বির রহমান রুম্মান অপরাজিত ১০৭ বলে ১১০ ও ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাব্বির হোসেন ১১৮ বলে ১২৫। প্রথম দুজনের দল জিতলেও ব্রাদার্সের সাব্বিরের প্রথম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরির খুশি মাটি হয়েছে দল হারায়।
আগের ম্যাচে পায়ে হালকা চোট পাওয়ায় দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেননি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। প্রতিপক্ষ দুর্বল সিটি ক্লাব বলে ঝুঁকি নিতে চাননি। তাকে ছাড়া রূপগঞ্জের জিততে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি। সিটি ক্লাবের করা ২৪৮ রান প্রায় ৮ ওভার ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই সফল তাড়া করেছে (২৫২/৩) রূপগঞ্জ। ফতুল্লায় প্রাইম ব্যাংক ৮ উইকেটে ২৬৮ রান করে ৫৮ রানে জিতেছে বোলারদের কল্যাণে। রেজাউর রহমান রাজার ৪ ও রুবেল হোসেনের ৩ উইকেটে ব্রাদার্স মাত্র ২১০ রানে গুটিয়ে যায়। দিনের সর্বোচ্চ রান হয়েছে বিকেএসপিতে। বড় ব্যবধানের জয়ও পেয়েছে তারা। শেখ জামাল ৫ উইকেটে ৩১৭ রান করে নবাগত অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ২০৩ রানে হারিয়েছে। অগ্রণী মাত্র ১১৪ রানে অলআউট হয়। বিশাল ব্যবধানে জেতায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের রানরেটও বেড়েছে দ্বিগুণ। ২.৯১ রান রেট নিয়ে ৪ পয়েন্টে শীর্ষে তারা। দুইয়ে থাকা রূপগঞ্জ ০.৮৩ রান রেটে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে প্রাইম ব্যাংক।
গত বছর ডিপিএলেই সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাব্বির রহমান। সেটা ছিল আবার ৩ বছর পর পাওয়া। সুপার লিগে ভালো করে ফিরেছিলেন জাতীয় দলেও। কিন্তু পারফরম করে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। দল থেকে ছিটকে গিয়ে এখন ঘরোয়া ক্রিকেটকে আবার আঁকড়ে ধরেতে হচ্ছে সাব্বিরের। ডিপিএলে সেই চেষ্টাটা বেশ ভালোভাবেই করছেন। প্রথম ম্যাচে ৪৯ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছিলেন। কাল মিরপুরে সেঞ্চুরি করেই থামলেন। কোনো ভুল না করা সেঞ্চুরির ইনিংসে বেশ সাবলীল ব্যাটিং করেছেন সাব্বির। ৭৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ইরফান সুক্কুরকে নিয়ে ১৫৭ রানের জুটি গড়েন। টানা দ্বিতীয় ফিফটি করে ইরফান ৭৪ বলে ৭৪ রানে আউট হলেও শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন সাব্বির। সিটির হয়ে তরুণ আবদুল্লাহ আল মামুন সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন।
ব্রাদার্সের বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের নায়ক বোলাররা। মাত্র ৫ ওভারে ৩ উইকেট এনে দিয়েছেন রুবেল। এরপর আর বল করেননি। তরুণ পেসার রাজা ৬.১ ওভারে নিয়েছেন ৩০ রানে ৪ উইকেট। ব্যাটিং উইকেট সর্বস্ব এবারের লিগে এটাই এখন পর্যন্ত হওয়া ৯ ম্যাচে কোনো বোলারের সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া অভিজ্ঞ অলক কাপালি নেন ২ উইকেট। ফতুল্লার সহজ ব্যাটিং উইকেটে তাই ২৬৯ রানের লক্ষ্য পেয়েও তা টপকাতে পারেনি ব্রাদার্স। এক সাব্বির হোসেন বাদে বড় রান করতে পারেননি কোনো ব্যাটার। আনিসুল ইসলাম ইমন ৫৭ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন। মাত্র ৬ লিস্ট এ ম্যাচ খেলা ২৬ বছর বয়সী সাব্বিরের এটা প্রথম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩ উইকেট নেওয়ায় ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৩ রান করেছেন গত যুব বিশ্বকাপ খেলা প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। এছাড়া দিপু ৪৩, আল-আমিন ২০ ও অলক কাপালি ২৮ রান করেন।
দিনের একপেশে ম্যাচে চ্যাম্পিয়নদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি অগ্রণী। শুরুর তিন ব্যাটারের বড় রানে বড় স্কোর পেয়ে যায় শেখ জামাল। সাব্বির রহমানের মতো প্রায় বছর খানেক পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সাইফ হাসানও। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া এই ওপেনার সবশেষ উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার ১০৮ অপর ওপেনার সৈকত আলির ৮৮ বলে ৭৮ ও তিনে নামা ফজলে রাব্বির ৫৭ বলে ৮০ রানে তিনশো ছাড়ানো স্কোর গড়ে শেখ জামাল। জবাবে বিকেএসপির উইকেট পড়তে না পারায় সাইফ হাসান ও পারভেজ রসুলদের স্পিনে কুপোকাত হয় অগ্রণী। তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন মাত্র তিন ব্যাটার।
লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শীর্ষ আছে বার্সেলোনা। তবে আজ বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে পয়েন্ট ব্যবধান কমানোর সুযোগ পাচ্ছে কার্লো আনচেলত্তির দল। লিগের ফিরতি লেগে আজ ক্যাম্প ন্যুতে ‘এল ক্লাসিকো’।
বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বার্সেলোনা। কাতালান ক্লাবটির বিরুদ্ধে রেফারিদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগের বিষয়ে কয়েকদিন আগে নিজেদের অবস্থান জানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনা ও ক্লাবটির সাবেক দুই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া স্প্যানিশ প্রসিকিউটরদের সঙ্গে যোগ দেবে রিয়ালও। এমন পরিস্থিতিতে আজ লা লিগায় মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি।
অক্টোবরে লা লিগায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হেরেছিল বার্সেলোনা ৩-১ এ। তবে জানুয়ারিতে রিয়াদে স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনাল এবং ২ মার্চ কোপা দেল রে’র প্রথম সেমিফাইনালে রিয়ালের মাঠে জিতেছিল বার্সেলোনা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সা শেষ তিন ম্যাচ জিতেছে মাত্র এক গোলে। রিয়ালও শেষ তিন ম্যাচে অপরাজিত। তাদের সবশেষ হারটি বার্সার বিপক্ষেই কোপা দেল রেতে। তবে একটি তথ্যে স্বস্তি পেতে পারেন রিয়াল সমর্থকরা। লা লিগার লড়াইয়ে ২০১৮ এর অক্টোবরের পর থেকে বার্নাব্যুতে হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল ও বার্সেলোনা এর আগে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ২৫২ বার মুখোমুখি হয়েছে। ১০১টিতে জয় রিয়ালের, ৯৯ জয় বার্সার। ড্র হয় ৫২ ম্যাচ।
ইংল্যান্ড সিরিজের পর দুবাইয়ে খুনের মামলায় পলাতক আসামির স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তার এই ঝটিকা সফর নিয়ে দেশে সমালোচনা হচ্ছে বিস্তর। এ নিয়ে এতদিন সংবাদ মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বিসিবি। কাল ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস মুখ খুললেন। জানালেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজ শেষে সাকিবের এই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। এখন সিরিজ চলাকালীন কিছুই বলবে না বিসিবি।
ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ও আইরিশ সিরিজের মাঝে মাত্র দুদিনের বিরতি ছিল। ছুটি থাকায় এই সময়ে ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত যে কোনো কিছুই করতে পারেন। এখানে বিসিবির বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তাই সাকিবকে কিছু বলতে পারছে না বিসিবি। তবে ভবিষ্যতে এমন চুক্তি বা আমন্ত্রণে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। তবে সেটা সাকিবের সঙ্গে বসে পুরো ঘটনা বিস্তারিত জানান পর সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। জালাল ইউনুস জানান, ‘যে ঘটনা ঘটেছে আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে বসা বা সাকিবের সঙ্গে কথা বলা এসব নিয়ে এখনো কথা হয়নি। সিরিজ শেষে আমরা দেখব যে বিসিবির কোন জায়গাটাতে কী করার আছে। কোথায় কী করতে হবে সাকিব সব জানে। আমাদের একটা ডিসিপ্লিনারি কমিটি আছে। ওরা এটা নিয়ে দেখবে কী করা যায়। এখন সিরিজের মধ্যে এগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাকিব শুধু বিসিবি’র সম্পদ না, দেশের সম্পদ। তার দিকে লুক আফটার করা আমাদের দায়িত্ব।
সাকিবদের আবেদন : ৩১ মার্চ থেকে শুরু আইপিএলের ১৬তম আসর। তার ঠিক পরদিন বাংলাদেশকে নামতে হবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে। টেস্ট দলের সদস্য সাকিব আল হাসান ও লিটন দাশেরও এই ম্যাচে ব্যস্ততা আছে। তবে দুজনই আইপিএল খেলার জন্য বিসিবির কাছে অনাপত্তিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। সাকিব ও লিটন ছাড়াও এবার আইপিএলে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাকে ধরে রেখেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। আর সাকিব ও লিটনের জায়গা হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সে। এক মৌসুম পর সাকিব এবার নিলামে ডাক পেয়েছেন। আর লিটন এই প্রথম। মোস্তাফিজ টেস্ট দলে না থাকায় তার আইপিএলে যাওয়া নিয়ে বাধা নেই। তবে সাকিব ও লিটন অনাপত্তিপত্র পাবেন কি না সে ব্যাপারে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।