
লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শীর্ষ আছে বার্সেলোনা। তবে আজ বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে পয়েন্ট ব্যবধান কমানোর সুযোগ পাচ্ছে কার্লো আনচেলত্তির দল। লিগের ফিরতি লেগে আজ ক্যাম্প ন্যুতে ‘এল ক্লাসিকো’।
বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বার্সেলোনা। কাতালান ক্লাবটির বিরুদ্ধে রেফারিদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগের বিষয়ে কয়েকদিন আগে নিজেদের অবস্থান জানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনা ও ক্লাবটির সাবেক দুই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া স্প্যানিশ প্রসিকিউটরদের সঙ্গে যোগ দেবে রিয়ালও। এমন পরিস্থিতিতে আজ লা লিগায় মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি।
অক্টোবরে লা লিগায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হেরেছিল বার্সেলোনা ৩-১ এ। তবে জানুয়ারিতে রিয়াদে স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনাল এবং ২ মার্চ কোপা দেল রে’র প্রথম সেমিফাইনালে রিয়ালের মাঠে জিতেছিল বার্সেলোনা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সা শেষ তিন ম্যাচ জিতেছে মাত্র এক গোলে। রিয়ালও শেষ তিন ম্যাচে অপরাজিত। তাদের সবশেষ হারটি বার্সার বিপক্ষেই কোপা দেল রেতে। তবে একটি তথ্যে স্বস্তি পেতে পারেন রিয়াল সমর্থকরা। লা লিগার লড়াইয়ে ২০১৮ এর অক্টোবরের পর থেকে বার্নাব্যুতে হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল ও বার্সেলোনা এর আগে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ২৫২ বার মুখোমুখি হয়েছে। ১০১টিতে জয় রিয়ালের, ৯৯ জয় বার্সার। ড্র হয় ৫২ ম্যাচ।
অনেক রেকর্ডই হলো শনিবারের সিলেটে, শুধু হলো না দুজনের সেঞ্চুরি। কাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান টপকে কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করে ৩৩৮/৮। এই ম্যাচে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ৭০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে অভিষেকেই তৌহিদ হৃদয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভেতর সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন। এত প্রাপ্তির ভিড়েও কাঁটার মতো খচখচ করছে দুটো ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি। ৯৩ রানে আউট হয়েছেন সাকিব, ৯২ রানে হৃদয়। দুজনেই পেতে পারতেন সেঞ্চুরি, এমনকি মুশফিকুর রহিমের ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটাও হতে পারত আরও বড়। প্রায় ৯ মাস পর ওয়ানডেতে তিনশ’র বেশি রান বাংলাদেশের এই তৃপ্তির সঙ্গে মিশে আছে ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির আক্ষেপও।
২০১৯ সালের ১৭ জুন টনটনে উইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। এরপর ওয়ানডেতে তিন অঙ্কের কাছাকাছি এসেছেন বার তিনেক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়নি একবারের জন্যও। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৪০ রান তাড়ায় সাকিব শেষ পর্যন্ত ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে যান, এর কয়েক দিন আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটায় সাকিব আউট হন ৭৫ রান করে। আর কাল দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও সাকিব আউট হয়ে গেলেন ৯৩ রানে। ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে আউট হয়েছেন সাকিব, এর আগে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে ৯৭ রানে আউট হওয়ার। কাল দারুণ ছন্দে ছিলেন সাকিব, হ্যারি ট্যাকটরের এক ওভারে ২২ রানও নেন ৫ বাউন্ডারি আর একটি ডাবলসে। যখন মনে হচ্ছিল শতরানটা স্রেফ সময়ের ব্যাপার তখনই ছন্দপতন। গ্রাহাম হিউমের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করা ইয়র্কার বলটা একটু দ্বিধান্বিত মনেই বোধহয় খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। শেষ সময়ে হঠাৎ ব্যাটের ফেসটা ওপেন করলেন, বল ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক লোরকান টাকারের হাতে। মুহূর্তেই স্তব্ধ গ্যালারি। সাকিব রিভিউও নেননি, নিজেই জানতেন বল লেগেছে ব্যাটে। তাই বিষণœ মনে ধরেছেন ড্রেসিং রুমের পথ। ১০ নম্বর ওয়ানডে শতকটা আর পাওয়া হলো না তার।
কাল ব্যাট করতে যখন নামেন সাকিব, তখন ছিলেন ৭ হাজার রান থেকে ২৪ রান দূরে। ফিরলেন শতরান থেকে ৭ রান দূরে থেকে। মাঝের সময়টা পুরোটাই যেন ‘সাকিব শো’। ব্যাটিংয়ে যেন ফিরিয়ে এনেছিলেন সেই ২০১৯ বিশ্বকাপ। ব্যাটে বাহারি সব শট। ট্রেডমার্ক কাট থেকে শুরু করে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ড্রাইভ, সুইপ সবই খেলেছেন সাকিব। যখন আউট হলেন তখন ইনিংসের প্রায় ১৩ ওভার বাকি। অনায়াসেই সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন। কিন্তু ক্ষণিকের ভুল তাকে থামিয়ে দেয় ৯৩ রানেই।
তৌহিদ হৃদয় কাল বাংলাদেশের ১৪০তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে খেললেন। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের চারজন, কিন্তু ওয়ানডেতে এই কৃতিত্ব নেই কারও। তৌহিদ হৃদয় সেই কীর্তি গড়ার মাত্র ৮ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান। গ্রাহাম হিউমের সেøায়ার ইয়র্কারে বিভ্রান্ত হয়ে যান তৌহিদ, বল তার দু’পায়ের ফাঁক গলে স্টাম্পে আঘাত করে। ৮৪ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটার এমন করুণ পরিণতি নষ্ট করে দিল আরেকটি অমিত সম্ভাবনাও। ওয়ানডে ইতিহাসে অভিষেকে চার নম্বরের পরে নামা কোনো ব্যাটসম্যানের শতরান নেই, কাল পাঁচে ব্যাটিংয়ে নামা হৃদয় সেই সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ৯২ রানে। সাকিব আর হৃদয়ের ৫ম উইকেটে ১৩৫ রানের জুটি এই মাঠেই পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
রেকর্ড হলো অনেকই। হৃদয় হয়ে গেছেন অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা ক্রিকেটার। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ দলীয় রান, সাকিবের ৭ হাজার রানসহ অনেক কিছুই। তবুও দিনশেষে আক্ষেপ হয়ে থাকল দুজনের ইনিংসেরই ‘অপমৃত্য’।
‘হৃদয়ের গল্প...শুরু হলো এই তো’, অ্যান্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় একটি গানের কলির অনুকরণে বলাই যায় কথাটা। তাওহিদ হৃদয়ের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার শুরু হলো কাল। এক বছর আগে খেলা ছেড়ে দিতে চাওয়া ছেলেটাই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়। অথচ শুরুতে ভুয়া এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে খেলাই ছেড়ে দেওয়ার দশা হয়েছিল তার!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসর দিয়ে যেন পুনর্জন্মই হয়েছে তাওহিদ হৃদয়ের। আগের আসরে নিজে খুব একটা ভালো করেননি, ফাইনালে দেখেছেন দলকে ১ রানে হেরে যেতে। তারপরই প্রতিজ্ঞা, বদলে ফেলতে হবে নিজেকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের খেলোয়াড়দের হাই পারফরম্যান্স দলে নেয় বিসিবি। সেখানেই সোহেল ইসলামসহ অন্য কোচদের অধীনে অনেক অনুশীলন করেছেন। ছোটবেলা থেকেই যাকে চেনেন, সেই খালেদ মাহমুদ সুজনও রেখেছেন ভরসার হাত। এবারের বিপিএলে তাই দেখা গেল এক বদলে যাওয়া হৃদয়কে। সাহসী ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলাই যার মন্ত্র। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে দারুণ এক বিপিএল কাটানোর পুরস্কার হিসেবে অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টি দলে। সেখানেও দুটো ম্যাচে ছোট দুটো ইনিংস খেলে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও ঠিক চোখে লাগার মতো কিছু ছিল না। কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংসটায় হৃদয় যেন জানান দিলেন, লম্বা সময় থাকতেই তার আসা।
কাল ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে হৃদয় বলছিলেন, কীভাবে বারবার বাধা এসেছে জীবনে, ‘আসলে সে সময় প্রতারিত হয়ে অনেক ক্ষতিই হয়েছিল আমার। বাসা থেকে খেলা চালিয়ে যেতে দিতে চাচ্ছিল না। বাবা অনেক বাধা দিয়েছে, পড়াশোনা করতে বলত তবে আমি পড়াশোনা করতে চাইতাম না বরং ক্রিকেটটাই খেলতে চাইতাম। ওই সময় আমার মা অনেক পাশে ছিলেন’। ক্রিকেটটা চালিয়ে গেলেন মায়ের প্রশ্রয়ে, একটা সময়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগও হলো। শুরুতে অধিনায়ক ছিলেন, পরে সেটা গেল আকবর আলির কাছে। বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পর দেখলেন একে একে সতীর্থ অনেকেরই সুযোগ হচ্ছে জাতীয় দলে। নিজে বিপিএলে বেশ খারাপ করলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। তখন ভেবেছিলেন খেলাই ছেড়ে দেবেন! পরে ভাবলেন নিজেকে ভাঙতে হবে, গড়তে হবে নতুন করে। নতুন রূপেই ফিরে এলেন বিপিএলে, এরপর সবকিছুই ঘটতে থাকল সিনেমা গল্পের মতোই! বিপিএল পথ তৈরি করে দিল টি-টোয়েন্টি দলে, এরপর আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। তাতে অল্পের জন্য শতরান মিস হলেও আক্ষেপ নেই হৃদয়ের, ‘আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আমি তো আরও আগেই আউট হয়ে যেতে পারতাম। হয়তো এটাই ভাগ্যে ছিল। আমিই অভিষেকে সবচেয়ে বেশি রান করেছি (বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ভেতর) এটা জেনে ভালো লাগছে, তবে আমি আশা করছি সামনে যাদের অভিষেক হবে তারা আরও ভালো করবে।’
এখন আর বাবা-মায়ের কোনো অভিযোগ নেই। অভিষেকের পর বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়াতেই সেটা টের পেয়েছেন হৃদয়, ‘সব বাবা-মায়েরই ছেলে ভালো করলে ভালো লাগবে। তাদেরও লেগেছে। তবে আমার মা ক্রিকেট বোঝে না, শুধু জানে আমি এটা ভালোবাসি।’
ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাই বারবার ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার পরও তাকে ফিরিয়ে এনেছে ২২ গজে। হয়তো এই দিনটার জন্যই।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার ভালো উইকেটের দারুণ সদ্ব্যবহার করছেন ব্যাটাররা। দলগুলো বড় রান পাচ্ছে, ব্যাটাররাও তৈরি করছেন ব্যক্তিগত মাইলফলক। কাল তেমনি তিন ম্যাচে তিন ব্যাটার করেছেন সেঞ্চুরি। শেখ জামাল ধানম-ির হয়ে সাইফ হাসান ১১২ বলে ১০৮। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সাব্বির রহমান রুম্মান অপরাজিত ১০৭ বলে ১১০ ও ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাব্বির হোসেন ১১৮ বলে ১২৫। প্রথম দুজনের দল জিতলেও ব্রাদার্সের সাব্বিরের প্রথম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরির খুশি মাটি হয়েছে দল হারায়।
আগের ম্যাচে পায়ে হালকা চোট পাওয়ায় দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেননি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। প্রতিপক্ষ দুর্বল সিটি ক্লাব বলে ঝুঁকি নিতে চাননি। তাকে ছাড়া রূপগঞ্জের জিততে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি। সিটি ক্লাবের করা ২৪৮ রান প্রায় ৮ ওভার ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই সফল তাড়া করেছে (২৫২/৩) রূপগঞ্জ। ফতুল্লায় প্রাইম ব্যাংক ৮ উইকেটে ২৬৮ রান করে ৫৮ রানে জিতেছে বোলারদের কল্যাণে। রেজাউর রহমান রাজার ৪ ও রুবেল হোসেনের ৩ উইকেটে ব্রাদার্স মাত্র ২১০ রানে গুটিয়ে যায়। দিনের সর্বোচ্চ রান হয়েছে বিকেএসপিতে। বড় ব্যবধানের জয়ও পেয়েছে তারা। শেখ জামাল ৫ উইকেটে ৩১৭ রান করে নবাগত অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ২০৩ রানে হারিয়েছে। অগ্রণী মাত্র ১১৪ রানে অলআউট হয়। বিশাল ব্যবধানে জেতায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের রানরেটও বেড়েছে দ্বিগুণ। ২.৯১ রান রেট নিয়ে ৪ পয়েন্টে শীর্ষে তারা। দুইয়ে থাকা রূপগঞ্জ ০.৮৩ রান রেটে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে প্রাইম ব্যাংক।
গত বছর ডিপিএলেই সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাব্বির রহমান। সেটা ছিল আবার ৩ বছর পর পাওয়া। সুপার লিগে ভালো করে ফিরেছিলেন জাতীয় দলেও। কিন্তু পারফরম করে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। দল থেকে ছিটকে গিয়ে এখন ঘরোয়া ক্রিকেটকে আবার আঁকড়ে ধরেতে হচ্ছে সাব্বিরের। ডিপিএলে সেই চেষ্টাটা বেশ ভালোভাবেই করছেন। প্রথম ম্যাচে ৪৯ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছিলেন। কাল মিরপুরে সেঞ্চুরি করেই থামলেন। কোনো ভুল না করা সেঞ্চুরির ইনিংসে বেশ সাবলীল ব্যাটিং করেছেন সাব্বির। ৭৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ইরফান সুক্কুরকে নিয়ে ১৫৭ রানের জুটি গড়েন। টানা দ্বিতীয় ফিফটি করে ইরফান ৭৪ বলে ৭৪ রানে আউট হলেও শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন সাব্বির। সিটির হয়ে তরুণ আবদুল্লাহ আল মামুন সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন।
ব্রাদার্সের বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের নায়ক বোলাররা। মাত্র ৫ ওভারে ৩ উইকেট এনে দিয়েছেন রুবেল। এরপর আর বল করেননি। তরুণ পেসার রাজা ৬.১ ওভারে নিয়েছেন ৩০ রানে ৪ উইকেট। ব্যাটিং উইকেট সর্বস্ব এবারের লিগে এটাই এখন পর্যন্ত হওয়া ৯ ম্যাচে কোনো বোলারের সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া অভিজ্ঞ অলক কাপালি নেন ২ উইকেট। ফতুল্লার সহজ ব্যাটিং উইকেটে তাই ২৬৯ রানের লক্ষ্য পেয়েও তা টপকাতে পারেনি ব্রাদার্স। এক সাব্বির হোসেন বাদে বড় রান করতে পারেননি কোনো ব্যাটার। আনিসুল ইসলাম ইমন ৫৭ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন। মাত্র ৬ লিস্ট এ ম্যাচ খেলা ২৬ বছর বয়সী সাব্বিরের এটা প্রথম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩ উইকেট নেওয়ায় ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৩ রান করেছেন গত যুব বিশ্বকাপ খেলা প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। এছাড়া দিপু ৪৩, আল-আমিন ২০ ও অলক কাপালি ২৮ রান করেন।
দিনের একপেশে ম্যাচে চ্যাম্পিয়নদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি অগ্রণী। শুরুর তিন ব্যাটারের বড় রানে বড় স্কোর পেয়ে যায় শেখ জামাল। সাব্বির রহমানের মতো প্রায় বছর খানেক পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সাইফ হাসানও। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া এই ওপেনার সবশেষ উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার ১০৮ অপর ওপেনার সৈকত আলির ৮৮ বলে ৭৮ ও তিনে নামা ফজলে রাব্বির ৫৭ বলে ৮০ রানে তিনশো ছাড়ানো স্কোর গড়ে শেখ জামাল। জবাবে বিকেএসপির উইকেট পড়তে না পারায় সাইফ হাসান ও পারভেজ রসুলদের স্পিনে কুপোকাত হয় অগ্রণী। তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন মাত্র তিন ব্যাটার।
১ থেকে ৫ জানুয়ারি, ২০২১ এ মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্মরণীয় জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। সেই জয়ের নায়ক ছিলেন ফাস্ট বোলার এবাদত হোসেন দ্বিতীয় ইনিংসে তার ২১-৬-৪৬-৬ বোলিংয়ের জন্য। উইজডেন সাময়িকীর রিভিউয়ের মতো ‘ইএসপিএনক্রিকইনফো অ্যাওয়ার্ডস’ও টেস্টে ২০২২’র সেরা বোলিংয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে এবাদতের ওই বোলিংকে।
এই স্বীকৃতি পাওয়ার দৌড়ে এবাদতের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি। ২০২১’র মার্চে লাহোর টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক স্পেলে ৫৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন কামিন্স, ২১৪/৩ থেকে ২৬৮তেই গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান যে স্পেলে। এর আগের মাসে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে হেনরির ৭/২৩ বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ৯৫ রানে। কিন্তু এবাদতকে তারা ছাপিয়ে যেতে পারেননি। খ্যাতনামা ক্রিকেটার, সাংবাদিকদের ভোটে সেরা হয়েছেন এবাদত। সেই সঙ্গে গত ৭ ডিসেম্বর মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজের ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস পেয়েছে সেরা ওয়ানডে ব্যাটিংয়ের স্বীকৃতি। ওই ইনিংসে ২৭১ রান করে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ সেই ওয়ানডেতে।
ক্রিকইনফোর কিছু তথ্যপঞ্জিও বুঝিয়ে দিয়েছে, এবাদতের সেই স্পেলের গুরুত্ব কতটা। ২০১৩ সাল থেকে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ওই টেস্টের মাঝে ৮ বছরে বাংলাদেশের কোনো ফাস্ট বোলার ৫ উইকেট পাননি। এবাদতের সেই স্পেল দিয়ে খরাটি কাটে। ওই টেস্টের আগে এই সংস্করণে তার বোলিং গড় ছিল ৮১.৫৪। সেই টেস্টের পর বোলিং–গড় নেমে আসে ৫৬.৮৭ তে। সেই টেস্টে বাংলাদেশের সব পেসার মিলে নিয়েছিলেন মোট ১৩ উইকেট। টেস্টে এক ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের এটাই সেরা সাফল্য। সেখানে এবাদতের নিজের অবদান ছিল ৭ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। এবাদতের ওই স্পেলের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিল উইজডেন তার জানুয়ারির রিভিউয়ে : চার ফিফটিতে প্রথম ইনিংসেই ১৩০ রানের লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩তম ওভারে প্রথম বল হাতে নেন এবাদত, টানা ৯ ওভারের প্রথম স্পেলে ২৩ রান দিয়ে ব্রেক থ্রু দেন ডেভন কনওয়েকে আউট করে। ৪৮তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলের জন্য যখন ফেরেন এবাদত, নিউজিল্যান্ড তখন ১১৭/২। এই স্পেলের চতুর্থ ওভারেই তিন বলের মধ্যে উইকেট উপড়ে ফেলেন উইল ইয়াং (৬৯) ও সদ্য খেলতে আসা হেনরি নিকোলসের। নিজের পরের ওভারে টম ব্লান্ডলকে এলবিডব্লিউ করে এবাদত নেন চতুর্থ উইকেট। ৭ ওভারের স্পেলের পর অধিনায়ক বিশ্রাম দেন এবাদতকে। পরের দিনের দ্বিতীয় ওভারের, দ্বিতীয় বলেই রস টেইলরের ১০৪ বলের প্রতিরোধ ভেঙে দেন এবাদত, আবার বোল্ড। প্রথমবার ৫ উইকেট এবাদতের (১৮-৪-৪১-৫)। কিছুক্ষণ পর কাইল জেমিসনকে আউট করে নেন ষষ্ঠ উইকেট। ১৬০/৭ এ পরিণত নিউজিল্যান্ডকে আর ৯ রানের মধ্যে মুড়িয়ে ৪০ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
‘এবাদত হোসেন দ্রুততম বোলার নন, সুইংও খুব বেশি নয়, আর উচ্চতাও ৬ ফুট না। কিন্তু কখনো কখনো এমন হয়, দুর্দান্ত একটি টেস্ট স্পেল করতে এসবের কোনো কিছুরই দরকার পড়ে না। কখনো কখনো জীবনে সব রকম অবিচার সহ্য করার পর পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফল মেলে’ রিভিউয়ে এবাদতের বিশেষত্বের এভাবেই বর্ণনা করেছিল উইজডেন।
ইংল্যান্ড সিরিজের পর দুবাইয়ে খুনের মামলায় পলাতক আসামির স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তার এই ঝটিকা সফর নিয়ে দেশে সমালোচনা হচ্ছে বিস্তর। এ নিয়ে এতদিন সংবাদ মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বিসিবি। কাল ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস মুখ খুললেন। জানালেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজ শেষে সাকিবের এই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। এখন সিরিজ চলাকালীন কিছুই বলবে না বিসিবি।
ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ও আইরিশ সিরিজের মাঝে মাত্র দুদিনের বিরতি ছিল। ছুটি থাকায় এই সময়ে ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত যে কোনো কিছুই করতে পারেন। এখানে বিসিবির বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তাই সাকিবকে কিছু বলতে পারছে না বিসিবি। তবে ভবিষ্যতে এমন চুক্তি বা আমন্ত্রণে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। তবে সেটা সাকিবের সঙ্গে বসে পুরো ঘটনা বিস্তারিত জানান পর সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। জালাল ইউনুস জানান, ‘যে ঘটনা ঘটেছে আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে বসা বা সাকিবের সঙ্গে কথা বলা এসব নিয়ে এখনো কথা হয়নি। সিরিজ শেষে আমরা দেখব যে বিসিবির কোন জায়গাটাতে কী করার আছে। কোথায় কী করতে হবে সাকিব সব জানে। আমাদের একটা ডিসিপ্লিনারি কমিটি আছে। ওরা এটা নিয়ে দেখবে কী করা যায়। এখন সিরিজের মধ্যে এগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাকিব শুধু বিসিবি’র সম্পদ না, দেশের সম্পদ। তার দিকে লুক আফটার করা আমাদের দায়িত্ব।
সাকিবদের আবেদন : ৩১ মার্চ থেকে শুরু আইপিএলের ১৬তম আসর। তার ঠিক পরদিন বাংলাদেশকে নামতে হবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে। টেস্ট দলের সদস্য সাকিব আল হাসান ও লিটন দাশেরও এই ম্যাচে ব্যস্ততা আছে। তবে দুজনই আইপিএল খেলার জন্য বিসিবির কাছে অনাপত্তিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। সাকিব ও লিটন ছাড়াও এবার আইপিএলে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাকে ধরে রেখেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। আর সাকিব ও লিটনের জায়গা হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সে। এক মৌসুম পর সাকিব এবার নিলামে ডাক পেয়েছেন। আর লিটন এই প্রথম। মোস্তাফিজ টেস্ট দলে না থাকায় তার আইপিএলে যাওয়া নিয়ে বাধা নেই। তবে সাকিব ও লিটন অনাপত্তিপত্র পাবেন কি না সে ব্যাপারে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।