
বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের এখন এক জায়গাতেই চোখ থাকতÑ আইপিএল। একসঙ্গে তিন দেশি ক্রিকেটারের এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ হয়েছিল। অথচ এখন আর সেই সুযোগ নেই। দেশসেরা তারকা সাকিব আল হাসান আর আইপিএলে নেই। আইপিএলের রং গায়ে মাখার বদলে তিনি রং ছড়াবেন ডিপিএলে। মোহামেডানের হয়ে ঈদের আগে লিগ পর্বের সব ম্যাচই খেলবেন সাকিব। টি-টোয়েন্টির সেরা অলআউন্ডার না থাকলেও এই ফরম্যাটের সেরা আসরের আগ্রহ কমার সুযোগ নেই বাংলাদেশিদের কাছে। কারণ প্রথমবার তাতে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন লিটন দাস। আজ সন্ধ্যায় কলকাতার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন লিটন। আর আগে থেকেই মোস্তাফিজ তো আছেনই।
সাকিব-লিটনের আইপিএল যাত্রা নিয়ে গত মাস থেকে কম জলঘোলা হয়নি। কিন্তু বিসিবি নিজেদের সিদ্ধান্তে ছিল অটল। বারবার দেশের খেলা আগে এটাই বলা হয়েছে। আশপাশ থেকে নানা গুঞ্জন উঠে এলেও বিসিবির সিদ্ধান্তই ফলেছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট শেষে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন ভেতরের খবর খোলাসা করেন, ‘সাকিব-লিটন টেস্টে আমাদের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। একসঙ্গে দুজনকেই ছেড়ে দেব। আর ওখানে গিয়ে বসে থাকার চেয়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলা ভালো না!’ অথচ টেস্ট শেষের আগে এই উক্তি একবারও খোলাসা করেননি পাপন বা বিসিবির কেউ।
তবে যাই হোক খোলাসা হয়েছে সব কিছু। কাল-ই নিজেদের বিবৃতিতে লিটন দাসের যোগ দেওয়ার খবর নিশ্চিত করে কলকাতা নাইট রাইডার্স। লিটন আজ সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কলকাতা যাবেন। সেখানেই থাকছেন এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে পরবর্তী হোম ম্যাচে দলে থাকবেন। কলকাতা জানিয়েছে, ‘কেকেআর ইনফর্ম ব্যাটার লিটনকে আমন্ত্রণ জানাতে তৈরি। ইডেন গার্ডেনসে পরের হোম ম্যাচেই সে ড্রেসিংরুমে থাকবে। ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। পহেলা মে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য সে দল ত্যাগ করবে।’ গুঞ্জন উঠেছিল লিটন ৯ এপ্রিল আহমেদাবাদে কলকাতার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন না। তাই ১০ এপ্রিল আবাহনীর হয়ে খেলে পরদিন কলকাতা যাবেন। কিন্তু আবাহনীর ম্যানেজার মামুন দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘আইপিএল দল যদি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারকে না ডাকে তাহলে লিটন যাবে না। তখন সে আবাহনীর হয়ে অবশ্যই খেলবে। কিন্তু যদি ডাকে তাহলে তো খেলতে পারবে না। এখণ দেখি সিদ্ধান্ত কী হয়।’ তবে আবাহনী লিটনকে সুপার লিগের আগে আর পাচ্ছে না এখন তা নিশ্চিত।
এদিকে সাকিবকে নিয়েও একটা গুঞ্জন ছিল। আয়ারল্যান্ড টেস্টের পরদিন সিটি ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেই যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমানোর কথা ছিল তার। তা পাল্টে যাচ্ছে। সাকিবও থাকবেন খেলার মধ্যে। এতে কত বছর পর প্রিমিয়ার লিগে এত ম্যাচ খেলবেন সাকিব তা সত্যিই খুঁজে দেখার বিষয়। সাকিব ঢাকা লিগে রাউন্ড রবিন পর্বের বাকি ম্যাচগুলো খেলবেন মোহামেডানের জার্সিতে। ১৭ এপ্রিল ঢাকা লেপার্ডসের বিপক্ষে মোহামেডানের শেষ ম্যাচ খেলে তবেই বিদেশ পরিবারের কাছে যাবেন ঈদ করতে।
মৌসুমের শুরুতে জাতীয় দল, আইপিএল ব্যস্ততায় ঈদের পর সুপার লিগের আগে সাকিবের খেলার কোনো সুযোগই ছিল না। কিন্তু এখন চিত্র বদলেছে পুরোপুরি। জাতীয় দলের ব্যস্ততা বাদে বাকি সময় মোহামেডানেই খেললেন তিনি। দুই ম্যাচ খেলেছেন লিগে আরও তিন ম্যাচ খেলবেন ১১ এপ্রিল ফতুল্লায় ব্রাদার্সের বিপক্ষে। ১৪ এপ্রিল শাইনপুকুরের বিপক্ষে বিকেএসপিতে এবং ১৭ এপ্রিল ফতুল্লায় ক্লাবটির শেষ ম্যাচে ঢাকা লেপার্ডসের বিপক্ষে। এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়ে ক্লাব কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম টিটু দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘সাকিব এখনই বিদেশে যাচ্ছে না সে মোহামেডানের হয়ে ঈদের অগের সব ম্যাচ খেলবে। যেহেতু লিগ পর্বের আর কয়েকটি ম্যাচ বাকি।’ সাকিব ম্যাচের দিন দলের সঙ্গে যোগ দেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই চলে আসেন তিনি। সেক্ষেত্রে ফতুল্লা সাকিবের জন্য একটু দূর হয়ে যায়। ওই ম্যাচগুলোতেও খেলবেন বলে নিশ্চিত করেছেন টিটু।
আইপিএল আলোচনায় থাকা দুই তারকার ভাগ্য হলো দুই রকম। অবশ্য এতে সাকিবকে পেয়ে ঢাকা লিগ যেমন উপকৃত হলো তেমনি আইপিএলকে পেয়ে লিটন উপকৃত হলেন।
টানা ৫ ম্যাচ জয়হীন থাকা মোহামেডানের ভাগ্য বদলেছে। সাকিব আল হাসান এক ম্যাচ খেলে জয়ের পথ দেখানোর পর জিতেই চলেছে দলটি। কাল টানা তৃতীয় জয় তুলেছে সাকিবের উপস্থিতিতেই। আগের দিন টেস্ট ম্যাচ খেলা সাকিব কাল মোহামেডানের হয়ে ব্যাট-বল দুটোই করেছেন। অবশ্য দেরিতে বিকেএসপি গিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন সাত নম্বরে। আর বল হাতে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে ১০ ওভারে ৩৬ দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট।
অবশ্য সাকিবের মাঠে উপস্থিতি মোহামেডানের মূল চিন্তা নয়। তারা জিতছে এটাই বড় কথা। সিটি ক্লাবের বিপক্ষে মোহামেডানের জয় ১০১ রানের বড় ব্যবধানে। আগে ব্যাট করে ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে ৩৪৮ রানের বিশাল স্কোর গড়ে তারা। দুর্বল সিটি ক্লাব ৭ উইকেটে ২৪৭ রানে থামে। এ জয়ে ক্লাবটির সুপার লিগ থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা দূর হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৮ ম্যাচে তিন জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ছয়ে অবস্থান মোহামেডানের। বাকি তিন ম্যাচ জিতে চললে তালিকায় আরও ওপরে থেকেই সুপার লিগ নিশ্চিত করতে পারবে তারা।
শুরুর ৫ ম্যাচে মোহামেডানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও পরের ম্যাচগুলোতে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে তারা। সুবাদে বাজে সময়টা কাটিয়ে উঠতে পারছে সুপার লিগের আগে। সুপার লিগ খেলার সম্ভবনাও জেগে উঠেছে ক্লাবটির। শুধু দল হিসেবেই নয় ফর্মহীন ক্রিকেটাররাও রান পাচ্ছেন। ইমরুল কায়েস এক ম্যাচ আগে ৮৬ রান করার পর কাল করলেন সেঞ্চুরি। এছাড়া মাহমুদউল্লাহও পেয়েছেন মৌসুমে তার প্রথম ফিফটি। ইমরুল ক্যারিয়ারের ১২তম লিস্ট এ সেঞ্চুরিতে ১২১ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ করে বিশ্রামে যান। মাহমুদউল্লাহ ৫৯ বলে ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৭১ রান করে বোলার রায়ান রাফসানকে সরাসরি ক্যাচ দেন। দুজনে দ্রুত রান তুলে ১২১ রানের জুটি গড়েন। শেষ দিকে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৫২ বলে ৬৫ করেন ৪ ছক্কা ও ২ চারে। আর সাত নম্বরে নামা সাকিব মাত্র ১৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ রান করেন। ছক্কা মেরে ২২ রানে পৌঁছার পরের বলেই লং অফে ক্যাচ দিয়েছিলেন কিন্তু ফিল্ডার তা ধরতে না পারায় জীবন পান। সুযোগ পেয়ে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি।
বোলিংয়ে মোহামেডানের শক্তি যোগ হয়েছে জাতীয় দলের দুই সেরা তারকার উপস্থিতিতে। সাকিব কাল ওভারপ্রতি ৩.৬০ রান দিয়ে ১০ ওভারে ৩৬ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। আর মেহেদী হাসান মিরাজ মাত্র ২.৯০ রান দিয়ে ১০ ওভারে ২৯ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। এছাড়া জ্যাক লিনটট নেন ৩ উইকেট। বড় নাম না থাকা সিটি ক্লাব খুব বড় লড়াই দিতে পারেনি। আবদুল্লাহ আল মামুন ৬৫ বলে ৭০, আসিফ রাতুল ৯৬ বলে ৫২ ও ওপরের দিকে তৌফিক তুষার ৩৬ রান করেন। মোহামেডানের পরের ম্যাচ ফতুল্লায় ব্রাদার্সের বিপক্ষে ১১ এপ্রিল।
অন্য দুই ম্যাচে পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকের দলগুলোর লড়াইয়ে জিতেছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন। লো স্কোরিং ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেটার্স আগে ব্যাট করে ১৬৯ রানে অলআউট হয়। জবাবে মেহেদী মারুফের ৯৭ বলে ৬৭ ও ফরহাদ হোসেনের ৭৮ বলে ৪৮ রানে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে জিতেছে গাজী। ফতুল্লায় অমিত হাসানের ৪২, শুভম শার্মার ৭৪ ও সাজ্জাদুল হক রিপন ৪১ ও মেহেদী হাসান রানার ৩২ রানে ৯ উইকেটে ২২৮ করেছে শাইনপুকুর। জবাবে আরাফাত সানি জুনিয়রের ৪৮ বলে ৫৫ ও সাদ নাসিমের ৬২ রানে ৬ উইকেটে জিতেছে ব্রাদার্স। দুজনে ১২২ রানের অপরাজিত জুটি গড়েন। অষ্টম রাউন্ড শেষে ব্রাদার্স ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার আটে আর তৃতীয় জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে গাজী গ্রুপ।
প্রথম পর্বেও মোহামেডানের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সেবার ২-০ গোলে জিতেছিল মোহামেডান। একটা গোল করেছিলেন সুলেমান দিয়াবাতে। এরপর খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না গত লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে। আজমপুর উত্তরার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে জানান দেন নিজেকে। গতকাল উজাড় করে খেললেন মালিয়ান স্ট্রাইকার। হ্যাটট্রিক করলেন। গোল করালেন সতীর্থদের দিয়ে। ফলাফল মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করল সাদা-কালো শিবির। এই জয়ে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে এক ধাপ এগিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠেছে মোহামেডান। আর বাংলাদেশ পুলিশকে ৩-১ গোলে হারানো শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র উঠে এসেছে তিন নম্বরে।
বড় জয় পেলেও মোহামেডানকে ভড়কে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামে ৮ মিনিটে কর্নার থেকে বক্সের ভেতর থেকে এক সতীর্থের ফ্লিকের পর হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আতিকুজ্জামান। পিছিয়ে পড়ার পর যেন ঘুম ভাঙে মোহামেডানের। ২২ মিনিটে গোছালো আক্রমণ থেকে সমতায় ফেরে তারা। সতীর্থের আড়াআড়ি ক্রসে গোলমুখ থেকে টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন দিয়াবাতে। ৩৬ মিনিটে বক্সের ঠিক ওপর থেকে জোরালো শটে মোহামেডানকে এগিয়েও নেন মালির এই ফরোয়ার্ড। ৪২ মিনিটে উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মুজাফফর মুজাফ্ফরভের প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে নেওয়া শটে মুক্তিযোদ্ধা গোলরক্ষকে হতবাক করে স্কোরলাইন ৩-১ করেন। বিরতির পর পেনাল্টি থেকে গোল করে করেন দিয়াবাতে। নিজেই ফাউলের শিকার হয়েছিলেন বক্সের ভেতর। চলতি লিগে এটি তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এছাড়া এবারের লিগে হ্যাটট্রিক আছে আবাহনীর এলিটা কিংসলে ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের। লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াই জমে উঠল আরও। বসুন্ধরা কিংসের ডরিয়েল্টন গোমেজ ও শেখ জামালের স্টুয়ার্ট কর্নেলিয়াসের মতো দিয়াবাতের গোলও ৯টি। ৬৯তম মিনিটে দূরের পোস্টে ফাঁকায় থাকা এমানুয়েল সানডে অনায়াসে স্কোরলাইন ৫-১ করেন মোহামেডানের। ৮৪তম মিনিটে অবশ্য গোলটি করতে পারতেন দিয়াবাতে। বক্সে ফাঁকায় থাকা এই ফরোয়ার্ড শট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নিঃস্বার্থভাবে বাড়িয়ে দেন সাজ্জাদ হোসেনকে। বদলি এই ফরোয়ার্ড লক্ষ্যভেদ করেই ছুটে যান অধিনায়কের কাছে; উদযাপনে মাততে।
শেখ রাসেলের ত্রাতা ইব্রাহিম-উদোহ : ময়মনসিংহে প্রথম এগিয়ে যায় পুলিশ এফসি। ৩৭ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা এডওয়ার্ড মরিল্লো তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পাস দেন জোহান আরাঙ্গোকে। বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া শট ঝাঁপিয়েও আটকাতে পারেননি আশরাফুল রানা; বল গ্লাভস ছুঁয়ে জড়িয়ে যায় জালে। ৪৯ মিনিটে সমতায় ফেরে শেখ রাসেল। জামাল ভুঁইয়ার লম্বা ক্রস ফেরাতে ব্যর্থ গোলরক্ষক রাকিবুল হাসান তুষার। বল পড়ে ছয় গজ বক্সে থাকা ইব্রাহিমের পায়ে, ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় সুযোগ কাজে লাগান তিনি। এরপর দুই মিনিটের মধ্যে এমফোন উদোহ এবং নিহাদ জামান উচ্ছ্বাসের গোলে শঙ্কার মেঘ সরিয়ে জয়ের পথে ছুটতে থাকে শেখ রাসেল।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ আছে আর্সেনাল। তাদের পিছু পিছু ছুটছে ম্যানচেস্টার সিটি। গতকাল রাতে ম্যানসিটি ৪-১ গোলে সাউদাম্পটনকে হারায়। তাতে সিটি ও আর্সেনালের পয়েন্টের পার্থক্য নেমে এসেছে পাঁচে।
শিরোপা জয়ের পথে আজ আর্সেনালের সামনে বাধা লিভারপুল। আর্সেনাল ও লিভারপুলের মধ্যে এই মৌসুমে পয়েন্টে ব্যবধান ২৮। তবু অ্যানফিল্ডে ম্যাচ বলেই সতর্ক থাকতে হবে মিকেল আর্তেতার দলের।
এবার লিগে প্রথম দেখায় এমিরেটসে আর্সেনাল ৩-২ এ জিতেছিল। তবে অ্যানফিল্ডে ২০১২ এর পর লিগ ম্যাচে জয় পায়নি আর্সেনাল। গানার্সদের ভয়ের আরেক কারণ ওই ছয় ম্যাচের ফলাফল। ৬ ম্যাচে ৪ গোল দেওয়ার বিপরীতে আর্সেনাল হজম করেছে ২২ গোল। এ ম্যাচগুলোর কোনোটিতে তিনের কম গোল হজম করেনি আর্সেনাল।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ দুই মুখোমুখিতেও জয়বঞ্চিত গানার্সরা। গেল বছরের জানুয়ারিতে লিগ কাপের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে। ২০২১-২২ লিগে অ্যানফিল্ডে লিভারপুল ৪-০ তে হারিয়েছিল আর্সেনালকে।
তবে এবার জয়ের আশা করতেই পারে আর্সেনাল। কারণটা তাদের ফর্ম। শেষ সাত লিগ ম্যাচ জিতেছে। অ্যাওয়েতে এই মৌসুমে আর্সেনাল ১৪ ম্যাচ জিতেছে। প্রিমিয়ার লিগে যে কোনো ক্লাবের চেয়ে যা তিনটি বেশি। আর লিভারপুল স্বস্তিতে নেই। অলরেডদের শীর্ষ চারের আশাও দূরে সরছে প্রতিনিয়ত। শেষ তিন ম্যাচের দুটিতে হেরেছে। ড্র করেছে শেষ ম্যাচে চেলসির বিপক্ষে। তবে এ মৌসুমে লিগে ঘরের মাঠে লিভারপুল শেষ ৬ ম্যাচ অপরাজিত। জয় ৫টি, ড্র একটি।
আর্সেনালের নজর রাখতে হবে মোহামেদ সালাহর ওপর। গানার্সদের বিপক্ষে অ্যানফিল্ডে পাঁচ ম্যাচে ৭ গোলে তার অবদান আছে। গোল করেছেন পাঁচটি, অ্যাসিস্ট দুটি।
সব মিলিয়ে এবারের লিভারপুল যাত্রাকে জঙ্গলে যাওয়ার অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করেছেন আর্সেনাল কোচ আর্তেতা, ‘আপনি চিড়িয়াখানায় প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার জঙ্গলে খেলতে যেতে পারেন না। এটা অসম্ভব। আপনার নিজেকে মেলে ধরতে হবে। খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করতে হবে। আপনার তাদের বলতে হবে, তারা কীসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।’ সতর্ক থাকলেও এবার অ্যানফিল্ড জয়ের ব্যাপারে আর্সেনাল কোচ বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এই সুযোগও আছে যে অ্যানফিল্ডে গিয়ে কিছু করার, যা আমরা অনেক বছর ধরে করতে পারিনি।’
আর্সেনাল টেবিলের শীর্ষে থেকে এ নিয়ে নবম বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে অলরেডদের। আগের ৮ বারে ৩টি জেতে আর্সেনাল, ৩ ড্র, দুটি হার।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও নিউক্যাসল যেন মিউজিক্যাল চেয়ার খেলছে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নিয়ে। গতকাল ম্যানউই ২-০ তে হারিয়েছে এভারটনকে। রেড ডেভিলদের হয়ে গোল করেন স্কট ম্যাকটোমিনা ও অ্যান্থনি মার্শিয়াল। পরে নিউক্যাসল ২-১ গোলে হারায় ব্রেন্টফোর্ডকে।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যাচে দাপট দেখিয়েছে ম্যানউই। ৬৪ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছে তারা। প্রতিপক্ষের গোলে ২৭টি শট নেয়, লক্ষ্যে ছিল ১০টি। ২১টি শটই ছিল প্রথমার্ধে। প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচের প্রথমার্ধে ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রতিপক্ষের জালে এটাই সবচেয়ে বেশি শট নেওয়ার উদাহরণ। তবে প্রথমার্ধে গোল হয় মাত্র একটি। ৩৬ মিনিটে সানচোর পাস থেকে গোল করেন ম্যাকটোমিনা। ৭১ মিনিটে রাশফোর্ডের পাস থেকে ব্যবধান বাড়ান মার্শিয়াল।
এই জয়ের পর ২৯ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে ইউনাইটেড। সমান ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিউক্যাসলেরও। গোল ব্যবধানে এগিয়ে তিনে তারা। উলভস ১-০ তে হারিয়েছে চেলসিকে। লিগে এটি চেলসির ১১তম হার। এদিকে টটেনহ্যাম ঘরের মাঠে ২-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাইটনকে।
ঘোষণা দিয়েই ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামটি থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে এসেছিল বিসিবি। কিন্তু এক মাসের ভেতরেই সিদ্ধান্ত বদলে আবারও বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বোর্ড। কাল মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে এক আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত জানান পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ের ঐতিহাসিক মাঠটি নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়েছিল বিসিবির। তাদের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধ কাজ করায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার হাতেই ছেড়ে আসে মাঠের দায়িত্ব। তবে কালকের আলোচনায় জটিলতা কেটেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহীদ চান্দু শুরুতে আয়ত্তে নেবে গ্রাউন্ডস কমিটি। এরপর বিসিবি ম্যাচ পরিচালনার কার্যক্রম হাতে নেবে। এমনকি আগামী জাতীয় লিগে বগুড়ায় ম্যাচ রাখার কথাও ভাবছে বিসিবি, ‘শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ওভাবেই থাকছে এবং বিসিবি টেক ওভার করছে। আগামীকাল (আজ) থেকে কার্যক্রম শুরু হবে। আমাদের অধীনে এনে এটাকে পরিচর্যা করতে হবে আগে। এরপর খেলা কী হবে কার খেলা হবে এসব গ্রাউন্ডস কমিটি ঠিক করবে। যেকোনো খেলার আগেই আমরা আগে গ্রাউন্ডস কমিটিতে পাঠাই উনারা অনুমোদন দিলে তবেই খেলা হয়।’
আসলে কি জটিলতায় এক মাস আগে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল? বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর কথায় মনে হয়েছে অনুমোদনহীন খেলা পরিচালনাই এর কারণ। সামনে বগুড়াতে স্থানীয় খেলা আয়োজনের জন্য আলাদা মাঠের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছে বিসিবি। রিপু জানান, ‘ক্রীড়ামন্ত্রী, পাপন ভাই ও সব বোর্ড কর্মকর্তাকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি যে তারা বুঝতে পেরেছেন। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মানের খেলার মাঠ থাকলেও আমাদের স্থানীয় খেলার কোনো মাঠ ছিল না। যার জন্য এই সংকট তৈরি হয়েছিল। উনারা আশ্বাস দিয়েছেন আলাদা মাঠ করবেন স্থানীয় খেলার জন্য।’
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ায়। এখানে হয়েছে একটি টেস্ট ম্যাচও। কিন্তু প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই। বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম বলছেন, চাইলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনও সম্ভব হবে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।