
ভূমিকম্পের পর যেমন ‘আফটার-শক’, তামিম ইকবালের আচমকা অবসর এবং নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের পর চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলও ছিল ‘আফটার-শক’ এর ভেতর। এলোমেলো বোলিং, ডাগআউটে কোচদের ভাবলেশহীন মুখই বলে দিয়েছে, কোনো কিছুই কাজ করছিল না মাঠে।
তৃতীয় ওয়ানডেতে নিজেদের খানিকটা গুছিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ, তাতেই আফগানিস্তানকে হারানো গেছে হেসেখেলে। একটা সময়ে ডাক্তাররা রোগীকে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য হাওয়া বদলের পরামর্শ দিতেন। চট্টগ্রামের গুমোট আবহাওয়া ছেড়ে সিলেটের সবুজ শ্যামলিমায় এসে ড্রেসিং রুমের হাওয়াও যে বদলে গেছে, অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথায় তা স্পষ্ট।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সময় নিয়ে দলটাকে গুছিয়েছেন, ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে নেতৃত্ব দিয়েছেন উদাহরণ তৈরি করে। দেশের মাটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারানোই তার প্রমাণ। আফগানরা টি-টোয়েন্টিতে অন্য দুই সংস্করণের চেয়ে শক্তিশালী হলেও তাই বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তিত নয়, বৃহস্পতিবার বলে গেলেন সাকিব, ‘আমরা যখন ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডে খেলছি, ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমরা ৩-০ তে সিরিজ জিতেছি, কিন্তু আয়ারল্যান্ডের কাছে একটা ম্যাচ হেরেছি। তো চ্যালেঞ্জ আসলে টি-টোয়েন্টিতে অনেক বেশি। চ্যালেঞ্জটাই আসলে এই ফরম্যাটকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং করেছে। আমাদের সামনে অবশ্যই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’ একই সঙ্গে সাকিব জানান, ‘দুইটা ম্যাচ আছে, কন্ডিশন খুব বেশি চিন্তা করছি না। এর কারণ, দুই দলের জন্য কন্ডিশন সবারই সমান। আমার কাছে মনে হয় না, আমরা ওই রকম দল আছি, কন্ডিশনের ফায়দা নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি অন্তত, ওই রকম ক্যাপাবল কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও যে কোনো দলের সঙ্গে কম্পিটিটিভ ক্রিকেট খেলতে পারে। সো আমি দলের কাছে আশা করব, সবাই যেন ওই মেন্টালিটি নিয়ে মাঠে নামে। ওপেন মাইন্ডেড থাকে, দলের প্রয়োজনে যা যা করার সেটা যেন করে।’
তামিমের অবসরকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর কোনো অস্থিরতা তৈরি হয়নি বলেই দাবি সাকিবের। যদিও পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনগুলোতে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা লিটন দাস কিংবা নিক পোথাসের প্রতিক্রিয়াই বলে দেয়, ব্যাপারটা কতখানি নড়িয়ে দিয়েছিল দলের খেলোয়াড়দের ভাবনার জগৎ। তামিম নিজেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন দলের ভেতরের চাপের কথা। সাকিব বলছেন, দলে কোনো অস্থিরতাই নেই, ‘আসলে দেখেন, বাইরে থেকে অনেক সময় অনেক কিছু মনে হতে পারে। ড্রেসিংরুমে আমার কখনো মনে হয় না কোনো অস্থিরতা ছিল; কিংবা আছে। পরিবেশ তো আমি সবসময় মনে করি ভালো আছে। অবশ্যই রেজাল্টের কারণে আপনারা সবসময় চিন্তা করবেন ড্রেসিংরুমের অবস্থা ভালো না খারাপ। বাট আমার কাছে মনে হয় না, খুব বেশি ড্রেসিংরুমের এনভায়রনমেন্ট চেঞ্জ হয় জিতি অথবা হারি তার ওপরে। আমাদের এখন চেষ্টা থাকে সবসময় প্রতিদিন কীভাবে আমরা নিজেদের ইমú্র“ভ করতে পারি এবং সেই হিসেবে টিমের হয়ে পারফর্ম করতে পারি। টিমের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে পারি।’
দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সাকিব কোনো কিছুতেই ছাড় দিচ্ছেন না। বুধবার সিলেটে এসেই কোচ চ-িকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে চলে এসেছিলেন উইকেট দেখতে। কাল নেটে এক ঘণ্টার ওপর ব্যাটিং করেছেন। কোচ হাথুরুসিংহে নিজেও স্পিন বোলিং করেছেন নেটে, এছাড়া নেট বোলারদের ভেতরও স্পিনারদের বেশি বেশি খেলেছেন ব্যাটসম্যানরা। বোঝাই যাচ্ছে, আফগানদের হারাবার জন্য স্পষ্ট রণপরিকল্পনাই সাজিয়েছেন সাকিব-হাথুরুসিংহে মিলে। মাঠে চলেছে তারই অনুশীলন।
নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মহড়াতেই ব্যস্ত থাকা সাকিব প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবতেই নারাজ, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমরা দল হিসেবে তখনই ভালো খেলি যখন অন্য দলকে নিয়ে চিন্তা না করি। আমরা যখন ওপেন মাইন্ডেড থাকি, কীভাবে মেকাপ করা যায় সেভাবে চিন্তা করি এবং নিজের জায়গা থেকে কীভাবে ১০-২০ শতাংশ উন্নতি করতে পারি সেই চিন্তাগুলো করি। সেগুলো তখন পারফর্ম বেশি করে। আমরা তখনই একটু নার্ভাস থাকি বা অত ভালো পারফর্ম করতে পারি না, যখন আমরা কন্ডিশন নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করি। অনেক বেশি অপনেন্ট নিয়ে চিন্তা করি। আমি মনে করি, ওই জিনিসটা নিয়ে যত কম চিন্তা করি, সেটাই ভালো।’
তামিম নিজে চোট, খারাপ ফর্ম সবকিছু মিলিয়ে ওয়ানডে দলে নিজের কর্র্তৃত্বটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন, যার প্রমাণ আচমকা অবসরের ঘোষণা। সাকিব অবশ্য শক্ত করেই ধরে রেখেছেন দলের লাগাম। মাঠে এবং মাঠের বাইরেও। তাই ড্রেসিংরুমেও অস্থিরতার স্ুেযাগ নেই।
সাড়ে তিনশো রান দেখে ইনিংস বিরতিতে হারের শঙ্কাটা আগেই চলে এসেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সাহসী ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের সঙ্গে সমানতালে লড়াই হয়েছে অনেকটা সময় পর্যন্ত। অভিজ্ঞতার অভাবে শেষদিকে মাথা ঠা-া রাখতে পারেননি ব্যাটাররা। রান তোলার চাপ আর লেগ স্পিনার দুশান হেমন্তের কাছে হেরে যান সাইফ হাসানরা। শ্রীলঙ্কার করা ৮ উইকেটে ৩৪৯ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৪৮.৩ ওভারে অলআউট হয় ৩০১ রানে। ৪৮ রানের হারে ইমার্জিং এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ ‘এ’।
কলম্বোর এসএসসি স্টেডিয়ামের ব্যাটিং পিচে বাংলাদেশের হারের বড় কারণ কোনো ব্যাটারের বড় ইনিংস না পাওয়া। একপ্রান্ত আগলে ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার কাজটি করতে ব্যর্থ হন সবাই। আকবার আলি (০) বাদে সব ব্যাটারই ইনিংসের শুরু পেয়েছেন। তা একশোতে রূপান্তর করতে পারেননি কেউ। বড় রান তাড়ায় সাবধানী ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন তানজীদ হাসান তামিম ও নাঈম শেখ। ১১ ওভারের আগেই নাঈম ২২ ও ৫১ রানে তামিম বিদায় নেন। এরপর সাইফ (৫৩) ও জাকির (২৬) ৭৮ রানের জুটি গড়ে দলকে বেশ ভালো অবস্থানে নিয়ে যান। বাংলাদেশ তখন ২১ ওভারে ১৫২ রানে। এই জুটি ভাঙার পরই জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়ার ছন্দ খুঁজে পায়নি।
পরের দিকে সৌম্য সরকার ৪৬ বলে ৪২ ও শেখ মাহেদী ৩০ বলে ৩১ করে চেষ্টা করলেও ইনিংস বড় করতে না পারার হতাশা আবারও চড়াও হয়। শেষদিকে রাকিবুল হাসান ৩৬ বলে ৪০ রান করে দলের হারের ব্যবধান কমিয়েছেন। লেগ স্পিনার দুশান হেমন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনটি উইকেট নেন। এছাড়া ৩ উইকেট নেন প্রমোদ মাদুশান।
লঙ্কান ইনিংস বড় রান পেয়েছে আভিস্কা ফার্নান্দোর সেঞ্চুরিতে। ওপেনিংয়ে নেমে ১২৪ বলে ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৩ রান করেন আভিস্কা। এছাড়া মিনোদ ভানুকা ৫৭, সুরিয়াবান্দারা ৪৩ ও দুনিথ ওয়ালালিগে ১৯ বলে ৩১ রান করেন।
দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফেরাটা জয়ের আনন্দে রাঙানো হলো না বাংলাদেশের মেয়েদের। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের গোলে তৈরি হয়েছিল সেই পথ। কিন্তু নিয়তিতে জয় না থাকলে যা হয়! নেপালের অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সাবিত্রা ভান্ডারি ইনজুরি টাইমে শুধু জালই খুঁজে নিলেন না, মাহবুবুর রহমান লিটুর শিষ্যদের জয়টাই কেড়ে নিলেন। দশ মাস পর মাঠে ফিরে ১-১ ড্র করল বাংলাদেশ।
গত বছর সেপ্টেম্বরে এই নেপালকে হারিয়েই সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি সাবিনা-কৃষ্ণাদের। ১০ মাস প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে না পারার প্রভাব সাবিনা-কৃষ্ণাদের খেলায় এদিন ফুটে উঠছিল বারবার। চেনা মাঠ কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই কেমন অগোছালো লাগল স্বাগতিকদের। নেপাল তাতে বাংলাদেশের অর্ধে খেলার সুযোগ পাচ্ছিল বেশি। সাবিত্রার সঙ্গে সারু লিম্বু, দিপা শাহিরা ভয় ধরাচ্ছিলেন মাঝেমধ্যেই। তবে গোল আদায় করার মতো দারুণ কিছু করতে পারছিলেন না তারাও। প্রথমার্ধ তাই গোলশূন্যভাবেই শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গুছিয়ে ওঠা বাংলাদেশ এগিয়েও যায় ৬৫তম মিনিটে। ৯০ মিনিট পর্যন্ত সেই লিড ধরে রাখতে পারলেও চার মিনিটের ইনজুরি টাইমে গড়বড় হয়ে গেল সব। স্নায়ুর লড়াইয়েই কি তবে হারল সাবিনারা? নাকি ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলা সাবিত্রার ওই গোলটা প্রাপ্যই ছিল? একই সঙ্গে হয়তো হারটাও এদিন মানাত না ইউরোপে খেলা দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের অন্যতম এই সেরা তারকার।
গত বছর সাফের ফাইনালে খেলা হয়নি সাবিত্রার। বাংলাদেশের বিপক্ষে নেপালও পেরে ওঠেনি। তখন পর্যন্ত নবম সাক্ষাতে ওটিই ছিল বাংলাদেশের একমাত্র জয়। এ নিয়ে দশম দেখায় বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা ওই একই থাকল। ড্রয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিনে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের দীর্ঘদিনের সঙ্গী ছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। তিনি প্রধান কোচের দায়িত্ব ছেড়েছেন। তার সহকারী হিসেবে কাজ করা লিটু নেপালের বিপক্ষে দুই ম্যাচের জন্য ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন। সাফের পর স্বপ্না-আঁখিরা অবসরে চলে যাওয়ায় এদিন তিন ফুটবলারের অভিষেক করাতে হয় তাকে। ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকার প্রান্তিকে শুরুর একাদশে মাঠে নামান। বদলি হিসেবে খেলান শাহেদা আক্তার রিপা ও ‘জাপানি কন্যা’ মাতসুসিমা সুমাইয়াকে।
৫৯তম মিনিটে সানজিদা আক্তারের বদলি নেমে রিপা দলকে এগিয়ে নিতে রাখেন বড় ভূমিকা। তার অ্যাসিস্ট থেকেই গোল করেন সাবিনা। রিপা দুই ডিফেন্ডারের মাঝে জায়গা খুঁজে নিয়ে সেখান দিয়ে বল দেন সাবিনাকে। তিনি রক্ষণের প্রতিরোধ ভেঙে দারুণ দক্ষতায় বল জালে জড়ান। ৭৫তম মিনিটে ফের একই ভঙ্গিমায় ঢুকে পড়েছিলেন সাবিনা। মাঝ মাঠ থেকে তাকে বল জোগান দিয়েছিলেন মারিয়া মান্দা। তবে এ দফায় তার আক্রমণ রুখে দেন নেপাল গোলরক্ষক। এর দুই মিনিট আগে রাশমি কুমারির শট রুখে নিশ্চিত গোল হজম থেকে বাংলাদেশকে বাঁচান গোলরক্ষক রূপনা চাকমা।
তবে ইনজুরি টাইমে আর পারেননি। গোলটার দায় বাংলাদেশের রক্ষণের। জটলার মধ্যে সাবিত্রা সুযোগ তৈরি করে এ রকম আদায় করে নিয়েছেন গোলটি। শেষ মুহূর্তে নেপালের আরেকটি আক্রমণ বাংলাদেশের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। না হলে হয়তো হারের বেদনাই সঙ্গী হতো সাবিনাদের।
বাংলাদেশ কোচ লিটু অবশ্য খুশি তার শিষ্যদের খেলায়, ‘পেশাদারভাবে যদি দেখি আমাদের মেয়েরা অনেক ভালো খেলছে। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে প্রধান কোচ হিসেবে থাকা ছোটন নেই। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিও নেই। সেই সঙ্গে ফিটনেস ট্রেইনার ইভান র্যাজলভও নেই। আমার জন্য দায়িত্বটা তাই চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে আমি পেশাদারভাবেই নিয়েছি। আর মেয়েরা যথেষ্ট ভালো খেলেছে। স্বপ্না-আঁখির মতো খেলোয়াড় নেই। চোটের কারণে কৃষ্ণা-মাসুরাকেও অনেকদিন পাইনি। তারপরও আজকের ম্যাচে মেয়েরা যেমন খেলছে, আমি বলব যথেষ্ট ভালো খেলছে আমার দৃষ্টিতে।’
ভূমিকম্পের পর যেমন ‘আফটার-শক’, তামিম ইকবালের আচমকা অবসর এবং নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের পর চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলও ছিল ‘আফটার-শক’ এর ভেতর। এলোমেলো বোলিং, ডাগআউটে কোচদের ভাবলেশহীন মুখই বলে দিয়েছে, কোনো কিছুই কাজ করছিল না মাঠে।
তৃতীয় ওয়ানডেতে নিজেদের খানিকটা গুছিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ, তাতেই আফগানিস্তানকে হারানো গেছে হেসেখেলে। একটা সময়ে ডাক্তাররা রোগীকে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য হাওয়া বদলের পরামর্শ দিতেন। চট্টগ্রামের গুমোট আবহাওয়া ছেড়ে সিলেটের সবুজ শ্যামলিমায় এসে ড্রেসিং রুমের হাওয়াও যে বদলে গেছে, অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথায় তা স্পষ্ট।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সময় নিয়ে দলটাকে গুছিয়েছেন, ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে নেতৃত্ব দিয়েছেন উদাহরণ তৈরি করে। দেশের মাটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারানোই তার প্রমাণ। আফগানরা টি-টোয়েন্টিতে অন্য দুই সংস্করণের চেয়ে শক্তিশালী হলেও তাই বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তিত নয়, বৃহস্পতিবার বলে গেলেন সাকিব, ‘আমরা যখন ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডে খেলছি, ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমরা ৩-০ তে সিরিজ জিতেছি, কিন্তু আয়ারল্যান্ডের কাছে একটা ম্যাচ হেরেছি। তো চ্যালেঞ্জ আসলে টি-টোয়েন্টিতে অনেক বেশি। চ্যালেঞ্জটাই আসলে এই ফরম্যাটকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং করেছে। আমাদের সামনে অবশ্যই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’ একই সঙ্গে সাকিব জানান, ‘দুইটা ম্যাচ আছে, কন্ডিশন খুব বেশি চিন্তা করছি না। এর কারণ, দুই দলের জন্য কন্ডিশন সবারই সমান। আমার কাছে মনে হয় না, আমরা ওই রকম দল আছি, কন্ডিশনের ফায়দা নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি অন্তত, ওই রকম ক্যাপাবল কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও যে কোনো দলের সঙ্গে কম্পিটিটিভ ক্রিকেট খেলতে পারে। সো আমি দলের কাছে আশা করব, সবাই যেন ওই মেন্টালিটি নিয়ে মাঠে নামে। ওপেন মাইন্ডেড থাকে, দলের প্রয়োজনে যা যা করার সেটা যেন করে।’
তামিমের অবসরকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর কোনো অস্থিরতা তৈরি হয়নি বলেই দাবি সাকিবের। যদিও পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনগুলোতে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা লিটন দাস কিংবা নিক পোথাসের প্রতিক্রিয়াই বলে দেয়, ব্যাপারটা কতখানি নড়িয়ে দিয়েছিল দলের খেলোয়াড়দের ভাবনার জগৎ। তামিম নিজেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন দলের ভেতরের চাপের কথা। সাকিব বলছেন, দলে কোনো অস্থিরতাই নেই, ‘আসলে দেখেন, বাইরে থেকে অনেক সময় অনেক কিছু মনে হতে পারে। ড্রেসিংরুমে আমার কখনো মনে হয় না কোনো অস্থিরতা ছিল; কিংবা আছে। পরিবেশ তো আমি সবসময় মনে করি ভালো আছে। অবশ্যই রেজাল্টের কারণে আপনারা সবসময় চিন্তা করবেন ড্রেসিংরুমের অবস্থা ভালো না খারাপ। বাট আমার কাছে মনে হয় না, খুব বেশি ড্রেসিংরুমের এনভায়রনমেন্ট চেঞ্জ হয় জিতি অথবা হারি তার ওপরে। আমাদের এখন চেষ্টা থাকে সবসময় প্রতিদিন কীভাবে আমরা নিজেদের ইমú্র“ভ করতে পারি এবং সেই হিসেবে টিমের হয়ে পারফর্ম করতে পারি। টিমের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে পারি।’
দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সাকিব কোনো কিছুতেই ছাড় দিচ্ছেন না। বুধবার সিলেটে এসেই কোচ চ-িকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে চলে এসেছিলেন উইকেট দেখতে। কাল নেটে এক ঘণ্টার ওপর ব্যাটিং করেছেন। কোচ হাথুরুসিংহে নিজেও স্পিন বোলিং করেছেন নেটে, এছাড়া নেট বোলারদের ভেতরও স্পিনারদের বেশি বেশি খেলেছেন ব্যাটসম্যানরা। বোঝাই যাচ্ছে, আফগানদের হারাবার জন্য স্পষ্ট রণপরিকল্পনাই সাজিয়েছেন সাকিব-হাথুরুসিংহে মিলে। মাঠে চলেছে তারই অনুশীলন।
নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মহড়াতেই ব্যস্ত থাকা সাকিব প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবতেই নারাজ, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমরা দল হিসেবে তখনই ভালো খেলি যখন অন্য দলকে নিয়ে চিন্তা না করি। আমরা যখন ওপেন মাইন্ডেড থাকি, কীভাবে মেকাপ করা যায় সেভাবে চিন্তা করি এবং নিজের জায়গা থেকে কীভাবে ১০-২০ শতাংশ উন্নতি করতে পারি সেই চিন্তাগুলো করি। সেগুলো তখন পারফর্ম বেশি করে। আমরা তখনই একটু নার্ভাস থাকি বা অত ভালো পারফর্ম করতে পারি না, যখন আমরা কন্ডিশন নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করি। অনেক বেশি অপনেন্ট নিয়ে চিন্তা করি। আমি মনে করি, ওই জিনিসটা নিয়ে যত কম চিন্তা করি, সেটাই ভালো।’
তামিম নিজে চোট, খারাপ ফর্ম সবকিছু মিলিয়ে ওয়ানডে দলে নিজের কর্র্তৃত্বটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন, যার প্রমাণ আচমকা অবসরের ঘোষণা। সাকিব অবশ্য শক্ত করেই ধরে রেখেছেন দলের লাগাম। মাঠে এবং মাঠের বাইরেও। তাই ড্রেসিংরুমেও অস্থিরতার স্ুেযাগ নেই।
১৭ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথমপর্বে বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী লিমিটেডের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা পরিচালনা করেছিলেন চার ভুটানি রেফারি। লিগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বলেই বাফুফে কোনো ঝুঁকি নেয়নি। শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে তারা বিদেশি রেফারি দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করে। তাতে বসুন্ধরা ২-১ গোলে জিতে টানা চতুর্থ শিরোপা জয়ের পথে বড় একটা বাধা পেরোয়। এরপর একের পর এক ম্যাচ জিতে ঠিকই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে কিংস চার ম্যাচ হাতে রেখে। শিরোপার প্রশ্নে আজ ফিরতিপর্বে দুদলের ম্যাচটা কেবলই আনুষ্ঠানিকতার। তবে দুই পরাশক্তির দ্বৈরথ বলেই বড় হয়ে আসছে মর্যাদার বিষয়টি। কিংসের এটি মৌসুমের শেষ ম্যাচ। শেষটা জয়ে রাঙাতে তাই তারা একরত্তি ছাড় দিতে নারাজ। সামর্থ্যরে সেরাটা দিয়েই লড়বে তারা। একই সঙ্গে একটা পরিচ্ছন্ন ম্যাচের আশায় ফিরতিপর্বের এই ম্যাচটাও কিংস চাইছে বিদেশি রেফারির উপস্থিতি।
১১ জুলাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের কাছে এই ম্যাচের রোমাঞ্চটা অটুট রাখতে প্রথমপর্বের মতো বিদেশি রেফারি উড়িয়ে আনার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায় কিংস। ম্যাচটা হবে তাদের হোম কিংস অ্যারেনায়। এই ভেন্যুতে সামনে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ আয়োজনের লক্ষ্যে বিদেশি পরামর্শক এনে উন্নয়নের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে লিগ চ্যাম্পিয়নরা। তাই আজকের ম্যাচটা একটু পিছিয়ে ৬টায় শুরু হবে।
কিংসের ম্যানেজার ওয়াসিমউজ্জামান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কুমিল্লায় প্রথমপর্বের ম্যাচটা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে হয়েছিল কেবলমাত্র বিদেশি রেফারি পরিচালনা করেছিলেন বলে। আমাদের কাছে আগামীকালের (আজ) ম্যাচের গুরুত্বও কম নয়। তাই এই ম্যাচেও আমরা বিদেশি রেফারির অধীনে আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করছি বাফুফে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থাস নেবে।’
এক ম্যাচ কম খেলা আবাহনী কিংসের চেয়ে পিছিয়ে আছে পাক্কা ১৫ পয়েন্টে। রানার্সআপ হতে আজ তাই তাদেরও জয়ের বিকল্প নেই। তাছাড়া মর্যাদার বিষয়টি এসে যাচ্ছে বলেই তারা চাইবে প্রথমপর্বের হারের শোধ তুলতে।
প্রথমবারের মতো উইম্বলডনের ফাইনালে উঠেছেন মার্কেতা ভনদ্রুসোভা। গতকাল নারী এককের সেমিফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের এই খেলোয়াড় ৬-৩, ৬-৩ গেমে হারান এলিনা সিতোলিনাকে।
টেনিসের উন্মুক্ত যুগে উইম্বলডনে অবাছাই হিসেবে ফাইনালে ওঠা পঞ্চম খেলোয়াড় ভনদ্রুসোভা। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি খুব খুশি যে এলিনাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছি। সে একজন যোদ্ধা এবং দারুণ মানুষ। কঠিন একটি ম্যাচ ছিল।’
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো গ্র্যান্ড সø্যাম ফাইনালে উঠলেন ভনদ্রুসোভা। এর আগে ২০১৯ সালে ২০ বছর বয়সে খেলেছিলেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনাল। সেই ম্যাচে হেরেছিলেন অ্যাশলে বার্টির কাছে। সে সময় ভাবা হচ্ছিল নারী এককে র্যাংকিংয়ের প্রথম দিকেই থাকবেন তিনি। তবে ইনজুরির কারণে পিছিয়ে পড়েন তিনি। ২০২২ সালে চার গ্র্যান্ড সø্যামের তিনটিই মিস করেছিলেন ভনদ্রুসোভা। শনিবারের ফাইনালে সাবালেঙ্কা-জাবুর দ্বিতীয় সেমিফাইনাল জয়ীর সঙ্গে খেলবেন ভনদ্রুসোভা।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।