
গেলবার জাকার্তা-পালেংবাং এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট ছিল না। সুবাদে বাংলাদেশের ১১৭ সদস্যের বহর কেবল ইন্দোনেশিয়ার দুই শহর ঘুরেফিরে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। প্রাপ্তি ছিল শূন্য। পাঁচ বছর পর আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর চীনের হ্যাংজু শহরে বসতে যাচ্ছে ১৯তম এশিয়ান গেমস। যেখানে ফিরেছে ক্রিকেট। তাই এবার পুনরায় পদকের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ক্রিকেট ঘিরেই আবর্তিত ২৩২ জনের বহরের পদক সম্ভাবনা।
১৯৮৬ সাল থেকে এশিয়ান গেমসে নিয়মিত অংশ নেয় বাংলাদেশ। সিউল এশিয়াডে প্রথম আসরেই দেশকে পদক উপহার দেন বক্সার মোশাররফ হোসেন। ব্রোঞ্জ জিতে ইতিহাসে নাম লেখান। সেটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত অর্জন। দেশকে প্রথম ও একমাত্র স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে পুরুষ ক্রিকেট দল। এবারও পদকের আশা করলেও আগের দুবারের চেয়ে কাজটা কঠিন। ভারত প্রথমবারের মতো ক্রিকেট দল পাঠাচ্ছে এবং সেটা আইপিএল খেলা তরুণ সব ক্রিকেটারের সমন্বয়ে। তাই বাংলাদেশের জন্য সোনা জেতাটা হয়ে যাবে আরও কঠিন।
এশিয়াডকে সামনে রেখে গত মে মাস থেকে অলিম্পিক গেমসের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতি শুরু করে বিভিন ক্রীড়া ফেডারেশন। ইতিমধ্যে অ্যাথলেট এবং অফিশিয়ালদের তালিকাও চূড়ান্ত করেছে বিওএ। ১৭টি ডিসিপ্লিনে অ্যাথলেট সংখ্যা গতবারের চেয়ে ঢের বেশি ১৮২ জন। এছাড়া ৫০ জন অফিশিয়াল যাচ্ছেন বিভিন্ন ডিসিপ্লিন থেকে। গতবার বাংলাদেশ থেকে ১৪টি ডিসিপ্লিনে ১১৭ জন অ্যাথলেট অংশ নেয়। তবে সবাই সেবার হতাশ করেন। এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বড় বহর ফুটবলের। পুরুষ ও নারী মিলিয়ে ৪৪ জন খেলোয়াড় এবং আটজন অফিশিয়াল যাচ্ছেন। যদিও ফুটবলে পদকের আশা নেই।
সংখ্যার দিক থেকে এরপরেই আছে ক্রিকেট। পুরুষ ও নারী মিলিয়ে খেলোয়াড় ৩০ জন। সাফল্য প্রসবার কাবাডিতে বরাবরের মতো পুরুষ ও নারী দল পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৪ ইনচন এশিয়াডে মেয়েদের দল ব্রোঞ্জ জিতলেও ছেলেদের দল সর্বশেষ পদক জিতেছিল ২০০৬ সালে দোহায়। এরপর থেকেই পুরুষ কাবাডি উল্টোরথে। শুটিং নিয়ে বরাবরই বাংলাদেশের একটা আশা থাকে। এবারও তাই। বিভিন্ন ইভেন্টে এবার ১৮ শুটার অংশ নেবেন। এছাড়া গত কয়েক বছরে ভীষণ উন্নতি করা আরচারি নিয়েও আছে আশা। মাদার গেমস খ্যাত ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবেন একমাত্র স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান। এর বাইরে ফেন্সিং, ব্রিজ, গলফ, জিমন্যাস্টিকস, কারাতে, সাঁতার, তায়কোয়ান্দো, ভারোত্তোলন, দাবা ও বক্সিংয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে নিজেদের সেরাটাই প্রত্যাশা বিওএর।
এশিয়াডে বাংলাদেশের শেফ দ্য মিশন একে সরকারও পাখির চোখ করেছেন ক্রিকেটে, ‘এশিয়ান গেমস অনেক বড় আসর। ক্রিকেটে আমরা বরাবরই ভালো করে আসছি। অতীতেও পদক পেয়েছি। তাই নারী-পুরুষ দুই ইভেন্টেই টি-২০ তে স্বর্ণের আশা করছি। এছাড়া শুটিং ও আরচারি নিয়ে আমাদের সবসময়ই একটা আশা থাকে। শুটিংয়ে কোনো ইভেন্টের ফাইনাল রাউন্ডে যেতে পারলে পদক আসতেও পারে। আর গত কয়েক বছর ধরেই তো আরচাররা আশা জুগিয়ে যাচ্ছেন।’ যে খেলাটি থেকে নিয়মিত পদক পেত বাংলাদেশ, সেই কাবাডি নিয়েও আশা আছে বিওএ’র এই কর্মকর্তার, ‘কাবাডি নিয়ে আশা করব না কেন? ছেলেদের দল ভারত থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। এখন মেয়েরা এক মাসের জন্য ভারত গিয়েছে প্রশিক্ষণ নিতে। যদিও ভারত, ইরান, কোরিয়া, পাকিস্তান শক্তিশালী দল। তারপরও আমরা আশা করছি।’ অন্য খেলাগুলো নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে একে সরকার বলেন, ‘আমরা সব ডিসিপ্লিনকেই বলেছি যাতে নিজেদের সেরা ফলাফলটা করতে পারে, যাতে সবাই আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি। কেবল অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতার জন্য দল পাঠানোর সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই।’
আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্যাচ মিস করে কার বলে? প্রশ্নের উত্তরটা হয়তো সবারই জানা। তাসকিন আহমেদ। সতীর্থরা হাতে বল রাখতে পারলে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই এই বোলারের উইকেট সংখ্যা যথাক্রমে ৩০, ৮১ ও ৫২ থেকে আরও বাড়ত। তো সতীর্থদের ক্যাচ মিস তাসকিনের এক দুঃখের কারণ। এখন আবার সতীর্থদের দিকে তাকিয়েই অন্যরকম দুঃখ হয়তো পেতে পারেন তাসকিন! বিদেশি লিগে তার সতীর্থরা খেলার অনুমতি পেলেও তিনি পাচ্ছেন না। বারবার দেশের বাইরের লিগে ডাক পেয়েও বিসিবির অনাপত্তি না পাওয়ায় আটকে যাচ্ছে তাসকিনের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলা।
ক্যারিয়ারে এই প্রথম বিদেশি লিগে খেলার অনুমতি পেয়েছেন তাসকিন। জিম্বাবুয়ে অ্যাফ্রো টি-১০ লিগে বুলাওয়ে ব্রেভসের হয়ে খেলেছেন এই পেসার। প্রথমবারেই নিজের সামর্থ্যরে ছাপ রেখেছেন ৭ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে। নিজে ভালো করলেও তাসকিনের দল শীর্ষ চারে থাকতে পারেনি। তাই গ্রুপ পর্বের পরই ৫ দলের লিগ থেকে পঞ্চম হয়ে থামতে হচ্ছে ব্রেভসকে। দল নকআউটে যেতে না পারায় একটু আগেভাগেই দেশে চলে আসবেন তাসকিন।
জিম্বাবুয়ের এই লিগ খেলার মধ্যেই শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়ার লিগের দল ডাম্বুলা অরা পেতে চেয়েছে এই পেসারকে। ৩০ জুলাই থেকে লিগটি শুরু, আর তাসকিন জিম্বাবুয়ে থেকে একটু আগেই ফিরছেন। তাই লঙ্কা লিগেও খেলতে পারতেন তাসকিন। যেহেতু ৩১ আগস্টের এশিয়া কাপের আগে আর কোনো ব্যস্ততা নেই। তাই শ্রীলঙ্কায় ২০ আগস্ট পর্যন্ত লিগে খেলা কঠিন ছিল না তাসকিনের জন্য। কিন্তু তাসকিনকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি বিসিবি। তাই এশিয়া ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে তাসকিনকে আর কোনো লিগে খেলতে দিতে চায় না বোর্ড।
ক্রিকেটারদের বিদেশি লিগে খেলার ব্যাপারটিতে সুরাহা আনতে বছরে দুটি লিগ খেলতে দেওয়ার নিয়ম চালু করেছিল বিসিবি। এখন বাধ্য হয়েই সেই পথ থেকে সরে এসেছে। কারণ বিদেশি লিগগুলোর পরিমাণ এখন বেশি। তাসকিনকে অনাপত্তিপত্র না দেওয়ার কারণ সামনে এনে বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী মিরপুরে বলেছিলেন, ‘অবশ্যই আমাদের ক্রিকেটের জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক যে, আমাদের ক্রিকেটাররা বাইরের বিভিন্ন লিগে ডাক পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক এপিয়ারেন্স, ডমেস্টিক লিগ খেলার জন্য যে ওয়ার্কলোড দরকার, এগুলো বিবেচনা করে এবং ফিউচার যে টুর্নামেন্টগুলো আছে, সেগুলোতে পার্টিসিপেশনও আরেকটি কনসিডারেশনের বিষয়। লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত তাসকিনের বিষয়টা বিবেচনাধীন আছে। তার যে সাম্প্রতিক খেলা ছিল, তার ওয়ার্কলোড বিবেচনা করে হয়তো এই লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে আমরা তাসকিনের বিষয়টাকে ভিন্নভাবে চিন্তা করছি।’
এই ভিন্নভাবে চিন্তা করা মানে তাসকিনকে অনাপত্তিপত্র দেওয়াই হবে না। জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে তাসকিন লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের জন্য অনাপত্তিপত্র চেয়ে পুনরায় আবেদন করলেও বিসিবির সিদ্ধান্ত বদলাবে না বলে জানানো হয়েছে বোর্ড থেকে। তার মানে শুধু যে খেলা থেকে তাসকিন বঞ্চিত হচ্ছেন তা নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে মোটা অঙ্কের সম্মানী থেকেও বঞ্চিত তাসকিন।
দেশের ক্রিকেটের জন্য বিসিবির সিদ্ধান্তে তাসকিনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ আইপিএল না খেলা। গত বছর নতুন দল লখনৌ সুপার জায়ান্টস থেকে মার্ক উডের বদলি হিসেবে তাসকিনকে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় চলমান দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ এবং পরে শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য এই পেসারকে অনাপত্তিপত্র দেয়নি বিসিবি। এরপর গত মাসে ইংলিশ কাউন্টিতে ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেয়েও না বলতে হয়েছে তাসকিনকে। এর আগে পিএসএলে খেলার প্রস্তাবও ফিরিয়েছেন। বারবার এমন প্রস্তাব ফেরানো তাসকিনের কাছেও ভালো লাগে না বলে একটি পণ্যের প্রচারণা অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন তাসকিন নিজেই। আইপিএল না খেলার কারণে কিছুদিন আগে তাসকিনকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বিসিবি। এবার লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ না খেলতে যাওয়ায় কি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে?
আর্থিক বিষয়টি না হয় পাশে রাখতে হয়। একজন ক্রিকেটার বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলতে চান নতুন অভিজ্ঞতার জন্য। সেক্ষেত্রে আর্থিক দিকটি গৌণ থাকে। অনেক সময় ব্যক্তিগত বা দলীয় অনুশীলনের চেয়েও বড় শিক্ষার জায়গা হয়ে থাকে ম্যাচের পরীক্ষা। কিন্তু তাসকিনের এখন আর তা হচ্ছে না। এশিয়া কাপের আগে দলীয় অনুশীলনই এক মাস ধরে তাসকিনের প্রস্তুতির মূল ভরসা। এ ব্যাপারে সাবেক পেসার তারেক আজিজ দুই পক্ষই সামনে আনছেন, ‘আসলে খেলার ফিটনেস তো বসিয়ে রেখে অনুশীলন করালে জীবনেও হবে না। খেলায় যে জিনিসটা শিখবেন সেটা অনুশীলনে সম্ভব না। পরীক্ষা না দিলে আপনি নিজের শক্তি-দুর্বলতা বুঝবেন কী করে। কিন্তু তাসকিনের যে ব্যাপারটা হয়েছে ওর গতির কারণে ওকে একটু রয়ে-সয়ে খেলতে হয়। এখন সে যে রিদমে আছে পাড়ার ক্রিকেট হোক বা বিশ্বকাপ হোক সে কিন্তু সমান এফোর্টে বল করবে। একটানা এভাবে বল করে যাওয়াটা আবার ওর মতো গতিময় পেসারের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই ম্যাচ ফিটনেস যেমন দরকার তেমনি তাসকিনকে নিয়ে বিসিবি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাও প্রয়োজনীয়।’
বিদেশে খেলার সুযোগ হারালেও বিশ্রাম পেয়ে এশিয়া কাপে ভালো করবেন তাসকিন, সেই আশা থাকবে। কিন্তু তাসকিনের মনে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে না পারার অক্ষেপ কি ঘুচবে?
ভারতের বিপক্ষে ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে জায়গা নিয়েছেন ফারজানা হক পিংকি। দলও ইতিহাস গড়েছে সিরিজ ড্র করে। দেশের প্রথম হওয়ায় ফারজানার দায়িত্ব বেড়েছে, দল হিসেবে ওয়ানডে চ্যাম্পিয়নশিপেও লক্ষ্য বেড়েছে। স্মরণীয় সেঞ্চুরি ইনিংসের কথা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে
দল ও ব্যক্তিগতভাবে অবিশ্বাস্য এক সিরিজ জয়ের আনন্দ কেমন ছিল?
ফারজানা : প্রথমত আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, বিষয়টা হলো দল হিসেবে সবাই মিলে যখন ভালো খেলতে পারি সেটা সবসময়ই সবার জন্য ভালো লাগা। আর নিজের কথা বলতে একজন ব্যাটার হিসেবে রান করে যখন দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারব তখন পরের সিরিজ না আসা পর্যন্ত এই ভালো লাগাটা চলতেই থাকে। সেই আত্মবিশ্বাস থাকে, ফুর্তিটাও থাকে। সেদিন আমি আচমকা সুযোগ পেয়েছিলাম ওপেন করার। সাধারণত আমি নাম্বার তিনেই ব্যাট করি। ওই রকম একটু সুযোগ চলে আসায় আমি নিজেকে বুঝিয়েছি যেন বেশি চিন্তা না আসে। আমি চেষ্টা করেছি ৫ ওভার করে খেলার। সেখান থেকে এরকম একটা ইনিংস চলে আসায় আমার ভালো করার স্পৃহাটা আরও বেড়েছে। এখন আমি চাইব যেন আমার নামের পাশে এমন ইনিংস আরও আসে।
এমন দুর্দান্ত সিরিজের পর বাড়ি ফেরাটা কেমন ছিল?
ফারজানা : দেশের বাড়িতে আমি যেতে পারিনি। পরিবারের সবার সঙ্গে কিন্তু কথা হয়েছে। আমাদের ট্রেনার যে ফিটনেস শিডিউল দিয়ে দিয়েছেন সেটা নিয়ে কাজ করেছি। দেশের বাড়িতে গেলে হয়তো এই কাজ করা হতো না। তাছাড়া আমি একজন ব্যাটিং কোচের সঙ্গে কাজ করছি এটাও মিস করতে চাচ্ছিলাম না। আর বাবা-মা তো সবসময়ই পাশে থাকে, সেটা ভালো বা খারাপ সময় যেটাই হোক। তো উনারা অনেক খুশি হয়েছেন কিন্তু সেভাবে প্রকাশ করেননি। তবে কথা হয়েছে, তারা সবসময়ই আমাকে সমর্থন করে যান। এটা অন্যরকম ভালো লাগার বিষয়।
কোচ হাসান তিলাকরতেœ বলছিলেন দল হিসেবে আপনাদের একটু ফিটনেসে ঘাটতি আছে। কিন্তু শেষ ম্যাচে আপনি তো বিপরীত কিছু দেখালেন। কোচ বলার পরই এটা কীভাবে সম্ভব করলেন?
ফারজানা : আমি ম্যাচের আগে-পরের মন্তব্যগুলো না শুনে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু ওই বিষয়টা আমার ফোনে চলে আসে কোনো ভাবে। স্যার যেটা বলেছেন, আমাদের এখন ছোট দলের সঙ্গে খেলা নেই। তাই বড় দলের বিপক্ষে খেলা হলে এই ফিটনেসের বিষয়টা কিন্তু সামনে আসবেই। আমাদের অবশ্যই ঘাটতি আছে, এখন আমরা দল হিসেবে ৬০-৭০ এ আছি শতভাগের মধ্যে। তো আমাদের দল হিসেবে আমাদের আরও ২০-২৫ ভাগ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। এখন ফিটনেস ট্রেনার যেহেতু চলে আসছেন এই ঘাটতিটা আমরা সবাই কাটিয়ে উঠতে পারব। এখন আমাদের সবাই নিজেদের কাজটা বুঝছে, বড় পর্যায়ে যে ফিটনেস নিয়ে আরও কাজ করতে হবে সেটা সবার মনে এসেছে। তো আমি বিশ্বাস করি বেশিদূর নেই যে আমরা ফিটনেসের দিকে আরও এগিয়ে যেতে পারব।
নিজের ফিটনেস নিয়ে কতটা সতর্ক আপনি?
ফারজানা : লম্বা ইনিংস খেলার ব্যাপারে, আমি তো ওপেনিংয়ে নেমে অত কিছু ভাবিনি। সেঞ্চুরি করব এর জন্য অনেক সময় উইকেটে থাকব এটা চিন্তা ছিল না। তো আমি ৫ ওভার করে ক্রিজে থাকার দিকে মনোযোগী ছিলাম। সেভাবে আসলে সেঞ্চুরিটা চলে এসেছে। ব্যক্তিগত দিক থেকে বলব যে ক্রিকেটে সবসময় চেষ্টা করি ভালো কিছু করার। বয়সের সঙ্গে ভালো ফিটনেস না থাকলে তো আমি ভালো কিছু করতেও পারব না। তো আমি এই দিকটা মেইনটেন করার চেষ্টা করি।
দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হলেন, অভিজ্ঞ ব্যাটার আগে থেকেই ছিলেন। এখন অভিজ্ঞতার দিক থেকে আপনার দায়িত্ব কতটুকু বাড়ল?
ফারজানা : আসলে একটা ইনিংস দিয়েই তো আর কেউ অভিজ্ঞতায় বেশি হয়ে যায় না আমি সবসময় দলের জন্য খেলার চেষ্টা করি। আজ ভালো করেছি বলে হয়তো এখন আমার ইনিংস বা কঠোর পরিশ্রম নিয়ে কথা উঠছে। কিন্তু আমি অনেকদিন ধরেই এই কঠোর পরিশ্রমটা করি। আমি কাউকে ছোট করছি না, আমাদের ওপেনাররা অবশ্যই ভালো। কিন্তু ওরা কিছুদিন ধরে বড় ইনিংস খেলতে পারছিল না। তো ওই সময় আমি একটু দ্রুত উইকেটে যেতাম বলে নতুন বলেই খেলতে হতো ইনিংসের শুরু থেকে। আর নেটে তো নতুন বলে অনুশীলন করি। এই অভিজ্ঞতাগুলো ওপেনিংয়ে লম্বা ইনিংস খেলার ব্যাপারে মানসিকভাবে সহায়তা করেছে।
ভারতের সঙ্গে হোম সিরিজ ড্র করলেন। চ্যাম্পিয়নশিপের বাকি হোম সিরিজগুলোতে বাংলাদেশ কী করবে?
ফারজানা : একটা বিষয় হলো আমরা দুটো অ্যাওয়ে সিরিজে ভালো করিনি। তাই ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজটা সবার নজরে ছিল। একটু ভয়ও ছিল। কিন্তু এই সিরিজটাই দেখুন আমরা কত ভালো করেছি। এখান থেকে আমরা অবশ্যই সর্বোচ্চ আত্মবিশ্বাসটা পাব হোম সিরিজের ব্যাপারে। এখন আমাদের সামনে কোনো সহজ সিরিজ নেই, সবই কিন্তু চ্যালেঞ্জিং। সেসবের জন্য ভারত সিরিজটা বেশ সুরটা বেঁধে দিয়েছে বলব। এখান থেকে আমরা পুরো দল হয়ে একে অপরকে সমর্থন করে খেলার দিকটা শিখে নিতে পারি। পুরো দল মানে কোচদের কথা বলব, সাপোর্ট স্টাফদের কথা বলব সবাই কিন্তু আমাদের দল হয়ে খেলার ব্যাপারে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। এখন সামনের হোম সিরিজের আগে আমরা যে সময়টা পাব, এই সময়ে আমরা যদি ভালো অনুশীলন করতে পারি তাহলে অবশ্যই পাকিস্তান না যে কোনো দলের সঙ্গেই ভালো কিছু পাব।
ওয়ানডে চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের আলাদা কোনো লক্ষ্য রাখবেন কি?
ফারজানা : লক্ষ্য আসলে বলতে চাই না। আমার অবশ্যই স্বপ্ন আছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করে আমি দেখাতে চাই। এখন একটা কিছু বলব কিন্তু মাঠে পারলাম না সেরকম কিছু হোক আমি চাই না। আমি আমার স্বপ্ন মনেই রেখেছি সেটা মাঠে নিজের পরিশ্রম দিয়ে পূর্ণ করে যেতে চাই।
আজারবাইজানের বাকু শহরে আগামীকাল থেকে শুরু হবে ফিদে বিশ্বকাপ দাবা। বাংলাদেশের এনামুল হোসেন রাজীব, মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান, নোশিন আঞ্জুম ও জান্নাতুল ফেরদৌস বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
বিশ্বকাপ দাবার প্রথম রাউন্ডে রাজীব খেলবেন জার্মানির কোলারস ডমিট্রিজের বিপক্ষে এবং ফাহাদ হবেন ইতালির ভোকাতুরো দেনাইলের। জান্নাতুল লড়বেন রোমানিয়ার বুলমাগো ইরিনার সঙ্গে নোশিন খেলবেন পোল্যান্ডের সককো মনিকার সঙ্গে।
ক্লেমন ইনডোর ইউনি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সপ্তম আসরের শিরোপা জিতেছে জাতীয় দলের তারকা নাজমুল হোসেন শান্তর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। ফাইনালে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি জিতেছে নিজেদের তৃতীয় শিরোপা।
বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডে নিজের বেছে নেওয়া ডাক্তার দেখিয়েছেন তামিম ইকবাল, সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী, সংবাদ বার্তায় জানিয়েছে বিসিবি। তামিম দুই দিন ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকবেন, এরপর আবার তার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে।
মে মাসে যখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম, তখনই নাকি ডা. টনি হ্যামন্ডের ব্যাপারে খোঁজখবর করে গিয়েছিলেন তামিম। ইস্টবাউন্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে ডা. হ্যামন্ডের ব্যাপারে লেখা রয়েছে, ‘তার দক্ষতার জায়গাগুলো হচ্ছে জরাগ্রস্তদের ওষুধ, বৃদ্ধ বয়সের মানসিকতা, আসক্তি নিয়ন্ত্রণ, ত্বক ক্যানসারের যত্ন, দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসা, পেশি ও হাড় সংক্রান্ত ওষুধ এবং মেরুদন্ডের চিকিৎসা।’ তামিমের সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী, মেরুদন্ড সংক্রান্ত যা মাঝে মাঝে ছড়িয়ে পড়ে দেহের অন্যান্য অংশেও।
ডাক্তার দেবাশীষ মারফত ইংল্যান্ড থেকে বিসিবি জানতে পেরেছে, ‘তামিম তার পিঠের ব্যথার জন্য একজন মেরুদন্ড বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখিয়েছেন এবং তাকে ব্যথা নিরাময়ের জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। তাকে আগামী ২ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং এরপর কী ফল আসে তার ওপর ভিত্তি করে পরিস্থিতি পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার্থে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সম্ভাব্য সব পথই অবলম্বন করছেন দলটির নেতারা। তার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে আবেদন জানানোর পাশাপাশি তার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আবার রিট করার কথা ভাবছে। কূটনৈতিক উদ্যোগও অব্যাহত রেখেছে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে আমরা আলটিমেটাম দিয়েছি। কর্মসূচি দিচ্ছি। সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরপরও সরকার তৎপর না হলে, তাদের বোধোদয় না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
বিএনপি-সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুণ অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের শারীরিক যে অবস্থা তাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়। তার লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য তাকে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারসমৃদ্ধ হাসপাতালে নিতে হবে। কাছাকাছি সিঙ্গাপুরে এমন হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সে আধুনিক চিকিৎসাসেবা রয়েছে।’
আমেরিকায় অবস্থানরত খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে যতবার আবেদন করা হয়েছে, ততবারই চিকিৎসকদের পরামর্শের কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চাইলে আবেদন করতে হবে। আমরা আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেলে আবেদন করা হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে।’
সরকার বলেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কতটা নিরপেক্ষ হয়েছে তা দেখতে আদালতে যেতে পারি আমরা। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হলে এবং তারা সিদ্ধান্ত দিলে আমরা আইনজীবীরা আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নেব। আগেও আদালতে রিট করা হয়েছিল।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। মেডিকেল বোর্ড মনে করে তাদের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি।’
সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পরিবার আবেদন করলে সরকার ভেবে দেখবে। আবেদন করার কথা উনি আগেও বলেছেন। আমরা আবেদন করেছি। সাড়া পাইনি। এখন সাড়া পাওয়ার নিশ্চয়তা কী? এরপরও আমরা আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে স্ব^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। খালেদা জিয়া দ-প্রাপ্ত আসামি। বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনো আবেদন তার পরিবার করেনি। এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে।’
খালেদা জিয়াকে গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট হলে গত রবিবার রাত দেড়টার দিকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার তাকে আবার কেবিনে ফেরত নেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মাঝখানে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। অতিদ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা দরকার। ডাক্তাররা বলেছেন এটা দেশে সম্ভব নয়। আমরা অনেক দিন ধরেই তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করছে না। এখন একেবারে শেষ সময় চলে এসেছে। বিদেশে নেওয়া না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না। সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল বলা যাবে না।’
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে ২০২০ সাল থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়।
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’