
এক দিন এগিয়ে আনা হচ্ছে বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। ১৫ অক্টোবরের পরিবর্তে ১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের কারণে পরিবর্তন আসছে আরও কয়েকটি ম্যাচের সূচিতে। ১৪ অক্টোবর চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড এবং দিল্লিতে আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এক দিনে তিনটি ম্যাচ এড়াতে আফগানিস্তান-ইংল্যান্ডের খেলাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি পূর্বনির্ধারিত অর্থাৎ ১৪ অক্টোবরই হবে।
পরিবর্তিত এই সূচি এ সপ্তাহের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে ইএসপিএনক্রিকইনফো।
৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা করা হয়েছিল জুনের শেষ সপ্তাহে। সূচি প্রকাশের পর ১৫ অক্টোবরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ওই দিনের আহমেদাবাদের হোটেল ভাড়া, বিমান ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে সপ্তাহ দুয়েক আগে নতুন খবর সামনে আসে। আহমেদাবাদের পুলিশ ভারতীয় বোর্ড বিসিসিআইকে জানায়, ১৫ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নবরাত্রি উৎসব শুরু হওয়ায় একই সময় ক্রিকেট ম্যাচে নিরাপত্তা জোরদার করা কঠিন হবে। এ জন্য ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সূচিতে পরিবর্তনের অনুরোধ জানায় তারা।
গত সপ্তাহে বিসিসিআই সচিব জয় শাহ নিশ্চিত করেন, বিশ্বকাপ সূচিতে পরিবর্তন আসছে। যদিও নবরাত্রি বা নিরাপত্তা কোনো কারণ নয় জানিয়ে তিনি দাবি করেন, অংশগ্রহণকারী কয়েকটি দেশ সূচি বদলের লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে।
গতকাল ক্রিকইনফো জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানসহ কয়েকটি ম্যাচের সূচিতে অদল-বদল এনে বিসিসিআই আইসিসির কাছে পাঠিয়েছে। পরিবর্তিত সূচি আইসিসি হয়ে পিসিবির কাছে যাওয়ার পর তাতে সম্মতিও পাওয়া গেছে। শুধু ভারত ম্যাচই নয়, পাকিস্তানের অন্য একটি ম্যাচের সূচিতেও বদল আসছে।
১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হওয়ার কথা বাবর আজমদের। এখন দুই ম্যাচের মাঝে পর্যাপ্ত বিরতি নিশ্চিত করতে ম্যাচটি ১০ অক্টোবরে নির্ধারণ করা হচ্ছে। ভেন্যু একই থাকবে।
এদিকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সূচি নিয়ে যখন আলোচনা, তখন পাকিস্তানের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই অনিশ্চতায় ঝুলে আছে। পিসিবি জানিয়েছে, বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গঠন করেছে বিশেষ কমিটি। ক্রিকবাজ জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন কমিটি আজ বৈঠকে বসবে। ১৪ সদস্যের কমিটি ভারতে ভেন্যু পরিদর্শনে একটি নিরাপত্তা দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সবার কি আর সবকিছু পাওয়া হয়! মেয়েদের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার মার্তার যেমন একটা বিশ্বকাপ ট্রফি অধরাই থেকে গেল। ছয়বারের ফিফা বর্ষসেরা নারী ফুটবলার ষষ্ঠবারের বিশ্বকাপের মঞ্চে নেমেছিলেন। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক এবারের আসরে জালের দেখাই পেলেন না। অবশ্য চোটের কারণে তিনি মাঠে ছিলেন খুব কম সময়ই। তার দল ব্রাজিলও বিদায় নিল প্রথম পর্ব থেকেই।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে চলমান নারী বিশ্বকাপে গতকাল জ্যামাইকার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে ব্রাজিল। এক পয়েন্টের সুবাদে ‘এফ’ গ্রুপ থেকে জ্যামাইকা পেয়ে গেছে শেষ ষোলোর টিকিট। মার্তাকে কাঁদিয়ে জ্যামাইকার মেয়েরাও কেঁদেছে। সুখের কান্না! নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম যে বিশ্বকাপের নটআউট পর্বে খেলবে তারা। গ্রুপের অন্য ম্যাচে পানামাকে ৬-৩ গোলে হারিয়ে ফ্রান্স হয়েছে গ্রুপসেরা।
মার্তার ব্রাজিলের বিদায়ের দিনে আর্জেন্টিনাও ছিটকে গেছে আসর থেকে। তাদের ২-০ গোলে হারিয়ে ‘জি’ গ্রুপে সেরা হয়েছে সুইডেন। এই গ্রুপের অন্য ম্যাচে ইতালির বিপক্ষে ৩-২ গোলের নাটকীয় জয় তুলে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে দ্বিতীয় পর্বে খেলবে তারা। জ্যামাইকার মতো তারাও প্রথমবার খেলবে বিশ্বকাপের নটআউটে।
ছেলেদের ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা জায়ান্ট দল। বিশ্বকাপ এলে প্রতিবারই এই দুই দল থাকে ফেভারিটের তালিকায়। ব্রাজিল তো সবচেয়ে সফল, পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন। আর্জেন্টিনাও কাতার বিশ্বকাপ জিতে সংখ্যাটা তিনে নিয়ে গেছে। তবে মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপে এই দুই দলের প্রভাব অতটা নেই। ব্রাজিলের সেরা সাফল্য ২০০৭ সালের আসরে রানার্সআপ হওয়া। তৃতীয় হয় একবার, ১৯৯৯ সালের আসরে। এরপরও মার্তার মতো খেলোয়াড় আছেন বলেই মেয়েদের বিশ্বকাপে ব্রাজিল থাকে শিরোনামে। এবার যারা শেষ ২৮ বছরের মধ্যে প্রথমবার গ্রুপের বাধা ডিঙাতে ব্যর্থ হলো।
মার্তা পানামার বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয়ের ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন ৭৫তম মিনিটে। ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেও ছিলেন না শুরু একাদশে। তবে জ্যামাইকার বিপক্ষে শুরুর একাদশেই নেমেছিলেন। ৮১ মিনিট পর্যন্ত মাঠে থাকলেও গোল পাননি। ৩৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার একটা গোল করলেই হয়তো বদলে যেত ব্রাজিলের ভাগ্য। মার্তার নামও কিন্তু উঠে যেত ইতিহাসে। ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল মিলিয়ে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ছয় বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড হয়ে যেত তার। আগের পাঁচ বিশ্বকাপে ১৭টি গোল করেছেন তিনি। ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল মিলিয়ে এটাও অবশ্য সর্বোচ্চ।
বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর মার্তা কাঁদছিলেন। সতীর্থদের সান্ত্বনা দিতে গেয়ে কান্না চেপে রাখতে পারেননি। অন্যদিকে জ্যামাইকার মেয়েদের আনন্দ অশ্রুতে ভাসছিল মেলবোর্নের মাঠ। ২০১৯ সালে প্রথমবার বিশ্ব মঞ্চে পা রেখে দলটা হেরেছিল গ্রুপের সব ম্যাচেই। এবার ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ড্র করার পর পানামাকে হারায় তারা। এক জয় ও দুই ড্রয়ে শেষ ষোলোয় পা রাখা দলটা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে এই গ্রুপের সেরা দলকে। যা নির্ধারণ হবে আজ।
জ্যামাইকার মতো ইতিহাস রচনা করা দক্ষিণ আফ্রিকাও ২০১৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলে। তিন ম্যাচেই হারে দলটি। এবারের আসরে সুইডেনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারে ২-১ ব্যবধানে। এরপর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-২ ড্র করে। ইতালির বিপক্ষে তারা বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম জয়ের কীর্তি গড়ল। আর তাতেই মিলে গেল নকআউটের টিকিট। অথচ ড্র হলেই শেষ ষোলোয় পা রাখত ইতালি। সেই পথেই ছিল দলটি। কিন্তু যোগ করা সময়ে গোল করে নাটকীয় জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২-২ স্কোর লাইনকে ৯২তম মিনিটে ৩-২ করেন থেম্বি কগাতলানা।
তিন ম্যাচে এক জয় ও এক ড্রর সুবাদে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামী রবিবার ‘ই’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে তারা। আর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া সুইডেন খেলবে সবশেষ দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে।
সুইডেন আর্জেন্টিনার মেয়েদের টানা চার আসরে জয়হীন রেখেছে। এবারের বিশ্বকাপের আগে তিনটি আসরে খেলে জয়হীন থাকার রেকর্ডে আর্জেন্টিনার সঙ্গী ছিল মেক্সিকোও। চলতি আসরে মেক্সিকো নেই। বিশ্বকাপে বেশি আসরে খেলে জয়হীন থাকার রেকর্ডটা এককভাবে এখন আর্জেন্টিনার হয়ে গেল। লিওনেল মেসিরা যেখানে তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, সেখানে তার দেশের মেয়েরা চারবার অংশ নিয়ে কি না কোনো জয়ই পেল না!
ফ্রান্স ও পানামার মধ্যকার ‘এ’ গ্রুপের অন্য ম্যাচটা হয়েছে গোল উৎসবের। ৯ গোলের ম্যাচে পানামাই প্রথম গোল করে। মার্তা কক্স এগিয়ে দেন দলকে। কিন্তু এরপর সেই গোল শোধ দিয়ে ৪-১ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় ফ্রান্স। বিরতির পর দলটি করে আরও দুই গোল। পানামা আরও দুই গোল শোধ দিলেও ৬-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স। দলটির কাদিদিয়াতু দিয়ানি করেন হ্যাটট্রিক। পানামা সবগুলো ম্যাচে হেরেই গ্রুপ থেকে বিদায় নিল। শেষ ষোলোয় ফ্রান্স খেলবে এইচ গ্রুপের রানার্সআপ দলের সঙ্গে।
উইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে ছাড়া নেমেছিল ভারত। ওই ম্যাচে হেরে দুই বড় তারকাহীন দলটি পড়েছিল কঠোর সমালোচনায়। পরের ম্যাচে একই দল নিয়ে জিতে মুখরক্ষা করেছে তারা। স্বাগতিকদের ২০০ রানে হারিয়ে সিরিজও জিতেছে হার্দিক পান্ডিয়ার দল। সিরিজের শেষ ম্যাচে ভারত ৫ উইকেটে ৩৫১ রান তুলে জবাবে উইন্ডিজ ১৫১ রানে অলআউট হয়।
ম্যাচে দুই ওপেনার মিলে মাত্র ১৯.৪ ওভারে ১৪৩ রান তোলেন। শুভমান গিল ৯২ বলে ৮৫ ও ইশান কিশান ৬৪ বলে ৭৭ রান করেন। এছাড়া মিডলঅর্ডারে সঞ্জু স্যামসন ৪১ বলে ৫১, অধিনায়ক হার্দিক ৫২ বলে ৭০ ও সূর্যকুমার যাদব ৩০ বলে ৩৫ রান করেন। বোলিংয়ে শারদুল ঠাকুরের ৪ ও মুকেশ কুমারের ৩ উইকেটে ১৫ ওভার বাকি থাকতে বড় ব্যবধানে জেতে ভারত।
ম্যাচ শেষে এই চ্যালেঞ্জ জিততে পেরে সন্তুষ্টির কথা জানান হার্দিক, ‘সত্যি বলতে একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি এমন ম্যাচ অবশ্যই জিততে চাইব। যেখানে আমরা নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ রাখতে পারি। এই ম্যাচের আগে আমরা বেশ সমালোচিত হই, কিছু বিষয় একদম দাগের ওপর ছিল। তাই এটা আমাদের জন্য শুধুই একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল না। আমরা জানতাম এখানে ব্যর্থ হলে বিশাল কিছু অপেক্ষা করবে। ছেলেরা এই মুহূর্তে দারুণভাবে ফিরে এসেছে।’
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ বিরাট-রোহিতকে ছাড়া খেলায় হেরেছিল ভারত। এই হারে প্রশ্ন জাগে তৃতীয় ম্যাচে দুই তারকাকে ফেরানোর। কিন্তু ভারত টিম ম্যানেজমেন্ট সেই পথে হাঁটেনি। হার্দিক জানান, ‘চাপের মুহূর্তগুলো ছাড়া আপনি নায়ক হতে পারবেন না। বিরাট ও রোহিত অবশ্যই আমাদের সেরা ক্রিকেটার কিন্তু রুতু (রিতুরাজ গায়কোয়াড়) ও অক্ষরদের (প্যাটেল) মতো ক্রিকেটারদেরও ম্যাচ পাওয়ার আছে। আমরা ওদের সেই সুযোগ দিয়েছি। কোহলি-রোহিত ছাড়া আমরা প্রথম ম্যাচটি ব্যর্থ হই কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।’
২০২১ সাল থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের নামে নামকরণ করে নিয়মিত দিয়ে আসছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে ১২ ক্রীড়াবিদ, সংগঠক ও সংস্থাকে দেওয়া হবে এই সম্মাননা। এই পদকের জন্য মনোনীতদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন অন্যতম। আগামী ৫ আগস্ট শনিবার আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।
২০২৩ সালে তাসকিন অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আসছেন। আর গত বছর সাবিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। সেই আসরে সাবিনা সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পান। তাসকিন ও সাবিনা ছাড়াও বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন ২০১৯ এসএ গেমসে দেশকে স্বর্ণপদক এনে দেওয়া ভারোত্তোলক জিয়ারুল ইসলাম। আজীবন সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয়েছে কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড় ও সংগঠক আবদুস সাদেককে। মূলত হকি খেলোয়াড় হলেও, সাদেক ফুটবলার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ছিলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্র ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক। এছাড়া ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে হকির তৃণমূল নিয়ে কাজ করা ফজলুর রহমান (ফজলু ওস্তাদ) ও কলসিন্দুরে নারী ফুটবল জাগরণে নেপথ্যে কাজ করা মালা রানীকে মনোনীত করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হৃদয় ও আরিফুল ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে সাবেক ক্রিকেটার আতাহার আলী খান, ক্রীড়া সাংবাদিক কোটায় জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার তারেক, সেরা ফেডারেশন হিসেবে বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশন এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার পাচ্ছে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)।
আজ এই পুরস্কার নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
আগস্ট মাস শুরু হওয়ায় এক বছর হলো বলা যায়। গত বছর এই সময়ে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি ছিল। বছর ঘুরে এবার একই সময়ে এশিয়া কাপ। শুধু ফরম্যাটের পার্থক্যই দুই আসরকে আলাদা করছে। গতবার হয়েছিল টি-টোয়েন্টি এবার ওয়ানডেতে। এই পার্থক্যের মতো দুই এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশের সামনে দুই ভিন্ন ইস্যু। গতবার আলোচনা ছিল কোচ। পরে কোচের পোশাকি নাম ‘টেকনিক্যাল ডিরেক্টর’ নিয়ে এসেছিলেন শ্রীধরণ শ্রীরাম। এবার অধিনায়ক ধোঁয়াশা নিয়ে এগোতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তামিম ইকবাল এই এশিয়া কাপে নেতৃত্ব দেবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। গতবার কোচের মতো এবার নেতৃত্ব বদল হবে কি না তা বলা যাচ্ছে না এখনো, দুই এশিয়া কাপের আগে দল বাদে টিম ম্যানেজমেন্টকে দুই ভিন্ন বিষয় নিয়ে বাড়তি ভাবনা ভাবতে হয়েছে এবং হচ্ছে।
এশিয়া কাপ এ মাসের ৩০ আগস্ট থেকে। অন্য দলগুলো নিজেদের সেরা প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। দলও তাদের তৈরি। দল ঘোষণা না করলেও তাদের ভিন্ন দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে ভিন্ন চিত্র। দলের এক দুটি পজিশনে ক্রিকেটার পছন্দের ব্যাপার থাকলেও মূল সমস্যা গোড়াতেই। অধিনায়ক এখনো নিশ্চিত বলেননি এশিয়া কাপ খেলবেন কি না। গত সোমবার কোমরের ইনজুরির চিকিৎসা করিয়ে ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। এরপর দ্রুত ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুসের সঙ্গে তার বসার কথা। একান্ত ওই বৈঠকে নিজের অবস্থান, দল থেকে অধিনায়ক হিসেবে নিজের চাহিদার প্রস্তাব রাখবেন তামিম। কিন্তু দেশে ফিরে দুই দিন গত হলেও তামিম-জালাল বৈঠক হয়নি।
নিজের ইচ্ছের ব্যাপারটি জানানোর পাশাপাশি তামিমের পূর্ণ ফিট হওয়ার ব্যাপারটিও সমান গুরুত্ব রাখে। তামিমকে ফিটনেস পেতে হলে আগে অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলনে আপাতত ইনজেকশন নিয়ে ফেরা তামিম কেমন অনুভব করেন তা দেখার ব্যাপার। এরপর এশিয়া কাপে যদি তিনি খেলেনও বিশ্বকাপ পর্যন্ত পুরো ফিট হয়ে খেলতে পারবেন কি না সেই নিশ্চয়তা নেই চিকিৎসকদের কাছ থেকে। তার মানে তামিমের নেতৃত্ব বা খেলার ইস্যু যাই হোক তা সহসাই মিটছে না।
একটি বড় টুর্নামেন্টের আগে অধিনায়ক নিয়ে এমন অনিশ্চয়তাকে অবশ্য দলের প্রস্তুতির ক্ষতি মনে করছেন না সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ, ‘ক্ষতি না, এটা বাইরে থেকে নানা রকম চিন্তা ও দুশ্চিন্তা থেকে বিভিন্ন কথা হচ্ছে তো তাই ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা হলো একজনের জন্য অপেক্ষা করা যে উনি ফিট কি না, বাকি ১৪জন তো ঠিকই আছে মোটামুটি। ২০০২ ফুটবল বিশ্বকাপের আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখেছিলাম যে ইনজুরির শঙ্কায় পড়া রোনালদো খেলবে কি না অনিশ্চয়তা ছিল। একজন খেলোয়াড় দলে অনিশ্চিত থাকতেই পারে। তামিমের ইনজুরি ভালো হলে, টিম ম্যানেজমেন্ট যদি মনে করে তাকে দলে রাখা যায় তাহলে রাখবে। আর না হলে অন্য কাউকে নেতৃত্ব দেবে যাকে ভালো মনে করা হয়।’
নেতৃত্ব ইস্যুটাই তো এখন বড় হয়ে উঠেছে। এ জটিলতাই দূর হোক তা চাইছেন খালেদ মাসুদ। দলের প্রয়োজনে দ্রুত টিম ম্যানেজমেন্টকে দুই পক্ষ নিয়ে আলোচনা করে জটিলতার অবসান করার আহ্বান জানালেন তিনি, ‘যে কোনো বড় টুর্নামেন্টের আগে কিছু না কিছু অসুবিধা থাকেই। একদম শতভাগ পারফ্যাক্ট হয় না। বড় ক্রিকেটারের ইনজুরি থাকবে নয়তো অন্য সমস্যা থাকে, এজন্যই ম্যানেজমেন্ট থাকে। তাদের কাজ হলো ম্যানেজ করা। যে দূরত্বটা কোচ ও অধিনায়কের মধ্যে তৈরি হয়েছে তা ম্যানেজমেন্টকে মেটাতে হবে। দুই পক্ষকে নিয়ে বসতে হবে, তাদের কথা শোনা এবং দুই পক্ষ থেকে কিছু ছাড় দেওয়ার জন্য এটা করতেই হবে।’
এখানে দলের স্বার্থে দুই পক্ষকেই কিছু ত্যাগ করার পরামর্শও দিয়েছেন খালেদ মাসুদ, ‘ইগো নিয়ে থাকলে হবে না, ও জিতল না আমি জিতলাম এটা বাজে চিন্তা। বরং দলের ভালো ফলের জন্য যেটা হবে সেটা চিন্তা করতে হবে এবং কোনো দোষারোপ করা যাবে না। ভালো-মন্দ যা হবে সেটা যেন দুজনেরই হয়। এমন না যে ওর জন্য এমন হয়েছে বা এটার জন্য এটা হয়েছে এরকম বলা উচিত হবে না। দলের জন্য যা ভালো সেটাই করতে হবে।’
গত এশিয়া কাপে কোচ বদলে নতুন এক যুগে পা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। যার নাম ইনটেন্ট-ইমপ্যাক্ট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ওই এশিয়া কাপ থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২, ইনটেন্ট-ইমপ্যাক্ট-ই ছিল বাংলাদেশের আলোচনা। এবার আরেকটি এশিয়া কাপের আগে ইনটেন্ট আলোচনায় না থাকলেও আছে ইমপ্যাক্ট, অধিনায়ক ইমপ্যাক্ট। এই জটিলতা দ্রুত নিরসন হোক এটাই চাওয়া।
লিওনেল মেসির ছোঁয়া পেয়ে বদলে গেছে ইন্টার মায়ামি। যে দল কালেভদ্রে পেত জয়ের দেখা, তারাই এখন দাপট দেখাচ্ছে আমেরিকার ফুটবলে। লিগস কাপ দিয়েই মায়ামির জার্সি গায়ে মেসিকে দেখতে পান সমর্থকরা। গোল করে মায়ামি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আগত দর্শকদের উচ্ছ্বাসে ভাসান। পরে আটলান্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে গোল উৎসব করে দলকে তুলেছেন নকআউট পর্বে।
সকালে রাউন্ড-৩২ এর ম্যাচে অরলান্ডো সিটির মুখোমুখি হবে মায়ামি। এই ম্যাচে যে হারবে, তার বিদায় নিশ্চিত। যারা জিতবে তারা যাবে শেষ ষোলোয়। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মায়ামি এই ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। তবে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে তা বেশ কষ্টসাধ্যই। কারণ ওরলান্ডোর বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে মায়ামি। এর মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র তিনটিতে। হেরেছে ৫ ম্যাচে। ৩ ম্যাচ হয়েছে ড্র। আজ মেসি বুসকেটস-এর সঙ্গে বার্সেলোনার সাবেক সতীর্থ জর্ডি আলবাও খেলতে নামছেন।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।