
আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের দল সোল ডি মায়োতে যোগ দেওয়ার পরই জামাল ভূঁইয়ার এশিয়ান গেমস খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত এশিয়াডে খেলা হচ্ছে না জামালের। জামাল ভূঁইয়া বাফুফেকে জানিয়ে দিয়েছেন, তার পক্ষে এশিয়ান গেমসে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।
লম্বা সময়ের জন্য জামালকে ছাড়বে না আর্জেন্টাইন ক্লাবটি। জামাল সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তার বিকল্প চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে। জামাল ছাড়াও এশিয়ান গেমসের ফুটবল স্কোয়াড থেকে তিনজন খেলোয়াড়ের বদলি চেয়েছে বাফুফে।
রবিবার নতুন ক্লাব মায়োর হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলবেন। জামালের প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশিদের জন্য ফ্রি দেখার ব্যবস্থা করবে তার আর্জেন্টিনার নয়া ক্লাব সোল ডি মায়ো। ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ অধিনায়কের অভিষেক হবে আর্জেন্টিনার মাটিতে ক্লাব অ্যাথলেটিকো জার্মিনালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি। বাংলাদেশ থেকে যাতে বিনামূল্যে ম্যাচটি দেখতে পারে সেই ব্যবস্থা সোল ডি মায়ো করবে বলে জানিয়েছেন জামাল। অচিরেই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ম্যাচের লিংক শেয়ার করবেন জামাল।
জামাল ভূঁইয়া জাতীয় দলের চলমান ক্যাম্পে ৩০ আগস্ট যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের প্লে-অফ খেলে দেশে ফিরে বেশ কিছুদিনের ছুটি পেয়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। তবে সেই ছুটি থেকে একটা বড় অংশকেই ফিরতে হচ্ছে মাঠে। আগামী ৪ ও ৭ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে জাতীয় দলের দুই ম্যাচ সিরিজের জন্য আজ থেকে শুরু হবে তাদের মাঠের প্রস্তুতি। হাভিয়ের কাবরেরা অবশ্য অন্যান্য ক্লাবের ১২ ফুটবলার নিয়ে পাঁচ দিন আগেই শুরু করেছিলেন প্রস্তুতি। গতকাল সন্ধ্যায় কাবরেরার ৩২ সদস্যের প্রাথমিক দলে ডাক পাওয়া কিংসের ১৩ ফুটবলার উঠেছেন টিম হোটেলে। তাদের ঘরের মাঠ কিংস এরেনায় আজ প্রস্তুতিতে নামবেন তপু-মোরসালিনরা।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খানের কাছে রিপোর্ট করেছেন তপু বর্মণ, আনিসুর রহমান জিকো, সোহেল রানা, সাদউদ্দিন, তারেক কাজী, বিশ^নাথ ঘোষ, রাকিব হোসেন, রিমন হোসেন, শেখ মোরসালিন ও মতিন মিয়া। এ ছাড়া এসিএল প্লে-অফে কিংসের হয়ে খেলা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের আমিনুর রহমান সজীবও কাল যোগ দিয়েছেন ক্যাম্পে। আসছে ফিফা উইন্ডোতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন জাতীয় দলের জন্য দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিয়েছে মূলত ১২ ও ১৭ অক্টোবর ২০২৬ বিশ^কাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের প্রথমপর্বের প্লে-অফ ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে। অক্টোবরে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশকে দিতে হবে পরীক্ষা। তার আগে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৩২ ধাপ এগিয়ে থাকা আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রীতি সিরিজটাকে তপু-মোরসালিনরা বাড়তি অনুপ্রেরণা কুড়িয়ে নেওয়ার মঞ্চ হিসেবে দেখছেন। সাফ ছেড়ে মধ্য এশিয়ায় যোগ দেওয়া আফগানদের ফিফা র্যাঙ্কিং ১৫৭তম। সাফে ভালো করায় কিছুটা উন্নতি করে বাংলাদেশ রয়েছে ১৯৮তম স্থানে। কিংস এরেনায় প্রীতি ম্যাচ দুটিতে জিততে পারলে স্বাভাবিকভাবে বেশ কিছু রেটিং পয়েন্টও যোগ হবে বাংলাদেশের থলেতে। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তপু বর্মণ অবশ্য কাজটাকে মোটেই সহজ মানছেন না, ‘আফগানিস্তান এখন অনেক শক্তিশালী দল। তাদের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্লাবগুলোতে খেলছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো, ম্যাচ দুটি হবে কিংস এরেনায়। যেখানে জাতীয় দলের প্রায় সবাই নিয়মিত খেলার সুযোগ পাই; বিশেষ করে বসুন্ধরা কিংসে আমরা যারা খেলি, এই মাঠ আমাদের ভীষণ পরিচিত। এখানে আফগানদের হারাতে পারলে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাছাইপর্বের প্লে-অফে ভালো করার সাহসটা জোগাতে পারব।’
গত সাফে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছিলেন কিংসের ওয়ান্ডার বয় শেখ মোরসালিন। মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে গোল করে নিজের জাত চেনানো তরুণ এবার ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেকে আরেকবার প্রমাণ দিতে মুখিয়ে আছেন, ‘সাফে আমরা প্রায় প্রতিটি ম্যাচই খুব ভালো ফুটবল খেলেছি। তবে সামনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রীতি সিরিজটা একেবারেই নতুন একটা ইভেন্ট। তাই আমাদের নতুন করেই শুরু করতে হবে। এর জন্য কোচ ৩২ জন ফুটবলারকে প্রাথমিক দলে ডেকেছেন। সেরাদের নিয়ে হবে চূড়ান্ত দল। আমার প্রথম লক্ষ্য চূড়ান্ত দলে জায়গাটা ধরে রাখা। এরপরই চাইব হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে সিরিজটা জিততে।’ এই তরুণ মাঠে খেলার মতো মাঠের বাইরে কথাবার্তায়ও বেশ পরিণত। এখনই তিনি আফগান সিরিজের লাভ-ক্ষতির একটা হিসাব নিজের মতো করে ফেলেছেন, ‘আফগানিস্তান অনেক ভালো দল। র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গে খেলার ফলে নিজেদের ভুলগুলো আমরা বুঝতে পারব, যা শুধরে আমরা শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে নামতে পারব মালদ্বীপের বিপক্ষে। মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি কিন্তু আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। প্লে-অফ জিততে পারলে আমরা গ্রুপপর্বে অনেকগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। সুতরাং শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজ থেকে পাওয়ার আছে অনেক কিছু। তবে তার আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে লড়তে হবে অনেকের সঙ্গে। তার জন্য আমি প্রস্তুত।’ আগের ১২ ও নতুন ১৩ মিলিয়ে হাভিয়ের কাবরেরার ক্যাম্পে মোট ফুটবলারের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫। এএফসি কাপের প্লে-অফে মোহনবাগানের কাছে হারা আবাহনী লিমিটেডের সাত ফুটবলার আগামীকাল যোগ দেবেন ক্যাম্পে।
সৌদি আরবের ক্লাব আল ইত্তিহাদে যাওয়ার পর আরব কাপে গোল করেছিলেন করিম বেনজেমা। তবে সৌদি প্রো লিগে দুই ম্যাচ খেলেও গোল পাচ্ছিলেন না ব্যালন ডি’অরজয়ী এই ফুটবলার। এরই মধ্যে সৌদির লিগে গোল করলেন বেনজেমা। বৃহস্পতিবার রাতে তার দল ইত্তিহাদ ৪-০ গোলে হারিয়েছে আল রিয়াদকে।
বেনজেমা মাঠে নেমেছিলেন অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড পরে। দলের প্রথম গোলটিও করেন তিনি। ২৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আবদেরাজ্জাক হামাদাল্লাহ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন হামাদাল্লাহ। ম্যাচের যোগ করা সময়ে ব্যবধান ৪-০ করেন সালেহ আল জামান। গোলের অ্যাসিস্টটি করেন বেনজেমা।
গুঞ্জন আছে আল ইত্তিহাদে সুখী নন করিম বেনজেমা। কোচ সান্তোসের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছে না। বেনজেমাকে অধিনায়কত্বের আর্ম ব্যান্ডও দিতে চান না কোচ। সৌদি লিগে নতুন মৌসুমে তিন ম্যাচ শেষে শীর্ষে আছে আল ইত্তিহাদ।
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলকিপারের স্বীকৃতি পেয়েছেন আনিসুর রহমান জিকো। অথচ নিজেকে কখনো সেরা ভাবেন না কক্সবাজার থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার। শুক্রবার নিজ ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের টেন্টে বসে দেশ রূপান্তরের সুদীপ্ত আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দল ও নিজেকে নিয়ে বলেছেন অনেক কথা।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা গোলকিপারের স্বীকৃতি পেলেন। এ আসরটিকে নিশ্চয় ক্যারিয়ারসেরার তালিকায় প্রথমে রাখবেন?
আনিসুর রহমান জিকো : ২০১৮ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সাইডবেঞ্চ থেকে দেখেছিলাম দলের গ্রুপপর্ব থেকে দুঃখজনক বিদায়। এরপর ২০২১ সালে মালদ্বীপে অল্পের জন্য ফাইনালে খেলতে পারিনি। লিগপর্বের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে অনাকাক্সিক্ষতভাবে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। সেই ম্যাচটা জিতলে আমরাই ফাইনাল খেলতাম। আর ফাইনাল খেললে হয়তো সেই আসরেও আমিই সেরা গোলকিপার হতাম। যা-ই হোক, আমরা অনেক বছর পর সেমিফাইনালে খেলেছি। আসরের সেরা গোলকিপারের খেতাবটাও পেয়েছি। সব মিলিয়ে এ আসরটি আমার জন্য বিশেষ কিছু। পুরো দলই অসাধারণ ফুটবল খেলেছিল।
মালেতে তো লাল কার্ডটা বাধ্য হয়েই পেতে হয়েছিল আপনাকে। রাকিবের ব্যাকপাসটা ঠিকঠাক হয়ে গেলে তো মনে হয় সেভাবে মাঠ ছাড়তে হতো না...
জিকো : আসলে এসব খেলারই অংশ। রাকিব চেয়েছিল বলটা ব্যাকপাস করে আমার কাছে দিতে। সেটা হয়তো ঠিকঠাক হয়নি। তবে আমি বের হয়ে যাওয়ার পর রানা ভাই (আশরাফুল ইসলাম) কিন্তু ভালোই খেলছিলেন। শেষ মুহূর্তে পেনাল্টিটা না হলে কিন্তু আমরাই জিততাম।
সাফের সেমিফাইনালে কুয়েতের বিপক্ষে ১১৭ মিনিটে গোলটা না হজম করলে তো আপনার একটা সুযোগ ছিল টাইব্রেকারের নায়ক হয়ে দলকে ফাইনালে তোলার?
জিকো : আমরা কিন্তু সেই ম্যাচটাও অনেক ভালো খেলছিলাম। ওদের তো প্রায় পুরোটা সময়ই আটকে ফেলেছিলাম। অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে এসে হয়তো ডিফেন্সের মনোসংযোগে একটু চিড় ধরে। তবে আমি মনে মনে চাইছিলাম খেলাটা টাইব্রেকারে গড়াক। তাহলে আমি একটা সুযোগ পাব কিছু করে দেখানোর। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি, তবে এই সাফ আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা চাঙা করে তুলেছে।
সাফে মালদ্বীপকে হারিয়েছিলেন। সেই দলটির সঙ্গেই বিশ^কাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফ পরীক্ষায় নামতে হবে বাংলাদেশকে...
জিকো : মালদ্বীপ অবশ্যই অনেক শক্তিশালী দল; বিশেষ করে নিজেদের মাঠে ওরা দারুণ ফুটবল খেলে। আসলে মালেতে ওরা যে-ই মাঠে খেলে, সে রকম মাঠে আমরা খুব কমই খেলার সুযোগ পাই। দেশে কিংস এরেনার মতো আর একটাও মাঠ নেই। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে তো এই মাঠের বাইরেও আমাদের আরও অনেক মাঠে খেলতে হয়। উন্নত মাঠ ও নিজেদের দর্শকদের সামনে মালদ্বীপ আসলেই অনেক ভালো ফুটবল খেলে। সেখান থেকে যদি প্রথম দেখায় পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পারি, তবে বিশ্বাস আছে ঘরের মাঠে তাদের হারিয়ে আমরা পরের ধাপে যেতে পারব।
সেই অগ্নিপরীক্ষার প্রস্তুতিস্বরূপ বাংলাদেশ কিংস এরেনায় আফগানিস্তানের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এই দুটি ম্যাচ নিশ্চয় খুব গুরুত্বপূর্ণ?
জিকো : আসলে সামনের প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মালদ্বীপকে হারাতে না পারলে আবারও দীর্ঘ সময় আমরা ফিফা-এএফসি স্বীকৃত ম্যাচ খেলার সুযোগ হারাব। তাই ওই ম্যাচ দুটির আগে আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগটা বড্ড ইতিবাচক। ওদের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্লাব ফুটবল খেলে। তাই ওদের মতো দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ভালো করতে পারলে মালদ্বীপের বিপক্ষে আমাদের বাড়তি সাহস জোগাবে। যত দূর জানি কিংস এরেনাতেই মালদ্বীপের বিপক্ষে ফিরতি লেগের ম্যাচটা খেলব আমরা।
সাফে এমন পারফরম্যান্সের পর কী মনে হয়, এই বাংলাদেশে ভরসা করা যায়?
জিকো : আসলে দেশের ফুটবলে অনেক দিন কোনো সাফল্য আসেন না বলেই মানুষ কিছুটা হলেও আমাদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছিল। তবে সাফে আমরা বেশ কিছু ম্যাচে ভালো ফুটবল খেলেছি। মানুষের বিশ্বাস আবার কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে। কোচ (হাভিয়ের কাবরেরা) যেভাবে আমাদের সাফে মোটিভেটেড করেছে। যেই ব্র্যান্ডের ফুটবলটা আমরা খেলেছি, সেটা চালিয়ে যেতে পারলে বিশ্বাস আছে দেশের জন্য আমরা কিছু এনে দিতে পারব।
২০০৩ সালে সাফ জয়ের পর থেকেই সাফল্য নেই দেশের ফুটবলে। আপনার কি মনে হয় আপনারা দেশকে সত্যিকারেই কিছু দিতে পারবেন?
জিকো : ব্যক্তিগতভাবে বললে আমার আসলে আর কিছু পাওয়ার নেই। দেশের সেরা হয়েছি কয়েক মৌসুম ধরে, ২০১৯ সালে এশিয়ার সেরা হয়েছিলাম এক সপ্তাহের জন্য। এবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হলাম। তবে সত্যি বললে, আমি নিজেকে কখনোই সেরা ভাবি না। কারণ উন্নতির কোনো শেষ নেই। আমি প্রতিটি ম্যাচেই, প্রতিটি ট্রেনিং সেশনে চেষ্টা করি নিজের উন্নতি করার। এভাবেই খেলতে চাই যত দিন সামর্থ্য থাকে। তবে ক্যারিয়ার যখন শেষ করব, তখন যেন বাংলাদেশের জিকোর নামের পাশে বেশ কিছু ট্রফি যুক্ত থাকে, সেটাই আমার একমাত্র স্বপ্ন। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, আশা করছি অচিরেই হয়তো দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারব।
আপনি তো বসুন্ধরা কিংসের ঘরের ছেলে বনে গেছেন। শীর্ষ লিগে আসার প্রথম থেকেই দলটিতে খেলছেন। চারটি লিগ শিরোপাসহ কত কিছুই তো জিতলেন?
জিকো : কিংস ক্লাবটা আমার সেকেন্ড হোম হয়ে গেছে। কিংসে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই আমি এ ভবনটায় থাকি। আগে এ ভবনটাই আমার দুই পুরনো দল চট্টগ্রাম আবাহনী ও সাইফের ক্লাব ভবন ছিল। বসুন্ধরার মতো ক্লাবে দীর্ঘ সময় খেলতে পারাটা আমি মনে করি সৌভাগ্যের। একটি পেশাদার ক্লাবের যা যা সুযোগ-সুবিধা থাকা লাগে, তার সবই এখানে পাই। আমার মতে, সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এশিয়ার এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। তাই তো এখানে খেলা চালিয়ে যাব বলে দেশের বাইরে খেলার প্রস্তাবে সাড়া দিইনি।
সেটা কেমন?
জিকো : কোস্টারিকার নিচের সারির একটি লিগে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। একেবারে খারাপ প্রস্তাব ছিল না। তবে বসুন্ধরার মায়া ছেড়ে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তা ছাড়া জাতীয় দল ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা দলের গোলকিপার হয়ে কোনো নিচের সারির লিগে খেলার পক্ষে নই আমি। যদি কখনো বড় কোনো লিগে, বড় দলে কিংসের চেয়ে ভালো প্রস্তাব পাই, তবেই সেটা ভেবে দেখব।
সাফের সেরা হওয়ার পর তো দেখলাম দেশের নানা প্রান্তে আপনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখন জিকোকে এক নামে চেনে। তারকা খ্যাতিটা কেমন উপভোগ করছেন?
জিকো: আমি নিজেকে তারকা মনে করি না। সেন্টু ভাই, মোহসীন ভাই, আমিনুল ভাইয়েরা হলেন তারকা। আমি কেবল চেষ্টা করছি নিজের উন্নতি করার। তবে সত্যি বললে, যখন দেখি হাজার হাজার মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে, তখন মনে হয় ফুটবলার হওয়াটা সার্থক। আগে নিজ গ্রাম ও কক্সবাজারে কেউই সেভাবে আমাকে চিনত না। ফুটবল খেলেছি বলেই তরুণ-বৃদ্ধনির্বিশেষ আমাকে চেনে। বয়স্করা এসে কথা বলে, খোঁজখবর নেন। কক্সবাজার যেহেতু সীমান্তবর্তী জেলা, তাই সেখানে অনেক চেকপোস্ট আছে। এখন চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করার জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষরা আমার সঙ্গে সেলফি তোলেন। তারপরও আমি এখনো তারকা হয়ে উঠতে পারিনি। যেদিন সত্যিকারে দেশের হয়ে কোনো ট্রফি জিততে পারব, তখন নিজেকে বিশেষ কিছু ভাবতে পারব। যেটা ২০০৩ সালে সাফজয়ী দলের বড় ভাইয়েরা ভাবতে পারেন।
লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামিতে অভিষেক হয়েছে লিগস কাপ দিয়ে। সেখানে ৭ ম্যাচে করেছেন ১০ গোল। দলও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মায়ামি উঠেছে ইউএস ওপেন কাপের ফাইনালেও। তবে মেজর লিগ সকারে মেসিরা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। সেখান থেকে অন্তত প্লে অফ খেলার কঠিন চ্যালেঞ্জ শুরু করতে যাচ্ছে মায়ামি। নিউ ইয়র্ক রেড বুলসের বিপক্ষে খেলতে নামবে লিগে নিজেদের ২৩তম ম্যাচ। বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি দিয়ে এমএলএসে মেসির অভিষেক হতে পারে।
তবে মেসি এই ম্যাচে আদৌ খেলবেন কি না, খেললেও শুরু থেকে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন এরই মধ্যে ৩৩ দিনে আটটি ম্যাচ খেলেছেন মায়ামির হয়ে। সবশেষ ম্যাচটি আবার খেলতে হয়েছে ১২০ মিনিট, তারপর টাইব্রেকার। লিগস কাপে দুই ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালেও তা ছিল নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে। এমন ধকলের কারণে কোচ জেরার্দো মার্তিনো ইঙ্গিত দিয়েছেন মেসিসহ আরও কিছু খেলোয়াড়ের বিশ্রামের।
এই ম্যাচের পর বুধ ও রবিবার আরও দুই ম্যাচ মায়ামির। আবার ৪ সেপ্টেম্বর থেকে মেসিদের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের জন্য প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। তাই মায়ামির হয়ে কয়টা ম্যাচ খেলতে পারেন তা দেখার বিষয়।
মার্তিনো ওপেন কাপের ম্যাচের পর বলেন, ‘লিও এবং আরও অনেক খেলোয়াড় শারীরিক সীমাবদ্ধতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আজ হতে আমরা মূল্যায়ন করা শুরু করব, কীভাবে সামনের তিনটি ম্যাচ মোকাবিলা করা যায়।’
নিউ ইয়র্ক রেড বুল মায়ামির মতোই ইস্টার্ন কনফারেন্সে খেলে। ২৪ ম্যাচ শেষে ২৯ পয়েন্টে তারা আছে ১১তম স্থানে। মায়ামি ২২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্টে সবার শেষে। মেসির মায়ামির হয়ে অভিষেকের পর থেকে মেজর লিগ সকারে কোনো ম্যাচ খেলেনি দলটি। তার আগে লিগে টানা ১১ ম্যাচে জয় পায়নি মায়ামি। কাল ভোরে কি তারা জয়ের দেখা পাবে মেজর লিগে?
মে মাসের ৩১ তারিখে ঘরের মাঠে রেড বুলের মুখোমুখি হয়েছিল মায়ামি। সেই ম্যাচে রেড বুল ১-০ গোলে হারায় মায়ামিকে। রেড বুলের সঙ্গে ৭ দেখায় মাত্র দুটি জয় মায়ামি। এমএলএসে রেড বুলের বিপক্ষে শেষ পাঁচ দেখায় মায়ামির জয় একটি। ২০২২ সালে মে মাসে মায়ামি ২-০ গোলে হারিয়েছিল রেড বুলকে।
মূলধারার সিনেমার ধর্ম কী? বলা হয় সেসবের স্ক্রিপ্ট এমন থাকবে যে সুপারহিরো একই থাকবেন এবং তাকে ঘিরে নিত্যনতুন পটভূমি তৈরি হবে। ক্রিকেট যদি সিনেমা ধরা হয়, তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ওয়ানডে মূল ধারার সিনেমার উদ্দেশ্যের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। যেখানে দুই হিরো একই আছেন, নাসিম শাহ ও ফজল হক ফারুকি। স্ক্রিপ্টও একই শেষ ওভারের নাটকীয়তা। শুধু দৃশ্যপট বদলেছে, টানা দুই বলে ছক্কা মারার জায়গায় এবার নাসিম মারলেন চার। আর দুবারই নাটকীয়তার শেষ হলো সমান নাসিম জিতলেন, ফারুকি হারলেন।
বলা হচ্ছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চলমান সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের কথা। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় হওয়া এ ম্যাচটি স্মৃতি ফিরিয়ে আনল গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বরে হওয়া এশিয়া কাপে এই দুই দলের ম্যাচের। সেদিন টি-টোয়েন্টি লড়াইয়ে ১৩০ রানের লক্ষ্যে নেমে শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। বৃহস্পতিবার রাতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য আবারও ১১ রান দরকার পাকিস্তানের। ফারুকি এলেন শেষ ওভারে। প্রথম বল করতে গিয়ে শাদাব খানকে মানকাড আউট করেন। দুই দলের স্নায়ুর উত্তেজনা বেড়ে যায় আরও।
এ ঘটনার পরের বলটিতেই চার মেরে ছোট প্রতিশোধ নেন নাসিম। পঞ্চম বলে সজোরে হাঁকান। বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে সিøপ দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। আফগানদের ৫ উইকেটে করা ৩০০ রানের পিছু ছুটে এক বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটে ৩০২ রান করে ১ উইকেটে থ্রিলার জেতে পাকিস্তান। গত বছর ৭ সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ম্যাচেও ১ উইকেটে জিতেছিল তারা। ম্যাচ জিততেই মাঠে থাকা নাসিম-রউফ ছুটছেন বুনো উল্লাসে। ওদিকে ড্রেসিংরুমে বাকি পাকিস্তানি ক্রিকেটারদেরও একই অবস্থা। শুধু ক্রিকেটাররা নন, উত্তেজনার বশে ধারাভাষ্যকার আমির সোহেল নাসিম শাহকে বলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পরে অবশ্য ভুল শুধরে নেন। আসলে পাকিস্তান-আফগানিস্তান দ্বৈরথ নিকট অতীতে রোষানলের অপর নাম হয়ে উঠেছে।
২০১৯ বিশ্বকাপে এই দুই দলের ম্যাচের আগে হেডিংলি স্টেডিয়ামের বাইরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন সমর্থকরা। এরপর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুবাই স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাওয়া দুই দলের দর্শকরা স্টেডিয়ামে আগে প্রবেশের প্রতিযোগিতায় মারামারি করেন। স্টেডিয়ামের গেটও ভেঙে ফেলেন। এবারে এশিয়া কাপ বা ভারত বিশ^কাপে কী হয় তা দেখার অপেক্ষা।
অবশ্য কী যে হবে তা তো বৃহস্পতিবার হাম্বানটোটায় দেখা গেল। দুই দল দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে কম। বড় টুর্নামেন্টেই দেখা হয়। তাতে একের পর এক থ্রিলার। সিরিজের শেষ ম্যাচ আজ এবং সামনের দুই বড় আসরের লড়াইয়ে আবারও নাসিম-ফারুকি সিক্যুয়াল হয় কি না, সেটাই দেখার।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।