
এ মাসের শুরুতে জাতীয় দলের চিন্তায় থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে হয় অনুশীলন ক্যাম্প। সেখানে ছিলেন ৩২ জন। সেই তালিকায় ছিলেন না এনামুল হক বিজয়। গুজব ওঠে দুঃখে অবসর নিয়ে নেবেন এই ব্যাটার। গুধজবটা সত্যি ছিল না, সত্যি হলে আজ বিজয় কি শ্রীলঙ্কায় থাকতেন!
জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা ৩২ জনের বাইরের হয়েও বিজয় এখন দলের সদস্য। যেভাবে বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্প থেকে তাকে টেনে নেওয়া হলো তাতে আজ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশাল তালিকার বাইরের একজনকে হঠাৎ প্রয়োজন হওয়ার বিষয়কে বর্তমান জাতীয় দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অদূরদর্শিতা বললেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। তার প্রশ্ন বিজয়কে যদি দরকারই হয় তবে ৩২ জনের ক্যাম্পে রাখা হয়নি কেন?
এশিয়া কাপ শুধু নয় বিশ্বকাপের জন্যও প্রস্তুত থাকতে ৯ ক্রিকেটার নিয়ে আলাদা ক্যাম্পের আয়োজন করে বিসিবি। ওই ক্যাম্পে তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলাম, সাইফ হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব,. খালেদ আহমেদ ও জাকির হাসান আছেন। এশিয়া কাপের দল ঘোষণার পর এবাদত হোসেন ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়ায় সুযোগ হয় এই ক্যাম্পে থাকা পেসার সাকিবের। অবশ্য সাকিব এশিয়া কাপের স্ট্যান্ডবাই তিনজনের একজন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে বদলি ক্রিকেটার এই ক্ষেত্রে নিয়মের মধ্যেই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু লিটন দাসের অসুস্থতায় তার বদলি বিজয়কে নিয়মের মধ্যে নেওয়া হলো কই?
লিটন অসুস্থ হওয়ায় এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে পারবেন না। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ সেপ্টেম্বর তার পাকিস্তান যাওয়ার কথা ছিল। লিটনের জন্য অপেক্ষার কথা বলেছিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্টরা। অথচ কাল দিনের শুরুতে বিজয়ের এশিয়া কাপ দলে অন্তর্ভুক্তি অবাক করেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক ফারুক আহমেদ অবাক হননি। দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়া এখন খুবই জটিল হয়ে উঠেছে। যে কারণে কখন কী হয় সেটা আগে থেকে বোঝা মুশকিল। তাই এমন সিদ্ধান্তে আমি অবাক হইনি।’
লিটনের বদলি বিজয়ের ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিনের ব্যাখা ছিল, ‘বিজয় ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক রান করেছে। তাকে আমরা বাংলা টাইগার্সের ক্যাম্পে রেখে মনিটর করেছি।’ সাবেক নির্বাচক ফারুকের প্রশ্ন, ‘বিজয় খারাপ ক্রিকেটার না, ভালো ক্রিকেটার; কিন্তু সে যদি ভালো হয় তাহলে প্রথম অবস্থায় ক্যাম্পে থাকা উচিত ছিল অবশ্যই। এখন তাকে ক্যাম্পের বাইরে থেকে আনা সেটা ভুল কিছু না। কিন্তু যদি আনতেই হয় তাহলে তাকে ক্যাম্পে রাখা হয়নি কেন? তার মানে সিদ্ধান্ত আগে ভুল ছিল বা এখন ভুল হচ্ছেÑ যে কোন্ োএকটা। এটা দূরদর্শিতার অভাব। এসব ক্ষেত্রে অনেক কিছুই আগে থেকে চিন্তা করতে হয়।’
এছাড়া নান্নু আরও জানিয়েছেন, একজন টপঅর্ডার কিপার ব্যাটারকে প্রয়োজন দলের। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপের জন্য বিশেষ ক্যাম্পে থাকা জাকির হাসান ছিলেন প্রস্তুত। কিন্তু এই বাঁহাতি ব্যাটারকে নিয়ম মেনে ডাকা হয়নি। এমন নির্বাচন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এখন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যাখ্যার অভাব থাকে বলেই এত জটিলতা তৈরি হয়েছে। আগে যেমন আমার সময় বোঝা যেত যে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো, এই দলের সঙ্গে ভালো, এই কন্ডিশনে সে ভালো এমন কিছু প্রক্রিয়া মেনে ক্রিকেটার নির্বাচন করতাম। কিন্তু এখন কিছু বোঝা যায় না, হঠাৎ মনে হলো ওকে নাও, হঠাৎ মনে হলো ওকে বাদ দিয়ে দাও। যেহেতু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনেকজন যুক্ত তাই মতামতও অনেক হয় তাই নির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া নেই। যার যখন ক্ষমতা থাকে সে সেটাই করে। এই দূরদর্শিতার অভাব চিন্তা করেই আমি ২০১৬ সালে টু-টায়ার নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে পদত্যাগ করেছিলাম।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটে বাম-ডান তত্ত্ব একদম মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন সাবেক কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। এ কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ডুবতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ডানহাতি লিটনের বদলি হিসেবে ডান হাতি ওপেনার বিজয়কে ডাকা সেই ইঙ্গিত মনে হচ্ছে। এমন যদি হয় তবে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও তানজিদ হাসান তামিম দুই বাঁহাতি ওপেনারের সামর্থ্যে আস্থা রাখা হলো কই। সব মিলিয়ে জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঠিক ক্যাটাগরি কীÑ তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সাধারণ ইনজুরি থেকে বড় মাপের ক্ষতিই হয়ে গেল এবাদত হোসেনের। গত আফগানিস্তান সিরিজে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছিলেন তিনি। পুনর্বাসন কাটিয়ে এশিয়া কাপেও ফিরতে না পারায় এবাদতকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় বিসিবির চিকিৎসা বিভাগকে। এই পেসারকে ইংল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকেই দুঃসংবাদ এলো। হাঁটুর চোটে অস্ত্রোপচারই করতে হচ্ছে এবাদতকে। পুনর্বাসন শেষে করে ফিরবেন তা নিশ্চিত নয়। তবে এমন ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে ৬-৮ সপ্তাহ লেগে যায়। পাশাপাশি ফিরে এসে নিজের সেরাটা এবাদত কতটুকু দিতে পারেন তাও বিরাট প্রশ্ন।
এবাদতের চোট মূলত হাঁটুর এসিএল-এ (এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট)। এই চোটের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সময় লাগে আরও বেশি। এবাদতের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনার ব্যাপারে বিসিবি আনুষ্ঠানিক কিছু বলেনি। তবে ৬-৮ সপ্তাহের মতো সময় লাগলে তার বিশ্বকাপ শেষ হয়েই গেল বলা যায়। কারণ আর দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্বকাপের দল দেওয়া হবে। আর মূল টুর্নামেন্টের বাকি আর চার সপ্তাহের মতো সময়।
এবাদত লন্ডনে পৌঁছেছেন আগেই। বুধবার সকালে সামাজিক মাধ্যমে হাসপাতালে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে এবাদত লিখেন, ‘জীবনে প্রথমবার অপারেশন থিয়েটারে, সবার কাছে দোয়া চাইছি, আল্লাহ ভরসা।’ এবাদতের অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে গতকালই এক বিবৃতি দিয়ে বিসিবি বিষয়টি নিশ্চিত করে। বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানান, ‘লন্ডনে একজন হাঁটু স্পেশালিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী এবাদতের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমরা অস্ত্রোপচারের পর তার খেলায় ফিরতে কত সময় লাগবে তা বলতে পারছি না। অস্ত্রোপচার করার পর বিষয়টি বোঝা যাবে। এই সময়ে বিসিবি এবাদতের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
বিসিবি আসলে এবাদতকে অস্ত্রোপচারে নিতে চায়নি। পেসার নিজেও চাননি এই সময়ে ছুরি-কাঁচির নিচে যেতে। তবে দেশে পুনর্বাসন করিয়ে এবাদতকে মাঠে ফেরানোর প্রক্রিয়া সফল হয়নি। তাই লন্ডনে হাঁটুর বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া। সেখান থেকেই জানানো হয় এই ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় নেই। এ কারণেই বাধ্য হয়ে এবাদতকে ছুরি-কাঁচির নিচে যেতে হচ্ছে।
এবাদতের ইনজুরি বাংলাদেশ দলের জন্য বিরাট ধাক্কা। এশিয়া কাপে তার সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না, বিশ্বকাপও অনেকটা অনিশ্চিত। এতে মাঝের ওভারে এবাদতকে দিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগটা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের জন্য দেশ ছাড়ার আগে এই পেসারকে নিয়ে হেড কোচ চ-িকা হাথুরুসিংহে বলেন, ‘এই সময়ে এমন একজন পেসার যে কিনা খুব ভালো গতি তুলতে পারে, উইকেট থেকে বাউন্স আদায় করতে পারে তাকে হারানো খুব কঠিন।’
গত বছর আগস্টে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া এবাদতের। এরপর এই ফরম্যাটে ১২ ওয়ানডে খেলে তার উইকেট ২২টি। এই সময়ে ওয়ানডেতে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পারেননি আর কোনো বাংলাদেশি বোলার। বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে তার কার্যকারিতা দেখা গেছে বেশ কিছু ম্যাচে। এবাদত অস্ত্রোপচারের ধকল কাটিয়ে মাঠে ফিরলেও নিজের এই রকম সেরা অবস্থানে আবার ফিরবেন তো!
হ্যাটট্রিক করার সুযোগ ছিল, সুযোগ ছিল ক্যারিয়ারের ৮৫০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার। তবে এমন দুটি মাইলফলকের কোনোটাই গতকাল ছোঁয়ার ইচ্ছা জাগল না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। সৌদি প্রো লিগে আল শাবাবের বিপক্ষে ম্যাচের তৃতীয় পেনাল্টি দিয়ে দিলেন সতীর্থ আবদুলরহমান ঘারিবকে। রোনালদো ম্যাচে আগের দুই গোলও করেছেন পেনাল্টি থেকে।
পর্তুগিজ কিংবদন্তির জোড়া গোলের ম্যাচে আল শাবাবকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে আল নাসর। অন্য দুটি গোল করেছেন সুলতান আল ঘানাম ও সাদিও মানে। মানের গোলেও সহায়তা করেছেন রোনালদো। সব মিলিয়ে ম্যাচটা ছিল রোনালদোময়।
ঘরের মাঠে ম্যাচের ১২ মিনিটেই পেনাল্টি পায় আল নাসর। রোনালদো এগিয়ে নেন দলকে। কয়েক মিনিট পরই আবারও গোল পান তিনি। তবে আল নাসরের অধিনায়কের হেডে করা গোল ফাউলের কারণে বাতিল হয়, যা নিয়ে তীব্র অসন্তুষ্ট ছিলেন রোনালদো। যদিও গোলের জন্য খুব বেশিক্ষণ আর অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। ৩৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে আবারও গোল করেন তিনি। এর ২ মিনিট পর গোল করান সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ তারকা মানেকে দিয়ে। ৬৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিকের সুযোগ এসেছিল রোনালদোর সামনে। কিন্তু আল নাসর অধিনায়ক নিজে শট না নিয়ে তা দেন ঘারিবকে। ঘারিব অবশ্য গোল করতে পারেননি। ৮০ মিনিটে রোনালদোর হেড পোস্টে লেগে ফিরে এলে সৌদি আরবের আল ঘানাম সুযোগ কাজে লাগান।
প্রথম দুই ম্যাচে হারা আল নাসর লিগের তৃতীয় ম্যাচে আল ফাতেহর বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সে ম্যাচে রোনালদো করেছিলেন হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন রোনালদো (৫)। সবচেয়ে বেশি ‘অ্যাসিস্ট’ও তার (২)।
লিগে আরেক ম্যাচে আল তাইকে ২-০ গোলে হারিয়েছে আল আহলি। গোল করেছেন ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক তারকা রিয়াদ মাহরেজ ও বার্সেলোনার সাবেক ফুটবলার ফ্র্যাঙ্ক কেসি।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ডেভেলপমেন্ট কমিটির দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক চমক দিয়ে চলেছেন আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক। মূলত ব্যবসায়ী হলেও বাফুফেতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকেই ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে আসছেন অভিনব ঢঙে। তার অর্থায়নে বাফুফে ভবনের আঙিনায় হয়েছে আধুনিক জিমন্যাসিয়াম। যে এলিট অ্যাকাডেমি করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের, মানিক দায়িত্ব নিয়ে সেই অ্যাকাডেমির কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন সফলভাবে। এর মধ্যে সেই অ্যাকাডেমির ১০ ফুটবলারকে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর কাছে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার অভিনব এক উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসিত হন। এবার বাণিজ্যিক ফুটবল অ্যাকাডেমির উদ্যোগ নিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন বাফুফের এই সহ-সভাপতি। গতকাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অভিনেতা জাহিদ হাসানকে উপস্থিত করে চমক দিয়েছেন তিনি। বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির নতুন উদ্যোগে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করবেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা।
জাহিদ হাসানের খেলাধুলা জগতের সঙ্গে যোগসূত্র নতুন নয়। আবাহনীর পাঁড় সমর্থক হলেও বর্তমানে তিনি মোহামেডানের স্থায়ী সদস্য। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা ফুটবলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দিত, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই ফুটবলপ্রেমী। এখনো ফুটবলের খোঁজখবর রাখি। ফুটবল ফেডারেশন থেকে আমাকে প্রস্তাব করা হলে আমি সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি দিই। আমার মাধ্যমে দুজনও যদি ফুটবলে উদ্বুদ্ধ হয় সেটাই আমার সার্থকতা।’ আর এই জন্য জাহিদ হাসান নিজে কোনো সম্মানী নেবেন না। যদিও বাফুফে নতুন বাণিজ্যিক ফুটবল অ্যাকাডেমি নামে, আদতে অনাবাসিক স্কুলটি করতে যাচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। দুই বয়স শ্রেণিতে ঢাকার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশু-কিশোররা বাফুফের নির্ধারিত ফরম ২ হাজার টাকায় ক্রয় করে ভর্তি হতে পারবেন এই অ্যাকাডেমিতে। মাসিক বেতন দিতে হবে ৩ হাজার টাকা। বাফুফের কোচদের অধীনে সপ্তাহে তিনদিন দুটি ভেন্যুতে হবে অনূর্ধ্ব-৮ থেকে ১১ ও অনূর্ধ্ব-১১ থেকে ১৪Ñ এই দুই বয়স শ্রেণির প্রশিক্ষণ। বাফুফে ভবনের পাশে টার্ফ ও কমলাপুরের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বিকেল ও শুক্র-শনিবার সকালে চলবে প্রশিক্ষণ। এই দুটি ভেন্যু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। তাই এগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারে পরিষদের অনুমতি নিতে হয়। তাছাড়া আয়ের একটা অংশও পরিষদকে দিতে হয়। আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছি না। আমরা তরুণ সমাজকে ফুটবলে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। এখানে কয়েকজন কোচ থাকবেন তাদের সম্মানী ও আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। সেই অর্থটুকু নেওয়া হবে, বাফুফের কোনো বাড়তি আয় থাকবে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আমাদের মাঠ ইজারা দিয়েছে। এখানে অনুমতির বিষয়টি হয়তো সেভাবে নেই।’
তিনি ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ‘ফরমটি বাফুফে ভবনে এসে সংগ্রহ করতে হবে। আমরা আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ভর্তি নেব। পরবর্তী সময়ে প্রতি ব্যাচে সংখ্যা বাড়তে পারে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ও জেলা পর্যায়ে এই অ্যাকাডেমি ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
ডেভেলপমেন্ট কমিটির এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে একঝাঁক শিশু-কিশোর আর কিছু না হোক নিয়মিত কিছু সময় মাঠে কাটানোর সময় পাবে। তবে দুনিয়াজুড়ে অন্য কোনো ফুটবল ফেডারেশন অর্থের বিনিময়ে ফুটবল প্রশিক্ষণের আয়োজন নিয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
তবে যে দেশের ফুটবল দুনিয়ার দেখানো পথে হাঁটে না, যেখানে ফুটবল গড়ে তোলার দায়িত্ব ক্লাবগুলো নেয় না, সে দেশের ফুটবল সংস্থাকে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়াও যে উপায় নেই।
এশিয়া কাপ শুরু হয়েছে বাবর আজমের সেঞ্চুরি দিয়ে। নেপালের বিপক্ষে মুলতানে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে ১৩১ বলে ১৫১ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক। তার স্পর্শে আগ্রাসী সেঞ্চুরি করেছেন ইফতিখার আহমেদ, ৭১ বলে হার না মানা ১০৯। দুজনের ২১৪ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিতে পাকিস্তান করে ৬ উইকেটে ৩৪২।
জবাবে অভিষেক এশিয়া কাপে নেপালের শুরুটা হয় হতাশার। ২৩.৪ ওভারে মাত্র ১০৪ রানে অলআউট হয়ে ২৩৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে দলটি। টস জয়ী বাবর নিজে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ষষ্ঠ ওভারে। ২৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর পর প্রথমে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে পুনর্গঠনের কাজটি করেন তিনি। ৮৬ রানের সেই জুটির পর সালমান আগার সঙ্গে অবশ্য জুটিটা বড় হয়নি তার। এরপর ইফতিখার আহমেদের সঙ্গে তার জুটিতে ওঠে ঝড়।
এ জুটির পথেই সেঞ্চুরি পেয়ে যান বাবর। ইনিংসের ৪২তম ওভারে দীপেন্দ্র সিং ঐরীর বলে ডাবলস নিয়ে তিন অঙ্কে যান বাবর। মাইলফলকে যেতে তার লাগে ১০৯ বল। এটি ওয়ানডেতে বাবরের ১০২তম ইনিংস। দ্রুততম ১৯ সেঞ্চুরির তালিকায় বাবর ছাড়িয়ে গেলেন হাশিম আমলাকে। ১৯ সেঞ্চুরি করতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটসম্যানের লেগেছিল ১০৪ ইনিংস।
এ সেঞ্চুরি করে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির তালিকায় সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে দূরত্ব আরও কমালেন বাবর। আনোয়ারের সেঞ্চুরি ২০টি।
এশিয়া কাপে বাবরের এটি প্রথম সেঞ্চুরি। ওয়ানডে সংস্করণে এ টুর্নামেন্টে এর আগে ৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে তৃতীয় পাকিস্তান অধিনায়ক হিসেবে এশিয়া কাপে সেঞ্চুরি পেলেন বাবর। তার আগে এ কীর্তি ছিল শোয়েব মালিক ও শহিদ আফ্রিদির।
বাবরের সেঞ্চুরির পর ইফতি আরও মারমুখী হয়ে ওঠেন। মাত্র ৬৭ বলেই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটি। শেষ পর্যন্ত ৭১ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
ঘটনাটা গত বছরের এশিয়া কাপের। মোস্তাফিজুর রহমান আর সাকিব আল হাসান ছাড়া বাংলাদেশে কোনো বিশ্বমানের বোলার দেখেন না বলে মন্তব্য করেছিলেন শানাকা।
বুধবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শানাকাকে পেয়ে এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নÑ এবারের বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ কি বিশ্বমানের? যে প্রশ্নে পাল্লেকেলের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাসির রোল পড়ে। তবে এবার আর জল বেশি দূর গড়াতে দেননি লঙ্কান অধিনায়ক।
গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর দোষ চাপিয়ে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে বিশ্বমানের আক্রমণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সঙ্গে জানিয়েছেন প্রতিপক্ষকে সম্মানের কথা, ‘অবশ্যই বাংলাদেশে বিশ্বমানের পেসার আছে। আমরা এখানে যা বলি তা আপনারা কীভাবে নেন সেটাই বিষয়। গতবার আমি খারাপ কিছু মিন করিনি, কিন্তু এটা ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। আমাদের অবশ্যই প্রতিপক্ষের জন্য সম্মান আছে। এটা আসলে আপনারা বিষয়টা কীভাবে নিচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে।’ ইন্টারনেট
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।