
একেক অধিনায়কের চিন্তা একেক রকম। ম্যাচে তাদের পরিকল্পনা কাজে লাগানোর পথও ভিন্ন। এ কথাটাই বোঝাতে চেয়েছেন তামিম ইকবাল। তাই নিজের নেতৃত্বের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্ব মেলাতে চাইছেন না। এমনকি সাকিবের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাইছেন না তামিম। গতকাল ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানের শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে নিজের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়েও মতামত দিয়েছেন সাবেক এই অধিনায়ক।
জাতীয় দল এশিয়া কাপে ব্যস্ত, দলের সঙ্গে না থাকলেও তামিম বসে নেই। ইনজুরির জন্য এশিয়া কাপ ছেড়ে দেওয়া এই ব্যাটার ফিরে আসার লড়াইয়ে আছেন। কোমরের ব্যথা থেকে নিজেকে পুরোদমে ব্যাট করার পথে ফিরছেন ধীরে ধীরে। কিছুদিন হলো জোরে শট নিতে পারছেন। সামনের বিশ^কাপে খেলার আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজ খেলতে মরিয়া তামিম। মন থেকে চাইছেন এই তিন ম্যাচ পুরোদমে খেলে বিশ^কাপের জন্য প্রস্তুত হতে। নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই জানালেন নিউজিল্যান্ড সিরিজ খেলা তার জন্য সম্ভব, ‘আমাকে যে প্রোগ্রামটা (পুনর্বাসন) দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর রহমতে প্রতিটা প্রোগ্রামে টিক দিয়েছি ভালোভাবে, বিশেষ করে ১০ তারিখের পর থেকে ১০ দিনের মতো সময় আছে, তখন অলমোস্ট ফুল ইনটেনসিটিতে অনুশীলন করার পরিকল্পনা আছে। এখন অবধি কোনো সেট ব্যাক হয়নি। ব্যথা অনুভব করিনি। পরের এক সপ্তাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফুল ইনটেনসিটিতে প্র্যাকটিস করার পরিকল্পনা আছে। আমি খুব আশাবাদী এবং ইতিবাচক যে নিউজিল্যান্ড সিরিজের শুরু থেকে খেলতে পারব।’ নেতৃত্ব নিয়ে আর মাথা ঘামানোর নেই তামিমের। তাই বর্তমান অধিনায়ক সাকিবকে নিয়েও কোনো ভাবনা নেই তামিমের। সাকিবের নেতৃত্ব নিয়েও তাই কোনো মন্তব্য করতে চাইলেন না, ‘যখন আমি অধিনায়ক ছিলাম, তখন একভাবে ভেবেছি। নতুন অধিনায়কের হয়তো আলাদা পরিকল্পনা আছে, যেটা আমি জানি না। আমি একজনের পরিকল্পনার ব্যাপারে যদি এতটা নিশ্চিত না হয়ে মন্তব্য করি, ওটা একটা কন্ট্রোভার্সি হয়ে গেল। আমার মনে হয় নতুন অধিনায়ক-ম্যানেজমেন্টের ভালো পরিকল্পনা আছে। ওরা ওভাবে করে আগাচ্ছে। দলে ঢোকার পর আমরা দেখব।’
এশিয়া কাপে তিন ম্যাচে বাংলাদেশ রোলার কোস্টার সময় কাটিয়েছে। মাঝে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাদে আগে-পরে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ বাজে কেটেছে বাংলাদেশের। নিজেকে দলের অংশ মনে করা তামিম তাই দলের খারাপ সময়টা নিয়ে কিছু বলতে চাননি, ‘খেলা নিয়ে এখান থেকে মন্তব্য করা উচিত হবে না। কারণ যারা ওখানে আছে, আমি নিশ্চিত তারা তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমিও দলেরই অংশ। ভালো না খেললে হতাশ অবশ্যই হই। আমার মনে হয় না একটা-দুইটা খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে গত পাঁচ-ছয় বছরের কঠোর পরিশ্রম ভুলে যাব।’
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের হতাশার নাম ব্যাটিং। এখন পর্যন্ত খেলা ৩টি ওয়ানডের দুটোতে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। অলআউট হয়েছে ২০০ রানের নিচে। ব্যাটিং হতাশ করলেও আশার আলো দেখাচ্ছে পেস বোলিং। ৩ ম্যাচে প্রতিপক্ষের ৩০ উইকেটের ভেতর বাংলাদেশের বোলাররা তুলতে পেরেছেন ১৮ উইকেট, তার ভেতর দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম মিলেই নিয়েছেন ১১ উইকেট। কলম্বোতে সুপার ফোরের তিন ম্যাচেও বাংলাদেশের পেসারদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে এমনটাই।
পাকিস্তানের তিন পেসারÑ নাসিম শাহ-হারিস রউফ আর শাহিন শাহ আফ্রিদি; এই তিনের ত্রিফলায় কাটা পড়বে বিশে^র যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপ। এশিয়া কাপের সফল বোলারদের তালিকায়ও এই তিনজনই শীর্ষে। তিন ম্যাচে হারিস রউফের ৯ উইকেট, শাহিন আর নাসিমের ৭ উইকেট করে। পাকিস্তান অবশ্য একটা ম্যাচ খেলেছে নেপালের বিপক্ষে, হিমালয়ের নবীন ক্রিকেটারদের জন্য পাকিস্তানের পেস সামলানোটা ছিল বেশিই কঠিন। পুঁজি অল্প থাকার পরও আগুনে বোলিংয়ে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ। সেরা সাফল্য বিশ্বের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে মাত্র ১৭ রানে বোল্ড করে দেওয়া। তাসকিনের বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন বাবর।
সাবেক ক্রিকেটার এবং বিপিএল দল রংপুর রাইডার্সের পেস বোলিং কোচ তারেক আজিজ মনে করেন, বাংলাদেশের পেস বোলাররা লাহোরের পাটা উইকেটে কিংবা পাল্লেকেলেতে যেভাবে বোলিং করেছেন, সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। দেশ রূপান্তরকে তারেক আজিজ বলেন, ‘বাংলাদেশের পেস বোলিংটা খুব ভালো হচ্ছে। দুটো ম্যাচে টার্গেট অনেক কম থাকলেও আমাদের পেসাররা শুরুতে উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেছে।’ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পেসারদের বোলিং দেখে তারেকের মনে হয়েছে, ‘আমার তাদের বোলিং দেখে মনে হয়েছে দল থেকে যে পরিকল্পনটা দেওয়া হয়েছে, তারা সেই অনুযায়ীই বোলিং করছে। অনেক সময় পেসারদের ভেতর তেড়েফুঁড়ে বোলিং করার একটা ইচ্ছা কাজ করে, তাদের মধ্যে সেটা হচ্ছে না।’ পাকিস্তানের পেস ত্রয়ীর মতো বাংলাদেশ তিন পেসার খেলালেও সেই একই রকম প্রভাবটা কেন পড়ছে নাÑ সে প্রসঙ্গে তারেক বললেন, ‘পার্থক্যটা গতির। হারিস রউফ অবলীলায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। হাসান মাহমুদ হয়তো ১৩৫ কিলোমিটারে পারবে। এই পার্থক্যটা অনেক।’ শ্রীলঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউড বাংলাদেশের বোলারদের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ। ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের শক্তিশালী বোলিং ইউনিট আছে। এখন পর্যন্ত টুনামেন্টে যতটুকু দেখেছি মুগ্ধ হয়েছি। বিশেষ করে তাদের পেস বোলারদের প্রতি।’
পাকিস্তানের তিন পেসার সমান ছন্দে বল করলেও বাংলাদেশের একজন ছন্দহারা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমান ছন্দে ছিলেন না, ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য। পাকিস্তানের বিপক্ষে হাসান মাহমুদ ৭ ওভারে দিয়েছেন ৪৬ রান। মোস্তাফিজের ছিল হাঁটুর চোট আর হাসান সেরে উঠেছেন ডেঙ্গু থেকে। দুজনের কেউই নেই সেরা ছন্দে। তারেক আজিজ মনে করেন, সেরা ছন্দের মোস্তাফিজকে পাওয়া গেলে আরও ধার বাড়বে এই বোলিংয়ের, ‘মোস্তাফিজ দুটো ম্যাচে খেলেনি। সে যদি সেরা ছন্দে ফিরতে পারে, তাহলে বোলিং আক্রমণটা আরও ধারালো হবে।’ ব্যাটসম্যানদের ভেতর নাজমুল হোসেন শান্ত বাদে সবাই হতাশ করেছেন এখন পর্যন্ত। শান্তও চোট নিয়ে ফিরে গেছেন দেশে। বাংলাদেশকে ভরসা দিচ্ছে এখন পেস বোলিংই। অন্তত চার দেশের ভেতর পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের পেসাররা, এমনটা মনে করছেন অনেকেই।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে লিওনেল মেসি কাতার বিশ^কাপ থেকে দারুণ ফর্মে আছেন। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইতেও প্রথম ম্যাচেই গোলের খাতা খুলেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। মেসির ফ্রি-কিক গোলে আর্জেন্টিনা (১-০) হারিয়েছে ইকুয়েডরকে।
ইকুয়েডরের মিডফিল্ডার ময়জেস কাইসেদো ৭৭ মিনিটে নিজেদের বক্সের সামনে লাওতারো মার্তিনেজকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে মেসির বাঁকানো ফ্রি কিকে বল ইকুয়েডরের গোল কিপারকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। বল এতটাই নিখুঁতভাবে জালে জড়ায় যে গ্যালিন্দেজ ঝাঁপ দেওয়ার জন্য নড়লেনও না।
ফ্রি কিকে মেসির গোল সংখ্যা হলো ৬৪টি। ফ্রি কিক থেকে সবচেয়ে বেশি গোলের তালিকায় যৌথভাবে (অপর জন বেকহ্যাম) চারে উঠে এলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। ফ্রি কিক থেকে গোলের সর্বোচ্চ মালিক অবশ্য এক ব্রাজিলিয়ান। ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার জুনিনহো ক্লাব এবং দেশের হয়ে করেছেন ৭৭ ফ্রি কিক গোল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে এ নিয়ে ১৪ বার প্রথম গোল করলেন মেসি। জাতীয় দলের জার্সিতে এ নিয়ে ১৭৬ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ১০৪টি। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে গোল করায় লুইস সুয়ারেজের রেকর্ডও ছুঁয়েছেন মেসি। কনমেবল অঞ্চল থেকে বাছাইপর্বে এত দিন সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ছিল সুয়ারেজের (২৯ গোল)। ইকুয়েডরের বিপক্ষে গোল করে বন্ধুকে ছুঁলেন মেসি। সুয়ারেজের রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে মেসি বলেন, ‘রেকর্ডটা দুজনের জন্যই আনন্দের। আর রেকর্ডটায় একসঙ্গে যেহেতু আছি, তাই দুজনের জন্যই এটা আনন্দের।’
বদলে গেছেন বিশ্বনাথ ঘোষ। একটা সময় জুটে যাওয়া ‘বদমেজাজি’ দুর্নামটা মুছে এখন তিনি জাতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম আস্থা। দ্রুত আক্রমণে ওঠা, লম্বা থ্রো-ইনে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ফাটল ধরানো, আবার সময়মতো নেমে এসে নিজেদের রক্ষণ সামলানোর কাজটা দারুণভাবে সামলাচ্ছেন। শেখ মোরসালিনকে দিয়ে বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সমতাসূচক গোল করানো বিশ্বনাথ দেশ রূপান্তরের সুদীপ্ত আনন্দ’র মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন বদলে যাওয়ার গল্প
সময়টা নিশ্চয় ভীষণ উপভোগ করছেন?
বিশ্বনাথ ঘোষ : ফুটবলে এখন সময়টা উপভোগেরই। আপনি যেকোনো কাজ যদি করেন। সেই কাজের সুবাদে আপনি যখন কোনো সুফল পান, তখন নিজেও তৃপ্ত হবেন। সেই ক্ষেত্রে ভগবানের আশীর্বাদে আমাদের দলটা ভালো একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেই ফর্মে আছে, সবাই সময়টা উপভোগ করছি। কারণ, এখন আর কেউ হেসে-খেলে আমাদের হারানোর স্বপ্ন দেখে না। যতক্ষণ মাঠে থাকি, ততক্ষণ নিজের সেরাটাই সবাই দিই।
নিজেকে দেখছি একেবারে বদলে ফেলেছেন। একটা সময় তো মানুষ আপনাকে বদমেজাজি বলে ডাকত?
বিশ্বনাথ : অতীতে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। মানসিক চাপে ছিলাম। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল আমার সঙ্গে। আমার মাথা গরম ছিল, খেলার মধ্যে কোনো ডিসিশন পছন্দ না হলে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়াতাম। বাজে ব্যবহার করতাম। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা যখন কটু কথা বলত, তখন মেজাজ ধরে রাখতে পারতাম না। এই বিষয়গুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য আমার মা আর স্ত্রী অনেক সহযোগিতা করেছে। তাদের কথা শুনে মাথা ঠা-া রেখে খেলেতে শুরু করি। দেখলাম তাতে সুফল পাচ্ছি। এভাবেই বাজে সময়টা কাটিয়ে উঠেছি। আমার স্ত্রী খেলাটা বোঝে। সে আমায় সবসময় অনেক মানসিক সমর্থন দেয়। খারাপ সময়ে বলত মাথা ঠা-া রেখ, ভালো সময় আসবে। মাও সেই কথা বলতেন। ভগবানের আশীর্বাদে সেটা পেয়েছি। এখন চেষ্টা থাকবে এই ভালো সময়টাকে দীর্ঘস্থায়ী করার।
বেশিরভাগ সময় দল আক্রমণে উঠছে ডান দিক দিয়ে। সেখানে আপনার আর রাকিবের মধ্যে ভালো একটা বোঝাপড়া হয়েছে দেখলাম...
বিশ্বনাথ : আমি আর রাকিব এক বছর ধরে একসঙ্গে ক্লাবে (বসুন্ধরা কিংস) খেলছি। আমাদের বোঝাপড়াটা অনেক ভালো। তাছাড়া কোচ (হাভিয়ের কাবরেরা) আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। সেটা আমাদের জন্য একটা বড় বিষয়। আমরাও তার প্রতিদান দিতে পারছি। অনেক দিন ধরে যা চেয়েও দিতে পারছিলাম না, এখন তা পারছি।
তারিক-ইশা-তপু-বিশ্বনাথকে নিয়ে বাংলাদেশের রক্ষণ তো এখন বেশ শক্তিশালী। ভুল-ভ্রান্তিও কম হচ্ছে...
বিশ্বনাথ : একসঙ্গে থাকলে দারুণ একটা বোঝাপড়া হবেই। নিজেদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আমরা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে খেলছি। অনুশীলন থেকে শুরু করে মাঠের খেলা। তাই আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া নিজেদের ওপর বিশ্বাস থাকলে অনেক কঠিন কাজ সহজে হয়। আমাদের দলের খেলোয়াড় একজন আরেকজনের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখি। ফলে ম্যাচে যদি পিছিয়েও যাই, ফিরে আসার সামর্থ্যটা রাখি। আর কোচ তো পুরো দল নিয়েই কাজ করে। সে তো চাইবেই আমরা যেন ভুল কম করি। তবে আমরা যত বেশি ম্যাচ খেলব, তত আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আগে আমরা খেলায় কেউ মিস করলে অন্য কেউ যে সেটা কাটিয়ে উঠবে, সেরকম কেউ ছিল না। এখন আপনি শেষ কয়েকটা ম্যাচ যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন, কেউ ভুল করলেও অন্যকেউ একজন এসে তাকে সাপোর্ট করছে। কোচ আমাদের সেটাই বলেছেন, যে একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করতে। তাতে কাজটা সহজ হয়ে যায়।
মাঝে মাঝে সেন্টারব্যাকে দেখা যায় আপনাকে। এই পজিশনেও কী মানিয়ে নিচ্ছেন?
বিশ্বনাথ : ২০১৮ সালে আমি যখন শেখ রাসেলে ছিলাম তখন বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে খেলা ছিল। দলের কয়েকজন ইনজুরিতে পড়ায় কোচ সাইফুল বারী টিটু আমায় সেন্টার ব্যাকে খেলতে নামিয়েছিলেন। পরে বসুন্ধরা কিংসে গিয়েও এই পজিশনে খেলতে পাঠায়। কারণ সেবারও এই দলে ইনজুরি সমস্যা ছিল। এ ছাড়া জাতীয় দলের হয়ে মালয়েশিয়ায় এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে এই পজিশনে খেলানো হয়। এখন জাতীয় দলে কোচ আমাকে দুই পজিশনেই খেলাচ্ছে। আমার কাজ দলের প্রত্যাশা পূরণ করা।
আপনার লং থ্রো-ইনটা খুবই কার্যকরি। এটায় পারদর্শী হলেন কী করে?
বিশ্বনাথ : রায়হান ভাই (জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার রায়হান হাসান) আমার এলাকার (টাঙ্গাইল) বড় ভাই। এক মহল্লায় বাড়ি আমাদের। আমার ফুটবলের হাতেখড়ি উনার হাত ধরেই। আমি আসলে বেলাল ভাই বা আলমগীর... ভাইদের খেলা দেখিনি। তবে শুনেছি তারাও লং থ্রো-ইন করতেন। আমি রায়হান ভাইয়ের খেলা দেখেছি। আমার মতে তিনি এখনো দেশের সেরা লং থ্রোয়ার। অনূর্ধ্ব-১৯ খেলার সময় বিষয়টা লক্ষ্য করেছি। পরে শেখ রাসেলেও থ্রো করতাম। যেকোনো কাজে যদি আমায় বাড়তি কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেটা ভালোভাবে পালনের চেষ্টা করি। তাছাড়া আমি এই থ্রোটা উপভোগও করি।
মাঠে আপনার নিবেদন নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠে না। নিজেকে কী ছোটবেলা থেকেই এভাবে গড়ে তুলেছেন?
বিশ্বনাথ : আমার সদ্য প্রয়াত ছোটবেলার কোচ আতিকুর রহমান জামিল বলেছিলেন, যে কাজটাই করি না কেন, সেটা যেন মন দিয়ে করি। এই ডেডিকেশনের বিষয়টা আসলে তিনিই আমায় বুঝতে শিখিয়েছিলেন। তখন থেকেই যে কাজটা করি, মন দিয়ে চেষ্টা করি সেখানে সর্বোচ্চটা দেওয়ার।
সাদ উদ্দিন ক্লাব ও জাতীয় দলে আপনার পজিশনে খেলেন। আরও অনেকেই এই পজিশনে উঠে আসছেন। ভালো না খেললে তো জায়গা হারানোর ভয়ই থাকবে?
বিশ্বনাথ : আমি দুটো জিনিসে বিশ্বাসী। একটা পরিশ্রম, অন্যটা ভগবানের আশীর্বাদ, এটাকে ভাগ্যও বলতে পারেন। পরিশ্রম আর ভাগ্য সঙ্গে থাকলে কোনো কিছুই বিফলে যায় না।
মালদ্বীপের বিপক্ষে অক্টোবরে ডু-অর-ডাই লড়াই। কী মনে হচ্ছে, পারবেন তো?
বিশ্বনাথ : আসলে মন তো অনেক কিছুই বলে। তবে মনের কথা দিয়ে তো কিছু হবে না। যখন মাঠে নামব, তখন নিজের সেরাটা উজার করে দিতে হবে। চেষ্টা থাকবে দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট অর্জন করার। আমরা জেতার মানসিকতা নিয়েই নামব। এ ছাড়া এএফসি কাপেও ক্লাবের হয়ে ভালো করার ইচ্ছা আছে। পরপর দুই বছর কাছে গিয়েও আমরা পারিনি। এবার সেই অপূর্ণতা পূরণ করার সুযোগ।
আফগান কোচ দেখলাম আপনাকে অনেক পছন্দ করে। দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি লালকার্ড পাওয়ার আগে ওনাকে তো দেখলাম আপনি গিয়ে কী যেন বললেন?
বিশ্বনাথ : ওর সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয়েছে বাংলাদেশে আসার পর। সে যখন নেপালের কোচ ছিল তখন আমার খেলা দেখেছে। তবে কথা হয়নি। খেলার মধ্যে সে হঠাৎ রাগারাগি করছিল, আমি বললাম এটা খেলা, এখানে তো রাগারাগি করার কিছু নেই। ও তখন বলল, ঠিক আছে। আসলে প্রতিপক্ষ কোচের কাছ থেকে এ রকম সম্মান পেতে ভীষণ ভালো লাগে।
ক্যারিয়ার শেষটায় নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিশ্বনাথ : মানুষ যেন বলে, টাঙ্গাইলের একটা খেলোয়াড় ছিল, যে অসাধারণ ফুটবল খেলত। বলতে পারেন টাঙ্গাইলের বিশ্বনাথ হয়েই থাকতে চাই। খেলা ছাড়ার পর সেখানেই পরিবার নিয়ে ফিরে যাব।
সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে যোগ দেওয়ার পর মাঠে নামেননি নেইমার। তবে ব্রাজিলের হয়ে ২০২৬ বিশ^কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে আজ মাঠে নামতে পারেন তিনি। বাংলাদেশ সময় আজ সকালে ব্রাজিলের খেলা বলিভিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচের আগে নেইমার সৌদি ও ফ্রেঞ্চ লিগের তুলনায় দিলেন কৌশলী উত্তর। নেইমারের কাছে শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় তিনি পুরো ফিট কি না। উত্তরে নেইমার বলেন, ‘আমি ভালো অনুভব করছি, সব মিলিয়ে খুশি। অবশ্যই শতভাগ ফিট না। তবে আমার মাথা ও শরীর ঠিক আছে।’ শতভাগ ফিট নন নেইমার। তবে ম্যাচের আগে অনুশীলন করেছেন। ২০২৬ বিশ^কাপ বাছাইয়ে আজ প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে ব্রাজিল। কাতার বিশ^কাপে সেলেকাওরা বাদ পড়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। এরপর থেকে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেননি নেইমার। আজ মাঠে নামলেও হয়তো পুরো ম্যাচ খেলবেন না তিনি।
ইউরোপ ছেড়ে সৌদি লিগে পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নেইমার বলেন, ‘আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সৌদি আরবেও ফুটবল একই আছে। সেখানেও বলের আকৃতি গোল...। এখানেও বড় বড় তারকা ফুটবলাররা আছে। আর এগুলোর ওপর নির্ভর করেই আমি সেখানে গিয়েছি।’ ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান ও সৌদির লিগ নিয়ে তুলনার প্রশ্নে নেইমার বলেন, ‘লিগ ওয়ানের চেয়ে এটা ভালো নাকি ভালো না, তা আমি জানি না। আমি আল হিলালের হয়ে শিরোপা জিততে চাই। আমার লক্ষ্যে কোনো পরিবর্তন হবে না।’
জাতীয় দলের হয়ে ৭৬টি গোল করেছেন নেইমার। আর একটি গোল হলেই কিংবদন্তি পেলেকে ছুঁয়ে ফেলবেন ব্রাজিলিয়ান বর্তমান নম্বর টেন। বলিভিয়ার বিপক্ষে ২৩ ম্যাচ জিতেছে ব্রাজিল, হার পাঁচটি, ড্র করেছে চারটি।
১৯৩০ সালে হয় প্রথম বিশ^কাপ। ব্রাজিল এখন পর্যন্ত হওয়া সব বিশ্বকাপেই খেলেছে।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বাংলাদেশ ২-১ গোলে হারায় পাকিস্তানকে। এর আগে ভারত অনূর্ধ্ব-১৬ দল ৮-০ গোলে হারিয়েছে মালদ্বীপ অনূর্ধ্ব-১৬ দলকে। ১০ সেপ্টেম্বর ফাইনালে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত।
৬ দলের আসরে পাকিস্তান গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই উঠেছিল সেমিফাইনালে। গ্রুপপর্বে মালদ্বীপ ও ভুটানকে হারায় তারা। গতকাল ম্যাচের ৬ মিনিটে পাকিস্তান এগিয়েও যায়। বক্সে ঢুকে আব্দুল ঘানি গোলকিপারের ওপর দিয়ে শটে বল জালে পাঠান। সমতায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। ১৪ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে সতীর্থের ভাসানো বলে মুর্শেদ আলি ডিফেন্ডারদের মাঝে হেডে জালে জড়ান। ২৮ মিনিটে গোল পেতে পারত পাকিস্তান। কর্নার থেকে নেওয়া শট পোস্টে লাগে। পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রতি আক্রমণ থেকে সতীর্থের দারুণ এক পাসে আবু সাইদ বক্সের ভেতরে পেয়ে প্লেসিং করে উচ্ছ্বাসে মাতেন। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের চেষ্টা করে দুই দলই। তবে ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় গোল পায়নি কোনো দল।
মালদ্বীপের বিপক্ষে ভারতের হয়ে ম্যাচে গোল করেন ৬ খেলোয়াড়। দুটি করে গোল করেন আরবাস ও খারতাংমাও। আরবাস এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত এই টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। এবার ভারত ও বাংলাদেশ ছিল একই গ্রুপে। গ্রুপপর্বে ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।