
‘তন্ত্রের মাধ্যমে নেইমারের মনকে মেঘাচ্ছন্ন করাই আমাদের উদ্দেশ্য, যাতে সে যা চায়, তা করতে না পারে। ওর লক্ষ্য হলো গোল করা।’ পেরুর এক ওঝা বলেছিলেন এ কথা।
তা ওঝার তন্ত্রে কাজ হয়েছে বলেই মনে হয়। আগের ম্যাচে জোড়া গোলে পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া নেইমার সত্যিই গোল করতে পারেননি। তবে তাতে ব্রাজিলের জয় আটকাতে পারেনি পেরু। ৯০ মিনিটে গোল করেছেন মার্কিনহোস। তবে গোলের উৎসটা নেইমারের। তার নেওয়া মাপা কর্নারে হেডেই গোল করেছেন এই দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার। এই জয়ে টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত রইল ব্রাজিল।
লিমার এস্তাদিও নাসিওনালে পেরুর জালে আরও দুবার বল পাঠিয়েছিল ব্রাজিল। ২৯ মিনিটে ব্রুনো গিমারেজের ক্রস থেকে হেডে গোল করেছিলেন ব্রাজিল স্ট্রাইকার রিচার্লিসন। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে গোলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রায় দেন। এরপর আর পোস্টে বলই পাঠাতে পারেনি ব্রাজিলিয়ানরা। সর্বশেষ ৮ ম্যাচের ৭টিতেই হারানো পেরুর বিপক্ষে জয় পেতে ব্রাজিলকে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। এরপর নেইমারের ডান পায়ের সেই কর্নার কিক, আর মার্কিনহোসের হেড।
এতে দক্ষিণ আমেরিকা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ‘অ্যাসিস্ট’ হয়ে গেল নেইমারের। ২০১৫ সালে অভিষেকের পর এই প্রতিযোগিতায় গোল করা ও করানো মিলিয়ে তার চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। সব মিলিয়ে ৩৪ গোলে অবদান রেখেছেন নেইমার গোল করিয়েছেন ১৬টি, বাকি ১৮টি গোল করেছেন নিজে।
ম্যাচ শেষে নেইমারের পারফরম্যান্স নিয়ে ব্রাজিল কোচ ফার্নান্দো দিনিজ বলেছেন, ‘নেইমারের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের ফাউল করার প্রবণতা থাকে। তবে এটা মেনে নিচ্ছি যে, সে আজ কিছু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। তবে সে কিন্তু মাঠে পড়ে যায়নি কারণ ফাউল করা হয়নি।’
এক সময়ের স্পিন-নির্ভর বোলিং আক্রমণ থেকে বদলে বাংলাদেশ এখন পেস বোলিংয়ের শক্তি দেখাচ্ছে। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদরা আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ম্যাচ জেতাচ্ছেন। এই সাফল্যের গল্পের উল্টোপিঠে কিছুটা ব্যর্থতার গল্পও আছে। যে স্পিন বোলিং ছিল এক সময়ের শক্তি, এখন সেই স্পিনাররাই ভুগছেন উইকেট খরায়। এশিয়া কাপে ৯ উইকেট নিয়ে শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকায় থাকা প্রথম চারজনের দুজন বামহাতি স্পিনার; কুলদীপ যাদব আর দুনিথ ভেল্লালাগে সবশেষ ম্যাচে দুজনের স্পিন ভেলকি জমে উঠেছিল প্রেমাদাসার ২২ গজে। অথচ বাংলাদেশের স্পিনাররা এই এশিয়া কাপে মোট উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৪টি। তাই প্রশ্ন উঠছে, পেসারদের সাফল্যের আড়ালে কি মুখ লুকাচ্ছেন স্পিনাররা?
প্রথমত অবশ্য বলতেই হয়, স্পিনারদের ব্যর্থতার পেছনে ব্যাটসম্যানদের দায়টা কম নয়। এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপে খেলা ৪ ম্যাচে দুটোতে আগে ব্যাট করে দুইশোর নিচে অলআউট হয় বাংলাদেশ। স্পিনারদের তাই বল করবার বা প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলবার সুযোগটাই অনেক কমে আসে। যদিও ভালো করার সুযোগ ছিল সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে। কলম্বোতে সেই ম্যাচে উইকেট সব পেসারদের, ৩ স্পিনার ২৩ ওভার বল করে উইকেট পাননি। রান তাড়ায় নেমে শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের ঠিকই উইকেট দিয়েছে বাংলাদেশ, সেই মহেশ থিকশানা আবারও সফল বাংলাদেশের বিপক্ষে।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সবশেষ ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে আগামীকাল। আজ একই মাঠে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান, কার্যত সেমিফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচজয়ী দলই খেলবে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে। আর রোহিত শর্মাদের জন্য শেষ ম্যাচটা নিয়মরক্ষার। নিজেদের সবশেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্পিনে সবকয়টি উইকেট হারিয়েছে ভারত। স্পিন খেলায় যাদের এত দক্ষতা, তারা কিনা স্পিনে এভাবে কুপোকাত? কী এমন করেছিলেন ভেল্লালাগে? বাংলাদেশ দলের খ-কালীন স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করা সোহেল ইসলাম মনে করেন, প্রেমাদাসার পিচের জোরেই এই সাফল্য। টানা তিনদিন খেলা হওয়া, বৃষ্টি সব মিলিয়েই উইকেটের এমন অবস্থা যেটা ভেল্লালাগে আর আসালাঙ্কার বোলিংকে ভারতের মতো দলের সামনেও দুর্বোধ্য করে তুলেছিল বলে মনে করেন সোহেল।
আজ একই ভেন্যুতে লড়বে
পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। উইকেটের ফায়দাটা কি পরদিন ভারতের বিপক্ষে নিতে পারবে বাংলাদেশ? সোহেল মনে করেন, ‘দেখতে হবে উইকেট কেমন হয়। অনেক সময় উইকেট বোলারদের বোলিংয়ের সঙ্গে সহায়ক হলে তার বল খেলা কঠিন হয়। লাহোরের উইকেট যেমন স্পিনারদের একদমই সহায়তা করেনি, ব্যাটিং সহায়ক ছিল। ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে রিস্ট স্পিনাররা বেশি সহযোগিতা পেয়েছে। বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হলে সেটা ভারতের জন্যও সহায়ক হতে পারে (শেষ ম্যাচের উইকেট)।’
ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ২০ উইকেটের ভেতর স্পিনাররাই পেয়েছেন ১৬ উইকেট। ভারতের তো ১০ উইকেটই পড়েছে স্পিনারদের বলে। শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট ভাগ করেছেন কুলদীপ আর জাদেজা। বাংলাদেশ দলেও আছেন ২ বামহাতি, সাকিব আর নাসুম। যদিও নাসুম এখন পর্যন্ত একটাই ম্যাচ খেলেছেন এশিয়া কাপে, শেষ পর্যন্ত দলীয় সমন্বয়ে তিনি থাকেন কি না তা এখনই আন্দাজ করা মুশকিল। তবে বল হাতে সাকিবের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। এই বামহাতি অর্থডক্স বোলার পাল্লেকেলেতে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের পর থেকে উইকেটশূন্য। চলতি বছরে সাকিব ১৫ ম্যাচ খেলে ১২ ইনিংসে বল করেছেন ১০১.৩ ওভার। তাতে ৪৪৪ রান খরচায় সাকিবের শিকার ১৩ উইকেট। ১৪ ম্যাচে ১২ ইনিংসে মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার ১১ উইকেট। চলতি বছর কোনো ম্যাচেই ২ উইকেটের বেশি পাননি মিরাজ।
স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে মিরাজের সঙ্গেই বেশি কাজ করেছেন সোহেল। রংপুর রাইডার্সের কোচ হিসেবে সামনের মৌসুমে বিপিএল দলে পাবেন সাকিবকেও। দুজনের কারো বোলিং পরিসংখ্যানই তাকে খুব একটা চিন্তাগ্রস্থ করতে পারছে না, ‘আমাদের স্পিনাররা ঠিক পথেই আছে। ওদের দল থেকে যে ভূমিকাটা দেওয়া হয়েছে তারা সেটা ঠিকভাবে পালন করছে। ওদের মাঝের ওভারগুলোতে বল করতে হয়। রান আটকাতে হয়। আগে ছিল যে স্পিনাররা উইকেট নেবে, কিন্তু এখন দলে তাদের ভূমিকা বদলে গেছে।’ ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপেও মোটা দাগে স্পিনারদের ভূমিকা এরকমই থাকবে বলে মনে করেন সোহেল, ‘অক্টোবর-নভেম্বরে অনেক জায়গায় শীতের আমেজ থাকবে, রাতে শিশির পড়বে। আইসিসির ইভেন্টে উইকেট ব্যাটসম্যান সহায়কই হবে। কিছু কিছু ভেন্যু যেমন দিল্লি, চেন্নাইতে স্পিনাররা হয়তো বাড়তি সুবিধা পাবে।’
ইকুয়েডরের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে চোটের শঙ্কা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন লিওনেল মেসি। লাপাজের উচ্চতা, মেসির মানিয়ে নিতে না পারা, বয়স এবং চোটÑ সব মিলিয়ে মেসিকে বাইরে রাখাকেই যৌক্তিক মনে হয়েছে কোচ লিওনেল স্কালোনির। তবে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোচকে আক্ষেপে পুড়তে দেননি অন্যরা। লাপাজের উচ্চতা নিয়ে যে ভীতি ছিল সেটাকে জয় করেছে আর্জেন্টিনা।
২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা শেষ পর্যন্ত জিতেছে ৩-০ গোলে। গোল করছেন এনজো ফার্নান্দেজ, নিকোলাস তালিয়াফিকো এবং নিকোলাস গনসালেজ। এ নিয়ে বিশ্বকাপের পর খেলা ৬ ম্যাচের প্রতিটিতে জয় পেল আর্জেন্টিনা। ম্যাচগুলোতে সতীর্থরা ১৭ গোল করলেও দিবু মার্তিনেজ কোনো গোল হতে দেননি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩২২৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এস্তাদিও হার্নান্দো সাইলস স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৩০ মিনিট পর্যন্ত বলিভিয়ার সঙ্গে বল দখলে যুঝতে হয়েছে ডি মারিয়ার নেতৃত্বে আর্জেন্টাইনদের। এ সময় দূরপাল্লার শটে একাধিকবার বলিভিয়াকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা। অন্য দিকে বলিভিয়া চেষ্টা করেছে ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে এগিয়ে যেতে।
যদিও দ্রুত ম্যাচে ফিরে এসে বলিভিয়াকে সে সুযোগ দেয়নি আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে ১৩ মিনিটে এনজোর দুর্দান্ত এক শট ফিস্ট করে ঠেকিয়ে দেন বলিভিয়ার গোলরক্ষক। তবে ৩১ মিনিটে ঠিকই গোল আদায় করে নেন চেলসির মিডফিল্ডার। লাউতারো মার্তিনেজকে সরিয়ে একাদশে জায়গা করা আলভারেজের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ডি মারিয়া সেটি পাঠান বক্সে। সøাইডিং বল জালে পাঠিয়ে জাতীয় দলের হয়ে তৃতীয় গোল করেন এনজো।
৩৯ মিনিটে বলিভিয়ার খেলোয়াড় রবার্তো ফার্নান্দেজ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে আরও চাপে পড়ে দলটি। এরপরই ডি মারিয়ার ফ্রি কিক থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করে দলকে এগিয়ে দেন তাগলিয়াফিকো। এই দুই গোল নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতির পরও দাপট ছিল আর্জেন্টিনার। তবে দুই গোলে এগিয়ে থাকায় কিছুটা মন্থর হয়ে যায় খেলা। এরপরও তৃতীয় গোলটি ঠিকই আদায় করে নিয়েছে তারা। এই গোলটি আসে মেসির পজিশনে খেলা নিকো গনজালেজের বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটে।
বাছাইপর্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পরের দুম্যাচ ১২ অক্টোবর ঘরের মাঠে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে, ৫ দিন পর পেরুর সঙ্গে। নভেম্বরে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের সঙ্গে খেলা রয়েছে তাদের।
মুক্তি মিলেছে। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ ক্লাবগুলোর। বলা হচ্ছে ক্যাসিনোর থাবায় বন্ধ করে দেওয়া মতিঝিল পাড়ার ছয়টি ক্লাবের কথা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের উদ্যোগে এবং সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রশাসনের সহায়তায় প্রায় সাড়ে তিন বছর পর খুলতে শুরু করেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের একাংশ, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের দুয়ার। এলাকার মানুষের স্বপ্ন আবারও নানা খেলার খেলোয়াড়ে মুখরিত হবে ক্লাব পাড়া। ক্লাব খুলে দেওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে ফের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ক্লাবের কর্তারা। তবে এখন তাদের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে যে কলঙ্কের কালি পড়েছিল, সেখান থেকে ভাবমূর্তি ফেরাতে হবে। একটা শক্ত আর্থিক অবকাঠামো নিশ্চিত করে ফের পুরোদমে ফিরতে হবে মাঠে-ময়দানে।
মতিঝিল পাড়ার ক্লাবগুলো একটা সময় ছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম চালিকাশক্তি। কালে কালে সেই ধারায় এসেছে পরিবর্তন। নানা কারণেই ক্লাবগুলোর গুরুত্ব কমেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনে। ক্লাবগুলোতে খেলাধুলার চর্চা কমতে থাকায় একটা সময় তাতে চোখ পড়ে ক্যাসিনো চক্রের। প্রভাবশালী সেই চক্র স্পোর্টিং ক্লাবগুলোকে বদলে ফেলে ঝলমলে ক্যাসিনোয়। রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা সেখানে উড়েছে অবৈধ টাকা আর অবাধে হয়েছে মাদক ব্যবসা। ভয়ে সে সব কান্ড--কারখানা দূর থেকে দেখতে হয়েছে সত্যিকারের ক্লাব সংগঠকদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে ক্যাসিনোগুলোকে সিলগালা করে দেয়। তাতে ক্লাবগুলোর খেলাধুলার চর্চায় লাগে বড়সড় ধাক্কা। দিনের পর দিন প্রবেশাধিকার না থাকায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তারপরও অস্তিত্ব রক্ষায় তারা কোনোমতে চালিয়ে গেছে খেলা।
যদিও নিজস্ব স্থাপনা ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় নানা রকম সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে তাদের। তাই তাদের দাবি ছিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্লাব খুলে দেওয়ার। শেষ পর্যন্ত ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী নিজে উদ্যোগ নিয়ে ক্লাবগুলো খুলে দিতে আইনি জটিলতা নিরসনে দায়িত্ব দেন আবদুল গাফফারকে। প্রায় সাড়ে তিন মাস সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সফল হন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগঠক, ‘এই ক্লাবগুলো একেকটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। ক্যাসিনোর কালো থাবায় এতদিন ক্লাবগুলো বন্ধ ছিল। বিষয়টি নিরসনে ক্রীড়ামন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি ক্লাবগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ করে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি। আশা করছি, ক্লাবগুলোতে ভবিষ্যতে আর কোনো অনৈতিক ঘটনা ঘটবে না। তারা অতীতের মতো আবারও নির্বিঘ্নভাবে খেলাধুলা চর্চা শুরু করতে পারবে।’
স্থানীয় মতিঝিল থানার পক্ষ থেকে একটি দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে মুক্তি পাওয়া ক্লাবগুলোকে। সেগুলো মেনে বুধবার থেকেই ক্লাব ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন ক্লাব কর্তাদের সামনে ভাবমূর্তি ফেরানোর বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে তারা প্রস্তুতও। তবে এই সময়টায় ক্লাবগুলোতে ঘটেছে অবিশ্বাস্য চুরির ঘটনা। জনমানবশূন্য হয়ে পড়া ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স, দিলকুশাসহ বিভিন্ন ক্লাবে চুরির বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। আসবাবপত্র, টিনের চাল, দরজা-জানালা খুলে নেওয়ার পাশাপাশি শতবর্ষী ক্লাবগুলোর ঐতিহ্যের প্রতীক ট্রফি, শিল্ডগুলোও চুরি হয়ে গেছে! যেটাকে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন ক্লাব কর্তারা।
১২০ বছরের পুরনো ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিনের কণ্ঠে আক্ষেপ, ‘ভাবমূর্তি যতটুকু নষ্ট হয়েছে, তা হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব। ক্লাব ঘর থেকে খোয়া যাওয়া আসবাবপত্রও হয়তো টাকার বিনিময়ে কিনতে পারব। তবে ১২০ বছরের যত অর্জনÑ সেই ট্রফি, শিল্ডগুলো তো আর ফিরে পাব না। আমাদের কাছে সেগুলো অমূল্য সম্পদ।’ গতকাল ভিক্টোরিয়া ক্লাবে গিয়ে মনে হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই যেন সুনামি বয়ে গেছে সেখানে। মেঝেতে পানি জমে মশার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। টিনের চালাও বিভিন্ন জায়গায় খুলে নেওয়া হয়েছে। নানা জায়গায় জমে আছে নর্দমার ময়লার স্তূপ। এই অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে ক্লাবের সব সদস্যকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তুহিন, ‘ক্লাবটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ক্লাবকে বসার উপযোগী করতে কমপক্ষে ১৫-২০ লাখ টাকা লাগবে। আমরা এর মধ্যেই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন কিছু একটা করবেন। ক্লাবের সদস্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আশা করছি সবাইকে নিয়ে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াব।’
ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাবের দরজা খুলবেন ১৮ সেপ্টেম্বর। তার আগেই অবশ্য অভ্যন্তরে বড় ধরনের চুরির অস্তিত্ব টের পেয়েছেন ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ‘ক্যাসিনো অভিযানের আগে আমরা এক সঙ্গে ৪০-৫০ জন খেলোয়াড়কে ক্লাবে রেখে খেলায় অংশ নিতে পারতাম। খেলোয়াড়দের ডরমেটরিগুলো ছিল সুসজ্জিত ও আধুনিক। প্রতিটির সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম ছিল। তবে এখন সেসব স্থাপনা দেখলে মনে হবে বড়সড় ভূমিকম্পে সব কিছু বিধ্বস্ত হয়েছে। আসবাবপত্র কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমাদের অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
তুলনায় আরামবাগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম। ক্লাবটি অবশ্য ভুগছে নেতৃত্ব শূন্যতায়। এই সমস্যাটা কাটিয়ে ওঠাই আরামবাগের বড় চ্যালেঞ্জ জানালেন সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, ‘আমরা সেভাবেই এখন থেকে ক্লাব পরিচালনা করব। কোনো অসামাজিক কর্মকান্ড করার ইচ্ছেও আমাদের নেই। এখন ক্লাবের বেশ কিছু সংস্কার প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি ভালো একজন সভাপতির হাতে ক্লাবের দায়িত্ব তুলে দিতে।’
কমবেশি একই অবস্থা দিলকুশা ও ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাবের। তবে তাদের চেয়ে খানিকটা ভালো অবস্থায় আছে মোহামেডান। কারণ ক্লাবটির একাংশ অডিটোরিয়াম দখল করে চলেছে রমরমা ব্যবসা। মূল অংশ ছিল দখলমুক্ত। সরকারের পক্ষ থেকে বাধা উঠে যাওয়ায় এখন সেই অডিটরিয়াম ভবনটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে মোহামেডান।
ভারত টানা দুই ম্যাচ জিতে যাওয়ায় ফাইনালের লড়াই থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার শেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশ-ভারতের লড়াইয়ে টুর্নামেন্টের হিসেবে তেমন আবেদন থাকবে না। তার আগেই আজ আসরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নামবে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। দুই দলের যে জিতবে তারাই পা রাখবে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হয়ে।
অলিখিত এ ফাইনাল নিয়েও দুশ্চিন্তা থাকছে আগের তিনদিনের মতো। কারণ বৃষ্টির চোখ রাঙানি শেষ হয়নি এখনো। আজ বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে গেলে কপাল পুড়বে পাকিস্তানের। নেট রান রেটে অনেক এগিয়ে থেকে ফাইনালে চলে যাবে লঙ্কা। এই ম্যাচের কোনো রিজার্ভ ডে না থাকায় পাকিস্তান লঙ্কাকে হারানোর দ্বিতীয় সুযোগ পাবে না।
গত আসরে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া কাপ হারায় পাকিস্তান। ওই আসরটি ছিল লঙ্কানদের আয়োজনের কিন্তু হয়েছিল দুবাইতে। এবার পাকিস্তানের আয়োজনের টুর্নামেন্ট হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। নিজেদের মাঠে ফাইনালে উঠলে লঙ্কানরা টানা দ্বিতীয় এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে। পাকিস্তান তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিতে চায় ফাইনালের আগেই। তাতে গত এশিয়া কাপের প্রতিশোধটাও নেওয়া হবে।
অথচ এমন ম্যাচের আগে পাকিস্তান দলে দুঃসংবাদ। ইনজুরির কারণে পর্যবেক্ষণে ছিলেন নাসিম শাহ। তাকে বিশ্রাম দিয়ে জামান খানকে দলে ডেকেছে তারা। ভারতের বিপক্ষে ৫ ওভারের পর রিজার্ভ ডেতে আর বল করতে না পারা আরেক পেসার হারিস রউফও চোটে পড়েছে। তার জায়গায় শাহনাওয়াজ দাহানিকে এনে তৈরি রেখেছে পাকিস্তান।
সকালে অনুশীলন করে বিকেলের ফ্লাইটে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা ছিল মুশফিকুর রহিমের। কিন্তু ছুটি বাড়িয়ে ঢাকাতেই থেকে গেলেন। সহধর্মিণী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে না ওঠায় পরিবারের পাশে থাকতে এশিয়া কাপ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন মুশফিক।
শুক্রবার এশিয়া কাপে ভারতের সঙ্গে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে জিতলেও ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই সাকিব আল হাসানদের। ভারত পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টানা দুই জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে শেষ ম্যাচটি নিয়মরক্ষার লড়াই। এই ম্যাচে বেঞ্চের ক্রিকেটারদের পরীক্ষা করে দেখতে পারে বাংলাদেশ। সেই ইঙ্গিতটা মুশফিক শ্রীলঙ্কা না যাওয়ায় সত্যি হলো। ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে তাই কিপিং গ্লাভস হাতে দেখা যাবে লিটন দাসকে। এই সুযোগে দলে একাধিক পরিবর্তন আসতে পারে।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।