বন্ধু সাকিব…
তোফায়েল আহমেদ | ১৩ আগস্ট, ২০১৯ ১৬:৩০
সাকিব সময় পেলেই আড্ডায় মাতেন বন্ধুদের নিয়ে। কৈশোরের প্রায় সবটুকু সময় পার করেছেন বিকেএসপিতে। আর তাই বিকেএসপির বন্ধুরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার এই আড্ডার সঙ্গী।
খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকে বর্ণনা করতে গিয়ে ‘অবিশ্বাস্য’ কথাটা বলেন অনেকেই। এই তো সর্বশেষ বিশ্বকাপেই কী অসাধারণ পারফরম্যান্সটাই না করে এলেন। ১০ বছর ধরে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের শীর্ষ অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। মাঠের এই সাকিব আল হাসান বন্ধু হিসেবে কেমন?
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বিকেএসপিতে বেড়ে ওঠা সাকিবের ঘনিষ্ঠ দুজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হলো সেটাই। সাকিবের বেড়ে ওঠার সময়ের কিছু অজানা গল্পও ওঠে এলো স্বাভাবিকভাবেই। সাকিবের এই দুই বন্ধু- তৌহিদুল আলম সবুজ ও ইমরান হাসান পিন্টু, নিজ নিজ খেলায় প্রতিষ্ঠিত।
আড্ডা প্রিয় সাকিব
শুধু ক্রিকেট নয়, সামগ্রিক প্রেক্ষাপটেই দেশের সবচেয়ে বড় তারকার নাম সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটসহ এত এত খেলার মাঝে সময় কোথায় তার! কিন্তু সাকিব সময় পেলেই আড্ডায় মাতেন বন্ধুদের নিয়ে। কৈশোরের প্রায় সবটুকু সময় পার করেছেন বিকেএসপিতে। আর তাই বিকেএসপির বন্ধুরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার এই আড্ডার সঙ্গী।
সাকিবের ব্যাচের বন্ধুদের মধ্যে অন্য খেলায় সফল অনেকেই। ফুটবলার তৌহিদুল আলম সবুজ তাদের একজন। তালিকায় আছেন হকির ইমরান হাসান পিন্টু, সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলারা। সদ্যই বসুন্ধরা কিংসের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জিতেছেন সবুজ। সাকিব প্রসঙ্গে জানতে চাইলেই বললেন, বিশ্বকাপ থেকে ফিরেও সাকিব এক ছাদের নিচে ডেকেছিলেন তাদের সবাইকে, “ও যখনই ফ্রি হয়, আমরা একসঙ্গে আড্ডা দেই। বিশ্বকাপ শেষে সাকিব দেশে ফিরতেই বিকেএসপির বন্ধুরা একসঙ্গে হয়েছিল। লিগের ম্যাচ থাকায় আমি এবার যেতে পারিনি। আমাদের আড্ডাগুলো বেশির ভাগ হয়ে থাকে সাকিবের বাসাতেই।”
“সাকিব অনেক পপুলার, বাইরে আড্ডা দিলে অনেক ধরনের পরিস্থিতেই পড়তে হয়। তাই বন্ধুরা ওর বাসাতেই বেশি আড্ডা দেই সবসময়” যোগ করেন সবুজ।
সাকিবের সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুর সময়টাও জানালেন সবুজ, “সাকিব আর আমি বিকেএসপিতে ক্লাস এইট থেকে একসঙ্গে। আমি ২০০১ সালে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হই বিকেএসপিতে। আর ও ২০০২ সালে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে সরাসরি ক্লাস এইটে ভর্তি হয়। এরপর থেকেই একসঙ্গে আমাদের বেড়ে ওঠা। তবে মাঠে অর্থাৎ খেলার সময় যার যার ডিপার্টমেন্টে।”
সেই একই রকম সাকিব
বিকেএসপিতে সাকিব আল হাসানের রুমমেটদের একজন ইমরান হাসান পিন্টু। জাতীয় হকি দলের অন্যতম সেরা এই তারকা সাকিবের সঙ্গেই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। পিন্টু বললেন, বিশ্বসেরার আসনে বসা নিজের রুমমেটকে নিয়ে, “সাকিবের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ২০০১ সালে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে। আমরা দুজনই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে এসেছি। এরপর বিকেএসপিতে একসঙ্গে ভর্তি হওয়া, একই রুমে থাকা। টানা প্রায় ছয় বছর এক সঙ্গে…। ও তখন যেমন ছিল, এখনো আমাদের সঙ্গে ঠিক তেমনই। ওর দিক থেকে কোনো পরিবর্তন নেই। হ্যাঁ, একটু ওর ব্যস্ততা বেড়ে গেছে, এই যা।”
সবুজের মতো পিন্টুর কথাতেও ওঠে এলো বন্ধু অন্তপ্রাণ সাকিবের চিত্র, “ওর খেলা থাকে বা আমাদের খেলা থাকে, তাই সবাই ফ্রি এমন সময় খুব কম হয়। তবে যখনই ও ফ্রি থাকে তখনই আমাদের ডাকে। কল করে বলে, চলে আয়। ব্যাচের যারা ফ্রি থাকি সবাই তখন চলে যাই ওর বাসায়। তখন সেই আগের মতোই আড্ডা হতে চলতে থাকে আমাদের।”
কী নিয়ে আড্ডায় মাততেন কিশোর সাকিব?
এতক্ষণে সবার বুঝে ফেলার কথা সাকিব খুব আড্ডাবাজ। কিন্তু বিকেএসপিতে পড়াশোনা আর খেলার ফাঁকে কী নিয়ে আড্ডা দিতেন সাকিব? সাবুজ বলেন, “সাকিব ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী ছিল। ও আড্ডা দিত ঠিক, কিন্তু সবার চেয়ে ও ছিল ডিফারেন্ট টাইপের। ওই বয়সেই খেলার প্রতি যে আগ্রহ বা স্পৃহা, সেটা অন্য সবার মধ্যে ছিল না। অনেকের ভাবনা ছিল এরকম- খেলতেছি, খেলতে খেলতে হয়ে যাবে। কিন্তু ওর মধ্যে সেটা ছিল না। দেখা গেল, ও আড্ডা দিচ্ছে, তখনো বল নিয়ে প্র্যাকটিস করছে।”
পিন্টুও বললেন একই কথা, “ও খুব সিনসিয়ার ছিল শুরু থেকেই। আমরা ট্রেনিংয়ের পর এসে খুব আড্ডা দিতাম। সেই আড্ডাগুলোতে ও খেলা নিয়েই গল্প করত বেশি।”
বন্ধুরা বুঝেছিলেন তখনই
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেটে বিশ্ব শাসন করে চলেছেন সাকিব। ২০০৬ সালে তার অভিষেক জাতীয় দলে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে দেশ সেরা ও পরে বিশ্বসেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। বন্ধুরা কিন্তু সাকিবের বড় ভবিষ্যৎ দেখেছিলেন বিকেএসপির শুরুর দিনগুলোতেই। সবুজ যেমন বলেন, “ছোট বেলাতেই বুজেছিলাম ও অনেক বড় খেলোয়াড় হবে। ওই যে বললাম না, সব সময়ই খেলা নিয়েই ভাবতো ও। এই যে লং টাইম খেলতেছে এসবের কারণও কিন্তু একটাই। খেলার প্রতি ওর অপরিসীম ভালোবাসা।”
হার্ড হিটার সাকিব
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের আগ্রাসী ব্যাটিং তো অনেকই আছে। উইকেটে তিনি থাকলে রান আসবেই। হকির ইমরান হাসান পিন্টু স্মৃতিচারণ করলেন ওই সময়ের সাকিবের ব্যাটিংয়ের, “বিকেএসপিতে হোস্টেল ভিত্তিক একটা খেলা হতো। ওখানে ও ওপেনিং ব্যাট করত। ও বেশিক্ষণ হয়তো ক্রিজে থাকত না। কিন্তু ও ১০টা বল খেললে ওর রান থাকতো ৩০ বা ৩৫। খুব হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান ছিল ও।”
ফুটবলে ক্যাপ্টেন সাকিব!
তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। এখন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব তার কাঁধে। ক্রিকেটার সাকিব বিকেএসপিতে যখন ফুটবলে নামতেন, তখন অধিনায়কত্বের আর্ম ব্যান্ড থাকত তার হাতে। সবুজ বললেন সেই গল্প, “প্রতি শুক্রবার রিক্রিয়েশন ম্যাচ হয়। এক ব্যাচের সঙ্গে আরেক ব্যাচের খেলা। একদিন ক্রিকেট, একদিন ফুটবল এমন…। ফুটবল খেলা যখন হতো তখন ও আমার জার্সি-প্যান্ট পরত। আমার জার্সি ছিল ১০ নম্বর। ফুটবল খেলা হলে ও আমাদের দলের ক্যাপ্টেন থাকত। ক্রিকেট খেলা হলে আবার আমাকে ক্যাপ্টেন থাকতে বলতো ও। পুরোটাই মজার একটা খেলা…।”
সাকিবের কিছু ‘বদনাম’ ও বন্ধুদের কথা
সাকিব আল হাসান একবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমার নেগেটিভ নিউজ মানুষ ভালো খায়…। আসলেই কি তাই? সাকিব সবার সঙ্গে মিশতে পারেন না এমন কথাও তো উঠেছে কখনো কখনো। কিন্তু সবুজ বলছেন ভিন্ন কথা, “যারা ওর সঙ্গে মিশবে না, তারাই আসলে ওকে ভুল বুঝবে। এখন না বিশ্বকাপে ভালো খেলেছে। এর আগে ভালো খেললেও কিন্তু সাকিবকে পছন্দ করতো না এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত। আসলে ও বাইরের মানুষের সঙ্গে কথা কম বলে। নিজের মতো চলতে ভালোবাসে। যারা ক্লোজ ফ্রেন্ড তারা জানে, ওর ভেতরটা আসলে কেমন। ও আসলে নিজের কাজটাই করতে পছন্দ করে। বিভিন্ন সময় ওকে মানুষ ভুল বুঝে বলেই নেগেটিভ কথা বার্তা সামনে আসে।”
কীভাবে বিশ্বকাপে এমন পারফরম্যান্স
বিশ্বকাপ শেষ করে সাকিব ক’দিন পরিবার নিয়ে ছুটি কাটিয়েছেন দেশের বাইরে। এরপর ফিরেই ডেকেছিলেন তার প্রিয় বিকেএসপির বন্ধুদের। যারা যারা পেরেছিলেন ছুটে গেছেন। বিশ্বসেরার ডাক কী উপেক্ষা করা যায়! ইমরান হাসান পিন্টু যোগ দিয়েছিলেন সেই আড্ডায়। সাকিব কীভাবে এমন পারফরম্যান্স করে এলেন পিন্টু কি জানতে চেয়েছিলেন?
এই হকি তারকা বলেন, “আমি মনে করি ওর ইচ্ছাশক্তি এর মূলে। ও যে বাংলাদেশকে একটা বড় কিছু দিতে চেয়েছে, ওর পারফরম্যান্স সেটাই প্রমাণ করে। ও যে বিশ্বসেরা সেটা, আর দেশের মানুষের দোয়া- এর জন্যই এমন পারফরম্যান্স করতে পারছে। ওকে আমরাও জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও যা বলল, তা হলো- নিজের ওপর বিশ্বাস থেকেই এমন পারফরম্যান্স সম্ভব হয়েছে।”
শেয়ার করুন
তোফায়েল আহমেদ | ১৩ আগস্ট, ২০১৯ ১৬:৩০

খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকে বর্ণনা করতে গিয়ে ‘অবিশ্বাস্য’ কথাটা বলেন অনেকেই। এই তো সর্বশেষ বিশ্বকাপেই কী অসাধারণ পারফরম্যান্সটাই না করে এলেন। ১০ বছর ধরে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের শীর্ষ অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। মাঠের এই সাকিব আল হাসান বন্ধু হিসেবে কেমন?
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বিকেএসপিতে বেড়ে ওঠা সাকিবের ঘনিষ্ঠ দুজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হলো সেটাই। সাকিবের বেড়ে ওঠার সময়ের কিছু অজানা গল্পও ওঠে এলো স্বাভাবিকভাবেই। সাকিবের এই দুই বন্ধু- তৌহিদুল আলম সবুজ ও ইমরান হাসান পিন্টু, নিজ নিজ খেলায় প্রতিষ্ঠিত।
আড্ডা প্রিয় সাকিব
শুধু ক্রিকেট নয়, সামগ্রিক প্রেক্ষাপটেই দেশের সবচেয়ে বড় তারকার নাম সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটসহ এত এত খেলার মাঝে সময় কোথায় তার! কিন্তু সাকিব সময় পেলেই আড্ডায় মাতেন বন্ধুদের নিয়ে। কৈশোরের প্রায় সবটুকু সময় পার করেছেন বিকেএসপিতে। আর তাই বিকেএসপির বন্ধুরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার এই আড্ডার সঙ্গী।
সাকিবের ব্যাচের বন্ধুদের মধ্যে অন্য খেলায় সফল অনেকেই। ফুটবলার তৌহিদুল আলম সবুজ তাদের একজন। তালিকায় আছেন হকির ইমরান হাসান পিন্টু, সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলারা। সদ্যই বসুন্ধরা কিংসের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জিতেছেন সবুজ। সাকিব প্রসঙ্গে জানতে চাইলেই বললেন, বিশ্বকাপ থেকে ফিরেও সাকিব এক ছাদের নিচে ডেকেছিলেন তাদের সবাইকে, “ও যখনই ফ্রি হয়, আমরা একসঙ্গে আড্ডা দেই। বিশ্বকাপ শেষে সাকিব দেশে ফিরতেই বিকেএসপির বন্ধুরা একসঙ্গে হয়েছিল। লিগের ম্যাচ থাকায় আমি এবার যেতে পারিনি। আমাদের আড্ডাগুলো বেশির ভাগ হয়ে থাকে সাকিবের বাসাতেই।”
“সাকিব অনেক পপুলার, বাইরে আড্ডা দিলে অনেক ধরনের পরিস্থিতেই পড়তে হয়। তাই বন্ধুরা ওর বাসাতেই বেশি আড্ডা দেই সবসময়” যোগ করেন সবুজ।
সাকিবের সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুর সময়টাও জানালেন সবুজ, “সাকিব আর আমি বিকেএসপিতে ক্লাস এইট থেকে একসঙ্গে। আমি ২০০১ সালে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হই বিকেএসপিতে। আর ও ২০০২ সালে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে সরাসরি ক্লাস এইটে ভর্তি হয়। এরপর থেকেই একসঙ্গে আমাদের বেড়ে ওঠা। তবে মাঠে অর্থাৎ খেলার সময় যার যার ডিপার্টমেন্টে।”
সেই একই রকম সাকিব
বিকেএসপিতে সাকিব আল হাসানের রুমমেটদের একজন ইমরান হাসান পিন্টু। জাতীয় হকি দলের অন্যতম সেরা এই তারকা সাকিবের সঙ্গেই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। পিন্টু বললেন, বিশ্বসেরার আসনে বসা নিজের রুমমেটকে নিয়ে, “সাকিবের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ২০০১ সালে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে। আমরা দুজনই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে এসেছি। এরপর বিকেএসপিতে একসঙ্গে ভর্তি হওয়া, একই রুমে থাকা। টানা প্রায় ছয় বছর এক সঙ্গে…। ও তখন যেমন ছিল, এখনো আমাদের সঙ্গে ঠিক তেমনই। ওর দিক থেকে কোনো পরিবর্তন নেই। হ্যাঁ, একটু ওর ব্যস্ততা বেড়ে গেছে, এই যা।”
সবুজের মতো পিন্টুর কথাতেও ওঠে এলো বন্ধু অন্তপ্রাণ সাকিবের চিত্র, “ওর খেলা থাকে বা আমাদের খেলা থাকে, তাই সবাই ফ্রি এমন সময় খুব কম হয়। তবে যখনই ও ফ্রি থাকে তখনই আমাদের ডাকে। কল করে বলে, চলে আয়। ব্যাচের যারা ফ্রি থাকি সবাই তখন চলে যাই ওর বাসায়। তখন সেই আগের মতোই আড্ডা হতে চলতে থাকে আমাদের।”
কী নিয়ে আড্ডায় মাততেন কিশোর সাকিব?
এতক্ষণে সবার বুঝে ফেলার কথা সাকিব খুব আড্ডাবাজ। কিন্তু বিকেএসপিতে পড়াশোনা আর খেলার ফাঁকে কী নিয়ে আড্ডা দিতেন সাকিব? সাবুজ বলেন, “সাকিব ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী ছিল। ও আড্ডা দিত ঠিক, কিন্তু সবার চেয়ে ও ছিল ডিফারেন্ট টাইপের। ওই বয়সেই খেলার প্রতি যে আগ্রহ বা স্পৃহা, সেটা অন্য সবার মধ্যে ছিল না। অনেকের ভাবনা ছিল এরকম- খেলতেছি, খেলতে খেলতে হয়ে যাবে। কিন্তু ওর মধ্যে সেটা ছিল না। দেখা গেল, ও আড্ডা দিচ্ছে, তখনো বল নিয়ে প্র্যাকটিস করছে।”
পিন্টুও বললেন একই কথা, “ও খুব সিনসিয়ার ছিল শুরু থেকেই। আমরা ট্রেনিংয়ের পর এসে খুব আড্ডা দিতাম। সেই আড্ডাগুলোতে ও খেলা নিয়েই গল্প করত বেশি।”
বন্ধুরা বুঝেছিলেন তখনই
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেটে বিশ্ব শাসন করে চলেছেন সাকিব। ২০০৬ সালে তার অভিষেক জাতীয় দলে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে দেশ সেরা ও পরে বিশ্বসেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। বন্ধুরা কিন্তু সাকিবের বড় ভবিষ্যৎ দেখেছিলেন বিকেএসপির শুরুর দিনগুলোতেই। সবুজ যেমন বলেন, “ছোট বেলাতেই বুজেছিলাম ও অনেক বড় খেলোয়াড় হবে। ওই যে বললাম না, সব সময়ই খেলা নিয়েই ভাবতো ও। এই যে লং টাইম খেলতেছে এসবের কারণও কিন্তু একটাই। খেলার প্রতি ওর অপরিসীম ভালোবাসা।”
হার্ড হিটার সাকিব
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের আগ্রাসী ব্যাটিং তো অনেকই আছে। উইকেটে তিনি থাকলে রান আসবেই। হকির ইমরান হাসান পিন্টু স্মৃতিচারণ করলেন ওই সময়ের সাকিবের ব্যাটিংয়ের, “বিকেএসপিতে হোস্টেল ভিত্তিক একটা খেলা হতো। ওখানে ও ওপেনিং ব্যাট করত। ও বেশিক্ষণ হয়তো ক্রিজে থাকত না। কিন্তু ও ১০টা বল খেললে ওর রান থাকতো ৩০ বা ৩৫। খুব হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান ছিল ও।”
ফুটবলে ক্যাপ্টেন সাকিব!
তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। এখন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব তার কাঁধে। ক্রিকেটার সাকিব বিকেএসপিতে যখন ফুটবলে নামতেন, তখন অধিনায়কত্বের আর্ম ব্যান্ড থাকত তার হাতে। সবুজ বললেন সেই গল্প, “প্রতি শুক্রবার রিক্রিয়েশন ম্যাচ হয়। এক ব্যাচের সঙ্গে আরেক ব্যাচের খেলা। একদিন ক্রিকেট, একদিন ফুটবল এমন…। ফুটবল খেলা যখন হতো তখন ও আমার জার্সি-প্যান্ট পরত। আমার জার্সি ছিল ১০ নম্বর। ফুটবল খেলা হলে ও আমাদের দলের ক্যাপ্টেন থাকত। ক্রিকেট খেলা হলে আবার আমাকে ক্যাপ্টেন থাকতে বলতো ও। পুরোটাই মজার একটা খেলা…।”
সাকিবের কিছু ‘বদনাম’ ও বন্ধুদের কথা
সাকিব আল হাসান একবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমার নেগেটিভ নিউজ মানুষ ভালো খায়…। আসলেই কি তাই? সাকিব সবার সঙ্গে মিশতে পারেন না এমন কথাও তো উঠেছে কখনো কখনো। কিন্তু সবুজ বলছেন ভিন্ন কথা, “যারা ওর সঙ্গে মিশবে না, তারাই আসলে ওকে ভুল বুঝবে। এখন না বিশ্বকাপে ভালো খেলেছে। এর আগে ভালো খেললেও কিন্তু সাকিবকে পছন্দ করতো না এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত। আসলে ও বাইরের মানুষের সঙ্গে কথা কম বলে। নিজের মতো চলতে ভালোবাসে। যারা ক্লোজ ফ্রেন্ড তারা জানে, ওর ভেতরটা আসলে কেমন। ও আসলে নিজের কাজটাই করতে পছন্দ করে। বিভিন্ন সময় ওকে মানুষ ভুল বুঝে বলেই নেগেটিভ কথা বার্তা সামনে আসে।”
কীভাবে বিশ্বকাপে এমন পারফরম্যান্স
বিশ্বকাপ শেষ করে সাকিব ক’দিন পরিবার নিয়ে ছুটি কাটিয়েছেন দেশের বাইরে। এরপর ফিরেই ডেকেছিলেন তার প্রিয় বিকেএসপির বন্ধুদের। যারা যারা পেরেছিলেন ছুটে গেছেন। বিশ্বসেরার ডাক কী উপেক্ষা করা যায়! ইমরান হাসান পিন্টু যোগ দিয়েছিলেন সেই আড্ডায়। সাকিব কীভাবে এমন পারফরম্যান্স করে এলেন পিন্টু কি জানতে চেয়েছিলেন?
এই হকি তারকা বলেন, “আমি মনে করি ওর ইচ্ছাশক্তি এর মূলে। ও যে বাংলাদেশকে একটা বড় কিছু দিতে চেয়েছে, ওর পারফরম্যান্স সেটাই প্রমাণ করে। ও যে বিশ্বসেরা সেটা, আর দেশের মানুষের দোয়া- এর জন্যই এমন পারফরম্যান্স করতে পারছে। ওকে আমরাও জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও যা বলল, তা হলো- নিজের ওপর বিশ্বাস থেকেই এমন পারফরম্যান্স সম্ভব হয়েছে।”