
নিউজিল্যান্ডের জন্য ক্রাইস্টচার্চের আজকের দিনটি ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর, নয়তো ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যাওয়ার। ড্যারিল মিচেলের সেঞ্চুরিতে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে তৃতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ১৬৭ রান পিছিয়ে থাকার সময় ষষ্ঠ উইকেট হারিয়েছিল কিউইরা। মিচেলের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি এবং ম্যাট হেনরির ক্যারিয়ার–সর্বোচ্চ ৭২ রানে ভর করে ৩৭৩ রান তুলে ১৮ রানের লিড পায় তারা।
পরে বল হাতেও দিনটা নিজেদের করে নেয় কিউইরা। শর্ট বল ও গতিতে ভড়কে দিয়ে ব্লেয়ার টিকনার তুলে নেন ওশাদা ফার্নান্দো, দিমুথ করুনারত্নে ও কুশাল মেন্ডিসের উইকেট। এর মধ্যে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেওয়া ওশাদা সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন। ৩ উইকেট নিতে টিকনারের খরচও ২৮ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ৮৩ নিয়ে দিন শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিন শেষে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ২০ এবং প্রবাথ জয়াসুরিয়া ২ রানে অপরাজিত।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ৩৫৫ রান। দ্বিতীয় দিন শেষে ১৬২ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল কিউইরা। উইকেটে ছিলেন শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মিচেল ও মাইকেল ব্রেসওয়েল।
তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই বাঁহাতি স্পিনার প্রবাথের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ব্রেসওয়েল। ১৮৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। তখন প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায়ও ছিল তারা। সেখান থেকে কিউইদের টেনে তোলার কাজটি করেন মিচেল, সঙ্গ দেন অধিনায়ক টিম সাউদি ও টেলএন্ডার ব্যাটসম্যান হেনরি।
মেরে খেলার চেষ্টা করে সাউদি অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩ চার ১ ছয়ে ২০ বলে ২৫ রান করে কাসুন রাজিথার শিকার হন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। এরপর হেনরিকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মিচেল। লাহিরু কুমারার বলে ডাবল নিয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ১৮৭ বলে। যে ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ২টি ছয়। ক্যারিয়ারে এটি তার পঞ্চম সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরির এক ওভার পরই অবশ্য কুমারার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। নিউজিল্যান্ডকে বাকিটা পথ প্রায় একাই টেনে নেন হেনরি। এর মধ্যে রাজিথার এক ওভারে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন। প্রথম থেকে পঞ্চম—প্রথম পাঁচ বলেই মারেন ৪টি চার ও একটি ছয়। তুলে নেন চতুর্থ টেস্ট ফিফটিও। আরেক প্রান্তে নিল ওয়াগনারও ছিলেন আক্রমণের তালে।
নবম উইকেট জুটিতে ৬৯ রান পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। আসিথা ফার্নান্দোর বলে বোল্ড হন হেনরি। ১০ চার, ৩ ছয়ে ৭৫ বলে ৭২ রান করে যান তিনি। ওয়াগনার খেলেন ৩ ছয় ১ চারে ২৪ বলে ২৭ রানের ইনিংস।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
আশির দশকের আইকন মোহাম্মদ মহসিন। ছিলেন জাতীয় দলের ফুটবলার। সামলাতেন গোলরক্ষকের দায়িত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের সেরা গোলরক্ষক বললেও বাড়াবাড়ি হবে না। গোলবারের অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব তাকে দিয়েছিল আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। তার স্টাইল নজর কেড়েছিল তরুণদের। মডেল হয়েছেন ম্যাগাজিনের মলাটে। অথচ আজ তিনি সব হারিয়ে নিঃস্ব। অর্থাভাবে করতে পারছেন না চিকিৎসাও।
মানিকগঞ্জের ছেলে মহসিন ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগে খেলেন রেলওয়ে ব্লুজের হয়ে। একই বছর রেলওয়ে দলের হয়ে শেরেবাংলা কাপে অংশ নেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সে সময়ের দেশসেরা তারকা ফুটবলার আশরাফউদ্দিন চুন্নুর নজরে পড়েন তিনি। ওই বছর আবাহনীর আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নুও জাতীয় ফুটবলে রেলওয়ের হয়ে খেলেন। এক ম্যাচে বুলেটগতির এক শট ঠেকিয়ে চুন্নুকে মুগ্ধ করেছিলেন। তারপরই ধানমন্ডির ক্লাবটিতে দরজা খুলে যায় মহসিনের। আবাহনী ক্লাবে কিছুদিন অনুশীলন করে ১৯৮২ সালে নাম লেখান মোহামেডানে। জাতীয় দলে সুযোগ পান সে বছরই।
১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে দ্বিতীয় গোলরক্ষক হলেও তিন ম্যাচের দুটিতে তার ওপরই ভরসা রেখেছিল বাংলাদেশ দল। চীনের বিপক্ষে পেনাল্টি ঠেকিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মহসিন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জাতীয় দলের গোলবারের নিচে টানা ১১ বছর ছিলেন ১ নম্বর পছন্দ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, এশিয়ান কাপ বাছাই, সাফ গেমস, এশিয়ান গেমস—আশি ও নব্বইয়ের দশকে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৪০টির বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
মোহামেডানের হয়েই তারকা হয়ে ওঠা মহসিনের। ১৯৮৫ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন, তবে সাফল্য পাননি। ১৯৮৭ সালে যোগ দেন আবাহনীতে। ১৯৯২ সালে সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লিগজয়ী আবাহনীর অধিনায়কত্ব করেছেন। ১৯৯৪ সালের দলবদলে আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের পুল ভেঙে শক্তিশালী দলে পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। মহসিন যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধায়, অধিনায়কত্বও করেন। মুক্তিযোদ্ধাকে জেতান ফেডারেশন কাপ। এরপরই চলে যান অন্তরালে। কানাডায় শুরু করেন নতুন জীবন।
২০১৪ সালে অসুস্থ মাকে সেবা করার জন্য কানাডা থেকে চলে আসেন এই ফুটবলার। স্ত্রী সঙ্গে আসেননি। পরে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাদের। সেই ছেলে এখন মায়ের চেয়েও যেন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও বেশ নাজুক অবস্থায় এই গোলরক্ষক।
মহসিনের এই দুরবস্থায় পাশে দাঁড়াচ্ছেন তার সতীর্থরা। সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি হাসানুজ্জামান খান বাবলু মহসিনের এই দুরবস্থায় নিজেদের এগিয়ে আসার উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন,‘আমরা আগামীকাল (আজ) সন্ধ্যার পর মোহামেডান ক্লাবে বসবো। কিভাবে মহসিনকে সহায়তা করা যায় সেটা নিয়েই আলোচনা করব’।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে সবার সুখ-দুঃখে দৌড়ে যান জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফুটবলার আব্দুল গাফফার। মহসিনের খবর শুনে তিনি বলেছেন, ‘মহসিন বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম তারকা। দেশের প্রতি তার অসংখ্য অবদান। আমরা সাবেক কয়েকজন খেলোয়াড় মিলে তার সুস্থতার বিষয়ে কাজ করব।'
সিঙ্গাপুরে শুরু হচ্ছে আর্চারি এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং টুর্নামেন্ট, স্টেজ-৩ মঙ্গলবার থেকে। ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সেখানে পৌঁছে গেছে। আজ স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে তারা করেছেন অনুশীলনও। কাল থেকেই শুরু হচ্ছে তাদের পদক জয়ের অভিযান।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় রিকার্ভ পুরুষ ও কম্পাউন্ড নারী ডিভিশনের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২ টা থেকে রিকার্ভ পুরুষ একক ডিভিশনে ইলিমিনেশন রাউন্ডে খেলবেন প্রতিযোগিরা। বিকেল ৪টায় রিকার্ভ নারী ও কম্পাউন্ড পুরুষ ডিভিশনের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডের খেলা। সন্ধ্যা ৭ টায় রিকার্ভ নারী একক ডিভিশনে ইলিমিনেশন রাউন্ডের খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
টুর্নামেন্টে রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড ডিভিশনে এশিয়া মহাদেশের সেরা ২৬টি দেশ থেকে ২২৫জন (পুরুষ ১২০জন ও নারী ১০৫জন) আর্চার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে রিকার্ভ পুরুষ আর্চার ৬৭জন, রিকার্ভ নারী আর্চার ৬২জন, কম্পাউন্ড পুরুষ আর্চার ৫৩জন এবং কম্পাউন্ড নারী আর্চার ৪৩জন।
খেলায় দলগত ইভেন্টে রিকার্ভ পুরুষ দল ১৭টি, রিকার্ভ নারী দল ১৬টি, কম্পাউন্ড পুরুষ দল ১৩টি ও কম্পাউন্ড নারী দল ১১টি এবং রিকার্ভ মিশ্র দল ১৯টি ও কম্পাউন্ড মিশ্র দল ১৫টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বাংলাদেশ আরচারী দল সকল ইভেন্টে (১০টি ইভেন্টে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
১৫ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশের আর্চাররা হলেন টিম ম্যানেজার সুব্রত মজুদার ডলার, প্রধান প্রশিক্ষক মার্টিন ফ্রেডরিক, প্রশিক্ষক মোহাম্মদ হাসান, রিকার্ভ পুরুষ আর্চার মোহাম্মদ হাকিম আহমেদ রুবেল, মো. সাগর ইসলাম, রামকৃষ্ণ সাহা, রিকার্ভ নারী আর্চার দিয়া সিদ্দিকী, জ্যোতি রানী, সীমা আক্তার শিমু, কম্পাউন্ড পুরুষ আর্চার মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান, নেওয়াজ আহমেদ রাকিব, মো. সোহেল রানা, কম্পাউন্ড নারী আর্চার বন্যা আক্তার, শ্যামলী রায়, পুস্পিতা জামান।
নাথান লায়ন এমন একটা সময়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলে পা রেখেছেন, যখন তাদের ক্রিকেট সাম্রাজ্যের সূর্য্য অস্তাচলে। টানা তিনটা বিশ্বকাপ জিতে ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের কাছে হেরে মুকুট খুইয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই বছরই শ্রীলঙ্কা সফরে অভিষেক হয় অফস্পিনার লায়নের।
এক যুগে খেলেছেন ১১৯ টেস্ট আর মাত্র ২৯ ওয়ানডে। ২০১৯ বিশ্বকাপে দলে ছিলেন, দেখেছেন ইংল্যান্ডের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে দলকে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া লায়নের কাছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালই বিশ্বকাপ, যেটা হচ্ছে ইংল্যান্ডেই। প্রতিপক্ষ ভারত, যাদের সঙ্গে অনেক হিসেবই চুকানোর আছে লায়নের।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালটা জিতেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেতে চান লায়ন, ক্রিকেটের বাকি দুই সংস্করণের বিশ্বকাপ জেতায় যে স্বাদের সঙ্গে পরিচিত তার অনেক সতীর্থই।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লায়ন বলেছেন, ‘এটাই আমার বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২০১৯ বিশ্বকাপের দলে থাকার সুবাদে জানি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে আমরা খুব একটা ভাল করতে পারিনি। ওখানেই বিশ্বকাপটা আমাদের হাত থেকে ফস্কে যায়।’
অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিয়ে আসার পথে বড় অবদান আছে লায়নের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ১৯ টেস্ট খেলে ১১টিতে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, হেরেছে ৩ ম্যাচে। এই ১৯ ম্যাচে লায়ন নিয়েছেন ৮৩ উইকেট, যা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রে সর্বোচ্চ।
লায়নের পর দ্বিতীয় স্থানে আছেন কাগিসো রাবাদা,১৩ ম্যাচে ৬৭ উইকেট নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার জয়যাত্রায় দারুণ অবদান রাখা লায়ন অবশ্য ক্যারিয়ারেরও এক দারুণ অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে।
আর মাত্র ১৮ উইকেট নিলেই ইতিহাসের অষ্টম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট নেওয়া হবে লায়নের। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আসন্ন অ্যাশেজ, সামনে আছে ৬টা টেস্ট। লায়নের জন্য ১৮ উইকেট নেয়াটা এখন কেবল সময়ের ব্যপার মাত্র।
যদিও এই নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে নারাজ লায়ন, ‘আমি আসলে এই ব্যপারে খুব একটা কথা বলতে চাই না,তবে যারা ৫০০ উইকেট নিয়েছে তাদের তালিকার দিকে তাকালে ভালই লাগে। আমি খুবই ভাগ্যবান, দারুণ একটা যাত্রা দেখছি ক্যারিয়ারে। অ্যাশেজে ছোটখাট ভুলগুলো শুধরে নিতে পারলে আরও ভাল লাগবে।’
অবশ্য অ্যাশেজ পরে, আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। লায়ন সেটাই বললেন, ‘আমার কাছে মনে হয় গত ২৪টা মাস ধরে আমরা যে পরিশ্রম করেছি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলাটা সেই পরিশ্রমের স্বীকৃতি। তবে এখনো শেষ খেলাটা বাকি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা সেরা হয়েই ফাইনালে যাচ্ছি এবং কাজটা শেষ করছি।’
হার দিয়ে পিএসজি অধ্যায়টা শেষ করেছেন লিওনেল মেসি। তবে লিগ ওয়ানের শিরোপা জেতায় সেদিন তারা ট্রফি হাতে উৎসব করে। চোটের কারণে আগেই মৌসুম থেকে ছিটকে যাওয়া নেইমার সেদিন মাঠে এসেছিলেন। আরও অনেকেই সেদিন মেসিকে বিদায় জানিয়েছেন। তাদেরই একজন টেনিস তারকা নোভাক জকোভিচ। ফ্রেঞ্চ ওপেন খেলতে তিনি এখন প্যারিসে।
এক ফাঁকে পিএসজির মৌসুমের শেষ ম্যাচটি দেখতে পার্ক দে প্রিন্সেসে গিয়েছিলেন জোকোভিচ। ম্যাচ শেষে তাকে মেসি ও নেইমারের সঙ্গে দেখা করা আর কথা বলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রস্তাবে আনন্দের সঙ্গে রাজি হন সার্বিয়ান তারকা।
মেসি ও নেইমারের সঙ্গে দেখা করা নিয়ে জোকোভিচ বলেছেন, ‘এই প্রথম আমি সরাসরি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা অসাধারণ চ্যাম্পিয়ন। তাদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা আনন্দ আর সম্মানের, বিশেষ করে মেসির সঙ্গে দেখা হওয়া। সে ফুটবলের ইতিহাসে অনন্যসাধারণ পদচিহ্ন রেখেছে।’
মেসি–নেইমারদের সঙ্গে দেখা করতে কেন উন্মুখ ছিলেন, সে কথাও বলেছেন জোকোভিচ, ‘নেইমার আমার মেয়ে তারার জার্সিতে সই করেছে। তারার গল্পটা মজার। সে খেলা দেখে না। কিন্তু ওর বিদ্যালয়ের এক বন্ধু আধা ব্রাজিলিয়ান, আধা সার্বিয়ান। সেই মেয়েটি নেইমারকে নিয়ে তৈরি গানের সঙ্গে নাচে। এ কারণেই সে তার (নেইমার) সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে।’
শুধু নেইমার আর মেসির সঙ্গেই না। দেখা হয়েছে পিএসজি অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গেও। দুজনের একসঙ্গে ছবিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
জোকোভিচ যোগ করেন, ‘তাদের কাছে অনেক প্রত্যাশা থাকে বলেই আমি বিরক্ত করতে চাইনি। তবে ম্যাচের আগে তারা লকার রুমে যাওয়ার আগে আমাকে দেখেছে এবং কাছে এসে হাই বলে গেছে।’
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।