‘পেলেট গান’র শিকার সবচেয়ে কম বয়সী কাশ্মিরী হিবা
অনলাইন ডেস্ক | ২৮ নভেম্বর, ২০১৮ ১৯:৫৪
অধিকৃত কাশ্মিরে ‘অন্ধ চোখের মহামারি’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছে এই ‘পেলেট গান’। ছবি: বিবিসি
মাত্র ১৯ মাস বয়স। এই বয়সেই চোখ হারাতে বসেছে শিশু হিবা। কোনো দুর্ঘটনা নয়, ভারতীয় বাহিনীর ছোঁড়া ‘পেলেট গান’ বিঁধেছে তার ডান চোখে। হিবা ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ‘পেলেট গান’র শিকার সবচেয়ে কম বয়সী অধিবাসী।
সাম্প্রতিক সময়ে বিক্ষোভ দমনে ‘পেলেট গান’র ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গত কয়েক বছরে প্রায় ৩,০০০ কাশ্মিরী ‘পেলেট গান’এ চোখে আঘাত পেয়েছেন। অধিকৃত কাশ্মিরে ‘অন্ধ চোখের মহামারি’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছে এই ‘পেলেট গান’।
মঙ্গলবার প্রথম অপারেশনের পর দক্ষিণ কাশ্মিরের শোপিয়ান জেলায় নিজ বাসায় ফিরে হিবা। তাকে দেখতে ভিড় করে প্রতিবেশিরা। এসময় ছোট্ট শিশুটি এমন অবস্থা দেখে অনেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
বুধবার হিবার চোখে আরেক দফা অপারেশনের কথা রয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার আরো কয়েকটি অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
ছোট্ট এই শিশু হারাতে পারে তার ডান চোখের আলো। হিবা যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, ওই হাসপাতালের অফথালমোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান সালিম তাক বলেন, “দ্বিতীয় অপারেশনের পর আমরা তার চোখের অবস্থা সম্পর্কে বলতে পারব।”
ঘটনার সূত্রপাত
রোববার বড়ভাইয়ের সঙ্গে খেলছিল হিবা। এরই মধ্যে কাপরান গ্রামের কাছেই আটকে পড়া স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এতে ছয় স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাই নিহত হন।
খবর পেয়ে ওই এলাকায় জড়ো হতে থাকেন স্থানীয়রা। তারা ভারত-বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ারশেল এবং ‘পেলেট গান’ নিক্ষেপ করতে থাকে।
হিবাদের বাড়ির প্রবেশপ্রথ থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরেই নিরাপত্তা বাহিনী এবং এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ।
“আমি সকালের নাশতা বানাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে কাশতে কাশতে দম বন্ধ হওয়ার যোগাড়। টিয়ারশেলে গোটা ঘর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ক্রমশই যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল” বলছিলেন হিবার মা।
“হিবা বমি করতে শুরু করে আর আমার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না।”
পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় মিসেস জান মেয়েকে কোলে নেন আর ছেলেকে আরেক হাতে ধরে দ্রুত ঘর থেকে বের হন। ঘর থেকেই বের হতেই তারা সংঘর্ষরত দুই পক্ষের মাঝে পড়ে যান।
মিসেস জান বিবিসি-কে বলেন, “আমি দেখি নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে। ছেলেকে টেনে আমার পেছনে নিয়ে যাই। আর হিবার মুখ হাত দিয়ে ঢেকে দেই।”
একজন সেনাসদস্য মিসেস জানকে লক্ষ্য করে তিনটি ‘পেলেট গান’ ছুঁড়েন। কিন্তু এর একটি হিবার ডান চোখে গিয়ে বিঁধে।
‘মা, পুড়ে যাচ্ছে’ বলে চিৎকার করে ওঠে হিবা। তার চোখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। মেয়ের এ অবস্থা দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মিসেস জান। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন প্রতিবেশিরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের শাসক হরি সিং ভারতে যোগ দিলে এই রক্তপাতের সূত্রপাত হয়। এনিয়ে একাধিকবার যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান।
স্বাধীনতার জন্য ১৯৮০ দশকের শেষের দিকে স্বাধীনতাকামীরা ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিলে সহিংসতা নতুন মাত্রা পায়। সাম্প্রতিক সময়ে এই সহিংসতা ফের বাড়তে শুরু করেছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৮ নভেম্বর, ২০১৮ ১৯:৫৪

মাত্র ১৯ মাস বয়স। এই বয়সেই চোখ হারাতে বসেছে শিশু হিবা। কোনো দুর্ঘটনা নয়, ভারতীয় বাহিনীর ছোঁড়া ‘পেলেট গান’ বিঁধেছে তার ডান চোখে। হিবা ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ‘পেলেট গান’র শিকার সবচেয়ে কম বয়সী অধিবাসী।
সাম্প্রতিক সময়ে বিক্ষোভ দমনে ‘পেলেট গান’র ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গত কয়েক বছরে প্রায় ৩,০০০ কাশ্মিরী ‘পেলেট গান’এ চোখে আঘাত পেয়েছেন। অধিকৃত কাশ্মিরে ‘অন্ধ চোখের মহামারি’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছে এই ‘পেলেট গান’।
মঙ্গলবার প্রথম অপারেশনের পর দক্ষিণ কাশ্মিরের শোপিয়ান জেলায় নিজ বাসায় ফিরে হিবা। তাকে দেখতে ভিড় করে প্রতিবেশিরা। এসময় ছোট্ট শিশুটি এমন অবস্থা দেখে অনেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
বুধবার হিবার চোখে আরেক দফা অপারেশনের কথা রয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার আরো কয়েকটি অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
ছোট্ট এই শিশু হারাতে পারে তার ডান চোখের আলো। হিবা যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, ওই হাসপাতালের অফথালমোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান সালিম তাক বলেন, “দ্বিতীয় অপারেশনের পর আমরা তার চোখের অবস্থা সম্পর্কে বলতে পারব।”
ঘটনার সূত্রপাত
রোববার বড়ভাইয়ের সঙ্গে খেলছিল হিবা। এরই মধ্যে কাপরান গ্রামের কাছেই আটকে পড়া স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এতে ছয় স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাই নিহত হন।
খবর পেয়ে ওই এলাকায় জড়ো হতে থাকেন স্থানীয়রা। তারা ভারত-বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ারশেল এবং ‘পেলেট গান’ নিক্ষেপ করতে থাকে।
হিবাদের বাড়ির প্রবেশপ্রথ থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরেই নিরাপত্তা বাহিনী এবং এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ।
“আমি সকালের নাশতা বানাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে কাশতে কাশতে দম বন্ধ হওয়ার যোগাড়। টিয়ারশেলে গোটা ঘর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ক্রমশই যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল” বলছিলেন হিবার মা।
“হিবা বমি করতে শুরু করে আর আমার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না।”
পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় মিসেস জান মেয়েকে কোলে নেন আর ছেলেকে আরেক হাতে ধরে দ্রুত ঘর থেকে বের হন। ঘর থেকেই বের হতেই তারা সংঘর্ষরত দুই পক্ষের মাঝে পড়ে যান।
মিসেস জান বিবিসি-কে বলেন, “আমি দেখি নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে। ছেলেকে টেনে আমার পেছনে নিয়ে যাই। আর হিবার মুখ হাত দিয়ে ঢেকে দেই।”
একজন সেনাসদস্য মিসেস জানকে লক্ষ্য করে তিনটি ‘পেলেট গান’ ছুঁড়েন। কিন্তু এর একটি হিবার ডান চোখে গিয়ে বিঁধে।
‘মা, পুড়ে যাচ্ছে’ বলে চিৎকার করে ওঠে হিবা। তার চোখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। মেয়ের এ অবস্থা দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মিসেস জান। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন প্রতিবেশিরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের শাসক হরি সিং ভারতে যোগ দিলে এই রক্তপাতের সূত্রপাত হয়। এনিয়ে একাধিকবার যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান।
স্বাধীনতার জন্য ১৯৮০ দশকের শেষের দিকে স্বাধীনতাকামীরা ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিলে সহিংসতা নতুন মাত্রা পায়। সাম্প্রতিক সময়ে এই সহিংসতা ফের বাড়তে শুরু করেছে।