পাঁচ রাজ্যের একটিতেও জিতল না বিজেপি
অনলাইন ডেস্ক | ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:০৮
বিজেপির ঘাঁটিতে কংগ্রেসের হানা। ছবি: পিটিআই
বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির জয়রথ থেমে গেছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় রাজ্যে। বুথ ফেরত জরিপকে সত্য প্রমাণ করে বিজেপির এই তিন ঘাঁটিতে হানা দিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। এছাড়া তেলেঙ্গানা ও মিজোরামেও ধস নেমেছে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তায়।
জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে গুরুত্বপূর্ণ এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে দেখা হচ্ছিল সেমিফাইনাল হিসেবে। শুরু থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, শক্তিশালী তিন ঘাঁটি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড় হারাতে হচ্ছে বিজেপি। শেষপর্যন্ত সেটিই সত্যি হলো।
তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার বার্তায় বলেন, “আমরা জনগণের রায় মেনে নিয়েছি।”
শুক্রবার এই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার সারাদিন ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এদিন দিবাগত রাত ২.৪৫ পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা চলে।
এনডিটিভি জানায়, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ঠিকই পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। শেষপর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে জিতে আসতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল। ২৩০ আসনের এ রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১১৬ আসন। সেখানে মাত্র একটি আসনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কংগ্রেস। তারা পেয়েছে ১১৫ আসন।
তবে কংগ্রেস নেতা কমল নাথ ফলাফল ঘোষণার শেষ সময়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং দাবি করেন, তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আরেক নেত্রী শোভা ওজা বলেন, “কংগ্রেসকে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি বা স্বতন্ত্র্য প্রার্থীদের ওপর নির্ভর করতে হবে না।”
বিজেপির অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যে ৫৭ আসন হারিয়েছে দলটি। উল্টোদিকে ৫৭ আসন নিজেদের ঘরে তুলে নিয়েছে কংগ্রেস।
রাজস্থান ও ছত্তিশগড়েও বিজেপিকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। দুই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে কংগ্রেস। ১৯৯ আসনের রাজস্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ১০০ আসন। সেখানে আগেরবারের তুলনায় ৮০ আসন বেশি পেয়ে কংগ্রেস জিতেছে ১০১ আসনে। বিজেপি ৮৯ আসন হারিয়ে জিতেছে ৭৩ আসন।
এই জয়কে কংগ্রেসের জন্য ‘নৈতিক বিজয়’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী শচীন পাইলট। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই ফলাফল বিজেপির বিরুদ্ধে এবং বিজেপির অহঙ্কারী রাজনীতির জন্য বড় আঘাত।”
ছত্তিশগড়ে বিগত ১৫ বছরের রাজত্ব হারিয়ে দিশেহারাই বলতে গেলে বিজেপি। এখানেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে কংগ্রেস।
বুথ ফেরত জরিপে কংগ্রেসের জয়ের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে ছত্তিশগড়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ধরমলাল কৌশিক বলেছিলেন, “বিজেপি চতুর্থ মেয়াদেও জয়ী হবে এবং কংগ্রেসকে এবারও পরাজয় স্বীকার করতে হবে।”
শেষপর্যন্ত দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র ঘাঁটি ছাড়তে হলো ক্ষমতাসীন দলকে। এ রাজ্যে ৯০ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৪৬ আসন। আগেরবারের তুলনায় ২৯ আসন বেশি পেয়ে কংগ্রেস জিতেছে ৬৮ আসনে। এখানে ৩৪ আসন হারিয়ে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১৫ আসন।
তেলেঙ্গানার ১১৯ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরকার ছিল ৬০ আসন। নতুন এই রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন এবারও। তার রাষ্ট্র সমিতি দল এবার ২৫ আসন বেশি পেয়ে জিতেছে ৮৮ আসনে। কংগ্রেস এখানে ১৬ আসন হারিয়ে জিতেছে ২১ আসনে। গতবারের ৫ আসনের মধ্যে ৪টিই হেরেছে বিজেপি।
তিন শক্তিশালী রাজ্যে বিজেপিকে হারালেও মিজোরামে ক্ষমতা হারিয়েছে কংগ্রেস। ৪০ আসনের রাজ্যটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে প্রয়োজন ২১ আসন। এখানে কোনো সময় জনপ্রিয় ছিল না বিজেপি। এবার স্থানীয় মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-এর উত্থান ঘটেছে বলতে গেলে। আগেরবারের তুলনায় ২১ আসন বাড়তি পেয়ে তারা জিতেছে ২৬ আসনে। কংগ্রেস হারিয়েছে ২৯ আসন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:০৮

বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির জয়রথ থেমে গেছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় রাজ্যে। বুথ ফেরত জরিপকে সত্য প্রমাণ করে বিজেপির এই তিন ঘাঁটিতে হানা দিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। এছাড়া তেলেঙ্গানা ও মিজোরামেও ধস নেমেছে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তায়।
জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে গুরুত্বপূর্ণ এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে দেখা হচ্ছিল সেমিফাইনাল হিসেবে। শুরু থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, শক্তিশালী তিন ঘাঁটি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড় হারাতে হচ্ছে বিজেপি। শেষপর্যন্ত সেটিই সত্যি হলো।
তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার বার্তায় বলেন, “আমরা জনগণের রায় মেনে নিয়েছি।”
শুক্রবার এই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার সারাদিন ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এদিন দিবাগত রাত ২.৪৫ পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা চলে।
এনডিটিভি জানায়, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ঠিকই পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। শেষপর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে জিতে আসতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল। ২৩০ আসনের এ রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১১৬ আসন। সেখানে মাত্র একটি আসনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কংগ্রেস। তারা পেয়েছে ১১৫ আসন।
তবে কংগ্রেস নেতা কমল নাথ ফলাফল ঘোষণার শেষ সময়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং দাবি করেন, তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আরেক নেত্রী শোভা ওজা বলেন, “কংগ্রেসকে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি বা স্বতন্ত্র্য প্রার্থীদের ওপর নির্ভর করতে হবে না।”
বিজেপির অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যে ৫৭ আসন হারিয়েছে দলটি। উল্টোদিকে ৫৭ আসন নিজেদের ঘরে তুলে নিয়েছে কংগ্রেস।
রাজস্থান ও ছত্তিশগড়েও বিজেপিকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। দুই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে কংগ্রেস। ১৯৯ আসনের রাজস্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ১০০ আসন। সেখানে আগেরবারের তুলনায় ৮০ আসন বেশি পেয়ে কংগ্রেস জিতেছে ১০১ আসনে। বিজেপি ৮৯ আসন হারিয়ে জিতেছে ৭৩ আসন।
এই জয়কে কংগ্রেসের জন্য ‘নৈতিক বিজয়’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী শচীন পাইলট। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই ফলাফল বিজেপির বিরুদ্ধে এবং বিজেপির অহঙ্কারী রাজনীতির জন্য বড় আঘাত।”
ছত্তিশগড়ে বিগত ১৫ বছরের রাজত্ব হারিয়ে দিশেহারাই বলতে গেলে বিজেপি। এখানেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে কংগ্রেস।
বুথ ফেরত জরিপে কংগ্রেসের জয়ের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে ছত্তিশগড়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ধরমলাল কৌশিক বলেছিলেন, “বিজেপি চতুর্থ মেয়াদেও জয়ী হবে এবং কংগ্রেসকে এবারও পরাজয় স্বীকার করতে হবে।”
শেষপর্যন্ত দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র ঘাঁটি ছাড়তে হলো ক্ষমতাসীন দলকে। এ রাজ্যে ৯০ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৪৬ আসন। আগেরবারের তুলনায় ২৯ আসন বেশি পেয়ে কংগ্রেস জিতেছে ৬৮ আসনে। এখানে ৩৪ আসন হারিয়ে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১৫ আসন।
তেলেঙ্গানার ১১৯ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরকার ছিল ৬০ আসন। নতুন এই রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন এবারও। তার রাষ্ট্র সমিতি দল এবার ২৫ আসন বেশি পেয়ে জিতেছে ৮৮ আসনে। কংগ্রেস এখানে ১৬ আসন হারিয়ে জিতেছে ২১ আসনে। গতবারের ৫ আসনের মধ্যে ৪টিই হেরেছে বিজেপি।
তিন শক্তিশালী রাজ্যে বিজেপিকে হারালেও মিজোরামে ক্ষমতা হারিয়েছে কংগ্রেস। ৪০ আসনের রাজ্যটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে প্রয়োজন ২১ আসন। এখানে কোনো সময় জনপ্রিয় ছিল না বিজেপি। এবার স্থানীয় মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-এর উত্থান ঘটেছে বলতে গেলে। আগেরবারের তুলনায় ২১ আসন বাড়তি পেয়ে তারা জিতেছে ২৬ আসনে। কংগ্রেস হারিয়েছে ২৯ আসন।