দিল্লির আদালতে গুলিতে নিহত কে এই গ্যাংস্টার?
অনলাইন ডেস্ক | ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৩১
দিল্লির আদালতে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হওয়া কুখ্যাত গ্যাংস্টার জিতেন্দ্র মান ওরফে গোগী আসলে কে? কেনই বা তাকে খুন করতে এই রকম মারাত্মক হামলা চালাল তার প্রতিপক্ষ?
খুন করেই অপরাধ জগতে প্রবেশ গোগীর। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ছাত্র ছিল সে। তার আগে পর্যন্ত অপরাধ জগতের সঙ্গে গোগীর কোনও সম্পর্ক ছিল না। সাধারণ পরিবারের ছাত্র রাজনীতি করা তরুণ। কলেজে ভোটের আগে বড়জোর দলবল পাকিয়ে সামান্য ধমক-চমক দিত। ছাত্র ইউনিয়ানের ‘দাদা’। ওইটুকুই।
কিন্তু প্রিয় বন্ধু সুনীলের সঙ্গে হঠাৎ শত্রুতাই গোগীকে গ্যাংস্টার বানিয়ে দেয়। কলেজ ভোটের সময় প্রতিহিংসাবশত সুনীলের এক বন্ধুকে গোগী খুন করেছিল বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই গোগী বনাম সুনীলের দ্বৈরথ দিল্লির কুখ্যাত ‘গ্যাংওয়ার’ বা দুই গ্যাংস্টার গোষ্ঠীর লড়াইয়ে পরিণত হয়।
শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ঘটনাটি ২০১০ সালের। এক বছর পরেই গ্রেপ্তার হয় গোগী। ততদিনে তার এক সময়ের প্রিয়বন্ধু সুনীল ওরফে টিল্লুকে খুন করার ভূত চেপেছে গোগীর মাথায়। শুক্রবার সেই টিল্লুর দলই গোগীকে খুন করেছে বলে সন্দেহ পুলিশের।
২০১১ সালের পর থেকে অপরাধ জগতে পুরোপুরি ঢুকে পড়ে গোগী। তখন তার বয়স মাত্র ২০। চাঁদাবাজি, খুন, জখম, রাহাজানিতে তরুণ গ্যাংস্টার গোগীর দলের দৌরাত্ম্যে দিল্লির মানুষ ভয়ে থাকত এক সময়ে। রাত বিরাতে মাঝে মধ্যেই গোগীর দল রাস্তায় গাড়ি অপহরণ করত। সেসময় কাছাকাছি কেউ থাকলে তাঁকে মেরে ফেলা ছিল গোগীর নীতি।
এ সবের মধ্যে টিল্লুর দলের সঙ্গে তার দলের সংঘর্ষও সমান তালে চলছিল। ২০১৬ সালে গোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে ততদিনে গোগীর শক্তি বেড়েছে। জেলের মধ্যে থেকেই নেটওয়ার্ক সামলাচ্ছিল সে। চরম শত্রু টিল্লুকে শেষ করার ঘুঁটিও সাজাচ্ছিল। গোগীর দলে তখন নাম লিখিয়েছে অনেকেই। জাতীয় স্তরের বক্সিং খেলোয়াড় থেকে মহিলা কাবাডি খেলোয়াড়ও। তাদের সাহায্যেই তিহার জেল থেকে আদালতে যাওয়ার পথে পালিয়ে যায় গোগী। ফের শুরু হয় গোগীকে ধরতে চোর-পুলিশ খেলা।
পাঁচ বছরের চেষ্টায় গত বছর মার্চ মাসে ফেসবুকে আড়ি পেতে গোগীকে ফের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ততদিনে অবশ্য সে হরিয়ানার এক নামী লোকগায়িকা হর্ষিতা দাহিয়াকে খুন করেছে। তারই মতো আরেক গ্যাংস্টার বীরেন্দ্র মানকে খুন করেছে। এমনকি ভিডিও রেকর্ড করে জানিয়েছে, পবন আঁচল ঠাকুর নামে বিরোধী গ্যাংস্টারদের দলের এক ঘনিষ্ঠকেও খুন করেছে সে।
একের পর এক খুন করেই চলছিল গোগীর দল। তারপরও পুলিশ নাগাল পায়নি। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে সিদ্ধহস্ত গোগী অবশ্য শেষ দানে একটু ভুল করে ফেলে। দিল্লির এক বিখ্যাত ক্যাফেতে বসে নিজের ছবি পোস্ট করে তরুণ গ্যাংস্টার। সেই ছবি দেখেই গোগীকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ।
তখন গোগীর মাথার দাম দশ লক্ষ টাকা। তার পর থেকে প্রায় দেড় বছর জেলে থাকাকালীন জেলের ভেতরে থেকেও গোগী আরও অনেক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর মধ্যেই শুক্রবার দিল্লির রোহিণী আদালতে তোলা হয় গোগীকে। সেখানে গোগীর দলের বাকি সদস্যরাও ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে আইনজীবীর ছদ্মবেশে আদালতে প্রবেশ করে তার শত্রুর দলের লোকজন। তারাই গোগীকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশের অনুমান, এরা গোগীর সবচেয়ে বড় শত্রু টিল্লুর দলের লোক হতে পারে। যদিও এক সময়ের বন্ধু টিল্লুই গোগীকে অপরাধ দুনিয়া থেকে চিরমুক্তি দিল কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ।
শুক্রবার দিল্লির রোহিণী আদালতে ফিল্মি কায়দায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। কক্ষে ঢুকতেই জিতেন্দ্রকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুই হামলাকারী। এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জিতেন্দ্রের। পাল্টা পুলিশের গুলিতে নিহত হয় দুই হামলাকারী।
গোগী এবং টিল্লু গ্যাংয়ের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরা চলা সংঘাতে দুই পক্ষের ২৫ জন মারা গেছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৩১

দিল্লির আদালতে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হওয়া কুখ্যাত গ্যাংস্টার জিতেন্দ্র মান ওরফে গোগী আসলে কে? কেনই বা তাকে খুন করতে এই রকম মারাত্মক হামলা চালাল তার প্রতিপক্ষ?
খুন করেই অপরাধ জগতে প্রবেশ গোগীর। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ছাত্র ছিল সে। তার আগে পর্যন্ত অপরাধ জগতের সঙ্গে গোগীর কোনও সম্পর্ক ছিল না। সাধারণ পরিবারের ছাত্র রাজনীতি করা তরুণ। কলেজে ভোটের আগে বড়জোর দলবল পাকিয়ে সামান্য ধমক-চমক দিত। ছাত্র ইউনিয়ানের ‘দাদা’। ওইটুকুই।
কিন্তু প্রিয় বন্ধু সুনীলের সঙ্গে হঠাৎ শত্রুতাই গোগীকে গ্যাংস্টার বানিয়ে দেয়। কলেজ ভোটের সময় প্রতিহিংসাবশত সুনীলের এক বন্ধুকে গোগী খুন করেছিল বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই গোগী বনাম সুনীলের দ্বৈরথ দিল্লির কুখ্যাত ‘গ্যাংওয়ার’ বা দুই গ্যাংস্টার গোষ্ঠীর লড়াইয়ে পরিণত হয়।
শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ঘটনাটি ২০১০ সালের। এক বছর পরেই গ্রেপ্তার হয় গোগী। ততদিনে তার এক সময়ের প্রিয়বন্ধু সুনীল ওরফে টিল্লুকে খুন করার ভূত চেপেছে গোগীর মাথায়। শুক্রবার সেই টিল্লুর দলই গোগীকে খুন করেছে বলে সন্দেহ পুলিশের।
২০১১ সালের পর থেকে অপরাধ জগতে পুরোপুরি ঢুকে পড়ে গোগী। তখন তার বয়স মাত্র ২০। চাঁদাবাজি, খুন, জখম, রাহাজানিতে তরুণ গ্যাংস্টার গোগীর দলের দৌরাত্ম্যে দিল্লির মানুষ ভয়ে থাকত এক সময়ে। রাত বিরাতে মাঝে মধ্যেই গোগীর দল রাস্তায় গাড়ি অপহরণ করত। সেসময় কাছাকাছি কেউ থাকলে তাঁকে মেরে ফেলা ছিল গোগীর নীতি।
এ সবের মধ্যে টিল্লুর দলের সঙ্গে তার দলের সংঘর্ষও সমান তালে চলছিল। ২০১৬ সালে গোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে ততদিনে গোগীর শক্তি বেড়েছে। জেলের মধ্যে থেকেই নেটওয়ার্ক সামলাচ্ছিল সে। চরম শত্রু টিল্লুকে শেষ করার ঘুঁটিও সাজাচ্ছিল। গোগীর দলে তখন নাম লিখিয়েছে অনেকেই। জাতীয় স্তরের বক্সিং খেলোয়াড় থেকে মহিলা কাবাডি খেলোয়াড়ও। তাদের সাহায্যেই তিহার জেল থেকে আদালতে যাওয়ার পথে পালিয়ে যায় গোগী। ফের শুরু হয় গোগীকে ধরতে চোর-পুলিশ খেলা।
পাঁচ বছরের চেষ্টায় গত বছর মার্চ মাসে ফেসবুকে আড়ি পেতে গোগীকে ফের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ততদিনে অবশ্য সে হরিয়ানার এক নামী লোকগায়িকা হর্ষিতা দাহিয়াকে খুন করেছে। তারই মতো আরেক গ্যাংস্টার বীরেন্দ্র মানকে খুন করেছে। এমনকি ভিডিও রেকর্ড করে জানিয়েছে, পবন আঁচল ঠাকুর নামে বিরোধী গ্যাংস্টারদের দলের এক ঘনিষ্ঠকেও খুন করেছে সে।
একের পর এক খুন করেই চলছিল গোগীর দল। তারপরও পুলিশ নাগাল পায়নি। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে সিদ্ধহস্ত গোগী অবশ্য শেষ দানে একটু ভুল করে ফেলে। দিল্লির এক বিখ্যাত ক্যাফেতে বসে নিজের ছবি পোস্ট করে তরুণ গ্যাংস্টার। সেই ছবি দেখেই গোগীকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ।
তখন গোগীর মাথার দাম দশ লক্ষ টাকা। তার পর থেকে প্রায় দেড় বছর জেলে থাকাকালীন জেলের ভেতরে থেকেও গোগী আরও অনেক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর মধ্যেই শুক্রবার দিল্লির রোহিণী আদালতে তোলা হয় গোগীকে। সেখানে গোগীর দলের বাকি সদস্যরাও ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে আইনজীবীর ছদ্মবেশে আদালতে প্রবেশ করে তার শত্রুর দলের লোকজন। তারাই গোগীকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশের অনুমান, এরা গোগীর সবচেয়ে বড় শত্রু টিল্লুর দলের লোক হতে পারে। যদিও এক সময়ের বন্ধু টিল্লুই গোগীকে অপরাধ দুনিয়া থেকে চিরমুক্তি দিল কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ।
শুক্রবার দিল্লির রোহিণী আদালতে ফিল্মি কায়দায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। কক্ষে ঢুকতেই জিতেন্দ্রকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুই হামলাকারী। এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জিতেন্দ্রের। পাল্টা পুলিশের গুলিতে নিহত হয় দুই হামলাকারী।
গোগী এবং টিল্লু গ্যাংয়ের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরা চলা সংঘাতে দুই পক্ষের ২৫ জন মারা গেছে।