
পাকিস্তানে সেরা সুন্দরীর তকমা পেয়েছেন তিনি। এ বছর 'মিস পাকিস্তান'-এর মুকুট উঠেছে তার মাথায়। কিন্তু সেই আনিশা শেখ নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে। তাকে নিয়ে তারই দেশে আলোচনা থামছে না। পাকিস্তানের জনপ্রিয় মডেল আনিশা। তিনি মডেলিংয়ের পাশাপাশি গান এবং অভিনয়ও করেন। চলতি বছর 'মিস গ্র্যান্ড পাকিস্তান' প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নেন।
'মিস গ্র্যান্ড পাকিস্তান ২০২২'-এর তকমা পেয়েছেন আনিশা। এবার 'মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশানাল'-এ তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ২০ বছরের তরুণী আনিশার জন্য গর্বিত তার দেশ।
আনিশা বর্তমানে পাকিস্তানে নেই। তিনি নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে অংশ নিচ্ছেন। সেখানেই ব্যস্ত। তবে সম্প্রতি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণে আলোচনয় এই তরুণী। কিছু দিন আগে আনিশা ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেন। নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে তার সাজ দেখা গেছে সেই পোস্টের একাধিক ছবিতে। এ ছবি থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।
ছবিতে আনিশাকে দেখা গেছে কালো রঙের এক জমকালো লেহেঙ্গায়। এ সাজে নিজের মোট ৪টি ছবি পোস্ট করেন আনিশা। তার লেহেঙ্গায় রয়েছে কালোর ওপর নানা রঙের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। লেহেঙ্গার রঙের সঙ্গে মানানসই গয়নাও পরেছেন আনিশা। হার, কানের দুলের পাশাপাশি চুলও সাজিয়েছেন গয়নার চাকচিক্যে।
আনিশার পোস্ট করা ৪টি ছবির মধ্যে একটিতে তাকে দেখা গিয়েছে 'মিস গ্র্যান্ড পাকিস্তান ২০২২'-এর উত্তরীয় এবং মুকুট পরে থাকতে। জানা গেছে, জনপ্রিয় এক ভারতীয় ডিজাইনারের লেহেঙ্গায় সেজে নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে গেছেন আনিশা।
নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে গিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ম্যাগাজিন 'ভোগ'-এ একটি সাক্ষাৎকার দেন এই তরুণ পাকিস্তানি মডেল। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে সেই সাক্ষাৎকারের একটি অংশ তিনি শেয়ার করেন। লেখেন, 'সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি তো পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। অথচ, নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে আপনি ভারতীয় ডিজাইনার স্টাইলে সেজে হাঁটতে এসেছেন! এমন কেন? আমার উত্তর ছিল, যদি অন্য কারো তৈরি পোশাক, ৬ ইঞ্চি হিলের জুতো আর নকল চোখের পাতা পরলে রাজনীতি, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধ্বে দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিকে একত্রিত করা যায়, তা হলে আমি আনন্দের সঙ্গেই এমন আরও অনেক পোশাক পরব।' তিনি আরও বলেন, 'যুদ্ধ, হানাহানি, হিংসা সরিয়ে ফ্যাশন যদি সকলকে একজোট করতে পারে, আমি ফ্যাশনের প্রতিনিধি হিসাবে তবে গর্ববোধ করছি।'
আনিশার মতে, ফ্যাশন এমন এক ক্ষেত্র, যা দেশ-বিদেশের সংস্কৃতি, সাজপোশাক এক জায়গায় এনে জড়ো করে। এটাই ফ্যাশনের কাজ। এই ফ্যাশনের মাধ্যমেই ভারত এবং পাকিস্তান- চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের দ্বন্দ্ব ঘোচাতে চান আনিশা।
পাকিস্তানি এবং আমেরিকান আবহে বড় হয়েছেন আনিশা। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি শিখেছেন, কোনো দ্বন্দ্ব মেটাতে সবার আগে প্রয়োজন শ্রদ্ধা। একে অপরকে শ্রদ্ধার মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব। শান্তি স্থাপিত হলে জীবন হয়ে ওঠে আরও সুন্দর।
অভিনয়, গান-বাজনা এবং মডেলিংয়ের বাইরে সমাজসেবামূলক কাজও করে থাকেন আনিশা। দুঃস্থদের দিকে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে বহুবার। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আনিশার জন্ম আমেরিকার কেন্টাকি প্রদেশে। তারা ৫ ভাই-বোন। আনিশাই সবচেয়ে ছোট, পরিবারে সবচেয়ে আদরের। ছোটবেলা থেকে তিনি খেলাধুলো করেন। সাঁতার, স্কেটিংয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন চারদিকে। ৯ বছর বয়স থেকে স্কেটিং শুরু আনিশার। একটা সময় দিনে ৮ ঘণ্টা স্কেটিং করতেন তিনি। পরে স্কেটিং ফেলে হাতে তুলে নেন গিটার। গানের সুরে খুঁজে পান মনের শান্তি। নিজের একাধিক গান লিখে তাতে সুর দেন আনিশা। গান-বাজনার পাশাপাশি ফ্যাশনের দিকেও আনিশার ঝোঁক ছিল। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে তিনি 'মিস মিশিগান টিন ইউএসএ' প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। জয়ের মুকুট ওঠে তার মাথাতেই।
মাত্র ২০ বছর বয়সেই গ্ল্যামার দুনিয়ায় নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন পাকিস্তানের আনিশা। তার উচ্চতা মডেলিংয়ে তার সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি বলে মনে করেন কেউ কেউ। চোখধাঁধানো ফটোশুটের জন্য বারবার বিনোদন জগতের শিরোনামে উঠে আসেন আনিশা। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযানকে ঘিরে এক মাস আগেই উত্তপ্ত হয়েছিল পরিস্থিতি। পেশোয়ারের মসজিদে টিটিপির মানববোমা হামলার পর এবার পাকিস্তানকে 'ঘর সামলানো'র পরামর্শ দিল আফগান তালেবান।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানীতে গত সোমবারের বিস্ফোরণের ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর তিন দিন পরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিল কাবুল। ঘটনার দায় অস্বীকার করে ইসলামাবাদের উদ্দেশে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মন্তব্য, 'গত দু'দশকে আমরা এমন শক্তিশালী বোমা বা আত্মঘাতী জ্যাকেট দেখিনি, যা মসজিদের সঙ্গে শতাধিক মানুষকে উড়িয়ে দিতে পারে। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।'
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে নভেম্বরে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল টিটিপি। বিদ্রোহী ওই পাশতুন গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল, সংঘর্ষবিরতি ভেঙে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান শুরু করার ফলেই অশান্তি ছড়িয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ায়। আমেরিকায় ড্রোন হামলায় নিহত জঙ্গিনেতা বায়তুল্লাহ মেহসুদ প্রতিষ্ঠিত এই গোষ্ঠী বরাবরই পাকিস্তানি সরকারের বিরোধী।
২০১৪ সালে পেশোয়ারের একটি স্কুলে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছিল টিটিপি জঙ্গিরা। তারপর একাধিক অভিযান চালিয়েও তাদের বাগে আনতে পারেনি পাকিস্তান। সোমবার পেশোয়ারের মসজিদে আত্মঘাতী হামলারও দায় স্বীকার করেছে এই গোষ্ঠী। টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের একটি অংশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ডিসেম্বরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে টিটিপির ডেরায় অভিযান চালাতে গিয়ে আফগান তালেবান বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কোহাটে একটি যাত্রীবাহী বাস ও দ্রুতগতির ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে এক উদ্ধার কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কোহাট জেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। উদ্ধার কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ বলেন, আমরা মৃত ও আহতদের কোহাতের একটি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
টিভি ফুটেজে ধ্বংস হওয়া বাসের ছবি দেখা গেছে। প্রদেশের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী আজম খান এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গত রোববার বেলুচিস্তান প্রদেশে একটি যাত্রীবাহী বাস পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি সেতু থেকে পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায় এবং ৪০ জন নিহত হয়।
দুর্বল সড়ক অবকাঠামো ও ট্র্যাফিক আইন অমান্য করার কারণে পাকিস্তানে মারাত্মক দুর্ঘটনা সচরাচর ঘটে।
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ধানবাদে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই শিশুসহ কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। আগুনে দগ্ধ হয়ে আহত আরও ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভি।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বহুতল ভবনে অনেকে আটকা পড়েছে। কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত বা আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ধানবাদের জেলা প্রশাসক সন্দীপ কুমার জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় ব্যস্ততম এলাকার জোরাফটকের ১৩তলা আর্শিবাদ টাওয়ারে আগুনের সূত্রপাত হয়। এসময় গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ১০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সন্দীপ কুমার বলেন, আহতদের মেডিকেলে পাঠানো হচ্ছে। উদ্ধার কাজ শেষ। কিন্তু আমরা এখনো সঠিক হিসাব পাইনি। এটি পুলিশ এবং ফায়ার বিভাগের কর্মীরা যৌথভাবে করবে।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সন্দীপ কুমার।
কয়েকদিন আগে একই এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনায় মৃত্যু হয় চিকিৎসক দম্পতিসহ ৬ জনের। মঙ্গলবার ঠিক তার পাশের একটি বহুতল ভবনে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই বহুতলের পাশের আবাসিকরাও।
মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তিনি জানান, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে।
ভারতের আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঞ্চালন লাইনের বিরোধিতা করে দেশটির উচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে। স্থানীয় চাষীদের করা এ মামলার ফলে চলমান সংকট আরো গভীর হলো আদানির।
ভারতীয় টিভি চ্যানেল কলকাতা টিভি এবং ইটিভি জানায়, ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মাণাধীন আদানি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী মার্চে বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ আসার কথা রয়েছে, সেটিও অনিশ্চয়তায়ে পড়ল।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ফরাক্কায় আদানির বিদুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। মঙ্গলবার ফরাক্কায় আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে ৩০ ফল চাষীকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দাখিল করে এ সংগঠন।
এ মামলা গ্রহণ করে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারক রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়, ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে আদানির। সেখান থেকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। এ জন্য মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় খুঁটি নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার। কিন্তু এ খুঁটি তৈরি করতে গিয়ে জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে জমির ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তার স্থাপন নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে এ নিয়ে তাদের বিরোধ চলছিল।
ভারতীয় টিভিগুলো জানায়, স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষি জমির ওপর দিয়ে হাই টেনশন তার যাওয়ায় বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছ। ফরাক্কার যে অঞ্চল থেকে এ তার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জনবসতিপূর্ণ। পাশাপাশি এখানে প্রচুর পরিমাণ আম, লিচুর গাছও রয়েছে। এ গাছের ফলনই স্থানীয়দের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। গত বছর জুলাই মাসে যা নিয়ে আদানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে গ্রামবাসী। গ্রামবাসীদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ-গ্রামবাসী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ফরাক্কার বেনিয়া গ্রাম।
আরো জানা যায়, আদানির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন এক কৃষক। সেই মামলার ভিত্তিতে এ প্রকল্পের জন্য কৃষকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে দেখার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় আদানি গোষ্ঠী ও রাজ্য সরকারকে অভিযুক্ত করে হাইকোর্টে যান ফারাক্কার ৩০ চাষী। তাদের পক্ষে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেন সিনিয়র আইনজীবী ঝুমা সেন।
ফারাক্কার চাষীদের পক্ষে এ মামলার আইনজীবী মানবধিকার সংগঠন এপিডিআরের কর্মী রণজিৎ সুর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গোটা প্রক্রিয়া বেআইনিভাবে করার কারণে জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ওপর থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাবে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আদানির কোনো চুক্তি নেই। একইসঙ্গে যাদের জমির ওপর থেকে সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও চুক্তি নেই। এমনকি তাদের সম্মতিও নেয়া হয়নি।
পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের পুলিশ লাইনস এলাকার ভেতর একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনও ধ্বংস্তুপের নিচ থেকে একের পর এক উদ্ধার করা হচ্ছে প্রাণহীন দেহ। মৃতদেহগুলো রাখা হচ্ছে পেশোয়ার হাসপাতালে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বার্তাসংস্থা এএফপিকে পেশোয়ার হাসপাতালের মুখপাত্র মোহাম্মদ আসিম খান অন্তত ৯০ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে আরও মৃতদেহ আসছে।’
উদ্ধারকারী সংগঠন ১১২২ এর মুখপাত্র আহমেদ ফাইজি এএফপিকে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) আমরা ধসে পড়া ছাদের শেষ অংশটি সরানোর চেষ্টা করব যেন আরও দেহ উদ্ধার করতে পারি। ধ্বংসস্তুপের নিচে কাউকে জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
সোমবার ওই মসজিদটিতে যোহরের নামাজ শুরু হওয়া মাত্র বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে পুলিশ সদস্যরা নামাজ আদায় করতেন। মূলত পুলিশকে লক্ষ্য করেই এ হামলা চালানো হয়েছে।
হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ২০ জনকে মঙ্গলবার একসঙ্গে পাকিস্তানের পতাকা মোড়ানো কফিনে সমাহিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবানের (পিটিটি) এক কমান্ডার জানান, এ হামলার সঙ্গে তারা জড়িত। তবে পরবর্তীতে পিটিটি এটি অস্বীকার করে। এরপর এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এর দায় স্বীকার করেনি।
পেশোয়ারের যে স্থানে বোমা হামলা হয়েছে সেখানে পেশোয়ার পুলিশের সদর দপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থা এবং কাউন্টার-টেরোরিজমের অফিস অবস্থিত। ওই এলাকাটি কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত হলেও হামলার দিন হামলাকারী সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে এবং আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়।
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে ইসলামাবাদ সরকারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নভেম্বরে শেষ হওয়ার পর থেকে দেশটিজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো গোষ্ঠী পেশোয়ারের হামলার দায় স্বীকার না করলেও এর জন্য টিটিপিকেই সন্দেহ করা হচ্ছে।
এ হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘যারা পাকিস্তানের সুরক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে সন্ত্রাসীরা দেশ জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে।’ ‘হামলাকারীদের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।