
ভারতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানকে মারধর করার অভিযোগে স্কুলশিক্ষককে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছেন এক দম্পতি। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের। বুধবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন জেলার একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক আর ভরত। পুলিশ জানিয়েছে, সন্তানকে মারধর করার অভিযোগ নিয়ে এদিন স্কুলে হাজির হন তার মা-বাবা। ক্লাসে ঢুকেই শিক্ষককে ছাত্রীর মা বলেন, ‘শিশুদের মারধর করা বেআইনি। কেন মেরেছেন আমার মেয়েকে? কে অধিকার দিয়েছে? জুতা দিয়ে মারা উচিত আপনাকে।’
এরপরই ভরতকে ক্লাস থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করেন তিনি। পালানোর চেষ্টা করেন শিক্ষক। তাকে পুরো স্কুল ধাওয়া করেন ছাত্রীর বাবা শিবলিঙ্গম। এ ঘটনার একটি ভিডিও সোশালে ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, শিক্ষক ভরতকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করেন ওই দম্পতি। তাকে ইট দিয়েও আঘাত করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় আতঙ্কে কান্না জুড়ে দিয়েছিল খুদে শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে সহকর্মীকে মার খেতে দেখে তার এক সহকর্মী ছুটে আসেন। কিন্তু তাকে হামলা থেকে বাঁচাতে পারেননি। পরে তার চিৎকার শুনতে পেয়ে আশপাশের লোকজন এসে আক্রান্ত শিক্ষককে উদ্ধার করেন।
তুতিকোরিনের পুলিশ সুপার এল বালাজি শরবনন বলেছেন, এ ঘটনায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে হামলা, ভীতি প্রদর্শন, এবং একজন সরকারি কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্তের ভাই মুনুস্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত চলছে।
এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে অন্য বেঞ্চে বসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে কথা শুনছিল না। সহপাঠীদের সঙ্গে মারামারি করছিল। আসন বদল করার সময় পড়ে গিয়ে সে আঘাত পায়। কোনো শিক্ষক তাকে মারধর করেনি। কিন্তু শিশুটি বাড়ি ফিরে তার দাদার কাছে অভিযোগ করে যে শিক্ষক তাকে মারধর করেছেন।
ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এল সিগন্যালের ত্রুটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রেলের পক্ষ থেকে দেওয়া যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে এ ত্রুটির কথা বলছেন কর্মকর্তারা। তবে এটি প্রাথমিক রিপোর্ট। বিস্তারিত তদন্তের পর দুর্ঘটনার কারণ আরও স্পষ্ট হবে।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ডাউন লাইনে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কিন্তু প্রধান লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কীভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আনন্দবাজার পত্রিকা ও এনডিটিভি জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যার এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৬১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে ৯০০ জনের বেশি। যদিও রেল মন্ত্রণালয়ের দাবি, আহতদের সংখ্যা ৬৫০-এর বেশি। এছাড়াও উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ এবং গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে দুই লাখ এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওড়িশা রাজ্যের বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শনিবার (০৩ জুন) বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান মোদি। এর আগে শুক্রবার রাতে বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি জেলা হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাবেন এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে তার কার্যালয় থেকে টুইট করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় মোদির সঙ্গে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
গতকালের ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৬১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে ৯০০ জনের বেশি। ফলে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৈঠক ডেকেছিলেন মোদি।
ইতোমধ্যে মৃতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রেল মন্ত্রণালয়। আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারকে দুই লাখ এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোদি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এরপর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস এবং একটি মালবাহী ট্রেন। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুটি ট্রেনে ৩,৪০০ এরও বেশি যাত্রী ভ্রমণ করছিলেন।
ভারতের ওড়িশা রাজ্যের বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে একই পরিবারের তিন সদস্যের প্রাণ। নিহতরা হলেন- হারান গায়েন, নিশিকান্ত গায়েন ও দিবাকর গায়েন। তারা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। অন্ধ্রপ্রদেশে ধান চাষের কাজে যাচ্ছিলেন।
গায়েন পরিবারের কোনও সদস্য এ মুহূর্তে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ওই পরিবারের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) রাতে যখন ট্রেন দুর্ঘটনার খবর এল, তখন থেকেই আমরা সবাই আশঙ্কায় ছিলাম। আর যা আশঙ্কা করেছিলাম, আজ সকালে ঠিক সেই খবরই এল। তিন ভাইয়ের কেউই এই মুহূর্তে বেঁচে নেই।’
তিন ভাই আগেও একাধিকবার ধান চাষের কাজে অন্ধ্রপ্রদেশে গিয়েছেন। কিন্তু গতকাল যাওয়ার পথেই ঘটে দুর্ঘটনা।
তাদের ওই প্রতিবেশী আরও বলেন, ‘পরিবারের তিন পুরুষ সদস্য একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল। এবার ওই পরিবারের কি হবে তা ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। দেখার মতো আর কেউ রইল না।’
এদিকে এই তিনজন ছাড়াও বাসন্তীর ছরানেখালি গ্রামের আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- বিকাশ হালদার ও সঞ্জয় হালদার। আহত হয়েছে বাসন্তী ও গোসাবা এলাকার আরও বহু মানুষ। সংখ্যাটি শতাধিক বলে জানা গেছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৯০০ জনের বেশি। ট্রেনের ভেতরে এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রেল দুর্ঘটনা এড়াতে সুরক্ষাকবচ এনেছিল ভারতীয় রেলমন্ত্রণালয়। গত বছর থেকে বেশ ঘটা করে তার প্রচার করা হয়েছিল। বলা হয়েছিলো এই প্রযুক্তি ট্রেনে থাকলে এড়ানো সম্ভব হবে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হল না।
এতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরও কেনো এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটল এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে। রেলের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আদৌ এই দুই ট্রেন এবং মালগাড়িতে ছিল না।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, ২০১২ সাল থেকে ‘কবচ’-এর নির্মাণপ্রক্রিয়া চলছে। ২০১৪ সালে প্রথম এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে রেল দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসবে বলে দাবি করেছিল রেল।
‘কবচ’ মূলত একটি সংঘর্ষবিরোধী প্রযুক্তি যার মাধ্যমে দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো যায়। রেলের দাবি, এই প্রযুক্তির ফলে দুর্ঘটনার হার হবে ১০ বছরে মাত্র এক বার।
২০২০ সালে ‘কবচ’কে জাতীয় স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সর্বোচ্চ সুরক্ষা স্তরের পরীক্ষাতেও সবুজ সংকেত পায় এই প্রযুক্তি। রেল জানিয়েছে, ‘কবচ’ প্রযুক্তিতে রয়েছে মাইক্রো প্রসেসর, গ্লোবাল পজ়িশনিং সিস্টেম এবং রেডিয়ো সংযোগব্যবস্থা সহ যাবতীয় আধুনিক প্রযুক্তি। মূলত, একই লাইনের উপর দু’টি ট্রেনের উপস্থিতি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই বুঝতে পারে ‘কবচ’। সেই অনুযায়ী সে আগেভাগে ট্রেনের চালককে সতর্ক করে দেয়। রেল জানায়, ‘কবচ’ শুধু সতর্কই করে না। এই প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয় ভাবে ট্রেনের গতিবেগ কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে চালকের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ট্রেনের ব্রেক কার্যকর হয়।
২০২২ সালের মার্চ মাসে ‘কবচ’ ট্রেনকে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে পারে কি না, তার পরীক্ষা চলছিল। সেই পরীক্ষামূলক যাত্রায় একটি ট্রেনে ছিলেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী। তখন দু’টি লোকো একই লাইনে পরস্পরের দিকে ছুটে যায়। ধাক্কা লাগার আগেই একটি ইঞ্জিন অপরটির চেয়ে ৩৮০ মিটার দূরত্বে থেমে গিয়েছিল। পরীক্ষা ১০০ শতাংশ সফল জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী।
তবে রেলবিভাগ বলছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেস কিংবা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসে ‘কবচ’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি। যদি এই প্রযুক্তি থাকত, তা হলে হয়তো বিপদ এড়ানো যেত।
শুক্রবার বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজারে লাইনচ্যুত হয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি বগি। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়িও। এই তিন ট্রেনের দুর্ঘটনায় বালেশ্বর এখন মৃত্যুপুরী। রেল জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৬১, আহত প্রায় ৯০০ জন।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ও একটি মালবাহী ট্রেন।
এ ঘটনায় ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা ২৬০। আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। প্রত্যক্ষদর্শীদের আশঙ্কা, উদ্ধারকাজ যত এগোবে, নিহত এবং আহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে অনেক যাত্রী আটকে রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শনিবার সকালে হাওড়ার ডুমুরজলা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন পশ্চিমের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘুরে দেখেছেন দুর্ঘটনাস্থল। কথা বলেছেন রেলমন্ত্রীর সঙ্গে।
এ সময় রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে রেলমন্ত্রীর সামনেই অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘রেলের মনে হয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।‘
এ ছাড়া রেল দুর্ঘটনায় কলকাতার মৃতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। গুরুতর আহতদের ১ লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা জানান তিনি। মমতা বলেন, ‘বাংলার মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাজ্যের যারা আহত হয়েছেন, প্রয়োজনে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাদের চিকিৎসা করাব।‘
এ ছাড়া ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় সাক্ষাৎ হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।