
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় একদিন আগেই ২৫ হাজার রুপি জরিমানার মুখোমুখি হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শুক্রবার (৩১ মার্চ) গুজরাটের একটি আদালত তাকে এ জরিমানা করেন। তবে সেই ঘটনার দিন না পেরোতেই আবারও একই প্রশ্ন তুললেন কেজরিওয়াল।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আদালতের আদেশ মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে শিক্ষিত হতে হবে, কারণ তাকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য দিতে প্রস্তুত না হওয়ার দুটি কারণ থাকতে পারে। হয় তার ঔদ্ধত্যের কারণে, অথবা তার ডিগ্রি ভুয়া। শনিবার (০১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এর আগে মোদির ডিগ্রির বিশদ বিবরণ প্রকাশের জন্য গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া আদেশ খারিজ করে দেন আদালত। মোদির দাবি, তিনি ১৯৭৮ সালে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে।
বিচারপতি বীরেন বৈষ্ণব বলেন, কেজরিওয়াল আরটিআইয়ের (তথ্য অধিকার) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদির শিক্ষাগত ডিগ্রি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এটি কেজরিওয়ালের সততা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে।
আদালতের দাবি, মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি এখন সবার সামনে পরিষ্কার। এখানে গোপনীয় কিছু নেই। কেজরিওয়ালকে চার সপ্তাহের মধ্যে জরিমানার ২৫ হাজার রুপি পরিশোধ করতে হবে।
আদালতের এই রায়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদিম পার্টির (এএপি) প্রধান। এক টুইটে কেজরিওয়াল লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী কত দূর পড়াশোনা করেছেন, তা জানার অধিকারও কি দেশবাসীর নেই? এসব কী চলছে? অশিক্ষিত অথবা অল্প শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী দেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এদিকে কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অপ্রপ্রচার’ করছেন বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দলটির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, কেজরিওয়াল যা করছেন, তা হতাশার প্রতিফলন। তিনি স্বাভাবিকভাবেই হতাশ, কারণ তার সরকারের মন্ত্রীরা দুর্নীতি এবং মদ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলে রয়েছেন।
গেলো শুক্রবার ভারতের দুই দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা দেখলো দেশবাসী। বিহার রাজ্যের ওড়িশায় তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষে নিহতে হয় ২৭৮ জন মানুষ। মর্মান্তিক ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয় এক হাজারের বেশি মানুষ
এদিকে দুর্ঘটনার তিনদিন পার হলেও সোমবার পর্যন্ত ১০১টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।
ভুবনেশ্বরের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে পরিদর্শন করে এনডিটিভি জানায়, হাঁসপাতালটিতে এখনো মৃতদের খোঁজে ভীর করছেন স্বজনরা।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় নিহতদের শরীর গুরুতরভাবে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় এবং বৈদ্যুতিক তারের কারণে কিছু কিছু মরদেহ পুড়ে যাওয়ায় স্বজনদের মৃতদেহ শনাক্ত করতে সমস্যা হওয়ার একটি প্রধান কারণ বলে জানান কর্মকর্তারা।
বিহারের দারভাঙ্গার রাকেশ যাদব দুই দিন ধরে তার ভাইকে খুঁজছেন। গতকালও পঞ্চম হাসপাতালে গিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে তার ভাইয়ের বদলে গ্রামের একজনের লাশ পেয়েছেন। তার ভাই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
ভারতের পূর্ব-মধ্যাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক রিঙ্কেশ রায় সংবাদমাধ্যমকে এএনআইকে জানান, এখনো প্রায় ২০০ জন আহত ব্যক্তিকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, "দুর্ঘটনায় প্রায় ১১০০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৯০০ জনকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০০ জনকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ২৭৮ জনের মধ্যে ১০১ জনের মৃতদেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি।“
এদিকে নিহতদের শনাক্তে রেলওয়ে মন্ত্রণালয় ওড়িশা সরকারের সাথে সমন্বয় করে নিহতদের ছবি এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহতদের তালিকাসহ তিনটি অনলাইন লিংক তৈরি করেছে।
কোনভাবেই পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছেনা সহিংসতা-বিধ্বস্ত রাজ্য মণিপুরে। রাজ্যটির বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে চলছে সহিংসতা।
বিশেষ করে পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়ে উঠছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের। সোমবার মধ্যরাতে বিদ্রোহীদের সাথে গোলাগুলির কারণে প্রাণ হারিয়েছেন এক বিএসএফ জওয়ান এবং আহত হয়েছেন দুইজন সেনা।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বিবৃতিতে সেনা কর্মকর্তারা জানান, নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সোমবার মধ্যরাত জুড়ে দফায় দফায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষের ফলে বিএসএফ-এর এক জন জওয়ান মারা গিয়েছেন। গুলির আঘাতে আহত হয়েছেন দুই সেনাও।
সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস, পুলিশ এবং সিএপিএফ শনিবার থেকে মণিপুর জুড়ে পাহাড় ও উপত্যকা এলাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।
এদিকে আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম দা হিন্দু পুলিশের বরাতে জানিয়েছে, সোমবার সকালে মণিপুরের ইম্ফলে পশ্চিম জেলায় দুই সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে। আহতদের ইম্ফলের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মণিপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফরের পর তার নির্দেশাবলী অনুসরণ করে নিরাপত্তা বাহিনী আবারও মণিপুরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে ছিনতাই হওয়া অস্ত্র যাদের দখলে আছে তাদেরকে দ্রুত আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদেরকে কঠোর আইনি পদক্ষেপের আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
গঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন চার লেনের একটি সেতু তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। ভারতের বিহার রাজ্যের ভাগলপুরে রবিবার (৪ জুন) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সেতুটি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।
তবে এ ঘটনায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।এরইমধ্যে সেতুটি ভেঙে পড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদামাধ্যম এনডিটিভি।
জানা গেছে,সুলতানগঞ্জ ও খাগরিয়া জেলাকে সংযুক্ত করার আগুয়ানি-সুলতানগঞ্জ সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর ২০১৪ সালে স্থাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। নির্মাণাধীন সেতুটির চার থেকে পাঁচটি পিলার ধসে গেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে প্রশাসন।
এদিকে সেতু ভেঙে পড়ায় এর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। সেই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে বিহারে একই বছরে দুটি সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীমন্ত্রী আর কে সিং বলেছেন যে, ঘটনাটি রাজ্যের উচ্চ দুর্নীতির বড় উদাহরণ।
গত বছরের ডিসেম্বরে রাজ্যের বেগুসরাই জেলার বুড়ি গণ্ডকী নদীতে একটি সেতু ভেঙে পড়ে যায়।
বালেশ্বরের ভয়াবহ তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার দুই দিনের মাথায় আবারও মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতের ঘটনা ঘটেছে ভারতের উড়িষ্যায়।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বারগড় জেলার সম্বরধারার কাছে চুনাপাথর বহনকারী একটি পণ্যবাহী ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি ডুঙ্গুরি থেকে বারগড় যাচ্ছিল। তবে এই ঘটনায় এখনও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, 'একটি ব্যক্তিগত সাইডিংয়ের ভিতরে ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রেনটি একটি প্রাইভেট কোম্পানির মালিকানাধীন এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের সাথে রেলওয়ে মন্ত্রণালয় জড়িত নয়।'
ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এক বিবৃতিতে ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে জানায়, "ওড়িশার বারগড় জেলার মেন্ধাপালির কাছে কারখানার চত্বরে একটি ব্যক্তিগত সিমেন্ট কারখানা রয়েছে, তাদের একটি পণ্যবাহী ট্রেনের কয়েকটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। এই বিষয়ে রেলওয়ের কোনো ভূমিকা নেই।"
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে নির্মাণাধীন চার লেনের একটি সেতু হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে বিহারের ভাগলপুরে গঙ্গা নদীর ওপর এই সেতু ভেঙ্গে পড়ে বলে খবরে জানায় দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
নির্মাণাধীন সেতুটির ৩২৮ ফুট উঁচু অংশ ভেঙ্গে পড়ে পুরোপুরি গঙ্গায় তলিয়ে গেছে। এ সময় সেতুটির ভেঙে পড়ার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে দেখা যায় স্থানীয়দের।
২০১৪ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার রাজ্যের সুলতানগঞ্জ ও খাগরিয়া জেলার মাঝে সংযোগকারী এই সেতুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব জানান, সেতুটি নির্মাণের জন্য আনুমানিক ১৭০০ কোটি রুপি ব্যয় হয়েছে। এ ঘটনায় সঠিক তদন্তের পাশাপাশি দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রাজ্যের শীর্ষ এক জেলা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, “রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নির্মাণাধীন সেতু ধসের এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে। আমরা সেতু ধসের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছি।“
এদিকে প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা জানান, রোববার ছুটির দিন থাকায় জেলায় সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার দিকে আচমকাই সেতুটির ৩টি স্তম্ভ ভেঙে পড়ে, মুহূর্তের মধ্যে পুরো সেতুটিই গঙ্গার পানিতে তলিয়ে যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।